যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ক্রিপ্টো ফার্ম ‘হারমনি’ থেকে ১০ কোটি ডলারের (৯৩০ কোটি টাকা) ডিজিটাল মুদ্রা চুরি হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যাকাররা প্রতিষ্ঠানটির ব্লকচেইনের মাধ্যমে ক্রিপ্টো স্থানান্তর করার সফটওয়্যার ‘ব্রিজে’ আঘাত করেছে।
হারমনি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, চুরির ঘটনায় অপরাধীকে শনাক্ত করতে, চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনতে জাতীয় কর্তৃপক্ষ ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করছে তারা।
হ্যাকিংয়ের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিপ্টো সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
লন্ডনভিত্তিক ব্লকচেইন অ্যানালিটিক্স ফার্ম এলিপটিক বলছে, শুধু ২০২২ সালেই বিভিন্ন ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠানের ব্রিজ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে।
এর আগে মার্চে অনলাইনে জনপ্রিয় ক্রিপ্টো গেম এক্সি ইনফিনিটির মূল প্রতিষ্ঠান স্কাই ম্যাভিসের নিজস্ব ওয়ালেট রোনিন নেটওয়ার্কে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় ৬২ কোটি ডলার চুরি করে নিয়েছিল হ্যাকাররা। সেখানে এখনও ঝুঁকিতে আছে হাজার হাজার গেমারের অর্থ।
এদিকে গত বছর ৬০ কোটি ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাক হয় ‘পলি নেটওয়ার্ক’ থেকে। ‘পলি নেটওয়ার্ক’ হলো অনলাইনে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের সেন্ট্রালাইজড প্ল্যাটফর্ম। যদিও এই ঘটনার পর হ্যাকার অর্থ ফেরত দেয়।
এক্সি ইনফিনিটির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই বলছে, ‘অনুসন্ধানে তারা নিশ্চিত হয়েছে উত্তর কোরিয়াভিত্তিক হ্যাকিং গ্রুপ ল্যাজারাস এই চুরির জন্য দায়ী।’
ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক প্রযুক্তির খরচ জোগাতেই এই ধরনের চুরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাইবার আক্রমণ চালিয়ে চুরি করা ক্রিপ্টো সম্পদ দিয়েই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ব্যয় মেটায় উত্তর কোরিয়া।
সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচানোর শতভাগ নিশ্চিত কোনো উপায় নেই। তবে সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে যেই এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করা হবে তার ইতিহাস ও সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে তারা কত দ্রুত সাড়া দেয়, তা দেখা বাঞ্ছনীয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশটির হ্যাকাররা সাইবার আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার (৫০ মিলিয়ন ডলার) ডিজিটাল সম্পদ চুরি করে। তাদের সাইবার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার তিনটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময় ও কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাকারদের প্রধানত দুই ধরনের টার্গেট থাকে। একটি সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ ও অন্যটি ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্স। সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জগুলোয় একজন ব্যবহারকারী তার ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা ও কেনাবেচা করতে পারেন।
পোলোনিক্স, বাইনান্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ সুবিধা দেয়।
ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্সে সাধারণত একজন ব্যবহারকারী নিজের ডিভাইসটিতেই অর্থ জমা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘মেটামাস্কের’ মতো ইথারিয়াম ওয়ালেটগুলো জনপ্রিয়।
ক্রিপ্টো হেডের প্রতিষ্ঠাতা এডাম মরিস বলেন, যদি হ্যাকাররা ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করতে সক্ষম হয়, তারা মুহূর্তের মধ্যেই অর্থ উত্তোলন করতে পারে নিজের কোনো অস্তিত্ব জানান না দিয়েই।
তবে হ্যাকারদের কবল থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করতে হয়, সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন ক্রিপ্টোক্রাইম অ্যানালিস্ট জন ম্যাকগিল।
তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচানোর শতভাগ নিশ্চিত কোনো উপায় নেই। তবে সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে যেই এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করা হবে তার ইতিহাস ও সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে তারা কত দ্রুত সাড়া দেয়, তা দেখা বাঞ্ছনীয়।
আরও পড়ুন:আগের দামেই টুইটার কিনছেন ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনীর এমন সিদ্ধান্তের পর বেড়েছে টুইটার ও টেসলার শেয়ার। এবার তার এই সিদ্ধান্তে দাম বাড়ছেই ক্রিপ্টোকারেন্সি ডজকয়েনের।
কয়েক মার্কেট ক্যাপের তথ্য মতে, টুইটার কেনার সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত ডজকয়েনের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশেরও বেশি।
তবে পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি ক্রিপ্টোকারেন্সিরও দাম বেড়েছে। বিটকয়েন, ইথারিয়াম, বিএনবি, সোলানার মতো মুদ্রার দাম বাড়লে ইনভেস্টিংয়ের তালিকায় প্রধান ১০টি মুদ্রার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ডজকয়েনই।
মিমির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এই কয়েনের একজন সমর্থক ইলন মাস্ক। তিনি নিজেকে ডজফাদার বলে দাবি করেন।
টেসলা কিছু পণ্য ও সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে ডজকয়েনে কেনার সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে ডজকয়েনের দাম রয়েছে ৬.৫২ সেন্ট। ক্রিপ্টোকারেন্সিটির মার্কেট ক্যাপিং রয়েছে ৮.৬৪ বিলিয়ন ডলার।
মিমকয়েন হিসেবে যাত্রা শুরু করা ডজকয়েন ক্রিপ্টো মার্কেটে শীর্ষ তিনে উঠে আসে ইলন মাস্কের টুইটারের পর। সে সময় ৮০ সেন্টের কাছাকাছি দাম চলে যায় ডজকয়েনের। গত বছর ডজকয়েনকে তিনি চাঁদে পাঠানোরও ঘোষণা দেন।
সাটারডে নাইট লাইভে ইলন মাস্ক ডজকয়েনকে হ্যাসেল বলার পর তার দাম কিছুটা পড়ে যায়। ক্রিপ্টো মুদ্রার তালিকায় বর্তমানে এর অবস্থান ১০-এ।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা তার কিনে রাখা বিটকয়েনের অধিকাংশই বিক্রি করে দিয়েছে। তবে কোনো ডজকয়েন বিক্রি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মাস্ক।
টেসলাও এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তাদের কাছে থাকা বিটকয়েনের ৭৫ শতাংশকে ফিয়াট কারেন্সিতে পরিণত করা হয়েছে।
ডজকয়েনের যারা ভক্ত, অনুসারী ও বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তাদের আশা, টুইটারের সার্ভিসগুলোর পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে ডজকয়েনকে রাখা হবে। সে ক্ষেত্রে ডজকয়েনের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন:আমেরিকার সুপার মডেল বেলা হাদিদের পা এবার ক্যাটওয়াক থেকে মেটাভার্সে এসে পড়েছে। সেখানে নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের জন্য তার দরকার ছিল এনএফটি অ্যাভাটার।
বেলার মুখ ও শরীরের থ্রিডি স্ক্যানের ওপর ভিত্তি করে CY-B3LLA নামে মেটাভার্স উপযোগী নন ফাঞ্জিবল টোকেনের সিরিজ করা হয়েছে।
২৫ বছর বয়সী বেলা নিউ ইয়র্ক থেকে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ভার্চুয়াল দুনিয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন এবং কোভিড লকডাউনে তিনি ভিডিও গেমগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়েন। সে সময় তিনি নিজের ভিডিও গেমের চরিত্রের মতো কুল সংস্করণ (অ্যাভাটার) তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
বেলা হাদিদের সিরিজ এনএফটি-গুলো তৈরি করেছে ১০টি দেশের ডিজিটাল আর্টিস্টরা।
তবে এই এনএফটিগুলো ঠিক কবে নাগাদ নিলামে তোলা হবে কিংবা আদৌ হবে কি না তা জানাননি বেলা।
মেটাভার্স নিয়ে আশাবাদী বেলা বলেন, ‘আসছে মাসগুলোতে আমরা একটি নতুন মেটা নেশন তৈরি করব, যেখানে থাকবে সত্যিকার স্থাপনা, হবে অনুষ্ঠানের আয়োজন। যেখানে আমি আপনাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করতে পারব।’
এনএফটি কী?
এনএফটির পূর্ণরূপ ‘নন ফাঞ্জিবল টোকেন’। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইমিউটেবল লেজারে যুক্ত হওয়ায় এনএফটি যেকোনো ডিজিটাল অ্যাসেটের ওপর একজন ব্যক্তির নিরঙ্কুশ মালিকানা দেয়।
ইমিউটেবল লেজার বলতে বোঝায় অপরিবর্তনীয় লেজার। এতে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটানো প্রায় অসম্ভব। এই পদ্ধতিতে ডিজিটাল আর্টকে কপি করা অসম্ভব হয়ে যায়। আপনি অবশ্যই কোনো কিছু নকল করতে পারেন, তবে সেটি আর যাই হোক, পুরোপুরি আগেরটির মতো হবে না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির দ্য লাস্ট সাপারের হুবহু নকল একটি ছবি কেনা যেতে পারে। তবে তা আর যাই হোক, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা মূল ছবিটি হবে না। সত্যিকার দ্য লাস্ট সাপারের দামও নকলের সমান হবে না।
আসছে মাসগুলোতে আমরা একটি নতুন মেটা নেশন তৈরি করব, যেখানে থাকবে সত্যিকার স্থাপনা, হবে অনুষ্ঠানের আয়োজন। যেখানে আমি আপনাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করতে পারব।
ঠিক তেমনি যখন একটি ডিজিটাল আর্টকে এনএফটি করা হয়, তখন সেটি একটি টোকেনে কনভার্ট হয়ে যায়। এরপর সেই ডিজিটাল আর্টে যদি এক মেগাপিক্সেলও পরিবর্তন করা হয়ে থাকে, সেটির টোকেন বদলে যাবে। কখনোই তা আগেরটির সঙ্গে মিলবে না।
এনএফটি হচ্ছে একটি দলিলের মতো। এটি ডিজিটাল দুনিয়ার যেকোনো কনটেন্টের ওপর ব্যক্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করে। ভিঞ্চির আঁকা ছবি নিয়ে কেউ জালিয়াতি করতে পারে, কিন্তু এনএফটি নিয়ে জালিয়াতি অসম্ভব।
এক কথায় এনএফটি হলো এমন একটি সম্পদ, যা ডিজিটাল দুনিয়ায় একটিই আছে। এটি অন্যান্য সম্পদের মতোই কেনাবেচা করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা তার কিনে রাখা বিটকয়েনের অধিকাংশই বিক্রি করে দিয়েছে। তবে কোনো ডজকয়েন বিক্রি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মাস্ক।
নিউজ এইটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেসলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা বিটকয়েনের ৭৫ শতাংশকে ফিয়াট কারেন্সিতে পরিণত করা হয়েছে।
টেসলার কাছে এখন ২১৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিটকয়েন রয়েছে।
গত বছর টেসলার বিটকয়েন কেনার ঘোষণার পরই এই ফ্লাগশিপ ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বৃদ্ধি পায়।
পরে বিটকয়েন মাইনিংয়ে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব থাকায় টেসলা কেনার ক্ষেত্রে বিটকয়েন ব্যবহার থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। সে সময় বিটকয়েনের দাম কমে যায়। পরে আবার দাম বৃদ্ধি পায়।
গত বছর প্রতি বিটকয়েনের দাম ৬৯ হাজার ডলার গেলেও বর্তমানে এর মূল্য ২৩ হাজার ডলারের কাছাকাছি। বিটকয়েনের বর্তমান মার্কেট ক্যাপিং ৪৩৮.৬১ বিলিয়ন ডলার।
শুধু বিটকয়েনে বিনিয়োগ নয়, ইলন মাস্কের ডজকয়েনেও বিনিয়োগ রয়েছে এবং নিজেকে ডজফাদার হিসেবে দাবি করেন ইলন মাস্ক। টেসলা বিটকয়েন থেকে সরে আসলেও ইলন মাস্ক বলেছেন, তিনি ডজকয়েনকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
টেসলা কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে জানুয়ারি মাস থেকে ডজকয়েনে কেনার সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে ডজকয়েনের দাম রয়েছে ৭ সেন্ট। বর্তমানে ডজকয়েনের মার্কেট ক্যাপিং রয়েছে ৯.২৩ বিলিয়ন ডলার।
মিমকয়েন হিসেবে যাত্রা শুরু করা ডজকয়েন ক্রিপ্টো মার্কেটে শীর্ষ তিনে উঠে আসে ইলন মাস্কের টুইটারের পর। সে সময় ৮০ সেন্টের কাছাকাছি দাম চলে যায় ডজকয়েনের। গত বছর ডজকয়েনকে তিনি চাঁদে পাঠানোরও ঘোষণা দেন।
সাটারডে নাইট লাইভে ইলন মাস্ক ডজকয়েনকে হ্যাসেল বলার পর তার দাম কিছুটা পড়ে যায়। ক্রিপ্টো মুদ্রার তালিকায় বর্তমানে এর অবস্থান ১০-এ।
আরও পড়ুন:ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করতে চায় বলে সোমবার পার্লামেন্টকে জানিয়েছে সরকার।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট বাজার ভারতে নতুন একটি ডিজিটাল সম্পদ হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়গুলোতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করে এমন কথা জানানো হয়েছে।
প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্র্যাঞ্চের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সোমবার ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ‘একটি দেশের আর্থিক এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রভাব’ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে এই খাতে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন তিনি।
সীতারমণ বলেন, ‘আইবিআই মনে করে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করা উচিত।’
সে সঙ্গে তিনি বলেছেন, ক্রিপ্টোর জন্য আইন প্রণয়নে প্রয়োজন হবে ‘উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।’
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভার সংসদ সদস্য থোলকাপিয়ান থিরুমাবলাভানের একগুচ্ছ প্রশ্নের জবাবে সরকার তাদের পক্ষ থেকে এসব যুক্তি দিয়েছে।
সীতারমণ বলেন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির সংজ্ঞা অনুসারে সীমানাহীন এবং নিয়ন্ত্রক সালিশ রোধ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। তাই নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার জন্য যেকোনো আইন শুধুমাত্র ঝুঁকি ও সুবিধার মূল্যায়ন। সেই সঙ্গে অভিন্ন শ্রেণিবিন্যাস ও মানদণ্ডের বিবর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরেই এটি কার্যকর থাকতে পারে।’
ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বোর্ড, রেগুলেটর বডি, ট্রেজারি অফিস এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ভারতের অন্তত ২০টি অর্থনৈতিক গ্রুপ চলতি মাসের শুরুর দিকে এই বছরের অক্টোবরের মধ্যে একটি শক্তিশালী আইনের প্রস্তাব করে।
সীতারমণের এসব মন্তব্যের পর দেশটিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জ দেখা যাবে বলে বলছেন অনেকেই।
বছরের শুরুতে ক্রিপ্টো ট্রেডিং সম্পর্কিত কর লেনদেন এবং মুনাফার বিষয়ে ভারতের পদক্ষেপকে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রুত বর্ধনশীল নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে শুরু করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ভারতীয় ব্যাংকগুলো শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের ভিন্ন ধরনের সংকেত পাঠায়।
ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান আর্মস্ট্রং, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ‘অনানুষ্ঠানিক চাপের’ কারণে এই বছরের শুরুতে কয়েনবেস ভারতে ট্রেডিং পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় কর আইনের কারণে স্থানীয় এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য ক্রিপ্টো সংস্থাগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রেডিংয়ের পরিমাণ খুব কমে গেছে।
এর আগে ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া, ১৮ বছর বয়সী লবি গ্রুপ ক্রিপ্টোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে এই খাতে অনেকটাই অনিশ্চিয়তা শুরু হয়। যার সবশেষ প্রতিফলন ভারতের পার্লামেন্টে দেখা গেল।
আরও পড়ুন:ওয়ান কয়েন দিয়ে বহু গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করা নিখোঁজ রুজা ইগনাতোভাকে এফবিআইয়ের শীর্ষ ১০ মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় রাখা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুলগেরীয় নারী রুজা ‘নিখোঁজ ক্রিপ্টোকুইন’ নামেও পরিচিত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘ওয়ান কয়েন’ ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতির জন্য তাকে খুঁজছে।
রুজা ইগনাতোভা ২০১৪ সালে ওয়ান কয়েন নামের একটি মুদ্রা নিয়ে আসেন। তিনি এই মুদ্রাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং এই মুদ্রা বিক্রি করে দেয়ার জন্য গ্রাহকদের কমিশন দেয়া শুরু করেন। ফলে তার মুদ্রা আরও বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে তিনি ৪ বিলিয়ন ডলার তুলে নেন।
কিন্তু এফবিআই এজেন্টরা বলছে, ওয়ান কয়েন আসলে মূল্যহীন ছিল এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে কখনও সুরক্ষিত ছিল না।
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের করা অভিযোগ অনুযায়ী, এটি ছিল ক্রিপ্টোকারেন্সির ছদ্মবেশে একটি পঞ্জি স্কিম।
ম্যানহাটনের শীর্ষ ফেডারেল প্রসিকিউটর ড্যামিয়ান উইলিয়ামস বলেছেন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রথম দিকের জল্পনাকে কাজে লাগিয়ে রুজা তার স্কিমকে ব্যবহার করেছেন।’
এফবিআই সাধারণত তাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় পলাতকদের যুক্ত করে যাতে সাধারণ জনগণও এসব অপরাধীকে ট্র্যাক করতে সহায়তা করে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি ব্যুরো নোটিশে বলা হয়েছে, রুজা ইগনাতোভাকে গ্রেপ্তারে সহায়তা করতে পারে এমন যেকোনো তথ্যের জন্য ১ লাখ ডলার পুরস্কারের ঘোষণা করেছে।
রুজার বিরুদ্ধে আটটি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে এবং এফবিআইয়ের ১০ ব্যাক্তির তালিকায় একমাত্র নারী তিনিই।
বিবিসির জেমি বার্টিলেটের মতে, ড. রুজা নিখোঁজ হওয়ার পর এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় স্থান পাওয়া এই মামলার সবচেয়ে বড় অগ্রগতি।
বছরের পর বছর এই মামলা নিয়ে তদন্ত করা বার্টলেট বলেছেন, রুজাকে খুঁজে বের করা এত কঠিন কারণ তিনি গায়েব হতে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন, যা তাকে আইনের আওতার বাইরে চলে যেতে সাহায্য করেছিল। কারণ অর্থ খরচ করলে উচ্চমানের জাল পরিচয়পত্র, নথি তৈরি করা এমনকি চেহারা পরিবর্তন করাও সম্ভব।
একই সঙ্গে বার্টলেট মনে করেন, তার বেঁচে না থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সবশেষ, ২০১৭ সালে বুলগেরিয়া থেকে গ্রিসগামী একটি ফ্লাইটে তাকে দেখা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন:একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে বিল গেটসকে অনেকেই ক্রিপ্টো ও এনএফটির ফ্যান ভাবতে পারেন। আসলে এমনটি চিন্তায় আনাও উচিত নয়।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি টেকক্রাঞ্চের এক কনফারেন্সে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে বিল গেটস বলেছেন, এই ডিজিটাল সম্পদ শতভাগ বৃহত্তর বোকা তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
তার মতে, মূল্যহীন বা অত্যধিক মূল্যবান যাই হোক না কেন, আপনি ততক্ষণই এখানে উপার্জন করতে পারবেন যতক্ষণ না লোকেরা তাতে উচ্চ বিড করতে ইচ্ছুক।
আর তিনি এনএফটিকে উপহাস করেছেন, বানরের দামি ডিজিটাল ছবি হিসেবে।
তবে ননফাঞ্জিবল টোকেনের ক্ষেত্রে কিছু বিতর্ক রয়েছে। যেমন সিনা এস্তাভি টুইটার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির করা প্রথম টুইটের এনএফটি ২.৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) দিয়ে কেনেন। অথচ এখন তার দাম ৬ হাজার ৮০০ ডলার।
এমনটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সবশেষ টেরা লুনার ধসে অনেকেই ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্রিটিশ ইউটিউবার ও র্যাপার জেজে ওলাটুনজির ২৮ লাখ ডলার সমমূল্যের লুনা এক দিনের মধ্যেই ১ হাজার ডলার হয়ে গেছে।
বিলগেটস বলেন, 'আমি সম্পদে অভ্যস্ত, যেমন একটি খামার যেখানে কিছু উৎপাদন হয় বা এমন কোনো প্রতিষ্ঠান যেখানে পণ্য তৈরি হয়।
তবে বিশ্বের অনেক ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্কের বিটকয়েন রয়েছে। এ ছাড়া তিনি মিমিকয়েন ডজের একজন পৃষ্ঠপোষক। বিটকয়েন নিয়ে কাজ করতে টুইটারের সিইও পদ ছেড়েছেন জ্যাক ডরসি।
বিলগেটসের মন্তব্য এমন সময় এলো যখন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ধস নেমেছে। গত ৬ মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সির ফ্ল্যাগশিপ মুদ্রা বিটকয়েন দাম হারিয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ। বুধবার এর দাম ২০ হাজারে চলে আসে অথচ গত নভেম্বরেই এর দাম ছিল ৬৯ হাজার ডলার।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমাগত ধসে ডিজিটাল মুদ্রা কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম কয়েনবেস ১৮ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য