ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহাসিক মাটির ঘর।
মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘরে থাকতে চায়না। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল মানুষজন এখন পাকা দালানের দিকেই ঝুঁকে পড়েছেন। এতে করে দ্রুতই বিলুপ্ত হচ্ছে ‘গরীবের রাজপ্রসাদ’ খ্যাত মাটির ঘর।
এক সময় ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নেই শতকরা ৯০ ভাগ মানুষেরই ছিল মাটির ঘর। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ওইসব এলাকায় মাটির ঘরের জায়গায় শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাকা দালান।
বিজয়নগর উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আগে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা, মকুন্দপুর, দাড়িয়াপুর, কামালমোড়া, সেজামোড়া, ভিটি দাউদপুর, দুরানাল, কচুয়ামোড়া, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, বক্তারমোড়া, ছতরপুর, দুলালপুর, পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর, শ্রীপুর, হরষপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া, পাঁচগাও, বাগদিয়া, হরষপুর, সোনামোড়া, বড়চাল, মেঘশিমুল, সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী, রানুর বাজার, আলীনগর, কাঞ্চনপুনসহ বিভিন্ন গ্রামে ছিল মাটির ঘর।
বর্তমানে ওইসব গ্রামের হাতেগোনা কিছু বাড়িতে মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে দেখা গেছে দালান ঘর ও সেমি-পাকা টিনের ঘর।
এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এটেল মাটি পাওয়া যেতো সেইসব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর তৈরি করত। লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে প্যাক করা হতো।
সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো ২০/৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিবার ১/২ ফুট উচু করে দেয়াল তৈরি করে সেই দেয়ালকে ৫/৬ দিন রোদে শুকানো হতো। তারপর এই দেয়াল আবারও ১/২ ফুট উঁচু করে শুকানো হতো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১০/১২ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো।
তারপর এই দেয়ালের ওপর টিনের চালা বা ছন দিয়ে চালা (ছাউনি) নির্মাণ করা হতো। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করত সময় লাগত প্রায় ২/৩ মাস। পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভেতরের দিকে ধানের তুষ (কুড়া) দিয়ে দেয়ালের ওপর প্রলেপ দেয়া হয়। বাইরের দিকে দেয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। চুনের প্রলেপ দিলে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বাড়ত, তেমনি ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকেও মাটির দেয়াল রক্ষা পেতো। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকতো। যারা মাটির ঘর নির্মাণের কারিগরদের বলা হতো ‘দেয়ালি’।
উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের নিদারাবাদ গ্রামের দেয়ালী নোয়াজ আলী জানান, মাটির বাড়ি তৈরি করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে কার্তিক মাস। কারণ এ সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি হাত ঘর নির্মাণে ১০টাকা করে নিতাম। আবার অনেক সময় ৫/৬ হাজার টাকা চুক্তিতেও ঘর নির্মাণ করে দিতাম।
‘মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করেনা যার জন্য আমরা এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি।’- আক্ষেপের সঙ্গে বলেন নোয়াজ।
উপজেলার নিদারাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ও তরুণ সাংবাদিক এস.এম টিপু চৌধুরী বলেন, ‘আমি ছোট বেলায় মাটির ঘরেই বসবাস করেছি। মাটির ঘরে বসবাস খুবই আরামদায়ক। গরমের দিনে ঠান্ডা আর শীতের দিনে শীত লাগত না।
তিনি জানান, তাদের বাড়িতে সাতটি বড় বড় মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে একটি ঘর ছাড়া বাকি ঘরগুলো ভেঙে সেখানে পাকা দালান নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়ির ঐতিহ্য হিসেবে এখনও প্রায় শতবর্ষ পুরনো একটি মাটির ঘর রাখা রয়েছে।
‘গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে এই মাটির ঘরটিকে আমরা রেখে দেব।’-বলেন টিপু চৌধুরী।
এখনও মাটির ঘরেই থাকেন বলে জানালেন উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. রাসেল খান।
‘আমি এখনও মাটির ঘরেই বসবাস করি। মাটির ঘরে বসবাস খুবই আরামদায়ক। গরমের দিনে ঠান্ডা আর শীতের দিনে ঘরে গরম অনুভুত হয়। আমাদের বাড়িতে পাঁচটি মাটির ঘর ছিল। এখন আমার বাড়িতে দুটি মাটির ঘর আছে। বাকি গুলে ভেঙে পাকা দালান নির্মাণ করা হয়েছে।’
মাটির ঘর বিলুপ্তির কারণ হিসেবে রাসেল খান জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন বিদেশ গিয়ে এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে। ওইসব প্রবাসীরা দেশে এসে মাটির ঘর ভেঙে পাকা দালান নির্মাণ করছেন।
‘রুচিবোধের পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘরে থাকতে চায়না।’- বলেন রাসেল।
উপজেলার বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন খাঁন জানান, আগে তাদের গ্রামের প্রতি বাড়িতেই মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে মাটির ঘরের সংখ্যা একেবারেই কমে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘লাল মাটি ও এঁটেল মাটির অভাব, মাটির ঘর তৈরি করার কারিগর সংকটের কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করতে চায়না। এ ছাড়া গ্রামের লোকজন বিদেশে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন।
‘প্রবাসে থেকে তাদের রুচিবোধেরও পরিবর্তন হচ্ছে। প্রবাসীরা দেশে এসে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা ও বাড়ির সৌন্দর্যের কথা ভেবে মাটির ঘর ভেঙে বিভিন্ন ডিজাইনের পাকা দালান, বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছেন। বাড়িতে একটি পাকা দালান থাকাটা অনেকেই স্ট্যাটাসের অংশ হিসেবে মনে করে।’
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বকুল বলেন, ‘মানুষের আয়-রোজগার বেড়েছে। বিদেশে গিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। তা ছাড়া মানুষের মধ্যে সামাজিক মর্যাদাবোধ ও রুচিবোধ বেড়েছে তাই মানুষ এখন আর মাটির ঘরে বসবাস করতে চায়না। বাড়ির সৌন্দর্যের কারণে ও সামাজিক মর্যাদার কারণে মানুষ মাটির ঘর ভেঙে পাকা দালান নির্মাণ করছে।’
একই কথা বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার আবুল কালাম আজাদেরও।
‘বর্তমান সরকারের আমলে মানুষের আয়-রোজগার বেড়েছে। তা ছাড়া এলাকার অনেক মানুষ বিদেশে যাওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। আয়-রোজগার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে সামাজিক মর্যাদাবোধ ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি বেড়েছে। তাই মানুষ এখন আর মাটির ঘরে বসবাস করতে চায়না। সামাজিক মর্যাদার কারণে মানুষ মাটির ঘর ভেঙে পাকা দালান নির্মাণ করছে।
বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘মানুষ এখন কর্মমুখী। মানুষের আয়-রোজগার বাড়ার কারণে মানুষ দিন দিন সৌখিন হয়ে উঠছে।
‘এ ছাড়া এলাকার প্রচুর মানুষ বিদেশ গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন। এলাকার প্রবাসীরা ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে মাটির ঘরে থাকতে চায়না। এ জন্য মাটির ঘর ভেঙে সুরম্য অট্টালিকা বা পাকা দালান, সেমি-পাকাঘর নির্মাণ করছেন।’
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য