পেস্ট্রি, কফি, আইসক্রিমে চিনি তো থাকেই, এ যুগে ভিনদেশি খাবার খেয়ে দেখতে গেলে চিকেন কারিতেও সুগারের স্বাদ পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবে চিনিকে আমরা বিশেষ স্বাদ হিসেবে ভাবতে না পারলেও একজন ডায়াবেটিকস রোগী কিন্তু হাড়ে হাড়ে সুগারের স্বাদ মিস করেন।
এবার কোনো সুগার মিলে নয়। সাগরের নিচে চিনির বিশাল মজুতের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে এমন কিছুর বিষয়ে কারও কোনো ধারণা ছিল না।
নেচারে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কার্বন সঞ্চয়ের কারণে সমুদ্রের তলদেশে যে সামুদ্রিক ঘাস রয়েছে, তার শেকড় থেকেই সৃষ্টি হয়ে নিচেই সুক্রোজ আকারে চিনি জমা হয়। যা রাইজোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
আমরা রান্নাবান্নার কাজে যে চিনি ব্যবহার করি তার প্রধান উপাদানই হলো সুক্রোজ। গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্রতলে চিনির ঘনত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় ৮০ গুণ বেশি।
গবেষকরা বলছেন, এই পৃথিবীতে সামুদ্রিক ঘাসের নিচে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন টন সুক্রোজ থাকতে পারে। এটিকে অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, কোকা-কোলার প্রায় ৩২ বিলিয়ন ক্যানের জন্য এই চিনি যথেষ্ট।
কিন্তু এই চিনি আসলে সমুদ্রের তলে কীভাবে তৈরি হয়, তা নিয়ে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর মেরিন মাইক্রোবায়োলজির সামুদ্রিক অণুজীববিদ নিকোল ডুবিলিয়ার বলেছেন, ‘সাগরের তলদেশের ঘাসগুলো সালোকসংশ্লেষণের সময় চিনি তৈরি করে।’
উদ্ভিদের পক্ষে যেহেতু শিকার করা কিংবা অন্য কোনো উপায়ে খাবার তৈরি করা সম্ভব হয় না, তাই সালোকসংশ্লেষণের সাহায্যেই সে তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করে নেয়। এ পদ্ধতিতে গড় আলোর উপস্থিতিতে নিজস্ব বিপাক ও বৃদ্ধির জন্য উদ্ভিদ বেশির ভাগ সুগার বা সুক্রোজ ব্যবহার করে।
কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের তলদেশের ঘাসগুলো আগের থেকে বেশি তাপমাত্রা ও আলো পাচ্ছে। ফলে তাদের প্রয়োজনের থেকে তারা বেশি পরিমাণ সুক্রোজ উৎপন্ন করছে।
সেই অতিরিক্ত সুক্রোজই সামুদ্রিক ঘাসগুলো রাইজোস্ফিয়ার আকারে ছেড়ে দেয়। যা ঘাসগুলোর গোড়ায় জমা হয়।
গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রতলে যে চিনি জমছে, বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনে তার প্রভাব বুঝতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
আরও পড়ুন:চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও বিশ্বকে জলবায়ু সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর তাই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি আদায়ে সিভিএফকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে থাকা ৫৫টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম। ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংগঠনটির নেতৃত্ব পায় বাংলাদেশ। এবার জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত আফ্রিকার দেশ ঘানার হাতে যাচ্ছে সিভিএফ-এর নেতৃত্ব।
ঢাকায় বুধবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোর হাতে দায়িত্ব তুলে দেন সিভিএফ-এর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনা।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দেড়শ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরি অবস্থার মুখে পড়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও, আমরা বিশ্বকে জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারি না।
‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই হবে। ঘানার নেতৃত্বে, সিভিএফ-এর ট্রেডমার্ক নৈতিক শক্তি এবং যৌক্তিক দাবি উপস্থাপনের মাধ্যমে অমীমাংসিত দাবি আদায়ে তাদের ওপর জোর অব্যাহত রাখতে হবে।’
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো সিভিএফ-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বস্তির কথা হলো, এই সমেয় আমাদের বেশিরভাগ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আনন্দের সঙ্গে ঘানার হাতে সিভিএফ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব অর্পণ করছে। এ আয়োজনে উপস্থিত থাকায় আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
জলবায়ুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় সিভিএফ এখন গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিভিএফ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি তার প্রমাণ।
‘শুরু থেকে কপ২৬-এর সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের মনোযোগ ছিল। মহামারির মধ্যেও আমরা জলবায়ু সংকটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তাদের এনডিসি (কার্বন নিঃসরণ বিষয়ক জাতীয় নির্ধারিত অবদান) জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।’
সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা দিতে সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার তহবিলও তৈরি করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এতে প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২১ সালে আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট করেছি। এটি পরবর্তী পাঁচ বছরে শত বিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা করবে। গ্লাসগোতে তা আমরা উপলব্ধি করেছি।’
ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণাকে সিভিএফ-এর মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন ফোরামের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ‘আমরা (কার্বন) উচ্চ-নিঃসরণকারী দেশগুলোর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা এবং প্রতি বছর জলবায়ু খাতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে আমাদের দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অভিযোজন খাতে অর্থায়ন বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যারা উচ্চকিত, তাদের কাছে আমাদের উচ্চাশা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন ইস্যুতে আমাদের পারস্পরিক সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে। জলবায়ু ইস্যুতে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সিভিএফ-ভি২০ সংসদীয় গ্রুপ।’
সিভিএফ-এর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু চ্যালেঞ্জকে স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়াটা হবে আমাদের প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, এটা আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশে আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অন্য দেশগুলোও এটি থেকে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা গ্রহণের একটা ভিত্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রোইকার সদস্য হিসেবে ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাবেক ও প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা আমি স্মরণ করছি। আমি নিশ্চিত যে, সিভিএফ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ঘানার এই সম্পর্ক দেখে তিনি খুশি হতেন।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করে সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে বুধবার সকালে ‘গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়’ এবং ‘রাজউক’-এর বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা পর্যবেক্ষণকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং।
এদিন ‘গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়’ এবং ‘রাজউক’ প্রস্তাবিত ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ; পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের শিবচরে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ; কনজারভেশন অফ ফ্লাড ফ্লো জোন অ্যাট তুরাগ রিভার অ্যান্ড কম্প্যাক্ট টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট এবং কেরানীগঞ্জ ওয়াটার ফ্রন্ট স্মার্ট সিটি নির্মাণ প্রকল্পগুলোর স্থাপত্য নকশার উপস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্প গ্রহণ করলে সেখানে পরিবেশটা যাতে গুরুত্ব পায়, সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে। জলাধার সংরক্ষণ, পর্যাপ্ত সবুজ এলাকা রাখা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।’
যেখানে-সেখানে যাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যেকটি এলাকায় নির্দিষ্ট শিল্প জোনে হবে। যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’
শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অ্যাগ্রো প্রসেসিং এবং আইটি ডিভাইস-সংক্রান্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।’
রপ্তানি বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করে ছোট ছোট শিল্পকে ভর্তুকি দেয়ারও কথা বলেন শেখ হাসিনা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:বিশ্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হলেও দেশের মানুষের কথা ভেবে সরকার তা নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
সংকট মোকাবিলায় দেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদন বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল (বিইউপি) আয়োজিত এনভায়রনমেন্টাল ফেস্ট-২০২২-এর এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গত বেশ কিছুদিন দেশে দেশে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের তরফ থেকে নানান আশা দেয়া হলেও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না সরকার।
সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলেই দেশে দাম বাড়ছে।
মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার মহাসংকট শেষ হতে না হতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পুরো বিশ্বে নতুনভাবে সংকট সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি এবং দেশীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সরকার আগে থেকেই বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার ফলেই এই সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হচ্ছে।’
মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে বলে ভোগের পরিমাণও বেড়েছে বলে মনে করেন এলজিআরডি মন্ত্রী।
এ সময় তিনি রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্যের পাশাপাশি নির্মাণ বর্জ্যও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে সরকার কাজ করছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব সিটি করপোরেশন শহরাঞ্চলে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।’
পৌরসভাগুলোতেও ছোট প্ল্যান্টের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান আছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের বর্জ্য যেমন একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে আসবে, একইভাবে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতের তুলনায় বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। আগে যে কোনো পণ্য কেনার সময় একটি ব্যাগের মধ্যেই সবকিছু নেয়া হতো। কিন্তু এখন প্রত্যেকটি জিনিসের জন্য আলাদা আলাদা ব্যাগ দেয়া হয়। ফলে গৃহস্থালিসহ অন্য বর্জ্য উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবেশ দূষণকেই দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘আর এই পরিবেশ দূষণে উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রভাব অনেক কম। এসব দেশের তুলনায় উন্নত দেশগুলো পরিবেশ দূষণের জন্য বেশি দায়ী। পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে।’
বিউইপির এনভায়রনমেন্টাল ফেস্টে অংশ নিয়েছে দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের স্টলগুলো ঘুরে দেখেন তাজুল ইসলাম।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মাহবুব উল আলম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. এস এম যোবায়দুল করিম।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে দিনভর বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ বৃষ্টি হবে থেমে থেমে, যা রাতের দিকে বাড়তে পারে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বুধবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ রাজধানীতে দিনভর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা হবে থেমে থেমে, যা রাতের দিকে বাড়তে পারে।’
২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গা এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর হাতিরঝিলে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ চার দফা নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে লেক মাছের অভয়ারণ্য করতে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে আদালত।
সম্প্রতি হাতিরঝিল নিয়ে একটি রায় প্রকাশ করা হয়। ৫৫ পৃষ্ঠার রায়টি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ৩০ জুন এ রায় দেয়।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে আউট প্ল্যানের নির্দেশনার বাইরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরে ওই রুলের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৩০ জুন রায় ঘোষণা করে আদালত।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল। আর রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন।
লিখিত রায়ে বলা হয়, ‘প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।’
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নিয়ে আদালত বলে, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোভাবেই ধ্বংস করা যাবে না।
হাইকোর্টের চার দফা নির্দেশনা
১. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা জনগণের সম্পত্তি।
২. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ।
৩. হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো।
৪. এ রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
হাতিরঝিল প্রকল্প বিষয়ে উচ্চ আদালতের পরামর্শ
হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে।
জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন ও নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করতে হবে।
লেক মাছের অভয়ারণ্য করার জন্য ক্ষতিকর সব ধরনের যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি প্রকল্পটি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করার পরামর্শ এসেছে।
এ ছাড়া হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করার পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিলে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বিশেষ তাপপ্রবাহ দেখা যায় যাতে ৯০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই তাপপ্রবাহের শঙ্কা ৩০ গুণ বেশি হতে পারে।
ওই প্রতিবেদনে পরিবেশ বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক অটো বলেছেন, ‘মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সূচনা হওয়ার আগে, প্রতি ৩০ হাজার বছরে একবার এই ধরনের ঘটনার শঙ্কা থাকে।’
ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডাব্লিউএ) কনসোর্টিয়ামে ফ্রেডরিক এবং তার সহকর্মীরা দেখেন যে, ‘১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণতা দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহের শঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলেছে। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণতা নিরবচ্ছিন্নভাবে বেড়ে চলেছে। তাই এই ধরনের ভয়াবহ তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়বে।
মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার বর্তমান স্তরের কারণে এই তাপপ্রবাহের শঙ্কা ৩০ গুণ বেশি হয়েছে, গ্রুপের সমীক্ষায় সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পৃথিবীর ভূমি পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১ ডিগ্রির চার-পঞ্চমাংশ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে প্রতি পাঁচ বছরে একবার এই ধরনের তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
প্যারিস চুক্তির অধীনে কার্বন নির্গমনরোধ করা না গেলে ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈশ্বিক উষ্ণতা দেখা যেতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তান, চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এই তাপপ্রবাহে ৯০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এমন প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানে। সেখানে একটি হিমবাহের অগ্ন্যুৎপাত, বন্যার স্রোত; ভয়াবহ তাপ ভারতের জমিতে গমকে পুড়িয়ে দেয়।
ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে খাদ্য সংকটের কারণে এই ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। এর ফলে ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা কয়লার মজুতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন:চলতি শতকের শুরুতে রাজধানীবাসীকে বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে সড়ক থেকে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের সব যানবাহন তুলে দিয়ে চালু করা হয় ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন বাহন। পাশাপাশি বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে পেট্রল-ডিজেলের পরিবর্তে শুরু হয় কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজির ব্যবহার। এতে নগরীর বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে রাতারাতি পরিবর্তন আসে।
২০০০ সালের আগের ঢাকার বাতাস ছিল গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। নাক-কান জ্বালা করা কিংবা শ্বাসজনিত নানা রোগ ছিল নিত্যসঙ্গী। জ্বালানি হিসেবে সিএনজির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এসব সমস্যা অনেকাংশে কমে আসে।
দুই দশক পর রাজধানীতে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই কালো ধোঁয়া। কয়েক বছর ধরে বাস, ট্রাকসহ বেশকিছু যানবাহনের সিএনজি ছেড়ে ডিজেলে ফেরার প্রবণতাকে এ জন্য দায়ী মনে করা হচ্ছে।
পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করলে বায়ুদূষণ কমে আসে। তবে এতে গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ুষ্কালও একই সঙ্গে কমে যায়। পাশাপাশি ডিজেল এবং সিএনজির দামে পার্থক্যও অনেক কম। এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে যেগুলো বড় পরিবহন হিসেবে পরিচিত, যেমন: বাস বা ট্রাক, এ বাহনগুলোতে ডিজেল ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।
জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে সিএনজি ব্যবহার করলে কালো ধোঁয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণ কমে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/ নিউজবাংলা
তেলচালিত এসব বাহন ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এগুলো বাতাসে ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে চলাচল করা বাস, ট্রাক, পিকআপ বা সরকারি মালিকানাধীন গাড়িগুলোই কালো ধোঁয়ার প্রধান উৎস।
২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর টু-স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সিসহ পুরাতন যানবাহন বন্ধের পর এক দিনে ঢাকার বায়ুতে দূষণের মাত্রা কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে ২০১৩ সাল থেকে তা আবারও বাড়তে থাকে। গত নয় বছরে সেই দূষণ বাড়তে বাড়তে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্তত ৪০ ভাগের জন্য দায়ী এই কালো ধোঁয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বায়ুদূষণের একটি বিরাট অংশ যানবাহন থেকে আসে। আমরা যে তিনটি মেজর সোর্স ধরি বায়ুদূষণের তার মধ্যে কালো ধোঁয়া, একটি ব্রিক ফিল্ড এবং কনস্ট্রাকশন। গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে যেটা আসে এটা প্রায় ৪০ শতাংশ।’
কালো ধোঁয়া কী এবং কেন বের হয়?
গাড়ির ইঞ্জিন মূলত জ্বালানি তেল পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে যেটি দিয়ে গাড়িটি চলে। কালো ধোঁয়া হলো এই জ্বালানির না পোড়া অংশ। সাধারণত গাড়ি পুরাতন হয়ে গেলে এবং এটিকে ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে এই কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মূলত দুই কারণে বের হয়। গাড়ি যত পুরাতন হতে থাকে এর কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে। গাড়িতে যে তেল ব্যবহার করা হয় সেটা থেকে তার এনার্জি তৈরি হয়। কিন্তু গাড়ির কর্মক্ষমতা কমে গেলে এই তেলটা কমপ্লিট বার্ন হয় না বা কনভার্সন হয় না। যখনই এটা হয় না, তখনই তার একটি অংশ একজস্টের সাথে বের হয়ে আসে। এটাকে বলে ইনকমপ্লিট কনভার্সন।
‘গাড়ির একটি রেগুলার মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি হলে নিয়মিত প্রতি ৩ হাজার কিলোমিটার চলার পর মোবিল পরিবর্তন করা। এটা করা হয় না। এ কারণে গাড়ির যে লুব্রিকেটিং ফাংশন, এটা ঠিকভাবে কাজ করে না। সেখান থেকে পলিউশন হয়।’
অনেক সময় তেলের পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের গুণগত মান ঠিক না থাকলেও কালো ধোঁয়া তৈরি হতে পারে। অধ্যাপক সালাম বলেন, ‘আবার যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, সেটাও অনেক সময় ভালো মানের থাকে না। এটাও দূষণের কারণ। মুলত এই তিন কারনে কালো ধোয়াটা তৈরি হয়।
‘কালো ধোঁয়ার একটি বড় অংশ হলো টক্সিক কার্বন। এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং মানুষের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে থাকে অনেকগুলো ক্ষতিকর উপাদান যেমন হাইড্রো কার্বন, কাবন মনোঅক্সাইড এবং জ্বালানি তেলের আনবার্ন্ট কিছু অংশ। এগুলো প্রত্যেকটাই খুব ক্ষতিকর।’
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি রোধে বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা করতে হবে, গাড়ির জ্বালানিটি কোয়ালিটি ধরে রাখতে হবে এবং গাড়ি নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করতে হবে। মূলত পুরাতন গাড়িই এর জন্য দায়ী।
‘আমাদের এখানে নিয়ম আছে যে ২০ বছরের পুরাতন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না। এখন এটা ঠিক মতো মেইনটেইন করা হয় কিনা জানি না। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।’
কালো ধোঁয়া যে ক্ষতি
আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও কালো ধোঁয়া মুলত মানুষের ফুসফুস ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের একটি বড় কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মানেই হলো কার্বন মনোঅক্সাইড, ডাই-অক্সাইড এবং ধাতব পদার্থ– মূলত সিসা। এগুলো মানুষের শরীরে গেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং এক ধরনের প্রদাহ তৈরি করে। এর ফলে আমাদের শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো বেড়ে যায়।
‘এর মধ্যে হাঁপানি কাশি ও কারও কারও অ্যাজমাটিক সমস্যাও হতে পারে। দীর্ঘদিন এটি গ্রহণে আমাদের ফুসফুসে ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কার্বন মনোক্সাইড শরীরে শোষিত হয়ে আমাদের লিভার ও কিডনিতে জটিলতা তৈরি করে এবং নারী পুরুষের বন্ধ্যাত্ব তৈরি করতে পারে। বায়ু দূষণের একটি বড় উপাদান এই কালো ধোঁয়া। শিশুদের জন্য এর প্রভাব মারাত্মক। এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ এফেক্ট বাড়িয়ে দেয়। এর কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ে, জলবায়ূ পরিবর্তনে প্রভাব রাখে।’
দায় এড়াচ্ছেন পরিবহন মালিক ও ট্রাফিক বিভাগ
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি জানার পরেও এটি ছড়ানোর দায় নিতে চায় না পরিবহন মালিকরা। তাদের দাবি, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিতই সদস্যদের তাগাদা দেয়া হয়।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সতর্কতার কথা সব সময় বলা হয়। এটা তো মালিকের বিষয় না। পাম্পের তেলের সমস্যার কারণে অনেক সময় কালো ধোঁয়া হয়।
‘কালো ধোঁয়া পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও অনেক সময় ব্যবস্থা নেয়। বাসে কোনো কালো ধোঁয়া নেই। ম্যাক্সিমাম গাড়ি তো খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে না। কয়েকটি গাড়ি দিয়ে তো সবগুলোকে মূল্যায়ন করা যায় না। আমরা সব সময় বলি গাড়ি ঠিক রাখার জন্য। যারা করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেক। আমরা সব সময়ই বলে থাকি।’
দেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হলে তা জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অবশ্য খালি চোখে কালো ধোঁয়ার সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্রের অপেক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ট্রাফিক বিভাগ। তাদের দাবি, কালো ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় চাইলেও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী কোনো যানকে জরিমানার আওতায় আনা যাচ্ছে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে অ্যাকশন নিতে হলে আমাদের ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র লাগবে, সেটা আমাদের দেশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ধোঁয়ার নির্ণয়ক মান নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কিন্তু আমরা তো খালি চোখে সেটা মাপতে পারব না।
‘তাই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা এই ব্যাপারে একেবারেই নিরুপায়। তবে ধোঁয়া ডিটেকটরের জন্য ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে আবেদন করে রেখেছে। এটা পেলেই আমরা কালো ধোঁয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করতে পারব।’
২০২১ সালের হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৯৩টি। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ১৬ লাখের বেশি গাড়ি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য