প্রাণ বলতে আমাদের প্রচলিত ধারণা একেবারেই আপেক্ষিক। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এই পৃথিবীরই আদিম পর্যায়ের প্রাণের আক্সিজেন চাহিদা ছিল বলতে গেলে শূন্য। সেই সময়ের প্রাণের নিদর্শন এখনো টিকে আছে আমাদের দেহের ভেতরেই। সেটি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর আদিম পর্যায়, এমনকি মহাবিশ্বের ভিনগ্রহেও প্রাণের অস্তিত্বের সূত্র বের করতে পারছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পৃথিবীতে এখনকার প্রাণীদের শরীরকাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছে কোটি কোটি বছর ধরে বদলে যাওয়া পৃথিবীর পরিবেশ। আর এ কারণে ভিনগ্রহে প্রাণের বিবর্তনটি হতে পারে একেবারেই আলাদা, সেখানকার পরিবেশ উপযোগী। ভিনগ্রহে প্রাণ বা এলিয়েন কেমন হতে পারে তার সূত্র লুকিয়ে আছে মানুষেরই চোখের ভেতরে।
অন্য গ্রহের প্রাণের সাধারণ নিদর্শন বা আদিকোষগুলো কেমন হতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করেছে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইড (ইউসি রিভারসাইড)। এই গবেষণা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ইউনিভার্স টুডে। সেটি অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
পৃথিবীতে প্রাথমিক জীবনের নিদর্শন ছিল এখনকার চেয়ে একেবারে আলাদা। এরপর কয়েক শ কোটি বছর আগে গ্রেট অক্সিজেনেশন ইভেন্ট (জিওই) আমাদের গ্রহটির বৈশিষ্ট্য একেবারেই বদলে দেয়। ওই ঘটনার ফলে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল ও জটিল প্রাণসহ একটি গ্রহে পরিণত হয় পৃথিবী।
জিওইর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অনেক আলাদা ছিল, যা তখনকার প্রাণ ও প্রাণের সক্রিয়তাকে পরিচালিত করেছে। শুরুর দিকের পৃথিবীর প্রাণের নিদর্শন বা আদিকোষগুলো কম শক্তির পরিবেশে বাস করত, যেখানে অক্সিজেনের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
সূর্যের রশ্মিই ছিল শক্তির একমাত্র উৎস এবং সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে বিবর্তিত হওয়ার আগে অণুজীব বা আদিকোষে সূর্যালোককে অন্যভাবে ব্যবহার করত।
রোডোপসিন নামের এক ধরনের প্রোটিন ব্যবহার করা হতো সৌরশক্তিকে ব্যবহারের জন্য। সালোকসংশ্লেষণের মতো একটি জটিল প্রক্রিয়ার চেয়ে এই প্রোটিন ব্যবহার করার পদ্ধতি ছিল অনেক সহজ।
এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক রিভিউ জার্নাল মলেকিউলার বায়োলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত ‘আর্লিয়েস্ট ফোটিক জোন নিশেজ প্রোবড বাই অ্যানসেস্ট্রাল মাইক্রলোবিয়াল রোডোপসিনস’ শীর্ষক এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসনের অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট বেতুল কাচার। দলের অন্যতম গবেষক ইউসি রিভারসাইডের অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট এডওয়ার্ড শোয়েইটারম্যান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘পৃথিবীর শুরুর দিকে, শক্তি খুব কম ছিল। ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় জটিল জৈবঅণু ছাড়াই কীভাবে সালোকসংশ্লেষণ করা যায় তা খুঁজে বের করেছিল।’
আদিকোষগুলোর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে রোডোপসিন কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। বিভিন্ন প্রাণীতে এর অস্তিত্ব এখনও দেখা যায়। এমনকি আমাদের চোখের রড কোষে রয়েছে রোডোপসিন। এটি কম আলোতে আমাদের দেখতে সহায়তা করে।
এ ছাড়া এই প্রোটিন এখনও লবণাক্ত হ্রদে আদিপ্রাণ বা এককোষী প্রাণীতে উপস্থিত। আধুনিক পৃথিবীতে এসব প্রাণের উপস্থিতি রোডোপসিনের বিবর্তনীয় ঐতিহাসিক সংযোগ আমাদের সামনে উপস্থাপন করে।
গবেষকরা মেশিন লার্নিং ও প্রোটিন সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করে সেই সংযোগটি খুঁজেছেন। তারা বলছেন, পৃথিবীর বর্তমান জীব ও বায়ুমণ্ডল দেখে অন্য গ্রহে জীবনের ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের বর্তমান বায়ুমণ্ডল অক্সিজেন-সমৃদ্ধ, তবে কিছু গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রথম দিকের বায়ুমণ্ডল বর্তমান কালের শুক্র গঘের মতো হতে পারে।
রোডোপসিন কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে সেটি পর্যালোচনা করে গবেষকেরা প্রোটিনটির একটি ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করেছেন। এর মাধ্যমে ২৫০ থেকে ৪০০ কোটি বছর আগের রোডোপসিন পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়েছে।
যেসব গ্রহ বা গ্রহের চাঁদে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল আছে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। বায়ুমণ্ডলের নির্দিষ্ট কিছু অণু জৈব-মার্কার হতে পারে, তবে সহজ ও আদি প্রাণকে জানতে আমাদের বিশদভাবে সৃষ্টির সময়কার পৃথিবীর প্রাথমিক বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
বেতুল কাচার বলেন, ‘প্রাণকে আমরা এখন যেভাবে দেখি সেটি আসলে আমাদের গ্রহের বর্তমান অবস্থারই একটি প্রকাশভঙ্গি। আমরা একটি অণুর প্রাচীন ডিএনএ ক্রমকে পুনরুত্থিত করেছি। এটি আমাদেরকে অতীতের জীববিজ্ঞান ও এর পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ খোঁজায় সহায়তা করেছে।’
এ দলের গবেষণা বর্তমানে প্রচলিত জিনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সমান্তরাল। বর্তমানে ডিএনএ থেকে আমরা কোথা থেকে এসেছি সে সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। তবে দলের মূল কাজটি এর চেয়ে অনেকটাই জটিল।
শোয়েইটারম্যান বলেন, ‘বিষয়টা অনেকটা এমন যে, নাতি-নাতনির ডিএনএ থেকে তাদের দাদা-দাদির ডিএনএ তৈরি করা। তবে পার্থক্য হলো, আমরা দাদা-দাদির বদলে বিশ্বজুড়ে কয়েক শ কোটি বছর আগে থাকা ক্ষুদ্র প্রাণ তৈরির চেষ্টা করছি।’
প্রাচীন ও আধুনিক রোডোপসিনের আলোক শোষণের ক্ষমতায় পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। জিনগত পুনর্গঠন বলছে, প্রাচীন রোডোপসিন প্রাথমিকভাবে নীল ও সবুজ আলো শোষণ করত। আর আধুনিক রোডোপসিন নীল, সবুজ, হলুদ ও কমলা আলো শোষণ করে। এই তফাত পর্যালোচনা করে গবেষকেরা প্রাচীন ও আধুনিক পৃথিবীর পরিবেশগত পার্থক্য খুঁজেছেন।
জিওইর আগে পৃথিবীতে কোনো ওজন স্তর ছিল না। এটি সৃষ্টি হয় ২০০ থেকে ২৪০ কোটি বছর আগে। বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়া ওজন তৈরি হতে পারে না। আর ওজন স্তর না থাকার মানেই হলো আদিম পৃথিবীর জীবের ওপর অনেক বেশি অতিবেগুনি রশ্মি পড়ত। বর্তমানে পৃথিবীতে আসা ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ অতিবেগুনি রশ্মি শুষে নেয় ওজন স্তর।
গবেষকদের মতে, প্রাচীন রোডোপসিনের নীল ও সবুজ আলো শুষে নেয়া এবং হলুদ ও কমলা আলো শুষে না নেয়ার অর্থ হচ্ছে, তখন এই প্রোটিন ব্যবহার করা প্রাণ বা আদিকোষ পানির বেশ খানিকটা গভীরে বাস করত।
পৃথিবীতে জিওইর পর ওজন স্তর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ শুরু করলে রোডোপসিন বিবর্তিত হয়ে আরও বেশি আলো শোষণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ কারণেই আধুনিক রোডোপসিন নীল ও সবুজ আলোর সঙ্গে হলুদ ও কমলা আলো শোষণ করতে সক্ষম।
আধুনিক রোডোপসিন আলো শোষণ করতে পারে, যা সালোকসংশ্লেষণকারী ক্লোরোফিল রঞ্জক করতে পারে না। বিবর্তনের ধারায় আধুনিক রোডোপসিন ও সালোকসংশ্লেষণ বিভিন্ন আলো শোষণ করে একে অপরের পরিপূরক হয়েছে। তবে এরা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ও স্বাধীন প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
শোয়েইটারম্যান বলেন, ‘এর থেকে সহবিবর্তনের ধারণা পাওয়া যায়, যেখানে এক কোষের শুষে নেয়া আলো আরেক কোষ শোষণ করে না। এর কারণ হতে পারে, রোডোপসিন আগে বিবর্তিত হয়েছে এবং সবুজ আলোকে শোষণ করা শুরু করেছে। ক্লোরোফিল পরে এসে বাকি আলো শুষে নেয়া শুরু করে। অথবা ঘটনা এর বিপরীতও হতে পারে।’
পৃথিবীর আদি প্রাণের ধরন ও বৈশিষ্ট্য এর ভূ-স্তরের সঙ্গে জড়িত। গবেষকরা নিয়মিত প্রাচীন শিলাখণ্ড নিয়ে গবেষণা করে বোঝার চেষ্টা করেন, আদি পৃথিবীতে কীভাবে প্রাণের বিকাশ ঘটেছিল ও বিবর্তিত হয়েছিল। তারা সূর্যের আচরণও পর্যবেক্ষণ করেন। তারা পরীক্ষা করেন, শুরু থেকে প্রতিনিয়ত কী পরিমাণ সৌরশক্তি পৃথিবীতে আসছে। এটি অনুসন্ধানে এখন তাদের হাতে নতুন একটি উপায় রয়েছে।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রাণীর মধ্যে এনকোড করা তথ্য ভূতাত্ত্বিক ও নাক্ষত্রিক প্রভাব কমিয়ে আমাদের এই গ্রহের বাসযোগ্যতা ধরে রাখার পদ্ধতি সম্পর্কে অভিনব তথ্য প্রদান করতে পারে।’
রোডোপসিনের কাজটা আসলে কী?
আদি প্রাণের ক্ষেত্রে রোডোপসিন এক ধরনের প্রোটন পাম্প হিসেবে কাজ করত। প্রোটিন পাম্প আদি প্রাণের জন্য শক্তি গ্র্যাডিয়েন্ট তৈরি করে। সালোকসংশ্লেষণ থেকে এর ধরন কিছুটা আলাদা। এটি জীবের বেঁচে থাকার জন্য রাসায়নিক শক্তি উত্পাদন করে।
একটি প্রোটন পাম্প ও শক্তি গ্র্যাডিয়েন্ট কোষের ঝিল্লি জুড়ে বৈদ্যুতিক রাসায়নিক সংযোগের পার্থক্য তৈরি করে। এটি একটি ব্যাটারির মতো, কারণ গ্র্যাডিয়েন্ট পরবর্তী ব্যবহারের জন্য শক্তি সংরক্ষণ করে।
গবেষক দলের দাবি, তারা জৈব অণুতে এনকোড করা তথ্য প্রাচীন যুগে টিকে থাকা প্রাণ ও এখনকার জীবাশ্মের আদি প্রাণকে বোঝার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোকে তারা পেলিওসেন্সর নামে অভিহিত করছেন।
গবেষকরা আদি রোডোপসিনকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সিনথেটিক জীববিজ্ঞান কৌশল ব্যবহার করতে চেয়েছেন। তারা দেখতে চেয়েছেন, কীভাবে রোডোপসিন পৃথিবীর প্রাচীন বায়ুমণ্ডল গঠনে সাহায্য করেছে ও কীভাবে তারা দূর গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে পরিবর্তন করতে পারে।
কাচার বলেন, ‘আমরা আধুনিক জিনোমের মধ্যে থাকা প্রাচীন ডিএনএর পরিবর্তন করেছি। লাখ লাখ বছর আগে তাদের আচরণ অনুযায়ী তাদের পরিবর্তন করা হয়েছে। পরীক্ষাগারে টাইম-ট্র্যাভেল গবেষণার জন্য রোডোপসিন দারুণ সহায়ক।’
পৃথিবীর আদি প্রাণ ও বায়ুমণ্ডলের কিছু প্রমাণ লুকিয়ে আছে, গবেষক দলটির কিছু পদ্ধতি সে প্রমাণ অনুসন্ধানের বাধা দূর করছে।
কাচার বলেন, ‘আমাদের গবেষণা থেকে প্রথমবারের মতো দেখা যাচ্ছে যে, এনজাইমের বৈশিষ্ট্য বিবর্তনশীল পুনর্গঠনের প্রতি সংবেদনশীল, কিন্তু একই ধাঁচ প্রচলিত আণবিক বায়োসিগনেচার সমর্থন করে না।’
প্রাচীন পৃথিবী সম্পর্কে আমরা যত বেশি শিখব, তত বেশি আমরা অন্য বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারব। যদি একাধিক গ্রহে প্রাণের উদ্ভব সমর্থনের পরিবেশ থেকে থাকে তাহলে প্রতিটি গ্রহই সম্ভাব্য প্রাণকে ধারণের জন্য ভিন্ন পথ নিয়েছে। তবে এর জন্য দায়ী রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকবে। পৃথিবীতে জীব ও পরিবেশের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া যেমন রয়েছে, তেমন একটি ক্রিয়া অবশ্যই অন্যান্য গ্রহেও থাকতে হবে।
শোয়েইটারম্যান বলেন, ‘বর্তমান পৃথিবীর তুলনায় প্রাচীন পৃথিবী এক অচেনা গ্রহ। সময়ের সঙ্গে ও ভিন্ন পরিবেশে কীভাবে এখানে আদি প্রাণ পরিবর্তিত হয়েছে সেটা বুঝতে পারলে অন্য গ্রহেও প্রাণের সন্ধান করা সহজ হবে।’
আরও পড়ুন:পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল গোটা একটি শহর। রোমান সাম্রাজ্যের ওই শহরের নাম ‘আয়নারিয়া’। সে ১৮০ সালের কথা। প্রায় দুই হাজার বছর পর এসে হারিয়ে যাওয়া শহরটির সন্ধান মিলেছে। বহু পরিশ্রম করে সাগরতলে শহরটি খুঁড়ে বের করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। পর্যটকেরা এখন ডুব দিয়ে দেখে আসতে পারেন শহরটির প্রাচীন সব নিদর্শন।
পানির নিচে খুঁজে পাওয়া শহরটির অবস্থান ইতালির ইসকিয়া দ্বীপের উপকূলে। ডুবসাঁতার ছাড়াও তলদেশে কাচ লাগানো নৌযানে চেপে শহরটির রোমান স্থাপনাগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখা যাবে। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে রোমানদের ব্যবহৃত বড় পাত্র, মোজাইক, মুদ্রা, একসময় সাগরের তীরে গড়ে তোলা বাসাবাড়ির অংশ—এমনকি রোম সাম্রাজ্যের বাসিন্দাদের তৈরি কাঠের একটি নৌকাও।
শহরটির অস্তিত্ব নিয়ে প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় সত্তরের দশকে। ইসকিয়ার উপকূলে মাটির পাত্রের কিছু অংশ পেয়েছিলেন কয়েকজন ডুবসাঁতারু। তখন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কিছু অনুসন্ধানও চালিয়েছিলেন। তবে কাজ এগোয়নি। পরে ২০১১ সালে স্থানীয় কয়েকজন নাবিক ও ইতিহাসপ্রেমী আবার অনুসন্ধান শুরু করেন। তাঁদের হাত ধরেই খোঁজ মেলে সাগরের তলদেশের ২ মিটার নিচে থাকা শহরটির।
খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০ শতকের দিকে ইসকিয়া গ্রিক সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ শতকে দ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে নেয় রোমানরা। নাম দেওয়া হয় আয়নারিয়া। ধারণা করা হয়, ১৮০ সালে আগ্নেয়গিরির লাভায় তলিয়ে গিয়েছিল শহরটি। এরপর ধীরে ধীরে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়।
এর আগে ৭৯ সালে অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের পম্পেও নগরী। এই শহর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলেও আয়নারিয়ার ধ্বংসের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ভারতের বিহারে ‘ডাইনি বিদ্যা চর্চার’ অভিযোগে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর দেহগুলো পুড়িয়েও দেওয়া হয়। তবে তাদের কাউকে জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না, তা তদন্ত করছে পুলিশ। গত রোববার রাতে পূর্ণিয়া জেলার তেতগামা গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ণিয়া জেলার তেতগামা গ্রামটি মূলত ওরাঁও আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসতি। সদর পূর্ণিয়ার সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) পঙ্কজ কুমার শর্মা বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি পাঁচজনকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। তারা জীবিত অবস্থায় পুড়েছিলেন, নাকি মৃত্যুর পর আগুন দেওয়া হয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, নিহত পরিবারের ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর সেদিন বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। সে আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। পরে সে পুলিশকে খবর দেয় এবং চারজন প্রধান অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করে। এদের মধ্যে তিনজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসডিপিও শর্মা বলেন, চারজনের নাম এফআইআরে রয়েছে। তিনজনকে ধরা হয়েছে। তবে আমরা মনে করছি, পুরো গ্রামই হয়তো এ ঘটনায় জড়িত। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, ‘ঝাড়ফুঁক’ বা লোকজ চিকিৎসা নিয়ে বিরোধ থেকেই এ হামলা হয়েছে। নিহত বাবুলাল ওরাঁও এসব চর্চা করতেন বলে জানা গেছে।
কয়েকদিন আগে একই গ্রামের রামদেব ওরাঁওয়ের পরিবারে একটি শিশুর মৃত্যু হয় এবং আরেকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই বাবুলালের পরিবারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।
এ ঘটনার বিষয়ে বিরোধীদল আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, পূর্ণিয়ায় একই পরিবারের পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিহারে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। রাজধানীতে কেউ জবাবদিহির দায়িত্ব নিচ্ছে না। পূর্ণিয়া থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রাজেশ রঞ্জন বলেন, আমরা যখন মঙ্গলে যাচ্ছি, তখন এখানকার মানুষ ডাইনি সন্দেহে গণহত্যা চালাচ্ছে- এটা লজ্জার।
বিহার কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমার বলেন, বিহারে গরিব, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউই নিরাপদ নয়। এটি স্পষ্টত জঙ্গলরাজ।
পাকিস্তানের লাহোরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে দেওয়াল টপকে এক নারী ও দুটি শিশুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে একটি পোষা সিংহ। পরে সেটির মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাঁচ ও সাত বছর বয়সী শিশু দুটিসহ আক্রান্ত ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জোহান শহরের একটি গ্রামের খামারবাড়ি থেকে সিংহটি পালিয়ে যায়। এরপর একটি গলির মোড়ে ওই নারী ও শিশুদের আক্রমণ করে।
শহরের নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, লাফ দিয়ে একটি কংক্রিটের দেওয়াল পার হচ্ছে সিংহটি। এরপর পেছন থেকে এক নারীর ওপর আক্রমণ করে মাটিতে ফেলে দিয়েছে সেটি। তখন ওই খামারবাড়ি থেকে এক ব্যক্তিকে লাঠি হাতে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
তিনি সিংহটির কবল থেকে ওই নারীকে রক্ষা করেন। লোকটির তাড়া খেয়ে ছুটে সামনের সড়কে গিয়ে শিশুদুটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি।
সিংহের আক্রমণে শিশুরা মুখমণ্ডল ও বাহুতে আঘাত পেয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)। তারা বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে লাহোর পুলিশ জানিয়েছে, খামারবাড়িতে একটি উন্মুক্ত খাঁচা থেকে সিংহটি পালিয়ে যায়। পরে এটিকে ধরে নিয়ে আসেন এর মালিক। বন্য প্রাণীটিকে একটি গাড়িতে তুলে অন্য একটি জেলায় পালিয়ে যান তিনি।
লাহোর পুলিশ অপারেশনসের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ ফয়সাল কামরান বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সিংহটিকেও ধরে এনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সিংহ পোষার বৈধ অনুমোদন ছিল না ওই ব্যক্তির। পাকিস্তানের বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে তার বিচার করা হবে। এতে তার সাত বছরের কারাদণ্ড কিংবা সাড়ে সতেরো হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
পাঞ্জাবের বন্যপ্রাণী ও পার্ক বিভাগের প্রধান রেঞ্জার সৈয়দ কামরান বুখারি বলেন, ‘আটক তিনজনকেই কঠিন সাজার মুখোমুখি হতে হবে। এভাবে বন্যপ্রাণী আটকে রাখা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।’
পাকিস্তানে বন্যপ্রাণী পোষা মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটিতে বন্যপ্রাণী পোষা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, তবে তার জন্য অনুমোদন নিতে হয়। আর সিংহের মতো বড় কোনো বন্যপ্রাণী পুষতে হলে তা শহরের বাইরে করতে হবে বলে নিয়ম রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কুখ্যাত খুনিদের একজনের চামড়ায় বাঁধানো একটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে একটি জাদুঘরের কার্যালয়ে। ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে সাফোকের পোলস্টিডে রেড বার্ন গুদামঘরে প্রেমিকা মারিয়া মার্টেনকে খুন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন উইলিয়াম কর্ডার নামের এক ব্যক্তি। তার চামড়া দিয়েই বইটি বাঁধানো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাফোকের ময়সেস হল মিউজিয়ামে এই বই একইরকম অন্য আরেকটি বইয়ের সঙ্গে প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হেরিটেজ কর্মকতা ড্যান ক্লার্ক বলেছেন, এই বইগুলোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাছাড়া, মানুষের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রেখে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।
‘হরিবল হিস্টোরিজ’ রচনা সমগ্রের লেখক টেরি ডেয়ারি অবশ্য এই প্রত্নবস্তুগুলো বীভৎস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এমন দুটো বই-ই তিনি পুড়িয়ে ফেলতে চান।
সাফোকের পোলস্টিডে ১৮২৭ সালের ওই খুনের ঘটনা জর্জিয়ান ব্রিটেনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। তখন থেকেই ঘটনাটি বহু সিনেমা, বই, নাটক এবং লোকগীতির বিষয়বস্তু হয়ে আছে।
সবচেয়ে বেশি চাউর হয়েছে কর্ডারের সঙ্গে মার্টেনের প্রেমকাহিনীর সংস্করণ। এই কাহিনীতে বলা আছে, কর্ডার রেড বার্ন -এ দেখা করার জন্য আসতে বলেছিলেন প্রেমিকা মার্টেনকে।
সেখান থেকে পালিয়ে একটি শহরে গিয়ে তারা বিয়ে করবেন বলেও জানিয়েছিলেন কর্ডার। কিন্তু সেই রেড বার্নেই মার্টনকে গুলি করে খুন করেন কর্ডার এবং খড়ের গাদায় পুঁতে দেন লাশ।
১৮২৮ সালের ১১ আগস্ট কর্ডার ধরা পড়েন এবং প্রকাশ্যেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃতদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা হয় বই। সেই বইয়ে লিপিবদ্ধ ছিল কর্ডারের বিচারের কাহিনি।
১৯৩৩ সালে বইটি জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়করা ক্যাটালগ দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন সেখানে আরেকটি বই রয়েছে যেটি এত দিন চোখে পড়েনি।
সেই বইটি জাদুঘরে দান করেছিল একটি পরিবার, যাদের সঙ্গে কর্ডারের দেহ কাটাছেঁড়া করার সার্জনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। বইটি জাদুঘরের গুদামে ছিল না, বরং ছিল কার্যালয়ের বইয়ের শেলফে অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে।
কিন্তু বইটি বাঁধাই করা ছিল অনেক বেশি সনাতনী উপাদান দিয়ে। হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলেন, জাদুঘরে হারানো বই আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেটি দশকের পর দশক ধরে দেখা হয়নি।
কর্ডারের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইয়েরর সঙ্গে দ্বিতীয়টির কিছুটা পার্থক্য আছে। প্রথম বইয়ের চামড়ার মলাট অনেকটাই পূর্ণাঙ্গ। আর দ্বিতীয় বইয়ের কেবল বাঁধাইয়ের জায়গা এবং কোনাগুলোতে চামড়া লাগানো আছে।
মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাই করা ‘এনথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’ নামে পরিচিত। ‘হরিবল হিস্টোরিজ’-এর লেখক টেরি ডেয়ারির মতে, একজন মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার চেয়েও জঘন্য কাজ হচ্ছে মৃত্যুর পর তার দেহ ছিন্নভিন্ন করা। চামড়া দিয়ে বই বাধাঁনো আরও বাড়াবাড়ি।
তবে হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলছেন, ‘দেশজুড়ে প্রতিটি জাদুঘরেই আমরা মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পাই।’
সূত্র: বিডিনিউজ
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালের সন্ধান পেয়েছেন একদল গবেষক। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে তিনশ’ বছরেরও বেশি পুরনো প্রবালটি খুঁজে পান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। দৈর্ঘ্যে ১১১ ফুট ও প্রস্থে ১০৪ ফুট প্রবালটির আকার একটি পূর্ণবয়স্ক নীল তিমির চেয়েও বড়।
ধারণা করা হচ্ছে, এক বিলিয়নের বেশি ক্ষুদ্র প্রাণী ও জলজ অণুজীবের উপস্থিতি রয়েছে প্রবালটিতে। এর মাধ্যমে জলজ প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই বিশাল প্রবাল। সদ্য আবিষ্কৃত এই জলজ বিস্ময়টি এখন পর্যন্ত জানা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক প্রবাল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোরাল বা প্রবাল এক ধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বছরের পর বছর ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে, পুঞ্জিভূত হয়ে গঠিত হয় বিশাল প্রবাল প্রাচীর। সঙ্গে যুক্ত হয় শৈবাল, মৃত জলজ প্রাণীর দেহাবশেষ ও পলিপ। সব মিলিয়ে জীবন্ত প্রাণীর তৈরি এক আশ্চর্য স্থাপনা এই প্রবাল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র্য। আজারবাইজানের বাকুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এর মধ্যেই, সমুদ্র তলদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করতে বৈজ্ঞানিক অভিযান চালায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
অনেকটা দৈবক্রমেই প্রবালটি আবিষ্কার করেন ন্যাট জিও’র ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে স্বচ্ছ পানিতে ছেলেকে নিয়ে ডুব দেন তিনি। প্রথমে এটিকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মনে করে এগিয়ে গেলেও পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বুঝতে পারেন জীবন্ত প্রাণীদের তৈরি অসামান্য সৌন্দর্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন তিনি।
গবেষকদের ধারণা, বিশ্বের বৃহত্তম জলজ প্রাণী নীল তিমির চেয়েও আকারে অনেকটা বড় এই প্রবাল।
এতোদিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়াতে থাকা ‘বিগ মামা’ প্রবালটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিল। তবে নতুন সন্ধান পাওয়া প্রবালটি ‘বিগ মামা’র চেয়েও প্রায় তিন গুণ বড়। ৩৪ মিটার দীর্ঘ প্রবালটি এতটাই বিশাল যে ধারণা করা হচ্ছে, মহাকাশ থেকেও দেখা যাবে এটি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে একজনের দান করা দুটি ড্রাগন ফল ৪৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রির হয়েছে।
উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে লিপু সুলতানা চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি দুটি ড্রাগন ফল মাদ্রাসায় দান করেন। মধ্যরাতে মাহফিলের শেষ বক্তা শায়খুল হাদিস মুফতি মুশাহিদ আলী ক্বাসেমী ড্রাগন ফল দুটি প্রকাশ্যে নিলামে তোলেন। নিলামের একপর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে ফল দুটি কিনে নেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আলহাজ আলমগীর চৌধুরী।
ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে অংশ নেয়া শ্রোতারা জানান, মাহফিল শেষে দোয়ার আগে ড্রাগন ফল দুটি নিলামে তোলা হয়। দুই হাজার টাকা থেকে নিলাম শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা।
পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল হাফিজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাদ্রাসার ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী টিপু সুলতান চৌধুরী দুটি ড্রাগন ফল দান করেন। পরে এই দুটি ফল নিলামে তোলা হলে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
‘মূলত এই ফল এত দামে বিক্রি হওয়ার কারণ হলো মাদ্রাসায় সহযোগিতা করা। যিনি ফল কিনেছেন, তিনি হলেন আমাদের মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।’
আরও পড়ুন:কুয়াকাটা সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসার পর এবার পটুয়াখালীর একটি জলাশয় পাওয়া গেল জীবিত ডলফিন।
কলাপাড়া উপজেলার জালালপুর গ্রামে আন্ধারমানিক নদী-সংলগ্ন জলাশয়ে বোটলনোজ প্রজাতির একটি জীবিত ডলফিনটি পাওয়া যায়। এটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ দেড় ফুট।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন আন্ধারমারিক নদীর মোহনায় অবমুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কলাপাড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা।
এসময় ডলফিনটিকে এক নজর দেখতে জলাশয়ের দুপাড়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা জানান, শেষ বিকেলে আন্ধারমানিক নদী থেকে ডলফিনটি ভাসতে ভাসতে ওই জলাশয়ে প্রবেশ করে। পরে খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক এবং ওয়ার্ল্ড ফিশ ইকোফিশ-২ এর সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতির পরামর্শ অনুযায়ী ডলফিনটিকে উদ্ধার করে নিবিড় পর্যক্ষণে রেখে খাবার দিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন অ্যানিম্যাল লাভার্স অফ পটুয়াখালীর সদস্য ও মো. সুজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে অবমুক্ত করেন।
আল মুনজির বলেন, ‘জেলেদের জালে আটকে ডলফিনটি আহত হয়। আমাদের ধারণা, পরে পথভ্রষ্ট হয়ে এটি আন্ধারমানিক নদী হয়ে জলাশয়ে ঢুকে পড়ে।’
এর আগে কখনও দক্ষিণাঞ্চলে জীবিত ডলফিন ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য