যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পেছানো হলো নাসার চন্দ্র অভিযান। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩) স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) উৎক্ষেপণের কথা ছিল।
বিবৃতিতে নাসা জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের আগে রকেটের চারটি ইঞ্জিনের একটিতে সমস্যা দেখা দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে না পারায় উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আগামী ২ বা ৫ সেপ্টেম্বর ফের উৎক্ষেপণের চেষ্টা হতে পারে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে পৌঁছে রকেটটি একটি টেস্ট ক্যাপসুল বিযুক্ত করবে। সে অনুযায়ী, স্পেস লঞ্চ সিসটেমে স্থাপন করা হয় ক্যাপসুল-ওরিয়ন। জ্বালানিসহ অন্যান্য নির্ধারিত কাজও শেষ হয়েছিল। বিপত্তি বাধে উৎক্ষেপণের কিছু আগে।
নাসা জানায়, রকেটের যে অংশ তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত, সেখানেই গণ্ডগোল ধরা পড়ে। এতে উৎক্ষেপণের ৪০ মিনিট আগে বন্ধ করে দেয়া হয় কাউন্টডাউন। জানানো হয়, ত্রুটি দূর না হওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে উৎক্ষেপণ।
১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ দিয়ে শুরু হওয়া পাঁচটি মিশনে মোট ১০ জন নভোচারী চাঁদের বুকে হেঁটেছেন।
আগের চন্দ্রাভিযানের নামকরণ হয়েছিল গ্রিক চন্দ্রদেবতা অ্যাপোলোর নামে। এবারের মিশনের পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষে চাঁদে প্রথম নারীকে পাঠানোর পরিকল্পনা করার হয়েছে৷ এ জন্য অ্যাপোলোরই যমজ বোন আর্টেমিসের নামে নামকরণ করা হয়েছে মিশনের।
মিশন আর্টেমিসের এটি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। তাই এতে কোনো মানুষ থাকছে না। সফল হলে, পরবর্তী উৎক্ষেপণে রকেটের ক্যাপসুলে থাকবেন মহাকাশচারী।
পাঁচ দশক আগে শেষবার মানুষের পা চাঁদে পড়েছিল অ্যাপোলো-১৭ অভিযানে।
এবার আর্টেমিস মিশনের উৎক্ষপণ দৃশ্য দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের কাছে। তবে শেষ মুহূর্তে তা স্থগত হওয়ায় আক্ষেপ নিয়েই ফিরতে হলো তাদের।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিখিল গুপ্তা নামের ওই ব্যক্তিকে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সূত্র: বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর এ নিয়ে যে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে তাতে লেখা হয়েছে- গ্রেপ্তার হওয়া ওই ভারতীয় নাগরিক হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিক অভিযোগপত্র প্রকাশ করার পরই ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা ধরা পড়েন চেক প্রজাতন্ত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে ৫২ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখনও ওই দেশেই আটক রয়েছেন।
নিখিল গুপ্তা নগদ এক লাখ ডলার দিয়ে ভাড়াটে খুনিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য নিয়োগ করতে যাচ্ছিলেন। তবে সেই ভাড়াটে খুনি আসলে ছিলেন একজন ছদ্মবেশী ফেডারেল এজেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর অবশ্য এটা উল্লেখ করেনি যে কাকে হত্যার পরিকল্পনার জন্য ওই ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
তবে কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস খবর দেয় যে ভারতে ঘোষিত সন্ত্রাসী গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আরও এক দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ পৌঁছেছে সপ্তম দিনে।
আগের দু দফার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ছিল ছয় দিন, সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার। এরপর বৃহস্পতিবার আরও একদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস বলেছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সপ্তম দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সম্মত হয়েছে।
এর আগে অবশ্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো কথা জানালেও, ঠিক কতদিন তা বাড়বে তা জানায়নি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একজন সিনিয়র উপদেষ্টা বলেছেন, যারা ছয় দিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে চান তাদের অবশ্যই হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
মার্ক রেগেভ বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক যতদিন পর্যন্ত হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে থাকবে। হামাসের ওপর চাপ দিতে হবে। যদি তারা জিম্মিদের মুক্তি দিতে থাকে, তাহলে বিরতি চলতে পারে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, সর্বশেষ ইসরায়েল আরও ৩০ ফিলিস্তিনি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। আর হামাস ছেড়ে দিয়েছে আরও ১০ জনকে।
দেড় মাসের বেশি সময় গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গত শুক্রবার থেকে সোমবার নাগাদ চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে যায় দুই পক্ষ।
সেই যুদ্ধবিরতি আরও দুই দিন বাড়িয়ে বুধবার পর্যন্ত করতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। সেটিকে স্থায়ী রূপ দিতে চাপ দিচ্ছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল।
ইসরায়েলে ঢুকে হামাস গত ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় টানা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামলা শুরুর পর ৯ অক্টোবর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
টানা হামলার শিকার গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কদিন আগে মিশরের রাফা ক্রসিং দিয়ে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে ওই উপত্যকতায়।
এতদিন গাজায় জ্বালানি প্রবেশে ইসরায়েলের অনুমতি ছিল না। বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে সম্প্রতি শুধু হাসপাতাল ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জন্য জ্বালানির অনুমতি দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ঢুকেছে কয়েকটি জ্বালানিবাহী ট্রাক।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আটকা শ্রমিকদের উদ্ধারে যন্ত্রের সব প্রয়োগ কৌশলই যখন প্রায় ব্যর্থ, তখন আশার আলো দেখাতে শুরু করে ১২ জনের একটি দলের ‘সাদামাটা’ চেষ্টা। শাবল-গাঁইতি ব্যবহার করে খননকাজ শুরু করে ইঁদুরের মতো গর্ত করে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে উদ্ধার করেন তারা।
১৭ দিন পর মঙ্গলবার রাতে কীভাবে একে একে আটকে পড়া ওই শ্রমিকদের বের করে আনা হয় এবং তাদের প্রাণ বাঁচানোর কৌশলের সেই বর্ণনা আনন্দবাজার পত্রিকাকে দিয়েছেন উদ্ধারকারী দলটির প্রধান ওয়াকিল হাসান।
টানা কদিন ধরে নানা উপায়ে কাজ করতে করতে এক পর্যায়ে ধসে পড়া সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ড্রিলিং করার সময় অগার মেশিনের ব্লেডগুলো ধ্বংসস্তূপে আটকে যায়। এর পর কর্মীরা শাবল-গাঁইতি ব্যবহার করে খননকাজ শুরু করেন। ড্রিলিং মেশিনের যে টুকরোগুলো সুড়ঙ্গে আটকে ছিল তা সরানো হয়।
যে পদ্ধতিতে কাজ করেছেন ওয়াকিলেরা, তাকে বলে ‘ব়্যাট হোল মাইনিং’। অর্থাৎ, ইঁদুরের মতো গর্ত করে এগিয়ে যাওয়া। ওয়াকিলের নেতৃত্বে ১২ জনের দলটি ওই কাজটি করে।
‘ব়্যাট হোল মাইনিং’ পদ্ধতি খনি থেকে কাঁচামাল উত্তোলনের জন্য প্রয়োগ করা হয়। বিশেষত কয়লা খনিতে এই প্রক্রিয়া খুবই প্রচলিত। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ শ্রমিকেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খনিতে নামেন। তারা অল্প জায়গা নিয়ে সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চলেন। ঠিক যেমন করে গর্ত খোঁড়ে ইঁদুর। প্রয়োজনীয় কয়লা তুলে আবার ওই একই পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসেন তারা।
আমেরিকার যন্ত্র বিকল হওয়ার পরে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের বার করতে মনুষ্য-নির্ভর এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয়েছিল। কিন্তু এ কাজে তেমন পারিশ্রমিক নেই।
ওয়াকিল অবশ্য বলেছেন, ‘সব কাজ পয়সার জন্য হয় না। এই কাজ মানুষের জন্য। এখানে যেমন মানুষের জীবন জড়িয়ে ছিল, তেমনই জড়িয়ে ছিল দেশবাসীর আশা। সেই আশা পূরণ করা সহজ ছিল না।
‘কিন্তু আমরাও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করব। পেরেছি। সকলের আশা পূরণ করতে পেরে গর্ব হচ্ছে। দেশকে, দেশবাসীকে রক্ষা করতে সীমান্তে সেনা লড়াই করে। আজ আমাদের মধ্যে সেই অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমরাও দেশের জন্য কিছু করলাম।’
টানা প্রায় ২৮ ঘণ্টা কাজ করেছেন ওয়াকিলেরা। কিন্তু গোটাটাই পরিকল্পনা করে। ওয়াকিল বলছিলেন, ‘১২ জনের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সময় অনুযায়ী পাঠানো হয়েছে কাজে। কাজের গতি যাতে না কমে, সেই মতো পরিকল্পনা করে এগিয়েছি। যাতে কাজ চলতে থাকে। আমাদের ক্লান্তির জন্য যাতে কাজের গতি কমে না যায়, সে কথা ভেবেই এটা করেছিলাম।’
কখনও মনে হয়নি যুদ্ধটা হেরে যেতে পারেন? ফোনের ওপারে ওয়াকিলের কণ্ঠস্বর বেশ দৃঢ় শোনাল। বললেন, ‘কখনো ভাবিনি যে, এই কাজটা করতে পারব না। বা এই কাজে আমরা ব্যর্থ হব। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, এই কাজটা যে কোনও ভাবে করতে হবে। জিততে হবে। টিমের সবাইকে বলেছিলাম, এই কাজ করতে না পারার কোনও কারণ নেই। এক বারও ভাবিনি যে, করতে পারব না। কেউ আট ঘণ্টা কাজ করেছে টানা। কেউ বা ১০ ঘণ্টা। আমাদের আগের ওই সব অভিজ্ঞতা যে এভাবে ৪১ জনের প্রাণ বাঁচাবে, আগে ভাবিনি।’
ওয়াকিলের দলের ১২ জন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এগিয়েছিল সুড়ঙ্গের ভেতরে। সেখানে পৌঁছে একজন দেয়াল খুঁড়তে থাকেন। অন্যজন সেই ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করেন এবং তৃতীয় জন তা চাকা লাগানো গাড়িতে তুলে দেন। সেই গাড়ি ধ্বংসস্তূপ সুড়ঙ্গের বাইরে নিয়ে যায়। শেয পর্যন্ত এই পদ্ধতিতেই এসেছে সাফল্য।
গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরাখণ্ডে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। ভেতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এত দিন ধরে তাদের বের করার জন্য নান ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই।
খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার বাধা আসে। ধ্বংসস্তূপের ভেতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকায় তৈরি খননযন্ত্র। উদ্ধারকাজ থমকে যায়। উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত সুড়ঙ্গের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষে সবসময় যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। পাইপের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা চলছিল। পৌঁছে দেয়া হচ্ছিল খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
দেশ-বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল উন্নতমানের যন্ত্র। এসেছিলেন তাবড় তাবড় প্রযুক্তিবিদেরা। এই যন্ত্রের যুগেও শেষ পর্যন্ত তবু হাতই হল ভরসা। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে ইঁদুরের মতো খননকাজ চালিয়ে এল সাফল্য। ১৭ দিন পর উদ্ধার করে আনা হয় ৪১ জন শ্রমিককে।
মঙ্গলবার দুপুরে ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যান উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা। যে পাইপের মাধ্যমে বেরিয়ে আসেন শ্রমিকেরা, তা উপযুক্ত জায়গায় রাখা হয়েছিল। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা শ্রমিকদের বোঝান, কীভাবে ওই পাইপ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে তাদের।
এই পাইপটি আড়াই ফুট চওড়া। পাইপের যে সব জায়গায় ঝালাই হয়েছে, সেগুলো বেশ ধারাল। সেখান দিয়ে বেরোনোর সময় আঘাত লাগতে পারে শ্রমিকদের। এ সব ঝুঁকির কথাই বুঝিয়ে দেয়া হয় শ্রমিকদের। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, সুড়ঙ্গ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে বেরোবেন শ্রমিকেরা। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ দিন সুড়ঙ্গে আটক থাকার কারণে তারা শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন না। সে কারণে চাকা লাগানো ট্রলির মাধ্যমে পাইপ দিয়ে তাদের বের করে আনা হয়।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তরাখণ্ডে টানেলে ধসের ১৭ দিন পর অবশেষে মুক্তি। একে একে বের হরে আনা হলো ৪১ শ্রমিকের সবাইকে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে প্রথম শ্রমিককে বের করে বন্দিদশা থেকে মুক্ত বাতাসে নিয়ে আসা হয়। আর সর্বশেষ জনকে বের করে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টানা হয় রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে।
শুরুতে উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তারা জানান, একেজনকে বের করতে মোটামুটি পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মতো লাগছে। সবাইকে টানেল থেকে বের করতে সব মিলিয়ে তিন ঘণ্টার মতো লেগে যাবে। তবে এক ঘণ্টার মধ্যেই তারা কাজ সমাপ্ত করতে সমর্থ হন।
ঘটনাস্থলে আটকে পড়াদের স্বজনসহ উপস্থিত ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বের করে আনতে ৬০ মিটার লম্বা একটি পাইপ স্থাপন করা হয়। এই পাইপের মধ্যে দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি চাকাচালিত স্ট্রেচারে করে শ্রমিকদের বাইরে নিয়ে আসা হয়।
শ্রমিকদের উদ্ধারে প্রথমে ওই পাইপ দিয়ে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কয়েকজন উদ্ধারকারী টানেলের ভেতরে পৌঁছান। বিশেষ ওই স্ট্রেচারে করে কীভাবে বের হতে হবে- সে ব্যাপারে আটকে পড়া শ্রমিকদের নির্দেশনা দেন তারা। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করেন তারা। পরে শ্রমিকদের একেক করে স্ট্রেচারে শুইয়ে দেওয়া হয় আর বাইরে থেকে স্ট্রেচার টেনে টেনে তাদের বের করে আনা হয়।
গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। এ ঘটনায় ভেতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এতদিন ধরে তাদের বের করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে তাদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই।
খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার নতুন বাধা আসে। ধ্বংসস্তূপের ভেতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকান খননযন্ত্র। ফলে উদ্ধারকাজ থমকে যায়।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুসারে, উদ্ধার করার আগপর্যন্ত সুড়ঙ্গের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। পাইপের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা চলছিল; পৌঁছে দেয়া হচ্ছিল খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
সুড়ঙ্গে থাকাকালে উত্তরকাশীর শ্রমিকদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ্যে আসে গত মঙ্গলবার। পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরা পাঠান উদ্ধারকারীরা। সেখানেই দেখা যায় সুড়ঙ্গের ভিতর কীভাবে, কোন অবস্থায় রয়েছেন তারা।
খননযন্ত্র ভেঙে যাওয়ায় দুইভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ নতুন করে শুরু হয়। খননযন্ত্রের সব টুকরোগুলো সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনার পর খনি শ্রমিকরা সেখানে ঢুকে যন্ত্র ছাড়াই খোঁড়া শুরু করেন। ১০-১২ মিটার পথ সেভাবেই খুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিল। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘ইঁদুর-গর্ত’(র্যাট হোল) প্রক্রিয়া। ইঁদুরের কায়দায় গর্ত খুঁড়ে সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের বের করার পরিকল্পনা করা হয়।
এ ছাড়া সুড়ঙ্গের উপর দিক থেকে উল্লম্বভাবে খোঁড়ার কাজও শুরু হয়েছিল। ৮৬ মিটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল ৪২ মিটার।
পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স, ওষুধপত্র আগে থেকেই শ্রমিকদের জন্য ঘটনাস্থলে মজুত রয়েছে; প্রস্তুত রয়েছে অস্থায়ী হাসপাতালও।
দরকার হলে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাদের ঋষিকেশ এমসে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। ৪১ জনের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি প্লাটিনাম খনির লিফটে আটকা পড়ে ১১ জন খনি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ৭৫ জন।
লিফটটি বিকল হয়ে পড়ায় ৮৬ শ্রমিক সেখানে আটকা পড়েন।
মঙ্গলবার খনির অপারেটর এ তথ্য জানান।
ইম্পালা প্লাটিনাম খনির মুখপাত্র এএফপিকে জানান, লিফটটি উপরের দিকে কিছুটা ওঠার পর অপ্রত্যাশিতভাবে নিচের দিকে নামতে থাকে। এতে লিফটে আটকা পড়ে ১১ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন ৭৫ জন শ্রমিক। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাপুয়া নিউ গিনিতে আঘাত হেনেছে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার এক শক্তিশালী এক ভূমিকম্প।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে দেশটির উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানা এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১২ কিলোমিটার গভীরে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
ভূমিকম্পটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রের পূর্ব সেপিক প্রদেশের রাজধানী ওয়েওয়াক শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানে। এটি হচ্ছে সমুদ্র উপকূলবার্তী একটি শহর।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র পৃথক এক বুলেটিনে বলেছে, এতে সুনামির কোনো হুমকি নেই।
পাপুয়া নিউ গিনির অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ারে’ হওয়ায় দেশটিতে প্রায় ভূমিকম্প আঘাত হেনে থাকে। ফলে সেখানের জনসাধারণের কাছে ভূমিকম্প একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:
ফিলিস্তিনের গাজার শাসক দল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ দুদিন বাড়ার প্রেক্ষাপটে আরও ৩৩ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে হামাসের হাতে জিম্মি ১১ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আগের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয় সোমবার, এর পর নতুন করে মঙ্গল ও বুধবারের জন্য যুদ্ধে বিরতি দিতে সম্মত হয় দু পক্ষ। এরই অংশ হিসেবে ওই জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি দেয়া হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েল থেকে মোট ৩০টি শিশু ও দুজন নারীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর হামাস ছেড়ে দিয়েছে ১১ জনকে।
এর আগে সোমবার গাজার শাসক দল হামাস বিবৃতিতে জানায়, কাতার ও মিসরের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সাময়িক যুদ্ধবিরতি দুই দিন বাড়ানো হয়েছে।
আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি দুই দিন বাড়ানোর চুক্তির মধ্যে রয়েছে হামাসের কাছে থাকা ইসরায়েলের ২০ বন্দি এবং ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৬০ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিষয়টি।
ইসরায়েলে ঢুকে হামাস গত ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় টানা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামলা শুরুর পর ৯ অক্টোবর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
টানা হামলার শিকার গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কদিন আগে মিশরের রাফা ক্রসিং দিয়ে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে ওই উপত্যকতায়।
এতদিন গাজায় জ্বালানি প্রবেশে ইসরায়েলের অনুমতি ছিল না। বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে সম্প্রতি শুধু হাসপাতাল ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জন্য জ্বালানির অনুমতি দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ঢুকেছে কয়েকটি জ্বালানিবাহী ট্রাক।
হামলায় গাজায় প্রাণ যায় কমপক্ষে ১৪ হাজার ৮৫৪ ফিলিস্তিনির। অন্যদিকে হামাসের হামলায় প্রাণ যায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলির। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাসহ নানা তৎপরতায় গত শুক্রবার চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয় গাজায়। পরে দুদিন বেড়েছে এই চুক্তির মেয়াদ।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য