ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের ঘন জঙ্গল। সেখানকার পাহাড়ি গুহা লিয়াং তেবোতে ২০২০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় চমকে যান বিশেষজ্ঞরা। এক কিশোরের দেহাবশেষই তাদের এই বিস্ময়ের কারণ।
আজ থেকে ৩১ হাজার বছর আগে মারা যায় ওই কিশোর। তার দেহাবশেষে রয়েছে শল্যচিকিৎসার সুস্পষ্ট প্রমাণ। ছেলেটির বাম পা কেটে ফেলা হয়েছিল নিপুণ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আর সেই চিকিৎসার পর ছয় থেকে নয় বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল সে।
এই দেহাবশেষ আবিষ্কার বদলে দিচ্ছে শল্যচিকিৎসার প্রচলিত ইতিহাস। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বোর্নিয়ান ওই প্রত্নকিশোরের নাম দিয়েছেন বিটিওয়ান। তার অস্থি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জীবনের শুরুর দিকে বড়সড় এক নিখুঁত অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে।
ওই অস্ত্রোপচারে বাম পা হারালেও জীবন রক্ষা পায় বিটিওয়ানের। লিয়াং তেবোতে ওই কিশোরের দেহাবশেষ খুঁজে পান অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো টিম ম্যালোনির নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
এর আগে সবচেয়ে প্রাচীন অস্ত্রোপচারের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল এক ফরাসি কৃষকের দেহে, যিনি এখন থেকে সাত হাজার বছর আগে বেঁচে ছিলেন। তার কবজির নিচ থেকে একটি হাত কেটে ফেলা হয়েছিল।
ওই কৃষকের দেহাবশেষ আবিষ্কারের পর গবেষকেরা এতদিন ধারণা করতেন, জটিল অস্ত্রোপচারের কৌশল মানুষের আয়ত্বে এসেছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার বছর আগে থেকে। তবে টিবিওয়ান প্রমাণ করছে এর অন্তত তিন গুণ বেশি সময় আগেই শল্যবিদ্যা জানা ছিল মানুষের।
বিজ্ঞানসাময়িকী নেচারে গত বুধবার প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা নিবন্ধটি। ম্যালোনি এবং তার সঙ্গীরা লিখেছেন, ‘একটি সফল অঙ্গ ব্যবচ্ছেদের এই বিস্ময়কর প্রাথমিক প্রমাণ থেকে বোঝা যায়, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়া অঞ্চলে অন্তত কিছু দক্ষ মানুষ চাষাবাদ যুগের বহু আগে অত্যাধুনিক চিকিৎসা জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করেছিল।
‘আমাদের অনুমান, টিবিওয়ান যে সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল তারা দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ভুলত্রুটি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শারীরবিদ্যা ও অস্ত্রোপচারের কৌশলগুলো রপ্ত করতে সক্ষম হয়। এই জ্ঞান মৌখিকভাবে তাদের আন্তঃপ্রজন্মে ছড়িয়ে গিয়েছিল।’
নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘আমাদের ধারণা যে বা যেসব শল্যবিদ টিবিওয়ানের পায়ে অস্ত্রোপচার করেন তিনি বা তাদের অবশ্যই মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পেশী এবং ধমনী সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ছিল। মারাত্মক রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়ও তিনি বা তারা জানতেন।
‘তিনি বা তারা টিবিওয়ানকে বাঁচানোর প্রয়োজনেই পা কেটে ফেলার দিকে গিয়েছিলেন। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের সময়, শিরা, ধমনী ও টিস্যুর প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া হয়েছে। সেগুলো এমনভাবে সারিয়ে তোলা হয় যাতে করে টিবিওয়ানের প্রাণই কেবল রক্ষা পায়নি, এক পা হারিয়েও বাকি জীবন সে বেশ সক্রিয় ছিল।‘
বিশেষ কোনো ক্ষতজনিত সংক্রমণের কারণে বিওয়ানের বাম পা কেটে ফেলতে হয় বলে ধারণা গবেষকদের। তার দেহাবশেষটি গুহার একটি সমাধি খনন করে পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে প্রাচীন এই সভ্যতায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রচলন থাকার বিষয়েও নিশ্চিত হয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
আরও পড়ুন:বিশ্বে বিগত এক লাখ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে ২০২৩ সালের উষ্ণতম বর্ষ হওয়া ‘দৃশ্যত নিশ্চিত’ বলে বুধবার জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিজ্ঞানীরা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে প্রকাশিত ডেটা অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর স্মরণকালের সবচেয়ে উষ্ণ অক্টোবর হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা উল্লিখিত তথ্য জানিয়েছেন।
ইইউর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) জানায়, অক্টোবরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে যায় গত মাসে। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবর স্মরণকালের উষ্ণতম অক্টোবর ছিল বলে জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
সিথ্রিএসের উপপরিচালক সামান্থা বুরগেস এ বছরের অক্টোবরের তাপমাত্রা ‘অতি চরমভাবাপন্ন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, গত মাসে তাপমাত্রা দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হওয়ার মধ্য দিয়ে আগের রেকর্ড ভেঙে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানবীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন, চলতি বছরে এল নিনোর প্রভাবে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণায়নের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে।
সিথ্রিএস জানায়, চলতি বছরের অক্টোবরে ভূপৃষ্ঠে বায়ুর তাপমাত্রা ছিল ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল নাগাদ একই মাসের তাপমাত্রার চেয়ে এক দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ইইউর সার্ভিসটি জানায়, তাপমাত্রার রেকর্ডভাঙা অক্টোবরের অর্থ হলো ২০২৩ সাল যে স্মরণকালের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে, তা ‘দৃশ্যত নিশ্চিত’।
চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন গবেষক।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস বুধবার এ তিন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, কোয়ান্টম ডটস নিয়ে আবিষ্কার ও সংশ্লেষণের জন্য ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে মোঙ্গি বাওয়েন্ডি, লুইস ব্রুস ও অ্যালেক্সেই একিমভকে।
ওয়েবসাইটে বলা হয়, একিমভ ও ব্রুস স্বতন্ত্রভাবে কোয়ান্টম ডটস সৃষ্টিতে সক্ষম হন। আর বাওয়েন্ডি রাসায়নিক উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আনেন।
কোয়ান্টাম ডটস বা কিউডিস সেমিকন্ডাক্টর ন্যানোক্রিস্টাল হিসেবেও পরিচিত। এগুলো সেমিকন্ডাক্টর কণা, যেগুলো আকারে কয়েক ন্যানোমিটার। ন্যানোটেকনোলজি ও বস্তুবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই কিউডিস।
রসায়নে এবারের নোবেল পুরস্কারজয়ী মোঙ্গি জি. বাওয়েন্ডির জন্ম ১৯৬১ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (এমআইটি) কাজ করছেন।
যৌথভাবে রসায়নের আরেক নোবেলজয়ী লুইস ই. ব্রুসের জন্ম ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইর ক্লিভল্যান্ডে। তিনি নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত।
উল্লিখিত দুজনের সঙ্গে এবার রসায়নে নোবেল পাওয়া আরেক ব্যক্তি অ্যালেক্সেই আই. একিমভের জন্ম ১৯৪৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে। তিনি নিউ ইয়র্কভিত্তিক ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজি ইনকরপোরেটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।
রসায়নে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১৪ জন এ শাস্ত্রে নোবেল পান।
এ শাস্ত্রে ২৫ বার নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে দুজন করে ব্যক্তিকে। এ শাস্ত্রে দুবার নোবেল পুরস্কার পান ফ্রেডেরিক স্যাঙ্গার ও ব্যারি শার্পলেস।
সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ৩৫ বছর বয়সে রসায়নে নোবেল পান ফ্রেডেরিক জোলিয়ট, যিনি ১৯৩৫ সালে এ পুরস্কার পান। সবচেয়ে বেশি ৯৭ বছর বয়সে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান জন বি. গুডএনাফ। পুরস্কারের ইতিহাসে সর্বজ্যেষ্ঠ নোবেলজয়ীও তিনি।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার। ১৮৯৫ সালে এক উইলে ‘মানবজাতির সর্বোচ্চ সেবায় অবদান রাখা’ ব্যক্তিদের জন্য এই পুরস্কার নিবেদিত করেছেন তিনি।
এবার নোবেল পুরস্কারের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রের পুরস্কারটি সোমবার সুইডেনের স্টকহোমে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানের পুরস্কার। বুধবার রসায়নের পর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে সাহিত্যের পুরস্কার।
আগামী শুক্রবার অসলো থেকে ঘোষণা করা হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর অর্থনীতির পুরস্কারটি ঘোষণা করা হবে ৯ অক্টোবর।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছেছেন দুই রুশ ও এক আমেরিকান নভোচারী।
রুশ-আমেরিকা সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যেই উভয় দেশের নভোচারীরা যৌথভাবে মহাকাশ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রোসকসমস মহাকাশচারী ওলেগ কোনোনেনকো ও নিকোলাই চুবসহ নাসার নভোচারী লোরাল ও’হারা কাজাখস্তানের বাইনোকুর কসমোড্রোম থেকে সয়ুজ এমএস-২৪ মহাকাশযানে ওঠেন।
মহাকাশযানটি তিন ঘণ্টা পর আইএসএসে পৌঁছায়। সেখানে তিন রাশিয়ান, দুই আমেরিকান, এক জাপানী নভোচারী ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার এক প্রতিনিধির সাঙ্গে যোগ দেন।
রাশিয়ার প্রায় ৫০ বছর পর চালানো চন্দ্রাভিযান গত মাসে ব্যর্থ হওয়ার পর মহাকাশ স্টেশনে গেল নভোচারীরা।
আইএসএস আমেরিকা ও রাশিয়ার সহযোগিতার একটি ব্যতিক্রমী ভেন্যু। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়।
নভোচারীরা এমএস-২৩ মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন বলে জানায় রসকসমস। সূত্র: বাসস
আরও পড়ুন:মহাশূন্যে সেলফি তুলে পাঠিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সৌরযান আদিত্য এল-১। চন্দ্রাভিযানের ঠিক পর পরই সৌর অভিযানে নেমেছে দেশটি।
ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ‘এল-১’-এর পথে রওনা দেয়ার সময় পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে পৃথিবী ও চাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে পাঠিয়েছে ওই সৌরযান।
বৃহস্পতিবার ইসরো এ ছবি প্রকাশ করেছে বলে এনডিটিভর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। টুইটারে ছবিগুলো ভিডিও আকারে প্রকাশ করেছে ইসরো।
পোস্টে লেখা হয়েছে, আদিত্য এল-১ অভিযান: প্রত্যক্ষদর্শী! আদিত্য এল-১ সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ এল-১ পয়েন্টের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। পথে সেলফি তুলল, ছবি তুলল পৃথিবী এবং চাঁদেরও।
৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শুরুতে ভারতীয় সৌরযানের তোলা সেলফি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে সৌরযান আদিত্য-এর ভিইএলসি এবং সুইট দৃশ্যমান।
এর পর ভারতীয় সৌরযানে বসানো ক্যামেরার তোলা পৃথিবী এবং চাঁদের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঘন কালো আকাশে আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবীর একদিক। তার ডানদিকে চোখে পড়ছে একটি চলমান বিন্দু। সেটি চাঁদ বলে জানিয়েছে ইসরো। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার মুহূর্ত ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
গত ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে আদিত্য এল-১ সৌরযানের উৎক্ষেপণ হয়। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর চারদিকে দুবার চক্কর কেটেছে সেটি।
সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১-এ পৌঁছানোর আগে, আরও দুবার গতি বাড়িয়ে চক্কর কাটবে এই যান। ১২৫ দিন পর ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১-এ পৌঁছনোর কথা ভারতের সৌরযানের।
মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকেই বলে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। সেখানে কম জ্বালানি খরচ করে, মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্বিঘ্নে নজরদরি চালানো যায়।
সূর্যের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য, গণিত বিশারদ জোসেফ লুইস ল্যাগ্রেঞ্জ এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১ আবিষ্কার করেন।
ইসরো জানিয়েছে, ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১ থেকে কোনো রকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সূর্যের বায়ুমণ্ডলে ঠিক কী ঘটছে, মহাকাশের সার্বিক আবহাওয়ায় তার কী প্রভাব পড়ছে, তৎক্ষণাৎই সব তথ্য হাতে পাওয়া সম্ভব।
রাজশাহী শহরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নভোথিয়েটার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার।’
আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজশাহীর গণপূর্ত অধিদপ্তর চলতি বছরের জুলাইয়ে নভোথিয়েটারটির পুরো কাজ শেষ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল অনুযায়ী যেকোনো সময় নভোথিয়েটারটির উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৮ সালে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সামনের অংশে শুরু হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’-এর নির্মাণকাজ।
করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় চলতি বছরের জুলাইয়ে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দেশের সর্ববৃহৎ পরিধির এ প্রকল্পের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে প্ল্যানেটেরিয়ামসহ ফাইভজি হল ও আধুনিক অবজারভেটেড টেলিস্কোপ, যা দেশে প্রথম। এটি দিয়ে গবেষকরা নভোমণ্ডলের গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে পারবেন।
এ নভোথিয়েটারে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে তিন তলায় যেতে ভেতরে দুটি বড় সিঁড়ি ছাড়াও রয়েছে লিফট ও এস্কেলেটর। তৃতীয় তলায় পূর্ব-উত্তর কোনায় বসানো হয়েছে ডোম বা গম্বুজ। সফটওয়্যার চালুর সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলেই গম্বুজের চারপাশ থেকে হালকা আলোয় আলোকিত হতে শুরু করবে মাথার ওপরের সাদা পর্দা।
চার পাশের মোট পাঁচটি প্রজেক্টর একসঙ্গে চালু হয়ে শুরু হবে পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য দ্য বিগ ব্যাং শো। কক্ষটিতে প্রবেশ করতে হচ্ছে জুতা খুলে। কারণ ভেতরে খুবই স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।
নভোথিয়েটারটি প্রতিটি ফ্লোরে লাইটিং, ভবনের সামনে সুদৃশ্য পানির ফোয়ারাসহ করা হয়েছে আধুনিক ডেকোরেশন। পুরো ভবনে সেন্ট্রাল এসি স্থাপন, টিকেটিং সিস্টেম পুরোপুরি অটোমেটেড ও ডিজিটাল। এ ছাড়া মেঝেতে বিছানো হয়েছে মূল্যবান মাদুর।
বসার জন্যে সারি সারি লাল রঙের আরামদায়ক চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
পুরো নভোথিয়েটারে আধুনিক ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশন ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাগানো হয়েছে ১৪০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে অন্তত ১০০টি কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে দেখা যায়, নভোথিয়েটারে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি, সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র সবই এক পর্দায় ভেসে উঠছে নিমেষেই। নিখুঁত সাউন্ডের জন্য পুরো হলে লাগানো হয়েছে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, যা দর্শকদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিয়ে যাবে সরাসরি মহাশূন্যে গ্রহ-নক্ষত্রের খুব কাছে।
একসঙ্গে ১৫০ জন আসনগুলোতে বসে অসীম মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে ও দেখতে পারবেন। এখানে দিনে অন্তত ছয় থেকে সাতটি শো চালানো সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিজ্ঞান গবেষণা ও মহাকাশ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ভবন হতে যাচ্ছে জানিয়ে রাজশাহী গণপূর্ত-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, প্রকল্পে শুধু ভবন তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় হয় নভোথিয়েটারের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য খাতে। শুধু প্ল্যানেটেরিয়াম ছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল জায়গা। যেকোনো বিজ্ঞান প্রদর্শনী ছাড়াও চাইলে শিক্ষাবিষয়ক নানা অনুষ্ঠান এখানে করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান রাজশাহী এসে নভোথিয়েটার পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিস্তারিত অবহিত করে উদ্বোধনের জন্য শিডিউল নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল পেলে চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই নভোথিয়েটারটির উদ্বোধন হবে।’
স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজশাহী শিক্ষানগরী হওয়ায় স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে নভোথিয়েটারটি।’
ঢাকার পরে দ্বিতীয় বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষানগরী ও প্রকৃষ্ট জায়গা বলেই ঢাকার বাইরে রাজশাহীকে নভোথিয়েটার নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে নভোথিয়েটার অত্যন্ত প্রয়োজন। এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল।’
আরও পড়ুন:চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানবহীন ভারতীয় মহাকাশযান অবতরণের এক সপ্তাহ পর গবেষণা চালানোর জন্য সূর্যের উদ্দেশে রকেট পাঠিয়েছে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএসআরও বা ইসরো।
আল জাজিরার শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সূর্যপৃষ্ঠের দূরতম স্তরগুলো পর্যবেক্ষণ করতে ‘আদিত্য-এল ১’ নামের রকেটটিতে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। ভারত সময় শনিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে এটি চার মাসের যাত্রা শুরু করে।
ইসরোর ওয়েবসাইটে রকেট উৎক্ষেপণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যেটি দেখেছে প্রায় পাঁচ লাখ দর্শক।
ইসরো জানায়, সূর্যে পদ্ধতিগত গবেষণার জন্য সাতটি বৈজ্ঞানিক সামগ্রী বহন করছে রকেটটি। এসব সামগ্রীর সবগুলোই ভারতের মহাকাশ সংস্থা ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় দেশীয়ভাবে তৈরি।
সংস্থাটি জানায়, মিশন সফল হলে এটি হবে সৌর কক্ষপথে এশিয়ার কোনো দেশের প্রথম অনুসন্ধান।
মহাকাশযানটিকে চার মাসের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়ার উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে।
আদিত্য এল-১ সূর্য-পৃথিবী সিস্টেমের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১-এর চারপাশের কক্ষপথে অবস্থান নেবে।
ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট হলো এমন এক জায়গা, যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল একসঙ্গে কাজ করে। এ কারণে ওই অঞ্চলে মহাকাশযান স্থির থাকতে পারে।
ইতালীয়-ফরাসি গণিতবিদ জোসেফ-লুই ল্যাগ্রেঞ্জের নামানুসারে এই অবস্থানগুলোকে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট বলা হয়।
আরও পড়ুন:চাঁদের রহস্যে ঘেরা দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোনও দেশ হিসেবে পা রাখলো ভারত।
বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় দেশটির চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ করতে শুরু করে। ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ইতিহাস গড়ে চন্দ্রযান-৩।
পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ভারতের কোটি কোটি মানুষের চোখ ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের সেই অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে।
ঐতিহাসিক এই অভিযানের চূড়ান্ত মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচার করছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরো।
ভারতের দেড় শ’ কোটি মানুষ সম্মিলিতভাবে প্রতীক্ষা করে ছিল এই মহার্ঘ প্রহরের জন্য। চন্দ্রযানের চূড়ান্ত সাফল্যের কামনায় নমাজ, বিশেষ পূজা থেকে শুরু করে স্কুলে স্কুলে লাইভ অবতরণ দেখানোর ব্যবস্থা ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার টুইটার অ্যাকাউন্টে সব বিভেদ ভুলে দেশবাসীকে একসঙ্গে চন্দ্রযানের সাফল্য কামনার আবেদন জানান। ভূয়সী প্রশংসা করেন বিজ্ঞানীদের।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেন, রাজ্যের সব সরকারি স্কুলে চন্দ্রযানের চন্দ্রাবতরণ সরাসরি দেখানো হবে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জানান, রাজ্যবাসীকে নিয়ে তিনিও চন্দ্রযানের চন্দ্রে অবতরণকে উদযাপন করবেন।
এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছিল যেন আরও কয়েক গুণ বেশি। আজমীর শরিফের পাশাপাশি লখনউয়ে ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়া আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ নমাজের। সেখানে বহু মানুষ চন্দ্রযানের সাফল্য কামনা করেন।
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে বিশেষ ভস্ম আরতির আয়োজন করা হয়। উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশের পরমার্থ নিকেতন ঘাটে জাতীয় পতাকা হাতে গঙ্গা আরতিতে অংশ নেন বহু সাধারণ মানুষ।
আসানসোলে চন্দ্র অভিযানে ভারতের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাফল্য কামনায় মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে মণ্ডপ বেঁধে মন্দিরের সামনে হোমযজ্ঞ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সব মিলিয়ে চাঁদের মাটিতে ভারতের চন্দ্রযানের পা দেয়া ঘিরে উন্মাদনায় টগবগ করে ফুটেছে গোটা ভারত।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) আগে থেকেই ঘোষণা দেয়, ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে ল্যান্ডার।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ‘বিক্রম’। সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনো দেশের কোনো মহাকাশযান নামতে পারেনি। ইসরো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে ল্যান্ডার নামাতে সক্ষম হওয়ায় ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত।
গত ১৪ জুলাই ভারত চাঁদের উদ্দেশে তৃতীয় অভিযান শুরু করে। ওই দিন দুপুরে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে চাঁদের দিকে রওনা দেয় চন্দ্রযান ৩। একটি এলভিএম ৩ রকেট দিয়ে চাঁদের উদ্দেশে চন্দ্রযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
চন্দ্রাভিযানে রয়েছে একটি ল্যাণ্ডার ও একটি রোভার। ল্যাণ্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে আর রোভার চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকবে। ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম সারাভাইয়ের নামে ল্যাণ্ডারটির নাম রাখা হয়েছে ‘বিক্রম’ আর রোভারটির নাম ‘প্রজ্ঞান’।
এই অভিযানে সফল হওয়ায় চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণকারী চতুর্থ দেশ হলো ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন চাঁদে নামতে সফল হয়েছিল।
আগের অভিযানে ২০১৯ সালে ঠিক চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সময় ল্যাণ্ডার-রোভারটি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে চন্দ্রযান-২-এর সেই অরবিটার এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বেস-স্টেশনে নিয়মিত তথ্য পাঠিয়ে চলেছে।
চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল নিয়ে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে চন্দ্রযান-৩ ওই অঞ্চলে অবতরণের ফলে চাঁদের বিজ্ঞানীদের সেই ধাঁধাঁ ঘুচবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চন্দ্র পৃষ্ঠের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে চাঁদের বয়স আবিষ্কারেরও চেষ্টা হবে বলে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
দিল্লির শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্সের শিক্ষক ড. আকাশ সিনহা বলছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সম্ভাবনাও এই অঞ্চলেই বেশি।
চন্দ্রপৃষ্ঠের ওই দক্ষিণ মেরু অংশেই ২০০৮ সালে জলের সন্ধান পেয়েছিল চন্দ্রযান-১।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য