করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের প্রথম প্লাজমিড ডিএনএ টিকা জরুরি অনুমোদন পেয়েছে ভারতে। অন্তর্বর্তী গবেষণায় তিন ডোজের টিকাটি উপসর্গমূলক করোনার বিরুদ্ধে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
ওষুধ প্রস্তুতকারক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান জাইডাস ক্যাডিলার গবেষণালব্ধ এ টিকা। উৎপাদন করবে ক্যাডিলা হেলথকেয়ার। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের পর ছোঁয়াচে করোনা প্রতিরোধে ভারতীয় গবেষকদের উদ্ভাবিত দ্বিতীয় টিকা ক্যাডিলার জাইকভ-ডি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে কয়েকটি করোনা প্রতিরোধী ডিএনএ টিকা পশুদেহে কার্যকারিতা দেখালেও মানবদেহে কাজ করেনি। এ ছাড়া ভারতে ১২ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সীদের দেহে করোনা প্রতিরোধী কোনো টিকার পরীক্ষাও প্রথম করেছে ক্যাডিলা।
এক হাজার শিশু-কিশোরের দেহে টিকাটি ‘নিরাপদ ও সহজে সয়ে গেছে’ বলে দাবি করেছে গুজরাটের আহমেদাবাদভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। বছরে টিকাটির ১২ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে চায় ক্যাডিলা।
১৯ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে সাত মাসে ভারতে ৫৭ কোটির বেশি মানুষ করোনার এক বা দুই ডোজ টিকা নিয়েছে। কোভ্যাক্সিন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণালব্ধ কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি টিকা দেয়া হয়েছে তাদের। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও জনসনের টিকাতেও অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার।
ভারতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ১৩ শতাংশ দুই ডোজ ও ৪৭ শতাংশ প্রথম ডোজ নিয়েছে।
ক্যাডিলার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনা টিকার সবচেয়ে বড় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অংশ নিয়েছিলেন ২৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
এ ছাড়া মহামারির ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ চলার সময় টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে ক্যাডিলা। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, রূপ পরিবর্তনকারী অধিক সংক্রামক করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকর তাদের টিকা; বিশেষ করে ডেল্টার বিরুদ্ধে।
প্রখ্যাত ভাইরাসবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহিদ জামিল বলেন, ‘টিকাটি নিয়ে আমার খুব আগ্রহ আছে। কারণ এর বেশ কিছু সম্ভাবনাময় দিক আছে। টিকা কাজ করলে করোনা প্রতিরোধে ভবিষ্যৎ টিকা কার্যক্রম পরিচালনা অনেক সহজ হবে।’
কিভাবে কাজ করে এ টিকা
মানুষসহ যে কোনও জীব ও উদ্ভিদের জীবনের কাঠামো নিয়ন্ত্রিত হয় ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) ও রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের (আরএনএ) মাধ্যমে। বংশানুক্রমে মা-বাবা থেকে সন্তানদের মধ্যে জিনগত তথ্য স্থানান্তরিত হয় ডিএনএ ও আরএনএর মাধ্যমে।
যে কোনও টিকারই মতো মানবদেহে একবার প্রবেশ করলে দেহের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে ক্ষতিকর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শিখিয়ে দেয়। ডিএনএভিত্তিক টিকাও এর ব্যতিক্রম নয়।
জাইকভ-ডি টিকা রোগ প্রতিরোধে প্লাজমিড, অর্থাৎ ছোট ছোট চক্রাকার ডিএনএ ব্যবহার করে। প্লাজমিডে লুকানো থাকে জিনগত তথ্য।
ত্বকের দুটি স্তরের মাঝখানে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়। এরপর প্লাজমিডের মাধ্যমে সে তথ্য পৌঁছে যায় কোষে। কোষের সুচালো বহিঃ আবরণ আংশিক তৈরিতে সাহায্য করে তা।
মানবদেহে প্রবেশের পর কোষের ‘স্পাইক প্রোটিন’ বা সুচালো বহিঃ আবরণে আটকে থেকে বংশবিস্তার করে করোনাভাইরাস। করোনা প্রতিরোধী বেশির ভাগ টিকাই কোষে স্পাইক প্রোটিনের খণ্ডাংশ তৈরির বার্তা পৌঁছে দেয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহে অ্যান্টিবডি উৎপাদন শুরু করে এবং সেগুলোকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখায়।
জাইকভ-ডির বিশেষত্ব ও অন্য টিকার সঙ্গে পার্থক্য
প্রথম ডোজ গ্রহণের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় এবং ৫৬ দিন পর তৃতীয় ডোজ দেয়া হয়।
ভারতের প্রথম সুচমুক্ত করোনা টিকা এটি। সুচবিহীন ইনজেকশন ফার্মাজেট ব্যবহার করে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়। ত্বকের দুই স্তরের মাঝখানে এটি প্রয়োগের প্রক্রিয়া ব্যথামুক্ত।
সুচবিহীন ইনজেকটরের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে তরলের সরু প্রবাহ দেহে প্রবেশ করানো হয়। প্রবেশের পর ত্বকের ভেতরে নির্ধারিত টিস্যুতে টিকা পৌঁছে যায়।
দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা সংরক্ষণ করা হয়। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেও এটি ভালো থাকে কমপক্ষে তিন মাস।
ফলে উপমহাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী টিকাটি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটি পরিবহন ও সংরক্ষণও বেশ সহজ।
অন্য টিকার তুলনায় ডিএনএ টিকা সস্তা ও নিরাপদ।
ডিএনএ টিকা অপ্রচলিত কেন
যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি ডিএনএ টিকা অনুমোদন পেয়েছে। তবে এগুলো শুধু প্রাণীদেহে ব্যবহারযোগ্য। এর মধ্যে একটি টিকা ঘোড়ার রোগ এবং আরেকটি কুকুরের ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে ১৬০টির বেশি ডিএনএভিত্তিক টিকা। বেশির ভাগ টিকাই বিদ্যমান ক্যানসার ও একটি এইচআইভি ভাইরাসবাহী এইডস রোগের চিকিৎসার জন্য।
বিপরীতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বিশ্বের প্রথম মানব ডিএনএভিত্তিক টিকা জাইকভ-ডি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে কয়েকবার মানবদেহে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ডিএনএ টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হয়েছে সেসব প্রচেষ্টা। প্রাণীদেহে এ ধরনের টিকা ভালো কাজ করলেও মানবদেহে সুরক্ষায় খুব একটা কার্যকারিতা দেখায়নি।
মানবকোষে প্লাজমিড ডিএনএ টিকা কিভাবে প্রয়োগ করলে তা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর হবে, সে পথ উদঘাটনই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
এ ছাড়া অন্যান্য টিকার তুলনায় জাইকভ-ডির সুরক্ষা গড়ে তুলতে এক ডোজ বেশি লাগছে। এ অবস্থায় যদিও অন্য সব টিকার মতো জাইডাসের টিকার দুই ডোজে করোনা প্রতিরোধে সাফল্যের হারও বিশ্লেষণ করে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য