ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের নাচের একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
এতে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারের অ্যাপ্রোন পরে হাসপাতালের করিডরে ‘নয়া দামান’ গানের সঙ্গে নাচছেন তিন চিকিৎসক। তাদের একজন তরুণ, বাকি দুজন তরুণী।
সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার তুমুল জনপ্রিয় ‘নয়া দামান’ গানটি অনেকেই গেয়েছেন। তবে কিছুদিন আগে এই গানে কণ্ঠ দেন তসিবা ও মুজা।
এ জুটির গাওয়া গানের সঙ্গেই পারফর্ম করেন ডা. শাশ্বত চন্দন, ডা. কৃপা বিশ্বাস, ডা. আনিকা ইবনাত শামা। মনোমুগ্ধকর এই নাচের উদ্দেশ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাওয়া চিকিৎসকদের অনুপ্রেরণা দেয়া।
এই নাচের পেছনের গল্প নিউজবাংলাকে শুনিয়েছেন ডা. শাশ্বত। তিনি বলেন, ‘আমরা যে তিনজন নাচে অংশগ্রহণ করেছি, তারা সবাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে কাজ করি। আমাদের ইউনিট কিন্তু করোনা ডেডিকেটেড না, তবে এখানে অনেক রোগী ভর্তি হন, যাদের করোনার কারণে অপারেশন ক্যানসেল হয়ে যায়। আমাদের ইউনিটের অনেক ডাক্তার এখন করোনা ইউনিটে ডিউটি করছেন।’
চিকিৎসকদের বিরামহীন সেবা দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারাও কিন্তু অনেক সময় করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। আর এই মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা ডিপ্রেশন থেকে একটু স্বস্তি দিতে আমাদের এই প্রচেষ্টা।
‘অনেকেই মনে করেন যে ডাক্তাররা একটু মনে হয় রসকষহীন। তাই আমরা নাচের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি যারা সেবা দিচ্ছেন, তারা যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন।’
নাচের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জানতে চাইলে ভোলার ছেলে ডা. চন্দন বলেন, ‘আসলে আমাদের ইচ্ছা ছিল একটা কিছু করার, কিন্তু সেটা তো হাসপাতলের বাইরে করা যায় না। সবাই তখন এটাকে আবার চিয়ারলিডার টাইপের ভাবত।’
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কখনও নাচ শেখেননি ডা. চন্দন। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু ওইভাবে পারি না। তবে আমার সঙ্গে যারা পার্টনার ছিলেন, ওনারা ভালো নাচেন।’
নাচে অংশ নেয়া ডা. আনিকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আর চন্দন দুই জনই ইন্টার্ন চিকিৎসক। আমরা এখানে সার্জারি বিভাগে কর্মরত আছি। আমাদের সিনিয়র আপু ডা. কৃপা বিশ্বাস এখানকার এইচএমও হিসেবে আছেন।’
ডা. আনিকা বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশের অবস্থা খুব খারাপ। অক্সিজেনের অভাব হয়েছে ওখানে। আবার এক মাস ধরে আমাদের অবস্থাও ভালো না। এতে করে অনেক চিকিৎসক মানসিক ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন। একটা চাপে আছেন তারা। এগুলো মাথায় রেখেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’
নাচের পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা খুবই ক্ষুদ্র একটা পরিকল্পনা ছিল। আমাদের রুটিন ওটি থাকে। আমরা যে ইউনিটে কাজ করি, সেটা সার্জারি ইউনিট ওয়ান। এই ইউনিটের রুটিন ওটিটা হয় সোমবারে। ওই দিন সব ওটিগুলো ওয়াশ দিয়ে শেষ হবার পর যখন আমাদের ফ্রি সময় ছিল, তখন তিনজন মিলে গল্পের ছলে এই পরিকল্পনা করি।’
তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশের ডাক্তাররাও এমন এক্সট্রা কারিকুলার কাজ করে থাকেন। আমরা ছোটখাটো একটা কোরিওগ্রাফি করেছে নিজেরাই। তিনজন মিলেই করি। সঙ্গে সঙ্গে ওখানেই শুট হয়েছে।’
ঢাকার মেয়ে ডা. আনিকা ক্লাসিক্যাল নাচে আগে থেকেই পারদর্শী।
তিনি বলেন, ‘আসলে এটা তো অনেক সিম্পল ছিল। নাচ শিখেছি, তবে এটা নিজেরাই করেছি। খুবই সাধারণ কোরিওগ্রাফি ছিল। এই টাইপের ফ্রি স্টাইল নাচ কখনও শিখিনি। আমি আর কৃপা আপু একসঙ্গেই নাচ শিখেছি বুলবুল লতিতকলা একাডেমি থেকে। আমরা ক্লাসিক্যাল ডান্সার।’
ভাইরাল নাচের দৃশ্যটির ভিডিও করেছেন একজন ওটি বয়। ডা. চন্দন নিজেই সেটি সম্পাদনা করে ফেসবুক পেজে আপলোড করেন।
এর আগে ১২ এপ্রিল ভারতের কেরালা রাজ্যে দুই মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঘৃণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে রাজ্যটির মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নাভিন কে রাজাক ও জানাকি এম ওমকুমার ভিডিওটি পোস্ট করেন।
আরও পড়ুন: ঘৃণার বিরুদ্ধে নাচ
রিল ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে লেখা হয়, ‘যদি মনে করেন ঘৃণা ছড়াবেন, তাহলে জেনে রাখুন আমরা তার প্রতিরোধ করব।’
হ্যাশট্যাগ দিয়ে রাসপুতিনচ্যালেঞ্জ নামের ওই ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হলে ভারতের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাও একই রকম ভিডিও তৈরি ও পোস্ট শুরু করেন।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন। আর চলতি সপ্তাহের এই কয়েকদিনে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয় সর্বোচ্চ ১৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০২ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া (১০০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ভোরে তিনি বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই রয়েছে ৬ জন। এদিকে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২৯ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে মৃত্যু হওয়া শতবর্ষী রাবেয়া বেগম বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৮ জন।
পটুয়াখালী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৭ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। পিরোজপুরে ১৬ জন ও বরগুনায় ৭৩। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশংকাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হবে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে ঊর্ধ্বগতির আক্রান্তের হারের মধ্যে দেশে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২২ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯২ জন।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বরিশাল বিভাগে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৬ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ৩৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
রবিবার (২২ জুন) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নতুন তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনায় মোট মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫১৫ জনে এবং মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জনে।
২৪ ঘণ্টায় ৬২১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নীতকরণের লক্ষ্যে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইবি শিক্ষার্থী তানভীর মাহমুদ মন্ডলের প্রতিনিধিত্বে এই দাবিসমূহ জানানো হয়েছে।
২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি রয়ে গেছে। একটি উন্নত, মানবিক ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবহন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অপরিহার্য। উপস্থাপিত চার দফা দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের স্থায়ী সংস্কারের লক্ষ্যে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সভার আয়োজন করা, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাসেবা উন্নতিকরণ এবং কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সিট সার্বক্ষণিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পরিবহন পুল থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন অপসারণ এবং চালক ও সহকারীদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা এবং পরিবহন সংকট নিরসনে জরুরিভিত্তিতে নতুন যানবাহন সংযোজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর মন্ডল জানান, ‘স্মারকলিপি দিয়েছি। উল্লেখ করা দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাজীবন উপভোগ করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবনাগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ উপস্থাপন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আশ্বস্ত করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা খুবই যৌক্তিক কিছু দাবি উত্থাপন করেছে৷ কয়েকদিন আগেও আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী বাস-ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এর আগেও এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৫২ জন।
শনিবার (২১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটিতে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৫২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৯০ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত-আট মাস কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এতে তৃণমুলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা এলাকায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবারকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক সাতটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালিত হয় । বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি, লোহাগড়া উপজেলায় তিনটি এবং কালিয়া উপজেলায় একটি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার ওপর গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ও সবলভাবে বেচে থাকার জন্য অনেকটিই নির্ভর করে। এসব কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ । কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের অনেক মহিলা চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মুখখানা ছিল মলিন । আবার অনেক কেন্দ্র ছিল ফাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার একটি কক্ষে বসে গল্পে মেতে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো.আলাউদ্দীন কেন্দ্রের একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন । জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। তখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু-নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে জড়ো হতেন। গত সাত-আট মাস হলো কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই । ফলে কেন্দ্রে রোগীদের তেমন ভিড়ও নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কিছু সামগ্রী আছে তাই দিয়ে সেবা চলছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগ হচ্ছে শিশু ও নারী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হয় না।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে তৃণমুলে সাধারণ মানুষ বিপদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। না হলে গ্রামের কৃষক শ্রেণির মানুষের জীবনের ছন্দ পতন ঘটবে। গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ি গ্রাম থেকে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসেছেন সালমা আক্তার । তার কোলের শিশুর সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে এহেনে ডাক্তার দেহালি ওষুধ দেতো। এহোনে দেচ্ছে না । কাগজে লেহে দিলি আমাগে বাজারের দুয়ানতে কিনে নিতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। অত টায়া পয়সা নাই আমাগে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকাররে কচ্ছি আগের মতো আমাগে মাগনা (বিনা টাকায়) ওষুধ দিতি হবে।’
কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলশ্রী গ্রামের দীপ্তি রানী মণ্ডল বুকে ব্যথা অনুভব করলে নিজের ওষুধ নিতে এসেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘এহেনের ডাক্তার সাদা কাগজে কী যেন লেহে দেলো। আর কলো এই কাগজ নিয়ে বাজারের দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে । কিরাম কতা হলো কওদিন বাপু । আমাগে যদি দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে তালি তুমরা এহানে বসে রইছো ক্যান ? আগেতো এমন কতা শুনিনি।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত থেকে আট মাস। যে কারণে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল । ওষুধ না পেলেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল না । যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য কেন্দ্রে আসছেন । তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংকট মোচন হবে ।
মন্তব্য