রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে একটু সামনে এগোলে বেড়িবাঁধ সিগন্যাল। চৌরাস্তার মোড়ে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় দৌড়ে গেলেন এক ট্রাফিক পুলিশ। নিজের বাঁশি বাজিয়ে এক হাত উঁচু করে গতিরোধ করলেন এক পাশের যানবাহনের, কিন্তু আগে যাওয়ার তাড়া সবার।
ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিলেন সেখানে থাকা গাড়ির চালকেরা। যানবাহনের আওয়াজ ছাপিয়ে হর্নের গগণবিদারী নিনাদ শুরু হয়ে গেল।
যানজটের শহরে সড়কে সারা দিনই অযথা হর্ন বাজতে থাকে। আর এই হর্নের যন্ত্রণা যাদের দিনভর সহ্য করতে হয়, তারা ট্রাফিক পুলিশ। বিকট শব্দের সমুদ্রে সারা দিন কাটে তাদের।
যৌক্তিক কারণ ছাড়া কেন হর্ন বাজান, মঙ্গলবার এমন প্রশ্ন করা হয় বিভিন্ন যানবাহনের চালককে।
প্রজাপতি বাসের চালক রবিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হর্ন বাজালে কানের ক্ষতি হয়, সেটা আমরা বুঝি, কিন্তু সিগন্যালে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়? এ ছাড়া সামনে গাড়ি থাকলে হর্ন দিলেও গাড়ি সরতে চায় না। তা ছাড়া একই কোম্পানির বাস হওয়ায় একজন আরেকজকে সাইড না দিয়ে আটকে রাখে যাত্রী তোলে।’
যাদের উদ্দেশে হর্ন দিচ্ছেন তারা হর্ন ইচ্ছা করেই শুনতে চায় কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তারা হর্ন শোনে। কিন্তু তারা তাদের প্রয়োজন মতো যাবে। কার ক্ষতি হলো, না হলো সেটা দেখে না।
‘ঢাকায় হাইড্রলিক হর্নের গাড়ি খুব কম। যারা হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহার করে, প্রশাসন তাদের ধরতে পারলে ব্যবস্থা নেয়।’
হর্ন দিয়ে যাত্রীদের বাসে উঠতে ইশারা করা হয় জানিয়ে স্বাধীন পরিবহনের চালক মো. আকাশ বলেন, একই কোম্পানির বাস যখন সামনে থাকে, তখন যেতে সাইড না দিলে হর্ন দিয়ে যাত্রীদের এই বাসে উঠতে বলা হয়। অনেক সময় যানজটে থাকা অবস্থায় পেছনের চালক হর্ন দেন। কারণ তিনি সামনে দেখতে পান না।
অযথা হর্নের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি কমার বিষয়টি জানেন কি না, জানতে চাওয়া হলে আকাশ বলেন, ‘জানি। কিন্তু কী করা। আমি হর্ন না দিলে আরেকজন দেবে। সবাই ঠিক না হলে এক-দুইজন ঠিক হয়ে লাভ নাই।’
ট্রাফিক পুলিশ তার ডিউটির পুরাটা সময় রাস্তায় থাকেন। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বেশিরভাগই শেষ বয়সে কানের সমস্যায় ভোগেন। অনেকে আবার চাকরি চলাকালীন ভোগেন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায়।
কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তাদের একজন মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সোহরাব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরকে শব্দ দূষণের নগরী বলা যায়। শব্দ দূষণ খুব বেশি অনুভব করি আমরা ট্রাফিকে যারা আছি। যানবাহন চালকেরা অযথাই হর্ন দেন বেশিরভাগ সময়। তারা যানজটে বিরক্ত হয়ে হয়তো বা হর্ন দেন, কিন্তু তার সরাসরি প্রভাবটা পড়ছে আমাদের ট্রাফিক সদস্যদের ওপরে।
‘এ ছাড়া আমরা যারা ওয়্যারলেস সেট ব্যবহার করি, সব সময় এটা বাজতে থাকে। এটাও একটা সমস্যা।’
হর্নের কারণে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের প্রভাব পড়ে জানিয়ে সার্জেন্ট সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমার ছয় বছরের চাকরি জীবনে আমি পরিবারের অন্যদের তুলনায় শব্দ কম অনুভব করি। বাসায় পরিবারের সঙ্গে যখন টিভি দেখি, তখন আমি দেখা যাচ্ছে ভলিউমটা একটু বাড়িয়ে দিই। তখন বাসার সবাই বলে এত সাউন্ড দিচ্ছি কেন।
‘তাদের কাছে এই শব্দ অস্বাভাবিক মনে হলেও আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। তাতে বোঝা যাচ্ছে, আমার শ্রবণশক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।’
সার্জেন্ট সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শব্দদূষণের কারণে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অনেক সময় ডিউটি অবস্থায় কোনো চালককে কিছু নিষেধ করলে সেটা না শুনলে মেজাজ গরম হয়ে যায়। তখন একটু কড়া ভাষায় কথা বললে খারাপভাবে নেয় অনেকে। ‘বিষয়টা আসলে এমন না। আমরা চাইলেও অনেক সময় সুন্দর করে কথা বলতে পারি না। পরে বুঝি যে কড়া কথা বলে ফেলেছি।’
সোহরাব বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশরা শব্দদূষণের কারণে সাফার করছে। তাদের নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত। এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশদের একটানা ট্রাফিকে রাখা ঠিক না। এটা একটা মানবিক বিষয়। সারা জীবন ট্রাফিকে চাকরি করলে শ্রবণশক্তি অনেকটাই হ্রাস পায়।’
চালকেরা কেন অযথা হর্ন দেন, জানতে চাইলে ট্রাফিক সার্জেন্ট সাহীন আলম বলেন, ‘যে সামনে যাচ্ছে না, তাকে হর্ন দিয়ে সামনে যেতে বলছে। সিগন্যাল একটু বেশি সময় আটকে থাকলে ট্রাফিক পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা বা বিরক্ত করার জন্য হর্ন দেয়। তারা ভাবে বেশি হর্ন দিলে বিরক্ত হয়ে তাদের ছেড়ে দেব।’
সার্জেন্ট সাহীন আলম বলেন, ‘আমরা দিনের আট ঘণ্টার বেশি ডিউটি করি। বাসায় গেলে এক-দুই ঘণ্টা মনে হয় আমি সাউন্ডের ভেতরেই আছি। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অযথা হর্ন বাজানোর কারণে আমরা অনেক সময় চালকদের সতর্ক করে দিই। যখন হাইড্রলিক হর্ন বাজালে ২০১৮ সালের সড়ক আইনে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি অ্যান্ড হেড নেক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শূন্য থেকে ২৫ ডেসিবল পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্রবণশক্তির শব্দ। ২৫ ডেসিবল থেকে ৪০ ডেসিবল শব্দের মধ্যে থাকলে শ্রবণশক্তি সামান্য হ্রাস হয়। ৪০ ডেসিবল থেকে ৬০ ডেসিবল মিডিয়াম শ্রবণের শব্দ।
‘এভাবে বাড়তে বাড়তে শব্দের মাত্রা যদি ১০০ থেকে ১২০ ডেসিবল হয়ে যায়, তখন কানের ভেতরে ব্যথা শুরু হয়। কেউ যদি উড়োজাহাজ বা জেট প্লেনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, সেই শব্দে তার কানে ব্যথা হবে।’
উদাহরণ টেনে ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, ‘যেমন ধরেন যে ট্রাফিক পুলিশ শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, সেখানে ৭০ থেকে ৮০ ডেসিবলের মতো শব্দ হচ্ছে। তিনি যদি সেখানে আট ঘণ্টার বেশি ডিউটি করেন এবং যদি পাঁচ বছর ডিউটি করেন, তাহলে তার শ্রবণশক্তি হ্রাস পাবে।
‘এ ছাড়া শব্দদূষণের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে। বাসায় গিয়ে বউকে বকা দেবে, বাচ্চাকে মারবে। কাজে মনোযোগ কমে যাবে। রক্তের চাপ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া নানা সমস্য তৈরি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গর্ভবতী মা যদি নিয়মিত শব্দদূষণের মধ্যে থাকেন, তবে তার কানেরই ক্ষতি হবে না; গর্ভের বাচ্চাও জন্মগতভাবে কম শুনবে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে ফের হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন করা হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি বলেন, ‘আবেদনে ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের যে ৯ দফা নির্দেশনা রয়েছে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়েছি। আবেদনটি শুনানির জন্য মঙ্গলবারের কার্য তালিকায় রয়েছে।
‘বায়ু দূষণ নিয়ে আমাদের আগের একটা রিট ছিল। সেখানে আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা ছিল। এরপর গত বছর কিছু ব্যবস্থা নিলেও এরপর যে অবস্থা সেটাই রয়ে গেছে। যে কারণে আবারও আমরা আদালতে আবেদন করেছি, যাতে আদালতের দেয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়।
বায়ু দূষণরোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়-
১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহন করতে হবে।
২. যে সব জায়গায় নির্মাণ কাজ চলছে সেসব জায়গার কন্ট্রাক্টররা তা ঢেকে রাখবে।
৩. এছাড়া ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশনা ছিল, সে অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ এবং কার্পেটিং যেসব কাজ চলছে, সেসব কাজ যেন আইন-কানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে হবে।
৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকনোমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরনো হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনো বন্ধ করা হয়নি সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
৮.পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ করতে হবে।
৯. মার্কেট ও দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে হবে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পর সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন:বায়ুদূষণে নিয়মিত সামনের সারিতে থাকা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাতাস আগের দিনের মতো শনিবারও সবচেয়ে দূষিত বলে জানিয়েছে আইকিউএয়ার।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানিটির র্যাঙ্কিংয়ে আজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দূষিত বাতাসে ১০০ শহরের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল নগর।
গতকালের মতো আজও দূষিত বাতাসের দিক থেকে ঢাকার পরের অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
সকালের নির্দিষ্ট ওই সময়ে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ২২১। এর মানে হলো খুবই অস্বাস্থ্যকর বাতাসের মধ্যে বসবাস করতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।
আইকিউএয়ার জানায়, ঢাকার বাতাসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ২৯ দশমিক ২ গুণ বেশি।
আরও পড়ুন:হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে চা বাগান সম্প্রসারণের জন্য কাটা হচ্ছে বড় বড় গাছ। জঙ্গল পরিস্কার করতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে আগুন। সেই আগুনে পুড়ে মরছে বন্যপ্রাণী। স্থায়ীভাবে বাসস্থান হারানোর পাশাপাশি এসব বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এসে পড়ছে শিকারিদের হাতে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রশিদপুর বন বিটের আওতাধীন হাতিমারা চা বাগানের গির্জাঘর এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে এমন ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা জানান, হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই বাগান সম্প্রসারণ করে। চলতি বছর তারা গির্জাঘর এলাকায় বাগান সৃজনের লক্ষ্যে টিলা পরিস্কার শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে গির্জাঘর এলাকার কয়েকটি টিলা থেকে অন্তত দেড়শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। যে গাছগুলোর বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরের বেশি।
গাছ কাটার পর টিলা পরিস্কার করতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে আগুন। এতে সেখানে বসবাস করা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও জীবজন্তু পুড়ে মারা যাচ্ছে। অসংখ্য প্রাণী আহত হয়েছে। স্থায়ীভাবে বাসস্থান হারিয়ে বন্যপ্রাণীরা এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জগদীশ গোয়ালা জানান, চা গাছ রোপণের জন্য টিলা পরিস্কার করা হচ্ছে। ১০০ বছরের পুরনো গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে ছিল আম, জাম, কাঁঠাল, তেঁতুল, বট, আমলকী, বহেরা, আউলা ইত্যাদি। এ ছাড়াও বন্যপ্রাণীদের খাবারের জোগান দেয়ার মতো অনেক ধরনের গাছ ছিল। সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
গির্জাঘর এলাকার মো. নানু মিয়া জানান, যে টিলাগুলোতে আগুন দেয়া হয়েছে সেখানে মায়া হরিণসহ বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী বাস করত। আগুন ধরিয়ে দেয়ার কারণে অনেক প্রাণী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত অবস্থায় সেখান থেকে বেড়িয়ে এসেও অনেক প্রাণী মারা গেছে। কতগুলো যে আহত হয়ে জঙ্গলের ভেতরে গিয়ে মারা গেছে তার কোনো হিসাব নাই।
তিনি আরও জানান, যেগুলো এখনও জীবিত আছে সেগুলো একেবারে নিরুপায়। গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে প্রাণীগুলো স্থায়ীভাবে বাসস্থান হারিয়েছে। অনেকগুলো লোকালয়ে এসে শিকারিদের হাতে পড়ে মারা যাচ্ছে। অনেকগুলো খরগোশ ও বন্যশূকর স্থানীয় কিছু লোকজন শিকার করে খেয়ে ফেলেছে।
এম সাইফুর রহমান বলেন, ‘সকালে আহত দুইটি বানর আমার বাড়িতে এসেছে। এর মধ্যে একটা বানরের লেজ অনেকটা পোড়া ছিল। কিন্তু কোথায় যাবে এগুলো? বাগান কর্তৃপক্ষ এটা মোটেও ঠিক করেনি।’
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন মিতা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী রবি কাস্তে বলেন, ‘হাতিমারা চা বাগানের গির্জাঘর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গার কাছাকাছি হওয়ায় এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাস। এ ছাড়া মায়া হরিণের পছন্দের জায়গা এটি। এখানে থাকা আউলা নামে একটি গাছের ফল মায়া হরিণ খায়। এ প্রজাতির গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে। আগুন লাগিয়ে দেয়ায় অনেক বন্যপ্রাণী পুড়ে মারা যাচ্ছে। বানর, হনুমান, মায়া হরিণ ও শুকরসহ নানা প্রজাতির হাজার হাজার প্রাণী তাদের আশ্রয় হারিয়েছে।
‘আমরা বাগানের ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি আমাদের মুখ বন্ধ রাখতে উল্টো হুমকি দেন। পরে আমরা বিষয়টি রশিদপুর বিট কর্মকর্তা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু তিনদিন হয়ে গেলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
জঙ্গলে আগুন দেয়া ও গাছ কাটার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে পরিবেশকর্মী ও সংবাদকর্মীদের তৎপরতার কারণে নতুন করে আগুন লাগানো বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে রোববার হাতিমারা চা বাগানে ঢুকতে বাধা দেন গেট পাহারাদার। এমনকি চা বাগানের ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে তার কার্যালয়েও যেতে দেয়া হয়নি। মঈন উদ্দিনের মোবাইলে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সহকারী ব্যবস্থাপক আসিফ আঞ্জুম চৌধুরী জানান, বাগানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কোনো কথা বলতে পারবেন না।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে ফোন আসছে। সেখানে যেহেতু বন্যপ্রাণীদের বাস সেহেতু সেই এলাকায় গাছ কাটা বা আগুন দেয়া বাগান কর্তৃপক্ষের মোটেও ঠিক হয়নি। তবে এ ব্যাপারে আমি বিট কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।’
রশিদপুর বন বিট কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গত কয়েকদিন ধরেই ঘটনাস্থলে আসা-যাওয়া করছি। যে জায়গায় আগুন দেয়া হয়েছে এবং গাছ কাটা হয়েছে সেটি বাগানের নিজস্ব জায়গা। তবে এ ঘটনায় যদি কোনো বন্যপ্রাণী মারা যায় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাদেরকে যে ছবিগুলো দিয়েছেন সেগুলো এ ঘটনার নাকি পুরনো তা পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।’
আরও পড়ুন:পৌষের শেষে হিমেল হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে ওঠা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঠান্ডা কমতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত এই কদিন আগেও কুয়াশাতেই ঢাকা পড়ছিল আকাশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও শীত যেন কমছিলই না। তবে এখন সেই অবস্থা নেই।
মাঘের শুরুতে কমতে থাকে ঠান্ডা। আকাশ ফুটে বের হতে থাকে তাপ দেয়া সূর্য। রাজধানী ঢাকায় তো বটেই, দেশজুড়েই এখন ঠান্ডা কমছে। এবার তা আরও কমার আভাস এলো।
আবহাওয়া অধিদপ্তর রোববার সকালে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়ার কথা বলা হয়েছে। এই তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত কমবে, অর্থ্যাৎ একটু গরমও বাড়বে।
মাত্র কদিন আগেও রাজধানীতে তাপমাত্রা কমতে কমতে এক পর্যায়ে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও নিচে নেমে গিয়েছিল। তবে রোববার দুপুর ১২টায় এ নগরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা ঢাকার আকাশ হয়তো মেঘলা থাকবে, তবে তাপমাত্রা বাড়বে। এই অবস্থা থাকবে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারও।
সার্বিক পরিস্তিতিতে বোঝাই যাচ্ছে, ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবচনটি হয়তো গত কয়েক বছরের মতো এবারও থাকছে বইয়ের পাতাতেই। হাড় কাঁপানো তেমন একটা শীত আর এ মাসে পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ষড় ঋতুর হিসেবে পৌষ ও মাঘ, এই দুইমাস হলো শীতকাল। মাঘে শীত পড়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এবারের শীতও বিদায় নিচ্ছে কি না তা এখন দেখার বিষয়।
আগের কদিনে দেশের যেসব এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল, সেসব এলাকার অনেক জায়গাতেই এখন আর সে অবস্থা নেই। কমে এসেছে শৈত্যপ্রবাহের আওতা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম,পঞ্চগড়, মৌলভীবাজারের ওপর দিয়ে এখন শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহ আরও কমবে।
সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে এতে বলা হয়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া অন্য জায়গাগুলোতে মাঝারি থেকে হালকা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়ার প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ছিল চট্টগ্রামে ৩০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন:দেশের শীতলতম মাসের ২১তম দিনে ঠান্ডা কমে আসার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বলেছে, রাতের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কমতে পারে শীত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘উপমহাদেশীয় উচ্চতাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।’
এতে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
কুয়াশা নিয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্য জায়গায় কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, ফেনী, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা জেলা এবং রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে শনি ও রোববার তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে মাঝনদীতে আটকা পড়ে আছে দুটি ফেরি।
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে শনিবার রাত সোয়া ৯টা থেকে এই দুটি নৌপথে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, পদ্মা নদীতে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় ফেরির মার্কিং লাইটের আলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। এতে নৌ-দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তার কথা ভেবে নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সময় মাঝনদীতে দুটি ফেরি আটকা পড়ে আছে। কুয়াশার তীব্রতা কেটে গেলে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু করা হবে।
দেশের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে, আর পাঁচ বিভাগের দু-এক জায়গায় হতে পারে হালকা কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, ময়নমনসিংহ ও সিলেট বিভাগে দু-এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকতায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এই কুয়াশা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মোলভীবাজার, কুমিল্লা, ফেনী, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা জেলাসহ রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে দিনাজপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কক্সবাজারের টেকনাফে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য