জার্মান ইলেকট্রনিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিডিয়ামার্কেটসাটার্ন গ্রুপ চলতি মাসের শুরুতে এক প্রেস রিলিজে ঘোষণা করেছে, মে মাস থেকেই তাদের ক্রিপ্টো এটিএম বুথগুলো কোলোন, ফ্রাঙ্কফুট এবং ডর্টমুন্ডের তিনটি সাটার্ন ইলেকট্রনিক স্টোরে চালু হয়েছে। যদিও পুরো জার্মানিতে গ্রুপটির ৪১০টি স্টল রয়েছে।
এটি একটি ছয় মাসের পাইলট প্রকল্প। যেখানে সাটার্ন গ্রাহকরা ফিয়াট কারেন্সিকে (প্রচলিত মুদ্রা) বিটকয়েন কিংবা ইথারিয়ামে রূপান্তর করতে পারবে এবং এই ক্রিপ্টোকারেন্সি তাদের ডিজিটাল ওয়ালেটে ঢুকাতে পারবে।
‘সাটার্ন’ ক্রিপ্টোজগতের জন্য একটি ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চায়। গ্রুপের উদ্ভাবন গবেষণা প্রধান ক্রিশ্চিয়ান স্টেফান বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে প্রযুক্তিপ্রেমী গ্রাহকদের মধ্যে।
ক্রিপ্টো এটিএম বসানোর জন্য গ্রুপটি অস্ট্রিয়াভিত্তিক ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান কুরান্টের সহযোগিতা নিয়েছে। ইউরোপে ২০০টিরও বেশি ক্রিপ্টো এটিএম বুথ বসানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে। অনলাইনে নন-ফাঞ্জিবল টোকেন কেনাবেচার ক্ষেত্রেও একমাত্র মাধ্যম ক্রিপ্টোকারেন্সি। এলসালভাদর, টোঙ্গা এরই মধ্যে বিটকয়েনকে রাষ্ট্রীয় মুদ্রা ঘোষণা করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এই ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ব্যবহার করতে চায় রাশিয়াও।
ওয়ান কয়েন দিয়ে বহু গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করা নিখোঁজ রুজা ইগনাতোভাকে এফবিআইয়ের শীর্ষ ১০ মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় রাখা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুলগেরীয় নারী রুজা ‘নিখোঁজ ক্রিপ্টোকুইন’ নামেও পরিচিত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘ওয়ান কয়েন’ ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতির জন্য তাকে খুঁজছে।
রুজা ইগনাতোভা ২০১৪ সালে ওয়ান কয়েন নামের একটি মুদ্রা নিয়ে আসেন। তিনি এই মুদ্রাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং এই মুদ্রা বিক্রি করে দেয়ার জন্য গ্রাহকদের কমিশন দেয়া শুরু করেন। ফলে তার মুদ্রা আরও বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে তিনি ৪ বিলিয়ন ডলার তুলে নেন।
কিন্তু এফবিআই এজেন্টরা বলছে, ওয়ান কয়েন আসলে মূল্যহীন ছিল এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে কখনও সুরক্ষিত ছিল না।
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের করা অভিযোগ অনুযায়ী, এটি ছিল ক্রিপ্টোকারেন্সির ছদ্মবেশে একটি পঞ্জি স্কিম।
ম্যানহাটনের শীর্ষ ফেডারেল প্রসিকিউটর ড্যামিয়ান উইলিয়ামস বলেছেন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রথম দিকের জল্পনাকে কাজে লাগিয়ে রুজা তার স্কিমকে ব্যবহার করেছেন।’
এফবিআই সাধারণত তাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় পলাতকদের যুক্ত করে যাতে সাধারণ জনগণও এসব অপরাধীকে ট্র্যাক করতে সহায়তা করে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি ব্যুরো নোটিশে বলা হয়েছে, রুজা ইগনাতোভাকে গ্রেপ্তারে সহায়তা করতে পারে এমন যেকোনো তথ্যের জন্য ১ লাখ ডলার পুরস্কারের ঘোষণা করেছে।
রুজার বিরুদ্ধে আটটি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে এবং এফবিআইয়ের ১০ ব্যাক্তির তালিকায় একমাত্র নারী তিনিই।
বিবিসির জেমি বার্টিলেটের মতে, ড. রুজা নিখোঁজ হওয়ার পর এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় স্থান পাওয়া এই মামলার সবচেয়ে বড় অগ্রগতি।
বছরের পর বছর এই মামলা নিয়ে তদন্ত করা বার্টলেট বলেছেন, রুজাকে খুঁজে বের করা এত কঠিন কারণ তিনি গায়েব হতে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন, যা তাকে আইনের আওতার বাইরে চলে যেতে সাহায্য করেছিল। কারণ অর্থ খরচ করলে উচ্চমানের জাল পরিচয়পত্র, নথি তৈরি করা এমনকি চেহারা পরিবর্তন করাও সম্ভব।
একই সঙ্গে বার্টলেট মনে করেন, তার বেঁচে না থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সবশেষ, ২০১৭ সালে বুলগেরিয়া থেকে গ্রিসগামী একটি ফ্লাইটে তাকে দেখা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ক্রিপ্টো ফার্ম ‘হারমনি’ থেকে ১০ কোটি ডলারের (৯৩০ কোটি টাকা) ডিজিটাল মুদ্রা চুরি হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যাকাররা প্রতিষ্ঠানটির ব্লকচেইনের মাধ্যমে ক্রিপ্টো স্থানান্তর করার সফটওয়্যার ‘ব্রিজে’ আঘাত করেছে।
হারমনি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, চুরির ঘটনায় অপরাধীকে শনাক্ত করতে, চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনতে জাতীয় কর্তৃপক্ষ ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করছে তারা।
হ্যাকিংয়ের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিপ্টো সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
লন্ডনভিত্তিক ব্লকচেইন অ্যানালিটিক্স ফার্ম এলিপটিক বলছে, শুধু ২০২২ সালেই বিভিন্ন ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠানের ব্রিজ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে।
এর আগে মার্চে অনলাইনে জনপ্রিয় ক্রিপ্টো গেম এক্সি ইনফিনিটির মূল প্রতিষ্ঠান স্কাই ম্যাভিসের নিজস্ব ওয়ালেট রোনিন নেটওয়ার্কে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় ৬২ কোটি ডলার চুরি করে নিয়েছিল হ্যাকাররা। সেখানে এখনও ঝুঁকিতে আছে হাজার হাজার গেমারের অর্থ।
এদিকে গত বছর ৬০ কোটি ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাক হয় ‘পলি নেটওয়ার্ক’ থেকে। ‘পলি নেটওয়ার্ক’ হলো অনলাইনে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের সেন্ট্রালাইজড প্ল্যাটফর্ম। যদিও এই ঘটনার পর হ্যাকার অর্থ ফেরত দেয়।
এক্সি ইনফিনিটির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই বলছে, ‘অনুসন্ধানে তারা নিশ্চিত হয়েছে উত্তর কোরিয়াভিত্তিক হ্যাকিং গ্রুপ ল্যাজারাস এই চুরির জন্য দায়ী।’
ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক প্রযুক্তির খরচ জোগাতেই এই ধরনের চুরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাইবার আক্রমণ চালিয়ে চুরি করা ক্রিপ্টো সম্পদ দিয়েই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ব্যয় মেটায় উত্তর কোরিয়া।
সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচানোর শতভাগ নিশ্চিত কোনো উপায় নেই। তবে সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে যেই এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করা হবে তার ইতিহাস ও সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে তারা কত দ্রুত সাড়া দেয়, তা দেখা বাঞ্ছনীয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশটির হ্যাকাররা সাইবার আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার (৫০ মিলিয়ন ডলার) ডিজিটাল সম্পদ চুরি করে। তাদের সাইবার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার তিনটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময় ও কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাকারদের প্রধানত দুই ধরনের টার্গেট থাকে। একটি সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ ও অন্যটি ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্স। সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জগুলোয় একজন ব্যবহারকারী তার ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা ও কেনাবেচা করতে পারেন।
পোলোনিক্স, বাইনান্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ সুবিধা দেয়।
ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্সে সাধারণত একজন ব্যবহারকারী নিজের ডিভাইসটিতেই অর্থ জমা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘মেটামাস্কের’ মতো ইথারিয়াম ওয়ালেটগুলো জনপ্রিয়।
ক্রিপ্টো হেডের প্রতিষ্ঠাতা এডাম মরিস বলেন, যদি হ্যাকাররা ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করতে সক্ষম হয়, তারা মুহূর্তের মধ্যেই অর্থ উত্তোলন করতে পারে নিজের কোনো অস্তিত্ব জানান না দিয়েই।
তবে হ্যাকারদের কবল থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করতে হয়, সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন ক্রিপ্টোক্রাইম অ্যানালিস্ট জন ম্যাকগিল।
তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচানোর শতভাগ নিশ্চিত কোনো উপায় নেই। তবে সেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে যেই এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করা হবে তার ইতিহাস ও সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে তারা কত দ্রুত সাড়া দেয়, তা দেখা বাঞ্ছনীয়।
আরও পড়ুন:একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে বিল গেটসকে অনেকেই ক্রিপ্টো ও এনএফটির ফ্যান ভাবতে পারেন। আসলে এমনটি চিন্তায় আনাও উচিত নয়।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি টেকক্রাঞ্চের এক কনফারেন্সে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে বিল গেটস বলেছেন, এই ডিজিটাল সম্পদ শতভাগ বৃহত্তর বোকা তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
তার মতে, মূল্যহীন বা অত্যধিক মূল্যবান যাই হোক না কেন, আপনি ততক্ষণই এখানে উপার্জন করতে পারবেন যতক্ষণ না লোকেরা তাতে উচ্চ বিড করতে ইচ্ছুক।
আর তিনি এনএফটিকে উপহাস করেছেন, বানরের দামি ডিজিটাল ছবি হিসেবে।
তবে ননফাঞ্জিবল টোকেনের ক্ষেত্রে কিছু বিতর্ক রয়েছে। যেমন সিনা এস্তাভি টুইটার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির করা প্রথম টুইটের এনএফটি ২.৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) দিয়ে কেনেন। অথচ এখন তার দাম ৬ হাজার ৮০০ ডলার।
এমনটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সবশেষ টেরা লুনার ধসে অনেকেই ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্রিটিশ ইউটিউবার ও র্যাপার জেজে ওলাটুনজির ২৮ লাখ ডলার সমমূল্যের লুনা এক দিনের মধ্যেই ১ হাজার ডলার হয়ে গেছে।
বিলগেটস বলেন, 'আমি সম্পদে অভ্যস্ত, যেমন একটি খামার যেখানে কিছু উৎপাদন হয় বা এমন কোনো প্রতিষ্ঠান যেখানে পণ্য তৈরি হয়।
তবে বিশ্বের অনেক ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্কের বিটকয়েন রয়েছে। এ ছাড়া তিনি মিমিকয়েন ডজের একজন পৃষ্ঠপোষক। বিটকয়েন নিয়ে কাজ করতে টুইটারের সিইও পদ ছেড়েছেন জ্যাক ডরসি।
বিলগেটসের মন্তব্য এমন সময় এলো যখন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ধস নেমেছে। গত ৬ মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সির ফ্ল্যাগশিপ মুদ্রা বিটকয়েন দাম হারিয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ। বুধবার এর দাম ২০ হাজারে চলে আসে অথচ গত নভেম্বরেই এর দাম ছিল ৬৯ হাজার ডলার।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমাগত ধসে ডিজিটাল মুদ্রা কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম কয়েনবেস ১৮ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন:এক দশকের বেশি আগে শুরু হওয়া ব্লকচেইন প্রযুক্তিনির্ভর বিটকয়েন চেনা বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থাকে ঝাঁকুনি দিয়েছে। বাজারের মার্কেট ক্যাপ অনুসারে এরই মধ্যে এই বিটকয়েন নবম মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই মুদ্রার দেখাদেখি আরও অনেক মুদ্রা বাজারে এসেছে। যার বহুবিধ ব্যবহারও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইথারিয়াম, সোলানা।
এই বিটকয়েন নতুন অনেক বিলিয়নিয়ার তৈরি করেছে এবং নন ফাঞ্জিবল টোকেন, ক্রিপ্টো গেমের মতো বহু বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে নিয়ে এসেছে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও।
প্রযুক্তিগতভাবে বিটকয়েন এমন পর্যায়ে রয়েছে যার নেটওয়ার্ককে চালু রাখার জন্য যে পরিমাণ কম্পিউটিং সক্ষমতা চালু রাখতে হয়, তার জন্য আর্জেন্টিনার মতো দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের থেকেও বেশি বিদ্যুৎ দরকার। যার একটি পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে বিটকয়েন নেটওয়ার্ক বছরে ১২১ টেরাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। বিটকয়েন যদি একটি দেশ হয়, তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের একটি হতো।
যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিটকয়েন মাইনিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তারা সাধারণত সস্তায় বিদ্যুৎ খোঁজে। বেশির ভাগ বিটকয়েন মাইনিং ফ্যাসিলিটির অবস্থান চীনে। আর চীনের দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে।
বিটকয়েনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট আরও খারাপ হবে, এর দাম যত বাড়বে, কারেন্সির জন্য তত বেশি প্রতিযোগিতা হবে এবং তত বেশি শক্তি খরচ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতে পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে বেরিয়ে আসছে।
পরিবেশের জন্য বিটকয়েনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ইলন মাস্ক নিজ প্রতিষ্ঠান টেসলার গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিটকয়েন ব্যবহার বাতিল করেছিলেন।
২০০৯ সালে বিটকয়েন যাত্রা শুরুর পর পরিবেশের ওপর খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব ছিল না, কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে বিটকয়েনের দাম উচ্চহারে বৃদ্ধির ফলে এর মাইনিং নিয়ে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। ফলে আরও উচ্চ কম্পিউটিং সক্ষমতার দিকে ঝুঁকতে শুরু করে মাইনাররা। যার জন্য প্রয়োজন হয় ব্যাপক মাত্রায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রকল্পের আশপাশের পরিবেশ ছাড়াও অধিক মাত্রায় কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী এই প্রকল্পগুলো।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিপ্টোগ্রাফি ফার্ম আইওএইচকে-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চার্লস হসকিনসন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিটকয়েনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট আরও খারাপ হবে, এর দাম যত বাড়বে, কারেন্সির জন্য তত বেশি প্রতিযোগিতা হবে এবং তত বেশি শক্তি খরচ হবে।’
ক্রিপ্টোকারেন্সির নতুন ইউনিট তৈরি করার জন্য একজন মাইনারকে নোডস খুঁজতে হয়। নোডস মেলানোর জন্য কম্পিউটার সিস্টেমকে সা-২৫৬ হ্যাশ মেলাতে হয়। যার জন্য জটিল গাণিতিক সমীকরণ সমাধান করতে হয়। ফলে ব্যাপক কম্পিউটিং শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই বিটকয়েন মাইনাররা বিদ্যুৎ যেখানে সস্তায় পাওয়া যায় সেখানেই যায়। আর সে ক্ষেত্রে সস্তায় বিদ্যুৎ দিতে পারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
তবে সৌভাগ্যের বিষয় এই যে আইসল্যান্ড, নরওয়েতে অনেক বিটকয়েন মাইনিং ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে। যেসব দেশ শতভাগ পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরশীল।
গ্লোবাল ক্রিপ্টো অ্যাসেট বেঞ্চমার্কিংয়ের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে ৭৬ শতাংশ ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনার বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য উৎসের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৮ সালে যা ছিল ৬০ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থার মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন:
ব্রিটিশ ইউটিউবার ও র্যাপার জেজে ওলাটুনজি, অনলাইনে যিনি কেএসআই নামে পরিচিত। দুটি ইউটিউব চ্যানেলে তার মোট ৪০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। যেসব সেলিব্রেটি ক্রিপ্টোকারেন্সি টেরা (লুনা) হোল্ড করতেন, তার মধ্যে তিনিও একজন।
টুইটার পোস্টে গত ১২ মে কেএসআই নিজেই জানিয়েছিলেন, তার ২৮ লাখ ডলার সমমূল্যের লুনা এক দিনের মধ্যেই ১ হাজার ডলার হয়ে গেছে। তার টুইটার অনুসারীদের কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে মজা করলেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তবে তিনি নিজেও টুইটের মধ্যে হাসির ইমোজি যুক্ত করে দিয়েছেন।
এদিকে বিটকয়েনের দাম কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির অন্যান্য মুদ্রাতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আমেরিকার ওয়ালস্ট্রিটের তালিকাভুক্ত ক্রিপ্টো মুদ্রার কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কয়েনবেজ।
বিটকয়েন, ইথারিয়ামের মতো দাম হারিয়েছে অন্যান্য অল্টা কয়েনেরও। তবে সবচেয়ে বেশি দাম হারিয়েছে ক্রিপ্টো মুদ্রা টেরা (লুনা)। প্রতিশ্রুত মুদ্রা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া লুনা ৯৯ শতাংশ দাম হারিয়েছে মুহূর্তেই। গত মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সির তালিকায় শীর্ষ ১০-এ থাকা ১২০ ডলার দামের লুনা গত ১২ মে এক দিনের মধ্যেই ১ ডলারের নিচে নেমে আসে।
ভবিষ্যতে দাম বাড়বে এই আশায় যারা লুনা আঁকড়ে ধরেছিলেন, তারা ব্যাপক মাত্রায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় লুনা হোল্ডারদের হতাশা ব্যক্ত করতে দেখা যায়। এর মধ্যে একজন ব্রিটিশ ইউটিউবার কেএসআই।
কেএসআই বলছেন, তিনি লুনা ধরে রাখবেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, সহসা লুনার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান প্রভাব ফেলেছে ক্রিপ্টোমুদ্রাতেও। ভার্চুয়াল সম্পদে আস্থা হারাচ্ছে মানুষ, এর বদলে দৃশ্যমান সম্পদ কিনতে চাইছে সবাই। ফলে দাম বাড়ছে সোনা ও ডলারের মতো মুদ্রার।
আরও পড়ুন:বিটকয়েনের দাম কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির অন্যান্য মুদ্রাতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আমেরিকার ওয়ালস্ট্রিটের তালিকাভুক্ত ক্রিপ্টোমুদ্রার কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কয়েনবেজ।
বিটকয়েন, ইথারিয়ামের মতো দাম হারিয়েছে অন্যান্য অল্টা কয়েনেরও। তবে সবচেয়ে বেশি দাম হারিয়েছে ক্রিপ্টোমুদ্রা টেরা (লুনা)। প্রতিশ্রুত মুদ্রা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া লুনা ৯৯ শতাংশ দাম হারিয়েছে মুহূর্তেই। গত মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সির তালিকায় শীর্ষ দশে থাকা ১২০ ডলার দামের লুনা গত বুধবারে ১ ডলারের নিচে নেমে আসে।
ভবিষ্যতে দাম বাড়বে এই আশায় যারা লুনা আঁকড়ে ধরেছিলেন, তারা ব্যাপক মাত্রায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় লুনা হোল্ডারদের হতাশা ব্যক্ত করতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে যে লুনার দাম কমায় ৮ জন আত্মহত্যা করেছেন।
পাকিস্তানভিত্তিক মিডিয়া আউটলেট পাকিস্তান রিপাবলিকের এক টুইটবার্তায় এমন দাবির একটি সংবাদ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান রিপাবলিকের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এ ছাড়া ক্রিপ্টোভিত্তিক টুইটার হ্যান্ডেল ব্লকচেইন বাকেও ৮ জনের আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়। সেখানে অনেককেই হতাশাজনক মন্তব্য করতে দেখা যায়। তাদের এই পোস্টটি রিটুইট হয়েছে ৮৪১ বার। এ ছাড়া ফেসবুকের অসংখ্য পেজ ও গ্রুপে এই খবরটি শেয়ার করা হয়।
Apparently there has been 8 confirmed suicide due to the $Luna crash.
— Blockchain BUK (@BlockchainBuk) May 11, 2022
Stay strong and reach out to those struggling right now
Source: @Cryptocraziac
এই তথ্য নেটিজেনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে লুনা হোল্ডারদের সর্বস্ব হারানোর খবর আসতে থাকে। লুনার দাম কমায় অনেকে নিজের সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে প্রতিবেদন করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে।
তবে দ্য রিপোটার্স টাইমস বলছে, লুনার দাম কমায় সর্বস্ব হারানোর খবর পাওয়া গেলেও আত্মহত্যার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো স্বীকৃত সংবাদমাধ্যমে আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে আত্মহত্যার ঘটনা না ঘটলেও অনেকেই মুষড়ে পড়েছেন লুনার এই দাম কমায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহসা লুনার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান প্রভাব ফেলেছে ক্রিপ্টোমুদ্রাতেও। ভার্চুয়াল সম্পদে আস্থা হারাচ্ছে মানুষ, এর বদলে দৃশ্যমান সম্পদ কিনতে চাইছে সবাই। ফলে দাম বাড়ছে সোনা ও ডলারের মতো মুদ্রার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য