টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে দেশের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ঘুরছিল ২০২৩ সাল থেকেই। এসব তথ্য কেনাবেচার কথাও শোনা গেছে। গ্রাহক-তথ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন একটি ভুয়া ব্যবসা শুরু করেছে একটি চক্র। এসব তথ্যের বিক্রি বাড়াতে সম্প্রতি দেশের প্রতিষ্ঠিত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নামও জুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুরুর দিকে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজটি করা হয়েছে বলে জানা গেলেও পরে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইট খুলেও ভুয়া তথ্যের এই জমজমাট ব্যবসা চলছে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের দেয়া বিজ্ঞাপনে বেশ কিছু নামি-দামি ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্য রয়েছে বলেও প্রচার চালাচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে তারা গ্রাহককে ধোঁকা দেয়ার এই ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বেহাত হওয়ার পর টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচার হওয়া নির্দিষ্ট একটি লিংকে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই তার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে আসছিল। একইভাবে এখানেও কিছু মানুষের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
তবে যে তথ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে তার সত্যতা নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এটাকে ভূঁইফোড় ব্যবসা বলেও আখ্যায়িত করছেন। বেশকিছু ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, মোবাইল নম্বর দিলে আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা নাম এমন কিছু তথ্য আসছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য যারা অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করছে এবং প্রলোভনে পড়ে যারা কিনছে তারা উভয়েই সমান অপরাধী। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় উভয়েরই জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
‘কাজেই যারা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে এলে শাস্তির সম্মুখীন হবেন। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো এমন তথ্য কিনে কখনোই টাকা পাওয়ার কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’
সূত্র বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগ থেকে ‘লাখ লাখ’ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তার দুই থেকে তিন মাস পর স্মার্ট কার্ডের তথ্য বেহাতের তথ্য সামনে আসে। এখন এসব তথ্যকেই নতুন মোড়কে মোবাইল ব্যাংকিং এবং প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহক তথ্য হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।
তবে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, একেক গ্রুপে একেক রকম তথ্য আসছে। কোথাও গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর আছে বলে বলা হচ্ছে। আবার কোথাও মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মতারিখের উল্লেখ থাকছে। কোথাও কোথাও ছবি থাকার দাবিও করা হচ্ছে।
দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্টাগ্রাম লিমিটেড যারা ইথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান শাহরিয়ার দিচ্ছেন ভয়াবহ তথ্য। তিনি বলেন, ‘মূলত প্রলোভনে পড়েই অনেকে এমন তথ্য কিনে থাকেন। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের একটি যৌথ এনালাইসিসে দেখা যায়- যারা তথ্য চুরি করেছে, তারা তথ্য বিক্রির সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের তথ্যও সংরক্ষণ করে রাখে।
‘যেহেতু ক্রয়কারীর তথ্য ওরা সংরক্ষণ করছে, ফলে ভবিষ্যতে গ্রাহক হ্যাকিং, ব্ল্যাক মেইলসহ নানা জটিলতার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তখন কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে তারা বলতেও পারবেন না কেন এবং কী কারণে তিনি অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।’
তবে গ্রাহকদের তথ্য এভাবে অবাধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানোর দাবি করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের নাস্থা তৈরি হওয়া বা অহেতুক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই প্রচারণা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিতেও এসেছে। তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমরা প্রতিনিয়তই তথ্যগত নানা অপপ্রচারের শিকার হই। এবারকার বিষয়ও আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা এটি অবহিত করেছি।’
বর্তমানে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও ছবি লাগে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে তথ্য ঘুরছে বলে বলা হচ্ছে এসব তথ্য সত্য হলেও এ দিয়ে কিছুই করা যাবে না বলেও মনে করিয়ে দেন ওই প্রযুক্তিবিদ।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ থেকে তথ্য বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার খবরে এমনিতেই মানুষ এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এখন তাদেরকে বিভ্রান্ত করাটা আগের চেয়ে সহজ। ফলে সত্য-মিথ্যা নানা কথা বলে সুযোগ সন্ধানী কেউ কেউ ব্যবসা করে থাকতে পারে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজে ১২ কোটির মতো মানুষের তথ্য রয়েছে।
আইনি সুযোগ না থাকায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারান্তরীণ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি হয়নি। এ সংক্রান্তে ঢাকা থেকে আসা এক আইনজীবীর তিনটি আবেদনই নাকচ হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামের আদালতে বুধবার উপস্থিত হয়ে চিন্ময়ের জামিন শুনানি এগিয়ে আনাসহ তিনটি আবেদন করেছিলেন হাইকোর্টের এক আইনজীবী। কিন্তু ওকালতনামা না থাকায় আদালত তার তিনটি আবেদনই নামঞ্জুর করে।
এ সময় ওই আদালতে উপস্থিত চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, আসামি পক্ষে ঢাকা থেকে আসা আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আদালতে তিনটি দরখাস্ত দিয়েছিলেন। এর একটি চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার জন্য, একটি নথি উপস্থাপনের জন্য এবং অপরটি তাকে শুনানি করার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য।
আদালত অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষের কাছে জানতে চায়, তার কাছে ওকালতনামা আছে কিনা বা মামলা পরিচালনার জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবীর অনুমতি আছে কিনা। এ সময় তিনি নেই বলে জানালে আদালত তাকে আইন মেনে আসতে বলেন।’
অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি ওনার এ ধরনের দরখাস্ত দেয়ার আইনি অধিকার নেই। তার কাছে আসামির ওকালতনামা নেই এবং যিনি এই মামলা ফাইল করেছেন তার পক্ষ থেকেও তাকে কোনো পাওয়ার দেয়া হয়নি।
‘শুনানি করা বা নথি উপস্থাপনের জন্য অবশ্যই ওকালতনামা দিতে হবে অথবা ফাইলিং আইনজীবীকে বলতে হবে- ঢাকা থেকে যিনি এসেছেন তিনি তাকে ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু ওই আইনজীবীর কাছে এর কোনোটাই ছিল না। তাই আদালত এটা রিজেক্ট করে দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। এরপর ২৫ নভেম্বর ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। ২৬ নভেম্বর জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। ৩ ডিসেম্বর জামিন শুনানির দিন থাকলেও কোনো আইনজীবী না থাকায় শুনানির দিন আগামী ২ জানুয়ারি ধার্য রয়েছে।
আরও পড়ুন:অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত পুলিশ সুপার নিহার রঞ্জন হাওলাদারকে আগামী এক বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণের দণ্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে তার এই বেতন সমন্বয় করা হবে না।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
জননিরাপত্তা শাখার সিনিয়র সচিব আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত পুলিশ সুপার নিহার রঞ্জন হাওলাদার ২০১৮ সালে ঢাকায় সিআইডিতে বিশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- ওই বছরের মার্চ মাসে পটুয়াখালীরর মহিপুর থানার কুয়াকাটায় অবস্থিত বেদখলি জমি দখল করে দেয়ার বিপরীতে তিনি রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি হোটেলে বসে অভিযোগকারীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও ১০ শতাংশ জমি তাকে লিখে দেয়ার দাবি করেন।
এ ঘটনার সাক্ষী অভিযোগকারী আব্দুর রহিম গং, তার বাসার গৃহশিক্ষক ও অভিযোগকারীর ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম।
পরবর্তী সময় ওই বছর ২১ মার্চ ঢাকায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মালিবাগ শাখায় (হিসাব নম্বর-১৬১৩৯০১০১৪৩৯৩) তার অ্যাকাউন্টে বরগুনায় সোনালী ব্যাংকের কোর্ট বিল্ডিং শাখা থেকে অভিযোগকারীর তিন লাখ টাকা এবং পরবর্তীকালে ৪ এপ্রিল ওই অ্যাকাউন্টে দুই লাখ টাকা প্রতারণামূলকভাবে গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া ২২ মার্চ সন্ধ্যার দিকে কুয়াকাটার বনানী প্যালেস নামের একটি হোটেলে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানকে ডেকে নিয়ে অভিযোগকারীর পক্ষে বেদখলি জমি দখল করে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা ও ৪ এপ্রিল বরগুনায় গিয়ে অভিযোগকারীসহ অন্যদের সঙ্গে এম আলী হোটেলে খাবার খাওয়ার অভিযোগে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর বিভাগীয় মামলা হয়।
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সরকার ঘোষিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৪ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখান করে ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
কর্মবিরতির কারণে এ অঞ্চলের অনেক কারখানায় বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ বলছে, আশুলিয়ায় আজ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করার দাবিতে কাজ বন্ধ বা শ্রমিকরা কাজ না করে চলে গেছে, এমন কারখানার সংখ্যা ৩৫টি।
আশুলিয়ার নরসিংহপুর ও আশপাশের এসব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানা সূত্রে জানা যায়, হা-মীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলিম, সেতারা গ্রুপ, নিউ এইজ, ডেকো, ব্যান্ডো ডিজাইন, ভিনটেজ, নীট এশিয়া, মানতা, ডেবুনিয়ার, অরবিটেক্স, এএম ডিজাইন, ইসলাম গার্মেন্টস, দ্য রোজ, অ্যাপারেলস গ্যালরি, এথিক্যালসহ বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানায় এলেও ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন।
শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে নাসা ও ট্রাউজার লাইন শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
শ্রমিকরা কোনো বিশৃঙ্খলা বা ঝামেলা না করলেও বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারা কর্মবিরতি পালন করেন এবং কেউ কেউ কারখানা থেকে বেরিয়ে যান।
এর আগে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবারও আশুলিয়ার অন্তত ১০টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
নীট এশিয়ার একজন শ্রমিক বলেন, ‘গত ৩ দিন যাবতই আমাদের কারখানায় ঝমেলা চলছে। শ্রমিকরা কাজ করে না।
‘আশপাশের কারখানার সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও একই দাবিতে আন্দোলন করছি; দাবি বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ করার।’
দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাধন কুমার বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) শ্রমিকরা আমাদের কারখানায় কাজ করেছিল, কিন্তু আজ কারখানায় এলেও আর কাজ করেনি। পরে অবশ্য আমরা কথা বলার পর শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছিল, কিন্তু আশেপাশের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে আমরা আর চালাতে পারিনি।’
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকরা। তাই তারা কাজ বন্ধ করে বসে আছে, তবে কোনো প্রকার অরাজকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা তারা করছেন না।
‘এ অঞ্চলের ১৯টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর কাজ না করে চলে গেছে এমন কারখানার সংখ্যা ১৫ থেকে ১৬টি।’
আরও পড়ুন:নওগাঁয় চার মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে খাদ্যশস্যের (ওএমএস) চাল ও আটা বিক্রি।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার বেলা ১১টার দিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ঘেরাও করে ওএমএস কার্যক্রম চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষরা।
ওই সময় বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্লাকার্ড হাতে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় তাদের। পরে জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল কবিরের আশ্বাসে সেখান থেকে সরে যান তারা।
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের আগে নওগাঁ পৌরসভা এলাকায় ১৮টি কেন্দ্রে ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে স্বল্প মূল্যে চাল ও আটা দিত সরকার। ৫ আগস্টের পর ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে হঠাৎই ১৫টি কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চরম বিপাকে পড়েন তারা। তাই অনতিবিলম্বে ওএমএস সবকটি কেন্দ্র চালু করতে হবে।
শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আসা বিক্ষোভে অংশ নেয়া রিকশাচালক সোহেল রানা বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, সেটা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য। ওএমএস কর্মসূচি চালু অবস্থায় কম দামে চাল ও আটা কিনে কিছুটা সামাল দিতাম। সেই চাল, আটা টানা ৪ মাস যাবত পাচ্ছি না। তাই দুই বেলা শান্তিতে পেট ভরে খাওয়া হচ্ছে না।
‘বাধ্য হয়ে পেটের ক্ষুধায় ফুড অফিসে এসে দাঁড়িয়েছি। কী কারণে এটি বন্ধ রয়েছে, সেই কারণ কর্মকর্তাদের কেউই স্পষ্টভাবে বলতে চাইছেন না।’
শহরের ইঁদুর বটতলী এলাকা থেকে আসা মানোয়ারা বেগম বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে বৃদ্ধ বয়সে এসেও রাস্তার আনাচ-কানাচে বসে বিভিন্ন ফলমূল বিক্রি করে আয় করি। সেই রোজগার দিয়ে ৫৪ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খাওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। তাই ওএমএসই শেষ ভরসা ছিল।
‘গরিবের সেই চাল-আটা নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। নয়তো আমাদের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটানো ছাড়া উপায় থাকবে না।’
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল কবির বলেন, ‘বন্ধ থাকা ওএমএস কেন্দ্র চালুর দাবি নিয়ে অফিস চত্বরে আসা ভোক্তাদের কথা শুনেছি। তাদের দাবির বিষয়গুলো জেলা ওএমএস কমিটি বরাবর উত্থাপন করা হবে। শিগগিরই ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নিয়ে এই সংকট সমাধান করা হবে।’
জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও নওগাঁর জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর নওগাঁ পৌরসভা এলাকার অধিকাংশ ওএমএস ডিলার সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে যৌথ মতামতের ভিত্তিতে ১৫টি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছিল।
‘সেই সাথে নতুন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হয়। যেহেতু তারা বিক্ষোভ করেছেন, প্রয়োজনে যৌথ মতামতের ভিত্তিতে আবারও কেন্দ্রগুলো চালু করা হবে।’
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতকে যথাযথভাবে আইনগত আহ্বান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি আরও বলেন, ‘ভারত আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এবং প্রত্যর্পণের একটি আইনগতভাবে বৈধ এবং যথাযথ অনুরোধের সম্মান করে থাকলে, আমরা অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য আহ্বান জানাব।’
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই আমরা জানি যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি বিদ্যমান। এ বিষয়ে এরই মধ্যে যা কিছুই বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা জানি এবং সচেতন রয়েছি। এ বিষয়ে ভারত আগামীতে কী করতে যাচ্ছে, তার কোনো প্রাক-বিচার এখনই আমরা করতে চাই না।
‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ আনা এবং তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য ভারতকে জানানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব এখন এই ট্রাইব্যুনালের এবং এর চিফ প্রসিকিউটরের।’
কোনো কারণে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা যায় কি না কিংবা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা নেয়া যায় কি না, সেটি নিয়ে আলোচনা করছেন বলে জানান ক্যাডম্যান।
তিনি বলেন, ‘বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন। আমি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ইইউ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি।
‘যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, সেহেতু এখানে অনেকের সমর্থন পাওয়ার সুযোগই আমাদের রয়েছে বলে আমরা আশাবাদী।’
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মনকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার (সচিব) অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পলি কর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অভিযোগকারী আকচা ইউপি সচিব মোছাম্মৎ রিজওয়ানা মুস্তারী বর্ণা বুধবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন একই ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান এবং জোরপূর্বক চেক বইতে স্বাক্ষর করার অভিযোগ তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে। এ কারণে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন।
একই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে, সেহেতু ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলাধীন ৩ নং আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারায় বর্ণিত অপরাধে একই আইনের ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে তার স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
এ বিষয়ে আকচা ইউপি সচিব রিজওয়ানা মুস্তারী বর্ণা বলেন, ‘চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন চলতি বছরের গত ৬ এপ্রিল অফিস বন্ধ থাকার পরও আমাকে পরিষদে ডেকে আনেন এবং চেক বহিতে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি আমাকে অনেক ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করলে আমি পরের দিন ৭ এপ্রিল তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি। তিনি অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেন।
‘প্রাথমিকভাবে তদন্তে চেয়ারম্যানের অপরাধ প্রমাণিত হয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কিছুটা সময় লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, বর্তমান বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু করেছে। আশা করি এমন অপরাধের ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করলে কোনো চেয়ারম্যান জনস্বার্থ পরিপন্থি কোনো কাজ করার সাহস পাবেন না। সেই সাথে আমাদের প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করেছে।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।’
যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর/প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মন্তব্য