× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
প্রাণঘাতী ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়ছে যেভাবে
google_news print-icon

প্রাণঘাতী ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়ছে যেভাবে

প্রাণঘাতী-ভেজাল-মদ-ছড়িয়ে-পড়ছে-যেভাবে
‘খাবার অযোগ্য মিথানল শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ায় কোষে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কিডনি সেই অতিরিক্ত অ্যাসিড বের করে দিতে সক্ষম হয় না। এ কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, প্রচণ্ড বমি হতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে। একপর্যায়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।’

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশফাকুর রহমান। ঢাকার বিভিন্ন বারে মদ পান করার সময় ওয়েটারদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ওয়েটারদের মাধ্যমে মদের বোতল কিনতে শুরু করেন আশফাক। কিছু লাভ রেখে বন্ধুদের কাছে সেই মদ বিক্রিতে নামেন তিনি।

ফেসবুকে একটি প্রাইভেট গ্রুপ খুলে তিনি শুরু করেন মদের হোম ডেলিভারি। এই ব্যবসা চালাতে আশফাককে মদ কোথাও সংরক্ষণ করতে হয়নি। অর্ডার পেলে বারের ওয়েটারদের মাধ্যমে বিদেশি মদ সংগ্রহ করে তিনি নিজে পৌঁছে দিতেন ক্রেতার কাছে।

তবে করোনার সময়ে বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মদের চাহিদা যেমন বাড়ে, তেমনি সরবরাহেও তৈরি হয় ঘাটতি। এ সময় পরিচিত এক ওয়েটার তাকে টিউনিং করা মদের (বিদেশি বোতলে দেশীয় মদ বা ভেজাল মদ) বোতল বিক্রির পরামর্শ দেন।

এ ধরনের ভেজাল মদের দাম কম, লাভ বেশি। আশফাক কিছুদিন এ ধরনের মদ বিক্রি করেছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অধিকাংশ সময় ক্রেতারা নিম্ন মানের এই মদের তফাত ধরতে পারতেন না। তবে অভিজ্ঞরা ধরে ফেলতেন। সে জন্য কয়েকবার ঝামেলায় পড়েছি। যারা বুঝতেন, তারা টাকা পরিশোধ করতেন না। এভাবে আমার বেশ কিছু টাকা খোয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার সরবরাহ করা মদ খেয়ে কেউ অসুস্থ বা মারা যাননি। তবে কয়েক দিন আগে ভাটারা এলাকা থেকে আমার সেই সোর্স ভেজাল মদ বানানোর অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বলে শুনেছি। এখন ওই গ্রুপের কারও সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।’

প্রাণঘাতী ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়ছে যেভাবে
রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার করা ভেজাল মদ ও সরঞ্জাম

রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একজন ব্যবসায়ী নিয়মিত মদ পান করেন। তিনি জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বাজারে বিদেশি মদের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে।

ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগের দামের তুলনায় এক-দেড় হাজার টাকা বেশি দিয়েও মদ কিনেছি। তবে তিন মাস ধরে কারও কাছেই মদ পাওয়া যাচ্ছে না, যাকে ফোন করি সে-ই বলে, নাই। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে বন্ধুদের একটা আড্ডার আয়োজন ছিল। তখন মদের জন্য একটা ফেসবুক পেজের নম্বরে ফোন দিয়েছিলাম। দুই বোতল অ্যাবসোলিউট ভদকা আনিয়েছিলাম ১১ হাজার টাকা দিয়ে। কিন্তু একটু মুখে দিয়েই বুঝেছি ঝামেলা আছে। মুখে দেয়ামাত্রই মনে হলো মুখ পুড়ে যাচ্ছে। এখন তো শুনি এসব খেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের পিআর প্রতিষ্ঠান ফোরথটপিআরের ৪৩ জন কর্মী অবকাশ কাটাতে গত ২৮ জানুয়ারি যান গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টে। সেখানে মদ পান করে ঢাকায় ফেরার পর মারা যান তিনজন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় আরও বেশ কয়েকজনকে।

রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ৩১ জানুয়ারি মারা যান। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে পুলিশের দাবি, ওই ছাত্রী ২৮ জানুয়ারি উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় মদ পান করেন। তাদের মধ্যে এক বন্ধু অসুস্থ হয়ে ৩০ জানুয়ারি সিটি হাসপাতালে মারা যান। এর পরদিন মারা যান ওই ছাত্রী। অবশ্য অসুস্থ অবস্থায় ছাত্রীটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরপরই তার বাবা বন্ধুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন।

এসব ঘটনায় ভেজাল মদের ভয়াবহতা নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ। নিউজবাংলা টানা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ভেজাল মদের কারণে রাজধানীতে মারাত্মক অসুস্থতার পাশাপাশি মৃত্যুর বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে। সমালোচনা এড়াতে এসব ঘটনার বেশির ভাগই চেপে যাচ্ছে ভুক্তভোগী অথবা তাদের পরিবার।

প্রাণঘাতী ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়ছে যেভাবে

হাসপাতালের পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও গ্রিন রোড এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বার। এই এলাকার আশাপাশের সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে ভেজাল মদ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

রাজধানীর আনোয়ার খান মডেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত ছয় মাসে তারা এ ধরনের অন্তত ১৩ জন রোগী পেয়েছেন। পান্থপথের বিআরবি হাসপাতাল এমন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১০ জনের বেশি।

পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন ভেজাল মদে অসুস্থ বেশ কয়েকজন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

বেসরকারি হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক নিউজবাংলাকে জানান, পুলিশসহ অন্য ঝামেলা এড়াতে মদ খেয়ে অসুস্থরা সাধারণত হাসপাতাল এড়িয়ে চলতে চান। পরিস্থিতি গুরুতর হলেই কেবল তারা হাসপাতালে আসেন। এ ক্ষেত্রেও বেশির ভাগই সরকারি হাসপাতাল বেছে নেন।

বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মদ পান করে অসুস্থতার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে সঠিক পরিসংখ্যান আমরা দিতে পারব না।’

ডা. সোহেলের সঙ্গে গত ৪ জানুয়ারি কথা বলে নিউজবাংলা। সে সময় তিনি বলেন, ‘বিষাক্ত মদ পানে মারা গেছেন এমন তিন জনের দেহ এই মুহূর্তে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে আছে।’

ভেজাল মদ কেন প্রাণঘাতী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষাক্ত মদে কিডনি ও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভেজাল মদে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এছাড়া স্নায়ুতন্ত্রেও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’

বিষাক্ত মদপানের প্রাথমিক উপসর্গের বিবরণ দিয়ে ডা. সোহেল বলেন, ‘খাবার অযোগ্য মিথানল শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ায় কোষে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কিডনি সেই অতিরিক্ত অ্যাসিড বের করে দিতে সক্ষম হয় না। এ কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, প্রচণ্ড বমি হতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে। একপর্যায়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

‘মিথানল গ্রহণ করার পর যত সময় যায়, ততই তা শরীরের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে শরীরের আরও বেশি ক্ষতি হয়।’

ভেজাল মদ নিয়ে নিউজবাংলাকে বিস্তারিত জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা।

তিনি বলেন, ‘আগে আমরা ভেজাল মদ বলতে যা পেতাম তা ছিল দেশীয় মদের সঙ্গে পানি বা ঘুমের ওষুধের মিশ্রণ অথবা ইথাইল অ্যালকোহলের সঙ্গে পানি বা রঙ মিশিয়ে বানানো। তবে এখন যা পাচ্ছি তা হল মিথানল, যা পূর্নাঙ্গ টক্সিক বা বিষ। ’

দুলাল কৃষ্ণ জানান, ইথালন হলো রেকটিফাইড স্পিরিট, তবে এটি মিথানলের মতো অতটা প্রাণঘাতী নয়। মিথানল ব্যবহার করা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে, এই মিথানল দিয়ে কাঠের আসবাবও রং করা হয়। এটা পরিপূর্ণ বিষ, আর মানুষ এটা খেয়েই মারা যাচ্ছে। ’

তিনি জানান, দেশে প্রাকৃতিক উপায়েই ইথানল তৈরি হচ্ছে, আর শিল্প কারখানার জন্য আমদানি করা হচ্ছে মিথানল। সে হিসেবে ইথানল ও মিথানল দুটি রাসায়নিকই বাংলাদেশে সহজলভ্য।

পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার রকিবুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে মিথানল মিশিয়ে সেগুলো পানের অযোগ্য করে ফেলে হয়। তখন এটাকে বলে মিথিলেটেড স্পিরিট। এই স্পিরিট মূলত বার্নিশের দোকানসহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্ষেত্রে কাজে লাগে।’

প্রাণঘাতী ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়ছে যেভাবে
এভাবেই তৈরি হচ্ছে ভেজাল বিদেশি মদ

ডা. রকিব জানান, ইথানল ও মিথানল আলাদা করা যায় রঙ দেখে। রেকটিফায়েড স্পিরিট বা ইথানল পানির মতো সাদা হয়, তবে মিথিলেটেড স্পিরিটে বেঞ্জিনসহ অন্য উপাদান মেশানোর ফলে রঙ খানিকটা বাদামি ও হালকা গন্ধ থাকে।

ভেজাল মদের বিষক্রিয়া কীভাবে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তা ব্যাখ্যা করে ডা. রকিব বলেন, ‘যে ক্যামিক্যাল বডিতে যাচ্ছে তা প্রথমে রক্তে যাবে। শরীর এটাকে মেটাবোলাইজ (পরিপাক) করে। লিভার টক্সিক পাওয়ারটা নষ্ট করে। তারপর কিডনি এটাকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। তাই এই ধরনের কেমিক্যাল ঢুকলে প্রথমে লিভার ও কিডনিকে আক্রান্ত করে। বেশি পরিমাণ খেলে লিভার ফেইল করে। পড়ে সেটা ব্রেইনে অ্যাটাক করে। ’

ইথানলের পরিবর্তে অতি বিষাক্ত মিথানল কেন

দেশে ইথানল ও মিথানল দুটি রাসায়নিকই সহজলভ্য। তবে মদে ভেজালকারীরা সম্প্রতি অত্যন্ত বিষাক্ত মিথানল ব্যবহার কেন বাড়িয়েছে, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছে নিউজবাংলা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দামের পার্থক্যই মূলত এর কারণ। এক লিটার ইথানল কিনতে খরচ হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। অন্যদিকে, এক লিটার মিথানলের খুচরা দাম মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ চোখে ইথানল আর মিথানলের পার্থক্য করা কঠিন। এ কারণে ভেজালকারিরা অনেক সময় না বুঝেই ইথানলের বদলে মিথানল দিয়ে মদ বানাচ্ছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাত্র ১২ মিলি লিটার মিথানল মানুষের পেটে গেলেই অন্ধত্বসহ মৃত্যু হতে পারে। ৬০ মিলি লিটার (এক পেগ) মদে অ্যালকোহল থাকে সর্বোচ্চ ৩০ মিলি লিটার। সেই সূত্র মেনেই ভেজালকারিরা মিথানল দিয়ে মদ তৈরি করছে।’

ভেজাল মদ চেনার জানতে চাইলে দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘এটা পরীক্ষা করা ছাড়া বোঝার উপায় নেই। ল্যাবে পরীক্ষা করে তবেই নিশ্চিত হওয়া যায়। ’

তবে ঢাকার একটি বারের একজন ওয়েটার জানান, মদে আগুন ধরিয়ে আসল-ভেজাল পরীক্ষা করা সম্ভব। ভেজাল মদে পানির মিশ্রণ থাকে বলে তাতে আগুন জ্বলে না।

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় গত ১ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে ভেজাল মদ তৈরির একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ।

এই বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চক্রটির ভেজাল মদ তৈরি করতে খরচ পড়ত সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। মুনাফার জন্য তাদের মানুষ মারতেও দ্বিধা নেই। ভাটারার এই চক্রটিই মূলত উৎপাদনের কাজ করত, তারপর ছড়িয়ে দিত রাজধানী ও আশপাশের এলাকায়। এই ভেজাল মদই গাজীপুর, মোহাম্মদপুরসহ অন্যান্য জায়গায় মানুষের মৃত্যুর কারণ।’

বেড়েছে মদের খালি বোতলের বিক্রি

ভেজাল মদকে নতুন হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয় পুরোন বোতলে ভরে। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গত কয়েক মাসে পুরান ঢাকায় এ ধরনের বোতল বিক্রি বেড়েছে।

মদের পুরোন বোতল বিক্রিতে জড়িতরা নিউজবাংলাকে জানান, ফেলে দেয়া খালি বোতলগুলো সংগ্রহ করে টোকাই বা ভাঙারির লোকজন। তাদের কাছ থেকে একেকটি বোতল পাঁচ থেকে ১০ টাকায় কেনেন ভাঙারির দোকানিরা। এরপর সেগুলো পরিষ্কার করে ২৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়।

প্রাণঘাতী ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়ছে যেভাবে
পুরান ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে মদের খালি বোতল

মদের খালি বোতল পাইকারি দামে পাওয়া যায় পুরান ঢাকার নিমতলি এলাকায়। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সম্প্রতি পুলিশের ভেজাল মদবিরোধী অভিযান শুরুর পর এখন আর প্রকাশ্যে মদের খালি বোতল বিক্রি হচ্ছে না। ব্যাবসায়ীরা জানান, এখন শুধু পরিচিত এবং বিশ্বস্তদের কাছেই বোতল বিক্রি করা হচ্ছে।

নিমতলীতে খালি মদের বোতল বিক্রেতাদের অন্যতম সাব্বির। নিমতলী মসজিদের ঠিক বিপরীত পাশে তার দোকানে সাজানো আছে কিছু কাঁচের কৌটা। তবে আড়ালে তার সংগ্রহে রয়েছে নানা ব্র্যান্ডের মদের খালি বোতল।

সাব্বিরের দোকানের কাছেই আরেক ব্যবসায়ী মামুনের দোকান। রাস্তার মাথায় তার ছোট ভাঙারির দোকানে অন্য পণ্যের পাশাপাশি কিছু কাঁচের বোতলও রাখা আছে। তবে পাশের আরেকটি ঘরে তার মূল গুদামে রয়েছে মদের অসংখ্য খালি বোতল।

মামুন নিউজবাংলাকে জানান, দামি ব্র্যান্ডের বোতলের দাম একটু বেশি। আর সাধারণ আকার, বিশেষ করে গোলাকৃতির বোতল ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, গত তিন-চার মাসে দামি ব্র্যান্ডের বোতল বিক্রি বেড়েছে। পানি খাওয়া বা শোপিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য এসব বোতলের তেমন চাহিদা নেই। এগুলো মূলত ভেজাল মদ প্রস্তুতকারকেরা নিয়ে যান।

বৈধ মদের সংকট কেন

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসেবে সারাদেশে বৈধ বার ও ক্লাবের সংখ্যা ১৮৬টি। এদের কোনো কোনোটি বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ সরাসরি আমদানি করছে, বাকিরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে সরবরাহ নিচ্ছে।

এর বাইরে দেশে ২০৩টি মদ বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য শুল্কমুক্ত ওয়্যারহাউজ।

দেশে বেশ কিছু শর্ত ও অতিরিক্ত কর আরোপ করে মদ্যপানকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সরকার। বার সংশ্লিষ্টদের দাবি, ওয়্যার হাউজ থেকে কূটনৈতিক পাসপোর্টের বিপরীতে প্রতি মাসে ২০০ ডলারের মদ সরবরাহের বিধান রয়েছে। তবে সিন্ডিকেট তৈরি করে এসব ওয়্যার হাউজ থেকে মদ নিয়ে বিক্রি করছিল বিভিন্ন বার। এটি বন্ধে সম্প্রতি শুল্ক বিভাগ প্রতিটি ওয়্যার হাউজে অডিট শুরু করে। এর পর থেকে ‍দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিদেশি মদের সংকট।

প্রাণঘাতী ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়ছে যেভাবে
রাজধানীর একটি বার। ছবি সংগৃহিত

ঢাকার একটি ওয়্যার হাউজের সুপারভাইজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে আমাদের এখান থেকে বিভিন্ন বারে মদ যেত। শুল্ক গোয়েন্দাদের ম্যানেজ করেই সব চলছিল। তবে এবার আর তাদের ম্যানেজ করা যাচ্ছে না বলেই ঝামেলা হচ্ছে।’

মদের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ব্ল্যাক লেভেল এখান থেকে দেই তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়, সেটা বারে বিক্রি হয় আট থেকে নয় হাজার টাকায়। একটা ভ্যাট সিক্সটিনাইন আমরা দেই দেড় হাজার টাকায়, সেটা বাইরে বিক্রি হয় সাড়ে তিন হাজার টাকায়। ক্রেতারা ঠিকই বেশি দাম দিয়ে কিনে খান, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লাভের টাকা যায় সিন্ডিকেটের কাছে।’

পরিচয় গোপন রেখে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর একটি বারের ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, ‘আমাদের বারের মদ আমদানির লাইসেন্স আছে। আমরা একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ আমদানি করি। তবে আমদানি করে বিক্রি করা পর্যন্ত আমাদের যা খরচ, তা ওয়্যার হাউজ থেকে আনা মদের দামের চেয়ে ৬০০ গুণ বেশি। আমরা আমদানি করতে গেলে হাজারে ৩০০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এখানেই শেষ না, বিক্রি করতে গেলে প্রতি হাজারে ৩৫০ টাকা সরকার নিয়ে যায়, তার উপর আবার আছে ২০ শতাংশ ভ্যাট। তাহলে বৈধ পথে ব্যবসা করব কী করে?’

ভ্যাট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বার বা বিভিন্ন অনুমোদিত রেস্তরাঁয় বিক্রি হওয়া মদের বেশিরভাগ আসছে অবৈধ পথে। ওয়্যার হাউজ থেকে সংগ্রহ ছাড়াও স্থলসীমান্ত দিয়ে চোরাচালান ও বিদেশিদের লাগেজে আনা হয় অবৈধ মদ। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বলেই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, করোনায় বিমান যোগাযোগ সীমিত হয়ে যাওয়া, সীমান্তে কড়াকড়ি ও ওয়্যার হাউজ থেকে বারে মদ বিক্রির সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ায় বারে অবৈধ মদ কেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই সংকটের মাঝে বেড়েছে ভেজাল মদ তৈরির প্রবণতা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈধ পথে মদ আমদানি বন্ধ নেই। তবে অবৈধ পথগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে করে সরকারের রাজস্ব বেড়েছে। আমাদের এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে। তবে একটি পক্ষ আমদানি বন্ধ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহম্মদ আহসানুল জব্বার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভেজাল মদ তৈরি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। কোনো বার ভেজাল মদ বিক্রির সাহস করবে না। তবুও আমরা বারগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছি। বৈধ বারে মানুষ মদ পান করবে, এটা নিয়মের মধ্যেই আছে, কিন্তু অবৈধ মদ পেলে তো আমরা জব্দ করবই।’

মদ আমদানিতে বিপুল করের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন ধরে শুনছি বার মালিকেরা অতিরিক্ত শুল্কের কথা বলছেন, কিন্তু এতদিন পর শুল্ক নিয়ে কথা কেন? সরকারি শর্ত মেনেই তো তারা এই ব্যবসায় এসেছেন। এখন চুরি করতে পারছেন না বলে শুল্ক নিয়ে মাথাব্যথা। আমার স্পষ্ট কথা তারা বৈধ ব্যবসা করতে চাইলে সবসময় আমাদের সহযোগিতা পাবেন।’

প্রতি জেলায় বৈধ বারের পক্ষে পর্যটন করপোরেশন

দেশের প্রতিটি জেলায় সরকার অনুমোদিত বার চালুর প্রস্তাব করেছে পর্যটন করপোরেশন। সংস্থার ব্যবস্থাপক জিয়াউল হক হাওলাদার (জনসংযোগ) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় বার করা হবে। ডমেস্টিক ওয়েতে বারগুলো উন্নত করতে পারলে ট্যুরিস্টদের মধ্যে আস্থা বাড়বে। ট্যুরিস্টদের সঙ্গে লোকাল মানুষের কানেকটিভিটি বাড়লে স্বাচ্ছন্দ্যে টুরিস্টরা বারে প্রবেশ করতে পারবে। ’

বারে শুল্ক কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে সরকার ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে চাইলেও আমরা কিছু করতে পারব না।’

আরও পড়ুন:
রেকটিফাইড স্পিরিট পানের পর মৃত্যু
সেই রিসোর্টে মদ সরবরাহকারী জাহিদ গ্রেপ্তার
রেকটিফাইড স্পিরিটসহ মাদককারবারি গ্রেপ্তার
বগুড়ায় ‘বিষাক্ত মদ্যপানে’ মৃত বেড়ে ১৬
বগুড়ায় ‘বিষাক্ত মদ’ পানে মৃত্যু বেড়ে ১০

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশেষ
Another 120 people from Libya have been brought back home

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।

সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য

তদন্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।

তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।

গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।

গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।

এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
The accused in the murder case

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।

আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।

তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।

ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।

মন্তব্য

বিশেষ
The 5th Annual Senate Meeting in the BUP

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।

সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।

সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র‍্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।

এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
BNP does not support the electoral college in the presidential election

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’

গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।

এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’

স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’

বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।

মন্তব্য

বিশেষ
Bhawal Chandipur Agrakhola road is like a death

ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী   
ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।

রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।

সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।

একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।

এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মন্তব্য

বিশেষ
Twenty four bucks the family of four runs a family of four

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।

তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।

স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।

ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।

মন্তব্য

p
উপরে