সতেরো শতকের শুরুতেও আদি ঢাকার উত্তরে মিরপুর, কুর্মিটোলা, পল্টন এবং তেজগাঁও এলাকায় ছিল চারটি দুর্ভেদ্য জঙ্গল। বুড়িগঙ্গার দক্ষিণে কামরাঙ্গীরচর ছিল এক বিস্তৃত জলাবন। এসব বনে বিচরণ ছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হরিণ, শুয়োর, কুমির, ঘড়িয়াল, অজগরসহ নানা বিচিত্র প্রাণীর।
এখন একবিংশ শতাব্দীর প্রায় সিকিভাগ পার করে এসে এসব জায়গায় কংক্রিটের অট্টালিকা। পশুপাখিরা বিদায় নিয়েছে। তবে সকলে নয়। এখনও থেকে গেছে অনেক প্রাণী।
ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘এনভায়রনমেন্ট অফ ক্যাপিটাল ঢাকা’ গ্রন্থে রাজধানীর গাছপালা, বন্যপ্রাণী, বাগান, পার্ক, উন্মুক্ত জায়গা ও জলাশয়সহ সার্বিক প্রাকৃতিক প্রতিবেশ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। এর ‘ওয়াইল্ড লাইফ অফ ঢাকা’ শীর্ষক প্রবন্ধে লেখকেরা সরকারি নথির বরাত দিয়ে বলছেন, ১৮০৪ সালেও ঢাকায় শিকারিরা ২৭০টি বাঘের চামড়া জমা দিয়েছিলেন পুরস্কার ও স্বীকৃতির আশায়।
এই এলাকায় জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গলের পরিসর আশঙ্কাজনক হারে কমে আসা এবং তার পরিণতিতে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাতও ছিল নৈমিত্তিক একটা ব্যাপার।
১৮৩৭ সালে পুলিশের হিসাব অনুসারে, সে সময় প্রতি বছর অন্তত এক জন করে মানুষ বাঘের আক্রমণে মারা পড়ত।
এমনকি গত শতকের শুরুর দিকের সরকারি হিসাব অনুসারে, ১৯০৭ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে ঢাকায় ১৩টি বাঘ মারা পড়েছিল শিকারিদের হাতে।
এর ১০০ বছর পর একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ঢাকা পরিণত হয়েছে প্রায় দুই কোটি লোকের এক নগরে। সুউচ্চ ভবনসহ নানাবিধ স্থাপনা, কল-কারখানা আর সারি সারি গাড়ির যান্ত্রিক চিৎকার এই শহরকে পরিণত করেছে কংক্রিটের জঙ্গলে। তবু মাঠ-প্রান্তর-সবুজহীন এই রুক্ষ নগরে এখনও টিকে আছে অনেক বন্য প্রাণ। কোনোটি স্বল্প পরিসরে। আবার অবিশ্বাস্য হলেও কোনো কোনো প্রজাতি আছে লক্ষ-কোটিতে।
প্রায় ৪৫ পৃষ্ঠার ‘ওয়াইল্ড লাইফ অফ ঢাকা’ প্রবন্ধের তিন লেখক সৈয়দ মো. হুমায়ুন কবির, ইনাম আল হক ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রবন্ধের শেষাংশে ঢাকায় এখন পর্যন্ত টিকে থাকা প্রাণীদের একটা তালিকা সংযুক্ত করেছেন। এই তালিকা ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের বরাতে ঢাকায় যেসব প্রাণীর অস্তিত্ব জানা গেছে, তা যথেষ্ট চমক জাগানিয়া।
বনরুই
ঢাকার কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের আশপাশ, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন ও আশপাশের এলাকায় বিপন্ন তালিকাভুক্ত চায়নিজ প্যাঙ্গোলিনের দেখা পাওয়া যায়। এটা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটা খাদ্য হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য। এর গায়ের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাদের মাংসও চীনে একটি উপাদেয় খাবার বলে গণ্য করা হয়।
রিসাস বানর
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এদের মাঝেমধ্যেই দেখা যায় দল নিয়ে রাস্তা পার হতে। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয় এদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। খাবার যতটা খায়, নষ্ট করে তার চেয়ে বেশি। ঢাকাবাসীর অপ্রিয় সঙ্গী এরা।
পাতিশেয়াল ও খ্যাঁকশেয়াল
কুর্মিটোলা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন ছাড়া মিরপুর সিরামিক ফ্যাক্টরি এলাকায় শেয়ালের দল দেখা যায়। এর ইংরেজি নাম গোল্ডেন জ্যাকেল। বাংলায় পরিচিত পাতিশেয়াল নামে। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পাতিশেয়াল ছাড়াও ঢাকায় এখনও দু-একটি খ্যাঁকশেয়াল থাকতে পারে। সুদর্শন এই প্রাণীটির মুখ সরু, খাড়া কান। স্বভাবে নিশাচর। ছয় থেকে আট বছর বাঁচে। কাঁকড়া, ইঁদুর, সাপখোপ, উইপোকা, পোকামাকড়, ফলপাকুড়, ছোট পাখি খায়।
কাঠবিড়ালি
ঢাকায় কাঠবিড়ালির বসবাস খুব বেশি দিনের না। যখন যশোর, ঝিনাইদহ থেকে ট্রাকে করে কলা আসতে শুরু করে, তখন কলার সঙ্গে এরাও এসে ঢাকায় বসতি গাড়ে। চিড়িয়াখানার খাঁচার বাইরে বোটানিক্যাল গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
তিন ধরনের ইঁদুর
ঢাকায় রডেনসিয়া বর্গের এই প্রাণী সংখ্যায় হয়তো মানুষের চেয়ে বেশি আছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে বড় পরিবার, যা দখল করে আছে বন্যপ্রাণীর ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে আকারে বড়সর ধেড়ে ইঁদুরের দেখা মিলবে পুরান ঢাকার বড় বড় গুদাম ও স্যাঁতসেঁতে ঘরগুলোতে, যা মেঠো ইঁদুর বা খেত ইঁদুর নামেও পরিচিত।
আবার ঢাকায় মাঝারি আকারের কালো রঙের ইঁদুরও আছে যথেষ্ট। এদের শরীরের চেয়ে লেজ বড়। পৃথিবীর সব মহাদেশে এদের অস্তিত্ব আছে। প্লেগ ছড়াতে ওস্তাদ। এদের খাদ্য শস্যদানা, ফল, গাছের নরম অংশ, বীজ, পাতা, ব্যাঙের ছাতাসহ নানা মেরুদণ্ডী-অমেরুদণ্ডী প্রাণী।
এদিকে সবচেয়ে ছোট আকারের নেংটি ইঁদুরের বৈজ্ঞানিক নাম mus musculus। লম্বায় এরা তিন থেকে সাড়ে তিন ইঞ্চি। মূলত শস্যভোজী। একবারে ছয় থেকে আটটি বাচ্চা জন্ম দেয়। তাও বছরে আট থেকে দশ বার।
বেজি
ঢাকার বেজি এশিয়ার সবচেয়ে ছোট। শরীর ৩০ সেন্টিমিটার, লেজ ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। ওজন খুব বেশি হলে ৫০০ গ্রাম। লোমের রং লালচে হলদে, নয়তো বাদামি লাল। পুরান ঢাকা, ইস্কাটন, মগবাজার, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এমনকি বনানী-গুলশানেও বেজি দেখা যায়।
বাদুড় ও চামচিকা
বড় বাদুড়ের দেখা মিলবে শহরের রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চন্দ্রিমা উদ্যান ও বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বেশ কিছু এলাকায়। শেয়ালের সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এর কিছু মিল নিশ্চয়ই খুঁজে পেয়েছেন। তাই বাদুড়কে বলা হয় উড়ন্ত শৃগাল বা ফ্লাইং ফক্স। এরা মূলত ফলভোগী। আর ছোট আকারের চামচিকা হচ্ছে উপকারী বাদুড়। মূলত পতঙ্গভুক।
চিকা
চিকা বা ছুচন্দর সাদাটে বাদামি বা হালকা বাদামি পশমে আবৃত। ইঁদুরের মতো দেখতে। সুচালো মুখের চিকার লেজে ও নাকের ওপর শক্ত লোম আছে। দুর্গন্ধের জন্য এরা কুখ্যাত। শরীরের দুই পাশে তরল গন্ধথলি আছে। এই গন্ধ এত বিকট যে বিড়াল সাধারণত এদের ধরতে চায় না। সাপ ভুল করে ধরলেও ছেড়ে দেয়।
কাছিম, সাপ
ঢাকায় এখনও যে অল্পসংখ্যক পুকুর বা জলাশয় টিকে আছে তার কোনো কোনোটিতে কাছিমের দেখা পাওয়া যাবে। সাপও আছে দুই-এক প্রজাতির।
সজারু
স্তরে স্তরে সাজানো লম্বা কাঁটায় আকীর্ণ শরীরের এই প্রাণীটি রাতে চলাফেরা করে। ষাটের দশকে মিরপুর, গুলশান, বাড্ডা এবং বর্তমান উত্তরা এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণে দেখা যেত। আজকাল মাঝেমধ্যে মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের আশপাশে বিপন্ন অবস্থায় ধরা পড়ে। এরা পুরোপুরি নিরামিষাশী।
শতেক প্রজাতির পাখি
পাখি বিশেষজ্ঞদের হিসাবে বর্তমানে ঢাকা শহরে শতাধিক প্রজাতির পাখি আছে। বিশেষ করে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি গড়ে ওঠায় পাখির সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়ায় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাই, বোন ও ভগ্নিপতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বুধবার সকালে নিজ বসতঘর থেকে শরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শরিফের ছোট ভাই আরিফ হোসেন, বড় বোন খুকি আক্তার ও ভগ্নিপতি নাছির উদ্দিন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার নিহত শরীফের মা বরুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘শরীফ মাদকাসক্ত ছিল। কিছুদিন আগে শরীফ মাদকের টাকা যোগাড়ের জন্য ভাই আরিফের অটোরিকশা বিক্রি করে দেয়। মাদকের টাকার জন্য মাকেও মারধর করত সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শরিফের ছোট ভাই আরিফ ও তার বোন খুকি মিলে পরিকল্পনা করে শরীফকে পঙ্গু করে ঘরে রেখে দেবে। বাকি জীবন তাকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত ১ টার দিকে পুকুরপাড়ে শরীফকে হাত পা বেঁধে পেটানো হয়। বাড়িতে এনে আরেক দফা পেটানো শেষে হাত পা বেঁধে ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় শরীফ মারা যায়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল জানান, তথ্য প্রযুক্তিসহ নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
আরও পড়ুন:সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বাতাসের নিম্ন মানে প্রথম সারিতে রয়েছে ঢাকা।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউ এয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ১৮০ স্কোর নিয়ে ১০০টি শহরের মধ্যে বায়ুর নিম্ন মানে দ্বিতীয় ছিল ঢাকা।
একই সময়ে প্রথম ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই ও ভারতের দিল্লি।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ দিনের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ২২ দশমিক ৩ গুণ বেশি।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
আজ সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৮০। এর মানে হলো ওই সময়টাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিতে হয় রাজধানীবাসীকে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার শহরে বুধবার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভেতরে গ্রাহককে অজ্ঞান করে ৮১ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তানভীর হাবিব চৌধুরী রুমেল নামের ওই গ্রাহক মৌলভীবাজার মডেল থানায় অভিযোগটি করেন।
ব্যাংকের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টা সাত মিনিটে ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের শহরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসিতে বুধবার সকালে ১১টার দিকে প্রবাস থেকে আসা টাকা তুলতে যান ব্যবসায়ী তানভীর। দুই লাখ টাকা তুলে তানভীর এক হাজার টাকার নোট দেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তা এক হাজার টাকার বান্ডিল দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাকে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডেল প্রদান করেন।
‘তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রুমেলকে বলেন, তিনি এক হাজার টাকার বান্ডেল এক্সচেঞ্জ করবেন। তখন রুমেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি গুনতে থাকেন। টাকা হাতে নেয়ার পর রুমেল কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান অনুভব করেন। তখন ওই চক্র ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।’
অভিযোগকারী রুমেল বলেন, ‘ওই ব্যক্তির হাতে থাকা টাকার বান্ডেল আমাকে গুনতে দিয়ে আমাকে একটি চেয়ারে নিয়ে বসান। আমি টাকা হাতে নেয়ার পর নিস্তেজ অনুভব করি। সবকিছু আমার কাছে কিছু সময়ের মধ্যে এলোমেলো মনে হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে একটু স্বাভাবিক হলে গুনে দেখি, তারা আমার কাছ থেকে ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।
‘পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তারা ১১টা সাত মিনিটে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই চক্রের ছবি শনাক্ত করা হয়।’
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসির মৌলভীবাজার শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, ব্যাংকের একজন গ্ৰাহকের সঙ্গে কয়েকজন লোক গল্পগুজব করে উনার সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, উনার টাকা নিয়ে চলে গেছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘একজন ব্যাংক গ্ৰাহক অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নদীতে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চর বাউশিয়া বড়কান্দি গ্রাম সংলগ্ন গোমতী নদীতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারানো শাহেদ (১৪) ওই গ্রামের মোশারফ মিয়ার ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলে গোমতী নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে যায় শাহেদ। ওই সময় হঠাৎ করে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে মারা যায় সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের হাসপাতালে শাহেদকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আজাদ রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি, নিহতের লাশ গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।’
নিহতের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে মোটরসাইকেলে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক প্রবাসী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা শহর মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আনোয়ার হোসেন অনিক (২২) কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ জগদানন্দ গ্রামের মাজারুল হক মন্টু মিয়ার ছেলে।
সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, আবুধাবি প্রবাসী অনিক দুই মাস আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি থেকে জেলা শহর মাইজদীতে আসেন তিনি। ওই সময় মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে রাস্তার উল্টোপথে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে পাবনায় ভুয়া জন্মসনদ তৈরির ঘটনায় জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপপরিচালক সাইফুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তদন্ত প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করা হয়। এতে বহিরাগত কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন জড়িত।
প্রতিবেদনে জেলার সুজানগরের আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল, যার জবাব দিয়েছেন তারা।
পাবনার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির ঘটনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নির্দেশে ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
‘পাবনার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক সাইফুর রহমানকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনি জমা দেন। আমি প্রতিবেদনটি এখনও দেখিনি। দেখার পর বিস্তারিত জানাতে পারব।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপপরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি সুজানগরের সেই আহম্মদপুর ইউনিয়নে গিয়ে সব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। সেখানে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও অনিয়ম পেয়েছি। দোষীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, ‘সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইউনিয়নটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। তারা সেটির জবাব দেন।
‘এটা (তদন্ত প্রতিবেদন) আমরা জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দিই। জেলা প্রশাসক দেখার পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব কারণ দর্শানোর নোটিশের যে জবাব দিয়েছেন, তা সন্তোষজনক কি না, সে বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘সব বিষয় ডিসি স্যার বলতে পারবেন।’
পাবনার সুজানগর উপজেলার আহমেদপুর ইউনিয়নে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করা হয়। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসার পর সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে জন্মনিবন্ধনের সার্ভার থেকে ভুয়া সনদটি সরানো হয়।
এ ঘটনায় নিলয় পারভেজসহ কয়েকজনকে আসামি করে আমিনপুর থানায় মামলা করা হয়।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন।
উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পিটুনির শিকার দুজনের মধ্যে একজন নিহত হন সিংহশ্রী ইউনিয়নের নামিলা গ্রামের চান মিয়ার বাড়িতে। অন্যজন একই ইউনিয়নের বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে প্রাণ হারান।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত দুজনের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নামিলা গ্রামে চান মিয়ার বাড়িতে অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি গরু চুরির উদ্দেশ্যে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে চান মিয়া ডাকাডাকি করলে স্থানীয়রা জড়ো হন। ওই সময় একজনকে ধরে সংঘবদ্ধ পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, স্থানীয়দের ধাওয়া খাওয়া অপরজন পার্শ্ববর্তী বড়িবাড়ি গ্রামে ধানক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। ওই সময় উত্তেজিত লোকজন ক্ষেতের আড়াল থেকে খুঁজে বের করে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ জানান, গরু চুরি রোধে এলাকায় গ্রামবাসী পাহারা বসিয়েছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গাড়িতে করে এক কৃষকের গরু চুরি করতে যান কয়েকজন। বিষয়টি টের পেয়ে একজোট হয়ে দুজনকে পিটুনি দেয় গ্রামবাসী। এতে নামিলা গ্রামে একজন ও বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে আরেকজন নিহত হন।
চেয়ারম্যান আরও জানান, গ্রামে গরু চুরি করতে আসা আরও চার থেকে পাঁচজন আছেন, যাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কাপাসিয়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই আরিফ হোসেন জানান, গরু চোর সন্দেহে গ্রামবাসীর সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হন, যাদের মরদেহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য