দেশকে স্বাধীন করতে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীতে কাজ করা বাঙালি অফিসার আর সেনাদের অবদানও কোনো অংশেই কম নয়।
শোষণ-বঞ্চনায় পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ও সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত বাঙালিরাও ছিলেন ক্ষুব্ধ।
যুদ্ধ যখন শুরু হয়ে যায়, তখন তারা মন দেন নিজেদের বিমান বাহিনী গঠনে। প্রায় ৫০০ জন সৈনিক ও ৩৫ জন অফিসার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন যুদ্ধ করতে।
একই পথ ধরেছিলেন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সসহ সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত ১৭ জন পাইলটও।
স্থলবাহিনীর তুলনায় বিমান বাহিনী তৈরির কাজটি জটিল। আন্তরিকতা আর সাহসের পাশাপাশি দরকার অবকাঠামো, বিমান, অর্থকড়ি, যার কোনোটি ছিল না সে সময়ের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের।
তবে মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলতে সহায়তা দেয়া ভারত হাত বাড়ায় বিমান বাহিনী গঠনেও। ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মাসে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ক্ষণ। ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটিতে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে জন্ম নেয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। প্রথম যে বিমানবহর যুক্ত হয় তার নাম দেয়া হয় ‘কিলো ফ্লাইট’।
কিলো ফ্লাইটে বিমান চালনা ও অপারেশনের জন্য সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন নয় জন। স্বাধীন বাংলা তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে বীর উত্তম ও বীর প্রতীক হিসেবে।
তারা হলেন এক নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও কিলো ফ্লাইটের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ (বীর উত্তম), ক্যাপ্টেন বদরুল আলম (বীর উত্তম), ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম), ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ (বীর উত্তম), ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার (বীর প্রতীক), ক্যাপ্টেন খালেক (বীর প্রতীক), ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহাম্মাদ শামসুল আলম (বীর উত্তম), ক্যাপ্টেন মুকিত (বীর প্রতীক) এবং ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম)।
ক্যাপ্টেন শাহাবউদ্দিন আহমেদ এখন থাকেন রাজধানীর গুলশানের নিজ বাড়িতে। বিজয়ের মাসে ৭১ এর স্মৃতির আকাশে উড়াল দেন তিনি, সঙ্গী নিউজবাংলা।
মুক্তিযুদ্ধে কীভাবে এলেন?
আমি তখন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে (পিআইএ) পাইলট হিসেবে কাজ করি। পাকিস্তানিদের তুলনায় বাঙালি অফিসারদের অধিকারের জায়গাটা সবসময়ই থাকত ছোটো। প্রশিক্ষণ থেকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সব জায়গায় ছিল বৈষম্য। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই ১৯৬৮ সালে ইস্ট পাকিস্তান পাইলট অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে বাঙালি পাইলটরা।
সেটাও খুব সহজ ছিল না। কাঠখড় পুড়িয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরে তবেই মিলেছিল নিবন্ধন। আমরা পাকিস্তানে বিশ্বাসী না এমন তকমা দিয়ে রাজনৈতিক রঙে রাঙানো হল পাইলটদের। ২৫ মার্চের নৃশংসতা আমাদের আর সহ্য হয় না। এরপর আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের চার বাঙালি পাইলটকে মেরে ফেলল। এরপরই ঠিক করি যুদ্ধে যাব, স্বাধীন দেশ লাগবে।
সে সময় তো কারফিউ ছিল, কঠোর নজরদারি আপনাদের ওপর। ভারত পৌঁছালেন কীভাবে?
কিছুটা পায়ে হেঁটে, কিছুটা নৌকায় এভাবে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর পৌঁছাই। সেখানে তাদের রেখে কুষ্টিয়া হয়ে বর্ডার পার হবার চেষ্টা করি।
পাকিস্তানিরা তখন হামলা চালিয়ে জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয় গোটা কুষ্টিয়া অঞ্চল। সে সময় ভারতীয় কিছু সাংবাদিক কুষ্টিয়া আসেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য। তাদের মধ্যে সাংবাদিক অনিল ভট্টাচার্যের সহায়তায় কলকাতায় পৌঁছাই।
সে সময় আপনারা সুসংগঠিত হলেন কী করে?
কলকাতার স্বনামধন্য শিশু চিকিৎসক সুজিত মুখার্জির বাড়িতেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। সেখানে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সঙ্গে দেখা হলে স্থল যুদ্ধে অংশ নিতে চাই বলি। তখন তিনি আমাদের বলেন, ‘এ কে খন্দকার সাহেব ব্যবস্থা করছেন পাইলটদের নিয়ে কিছু করার, অপেক্ষা করো।’
এর কিছুদিন পর আমাদের সঙ্গে ভারতীয় বিমান বাহিনীর অফিসাররা যোগাযোগ করে পাকিস্তানের এয়ারপোর্ট ও এভিয়েশন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেয়।
তাজউদ্দিন আহমেদ ও মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারের চেষ্টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনে সাহায্য করতে ভারত সরকার রাজি হয়।
নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে কীভাবে প্রশিক্ষণ নিলেন?
ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিত্যক্ত বিমান ঘাঁটি ছিল। খুব গোপনে সেখানে আমাদের বেইস ক্যাম্প করে দেয় ভারত সরকার। চারপাশ পাহাড় আর ঘন জঙ্গলে আবৃত অব্যবহৃত রানওয়েতেই আমাদের স্বপ্নের শুরু।
বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এ কে খন্দকার সাহেব। বিভিন্ন সেক্টর থেকে ৫৮ জন বিমানসেনাকে কিলো ফ্লাইটের জন্য নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে কিছু পিআইএ এবং প্ল্যান্ট প্রোটেকশন পাইলটও ছিলেন। আমরা নয় জন পাইলট যাদের তিন জন পাকিস্তান বিমানবাহিনী থেকে এবং ছয় জন পিআইএসহ অন্যস্থান থেকে পালিয়ে এসেছিলাম।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পুরনো দুটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার দেয়া হয়েছিল আমাদের। এর মধ্যে একটি বিমান ছিল যোধপুরের মহারাজার দেয়া আমেরিকায় প্রস্তুতকৃত ডিসি-থ্রি ডাকোটা আর অন্যটি কানাডায় তৈরি ডিএইচথ্রি অটার বিমান। হেলিকপ্টারটি ছিল ফ্রান্সে তৈরি এলুয়েট থ্রি মডেলের। এগুলোর একটিও যুদ্ধ বিমান ছিল না, তাই এগুলোকে মডিফাই করতে হয়েছিল।
ডাকোটাটিকে ৫০০ পাউন্ড বোমা পরিবহনের উপযোগী করে তোলা হয়, কিন্তু পরে সেটিকে অপারেশনে পাঠানো হয়নি। অপারেশনের জন্য একদমই ফিট ছিল না বলে ওটাকে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের ব্যক্তিদের পরিবহনের কাজে লাগানো হয়।
হেলিকপ্টারটিতে মেশিনগান এবং ১৪ টি রকেট ছোঁড়ার পাইলন বসানো হয়েছিল। অটার বিমানটির প্রতিটি ডানার নিচে সাতটি করে রকেট লাগানো হয়েছিল। পেছনের দরজা খুলে লাগানো হয়েছিল মেশিনগান, ফ্লোর কেটে ২৫ পাউন্ডের ১০টি বোমা বসানো হয়েছিল। হাত দিয়ে পিন খুলে নিক্ষেপ করতে হতো বোমাগুলো।
আমাদের ট্রেইনিং ছিল বেশ কঠিন। অপারেশনের সময় পাক বাহিনীর রাডার যেন আমাদের শনাক্ত করতে না পারে সে জন্য ২০০-২৫০ মিটারের চেয়ে বেশি উঁচুতে উড়া যেত না। আর আমাদের রাতের অন্ধকারে ফ্লাই করতে হতো। কারণ পাক বাহিনীকে অপ্রস্তুত করতে আমরা রাতেই সব অপারেশন করব এমন সিদ্ধান্ত ছিল।
রানওয়েতে কোন বাতি ছিল না। ঘন জঙ্গলে দিনের আলোতেই রানওয়ে খুঁজে বের করা কঠিন ছিল, রাতে তো অসম্ভব। সেই অসম্ভবকেই আমরা সম্ভব করেছি। পাশাপাশি চলেছিল নাইট ফায়ারিং বা রাতে অন্ধকারে টার্গেটে নিশানা লাগাবার কৌশলও রপ্ত করেছিলাম আমরা সবাই।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন চন্দন সিং, স্কোয়াড্রন লিডার ঘোষাল, স্কোয়াড্রন লিডার সঞ্জয় কুমার চৌধুরী, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সি এম সিংলা আমাদের সবকিছু তদারকি করতেন।
আপনারা কে কোন বিমানের দায়িত্বে ছিলেন?
স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তার সঙ্গে আমি ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বদরুল আলম হেলিকপ্টারে ছিলাম। প্রথমদিকে আমি কপ্টার চালাতে জানতাম না, একদিনের প্রশিক্ষণে রপ্ত করেছি।
ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার ও ক্যাপ্টেন মুকিত ডাকোটা বিমানটি এবং ফ্লাইট লেফটেল্যান্ট শামসুল আলম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ ও ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন আহমেদ অটার বিমানের দায়িত্বে ছিলেন।
আপনাদের অপারেশনগুলো সম্পর্কে বলেন?
প্রথম আক্রমণের দিন প্রথমে ২৮ নভেম্বর ধার্য হলেও পরে সেটা ক্যানসেল হয়। ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি ও নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেল ডিপোতে আক্রমণ চালানো হয়।
সুলতান মাহমুদ ও বদরুল আলমের হেলিকপ্টার নারায়ণগঞ্জে আর কো-পাইলট ও গানারসহ অটার বিমানটি নিয়ে শামসুল আলম চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি তেল ডিপোতে সফল হামলা চালান।
চট্টগ্রামের হামলার পর আগুনের ফুলকি মিজোরাম থেকেও দেখা গেছে।
৪ ডিসেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। ৩ তারিখের অপারেশনের পর থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাথে যৌথভাবে অনেক অপারেশনে অংশ নেয়।
বাংলাদেশের আকাশটা প্রথমে স্বাধীন হয় ডিসেম্বরের ৫ তারিখে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানী বিমান বাহিনী একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জ্বালানি তেল না পেয়ে।
এরপর ৬ ডিসেম্বর সিলেটের মৌলভীবাজারের পাকিস্তানি সেনা বহরে আক্রমণ করেছিলাম স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ আর আমি। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের হামলা করবে বলে। আমরা অ্যাটাক শুরু করার আগেই পাকিস্তানিরা আমাদের উপর ফায়ারিং শুরু করে। আমাদের কাছে ১৪ টা রকেট ছিল, সবগুলোই নিক্ষেপ করে আমরা তাদের গুঁড়িয়ে দিয়েছিলাম।
ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। নরসিংদীর রায়পুরায় বেশ কিছু হেলিকপ্টারে করে সেনা পারাপার করছিল ভারতীয় বিমান বাহিনী। তখন আমরা হেলিকপ্টার নিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিলাম। হঠাৎ পাকিস্তানিরা বহর নিয়ে আসতে শুরু করে। আমরা তাৎক্ষণিক আক্রমণ করে তাদের প্রতিহত করি। সে অপারেশনে ২১ জন পাকিস্তানিকে আমরা হত্যা করেছিলাম।
আমাদের ভাগ্যও অনেক ভালো ছিল, আমরা কোন যোদ্ধা হারাইনি। অপারেশনে আমাদের বিমান ও হেলিকপ্টারে অনেক গুলি লাগত। আমরা বিমানের বডির সেসব গুলির ক্ষতের পাশে তারিখ লিখে রাখতাম। এক সময় আর লেখার জায়গা বাকি থাকল না।
আমরা কিলো ফ্লাইটের অধীনে ৫০ টির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছি।
কিলো ফ্লাইট নাম কেন ছিল?
এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের নামের কে অক্ষর নিয়ে আমরা অপারেশনটির নাম দিই। আর এভিয়েশনের ভাষায় কে হলো কিলো, যেমন এ কে বলা হয় আলফা।
যে স্বপ্ন নিয়ে কিলো ফ্লাইট হয়েছিল তার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে?
আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, নিজেদের বিমান বাহিনী হয়েছে। এমনকি আমাদের তিনটি বিমানের মধ্যে ডাকোটাটি দিয়ে স্বাধীনতার পর প্রথম এভিয়েশন হিসেবে বাংলাদের বিমানের সূচনা হয়েছে। সে অর্থে আমাদের চাওয়া পূরণ হয়েছে।
কিন্তু ৭৫ এ দেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল, এমন দেশ তো আমরা কখনো চাইনি। আমরা অসাম্প্রদায়িক জাতি চাই। এটুকু হলে পূর্ণতা পাব।
আরও পড়ুন:রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২৮৮ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে কক্সবজার ইনানী নৌবাহিনী জেটি ঘাটে নেয়া হয় তাদের। সেখানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গত ১১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি ও আশারতলী সীমান্তে দিয়ে প্রথম দফায় ১৭৯ জন মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য আশ্রয় নেন। পরে কয়েক দফায় ঘুমধুম, তুমর্রু ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে দিয়ে মোট ২৮৮ জন মিয়ারমারের সেনা ও বিজিপির সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি ও সেনা সদস্যদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাদের সে দেশের নৌবাহিনীর জাহাজে করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়া নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিএনপির ৬৪ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সহ-সভাপতি সাদেক আলী, উত্তর চট্টগ্রামের চিকনন্দী ইউনিয়নের সহকারী আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতা জহুরুল আলম ও কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী দলের নেতা এম হান্নান মিয়াকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে নকল মোড়ক বানিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ভেজাল মানহীন আইসক্রিম, রোবো, আইস ললি ও জুস বানানো কারখানায় অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় এসব নকল খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিক্রি করার অপরাধে আইকন আইসক্রিম ফুড ও বেভারেজ কোম্পানির ম্যানেজার লিখন আহমেদকে ৫০ হাজার টাকা এবং জব্দকৃত মালামাল ধ্বংস করার পাশাপাশি কারখানিটি বন্ধ সাময়িক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে জেলার গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা মোল্লাপাড়ার আব্দুস সালামের বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়।
কোম্পানির মালিক আব্দুস সালাম পেশায় একজন সেনা সদস্য।
অভিযান পরিচালনা করেন জেলা ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা সজল আহমেদ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মোল্লা পাড়ার সেনা সদস্য আব্দুস সালামের বাড়িতে বিভিন্ন কোম্পানির নকল মোড়ক বানিয়ে কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, নকল আইস ললি, রোবো, জুস ও আইসক্রিমসহ শিশুখাদ্য যা দণ্ডনীয় অপরাধ।
‘আমরা এ ভেজাল কারখানায় অভিযান চালিয় নকল এসব পণ্য ও পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল জব্দের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার লিখন আহমেদ আটক করে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ জব্দকৃত মালামাল নষ্ট করার পাশাপাশি কারখানাটি বন্ধের নির্দেশ দেই।’
আইকন ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ম্যানেজার লিখন আহমেদ বলেন, ‘আমার মহাজন সালাম মিলিটারি মাস ছয়েক হবে কারখানাটি চালু করেছেন। উনি ফোনের মাধ্যমে ব্যবসার দেখভাল করেন। আমরা এই কারখানায় আইস ললি, রোবো, জুস ও আইসক্রিম তৈরি করে কয়েকটি জেলায় বিক্রি করতাম। আজ অভিযানের পর বুঝতে পারলাম এ পণ্যগুলো বিক্রি ও বানানো অপরাধ।’
আব্দুস সালামের বাবা ওহাব আলী বলেন, ‘আমার ছেলে ছুটিতে এসে এই কারখানাটি দিয়েছিল। এখনও সরকারিভাবে অনুমোদন পাইনি। তবে অল্পদিনেই লাইসেন্স হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে।’
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (টিসিএ) উদ্যোগে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে আজ নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন তাদেরকে আমরা মননশীল মনে করি। কিন্তু তারা যখন মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন তারা সমাজে কী বার্তা দেন?
নারকীয় এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোসহ হামলায় জড়িত সবাইকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিনোদন বিটের সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারজন।
তদন্ত কমিটি
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
দশজনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামের দুইশ’ কৃষকের প্রায় ৪ শ’ বিঘা জমির বোরো ধান ইটভাটার আগুনের তাপে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাটার আগুনের তেজস্ক্রিয়তায় পার্শ্ববর্তী দড়িনাশেরা গ্রামের কৃষকদেরও ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস জমির ফসল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ণয় করে তাদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চারপাশের বিপুল পরিমাণ জমির ফসল পুড়ে যাওয়ার মতো লালচে রঙ ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ফলজ গাছপালা ও সবজির বাগান।
স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সাল থেকে কাপাসিয়ার তারাগঞ্জের ফেটালিয়া গ্রামে এসকেএস ইটভাটা স্থাপিত হয়। হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামেরও পরিবর্তন হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কর্তৃপক্ষ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কখনও ফেটালিয়া ব্রিক ফিল্ড, ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করলেও বর্তমানে এসআরএফ নামে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বর্তমান মালিক।
তারা জানান, এ ইটভাটার ২০০ ফিট দূরত্বের মধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘনবসতি রয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছে ফুল-ফল থাকে না; সব কিছু অকালেই ঝরে যায়। প্রতি বছর যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে, তা হলো কালো ধোঁয়া ও তাপে পুড়ে যায় ফসলের মাঠ। এ বছরও বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ ভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, অনুমোদন না থাকায় ঈদের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ইটের ভাটাটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। এই ভাটাটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় এ ভাটায়। কয়েকদিন পরপর ইটভাটায় কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন, কিন্তু পরবর্তীতে ফের শুরু হয় ভাটার কার্যক্রম। তবে সেসব সময় অদৃশ্য কারণে নীরবতা পালন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামটি ধান উৎপাদনে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল চালিকা শক্তি ফল উৎপাদন ও কৃষির বিভিন্ন ফসল। কৃষকদের দাবি, অথচ এক ইটভাটার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে পুরো এলাকার মানুষের।
মো. বুরুজ আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানে দুধ আসার পরপরই ভাটার আগুনের তাপে তা পুড়ে গেছে। টাকা ধার করে জমি চাষ করেছিলাম। সেই ধারের টাকা এখন কীভাবে পরিশোধ করব, তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
কৃষক মো. রফিকুল বলেন, ‘এ বছর ১৫ শতাংশ জমিতে ধানের চাষ করেছি। তার এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারব না। ইটভাটার আগুনের তাপে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
‘গরুকে খাওয়ানোর যে কুটা (খড়) লাগবে তাও পাই কিনা সন্দেহ। আগুনের তাপে ঝলসে যাওয়া কুটা গরুও খেতে চায় না। এখন গরু কী খাবে, আর আমরাই বা কী খাব?’
আবাদি জমির পাশে ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান কৃষক আব্দুল হাই।
কিছুটা ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘ভাটার আগুনের তাপ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, যা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। ওই জমির ফসল দিয়েই আমাদের সারা বছরের খাওয়ার যোগান হয়। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না।’
কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে ভাটার ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এ বিষয়ে কৃষক আব্দুল বাতেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেতে কাজ করতে গেলেই আমার বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি।’
এই এলাকায় যেন কোনো ইটের ভাটা না থাকে, প্রশাসনের কাছে এমন দাবি রাখেন তিনি।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফেটালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই শতাধিক কৃষকের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ পেতে কৃষকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা ক্ষতিপূরণ পাবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক রমিজ উদ্দিন রমি বলেন, ‘আগুনের তাপে ধানের ফুল আসার সময় কয়েকজন কৃষকের ফসল নষ্ট হইছে। পরে তারা ইটভাটার গেইটে তালা মেরে রাখেন।’
কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ভাটাটি বন্ধ রয়েছে। আমি এখনও ভাটার লাইসেন্স করতে পারিনি।’
কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার মঞ্জুরুল আমিন সম্প্রতি কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত ফলজ গাছ ও ধানের ফসল পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিনে তিনি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও তথ্যানুসন্ধান করে জেনেছেন, স্থানীয় ইটভাটার কারণেই কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধান পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই নির্গত ক্ষতিকর ধোঁয়ায় সব ঝলসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দেয়া হবে।’
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য