বাংলা একাডেমির অভিধানের প্রতিটি সংস্করণেই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন শব্দ। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এসব শব্দ অভিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ‘যোগ্যতা’ অর্জন করছে সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। সুনির্দিষ্ট নিয়ম ছাড়াই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দে বাছাই হচ্ছে নতুন শব্দ।
সবশেষ সংস্করণে কতটি নতুন শব্দ যোগ হয়েছে, সে বিষয়ে নেই কোনো তথ্য বা নথি। এমনকি সম্পাদনায় জড়িতরাও জানেন না কেন ও কীভাবে এসব শব্দ ঠাঁই পেয়েছে অভিধানে। এমন ‘ভৌতিক’ অবস্থায় প্রকাশ হচ্ছে বাংলা একাডেমির অভিধানের নতুন নতুন সংস্করণ।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা অভিধান। এর সবশেষ ‘পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ’-এর তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে।
স্বাভাবিকভাবেই অভিধানের সবশেষ সংস্করণে নতুন কতটি শব্দ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তার হিসাব থাকার কথা বাংলা একাডেমির কাছে।
বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও আধুনিক বাংলা অভিধানের প্রকাশক ড. জালাল আহমেদও এতদিন ‘ভাবছিলেন’ এসব শব্দের তালিকা হয়ত অভিধানের ভূমিকা অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের কাছে যখন তিনি জানলেন পুরো অভিধানের কোথাও এই তালিকা নেই, তখন খানিকটা ‘অপ্রস্তুত’ অভিধানের প্রকাশক।
ড. জালাল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থাকা তো উচিত ছিল। থাকলে ভালো হতো। এখন তো আমি পদাধিকার বলে প্রকাশক। যেহেতু পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে আমি ওই বিভাগের পরিচালক, আমাকে একটু সময় দেন; আমাদের যেসব সহকর্মী এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সে সময়ে, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানাব।’
তবে পরেও আর এ বিষয়ে কিছু জানাননি ড. জালাল আহমেদ।
বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মোবারক হোসেনের কাছেও বিষয়টি জানতে চেয়েছে নিউজবাংলা। তিনি স্বীকার করেন, ‘একাডেমির কাছে এ বিষয়ক কোনো তালিকা নেই।
তিনি বলেন, ‘বলা কঠিন, ঠিক কতগুলো নতুন শব্দ যুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত কোনো তালিকা বা তথ্য নেই।’
‘প্রযুক্তিগত অনেক নতুন শব্দ যুক্ত হয়েছে এই অভিধানে’, এমন একটি বক্তব্য অবশ্য দিয়েছেন মোবারক হোসেন, তবে সেই শব্দের একটিও তিনি ‘মনে করতে’ পারেননি।
নতুন শব্দ যোগ হওয়ার দাবি করেছেন অভিধানের সম্পাদনা সহযোগী ও বাংলা একাডেমির বিক্রয় ও বিপণন উপবিভাগের সহপরিচালক একেএম কুতুবউদ্দিনও।
তিনি দাবি করেন, ‘নতুন শব্দের বিষয়ে ওরকম আলাদা করে বলা হয় নাই, তবে কতগুলো ভুক্তি আছে সেটা অভিধানের ফ্ল্যাপে বলা আছে।’
এরপর অভিধানের ফ্ল্যাপ উল্টে-পাল্টে সে রকম কিছু না পাওয়ায় কুতুব উদ্দিন পরামর্শ দেন অভিধানের সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার।
বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধানের সম্পাদক জামিল চৌধুরী দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে অভিধানের মুখবন্ধে জামিল চৌধুরীর লেখাতেও নেই ‘নতুন শব্দ’ বিষয়ক কোনো তথ্য। সেখানে তিনি অভিধান প্রণয়নে দুজন সম্পাদনা সহযোগীর নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন রাজীব কুমার সাহা এবং মাইনুল হোসেন।
অভিধানের দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এ দুজনের উদ্যমের ‘ভূয়সী প্রশংসা’ করেছেন জামিল চৌধুরী।
সেই সূত্র ধরে নিউজবাংলা যোগাযোগ করে রাজীব কুমার সাহার সঙ্গে।
নতুন শব্দের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীব কুমার সাহা বলেন, ‘২৫০ থেকে ৩০০ শব্দ যোগ হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রণীত সবশেষ আধুনিক বাংলা অভিধানে। তবে এর কোনো তালিকা নেই।’
রাজিব বলেন, ‘অ্যালফেবেটিক অর্ডারে (বর্ণমালা অনুয়ায়ী) বিভিন্ন জায়গায় শব্দগুলো ঢুকে গেছে। এই অভিধানে শব্দ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিকতর ব্যবহারিক বা আমরা বর্তমান সময়ে যা ব্যবহার করছি সে রকম শব্দ যুক্ত হয়েছে।’
নতুন যুক্ত হওয়া ‘২৫০-৩০০ শব্দ’-এর মধ্যে মাত্র দুটি শব্দ স্মরণ করতে পেরেছেন রাজীব কুমার সাহা। অবশ্য এই দুটি শব্দ ‘সেলফি’ ও ‘ফেসবুক’ ২০১৬ সালের প্রথম সংস্করণ, নাকি পরের কোনো সংস্করণে অভিধানে যোগ হয়েছে, সেটি তার মনে নেই।
অভিধানে নতুন শব্দ যোগ হওয়ার নির্ধারিত কোনো নীতিমালা নেই বাংলা একাডেমির। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সম্পাদক প্যানেলের সদস্য এবং বাংলা একাডেমির অভিধান সংশ্লিষ্ট কয়েক কর্মকর্তার মর্জি ও বিবেচনাতেই অভিধানে ঠাঁই পাচ্ছে নতুন নতুন শব্দ।
নতুন শব্দ বাছাই ও সংগ্রহের পদ্ধতি জানতে চাইলে অভিধানের সম্পাদনা সহযোগী রাজীব বলেন, ‘আমাদের সমকালীন পত্রপত্রিকা, সমকালীন বইপত্র, কবি-সাহিত্যিক, লেখকদের নতুন নতুন রচনা থেকে কিছু শব্দ সংকলিত হয়।’
বাংলা অভিধানের আগামী সংস্করণে করোনাভাইরাসকেন্দ্রিক বেশকিছু বিদেশি শব্দের ঠাঁই পাওয়ার ইঙ্গিত রাজিবের কথায় স্পষ্ট।
তিনি বলেন, ‘যেমন বলতে পারি, এই যে দুর্যোগের ভিতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি; করোনাভাইরাস, এখন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আমরা অনেকগুলো শব্দ পেলাম। এই শব্দগুলো হয়ত ইংরেজি অভিধানে ছিল। কিন্তু এইগুলোর ব্যবহার আমরা ওইরকম ভাবে করিনি। নেক্সট এডিশন যখন হবে এ ধরনের নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হবে।’
বিভিন্ন ভাষায় নতুন শব্দ সেই ভাষার অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করার আগে বিস্তর গবেষণা ও জরিপ চালানো হয়। একটি শব্দ কত মানুষ, কত সময় ধরে এবং কীভাবে ব্যবহার করছে, গুরুত্ব পায় সেগুলোও। তবে এ ধরনের কোনো কিছুই ‘সময়ের অভাবে’ করে উঠতে পারছেন না বাংলা একাডেমির অভিধান সংশ্লিষ্টরা।
শব্দজরিপ চালানো প্রসঙ্গে রাজীব কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাগজে-কলমে জরিপের কথা থাকলেও ওইটা আসলে সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। তার কারণ হচ্ছে, এটা একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা যতটুকু সময় নিয়ে সাধারণত অভিধান করি, সেটা আরও সময় ডিমান্ড করে। সে কারণে আমাদের একটা প্রাথমিক ফ্রিকোয়েন্সি যাচাই করা হয়। আমাদের পত্রপত্রিকা, সেমিনার সিম্পোজিয়াম, পেপার, লিফলেট ওখানে কীভাবে শব্দগুলো ব্যবহারের প্রবণতা আছে এবং নতুন কী অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা আমরা দেখি।’
রাজীব কুমার সাহা ‘কাগজে-কলমে’ জরিপের বিধান থাকার দাবি করলেও এর কোনো কপি দেখাতে পারেননি। এই কপি চাইলে উল্টো তিনি প্রসঙ্গ বদলে বলেন, ‘বাংলা একাডেমির প্রণীত আধুনিক বাংলা অভিধানের জন্য কোনো নির্ধারিত বিধান নেই, তবে অন্য অভিধানের জন্য আছে।’
বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মোবারক হোসেন অবশ্য অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘নতুন শব্দ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের জরিপ চালানো হয় না এবং এ বিষয়ে কোনো লিখিত নিয়মও বাংলা একাডেমির নেই।’
অভিধানের নতুন সংস্করণের আগে কোনো শব্দ অন্তর্ভুক্ত করার আগে যে কেউ সাদা কাগজে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন রাজীব কুমার সাহা।
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি নতুন শব্দ, নতুন অর্থে…, এ রকম অনেক আবেদনপত্র আমাদের এখানে জমা পড়ে অনেক সময়। সেটা আমাদের মহাপরিচালক বরাবর কেউ যদি লিখে জমা দেয় আমরা দেখি। আমরা এ রকম অনেক চিঠি পাই যে শব্দগুলো ব্যবহারের নতুন নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, এগুলো পরে আমরা আমাদের অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করে নেই। আমাদের পরিষদের কমিটি দ্বারা বিবেচনা করে, যথার্থতা যাচাই করে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত একটা প্রক্রিয়া আছে।’
তবে এই শব্দগ্রহণের জন্যও উন্মুক্ত কোনো আহ্বান বাংলা একাডেমি কখনও জানায়নি বলে স্বীকার করছেন একাডেমির কর্মকর্তারা।
শব্দ জরিপ ও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে শব্দ আহ্বানের বিষয়কে অবশ্য ‘সুন্দর চিন্তা’ মনে করছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মোবারক হোসেন নিউজবাংলা প্রতিবেদকের জিজ্ঞাসার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আপনাদের নতুন সুন্দর এই ভাবনাগুলো নিয়ে আমরা আগামীতে এগোব।’
বাংলা একাডেমির এমন অবহেলায় রীতিমতো বিস্মিত ভাষাবিদ ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ।
তিনি বলেন, ‘এই হিসাব (নতুন শব্দ) থাকা তো উচিত বটেই। আসলে ওরা এত তাড়াতাড়ি করে সব জিনিসগুলো তৈরি করে, খুবই তাড়াতাড়ি করে। আর ওদের মেথডটা (পদ্ধতি) জানি না। দুটো অভিধান তৈরি করেছে, নিজেরা বসে বসে মোটামুটি অন্যদের দিয়ে দেখিয়ে নিয়ে সেগুলো সংশোধন করেছে।’
বাংলা একাডেমির ‘দায়সারা’ কাজের উদাহরণ টেনে ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘বাংলা একাডেমি এক সময় ছোটদের অভিধান বের করেছিল। সেখানে ওদের এন্ট্রি (অন্তর্ভুক্তি) হচ্ছে সাপ, অর্থ দিচ্ছে সর্প। মানে আরও কঠিন করছে তারা। এটা তো অর্থ হলো না। এইটা প্রতিশব্দ হলো।’
আরও পড়ুন:মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারা দেশে দেশীয় মাছের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। এই সংকট নিরসনে উন্মুক্ত জলাশয়ের কোন বিকল্প নাই। সরকার দেশের নদ-নদীতে মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করতে কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
উপদেষ্টা আজ সকালে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,নারী কৃষক এবং স্হানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বন্যায় নদীগুলোতে পলি পরার কারণে নাব্যতা হ্রাস, পানি দূষণ, চায়না জাল ব্যবহার ও ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে মাছ কারণে দিনদিন মাছের পরিমাণ কমছে। জোরালো অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ মাছ ধরার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করতে হবে। অভিযান চলমান রাখতে নদীগুলোতে স্পীড বোটের ব্যবহার করা হবে।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তারা সরকারি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
খামারিদের উৎপাদিত দুধ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যথাযথ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই অঞ্চলে চিলিং সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই যোদ্ধাগণ অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের এই ঋণ ভুলবার নয়। এজন্য তিনি সরকারি ও এনজিওর উদ্যোগে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে আরো উপস্হিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানাসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এরপর উপদেষ্টা কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামে নারী কৃষকের বাড়ি পরিদর্শন করেন।
সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
মন্তব্য