বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল জব্বার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'-এর ‘সুপার সাইক্লোন’ হিসেবে আঘাতের আশঙ্কার তথ্য দেখেছেন।
আবদুল জব্বার সোমবার সপরিবার আশ্রয় নেন সাইক্লোন শেল্টারে। সুপার সাইক্লোনের চেয়ে তিন ভাগ কম গতির (ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার) ঝড় আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের প্রতি অনেকটাই আস্থা হারিয়েছেন জব্বার।
আবদুল জব্বার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বইন্যার (সিত্রাং) আগে যে দাপাদপি চলছে ফেসবুক-মিডিয়ায় হ্যাতে মনে হইছিল কেয়ামতের আলামত। ফেসবুকে খালি দেহি এই আইতেছে সিত্রাং বইন্যা, সিডরের চাইতেও নাকি বেশি শক্তি। মোরা তো এহন খবরাখবর ফেসবুক ইউটিউবেই বেশি দেহি।
‘দ্যাশ ও ভারতের বাংলা মিডিয়াগুলাও তো খবর কইছে, বাংলাদেশে এত বড় বইন্যা আর জীবনেও আয় নাই (আসেনি)। ডরের চোডে গুষ্টি-জ্ঞাতি লইয়া আগেই গিয়া আশ্রয় নিছিলাম। এহন দেহি হুদাই আওয়াজ।’
উপকূলের মানুষ বলছে, ঝড় তৈরির আগেই তার মাত্রা বেশি দেখিয়ে প্রচার অথবা প্রকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি সংকেত দেখানোর ফল দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক হতে পারে।
২০০৭ সালে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। ওই ঝড়ের আগে মাঝারি মাত্রার অন্তত আরও দুটি ঝড়ে ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখানো হয়। এর ফলে উপকূলবাসীর মধ্যে তৈরি আস্থাহীনতার কারণে সিডরের মতো শক্তিশালী ঝড়ের প্রকৃত সংকেতকেও অনেকে গায়ে মাখেননি। সিডরে বড় ধরনের প্রাণহানির এটি অন্যতম কারণ।
বরগুনা সদরের নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম শফিকুজ্জামান মাহফুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিডরের সময়েও আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। তখন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
‘এবার সিত্রাং নিয়ে ভয়াবহ প্রচার সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে। তবে ঝড়ের পর এখন উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিষয়টা কিছুটা বাঘ ও রাখালের গল্পের মতো হয়ে গেছে। এরপর মানুষ সহজে আর নিরাপদে যেতে চাইবে না।’
বরগুনা জেলা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর কবির মৃধা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় সিত্রাং নিয়ে একটা হাইপ ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে কিছু গণমাধ্যমের খবরে সিত্রাংকে সুপার সাইক্লোন হিসেবে দেখানোয় সাধারণ মানুষ শঙ্কিত ছিল।
‘এসব নিউজ দেখে অনেক ফেসবুক ও ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটর কনটেন্ট তৈরি করেছেন। সব মিলিয়ে সিত্রাং একটি জুজুর ভয় তৈরি করছিল মানুষের মাঝে। তবে মানুষ বাস্তবটাও দেখেছে। এতে করে তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা আর নিরাপদে যেতে চাইবে না।’
একই ধরনের কথা বলছেন, বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার ফয়সাল মাহামুদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো এক সপ্তাহ আগে থেকে শুনছি ২০০ কিলোমিটারের বেশি বেগে ঘূর্ণিঝড় আসছে। ভয়ে স্কুলের ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তবে একটু ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। সাত দিন আগে থেকে টিভিতে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানান দিচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, কী দিয়ে কী ভুয়া খবর প্রচার করা হয় বুঝি না।’
বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী এলাকার শিক্ষক রবিন মিত্র বলেন, উদ্ভট সব খবরাখবরে ভরে গিয়েছিল। মিডিয়াগুলো প্রচার করলে সিডরের থেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আসছে। কিন্তু তেমন কিছুই তো দেখলাম না। এ রকম খবর প্রচার করলে তো মানুষজন পরে নিরাপদ আশ্রয়ও যেতে চাইবে না।’
সিত্রাংয়ে বাতাসের গতি অনেক কম হলেও দেশের ১১ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের বেশির ভাগই প্রাণ হারিয়েছেন গাছচাপায়। উপকূলবাসী বলছেন, সুপার সাইক্লোন হলে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল ব্যাপক।
‘সুপার সাইক্লোন’-এর তথ্যের উৎস কোথায়
বঙ্গোপসাগরে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে সুপার সাইক্লোন সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রথম ফেসবুকে জানান কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
বাংলাদেশ সময় ৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি পোস্ট তিনি 'ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে দেন। এতে তিনি লেখেন (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত), ‘অক্টোবর মাসের ১৮ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপার-সাইক্লোন সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা সংক্ষেপে জিএফএস।
‘সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপে পরিণত হবে ১৭ ই অক্টোবর যা ১৮ ই অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে। সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে সিত্রাং (থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম)।’
ওই পোস্টে পলাশ লেখেন, ‘সর্বশেষ পূর্বাভাষ অনুসারে সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি সুপার সাইক্লোনের শক্তি অর্জন করতে পরে। অর্থাৎ, বাতাসের গতিবেগ ঘূর্ণিঝড় সিডর কিংবা আম্পানের মতো হতে পারে (ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত)। অক্টোবর মাসের ২৫ তারিখ আমাবস্যা। ফলে সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি যদি অক্টোবর মাসের ২২ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে স্থলভাগে আঘাত করে তবে যে স্থানে আঘাত করবে সেই স্থানের উপকূলীয় এলাকা লন্ড-ভণ্ড করে দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
‘সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি যে স্থানে আঘাত করবে সেই স্থানের উপকূলীয় এলাকায় ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে যদি উপকূলের আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার এর মধ্যে থাকে।’
ওই পোস্টের বরাতে দেশের মূলধারার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেসব প্রতিবেদনের লিংকও নিজের ওয়ালে দিয়েছেন পলাশ। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও সুপার সাইক্লোন হিসেবে সিত্রাং আঘাত করবে বলে প্রতিবেদন প্রচার করে। এসব প্রতিবেদনের বেশ কয়েকটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেন পলাশ।
সিত্রাংয়ের ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার কারণ ব্যাখ্যা করে সংবাদমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১১ অক্টোবর একটি পোস্ট দেন মোস্তফা কামাল পলাশ।
এতে তিনি লেখেন (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত), 'সাইক্লোনের বিভিন্ন নামকরণ করা হয় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এর উপর ভিত্তি করে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের বায়ুচাপ যত কম হবে (সমুদ্র পৃষ্টে স্বাভাবিক বায়ুচাপ ১০০০ মিলিবার হিসাবে গণ্য করা হয়) ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্টি বায়ুর গতিবেগ তত বেশি হবে। বায়ুচাপের সাথে বায়ুর গতিবেগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। মাত্র ২ সপ্তাহ পূর্বে আমেরিকার ফ্লোরিডা উপকুলে আঘাত হেনেছিল হ্যারিকেন ইয়ান। হ্যারিকেন ইয়ান স্থল ভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল বা ২৪৯ কিলোমিটার।
‘বাতাসের এই গতিবেগের কারণে হ্যারিকেনটিকে নামকরণ করা হয়েছে ক্যাটেগরি ৪ হ্যারিকেন হিসাবে। এই হ্যারিকেনটির বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টার আর মাত্র ২ মাইল কিংবা ৩ কিলোমিটার বেশি হতো তবে এই হ্যারিকেনটিকে ক্যাটেগরি ৫ হ্যারিকেন নামকরণ করা হতো। একই কথা প্রযোজ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট কোন ঘূর্ণিঝড় এর ক্ষেত্রে।
‘সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার উঠে ঘূর্ণিঝড়টির জীবনের যে কোন সময় সেটা মধ্য সমুদ্রের মধ্যেও হতে পারে কিংবা স্থলভাগে আঘাত করার সময়েও হতে পারে তবে ঘূর্ণিঝড়টিকে সুপারসাক্লোন হিসাবে নামকরণ করা হবে। ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্পান কিন্তু স্থলভাগে আঘাত করেছিল ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে। এর পরেও ঘূর্ণিঝড় আম্পানকে নামকরণ করা হয়েছে সুপার-সাইক্লোন হিসাবে কারণ সমুদ্রে থাকা অবস্থায় আম্পানের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার।’
নিউজবাংলার বিরুদ্ধে ‘অপসাংবাদিকতার’ অভিযোগ
সিত্রাংয়ের ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হওয়ার আশঙ্কা জানাতে গিয়ে ‘আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের’ নাম উল্লেখ করেন পলাশ।
তিনি যে ওয়েবসাইটের অ্যানিমেশনের ছবি নিজের পোস্টে দিয়েছেন সেটির নাম ট্রপিকালটিডবিটস ডটকম। ড. লেভি কাওয়ান নামের একজন ‘স্বাধীন আবহাওয়াবিদ’ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছেন।
ওয়েবসাইটে ড. লেভি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ২০০২ সাল থেকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন পর্যবেক্ষণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে পিএইচডি করেছেন তিনি।
ওয়েবসাইটের ল্যান্ডিংপেজে বলা হয়েছে গত এক সপ্তাহে কোনো ব্লগ পোস্ট করা হয়নি। আটলান্টিক অঞ্চলে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সক্রিয় থাকার সময়ে সাধারণত নিয়মিত পোস্ট করা হয়।
তবে সাইটের ফোরকাস্ট মডেলস সেকশনে গিয়ে ‘সুপার সাইক্লোন সিত্রাং’-এর সম্ভাব্য গতিপথের অ্যানিমেশন দেখা যায়।
ড. লেভি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ২০১২ সালে নিজের হোস্টেল কক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ব্লগ হিসেবে সাইটটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেই লিখেছেন, তার সাইক্লোন পূর্বাভাস মডেল কোনো আনুষ্ঠানিক বা সরকারি সংস্থার পূর্বাভাস নয়। পুরো সাইটটি নিছক শখের বশে করা এবং ক্রাউডফান্ডিংয়ে চলছে।
আমেরিকান টেকজায়ান্ট আইবিএমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়েদার চ্যানেলের ওয়েদার ডটকমে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ঘূর্ণিঝড় তৈরির আগেই এভাবে পূর্বাভাস দেয়ার মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
এই নিবন্ধে বলা হয়, সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের দেয়া আবহাওয়া পূর্বাভাসের মডেলের তথ্য এখন ইন্টারনেটে ব্যাপক সহজলভ্য। তার মানে এই নয় যে, এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় আগেই কোনো হারিকেনের উপকূলে আঘাতের পূর্বাভাস মডেল আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভালো ধারণা৷
এই নিবন্ধে এ ধরনের পূর্বাভাসের ত্রুটি তুলে ধরতে ড. লেভির ওয়েবসাইটেরই একটি বিভ্রান্তিকর মডেল জিআইএফ আকারে দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘নিচের অ্যানিমেশনটিতে আলাদা করে মডেলটি আটবার চালানোর ফল দেখা যাচ্ছে। এটি মূলত গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেমের (জিএফএস) মডেল যেটিকে ২২ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট সকাল পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা পরপর চালানো হয়েছে। প্রতিটি পূর্বাভাসই ৩১ আগস্ট রাত ২টার সময়কার।
‘অ্যানিমেশনে গাঢ় লালকে ঘিরে থাকা কালো বৃত্তগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় যে মডেলটি ক্রমশ তৈরি হতে থাকা পূর্ণাঙ্গ উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলো কোথায় তৈরি সেগুলো দেখাচ্ছে।’
তবে প্রতিবারই মডেলটি চালানোর সময় ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থানে ভিন্নতা দেয়া যায়।
ওয়েদার ডটকম বলছে, প্রতিদিন সুপার কম্পিউটারে জটিল অ্যালগরিদমের মাধ্যমে একাধিকবার পূর্বাভাসের মডেলগুলো চালানো হয়। তাপমাত্রা, চাপ, বাতাসের গতি ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বিচার করে অ্যালগরিদমে একেকবার একেক সূচকে পরিবর্তন ঘটে।
সুপার সাইক্লোন তৈরির প্রাথমিক পর্যায়েরও প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এ ধরনের সুপার কম্পিউটার জেনারেটেড মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ১০ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
আরও পড়ুন: এ মাসের মাঝামাঝিতেই কি সুপার সাইক্লোন ‘সিত্রাং’?
সে সময়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে জানান, চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী সামনে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। তবে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
সাগরে লঘুচাপ তৈরির পর সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় থাকার কথা। এর মধ্যে লঘুচাপ তৈরি হলেও মৌসুমি বায়ুর কারণে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারবে না।
মোস্তফা কামাল পলাশ তার প্রথম পোস্টে দাবি করেছিলেন, নিম্নচাপটি ১৭ অক্টোবর তৈরি হয়ে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাস্তবে সিত্রাংয়ের নিম্নচাপটি তৈরি হয় ২২ অক্টোবর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক সে সময় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এক মাসের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এমন একটি লঘুচাপের কথা বলা আছে। তবে এত আগে (১০ অক্টোবর) এই সম্ভাবনা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’
সুপার কম্পিউটার জেনারেটেড মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে দেশে ও বিদেশে বিতর্কের ভিত্তিতে নিউজবাংলার প্রতিবেদন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান পলাশ। প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে তোলেন ‘অপসাংবাদিকতা’র অভিযোগ।
১১ অক্টোবর এ নিয়ে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন পলাশ। প্রথমটিতে তিনি লেখেন, ‘আমার গত ১২ বছরের লেখালেখির জীবনে সবচেয়ে বড় অপ-সাংবাদিকতার স্বীকার হলাম আজকে। নিউজ বাংলা ২৪ ডট কম নামক একটি অনলাইন পোর্টালের Saugat Bosu নামক জনৈক স্টাফ রিপোর্টার এই অপ-সাংবাদিকতার জনক। অল্প বিদ্যা ভয়ংকর প্রবাদ বাক্যটির সার্থক উদাহরণ Saugat Bosu এর এই রিপোর্ট টি।’
তবে একই দিন অন্য একটি পোস্টে তিনি ফেসবুকে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সিত্রাংকে কেন সম্ভাব্য ‘সুপার সাইক্লোন’ হিসেবে প্রচার করছে তা নিয়েও অভিযোগ তোলেন।
সেই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি লক্ষ করেছি অনেক গণমাধ্যম আমার সাথে কথা না বলেই আমার ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া পোষ্ট থেকে তথ্য নিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করে সংবাদ প্রকাশ করতেছে কিংবা এমন সংবাদ শিরোনাম দিয়ে সেই সংবাদ প্রকাশ করতেছে যা আমার পোষ্টের কোথাও উল্লেখ করা হয় নি।
'আমি স্পষ্টত করে বলতে চাই যে আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলগুলো। কিন্তু আজ ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় নি। ফলে আপনারা যদি সংবাদের কাটতির জন্য এই রকম শিরোনাম দিয়ে প্রকাশ করে থাকেন যে সুপার সাইক্লোন ধয়ে আসতেছে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে তবে সেই সংবাদ শিরোনামকে এই মহুর্তে সঠিক বলা যাবে না। আপনাদের সংবাদ কাটতির জন্য দেওয়া মুখরোচক সংবাদ শিরোনামের জন্য অনেক মানুষ ভুল বুঝিতেছে কিংবা আমার পূর্বাভাস সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
‘আমি গণমাধ্যম কর্মীদের অনুরোধ করবো এমন কোন রকম মুখরোচক শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবেন যা আমার পোষ্টে উল্লেখ করি নি। বা আমার পোষ্টে উল্লেখিত তথ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায় না। সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে সংবাদের শিরোনাম হতে পারে নিম্নরূপ:
"আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপারসাক্লোন এর সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে"।’
তবে এর আগে তিনিই সুপার সাইক্লোনের সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রশংসা করে সেগুলো নিজের ওয়ালে শেয়ার করেছিলেন।
নিউজবাংলার বিরুদ্ধে মোস্তফা কামাল পলাশ ‘অপসাংবাদিকতা’র অভিযোগ তুললেও ১১ অক্টোবরের পর আর কোনো পোস্টে সিত্রাংকে সম্ভাব্য সুপার সাইক্লোন হিসেবে উল্লেখ করেননি। ঝড়ের শক্তির মাত্রা পরদিনই কমিয়ে আনেন তিনি। ঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত হানার স্থান ও সময়েও আসতে থাকে পরিবর্তন।
১২ অক্টোবর একটি পোস্টে পলাশ লেখেন, ‘আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস (১২ ই অক্টোবর দুপুর ১২ টার মডেল রান) অনুসারে আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" গত ২৪ ঘণ্টায় স্থল ভাগে আঘাতের স্থান আরও কিছুটা উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে সকাল ৬ টার পর থেকে। অর্থাৎ গতকালের পূর্বাভাষ অপেক্ষা আরও ২ দিন পরে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে।
‘গতকালের পূর্বাভাস এর মতো আজকের পূর্বাভাসেও মডেলটি সম্ভব্য ঘুর্নঝড়টির যে শক্তি নির্দেশ করতেছে তা গতকালের পূর্বাভাস নির্দেশিত শক্তি অপেক্ষা কম। আজকের পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত করার সময় অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে (সুপার-সাইক্লোনের নিচের স্তরের ঝড় হিসাবে)।’
পলাশ ১৩ অক্টোবরের একটি পোস্টে তার অনুসরণ করা মডেলের সীমাবদ্ধতার কথাও স্বীকার করেন। তিনি লেখেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" সম্বন্ধে ১ টা ভালো ও ১ টা খারাপ সংবাদ আছে। ভালো সংবাদটি হলো আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস (১২ ই অক্টোবর দুপুর ১২ টার মডেল রান) অনুসারে আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" এর শক্তি খুবই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম এর কথা নির্দেশ করতেছে (এর মানে এই না যে এই পূর্বাভাসের পরের পূর্বাভাসে আবারও শক্তশালি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই)।
‘আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত মডেলগুলোর পূর্বাভাস পরিবর্তন হতেই থাকবে নিয়মিত ভাবে। এছাড়া স্থল ভাগে আঘাত করার ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় এর আঘাত হানার স্থান ও শক্তির ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে।‘
পরদিন আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘মডেলগুলোর প্রতিটি পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড় এর স্থল ভাগে আঘাত করার স্থান, ঘূর্ণিঝড়ের শক্তির পরিবর্তন হতেই থাকবে শেষ পর্যন্ত। এছাড়া স্থল ভাগে আঘাত করার ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় এর আঘাত হানার স্থান ও শক্তির ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে।‘
ফেসবুকে ১৪ অক্টোবর একটি পোস্টে যে পূর্বাভাস দেন সেটি বাস্তবে ঘটেনি। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘দৃক নিউজে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে কারণ সহ ব্যাখ্যা করেছি কেন সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান ও নিকবার দীপপুঞ্জ থেকে পশ্চিমদিকে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মাঝামাঝি উপকূলের দিকে অগ্রসর হলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রকৃতির ঘূর্ণিঝড় হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করবে।’
তিনি লেখেন, ‘পক্ষান্তরে যদি সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি যদি আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে যদি উত্তর দিকে বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকার দিয়ে অগ্রসর হলে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করবে। ঘর্নিঝড়টির শক্তি অনেকাংশে নির্ভর করবে ভারত নাকি বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে তার উপর।’
প্রকৃতপক্ষে সিত্রাং বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করলেও এটি ছিল সাধারণ মাত্রার একটি ঘূর্ণিঝড়, ঘণ্টায় যার সর্বোচ্চ গতি ৭৫ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জে।
১৬ অক্টোবরের পোস্টেও পলাশ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করতে পারে ভারতের উপকূলে। তিনি লেখেন, ‘আমেরিকা, জার্মানি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করতেছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মাঝা-মাঝি উপকূল দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত হানার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।‘
ঘূণিঝড়ের পরিবর্তে নিম্নচাপ উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমন পূর্বাভাসও দিয়েছেন প্রবাসী এই গবেষক। গত রোববার একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘একটা সুসংবাদ আছে। নিম্নচাপটি বর্তমানে যে স্থানে রয়েছে ও যে পথে এগোচ্ছে সেই পথে বায়ু শিয়ায়ের যে মান রয়েছে তা সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি আরও অনেক কমিয়ে দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে স্থল ভাগে আঘাত করার সময় নিম্নচাপ হিসাবে আঘাত করতে পারে।‘
এভাবে বিভিন্ন সময়ে ঝড়ের অবস্থা, আঘাতের স্থান, সময় ও গতি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার পরেও পলাশের দাবি তিনিই প্রথম ৯ অক্টোবর সিত্রাং সম্পর্কে ‘সঠিক পূর্বাভাস’ দেন।
তার মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদনের ভুয়সী প্রশংসা করে একাধিক লিংক শেয়ার ও স্ট্যাটাস দিয়েছেন পলাশ। সবশেষ মঙ্গলবার এক পোস্টে তিনি তার বক্তব্য ছাপানোর জন্য পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘প্রায় গড ফাদারের ভূমিকায়’ নামার কথা লিখেছেন।
এই পোস্টে মোস্তফা কামাল পলাশ লিখেছেন, ‘আমি গত ১৭ দিনে দেওয়া ৩১ টি আপডেটের প্রায় প্রত্যেকটিত উল্লেখ করেছি ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা শুরু করবে ২৪ শে অক্টোবর দুপুর থেকে। গতকালে সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকদের ফোনে করে হাতে-পায়ে ধরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস বিজ্ঞপ্তি ভুল সেই বিষয়ে সংবাদ ছাপানোর জন্য পরিচিত সাংবাদিক ভাই-বন্ধুদের সাথে প্রায় গড ফাদারের ভূমিকায় নেমে পড়ি।’
তার মন্তব্য ছাপানো কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের নামও পলাশ উল্লেখ করেছেন ওই পোস্টে।
এর পাশাপাশি সুপার কম্পিউটার জেনারেটেড মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে নিউজবাংলায় ১০ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনকে আবারও ‘অপসংবাদিকতা’ আখ্যা দিয়েছেন পলাশ।
একজনের পোস্ট শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ভোর ৬ টার মধ্যে বাংলাদেশের ভূমি ত্যাগ করবে। চলুন এবারে ফিরে দেখি আমার পূর্বাভাস নিয়ে কেমন অপ-সাংবাদিকতা করেছে কোন সংবাদ মাধ্যম। এই অপ-সাংবাদিকতা করে দেশের মানুষের মাধ্বে দ্বিধা ঢুকিয়ে না দিলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর কারণে দেশব্যাপী আজ যে ক্ষত-ক্ষতি হলও বা এখনও হচ্ছে তার বিশাল একটি অংশ রক্ষা করা যেত।‘
অপেশাদার আচরণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সাগরে লঘুচাপ তৈরির দুই সপ্তাহ আগেই সুপার সাইক্লোনের আশঙ্কার প্রচারকে ‘বিভ্রান্তিকর ও অপেশাদার’ আচরণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সংবাদমাধ্যমকেও এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া নিয়ে একমাত্র আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফোরকাস্টই গ্রহণযোগ্য। এর বাইরে আমরা যারা বিভাগীয় অধ্যাপক আছি তারাও আবহাওয়া নিয়ে রিসার্চ করি। আমাদের রিসার্চে ত্রুটিও থাকতে পারে, কারণ আমরা তো অধিদপ্তরের মতো টেকনোলজি ব্যবহার করি না।
‘আমরা রিসার্চ করি নিজেদের প্রয়োজনে, কিন্তু সেটাকে শতভাগ সঠিক ধরে প্রচার বা প্রকাশ করতে পারি না। আমরাও রিসার্চ করে দেখেছি যে ঝড়টির সুপার সাইক্লোন হওয়ার সুযোগ ছিল তাই বলে তো আমরা এগুলো ফেসবুকে লিখে দিইনি। আর তার চেয়ে বড় কথা আপনি ফেসবুকে যা খুশি তা লিখে দিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিলেন এটা তো হতে পারে না।'
অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বলেন, 'কত মানুষ এই কয়দিন আতঙ্কে কাটিয়েছেন, কত মানুষের সম্পদ নিয়ে দুশ্চিন্তা গেছে এগুলো কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আপনার আমার কারোরই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই। আর আবহাওয়ার মতো প্রাকৃতিক ও পরিবর্তনশীল বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কোনো তথ্য প্রচার করা দায়িত্বহীনতা, একইসঙ্গে এসব বিশ্বাস করাও একই রকমের দায়িত্বহীনতা।
‘এই ঘটনায় যেটা হলো এর পরবর্তী প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে- ওই যে বাঘ ও রাখালের গল্পের মতো। মানুষ সুপার সাইক্লোনের কথা শুনে যেভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, পরে দেখা যাবে বড় দুযোগকেও তারা উপেক্ষা করবেন।’
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম।
তিনি মনে করেন এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্যের ছড়াছড়ি হলে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ওপর। কারণ এমনিতেই তাদের মধ্যে ধারণা আছে ‘যেমন বলা হয় তেমন ঝড় আসে না।’
কাজী শফিকুল আযম বলেন, ‘এজন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়েও কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হয়। আমরা ঠিকমতো মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নিতে পারি না। এর ওপর এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হলে তো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাবে।
‘তখন দেখা যাবে আরও বেশি মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে দুর্যোগের সময় নিজ বাসায় অবস্থান করবে। এতে প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই আবহাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য সাধারণ কোনো সোর্স থেকে আসা উচিত নয়।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. শাহ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের আবহাওয়া নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যের বাইরে কোনো তথ্যই গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের দেশের আবহাওয়া ফোরকাস্টের বিষয়গুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রী খোঁজখবর রাখেন। বাইরের দেশের কোনো ব্যক্তির কথায় যদি আমাদের দেশের আবহাওয়ার ফোরকাস্ট হয়ে যেত তাহলে দেশে এত টাকা খরচ করে টেকনোলজি স্থাপন আর আমাদের শ্রম দেয়ার কী দরকার ছিল!’
তিনি বলেন, ‘কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষকের বাংলাদেশের আবহাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো একদমই দায়িত্বহীন কাজ। এতে করে অনেক আগে থেকেই সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব পড়েছে, ভীতি-আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
‘এসব ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমকেও আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবহাওয়া সম্পর্কে কোনো তথ্য পেলে তা অবশ্যই আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যাচাই করে নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য