তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিযোগিতা রুয়েট সিএসই ফেস্ট-২০২২ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ক্যাম্পাসে আয়োজিত অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার জানানো হয়, দেশের সবচেয়ে বড় টেক কার্নিভাল ‘রুয়েট সিএসই-ফেস্ট’ শুরু হয় গত ১৬ এপ্রিল। কার্নিভালে অংশ নিতে নিবন্ধন করেন দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। প্রকল্প ও আইডিয়ার ভিত্তিতে বিচারকরা ৭০০-এর বেশি শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করেন। মূল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় শুক্র ও শনিবার।
নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন সেগমেন্টে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, প্রোজেক্ট শো-কেসিং, আইডিয়া/পোস্টার কনটেস্ট, লাইন ফলোয়ার রোবট, গেমিং কনটেস্ট, টেক ফটো প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মোট ২৪টি দল ও তিন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ।
বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ফেস্ট তরুণদের দক্ষতা তুলে ধরতে এবং তাদের উদ্ভাবনী ধারণা প্রদর্শনে দারুণ একটি সুযোগ হিসেবে কাজ করেছে। নিজেদের জ্ঞান ব্যবহার করে নানা প্রজেক্ট তৈরিতে প্রতিযোগীদের উদ্বুদ্ধ করেছে এই প্রতিযোগিতা।’
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ও কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান ইউইং কার্ল বলেন, ‘দেশের তরুণদের আইসিটিবিষয়ক জ্ঞান অর্জন এবং তাদের প্রাসঙ্গিক দক্ষতা বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে হুয়াওয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে।’
তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে এ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ কর্মসূচিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রুয়েটের সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আল মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রুয়েটের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদ উজ জামান, অধ্যাপক ড. বশির আহমেদ ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শাহরিয়ার মনজুর।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এ প্রতিযোগিতার টেকনোলজি পার্টনার হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার মো. তৌফিকুর রহমান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে সাময়িকভাবে প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসানের লিখিত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে তাকে প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ অপরাহ্ন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি প্রচলিত নিয়মে সুবিধাদি ভোগ করবেন।’
নতুন দায়িত্ব পালনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর। তিনি বলেন, ‘আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তরণে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, ১১ মার্চ থেকে ৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’। ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট সাব্বির আলমকে ১৭ মার্চের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। পরে উপাচার্য ১৮ মার্চ অব্যাহতি দেয়ার আশ্বাস দিলে নতুন প্রশাসনিক ভবনের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে এই দুজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। তারা পুলিশের হেফাজত রয়েছেন।’
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় অবন্তিকা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার ১০ মিনিট আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন তিনি।
এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন তারা। ভিক্টোরিয়া পার্ক ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ঘুরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি ঘোষণা করেন। এসব দাবি বাস্তবায়নে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা।
এদিকে এ ঘটনায় একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয় চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানান অভিযুক্ত সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান।
শুক্রবার রাতে তিনি ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক পোস্টে আম্মান লিখেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওনার (অবন্তিকা) সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করিনি। এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোনো জায়গাতেই কানেক্টেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
অপর অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ঘটনার একদিন পর শনিবার এ বিষয়ে মুখ খোলেন। অবন্তিকার অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দেয়া এক বিবৃতিতে তার ওপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন এই শিক্ষক। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বরং গণমাধ্যমকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনায় দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের একজনকে সাময়িক ও অপরজনকে চূড়ান্ত বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বহিষ্কৃত দুই শিক্ষক হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহা।
অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক ও সাজন সাহাকে চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেয়া ও থিসিস পেপার আটকে হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে গত ৪ মার্চ আন্দোলন শুরু করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেন ওই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় গত ৫ মার্চ কোষাধ্যক্ষ ড. আতাউর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু কমিটি গঠনের একদিন পরই মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। তারা ওই বিভাগের শিক্ষকদের নেমপ্লেট ভাঙচুর চালিয়ে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে হয়রানির ঘটনায় প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ তুলে তাকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের সে দাবিও মেনে নিয়ে তদন্ত কমিটি পুর্নগঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক কাগজে ওই দুই শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। একইসঙ্গে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তবে শিক্ষার্থীরা তা না মেনে দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে এদিন দুপুর থেকে আবারও আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে উপাচার্যকেই তালাবদ্ধ করে আন্দোলন চলতে থাকে। তখনও দাবি মেনে না নেওয়ায় বিকেল চারটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টায়ার ঝুলিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্য এসে বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেট সভায় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানালে মহাসড়ক থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ভালো রাখাসহ সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ রাখতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কমতি নেই।’
আরও পড়ুন:শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি আয়োজন নিষেধের বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়ে গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ৪৯তম আবর্তনের (২০১৯-২০২০ সেশন) শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।
গণ-ইফতার কর্মসূচি আয়োজকদের একজন গণিত বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শাফায়েত মীর বলেন, ‘দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় আবেগ ইফতার মাহফিল নিষিদ্ধ করার যে দুঃসাহস দেখিয়েছে তারই প্রতিবাদে আজকের এই আয়োজন। যারা অসাম্প্রদায়িক দেশে এমন সাম্প্রদায়িক আচরণ করেছে তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।’
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবাই মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে যুগ যুগ ধরে ইফতার পার্টি হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় সে রেওয়াজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমরা তারই প্রতিবাদ জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারের আয়োজন করেছি।
‘বিভিন্ন বিভাগের শত শত শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে ধর্মীয় আবেগের ওপর হস্তক্ষেপ এদেশের মানুষ কখনোই পরোয়া করে না।’
শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করা ও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মেসেঞ্জারে ‘অপ্রীতিকর বার্তা’ পাঠিয়ে হেনস্তার দায়ে অভিযুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতির সুপারিশ করেছে বিভাগের একাডেমিক কমিটি।
অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্ত হাফিজুর রহমান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহা. আশরাফ উজ জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আজ (মঙ্গলবার) একাডেমিক কমিটির সভা হয়। সভায় কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমানকে পাঁচ বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে অভিযোগ করেন যে সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করেন। পাশাপাশি তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে মেসেঞ্জারে ‘অপ্রীতিকর বার্তা’ পাঠিয়ে হেনস্তা করেন। এ সময় তারা ওই শিক্ষককে পাঠদান থেকে অব্যাহতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা বিভাগের সভাপতির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভা বসে। সভায় অভিযোগগুলো আলোচনা সাপেক্ষে ওই শিক্ষককে পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতির সুপারিশ করেন কমিটির সদস্যরা।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে প্যারিস রোডে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ওই শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এ সময় ওই শিক্ষককে ক্লাস ও পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত রমজান মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের আদেশ আপাতত বহাল রেখেছে। একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে এ বিষয়ে আপিল শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করে দেয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকার পক্ষের আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান। এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ (এসকে) মুহাম্মদ মোর্শেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ।
এর আগে পবিত্র রমজানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এর ওপর শুনানি হয়।
রিটের পক্ষের আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ আদালতের রায়ের পর সাংবাদিকদের জানান, পবিত্র রমজানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেনি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। তাই আপাতত স্কুল বন্ধই থাকছে। মঙ্গলবার আপিল শুনানির পরই জানা যাবে যে রমজানে স্কুল বন্ধ নাকি খোলা থাকছে।
আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চার দশক পর প্রথমবারের মতো অনুষদের সেরা শিক্ষার্থীর স্বীকৃতি হিসেবে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ৮ অনুষদের মোট ৩৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে সোমবার তুলে দেয়া হয় এই অ্যাওয়ার্ড। আর এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটি ছিলো ডিন’স পুরস্কারে স্বীকৃত মায়ের মেডেলটি কোলের শিশুর গলায় পরিয়ে দেয়ার সময়।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কোলের শিশুকে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের হামিদুর রহমান মিলনায়তনের মঞ্চে ওঠেন মা ত্বহিরা তাসনিম আয়াত, যার পূর্বপরিচয় সুপ্রীতি দত্ত তমা। পুরস্কার প্রদানকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম তাৎক্ষণিক মেডেলটি মা আয়াতের গলায় না পরিয়ে কোলের শিশুকে পরিয়ে দেন। আর এই দৃশ্য দারুণভাবে উপভোগ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিবৃন্দ। করতালি দিয়ে মা ও মেয়েকে অভিবাদন জানান তারা।
সুপ্রীতি দত্ত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে সিজিপিএ ৩.৭৬ পেয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়ে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন তিনি। সুপ্রীতি দত্ত তমা ২০২২ সালে সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ত্বহিরা তাসনিম আয়াত।
অনুষ্ঠানের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ত্বহিরা তাসনিম আয়াত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আজকে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান। আজ আমার পুরস্কারগুলো আমার মেয়েই গ্রহণ করেছে। ভিসি স্যার ওখানেই আমাকে বাহবা দিয়েছেন। একজন শিক্ষার্থীর পর সন্তানের মা হিসেবে এটি আমার কাছে খুবই গর্বের।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে আয়াত বলেন, ‘সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেলে অবশ্যই করতে চাই।’
এর আগে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে ডিন’স লিস্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা জামাল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত। যারা অ্যাওয়ার্ড পেলো তাদের অ্যাওয়ার্ড দেই আর নাই দেই তারাই সেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো পোগ্রামই গুরুত্বপূর্ণ। একটি কনভোকেশন পোগ্রাম এবং অন্যটি আজকের এই ডিন’স অ্যাওয়ার্ড।
‘আজকের এই দিনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের জন্ম দেয়া বাবা-মায়েদের অভিনন্দন জানাই। আমরা ভালো মানুষ হবো, মার্জিত মানুষ হবো এই ধরনের অন্তঃপ্রণোদনাগুলো একজন মানুষকে সুনাগরিক করে তোলে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য