সফট ড্রিংকস গলায় ঢেলে বোতলটি ছুড়ে ফেলছেন যত্রতত্র। আজকাল বোতলজাত পানির চাহিদাও দেদার। এসব বোতলের পানি খেয়েও আমরা বোতল ফেলে দিই যেখানে-সেখানে। এসব প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট (পিইটি বা পেট) বোতল পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিকা রাখছে। জলাধার করে তুলছে প্রাণের অনুপযুক্ত।
পৃথিবীর জন্য মহা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে এই পেট বোতল। এগুলো যুগের পর যুগ ধরেও পচে না, ফলে তৈরি হয়েছে অক্ষয় জঞ্জালের বিভীষিকা।
এবার কোনো এক বিশেষ যানে চেপে চলুন পৃথিবী থেকে ২৮৮ কোটি কিলোমিটার দূরের গ্রহ ইউরেনাসে। হাতে সময় থাকলে সফট ড্রিংকস গলায় ঢালতে ঢালতে আরও খানিকটা এগিয়ে পৃথিবী থেকে প্রায় ৪৩২ কোটি কিলোমিটার দূরের গ্রহ নেপচুনেও ঢুঁ মারতে পারেন। এতক্ষণে পেট বোতলের ড্রিংকস শেষ হয়ে এলে সেটি ছুড়ে ফেলুন ইউরেনাস বা নেপচুনের বুকে।
কী ঘটবে সেখানে?
বিশেষ কোনো ব্যবস্থায় ওখানে কিছুদিন কাটাতে পারলে নিশ্চিতভাবে আপনার চোখ কপালে উঠবে। কারণ নিদারুণ অবহেলায় যে বোতলটি ছুড়ে ফেলেছিলেন, সেটি ততদিনে হীরা হয়ে উঠেছে!!
এটি কোনো গালগল্প নয়, একেবারে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য। ওই দুটি গ্রহের মতোই পরিবেশ কৃত্রিমভাবে পৃথিবীতে তৈরি করে প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেটকে হীরায় পরিণত হতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞানীদের জানা ছিল, সৌরজগতের দুটি গ্রহ নেপচুন ও ইউরেনাসে রয়েছে হীরকখণ্ডের ছড়াছড়ি। এমনকি নিয়মিত সেখানে হীরার বৃষ্টিও হয়।
আমরা জানি, পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচণ্ড চাপ ও তাপে হাইড্রোকার্বন হীরায় পরিণত হয়। তবে ইউরেনাস ও নেপচুনে হীরা গঠনের প্রক্রিয়া একেবারেই আলাদা।
জার্মানি ও আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী ২০১৭ সালে ল্যাবরেটরিতে ওই গ্রহ দুটির মতো কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে পলিস্টিরিন (স্টাইরোফোম) থেকে ছোট হীরার খণ্ড তৈরি করতে সক্ষম হন। একে তারা নাম দিয়েছেন ন্যানো-ডায়মন্ড।
পাঁচ বছর পর তারা আবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এবার ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের অতি পরিচিত প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট (পিইটি বা পেট)। মিনারেল ওয়াটার বা সফট ড্রিংকসের বোতল তৈরিতে পেট প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহার রয়েছে।
গবেষণার ফল শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক পিয়ার রিভিউ জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্সেসে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণাটি শুধু মহাকাশ নিয়ে আমাদের জ্ঞানভান্ডারকেই সমৃদ্ধ করবে না, একই সঙ্গে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে ন্যানো-ডায়মন্ড তৈরিতেও সহায়ক হবে।
গবেষক দলের প্রধান ও জার্মানির হেলমহোল্ট-জেনট্রুম ড্রেসডেন রোজেনডর্ফ গবেষণাগারের বিজ্ঞানী ডমিনিক ক্রাউস জানান, শুরুতে তিনি ও তার সহ-গবেষকরা পলিস্টিরিন (স্টাইরোফোম) থেকে ন্যানো-ডায়মন্ডস তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ এতে নেপচুন ও ইউরেনাসের পরিবেশের মতো সমানুপাতিক কার্বন ও হাইড্রোজেন বিদ্যমান।
তারা পলিস্টিরিনকে লাইন্যাক কোহেরেন্ট লাইট সোর্স নামের এক ধরনের উচ্চশক্তির এক্স-রে লেজার দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। ক্যালিফোর্নিয়ার এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সেলেটরি ল্যাবরেটরিতে এ পরীক্ষা চালানো হয়। পলিস্টিরিনকে লেজার দিয়ে আঘাত করার ফলে এর তাপমাত্রা বেড়ে ৫ হাজার কেলভিনে (৮ হাজার ৫৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে) পৌঁছায়। একই সঙ্গে একে ১৫০ গিগাপ্যাসক্যাল চাপে সংকুচিত করে ফেলা হয়। এ তাপ ও চাপ ইউরেনাস ও নেপচুনের ছয় হাজার মাইল অভ্যন্তরের চাপ ও তাপের সমান।
দ্রুত দুইবার লেজার দিয়ে আঘাতের ফলে আণুবীক্ষণিক হীরা তৈরি করতে পারলেও বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ একটি রাসায়নিক উপাদান এতে নেই। আর সেই উপাদানটি হলো অক্সিজেন। এ কারণেই এবারের গবেষণায় পেট প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।
পেট-এ হাইড্রোজেন ও কার্বনের পাশাপাশি অক্সিজেনের মিশ্রণও রয়েছে, যা ওই গ্রহ দুটির অভ্যন্তরের পরিবেশের আরও কাছাকাছি।
ক্রাউস বলেন, “ওই পরিবেশের রাসায়নিক অবস্থা খুবই জটিল ও প্রতিরূপ তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন। বিজ্ঞানীরা জানেন, এমন পরিস্থিতি তৈরির সময় যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। আমরা কিছু ক্ষেত্রে দেখছিলাম, অক্সিজেনের উপস্থিতি হাইড্রোজেন থেকে কার্বনকে আলাদা করতে ও হীরা তৈরিতে সাহায্য করে। তবে গবেষণায় উল্টো কিছুও ঘটতে পারত।’
তত্ত্বকে প্রমাণের জন্য ক্রাউস ও তার দল এক টুকরো পেট প্লাস্টিককে আগের মতোই অত্যধিক চাপ ও তাপের মধ্যে রাখেন। তবে এবার তারা যোগ করেছিলেন এক্স-রের ছোট কৌণিক বিচ্ছুরণ।
ক্রাউস বলেন, ‘আমরা দেখতে পেলাম, অক্সিজেনের উপস্থিতি হীরা তৈরিতে সাহায্য করছে, বাধা দিচ্ছে না। এটি থেকে বোঝা যায় ইউরেনাস ও নেপচুনে হীরার বৃষ্টি হওয়া সম্ভব। আমরা এও দেখেছি, উচ্চচাপ ও সময়ের সঙ্গে হীরার আকৃতি বড় হচ্ছে।’
তবে গবেষণাটির মূল বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য ছিল সৌরজগতের বরফময় দুই গ্রহ নেপচুন ও ইউরেনাসের চরম আবহাওয়ায় কী করে হীরার বৃষ্টি হয় সেটা জানা। ক্রাউস ও তার দলের ধারণা, এতদিন তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব বলে ধরে নেয়া বিশেষ ধরনের এক পানি তারা তৈরি করতে পেরেছেন।
বিশেষ এ পানির নাম সুপার-আয়নিক ওয়াটার। ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুপার-আয়নিক ওয়াটার তরল ও কঠিনের মাঝামাঝি অদ্ভু ত এক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ ধরনের পানি দিয়েই নেপচুন, ইউরেনাসের মতো বরফময় গ্রহের ভূত্বকের আবরণ তৈরি হয়েছে।
পৃথিবীতে এর কোনো ব্যবহার না থাকলেও মহাকাশের অনেক বস্তুর অদ্ভু ত চৌম্বক ক্ষেত্র কেন থাকে সেটির ব্যাখ্যা এ থেকে পাওয়া যায়।
ক্রাউসের মতে, বিশালাকৃতির বরফময় গ্রহে ন্যানো ডায়মন্ড খুঁজে পাওয়ার অর্থ- ওই গ্রহের পরিবেশে সুপার-আয়নিক ওয়াটারের মাত্রা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষায় হীরার সঙ্গে যে সুপার-আয়নিক ওয়াটার তৈরি হয়েছে তার প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ পাইনি। তবে আমরা দেখেছি, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন থেকে কার্বন আলাদা হচ্ছে এবং গ্রহের ভেতর বিশুদ্ধ পানি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ওই গ্রহগুলোতে হীরার বৃষ্টির পাশাপাশি সুপার-আয়নিক ওয়াটার তৈরির সম্ভাবনাও থাকছে।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কুখ্যাত খুনিদের একজনের চামড়ায় বাঁধানো একটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে একটি জাদুঘরের কার্যালয়ে। ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে সাফোকের পোলস্টিডে রেড বার্ন গুদামঘরে প্রেমিকা মারিয়া মার্টেনকে খুন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন উইলিয়াম কর্ডার নামের এক ব্যক্তি। তার চামড়া দিয়েই বইটি বাঁধানো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাফোকের ময়সেস হল মিউজিয়ামে এই বই একইরকম অন্য আরেকটি বইয়ের সঙ্গে প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হেরিটেজ কর্মকতা ড্যান ক্লার্ক বলেছেন, এই বইগুলোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাছাড়া, মানুষের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রেখে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।
‘হরিবল হিস্টোরিজ’ রচনা সমগ্রের লেখক টেরি ডেয়ারি অবশ্য এই প্রত্নবস্তুগুলো বীভৎস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এমন দুটো বই-ই তিনি পুড়িয়ে ফেলতে চান।
সাফোকের পোলস্টিডে ১৮২৭ সালের ওই খুনের ঘটনা জর্জিয়ান ব্রিটেনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। তখন থেকেই ঘটনাটি বহু সিনেমা, বই, নাটক এবং লোকগীতির বিষয়বস্তু হয়ে আছে।
সবচেয়ে বেশি চাউর হয়েছে কর্ডারের সঙ্গে মার্টেনের প্রেমকাহিনীর সংস্করণ। এই কাহিনীতে বলা আছে, কর্ডার রেড বার্ন -এ দেখা করার জন্য আসতে বলেছিলেন প্রেমিকা মার্টেনকে।
সেখান থেকে পালিয়ে একটি শহরে গিয়ে তারা বিয়ে করবেন বলেও জানিয়েছিলেন কর্ডার। কিন্তু সেই রেড বার্নেই মার্টনকে গুলি করে খুন করেন কর্ডার এবং খড়ের গাদায় পুঁতে দেন লাশ।
১৮২৮ সালের ১১ আগস্ট কর্ডার ধরা পড়েন এবং প্রকাশ্যেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃতদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা হয় বই। সেই বইয়ে লিপিবদ্ধ ছিল কর্ডারের বিচারের কাহিনি।
১৯৩৩ সালে বইটি জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়করা ক্যাটালগ দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন সেখানে আরেকটি বই রয়েছে যেটি এত দিন চোখে পড়েনি।
সেই বইটি জাদুঘরে দান করেছিল একটি পরিবার, যাদের সঙ্গে কর্ডারের দেহ কাটাছেঁড়া করার সার্জনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। বইটি জাদুঘরের গুদামে ছিল না, বরং ছিল কার্যালয়ের বইয়ের শেলফে অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে।
কিন্তু বইটি বাঁধাই করা ছিল অনেক বেশি সনাতনী উপাদান দিয়ে। হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলেন, জাদুঘরে হারানো বই আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেটি দশকের পর দশক ধরে দেখা হয়নি।
কর্ডারের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইয়েরর সঙ্গে দ্বিতীয়টির কিছুটা পার্থক্য আছে। প্রথম বইয়ের চামড়ার মলাট অনেকটাই পূর্ণাঙ্গ। আর দ্বিতীয় বইয়ের কেবল বাঁধাইয়ের জায়গা এবং কোনাগুলোতে চামড়া লাগানো আছে।
মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাই করা ‘এনথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’ নামে পরিচিত। ‘হরিবল হিস্টোরিজ’-এর লেখক টেরি ডেয়ারির মতে, একজন মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার চেয়েও জঘন্য কাজ হচ্ছে মৃত্যুর পর তার দেহ ছিন্নভিন্ন করা। চামড়া দিয়ে বই বাধাঁনো আরও বাড়াবাড়ি।
তবে হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলছেন, ‘দেশজুড়ে প্রতিটি জাদুঘরেই আমরা মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পাই।’
সূত্র: বিডিনিউজ
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালের সন্ধান পেয়েছেন একদল গবেষক। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে তিনশ’ বছরেরও বেশি পুরনো প্রবালটি খুঁজে পান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। দৈর্ঘ্যে ১১১ ফুট ও প্রস্থে ১০৪ ফুট প্রবালটির আকার একটি পূর্ণবয়স্ক নীল তিমির চেয়েও বড়।
ধারণা করা হচ্ছে, এক বিলিয়নের বেশি ক্ষুদ্র প্রাণী ও জলজ অণুজীবের উপস্থিতি রয়েছে প্রবালটিতে। এর মাধ্যমে জলজ প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই বিশাল প্রবাল। সদ্য আবিষ্কৃত এই জলজ বিস্ময়টি এখন পর্যন্ত জানা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক প্রবাল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোরাল বা প্রবাল এক ধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বছরের পর বছর ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে, পুঞ্জিভূত হয়ে গঠিত হয় বিশাল প্রবাল প্রাচীর। সঙ্গে যুক্ত হয় শৈবাল, মৃত জলজ প্রাণীর দেহাবশেষ ও পলিপ। সব মিলিয়ে জীবন্ত প্রাণীর তৈরি এক আশ্চর্য স্থাপনা এই প্রবাল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র্য। আজারবাইজানের বাকুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এর মধ্যেই, সমুদ্র তলদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করতে বৈজ্ঞানিক অভিযান চালায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
অনেকটা দৈবক্রমেই প্রবালটি আবিষ্কার করেন ন্যাট জিও’র ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে স্বচ্ছ পানিতে ছেলেকে নিয়ে ডুব দেন তিনি। প্রথমে এটিকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মনে করে এগিয়ে গেলেও পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বুঝতে পারেন জীবন্ত প্রাণীদের তৈরি অসামান্য সৌন্দর্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন তিনি।
গবেষকদের ধারণা, বিশ্বের বৃহত্তম জলজ প্রাণী নীল তিমির চেয়েও আকারে অনেকটা বড় এই প্রবাল।
এতোদিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়াতে থাকা ‘বিগ মামা’ প্রবালটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিল। তবে নতুন সন্ধান পাওয়া প্রবালটি ‘বিগ মামা’র চেয়েও প্রায় তিন গুণ বড়। ৩৪ মিটার দীর্ঘ প্রবালটি এতটাই বিশাল যে ধারণা করা হচ্ছে, মহাকাশ থেকেও দেখা যাবে এটি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে একজনের দান করা দুটি ড্রাগন ফল ৪৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রির হয়েছে।
উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে লিপু সুলতানা চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি দুটি ড্রাগন ফল মাদ্রাসায় দান করেন। মধ্যরাতে মাহফিলের শেষ বক্তা শায়খুল হাদিস মুফতি মুশাহিদ আলী ক্বাসেমী ড্রাগন ফল দুটি প্রকাশ্যে নিলামে তোলেন। নিলামের একপর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে ফল দুটি কিনে নেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আলহাজ আলমগীর চৌধুরী।
ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে অংশ নেয়া শ্রোতারা জানান, মাহফিল শেষে দোয়ার আগে ড্রাগন ফল দুটি নিলামে তোলা হয়। দুই হাজার টাকা থেকে নিলাম শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা।
পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল হাফিজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাদ্রাসার ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী টিপু সুলতান চৌধুরী দুটি ড্রাগন ফল দান করেন। পরে এই দুটি ফল নিলামে তোলা হলে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
‘মূলত এই ফল এত দামে বিক্রি হওয়ার কারণ হলো মাদ্রাসায় সহযোগিতা করা। যিনি ফল কিনেছেন, তিনি হলেন আমাদের মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।’
আরও পড়ুন:কুয়াকাটা সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসার পর এবার পটুয়াখালীর একটি জলাশয় পাওয়া গেল জীবিত ডলফিন।
কলাপাড়া উপজেলার জালালপুর গ্রামে আন্ধারমানিক নদী-সংলগ্ন জলাশয়ে বোটলনোজ প্রজাতির একটি জীবিত ডলফিনটি পাওয়া যায়। এটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ দেড় ফুট।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন আন্ধারমারিক নদীর মোহনায় অবমুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কলাপাড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা।
এসময় ডলফিনটিকে এক নজর দেখতে জলাশয়ের দুপাড়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা জানান, শেষ বিকেলে আন্ধারমানিক নদী থেকে ডলফিনটি ভাসতে ভাসতে ওই জলাশয়ে প্রবেশ করে। পরে খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক এবং ওয়ার্ল্ড ফিশ ইকোফিশ-২ এর সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতির পরামর্শ অনুযায়ী ডলফিনটিকে উদ্ধার করে নিবিড় পর্যক্ষণে রেখে খাবার দিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন অ্যানিম্যাল লাভার্স অফ পটুয়াখালীর সদস্য ও মো. সুজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে অবমুক্ত করেন।
আল মুনজির বলেন, ‘জেলেদের জালে আটকে ডলফিনটি আহত হয়। আমাদের ধারণা, পরে পথভ্রষ্ট হয়ে এটি আন্ধারমানিক নদী হয়ে জলাশয়ে ঢুকে পড়ে।’
এর আগে কখনও দক্ষিণাঞ্চলে জীবিত ডলফিন ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে পুকুরের তলদেশের মাটি খননকালে কষ্টিপাথরের বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের বাড়ির পুকুরের মাটি খননকালে ওই মূর্তিটি উদ্ধার করা হয়।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসলাম হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউএনও জানান, সকালে উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের একটি পুকুরের মাটি খনন করছিলেন শ্রমিকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোবারক শেখ ও মিতুল হোসেন নামের দুই শ্রমিক মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে মূর্তিটি দেখতে পান। পরে তারা বেতকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান শিকদার রিগ্যানকে বিষয়টি জানান। এরপর ওই জনপ্রতিনিধি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইউএনওকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে মূর্তিটি উদ্ধার করেন।
মূর্তিটি উচ্চতায় ৩৭ ইঞ্চি ও প্রস্তে ১৭ ইঞ্চি। এটি রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে পাঠানো হবে বলে জানান ইউএনও আসলাম হোসাইন।
আম গাছে মুকুল আসে, সেই মুকুল থেকেই হয় আম। তবে ফরিদপুরের একটি আম বাগানে দেখা মিলেছে ভিন্ন চিত্র। আম গাছের ডালে নয় বরং গাছের আমের বোঁটার গোড়া থেকে বের হয়েছে অসংখ্য আমের মুকুল। আর সেই মুকুল থেকে এরইমধ্যে ধরেছে আমের গুটি।
এমন বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ফরিদপুরের ধলার মোড়ের কাছে একটি আম বাগানে। আর এ খবর জানতে পেরে তা দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে।
পদ্মার পারে চরের খাঁ খাঁ বিরান জমিতে সবুজের দেখা পাওয়া ভার। চোখ মেললে চারদিকে শুধু ধু ধু বালির চর। এমনই এক পরিবেশে চার বছর আগে স্থানীয় যুবক দুলাল হোসেন রুবেল তার খামার বাড়িতে শখের বসে গড়ে তোলেন ফলজ বাগান। প্রায় শতাধিক আম গাছের সঙ্গে এখানে তিনি আরও বেশ কিছু ফলের চারা রোপন করেন। এরইমধ্যে তার এই আমবাগানের গাছগুলো বড় হয়ে ফলবতী হয়ে উঠেছে। এবার তার আমবাগানে ধরেছে প্রচুর আম। তবে সব আমের ভিড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে আমেরিকান রেড পালমার জাতের একটি আম গাছ। এই গাছের একটি আম বড় হওয়ার পরে সেই আমের বোটার মুখ থেকে নতুন করে বের হয়েছে আবার নতুন মুকুল।
বাগানের মালিক দুলাল হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমের বোঁটার মুখে আবার নতুন করে মুকুল আসতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। আল্লাহ চাইলে সবই পারেন, এটি দেখে তাই প্রমাণ হলো আবার। এটি আমার কাছে আল্লাহর একটি নিদর্শন মনে হয়েছে।’
রুবেল বলেন, ‘চার বছর আগে রেড পালমার জাতের এই আম গাছটি আমি বৃক্ষমেলা থেকে কিনি। পরের বছরই ফল আসে। আর এবার এলো আম থেকে আসা এই অবাক করা আমের মুকুল।’
তিনি বলেন, ‘ধলার মোড়ের এই এলাকায় আগে আশেপাশে কোনো সবুজ ছিল না। এই জায়গটি ছিল ২০ ফুট গভীর। চার বছর লেগেছে আমার এই বাগানটি দাঁড় করাতে। এখন বাগানটি সবুজে ভরে গেছে। আমাদের এই ধলার মোড়ে আমার এই বাগানটি ছাড়া আশপাশে আর কোনো সবুজ চোখে পড়ে না।’
মূলতঃ পরিবেশের কথা বিবেচনা করেই ৬৯ শতাংশ জমির ওপর এই খামার বাড়ি গড়ে তোলেন বলে জানান রুবেল। বলেন, ‘সেখানে আম, কলা, লিচু, চালতা, সফেদাসহ নানা ফলমূলের গাছ লাগিয়েছি। এখানে রেড পালমার ছাড়াও মিয়াজাকি, বানানা ম্যাঙ্গো, দেশীয় হাড়িভাঙা, বারি ফোরসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৯০টি আম গাছ রয়েছে।
‘সামনের অংশে এবার ড্রাগন ফলের চাষ করছি। এছাড়া কবুতর ও খরগোশ পালছি। আগে কিছু গাড়ল ছিল, সেগুলো এখন চরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
রুবেলের স্ত্রী সৈয়দা সানজিদা মিশু বলেন, ‘আমের বোঁটা থেকে এভাবে আবার আমের মুকুল ধরতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। মুকুল থেকে আবার নতুন করে আমের গুটিও এসেছে। এখন দেখার পালা, এই আমের গুটি কত বড় হতে পারে। যদি সেগুলো পরিপূর্ণ আম হয়ে উঠে তাহলে সেটি হবে আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার।’
জহুরুল আলম শোভন নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমি এই আমের ওপর মুকুল ধরার খবর জেনে দেখতে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, আমি একটি বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলাম।’
সৈয়দ মোস্তফা আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বয়স ৭৬ বছর। আমার এই দীর্ঘজীবনে আমি ফলের গায়ে এভাবে মুকুল চোখে দেখিনি বা শুনিনি। গতকাল সন্ধ্যায় আমি খবরটি শুনতে পেয়ে নিজ চোখে দেখার জন্য এসেছি। আমের বোঁটার উপরে মুকুল ধরেছে, আবার সেই মুকুল থেকে ছোট ছোট আমের গুটি বের হচ্ছে। এটি আল্লাহরই একটা নেয়ামত।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দেব নারায়ণ রায় বলেন, ‘উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় এমব্রায়োজেনোসিস (embryogenesis), যাকে বাংলায় বলা হয় বহুভ্রুনিতা। এটি একটি ভ্রূণজনিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভ্রূণের গঠন ও বিকাশ হয়। অনেকসময় অতিরিক্ত ফলনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন প্রয়োগ করা হলে এমনটি ঘটে থাকে।’
কামাল হোসেন এবং লাভলী আকতার দম্পতির বাড়িতে লাউয়ের গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট (গাছের শাখার সংযোগস্থল) থেকে অসংখ্য লাউয়ের ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে এক এক করে ধরেছে ৩৫টি লাউ। এ খবর পেয়ে অনেকেই এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন লাউ দেখতে।
জনপ্রিয় কিছু সবজির মধ্যে অন্যতম হলো লাউ। এ সবজি বেশ সহজলভ্য। পুষ্টিগুণে ভরা লাউ উপাদেয় খাবার। লাউ সাধারণত একটি ডগায় একটি হয়ে থাকে। তাই এক ডাগায় ৩৫টি লাউ ধরা কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক বিষয়।
ব্যতিক্রমী এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের জোতনছর গ্রামে।
ওই দম্পতি জানান, তারা দুই মাস পূর্বে দেশি লাউগাছের বীজ এনে লাগিয়েছিলেন। বীজ থেকে চারটি গাছ বড় হয়ে মাচায় ওঠে। তিনটি গাছ স্বাভাবিক থাকলেও একটি গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট থেকে অসংখ্য ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে ওই ডগায় ৩৫টি লাউ ধরেছে। লাউগুলো আস্তে আস্তে বড়ও হচ্ছে।
প্রতিবেশী বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘এক ডগায় ৩৫টি লাউ গুনে দেখেছি। এর আগে এমন দৃশ্য দেখিনি। গ্রামের উৎসুক অনেকেই লাউগাছটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, এক ডগায় অসংখ্য লাউ ধরা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। বিভিন্ন কারণে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, তবে গাছটি না দেখে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য