২০১৫ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফ্রান্সপ্রবাসী চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রকাশ রায় ও সংগীতশিল্পী আরিফ রানার সঙ্গে হাজির হই প্যারিসের অভিজাত পাড়ার এক বাড়িতে। এই বাড়িতে থাকেন এক বাঙালি কবি ও গবেষক। তখনই তার বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছি। নাম পৃথীন্দ্রনাথ মুখার্জী। ভারতীয় বংশদ্ভূত এই ফরাসির সঙ্গে বাংলাদেশেরও রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক।
বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় তার পূর্বপুরুষের ভিটে। ‘বাঘা যতীন’ নামে উপমহাদেশে পরিচিত বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নাতি তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার জন্যে যে বিদেশি বন্ধুদের আমরা খেতাব দিয়েছি, তিনি তাদের একজন। অসুস্থতার কারণে তিনি ঢাকায় এসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি। সেবার তার হয়ে পদক গ্রহণ করেছিলেন ঢাকায় সে সময়ের ফরাসি রাষ্ট্রদূত।
প্যারিসের বাঙালি কমিউনিটির সবার প্রিয় ‘পৃথীনদা’ তিনি। জন্মস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হলেও তার পূর্বপুরুষের ভিটা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায়। ফরাসি দর্শন, সাহিত্য, ভারতীয় দর্শন ও ইতিহাসের গবেষক হিসেবে তিনি পেয়েছেন ফরাসি সরকারের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, পদক ও ফরাসি একাডেমি খেতাব। কবিতায় রয়েছে তার দারুণ দখল। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন অন্যতম রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক কাহিনিচিত্র।
সেদিনের আড্ডায় এ গুণী পণ্ডিত বলছিলেন, প্যারিসে বসবাসের শুরুতেই ফরাসি মূল স্রোতের গুণীজনদের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। যদিও শেষ বয়সে এসে ধরা দিয়েছেন ‘বাঙাল’ বা বাঙালিদের কাছে।
সাত বছর বয়সেই টাইফয়েডের কারণে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন পৃথীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। কেবল প্রবল মানসিক শক্তির কারণে হুইল চেয়ার ঠেলে ঠেলে উঠে গেছেন সাফল্যের শিখরে। আড্ডায়ও দারুণ ‘জোশ’ তার। বলে চলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার জড়িয়ে পড়ার গল্প।
তিনি বলেন, তার নানাবাড়ি কুষ্টিয়া আর নিজেদের আদি বাড়ি সেকালের যশোরে, যা বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলার অংশ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঘা যতীনের সেই ভিটায় জাদুঘর ও ক্যান্টনমেন্ট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার পর সে সম্ভাবনা গেছে তিমিরে মিলিয়ে। বাকি সব সম্পত্তিসহ বাঘা যতীনের ভিটেবাড়ি হয়েছে বেদখল।
পৃথীন্দ্রনাথ বলেন, ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন তার রক্তেও যুদ্ধে যাওয়ার নেশা ধরেছিল। তিনি তখন প্যারিস সরকারের ফেলো হিসেবে গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। একই সঙ্গে ব্যস্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো, ফরাসি রেডিও এবং টেলিভিশনের প্রযোজক হিসেবে। কিন্তু তার মনে হচ্ছিল, সবই মিছে। বারবার মনে হচ্ছিল বাপ-ঠাকুরদার ভিটে রক্ষায় অংশ নেওয়া উচিত এই যুদ্ধে।
তিনি বলেন, ‘করণীয় ঠিক করতে না পেরে একদিন গেলাম প্যারিসের ভারতীয় দূতাবাসে। ভারতের রাষ্ট্রদূত আমাকে জানালেন, ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি প্যারিসে থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দিলেন। কষ্ট হলেও আমি সেই পরামর্শ মেনে নিলাম। কারণ মন পড়েছিল, বর্ষাস্নাত তাল-হিজলের দেশের সবুজ গ্রামে, যেখান দিয়ে হলিউডি সিনেমার দৃশ্যের মতো বৃষ্টিতেও ধোঁয়া ওড়ে।’
পৃথীন বলেন, এরপরই শামসুর রাহমান, জসীমউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলামসহ বাংলা ভাষার কবিদের কবিতা দ্রুত ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করে ফেলেন তিনি। রেডিওতে সেই কবিতাগুলো জনপ্রিয় আবৃত্তিকারদের দিয়ে আবৃত্তি করাতেন। টেলিভিশনেও আবৃত্তি করাতেন ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের দিয়ে। রেকর্ডগুলো বিক্রি করে তহবিল জোগাড় হতো মুজিবনগর সরকারের জন্য।
কেবল তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনিলো মদঁ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কবিতা লেখেন।
ফরাসি ও ইংরেজি পত্রিকায় প্রতিদিনই কলাম লিখতেন পৃথীন্দ্রনাথ। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল ও পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত ছাপছিলেন যুদ্ধের ভয়াবহতা আর নিষ্ঠুরতার কথা। এভাবেই ফরাসি দেশে বাংলাদেশের পক্ষে মতামত গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
সরাসরি ময়দানেও যুদ্ধ করতে পারতেন তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশের পক্ষে সে সময় বহির্বিশ্বে মতামত তৈরি করাও ছিল এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। তিনি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন।
দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে ১৯৭৩ সালে পৃথীন্দ্রনাথ ঢাকায় এসেছিলেন। সেই স্মৃতি হাতড়ে আনন্দে চিকচিক করে ওঠে তার চোখ। বঙ্গবন্ধুর নাম বলে করজোড় কপালে ছুঁয়ে বলে ওঠলেন, ‘যে আগুন আমাদের এত দূর এগিয়ে এনেছে, তাকে প্রণাম। আমার দাদুর শিষ্যরা কলকাতায় তার গুরু ছিলেন।’
তার উদ্যোগে জ্যাঁ পল সার্ত্র, আন্দ্রে মালরোর মতো মহান ফরাসি দার্শনিকদের তিনি বাংলাদেশের সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলেন। মালরো বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধের জন্য একটি আর্ন্তজাতিক ব্রিগেডও গঠন করেছিলেন। তিনি নিক্সনকেও চিঠি লিখেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত সেই কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পদক দিয়েছে। ফরাসি সরকার দিয়েছে ‘নাইট’ উপাধি। তবে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার একটাই, আর সেটা বাংলাদেশ সরকারের দেয়া মৈত্রী পুরস্কার।
একাত্তরে আটক হয়েছিলেন পৃথীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যয়। সে আরেক গল্প।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর জঁ ক্যা নামে এক জেদি লড়াকু ফরাসি তরুণ এক দুঃসাহসিক কাণ্ড করেছিলেন। প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে একটি পাকিস্তানের বিমান জিম্মি করেছিলেন ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহায্য পাঠাতে ফরাসি সরকারকে বাধ্য করা।
১৭ জন যাত্রী ও ছয়জন ক্রু নিয়ে বিমানটি লন্ডন থেকে প্যারিস, রোম ও কায়রো হয়ে করাচি যাচ্ছিল। এর মধ্যে পাঁচ যাত্রী প্যারিস থেকে ওঠার কথা। ওই পাঁচ জনের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যূহ ভেদ করে উড়োজাহাজে উঠে বসেন জঁ ক্যা।
বেলা তখন ১১টা ৫০ মিনিট। পাইলট আকাশে ওড়ার প্রস্তুতি হিসেবে বিমানটি চালু করতেই পকেট থেকে পিস্তল বের করে জঁ ইঞ্জিন বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কেউ তার নির্দেশ অমান্য করলে সঙ্গে থাকা বোমা দিয়ে পুরো বিমানবন্দর উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। ওয়্যারলেস কেড়ে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে জঁ নির্দেশ দেন বিমানটিতে যাতে ২০ টন ওষুধ ও চিকিত্সা সামগ্রী তুলে তা যুদ্ধাহত ও বাংলাদেশি শরণার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নাড়াতে পারেনি।
প্যারিসের সব পুলিশ যেন সেই দিন অরলি বিমানবন্দরে এসে হাজির হয়েছিল।
জঁ ক্যাকে ছাড়াতে গিয়ে বিমানবন্দরে আটক হন পৃথীন্দ্রনাথ। আটক অবস্থাতেই জানতে পারেন দীর্ঘ আট ঘণ্টার অপারেশন শেষে পাকিস্তান এয়ারলাইনসের (পিআইএ) বিমানটিকে জঁ-এর কাছ থেকে মুক্ত করেছে পুলিশ। জঁকে গ্রেফতার করে অরলি পুলিশ ফাঁড়িতে নেয়া হয়।
‘বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে অস্ত্র হাতে নিতে আমি প্রস্তুত’ – এমন ঘোষণা দিয়ে তখন ফ্রান্সসহ ইউরোপজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন ৭০ বছর বয়সী লেখক আন্দ্রে মালরো। জঁ গ্রেফতার হয়েছেন খবর পেয়ে তিনিও ছুটে গিয়েছিলেন অরলি পুলিশ স্টেশনে। ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে কথা বলে গলের মন্ত্রিসভার মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী মালরো পৃথীন্দ্রনাথকে থানা থেকে মুক্ত ককরেন। এরপর মালরো নামেন জঁ-এর মুক্তির লড়াইয়ে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মানি এক্সচেঞ্জে ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পর আসামিদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সূত্র ধরেই অস্ত্রসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-চক্রের হোতা মো. জলিল মোল্লা (৫২), মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), মো. সোহাগ হাসান (৩৪) ও পলাশ আহমেদ (২৬)। এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, তিনটি মোটরসাইকেল, পিস্তল, গুলি, জাল টাকা ও লুণ্ঠিত টাকা-বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে।
পেশাদার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টাকা ও স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে আসছিল। চক্রটি দীর্ঘদিন মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের ওপর নজরদারি করে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টুরোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান যুগ্ম-কমিশনার ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ সি-ব্লকের বাসা থেকে ২১ লাখ টাকা ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরের অফিসে যাচ্ছিলেন। শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি গলির মুখে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে ওত পেতে থাকা ৭ থেকে ৮ জন মুখোশধারী ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে। তাদের একজন পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে আরেকজন গুলি ছোড়ে এবং একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদুল রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ডাকাতরা চারটি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার ভিডিও একজন পথচারী মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় আহত জাহিদুল হক চৌধুরী বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন। ঘটনার পরপরই ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিবির একাধিক টিম মাঠে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি প্রথমে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস শনাক্ত করে। মাইক্রোবাসের চালক জাফরকে (৩৩) গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে তথ্য বিশ্লেষণ করে একযোগে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতির ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এ চক্র আগেও ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত ছিল। গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গুলি করে ৫০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই এবং ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে গুলি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এ চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামিরা।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতি চালাতে এ চক্র আধুনিক প্রযুক্তি, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন ছদ্মবেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে যুগ্ম-কমিশনার ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।
রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।
সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।
তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।
স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।
ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।
গানবাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপস জামিনে মুক্ত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যায় জামিনের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, ‘গানবাংলার কৌশিক হোসেন তাপসের জামিনের কাগজপত্র গত বুধবার দুপুরে কারাগারে আসে। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বের হন।’ গত বছরের ৩ নভেম্বর গভীর রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে কৌশিক হোসেন তাপসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বাদী ব্যবসায়ী ইশতিয়াক মাহমুদ। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাইস্কুলের সামনে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এক কর্মসূচিতে অংশ নেন ইশতিয়াক। সেখানে আওয়ামী লীগ, যুব লীগ ও ছাত্র লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। অভিযুক্তরা অতঙ্কিত হামলা চালিয়ে ইশতিয়াক মাহমুদকে মারধর ও গুলি করেন। আহতের পেটে, পিঠে, হাতে ও মাথায় গুলি লাগে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পেট থেকে গুলি বের করা হয়। ঘটনার ৩ মাস পর, ২৯ অক্টোবর উত্তরা পূর্ব থানায় ইশতিয়াক মাহমুদ নিজেই একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। মামলায় তৎকালীন আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। কৌশিক হোসেন তাপস ছিলেন মামলার ৯ নম্বর আসামি। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মামলাটি আদালতে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলমান।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন তার কর্মকাণ্ডে আইন লঙ্ঘন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ইশরাক হোসেন এখন যা করছেন সেটা ক্রিমিনাল অফেন্স। তিনি আইন লঙ্ঘন করছেন। গতকাল বুধবার দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আসিফ মাহমুদ।
ইশরাক হোসেনকে রাজনৈতিক উদ্দেশে মিসগাইড করা হচ্ছে এবং তাকে দিয়ে এসব করানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
বিএনপির সঙ্গে এখন সরকারের ভালো সম্পর্ক। এই সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ইশরাককে অনুরোধ করেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার গেজেট প্রকাশ যখন হয়েছে তখন পর্যন্ত বিষয়টি বিচারাধীন ছিল।
তাই সেই সময়ের মধ্যে তার শপথ করানো সম্ভব হয়নি। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেসময় তার শপথের জন্য ফাইলও তৈরি করেছিল। পরে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে তা বন্ধ করতে হয়েছে।
জনগণের কথা চিন্তা করে ইশরাকের এই পথ থেকে সরে আসা উচিত বলে মনে করেন আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সব ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এটাও সম্ভব ছিল। ইশরাক আরো দায়িত্বশীল এবং পরিপক্ব আচরণ করবেন এমন আশা করছি।
মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ালেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি নগরভবনে সভা করেছেন সম্প্রতি। গতকাল নগর ভবনে চলমান টানা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন তিনি।
মশক নিধন কার্যক্রম শুরুর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ইশরাক সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের মধ্যেও নাগরিকদের জরুরি সেবা চালু রেখেছি। কিন্তু স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তা বন্ধের ষড়যন্ত্র করেছেন।’
তার দাবি, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করে সরকার একতরফাভাবে প্রশাসক দিয়ে নগর পরিচালনা করছে, যা আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট উপেক্ষার শামিল।’
ঈদের ছুটি শেষে কাজে যোগ দিতে গত শনিবার রাতে বাসে করে ঢাকায় রওয়ানা দেন আব্দুল কাইয়ুম। সিলেটের জকিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা কাইয়ুম ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২৩৫ কিলোমিটার দুরত্বের সিলেট থেকে বাসে করে ঢাকা যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সে হিসেবে ভোরের আগেই সাইফুল ইসলামের ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি গিয়ে পৌঁছান পরদিন সকাল ১১টায়। ঢাকা যেতে তার সময় লাগে প্রায় ১১ ঘন্টা।
বিরক্তকর এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কাইয়ুম বলেন, ‘এই সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তাই সড়কের অনেকটা জুড়ে- মাটি, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন সামগ্রী পড়ে আছে। বৃষ্টির কারণে মাটি ছড়িয়ে পুরো সড়ক কাদাময় হয়ে পড়ে। এতে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবহানের গতি কমিয়ে আনতে হয়।’
তিনি বলেন, সিলেট থেকে মাধবপুর পর্যন্ত মোটামুটি গতিতে গাড়ি চলেছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবেশ করার পর থেকেই দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। এই যানজট ছিলো প্রায় ঢাকা পর্যন্ত । ফলে ৫ মিনিট গাড়ি চলে তো আধাঘন্টা থেমে থাকে, এভাবেই আসতে হয়েছে।
এই অভিজ্ঞতা সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট-পাকা সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব যাত্রীদেরই। ভাঙ্গাচূরা এই সড়কে সবসময়ই লেগে থাকে যানজট। সবচেয়ে বেশি যানজট হয় ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড থেকে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে। এতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগে গন্তব্যে পৌছতে। ঈদের মতো উপলক্ষ্যে সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়লে তো পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করে। ৫/৬ ঘন্টার পথ পেরোতে লাগে যায় ১৬/১৭ ঘন্টা। এতে করে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই সড়কে দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীকরণের কাজ চলছে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অপরদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এই দুই প্রকল্পের কাজই চলছে একেবারে ধীরগতিতে। আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেনের কাজ মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ ছিল। এদিকে, বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এই সড়কে এখন জরুরী সংস্কার কাজও বন্ধ রয়েছে। ফলে ভাঙাচোরা সড়ক দিয়েই যান চলাচল করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অংশের চলমান কাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সড়কের একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। ফলে এই অংশে সবসময়ই লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট।
সিলেট থেকে নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করতে হয় ব্যবসায়ী ফয়সল আলমকে। তিনি বলেন, ‘সবসময় ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক সময় বাসে চলাচল করতে হয়। কিন্তু এই সড়কে বাসে করে যাতায়াতের দুর্ভোগের আর কিছু নেই। বাসে ওঠার পর কখন গিয়ে যে ঢাকায় পৌছব তার কোন ইয়াত্তা নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। সড়ক ভাঙার কারণে ঝাঁকুনি তো আছেই।
তিনি বলেন, প্রায় ২ বছর ধরে ছয় লেনের কাজ চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এখনও ভূমি অধিগ্রহণই শেষ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছরেও কাজ শেষ হবে না।
ফয়সল বলেন, ‘সড়কের এই দুরবস্থার সুযোগে সিলেট-ঢাকা রুটে বিমান ভাড়াও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ফেলা হয়েছে।
কেবল যাত্রীরা নয়, সড়কের বেহাল দশার কারণে চালকদেরও নাভিশ্বাস উঠে গেছে। ঢাকা-সিলেট সড়কে চলাচলকারী মিতালী বাসের চালক গউছ উদ্দিন বলেন, ‘সড়কের এমন বেহাল অবস্থা যে আমরা যাত্রীদের কেবল যাত্রার সময় বলি। পৌঁছার সময়ের ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দেই না। আগে ঢাকা-সিলেট একদিনে যাওয়া-আসা করতে পারতাম। এখন কেবল যেতেই একদিন লেগে যায়।
এই সড়কে দুর্ভোগের পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাঙাচূড়া সড়ক, চলমান উন্নয়ন কাজ ও বিভিন্ন স্থানে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা দোকানপাটের কারণে সবসময় যানজট লেগেই থাকে।’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট অংশের হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে শেরপুর পর্যন্ত অংশ ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে একপাশ বন্ধ রেখে সম্প্রসারণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ। অনেক জায়গায় মাটি ভরাট ও জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন দেখা দিচ্ছে যানজটের। এছাড়া সড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বেড়েছে ভোগান্তি। বিভিন্ন স্থানে সড়ক দেবে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। আবার কোথাও পিচ সরে গিয়ে নিচের পাথর বের হয়ে এসেছে। এসব কারণে যানবাহনের গতি কমে আসায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনাও। ছয় লেনের কাজ চলমান থাকায় এখন ভাঙাচোড়া অংশও সংস্কার করছে না সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
যদিও তবে সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল সড়কে এখন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না। সড়কের পাশে কাজ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে। দুই লেনের মহাসড়কটি ছয় লেন হচ্ছে। তাই পুরনো সড়কে খুব বেশি ব্যয় করা হচ্ছে না। যানবাহান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল ততটুকু করা হচ্ছে।
ছয় লেনের কাজ দুই বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনের উন্নীতকরণ কাজ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলেও দুই বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ হচ্ছে ধীরগতিতে। বর্তমান সড়কের দুপাশে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় যাতায়াত ভোগান্তিতে সিলেটে অঞ্চলের কোটি মানুষ। ঢাকা সিলেট ৬ লেন প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার দেবাশীষ রায় বলেন, প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ১৫/১৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। একারণে কাজ আশানুরুপ এগোয়নি। তবে এখন জটিলতা অনেকটা কেটে গেছে। এখন দ্রুত গতিতেই কাজ এগিয়ে চলবে।
এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ সম্প্রসারণ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এলাকা চার লেনে উন্নীতকরণ করার কথা। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল আশুগঞ্জ-আখাউড়া ৫১ কিলোমিটার সড়কে ৪ লেন প্রকল্পের কাজ। যদিও নভেম্বর থেকে আবার এই সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, ‘এখণ পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।’
সাদা বস্তায় টকটকে লাল মরিচ, এই দৃশ্য এখন গাইবান্ধার ফুলছড়ি হাটের চেনা রূপ। দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় মরিচের পাইকারি হাট এটি। জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের পুরাতণ হেডকোয়ার্টার এলাকায় বসে ওই ঐতিহ্যবাহী হাট। প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে কোটি টাকার বেচা-কেনা। তবে এই হাটের নেই নিজস্ব কোন জায়গা। হাট বসে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভাড়া করা জায়গায়।
সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, ‘গাইবান্ধার সদর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৬৫টি চরে উল্লেখযোগ্য হারে চাষ হয় লাল মরিচের। এসব চরের উৎপাদিত শুকনা মরিচই বেচা-কেনা হয় এই হাটে। স্থানীয় ব্যবসায়ি ছাড়াও জামালপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর ও রাজধানী ঢাকা সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে মরিচ কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দেশের নামকরা প্যাকেটজাত খাদ্যপ্রস্তুত কোম্পানির প্রতিনিধিরাও এ হাট থেকে নিয়মিতভাবে মরিচ সংগ্রহ করে থাকেন।
গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, ‘ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে দ্রুত গতিতে একের পর এক ছুটে আসছে নানা আকারের নৌকা। প্রতিটি নৌকায় বোঝাই করা রয়েছে সাদা বস্তা, যার ভেতরে ঠাসা লাল মরিচ। নৌকাগুলোর সঙ্গে আছে মানুষ- কেউ চালক, কেউ বা সহকারি, সবাই ব্যস্ত নিজেদের কাজে। এ সময় নদী যেন একটি ভাসমান জীবনে পরিণত হয়। যেখানে এক মুহূর্তের জন্যও জীবনের গতি থেমে নেই। হাটের দিন ভোর বেলা থেকেই নদীর ঘাটে এমন ব্যস্ততা চোখে পড়ে। ঘাটে নৌকা ভিড়লে ঘাটজুড়ে উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
নৌকা ঘাট থেকে মরিচের হাটে যেতে নদী পথ পাড়ি দিতে হয় প্রায় আধা কিলোমিটার। কোন কোন সময়ে আরও বেশি। নৌকা থেকে নেমেই চরাঞ্চলের কৃষকরা ছুটে চলেন হাটের দিকে। যাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণ মরিচ, তারা কেউ মাথায়, কেউ ভারে সাজিয়ে হেঁটে চলেন বালির পথ ধরে। গন্তব্য মরিচের হাট। বেশি পরিমাণ মরিচ বহনকারীরা ব্যবহার করে ঘোড়ার গাড়ি। প্রচণ্ড রৌদ্র আর ওই খরা তাপের যাত্রা শুধু পুরুষদের নয়- এই পথে সঙ্গী হতে দেখা গেছে নারী ও শিশুদেরও। এর পরই বেলা বারার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় লাল মরিচের বেচা-কেনা। ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামে মুখরিত হয়ে ওঠে হাটের মাঠ। মরিচের জাত আকার ও মান ভেদে দাম নিয়ে চলে ক্রেতা-বিক্রেতার তোরজোর। এই হাটে মান ভেদে তিন ধরণের মরিচ পাওয়া যায়- উত্তম, মধ্যম ও নিম্ন মানের। মওসুম ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দাম থাকে মরিচের। সকাল থেকে শুরু হওয়া হাটের বেচাকেনা চলে শেষ দুপুর পর্যন্ত।
স্থানীয় বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ফুলছড়ির মরিচ মানে ভাল মানের পণ্য। এক যায়গায় এত ভাল মানের মরিচ আর কোথাও মেলেনা। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন এখানে।
তবে চলতি মৌসুমে মরিচের দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট কৃষকরা। একাধিক কৃষকের অভিযোগ, উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারদর কম হওয়ায় তারা প্রত্যাশিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
খোলাবাড়ি গ্রামের সাদেকুল বলেন, ‘ফুলছড়ি হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসছি। অল্প মরিচ তাই মাথায় নিয়ে এলাম। আবাদ করেছি চারবিঘা। ভালো হয়েছে ফলন। চরের মানুষের একমাত্র মরিচের হাট এটি। এখানেই সারা বছর আমরা মরিচ বিক্রি করে থাকি।
ফুলছড়ি হাট ইজারাদার অহিদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটি উত্তারাঞ্চলের সব চেয়ে বড় মরিচের হাট। এখানে জেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা মরিচ বিক্রি করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এবং বিভিন্ন কোম্পানী এখানে মরিচ কিনতে আসেন। প্রতি হাটে সোয়া কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মরিচ বেচা-কেনা হয়ে থাকে।
এ সময় তিনি সোয়া কোটি টাকার ডাক হওয়া হাটের নানা সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই হাটের কোন নিজস্ব জায়গা নেই। এখন যে জায়গাতে হাট বসানো হয়েছে সেটি ভাড়া নেয়া। এছাড়া এই হাটটি খুব সকাল থেকে শুরু হয়। দূরের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে রাতে থাকার কোন হাটসেড নেই।’
তিনি বলেন, এখানে সরকারি খাস জমি রয়েছে। সেটি ভরাট করে অবকাঠামো এবং হাটের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুবিধা দেয়া গেলে হাটটি আরও জাকজমক হবে, সরকারি রাজস্ব বাড়বে। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মন্তব্য