ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের ৭২ হাজার ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে রাখে। ফলে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা এক প্রকার জিম্মি হয়ে থাকে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হাতে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার জনগণের তথ্য ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ফেসবুকের বিকল্প দেশীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘যোগাযোগ’ চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
‘যোগাযোগ’ চালু এবং এমন উদ্যোগের সার্বিক বিষয় নিয়ে গত শনিবার নিউজবাংলাকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে ‘বিকল্প ফেসবুকের’ পাশাপাশি ‘পিপীলিকা’র মতো দেশি সার্চ ইঞ্জিন কেন সফল হয়নি এবং কী কারণে টিকা নিবন্ধনের পরও মিলছে না তারিখ- এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তরুণ রাজনীতিবিদ জুনাইদ আহমেদ পলক ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ।
২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ডাক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তরুণ এই রাজনীতিবিদ।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার নিজস্ব প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
প্রশ্ন: হঠাৎ কেন নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘যোগাযোগ’ চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে?
জুনাইদ আহমেদ পলক: অনলাইন জগতে আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে ফেসবুক, ইউটিউব এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিকল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আমাদের লক্ষ্য, নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করা। ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলা হবে ‘যোগাযোগ’কে। তখন আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না।
ফেসবুক আমাদের ৭২ হাজার ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তাদের ডেটাবেজে রেকর্ড করে রেখেছে। ফলে আমাদের নাগরিক, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। সে জন্য আমরা বলছি, আমাদের নিজস্ব সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থাকলে আমাদের তথ্যগুলো নিজ দেশে নিরাপদ থাকবে।
আর এমন উদ্যোগ নেয়ার বাণিজ্যিক কারণ হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন। আমাদের দেশের মধ্যেই ইউজারের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ফেসবুক। এতে বিদেশে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থাকলে সেখানে বিজ্ঞাপন দিলে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে, বিজ্ঞাপনের টাকা দেশের মধ্যেই রাখতে পারব। বিদেশে অর্থ চলে যাবে না।
প্রশ্ন: এর আগে ‘পিপীলিকা’ নামে একটি দেশি সার্চ ইঞ্জিন চালু হলেও সেটি হালে পানি পায়নি। তাহলে নতুন উদ্যোগ কি সফল হবে?
জুনাইদ আহমেদ পলক: ‘পিপীলিকা’ ছিল একটা ইনোভেশন প্রোডাক্ট। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব ছিল। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তর থেকে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের (এটুআই) মাধ্যমে ফান্ড দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তারা চেষ্টা করেছে, ডেভেলপ করেছে। ভবিষ্যতে আরও অনেকেই এমন চেষ্টা করতে পারে।
একসময় পৃথিবীতে ‘ইয়াহু’, ‘বিং’ নামকরা ও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ছিল। কিন্তু এখনকার প্রজন্মের অনেকে এসবের নামই জানে না। প্রযুক্তির দুনিয়ায় এমন অসংখ্য ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট আসবে, হারিয়ে যাবে, নতুন আসবে। আমাদের কাজ হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যেকোনো উদ্যোগে সহযোগিতা করা। কারণ সিলিকন ভ্যালির যে সংস্কৃতি, তাতে দেখা যায়, গত ৬০-৭০ বছরে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৯০ শতাংশ প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রোডাক্ট ফেইল করে, ১০ শতাংশ কেবল সাকসেস (সফল) হয়। কিন্তু ১০ শতাংশের যে সফলতা, তা ব্যর্থ হওয়া ৯০ শতাংশের ক্ষতির পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়।
আমাদের কেবল তো ১২ বছরের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলা। আমাদের যে ইনোভেশান কালচার বা স্টার্ট-আপ কালচার, তা তো মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের। আশা করছি, আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে একটা ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে, কালচার গড়ে উঠবে। হাজারো ‘পিপীলিকা’ হয়তো আসবে, তার মধ্যে ১০টা বা ২০টা উদ্যোগ বাকিগুলোর ব্যর্থতার যে ক্ষতি তা অনেক গুণ পুষিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: কী কারণে টিকা নিবন্ধনের পরও মিলছে না তারিখ?
জুনাইদ আহমেদ পলক: সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের পার্টটা আমাদের। তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আমাদের। এসএমএস পাঠানোর দায়িত্ব সারা দেশের ৬৭৬টি টিকাকেন্দ্রের এবং কেন্দ্রে যারা চিকিৎসক রয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের। তারা পর্যালোচনা করেন কোন কেন্দ্রের নামে কত হাজার লোক নিবন্ধন করেছে এবং কাদের টিকা দেয়ার জন্য এসএমএস পাঠানো হবে। সেই অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে তালিকা ঠিক করে এসএমএস পাঠানো হয়।
প্রশ্ন: টিকা নিবন্ধনের বয়সসীমা ১৮ বছরে নামিয়ে আনা হবে কবে?
জুনাইদ আহমেদ পলক: আমাদের টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি অনুসারে এটা আগামী ৮ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি বলে এটা ৭ তারিখ বা ৬ তারিখ, তাহলে আমরা ৬ তারিখের মধ্যে চালু করতে পারব।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য