× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
How far is the solution to the mystery of the origin of life on earth?
google_news print-icon

পৃথিবীতে প্রাণ রহস্যের সমাধান আর কতদূর?

পৃথিবীতে-প্রাণ-রহস্যের-সমাধান-আর-কতদূর?
বর্তমানে যেসব বিজ্ঞানী প্রাণের উৎপত্তির রহস্য সমাধানে গবেষণা করছেন, তারা অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী যে তারা সঠিক পথেই রয়েছেন। বাস্তব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই তাদের এই আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে।

বিবিসি আর্থ-এ প্রকাশিত মাইকেল মার্শাল এর লেখা দ্য সিক্রেট অফ হাউ লাইফ অন আর্থ বিগ্যান অবলম্বনে এই লেখা। থাকছে কয়েক পর্বে।

পৃথিবীর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে এখন প্রাণের উল্লাস। তবে সৃষ্টির গোড়াতে ছিল পৃথিবী ছিল নিষ্প্রাণ। তাহলে কীভাবে এই গ্রহে প্রাণের যাত্রা শুরু হলো? এর চেয়ে বড় কোনো প্রশ্ন আর হতে পারে না।

গত প্রায় একশ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল তা খুঁজতে গিয়ে নিরন্তর গবেষণা করেছেন এবং সেই গবেষণা এখনও চলমান। এমনকি বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে সৃষ্টির শুরুতে পৃথিবীর যেমন পরিবেশ ছিল কৃত্রিমভাবে প্রায় তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রাণহীন বস্তু থেকে প্রাণ সৃষ্টির চেষ্টাও করেছেন।

তবে এখনও বিজ্ঞানীরা সে কাজে সফল হতে পারেননি। এরপরেও বর্তমানে যেসব বিজ্ঞানী প্রাণের উৎপত্তির রহস্য সমাধানে গবেষণা করছেন, তারা অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী যে তারা সঠিক পথেই রয়েছেন। বাস্তব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই তাদের এই আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে।

প্রাণের উৎপত্তির প্রকৃত উৎস আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের অন্বেষণের রয়েছে এক দীর্ঘ গল্প। প্রাণের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচন প্রচেষ্টার সেই গল্প মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহ, সংগ্রাম এবং অসাধারণ সৃষ্টিশীলতায় পরিপূর্ণ। যার মধ্য দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের বড় বড় কয়েকটি আবিষ্কারও সম্ভব হয়েছে। বাস্তব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রাণের সৃষ্টি রহস্য সমাধানে মানব-মানবীকে যেতে হয়েছে পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় এবং সহ্য করতে হয়েছে অবর্ণনীয় কষ্ট। অনেক বিজ্ঞানীকে শয়তান আখ্যা দিয়ে নিপীড়ন করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো বিজ্ঞানীকে কাজ করতে হয়েছে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী সরকারের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে। আসুন জেনে নেয়া যাক সেই রোমাঞ্চকর গল্প।

প্রাণ অনেক পুরনো। ডায়নোসর সম্ভবত পৃথিবীর বিলুপ্ত প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে তারা দোর্দণ্ড প্রতাপে টিকে ছিল। কিন্তু প্রাণের উৎপত্তি খুঁজতে আরও সুদূর অতীতে যেতে হবে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদের অনুমান, আজ থেকে প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল আমাদের এই মহাবিশ্বের। তার ৯৫০ কোটি বছর পরে আজ থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয় আমাদের পৃথিবীর। আর এই পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল সম্ভবত আরও ৫০ থেকে ১০০ কোটি বছর পরে, সম্ভবত আজ থেকে ৩৫০-৪০০ কোটি বছর আগে।

আমাদের চেনাজানা সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্মের বয়স প্রায় ৩৫০ কোটি বছর, যা কিনা সবচেয়ে পুরনো ডায়নোসরের থেকেও ১৪ গুণ বেশি পুরোনো। তবে ভবিষ্যতে এরচেয়ে প্রাচীন জীবাশ্মের সন্ধানও হয়ত মিলতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ২০১৬ সালের আগস্টে গবেষকরা ৩৭০ কোটি বছর আগেকার এক আণুবীক্ষণিক অনুজীবের ফসিলের সন্ধান পেয়েছেন।

আমরা ধরে নেই প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল পৃথিবীতেই; যা যুক্তিযুক্তও মনে হয়। কেননা এখনও আমরা পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্ত্ব খুঁজে পাইনি। পৃথিবী সৃষ্টির পর এর বয়সের প্রথম ১০০ কোটি বছরের মধ্যেই হয়ত এতে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল।

৪৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি আমাদের পৃথিবীর। আর প্রাপ্ত জীবাশ্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনটির বয়স প্রায় ৩৭০ কোটি বছর। আমরা যদি প্রাণের বিকাশ মুহূর্তের কাছাকাছি সময়েও যেতে পারি, তাহলেও সৃষ্টিলগ্নে কেমন ছিল প্রাণের বৈশিষ্ট্য, তার ধারণাও হয়ত পাব।

১৯ শতক থেকে জীববিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবেই জানেন সব ধরনের জীবিত স্বত্ত্বাই জীবন্ত ‘প্রাণকোষ’ দিয়ে গঠিত; যা মূলত বিভিন্ন রকম এবং আকারে অতি ক্ষুদ্র জীবিত অণুর সমষ্টি। ১৭ শতকে আধুনিক মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর প্রথম প্রাণকোষ আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু কোষ থেকেই প্রাণের উৎপত্তি সেটা বুঝতে আরও প্রায় এক শতাব্দী সময় লেগে যায়।

এখন প্রথম প্রাণের উৎপত্তি বা সৃষ্টির বিষয়টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার নিরিখে প্রমাণ করতে গেলে অর্থাৎ শূন্য থেকে একটা কোষ সৃষ্টি করতে হলে সেই ৩৫০ কোটি বছর আগেকার পৃথিবীর পরিবেশ যেমন ছিল তেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব।

একজন মানুষ হয়ত দেখতে একটা শিং মাছ বা টাইরানোসোরাস রেক্স ডায়নোসরের মতো নয়, কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে গভীর পর্যবেক্ষণে আমরা দেখতে পাব, সব প্রাণীর দেহ প্রায় একই রকম জীবন্ত প্রাণকোষ দিয়ে গঠিত। এমনকি বৃক্ষ, লতাপাতা, অণুজীব বা মাশরুম ইত্যাদি একই উপাদানে তৈরি। আর পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাণীই আণুবীক্ষণিক; যাদের প্রায় সবাই একটি মাত্র প্রাণকোষ দিয়ে গঠিত। ব্যাকটেরিয়া এককোষী প্রাণীদের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত, সংখ্যায় বেশি এবং পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়।

২০১৬ সালের এপ্রিলে বিজ্ঞানীরা এক সেমিনারে ‘প্রাণের বংশলতিকার’ সর্বশেষ আধুনিক সংস্করণ উপস্থাপন করেন; যেখানে সব ধরনের জীবিত প্রাণীকে বংশলতিকায় ভিন্ন ভিন্ন পর্বের মাধ্যমে দেখানো হয়। প্রাণীপর্বের প্রায় সব শাখাতেই ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য। ফলে প্রাণীর বংশলতিকা দেখে মনে হয় সব জীবের আদিপিতা হলো ব্যাকটেরিয়া। অন্যভাবে বলা যায়, প্রতিটি জীবিত প্রাণ এমনকি আপনি নিজেও প্রকৃতপক্ষে ব্যাকটেরিয়ার বংশধর।

বিজ্ঞানের এই অভূতপূর্ব অগ্রগতির ফলে আমরা এখন প্রাণের উৎস কোথায় এই প্রশ্নের আরও যথাযথ উত্তর নিশ্চিত করতে পারব হয়ত। কিন্তু কীভাবে প্রথম প্রাণের উৎপত্তি হলো, তা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে গেলে তথা কৃত্রিমভাবে একটা প্রাণকোষ তৈরি করতে আমাদের প্রয়োজন হবে ৩৫০-৪০০ কোটি বছর আগেকার পৃথিবীর নানা প্রাকৃতিক উপাদান এবং সে সময়কার প্রাথমিক প্রাণ বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশটিও হুবহু সৃষ্টি করতে হবে গবেষণাগারে। তাহলে একবার ভাবুন তো প্রথম প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল কীভাবে তা প্রমাণ করা কতটা দুরূহ ব্যাপার?

প্রাথমিক পরীক্ষণ
প্রায় সমগ্র মানব ইতিহাসজুড়েই পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ কীভাবে শুরু হয়েছিল, এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনীয়তা কখনও বিবেচিত হয়নি। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে- উত্তর তো আগে থেকেই ধর্মতত্ত্বের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ছিল। এমনকি ১৮০০ শতকের আগে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীও ‘প্রাণবাদে’ (Vitalism) বিশ্বাস করতেন। প্রাণবাদ মতে ধারণা করা হতো, প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে এমন কোনো ‘অলৌকিক’ উপাদান, যা তাদেরকে জড় বস্তু থেকে আলাদা করেছে, যা হয়তো সৃষ্টিকর্তার দান। এই মতবাদ অনেক সময় ধর্মতত্ত্বের সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধত। ধর্মতত্ত্ব মতে, প্রথম মানবকে প্রাণদান করতে ঈশ্বর তার মুখে ফুঁ দিয়েছিলেন। আর চির অমর আত্মা প্রাণীর দেহে অলৌকিকভাবেই বিরাজিত থাকে।

এরপর ১৮ শতকের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু বস্তুর সন্ধান পেলেন যেগুলোকে মনে হচ্ছিল প্রাণের জন্য অনন্য উপাদান। সেইসব উপাদানের মধ্যে ইউরিয়া অন্যতম; যা পাওয়া গিয়েছিল মূত্রের মধ্যে এবং তা ১৭৯৯ সালে প্রথম শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বিজ্ঞানীরা তখন পর্যন্ত জানতেন, শুধু জীবিত প্রাণীর দেহেই এই ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য উৎপন্ন হতে পারে। ফলে ধারণা করা হয় ইউরিয়া এবং ওইসব বস্তুর মধ্যেই হয়ত প্রাণের শক্তি সঞ্চিত আছে। যে কারণে সেই বস্তুগুলোকেও মনে করা হতো অন্যদের তুলনায় বিশেষ কিছু বা অতিপ্রাকৃত, যেগুলো প্রাণীদেহ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। তখন পর্যন্ত প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানের যা কিছু অর্জন ছিল তা প্রাণের অলৌকিকতার ধারণার সঙ্গেই বেশি মানানসই।

তবে ১৮২৮ সালে জার্মান রসায়নবিদ ফ্রেডরিখ ভোলার একটা সাধারণ রাসায়নিক দ্রব্য অ্যামোনিয়াম সায়ানেট থেকে ইউরিয়া উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন। এই পদ্ধতির সঙ্গে জীবিত প্রাণীর কোনো যোগসূত্র ছিল না। অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও এগিয়ে এলেন ফ্রেডরিখ ভোলারের পথ অনুসরণ করে এবং কিছুদিনের মধ্যেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন, প্রাণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, এমন সাধারণ নিরীহ রাসায়নিক দ্রব্য থেকেও প্রাণের উপাদান তৈরি করা সম্ভব।

বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রাণ বিকাশে অলৌকিকতার স্থান এখানেই শেষ। কারণ, তখন প্রমাণ হয়ে গেল যে, প্রাণের উপাদানগুলো একেবারেই বস্তুজগতীয় জিনিস। এর উৎস অবস্তুগত আত্মা বা অতিপ্রাকৃত কোনো স্বত্তা নয়। প্রণীদেহের বাইরের চারপাশের বস্তুজগতেও প্রাণের উপাদান রয়েছে। এবং মানুষসহ সব প্রাণী সম্ভবত সেই বস্তুজগত থেকেই আবির্ভূত হয়েছে।

বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রাণ বিকাশে অলৌকিকতার স্থানের সমাপ্তি ঘটে এখানেই । কিন্তু মানুষ তার মনের গভীরে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রাণ বিকাশের ঐশ্বরিক ধারণা এত সহজে দূর করতে পারে না। অনেকেই বলতে থাকেন, রসায়ন থেকে প্রাণ সৃষ্টির মধ্যে বিশেষত্ব কিছু নেই বরং তাদের কাছে মনে হয় তা প্রাণকে এর ম্যাজিক থেকে বঞ্চিত করেছে, আর আমরা যেন যন্ত্র।

এমনকি বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত প্রাণের অলৌকিকত্বকে রক্ষা করতে রীতিমত মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন। উদাহরণত ১৯১৩ সালের শেষ নাগাদ ব্রিটিশ জৈবরসায়নবিদ বেঞ্জামিন মূর ‘জৈব শক্তি’ (Biotic Energy) নামে একটা তত্ত্বের অবতারণা করেন, যেটা আসলে নতুন মোড়কে প্রাণের অলৌকিকতা প্রচারের প্রবল চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। বেঞ্জামিন মূরের ‘জৈব শক্তি’ তত্ত্বে আবেগের প্রাধান্যও যথেষ্ট লক্ষ্যণীয় ছিল। বর্তমানে মূরের ‘জৈব শক্তি’ তত্ত্ব অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, এমন অনেক সায়েন্স ফিকশন আছে যেগুলোতে দেখানো হয় একজন মানুষের জীবনীশক্তি বাড়ানো সম্ভব অথবা নিঃশেষ করে দেয়া সম্ভব। উদাহরণত ‘ডক্টর হু’ এর একটা চরিত্র টাইম লর্ডস; যিনি পুনর্জন্ম শক্তি (regeneration energy) ব্যবহার করে বারবার জন্ম লাভ করছেন।

এমনকি যেখানে দেখানো হয়, তার জীবনী শক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা বাড়ানোও হচ্ছে; যা ফের শীর্ষেও পৌঁছে যাচ্ছে। এই বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনিকে অভিনব মনে হলেও বাস্তবে এটা সেই পুরোনো ধারণারই নতুনভাবে উপস্থাপন মাত্র।

১৮২৮ সালের ওই আবিষ্কারের পর থেকেই প্রথম প্রাণের বিকাশ কীভাবে ঘটেছিলে তার বস্তুগত ব্যাখ্যা খুঁজতে থাকেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তারা কোনো উপায়ান্তর খুঁজে পেলেন না। বিজ্ঞানীরা হয়তো তাদের প্রাণের অলৌকিকত্বের ধারণা থেকে সহজেই বের হতে পারছিলেন না।

এই ক্ষেত্রে বিবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় যুগান্তকারী ধারণাটি দিলেন প্রকৃতি বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন। ১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইন ব্যাখ্যা করে দেখালেন কীভাবে এই বিপুলা পৃথিবীর ততধিক বিপুল পরিমাণ বিচিত্র প্রাণী জগতের উদ্ভব হয়েছে হয়ত একটা সাধারণ এককোষের আদিপিতা-মাতা থেকে।

এই প্রথম কেউ বললেন কোনো ঈশ্বর প্রতিটি জীবকে আলাদা আলাদা করে সৃষ্টি করেননি। প্রাণিজগৎ সৃষ্টি হয়েছে কোটি কোটি বছর আগেকার পৃথিবীর প্রাথমিক জৈব-রাসায়নিক উপাদান থেকে উৎপন্ন আদি প্রাণ থেকে। প্রাণী জগতের সবাই সেই আদি এককোষী প্রাণীর বংশধর।

চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব চারিদিকে বিতর্কের হইচই ফেলে দিল। ডারউইন এবং তার বিবর্তনবাদ ভয়ানক হিংস্র আক্রমণের শিকার হলো। অথচ বিবর্তনবাদের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি কীভাবে প্রথম প্রাণের উৎপত্তি।

ডারউইন জানতেন প্রশ্নটা অতীব গুরুতর, কিন্তু তিনি যথাসম্ভব সতর্কভাবে শুরু করেছিলেন তবুও চার্চের সঙ্গ দ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব হলো না। পরে অবশ্য ১৮৭১ সালে লেখা এক চিঠিতে আবেগমথিত ভাষায় ডারউইন বলতে চেয়েছিলেন, প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে এই তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর তিনি জানতেন। প্রাণের উৎপত্তি একটা ছোট উষ্ণ পুকুরে। যেখানে ছিল পর্যাপ্ত অ্যামোনিয়া এবং ফসফরাস লবণ। সেই সঙ্গে আলো, উত্তাপ, বিদ্যুৎ এবং রাসায়নিকভাবে স্বয়ং উদ্ভূত প্রোটিনের (আমিষের) জটিলযৌগ, যা আরও জটিল পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়ে প্রাণে পরিণত হয়।

ভিন্নভাবে বলা যেতে পারে, কী ঘটতে পারে যখন দীর্ঘদিন সাধারণ জৈব উপাদান পূর্ণ একটা ছোট জলাভূমি সূর্যালোকে ছিল? কিছু জৈব উপাদান হয়ত মিলেমিশে প্রাণের সদৃশ কোনো বস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছিল। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সেখানে সৃষ্টি হয়েছিল আমিষ এবং আমিষ আরও জটিল কোনো বস্তুতে পরিণত হচ্ছিল। হতে পারে অস্পষ্ট ধারণামাত্র। কিন্তু ভবিষ্যতে এই অস্পষ্ট ধারণার উপর ভিত্তি করেই প্রাণের উৎপত্তি সংক্রান্ত প্রথম তত্ত্বটি দাঁড়িয়ে যায়।

এই তত্ত্বের আত্মপ্রকাশ ঘটে সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত একটি স্থানে। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন ঈশ্বরবিহীন প্রাণের উৎপত্তির মত সাহসী চিন্তা বিকশিত হয়েছে একটা গণতান্ত্রিক দেশে, যেখানে মানুষের বাক স্বাধীনতা সামাজিক ঐতিহ্যের অংশ। তা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র? কিন্তু না, বাস্তব ঘটনা হলো অলৌকিকতাকে পাশ কাটিয়ে প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে প্রথম তত্ত্বটি বিকশিত হয় নিষ্ঠুরভাবে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্র সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে। যেখানে মুক্তচিন্তা ছিল নিষিদ্ধ। তখন স্ট্যালিনের রাশিয়াতে সবকিছু রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে। মানুষের চিন্তা, এমনকি জীববিজ্ঞানের মতো পঠন পাঠনের বিষয়ও, যা কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, সেটাও ছিল রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন।

সবচেয় আলোচিত ঘটনা ছিল, স্ট্যালিন জীনতত্ত্বের প্রচলিত পঠন পাঠনের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের আরেক জীববিজ্ঞানী এবং কৃষিবিদ ট্রোফিম ডেনিশোভিচ লিসেঙ্কো জোসেফ মেন্ডেলের জিনতত্ত্ব এবং ডারউইনের বিবর্তনবাদকে বাতিল করে বংশপরম্পরার উপর জোর দেন। তিনি মনে করতেন, প্রাণী তার জীবনের অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত করে যায়। লিসেঙ্কো দেখালেন উন্নতজাতের গম থেকে উন্নত এবং অধিকফলনশীল গম কীভাবে উৎপাদন করা যায়। স্ট্যালিন কমিউনিস্ট ভাবধারার সঙ্গে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ ট্রোফিম ডেনিশোভিচ লিসেঙ্কোর মতবাদকে চাপিয়ে দেন। জীনতত্ত্ব বা বংশগতিবিদ্যা নিয়ে যেসব বিজ্ঞানীরা কাজ করছিলেন তাদেরকে জনসাধারণের কাছে লিসেঙ্কোর মতবাদকে সমর্থন এবং প্রচার করতে বাধ্য করা হয়। অন্যথায় তাদের স্থান হতো লেবার ক্যাম্পে।

স্ট্যালিনের দমন নিপীড়নের শাসনের মধ্যেই আলেক্সান্ডার ওপারিন চালিয়ে যেতে লাগলেন তার জৈবরাসায়নিক গবেষণা। ওপারিন নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। কারণ, তার কমিউনিজমের প্রতি সন্দেহাতীত আনুগত্য ছিল। তবে বংশগতির ক্ষেত্রে ওপারিন লিসেঙ্কোর তত্ত্বকে সমর্থন দেন এবং দেশের সেবা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘অর্ডার অফ লেনিন’ নামের সর্বোচ্চ পুরষ্কারে ভূষিত হন।

১৯২৪ সালে আলেক্সান্ডার ওপারিন প্রকাশ করলেন ‘দ্য অরিজিন অফ লাইফ’ নামে তার অমর গ্রন্থখানি। এতে ওপারিন প্রাণের বিকাশ সন্ধানে যে প্রস্তাবনা হাজির করেন সেটা ডারউইনের বিবর্তনবাদের ‘একটি ছোট্ট উষ্ণ পুকুরে প্রাণের উৎপত্তি’ ধারণার সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়।

ওপারিন কল্পনা করেছিলেন কেমন ছিল সদ্য গঠিত পৃথিবীর চেহারা। পৃথিবীর উপরিভাগ ছিল কল্পনাতীত গরম। মহাকাশ থেকে খসে পড়ছিল জ্বলন্ত পাথরের খণ্ড। পৃথিবী তখন ছিল বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত অর্ধগলিত পাথরের বিশৃঙ্খল স্তুপ। পদার্থগুলোর মধ্যে কার্বনের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি।

ধীরে ধীরে উত্তপ্ত পৃথিবী ঠান্ডা হলো, জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে প্রথম বৃষ্টি নামল পৃথিবীর বুকে, তরল পানিতে তলিয়ে গেল চরাচর। বৃষ্টি পড়ার আগেও সমুদ্র ছিল। কিন্তু সেটা ছিলো প্রচণ্ড উত্তাপে গলিত কার্বননির্ভর ঘন তরল।

এমতাবস্থায় দুইটা ব্যাপার ঘটতে পারে। প্রথমত. বিভিন্ন রাসায়নিক নিজেদের মাঝে বিক্রিয়া করে অসংখ্য নতুন জটিল যৌগ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের মধ্যে কিছু যৌগ আরও জটিল যৌগে পরিণত হবে। আলেক্সান্ডার ওপারিন ধারণা করেন, রাসায়নিক দ্রবণের ক্ষুদ্র মৌলগুলি প্রাণের দিকে ধাবিত হয়। প্রসঙ্গত, প্রাণের দুটো মৌলিক উপাদান চিনি (Sugar) এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড পৃথিবীর পানি থেকেই উৎপন্ন হয়েছে।

দ্বিতীয়ত. কিছু রাসায়নিক দ্রব্য নতুন আণুবীক্ষণিক অণুজীবের কাঠামো তৈরি করতে শুরু করে। কিছু অণুজীবের জৈবরাসায়নিক উপাদান পানিতে দ্রবীভূত হয় না। যেমন তেল পানির উপর আস্তরণ সৃষ্টি করে ভেসে থাকে। কিন্তু যখন কিছু জৈবরাসায়নিক উপাদান পানির সঙ্গে মিশে যায় তখন গোলাকার ‘কোয়াসারভেটিভ’ নামক বস্তুর রূপ ধারণ করে যেগুলো আয়তনে .০১ সেমি বা (.০০৪) ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। যেগুলো জীবন্ত কোষের মতো বেড়ে ওঠে। অবয়ব পরিবর্তন করে এমনকি মাঝেমধ্যে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তারা চারপাশের পানির রাসায়নিক দ্রব্যের সঙ্গে ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। ফলে প্রাণসদৃশ রাসায়নিক উপাদান তাদের মাঝে সংগঠিত হতে থাকে। ওপারিন প্রস্তাব করেন এই কোয়াসারভেটিভ হলো আধুনিক জীবিত কোষের পূর্বপুরুষ।

এর পাঁচ বছর পরে ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী জন বারডন স্যান্ডারসন হালডেন একই মতবাদ নিয়ে র‍্যাশনালিস্ট অ্যানুয়াল জার্নালে একটা ছোট প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। হালডেন ইতিমধ্যেই বিবর্তনবাদে প্রভূত অবদান রেখে ফেলেছেন। তিনি ডারউইনের মতবাদকে বিকাশমান জীনতত্ত্বের আলোকে আরও সংহত করেন।

হালডেন ছিলেন তার জীবনের থেকেও বড় এক চরিত্র। একবার ডিকম্প্রেসন চেম্বারের কিছু পরীক্ষা চালাতে গিয়ে তার কানের পর্দায় ছিদ্র হয়ে যায়। কিন্তু পরে তিনি রম্য করে লিখেছিলেন, ‘কানের পর্দা সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই সুস্থ হয়ে যায়। যদি পর্দায় ছিদ্র থেকেই যায় এবং তারফলে কেউ যদি বধির হয়ে যায় তাহলে সে কারো প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করেই কান দিয়ে বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে পারবে, যেটা হবে একটা সামাজিক অর্জন!’

ওপারিনের মতো হালডেনও বললেন, সমুদ্র প্রাথমিক অবস্থা থেকে স্থিতিশীল গরম ঘন তরলে পরিণত হলে কীভাবে সেখানকার পানিতে রাসায়নিক অনুজীব নিজে থেকেই সৃষ্টি হতে পারে। পৃথিবীর এরকম পরিবেশে প্রথম জন্ম নেয় প্রাণের অণুজীব অথবা অর্ধজীবন্ত বস্তু আর এরপরের স্তরে সৃষ্টি হয় স্বচ্ছ তেলতেলে জেলির মত থকথকে প্রাণবস্তু।

কথিত আছে, ওপারিন এবং হালডেন যে তত্ত্বের অবতারণা করেন পৃথিবীর সমস্ত জীববিজ্ঞানী সেগুলো পুনর্ব্যক্ত করেন মাত্র। প্রাণের প্রথম বিকাশ ঘটেছে পুরোপুরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এবং এতে কোনো ঈশ্বরের হাত নেই বা এতে কোনো আগাম প্রাণশক্তিরও ভুমিকা ছিল না। এই ধারণাটিও ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতোই ছিল বিপ্লবী। এই তত্ত্বও ধর্মতত্ত্বের ভিত্তিমূলে চরম কুঠারাঘাত করল।

ঈশ্বরবিহীন সৃষ্টিতত্ত্ব সোভিয়েত ইউনিয়নে কোনো সমস্যা ছিল না। কারণ, কমিউনিস্ট শাসিত সোভিয়েত রাষ্ট্রীয়ভাবেই ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না। সে জন্যই কমিউনিস্ট নেতারা প্রাণের উৎপত্তি গবেষণায় এই বস্তুবাদী ব্যাখ্যাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। হালডেন নিজেও ছিলেন একজন নাস্তিক এবং কমিউনিজমের কড়া সমর্থকও ছিলেন।

সে সময়ে সাধারণত বামপন্থি এবং কমিউনিস্ট চিন্তা ধারার লোকজন এই ঈশ্বরবিহীন প্রাণ সৃষ্টির ধারণা মেনে নিত। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নে এই তত্ত্ব বেশ সাদরেই গৃহীত হলো। আর ইউরোপ-আমেরিকায়ও যারা এই তত্ত্ব মেনে নিয়েছিলো তারাও ছিলো বামপন্থি বা কমিউনিস্ট ভাবধারার লোকজন।

প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আদিম জৈবরাসায়নিক ঘন তরল সহযোগে- এই ধারণাটি ওপারিন-হালডেন তত্ত্ব বলে ব্যাপক পরিচিত পেয়ে গেল। ওপারিন-হালডেন তত্ত্ব যুক্তির বিচারে গ্রহণযোগ্য হলেও তত্ত্বটির একটা সমস্যা ছিল। ওপারিন-হালডেন তত্ত্বকেও নির্ভুল করার স্বপক্ষে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণালব্ধ প্রমাণ ছিলো না। ২৫ বছর পার হয়ে গেলেও তত্ত্বটির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দাঁড় করানো যায়নি।

সময়ের সঙ্গে প্রাণের উৎপত্তির রহস্য সমাধানের গবেষণায় যোগ দেন ১৯৩৪ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ী আমেরিকান রসায়নবিদ হ্যারল্ড উরে। তিনি পারমাণবিক বোমা বানানোর দলেও কাজ করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ম্যানহাটান প্রকল্পে পারমাণবিক বোমার অতি প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম-২৩৫ সংগ্রহ করতেন তিনি। যুদ্ধের পরে তিনি পরমাণু প্রযুক্তিকে সাধারণ জনগণের সমাজের নিয়ন্ত্রণে দেয়ার জন্য আন্দোলন করেন।

প্রফেসর উরে ধারণা করেছিলেন, আমাদের পৃথিবী আদিম অবস্থায় সম্ভবত অ্যামোনিয়া, মিথেন এবং হাইড্রোজেনের মিশেলে পিণ্ডাকৃতির ছিল। এই মিশ্রণকে যদি বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ এবং পানির সংস্পর্শে আনা যায় তাহলে অ্যামাইনো অ্যাসিড উৎপন্ন করা সম্ভব। এটা সর্বজনবিদিত যে, অ্যামাইনো অ্যাসিড হলো প্রাণের প্রথম উপাদান।

উরে এই সময়ে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশ এবং মহাকাশের ভাসমান বস্তুকণার রসায়ন নিয়ে আগ্রহী হন। বিশেষকরে দেখতে চেয়েছিলেন সৌরজগৎ যখন সবে সৃষ্টি হলো, তখন ঠিক কী ঘটছিল। একদিন তিনি ক্লাসে বললেন, সৃষ্টিলগ্নে পৃথিবীর বায়ুস্তরে সম্ভবত অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল না। অক্সিজেন না থাকার কারণেই ওপারিন এবং হালডেনের তত্ত্বে প্রস্তাবিত আদিম জৈবরাসায়নিক ঘন তরলটি তৈরি হতে পেরেছিল। কেননা অক্সিজেন থাকলে তার সংস্পর্শে এসে ভঙ্গুর রাসায়নিকগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত।

প্রফেসর হ্যারল্ড উরের ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন পিএইচডির গবেষণারত ছাত্র স্ট্যানলি মিলার। তিনি উরেকে প্রস্তাব দেন পরীক্ষা করে দেখার জন্য আসলেই কেমন ছিল সেদিনের পৃথিবীর পরিবেশ। উরে নিজের ধারণার উপর কিছুটা সন্দেহ পোষণ করলেও মিলার অক্সিজেনহীন পৃথিবীর চিন্তায় তাকে আরও মনোনিবেশ করালেন। তাদের মাঝে বিস্তর আলোচনার পরে ১৯৫২ সালে প্রফেসর উরে এবং তার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্ট্যানলি লয়েড মিলার যৌথভাবে প্রথমবারের মত প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল তার খোঁজে বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিখ্যাত ‘উরে-মিলার এক্সপেরিমেন্ট’ শিরোনামে একটি পরীক্ষা শুরু করলেন।

পরীক্ষার যন্ত্রপাতি খুব সাধারণ ছিল। মিলার পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্নের চারটি রাসায়নিক উপাদান- গরম পানি, হাইড্রোজেন গ্যাস, অ্যামোনিয়া এবং মিথেন, চারটি কাচের জারে ভরে তাদের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে দিলেন। কাচের জারের মাঝে মিলার বারবার তড়িৎপ্রবাহ দিতে লাগলেন যাতে বজ্রপাত ঘটে। আদিকালে পৃথিবীতে বজ্রপাতের ঘটনা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক। এই পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সাধারণ পরিবেশেই প্রচুর পরিমাণ জৈব অনু উৎপাদন সম্ভব। মিলার দেখতে পেলেন প্রথমদিনেই কাচের জারের মধ্যকার দ্রবণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গোলাপী আভা ধারণ করেছে এবং সপ্তাহ শেষে ঘন তরল দ্রবণটি গাঢ় লাল হয়ে গেল। পরিষ্কার বোঝা গেল জারে জৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ তৈরি হয়েছে।

মিলার পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করে মিশ্রণটিতে গ্লাইসিন এবং আলানাইন নামে দুইটা অ্যামাইনো অ্যাসিড পেলেন। অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলো হলো প্রাণের প্রাথমিক উপাদান। অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রোটিন (আমিষ) সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এই অ্যাসিড আমাদের শরীরের শারীরবৃত্তিক এবং জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মিলার গবেষণাগারে জন্ম দিলেন প্রাণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে প্রাণ আরও জটিল, আমরা যতটা ভাবি তার থেকেও বেশি।

এই গবেষণার ফলাফল বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হলো ১৯৫৩ সালে। প্রাণের উৎপত্তির রহস্য সমাধানের অভিযানে ‘উরে-মিলার এক্সপেরিমেন্ট’ এক স্মরণীয় ঘটনা। প্রফেসর উরে এই গবেষণার পুরো কৃতিত্ব মিলারকে দিলেন এবং আর্টিকেল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবুও এই পরীক্ষা ‘উরে-মিলার এক্সপেরিমেন্ট’ হিসেবেই ইতিহাসে উচ্চারিত হয়।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের গবেষক জন সাদারল্যান্ড বলেন, ‘উরে-মিলার পরীক্ষার গুরুত্ব এখানেই যে, এখন প্রমাণ হলো আপনি সাধারণ পরিবেশেও কোনো প্রাণীদেহের সংস্পর্শ ছাড়াই প্রচুর অণুজীব সৃষ্টি করতে পারবেন।’

কিন্তু পরবর্তীতে আরও গবেষণায় পৃথিবী সৃষ্টির আদিতে অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণও ছিল, এমন আবিষ্কারের কারণে আগের গবেষণা ভুল প্রমাণ হয়। কিন্তু সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়। জন সাদারল্যান্ড বলেন, ‘উরে-মিলার পরীক্ষা ছিল দৃষ্টান্তমূলক, তারা মানুষের কল্পনা জাগাতে পেরেছিলেন এবং এরপর প্রাণের উৎস সন্ধানের বিষয়টি নিয়ে লোকে ব্যাপকভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করে।’

মিলারের পরীক্ষার প্রভাবে অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও এগিয়ে এলেন ভিন্ন ভিন্ন মৌল থেকে অনুজীব সৃষ্টির গবেষণা করে প্রাণের উৎসের সন্ধানে। প্রাণের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচনের হাতছানি মনে হলো সন্নিকটে।

এতদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে প্রাণ এত জটিল যে, তা আমরা চিন্তা করতেও সক্ষম নই। জীবন্ত কোষ শুধুমাত্র কিছু রসায়নের জটিল যৌগ নয় বরং এক সূক্ষ্ম শিল্পিত যন্ত্রবিশেষ। যা হঠাৎ করেই সম্পর্কহীন বস্তু থেকে সৃষ্টি হয়ে বিজ্ঞানীদের সামনে ধারণার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়।

[পরের পর্বে থাকছে ডিএনএ আবিষ্কারে যেভাবে পাল্টে বিজ্ঞানীদের চিন্তার জগত।]

আরও পড়ুন:
‘সূর্যই ঘুরছে পৃথিবীর চারদিকে’, আমানতের দাবি কেন ভুল
‘ক্রিস্টাল পৃথিবীতে’ ব্যাখ্যাতীত সব রহস্যের সমাধান!
ভূত্বক গঠন হতে পারে ধারণারও ৫০ কোটি বছর আগে

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
At least one more month to restore internet speed in the country
সাবমেরিন ক্যাবল বিচ্ছিন্ন

ইন্টারনেটে গতি ফিরতে আরও এক মাস

ইন্টারনেটে গতি ফিরতে আরও এক মাস
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে। সেখানে মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত শেষ হতে পাঁচ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মে মাসের শেষ নাগাদ সংযোগ স্বাভাবিক হতে পারে।

সারা দেশে গত পাঁচ দিন ধরে ইন্টারনেটে ধীরগতি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় স্থাপিত সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগে এই বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)। তবে সহসাই ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি ফিরছে না। ধীরগতির এই পরিস্থিতি চলতে পারে আরও এক মাস।

বিএসসিপিএলসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে। সেখানে মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত শেষ হতে পাঁচ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মে মাসের শেষ নাগাদ সংযোগ স্বাভাবিক হতে পারে।

জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে সারা দেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি দেখা দেয়। বিএসসিপিএলসি জানতে পারে সিঙ্গাপুরে জলসীমায় কোথাও ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে।

পরে আরও অনুসন্ধানে জানা যায় সিঙ্গাপুর নয়, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ক্যাবল ‘ব্রেক’ করেছে। এতে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সিমিউই-৫) সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

বিএসসিপিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ জানান, সিমিউই-৫ (দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল) দিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহ হয়। সেটা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (চালনা ও রক্ষণ) সাইদুর রহমান জানান, মূলত ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র এলাকায় সিমিউই-৫ ক্যাবলটি ব্রেক করেছে। তারা এটা মেরামতে কাজ করছে। আগামী মাস অর্থাৎ, মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষ অথবা চতুর্থ সপ্তাহ নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে।

ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভুঁইয়া চাহিদা অনযায়ী ব্যান্ডউইথড সরবরাহে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যতদূর জেনেছি, এখনও কাজ শুরুই হয়নি। কনসোর্টিয়ামের কোনো জাহাজ না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। জাহাজ পাওয়ার পর হয়তো কাজ শুরু হবে। তার মানে আমরা একটা বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি।’

নাজমুল করিম আরও বলেন, ‘গত ৪-৫ দিন ধরে গ্রাহকরা আমাদের অনবরত ফোন করছেন, খোঁজ নিচ্ছেন। ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে সফটওয়্যার নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা বিপাকে পড়েছেন। ফ্রিল্যান্সাররাও এ নিয়ে আতঙ্কিত। সরকার এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা আমাদের।’

এক হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করা দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ এখন পুরোপুরি বন্ধ। শুধু প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহে রয়েছে। এত বিশালসংখ্যক গ্রাহকের ইন্টারনেট সেবা তাহলে কীভাবে চলছে- এমন প্রশ্ন অনেকের।

বিএসসিপিএলসি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট ব্যান্ডউইথডের ব্যবহার পাঁচ হাজার জিবিপিএসের বেশি। এর অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ২ হাজার ৭০০ জিবিপিএস আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) লাইসেন্সের মাধ্যমে আসে, যা ভারত থেকে স্থলপথে ব্যান্ডউইথড আমদানি করতে ব্যবহৃত হয়।

বাকি দু’হাজার ৪০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করে বিএসসিপিএলসি। দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এই ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৪ (সিমিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের সদস্য। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়েছিল। এর ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারে। এটি প্রায় ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করে থাকে।

অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৫ ঢুকেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা হয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় হাজার ৬০০ জিবিপিএস। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যান্ডউইথড প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে শিফটিং হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিএসসিপিএলসির মহাব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিকল্প অনেক উপায় রয়েছে। সেগুলো কার্যকর করা হচ্ছে। যদিও সব বিকল্প উপায় পুরোপুরি এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল যেটি সিমিউই-৪ নামে পরিচিত, সেটির পুরো ব্যান্ডউইথড বহনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বাড়তি খরচ দিতে হবে। এটা ছাড়া আরও কিছু বিকল্প রয়েছে। সেগুলো নিয়েও কাজ চলছে।’

আরও পড়ুন:
সারা দেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি
বিল বকেয়ায় ডাউন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, সেবায় ধীরগতি
১০ বছরে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ৭ গুণ
মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ ১১৯তম

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Internet slow across the country

সারা দেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি

সারা দেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি
বিএসসিপিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ জানান, সিঙ্গাপুরে ফাইবার কেবল ব্রেক করায় বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশে একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সিমিউই-৫ দিয়ে দেশে ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ হয়। এর পুরোটাই এখন বন্ধ।

দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের (সিমিউই-৫) সংযোগ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার রাত ১২টার পর এই সমস্যা শুরু হয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ গ্রাহকেরা ইন্টারনেটে ধীরগতি পাচ্ছেন।

এর আগে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার কথা বলেছিল বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল পিএলসি।

বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শুক্রবার রাত ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল (সিমিউই-৫) রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলবে। এ সময় দেশের ইন্টারসেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যান্ডউইডথ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে ফাইবার কেবল ‘ব্রেক’ করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ বলেন, সিমিউই-৫ দিয়ে দেশে ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ হয়। কিন্তু এর পুরোটাই এখন বন্ধ আছে। আমরা চেষ্টা করছি, সিমিউই-৪ (প্রথম সাবমেরিন কেবল) দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে। সিঙ্গাপুরে ফাইবার কেবল ব্রেক করায় বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশে একই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘গ্রাহকেরা ফোন করে ইন্টারনেট সেবায় ধীরগতির অভিযোগ করছেন।’

আরও পড়ুন:
১০ বছরে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ৭ গুণ
৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী ইন্টারনেট
মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ ১১৯তম
নিজের ইন্টারনেট প্ল্যান নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন গ্রামীণফোন গ্রাহকরা
দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সাড়ে ১২ কোটি, সিম ১৮ কোটি

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
There is no news tab on Facebook

ফেসবুকে নিউজ ট্যাব থাকছে না

ফেসবুকে নিউজ ট্যাব থাকছে না ফাইল ছবি
সংবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুকে ভবিষ্যতে কম গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফেসবুকে খবর প্রচার বন্ধ করবে মেটা।

সংবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুকে ভবিষ্যতে কম গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুকে খবর প্রচার বন্ধ করবে মেটা। গত বছর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে ফিচারটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

ফেসবুকে ২০১৯ সালে চালু হওয়া নিউজ ট্যাবটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ছোট ও স্থানীয় প্রকাশনার শিরোনামগুলোও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করেছে।

মেটা বলছে, ব্যবহারকারীরা সংবাদ নিবন্ধের লিংক দেখতে সক্ষম হবেন। সংবাদ সংস্থাগুলো তাদের লেখা ও ওয়েবসাইট লিঙ্ক পোস্ট ও প্রচার করতে পারবে, যেমন অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ফেসবুকে করতে পারে।

ভুল তথ্য কীভাবে ছড়ানো হয় এবং এটি রাজনৈতিক মেরুকরণে অবদান রাখে কি না, তা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার পর মেটা তার প্ল্যাটফর্মগুলোতে সংবাদ ও রাজনৈতিক উপাদান কমানোর চেষ্টার পর এই পরিবর্তন আসছে।

মেটার মুখপাত্র ড্যানি লিভার বলেছেন, ‘এই পরিবর্তন গ্রাহকের ফলো করা অ্যাকাউন্টের পোস্টে প্রভাব ফেলবে না। এটি সিস্টেমের সুপারিশগুলোকে প্রভাবিত করবে এবং ব্যবহারকারীরা যদি আরও চায়, তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

‘ঘোষণাটি এমন সময় আসছে, যখন ব্যবহারকারীরা বছরের পর বছর আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল যে, আমরা কীভাবে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুগুলো পরিচালনা করি তার উপর ভিত্তি করে।’

মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিউজ ট্যাবে এই পরিবর্তন তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক এবং ভুল তথ্যের পর্যালোচনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েই গেছে। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতা চলছে।

কর্নেল ব্রুকস স্কুল অফ পাবলিক পলিসির টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি গবেষক সারাহ ক্রেপস বলেছেন, ‘ফেসবুক নিজেকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে মনে করে না, এটি চালান প্রযুক্তিবিদরা। তারপর হঠাৎ তারা এ বিষয়ে মূল্যায়ন শুরু করে এবং নিজেদের রাজনীতিতে নিমজ্জিত দেখতে পান। ফলে তারা নিজেরাই শিরোনাম হয়ে ওঠেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বছর অনেকগুলো বড় নির্বাচন আসছে। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ফেসবুক রাজনীতি থেকে আরও এক ধাপ দূরে সরে যাচ্ছে। অসাবধানতাবশত নিজেরাই যাতে রাজনৈতিক শিরোনাম হয়, তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।’

পয়েন্টারের মিডিয়া বিশ্লেষক রিক অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘নিউজ ট্যাবের বিলুপ্তি সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য আশ্চর্যজনক নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ফেসবুক ট্র্যাফিক হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সংস্থাগুলোকে দর্শকদের আকৃষ্ট করার অনুসন্ধান ও নিউজলেটারের মতো অন্যান্য উপায়গুলোতে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করছে।’

অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘আমি বলব আপনি যদি খেয়াল করতেন, তাহলে আপনি দেখতে পেতেন যে, এটি আসছে। তবে এটি সংবাদ ব্যবসার জন্য আরও একটি দুঃসংবাদ।’

মেটা জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীরা তাদের ফেসবুক ফিডে যা দেখেন, তার চেয়ে তিন শতাংশেরও কম সংবাদ তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক সংবাদ ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত বছর ৮০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।

তবে ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চ স্টাডি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অর্ধেক অন্তত মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খবর পান। ফেসবুকের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম অন্যান্য মাধ্যমকে সেখানে ছাড়িয়ে গেছে।

পিউ জানিয়েছে, প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে তিনজন বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ফেসবুক থেকে খবর পান এবং ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ইনস্টাগ্রাম থেকে খবর পান। এ দুই মাধ্যমেরই মালিকানা মেটার।

ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের অনুসরণ করেন না, এমন অ্যাকাউন্টগুলোতে পোস্ট করা রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ‘সক্রিয়ভাবে’ সুপারিশ করা বন্ধ করার জন্য অ্যাপটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ফিল্টার বন্ধ করার অপশন সবসময় ইউজার সেটিংসে থাকলেও মেটা যে এই পরিবর্তন করেছে তা অনেকেই জানতেন না।

আরও পড়ুন:
প্রতিযোগীদের ওপর গোপন নজরদারি ফেসবুকের

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Facebooks secret surveillance on competitors

প্রতিযোগীদের ওপর গোপন নজরদারি ফেসবুকের

প্রতিযোগীদের ওপর গোপন নজরদারি ফেসবুকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: টেকক্রাঞ্চ
২০১৬ সালের জুনে মার্ক একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই। তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ।

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।

স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।

আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।

তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।

ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন:
ফলোয়ার হারিয়ে রিক্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা
নতুন ভিআর হেডসেট বাজারে আনল ‘মেটা’
ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট মুছে ‘শান্তিতে আছে’ মেটার চ্যাটবট
বইতে এলো দেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাস
পদ ছাড়ছেন মেটার সিওও স্যান্ডবার্গ

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Infinix has launched magnetic charging technology in Android smartphones

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্রযুক্তি আনল ইনফিনিক্স

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্রযুক্তি আনল ইনফিনিক্স ম্যাগচার্জের মতো চার্জিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করছে ইনফিনিক্স। ছবি: নিউজবাংলা
ম্যাগচার্জের মতো চার্জিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে এই প্রথম। এ প্রযুক্তি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করছে ইনফিনিক্স।

শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স তাদের নতুন স্মার্টফোন লাইনআপে যুক্ত করেছে যুগান্তকারী নতুন ফিচার ‘ম্যাগচার্জ’।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার এফ-ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক আয়োজনে নতুন নোট ৪০ সিরিজ উদ্বোধন করে করে ব্র্যান্ডটি। সেই আয়োজনেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং ফিচারের যাত্রা শুরুর কথা জানায় ইনফিনিক্স।

ম্যাগচার্জের মতো চার্জিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে এই প্রথম। এ প্রযুক্তি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করছে ইনফিনিক্স।

ম্যাগনেটিক চার্জিংয়ের সুবিধাজনক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নোট ৪০ সিরিজের সঙ্গে আছে ইনফিনিক্সের ম্যাগকিট। এ কিটে ফোনের ব্যাককাভার হিসেবে দেয়া হয়েছে ম্যাগকেস। এর সঙ্গে আরও আছে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্যাড ম্যাগপ্যাড এবং ম্যাগনেটিক পাওয়ার ব্যাংক ম্যাগপাওয়ার।

ইনফিনিক্সের নতুন নোট ৪০ সিরিজের নোট ৪০, নোট ৪০ প্রো, নোট ৪০ প্রো ফাইভজি এবং অত্যাধুনিক নোট ৪০ প্রো+ ফাইভজি স্মার্টফোনগুলোতে পাওয়া যাবে ম্যাগচার্জ ফিচারটি।

এবারের সিরিজটিতে দেয়া হয়েছে ইনফিনিক্সের অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ ২.০ প্রযুক্তি, ১০০ ওয়াট পর্যন্ত মাল্টি-স্পিড ফাস্টচার্জ এবং ২০ ওয়াটের ওয়্যারলেস ম্যাগচার্জ। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চার্জিং মোড ব্যবহার করতে একটি কাস্টম চিপ দেয়া হয়েছে এ সিরিজের ফোনগুলোতে।

উন্নত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতার জন্য নোট ৪০ সিরিজে আছে ১২০ হার্টজের প্রাণবন্ত থ্রিডি-কার্ভড অ্যামোলেড ডিসপ্লে। প্রধান ক্যামেরা হিসেবে সিরিজটিতে আছে ওআইএস সাপোর্টসহ শক্তিশালী ১০৮ মেগাপিক্সেলের সুপার-জুম ক্যামেরা সিস্টেম। এ ছাড়াও ফোনের পেছনের অংশ থেকে বিশেষ ধরনের লাইটিংয়ের জন্য এতে যুক্ত করা হয়েছে অ্যাকটিভ হ্যালো লাইটিংয়ের মতো এআই প্রযুক্তি।

ইনফিনিক্সের নতুন এ স্মার্টফোন সিরিজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট ডিরেক্টর উইকি নিইয়ে বলেন, ‘ইনফিনিক্স নোট ৪০ সিরিজ বাজারে আনার মাধ্যমে চার্জিং প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। চার্জিংয়ের অভিজ্ঞতাকেই বদলে দেবে এই সিরিজ। ‘এ ছাড়াও আমাদের নিজস্ব চিপ চিতা এক্স১-এর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে অলরাউন্ড ফাস্টচার্জ। এখন এতে আছে মাল্টি-স্পিড চার্জিং এবং এক্সট্রিম টেম্পারেচার চার্জিংয়ের মতো ফিচার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনী ম্যাগচার্জ অ্যাক্সেসরি কিট ফোন ব্যবহারকারীদের দেবে নিরবচ্ছিন্ন চার্জিং ইকোসিস্টেম। এসব অগ্রগতির ফলে ব্যবহারকারীরা সারা দিন যেকোনো পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় পাওয়ারড-আপ থাকতে পারবেন।’

গত বছর অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ প্রযুক্তিসহ নোট ৩০ সিরিজ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে ইনফিনিক্স। সিরিজটিতে আছে ৬৮ ওয়াটের ওয়্যারড চার্জিং এবং ১৫ ওয়াটের ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাদার বোর্ডে সরাসরি চার্জ নেয়ার জন্য এতে আছে বাইপাস চার্জিং এবং আইফোন সেভার হিসেবে পরিচিত ওয়্যারলেস রিভার্স চার্জিং প্রযুক্তি।

চার্জিং, লুক ও পারফরম্যান্সে অভূতপূর্ব আপডেট নিয়ে এখন বাংলাদেশের বাজারে আসার অপেক্ষায় আছে নোট ৪০ সিরিজ। নতুন এ নোট সিরিজের জন্য শুরু হয়ে গেছে প্রি-বুকিংও।

আরও পড়ুন:
যে তিন কারণে আলাদা ইনফিনিক্স ল্যাপটপ
বাজারে এলো ইনফিনিক্সের গেমিং স্মার্টফোন হট ৪০ প্রো
ফ্ল্যাশ লাইট বনাম রিং লাইট: কোনটি বেশি উপযোগী
দেশের বাজারে ইনফিনিক্সের ইনবুক সিরিজের দুই ল্যাপটপ
সিইএস ২০২৪: স্মার্ট ডিভাইস চার্জ হবে ৮ ইঞ্চি দূর থেকেই

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Why is an effective cooling system important for laptops?

ল্যাপটপের জন্য কার্যকর কুলিং সিস্টেম কেন জরুরি

ল্যাপটপের জন্য কার্যকর কুলিং সিস্টেম কেন জরুরি অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ল্যাপটপের কাজের মান ও গতি কমে যায় হয়। ছবি: সংগৃহীত
ইনফিনিক্সের ইনবুক সিরিজের এক্স২ এবং ওয়াই২ প্লাস ল্যাপটপ দেশজুড়ে রায়ানস, স্টারটেক ও দারাজের মতো অনুমোদিত রিটেইলারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। ১৪ থেকে ২০ মার্চ রায়ানস-এর ব্র্যান্ড উইক চলাকালীন ইনফিনিক্স ল্যাপটপ কিনলেই ক্রেতারা পাবেন একটি পাওয়ার ব্যাংক, একটি মাউস প্যাড এবং ১০০০ টাকার শপিং ভাউচার।

প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবী পাল্টাচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমান সময়ে যেকোনো কাজ, শিক্ষা কিংবা বিনোদনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ল্যাপটপের ব্যবহার। আধুনিক জীবনের সব রকমের প্রয়োজন মেটাতে ক্রমাগত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এসব ডিভাইস।

ফলে যত বেশি কাজ, তাপও উৎপন্ন হচ্ছে সেই হারে। এই তাপ কমাতে সাধারণত পোর্টেবল কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। এভাবে বাহ্যিক তাপ কমানো গেলেও ল্যাপটপের ভেতরে আটকে পড়া তাপ নিয়ে চিন্তা থেকেই যায়।

তবে ল্যাপটপেই যদি একটি শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম থাকে, তাহলে বাহ্যিক কুলিং ফ্যানের আর প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছর ইনবুক সিরিজের এক্স২ ল্যাপটপ বাজারে আনে ইনফিনিক্স। এই ল্যাপটপের ভেতরে আছে আইস স্টর্ম ১.০ নামক কুলিং প্রযুক্তি। এটি ল্যাপটপে একটি আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্যে করে। আইস স্টর্ম কুলিং সিস্টেম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে মিলিটারি-গ্রেডের বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। গেমিংসহ অন্যান্য কাজ কিংবা বিনোদনের সময় যা নিঃশব্দে পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে।

ইনফিনিক্সের এই প্রযুক্তিটি ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেমের গুরুত্ব তুলে ধরে। ল্যাপটপ কিংবা এর ব্যবহারকারী, উভয়ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে কার্যকর কুলিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাজে আসে এবং এর মাধ্যমে কী কী সমস্যার সমাধান হয়?

পারফরম্যান্স

ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে প্রথম সমস্যা হয় এর পারফরম্যান্সে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ল্যাপটপের কাজের মান ও গতি কমে যায় এবং ল্যাগ সৃষ্টি হয়। একে থার্মাল থ্রটলিং বলে। কার্যকর কুলিং সিস্টেম দ্রুত এই তাপমাত্রা কমিয়ে এনে নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নত পারফরম্যান্সের লেভেল বজায় রাখতে পারে। ফলে মাল্টিটাস্কিং করা সহজ হয়, সফটওয়্যারগুলো দ্রুত কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাও ভালো হয়।

স্থায়িত্ব ও জীবনকাল

ল্যাপটপের সিপিউ ও জিপিউ’র মতো অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো বেশ তাপ সংবেদনশীল। সময়ের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এসব উপাদানের ক্ষতি হয়। এতে ডিভাইসের নির্ভরযোগ্যতা কমে যায় এবং জীবনকালও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। এক্ষেত্রে একটি ভালো কুলিং সিস্টেম দক্ষতার সঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অকালে হার্ডওয়্যার নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এমন সক্রিয় ব্যবস্থা ল্যাপটপের জীবনকাল বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের আর্থিক লোকসানও কমিয়ে আনে।

পরিবেশবান্ধব

তাপমাত্রা বেশি হলে ফ্যানকে আরও বেশি কাজ করতে হয়, ফলে আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। ল্যাপটপে সার্বক্ষণিক ফ্যানের ব্যবহার কমিয়ে কার্যকরভাবে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে উন্নত কুলিং সিস্টেম। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, বিদ্যুৎ বিল কমে আসে এবং পরিবেশের সুরক্ষা হয়।

স্বস্তি এবং স্বাস্থ্য

ডিভাইসের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ল্যাপটপ ব্যবহার করা খুবই অস্বস্তিকর। বিশেষভাবে, যখন কোলের উপর রেখে ব্যবহার করতে হয় তা অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় এভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, ফ্যান অতিরিক্ত শব্দ করলে তা ব্যবহারকারীর মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটায়। ল্যাপটপ ঠান্ডা রেখে নিঃশব্দে কার্যক্রম বজায় রাখার মাধ্যমে এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনে আইস স্টর্ম ১.০-এর মতো অত্যাধুনিক কুলিং সিস্টেমগুলো।

তাই ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম শুধু ডিভাইসের পারফরম্যান্স ও জীবনকালের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ব্যবহারকারীর স্বস্তি, সুস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্যও এটি জরুরি।

ইনফিনিক্সের ইনবুক সিরিজের এক্স২ এবং ওয়াই২ প্লাস ল্যাপটপ দেশজুড়ে রায়ানস, স্টারটেক ও দারাজের মতো অনুমোদিত রিটেইলারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। ১৪ থেকে ২০ মার্চ রায়ানস-এর ব্র্যান্ড উইক চলাকালীন ইনফিনিক্স ল্যাপটপ কিনলেই ক্রেতারা পাবেন একটি পাওয়ার ব্যাংক, একটি মাউস প্যাড এবং ১০০০ টাকার শপিং ভাউচার।

আরও পড়ুন:
ল্যাপটপের বাইপাস চার্জিং প্রযুক্তি এখন স্মার্টফোনে
ওয়ালটনের ল্যাপটপ এক্সচেঞ্জ অফার শুরু
বিশ্বের সবচেয়ে স্লিম ১৩.৩ ইঞ্চির ওএলইডি ল্যাপটপ আনল আসুস
দেশে এসার ল্যাপটপ অ্যাসপায়ার ভেরো
দুই সিরিজ দিয়ে দেশে প্রথমবার ল্যাপটপ আনল শাওমি

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Due to the sudden shutdown Facebook lost 3 billion dollars

হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় ফেসবুকের ক্ষতি ৩০০ কোটি ডলার

হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় ফেসবুকের ক্ষতি ৩০০ কোটি ডলার ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ
শেষ পর্যন্ত জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নন, বরং ক্ষতির মুখে পড়েছিল কর্তৃপক্ষ। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময়ও নিতে হয়েছে বেশ।

হঠাৎ করেই যেন রাতের অন্ধকার নেমে এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারীদের জীবনে। আচমকা বিভ্রাটে পড়ে ভীত হয়ে পড়েন অনেকে।

তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নন, বরং ক্ষতির মুখে পড়েছিল কর্তৃপক্ষ। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময়ও নিতে হয়েছে বেশ।

এমন অবস্থায় ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম বন্ধ থাকায় কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, তা নিয়ে সূত্রের বরাতে তথ্য দিয়েছে সংবাদ প্রতিদিন।

প্রতিবেদন বলছে, প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিভ্রাটে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মেটা। সবমিলিয়ে ৩ বিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে আচমকাই অকেজো হয়ে পড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইউজারদের অ্যাকাউন্ট নিজে থেকেই লগ আউট হয়ে যায়।

পরে অবশ্য এক্সে এসে মার্ক জাকারবার্গ জানান, সার্ভার ডাউন। সেই কারণেই কাজ করছে না মেটার দুই প্ল্যাটফর্ম। তবে দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।
এর পরই মাস্ককে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ইলন মাস্কও অবাক হয়ে যাবেন এই ভেবে যে এক্স হ্যান্ডেলে আচমকা এত ভিড় কেন?

পাল্টা জবাব দিয়েছেন এক্সের মালিক মাস্কও। তিনি লেখেন, এই প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের মেসেজ লেখা যাচ্ছে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। কারণ আমাদের সার্ভার খুব ভালো চলছে।

আরও পড়ুন:
যে কারণে ফেসবুকে সমস্যা, উত্তর দিল ডিএমপি
ফেসবুক ঠিক হয়েছে
হঠাৎ লগআউট হচ্ছে ফেসবুক

মন্তব্য

p
উপরে