বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ কোটির বেশি মানুষ। মহামারির দেড় বছরেও গতি হারায়নি সংক্রামক রোগটি। এমন পরিস্থিতিতে জোরেশোরে করোনা প্রতিরোধী গণটিকা কার্যক্রম চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন, ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন, রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি, চীনের সিনোভ্যাক-সিনোফার্মাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করোনা প্রতিরোধী টিকার প্রয়োগ চলছে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে।
সবগুলো টিকাই দেয়া হচ্ছে কাঁধ ও বাহুর সংযোগস্থলে পুরু মাংসপেশিতে। যে কারণে ছবিতে দেখা যায়, টিকা প্রয়োগের সময় গ্রহীতাদের হাতের ওপর ইনজেকশনের সুচটি খাড়া অবস্থায় ধরে রেখেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
টিকা শিরায় প্রয়োগ করা হলে সুচটির অবস্থান থাকত অনেকটা শোয়ানো ভঙ্গিতে।
শিক্ষা ও বিজ্ঞান সাময়িকী দ্য কনজারভেশনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সব না হলেও বেশির ভাগ রোগের টিকাই দেয়া হয় মাংসপেশিতে। একে বলা হয় ‘ইন্ট্রামাসকিউলার ইনজেকশন’। এর বিপরীতে কিছু রোগের টিকা খাওয়ানো হয়, যেমন রোটাভাইরাস; আর হাম, মাম্পস ও রুবেলার মতো রোগগুলোর টিকা প্রয়োগ করা হয় ত্বকের ঠিক নিচে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ করোনা টিকার প্রযুক্তিতে ভিন্নতা থাকলেও সবগুলোর কাজ একই- আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অ্যান্টিজেনের সঙ্গে পরিচিত করে তোলা।
দেহে উপস্থিতি রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিভিন্ন অংশ হলো অ্যান্টিজেন। করোনার ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন শনাক্ত করে তা নির্মূলের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে কাজ করে টিকাগুলো।
প্রশ্ন হলো, কেন মাংসপেশিতেই দেয়া হয় এই টিকা। ত্বকের নিচের চর্বি কিংবা রক্তের শিরায় কেন দেয়া হয় না। অথবা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাকের মাধ্যমে যেহেতু দেহে করোনা প্রবেশ করে, সেখানে ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকাতে সরাসরি নাকেই কেন টিকাটি দেয়া হয় না?
যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশে ন্যাজাল টিকা অনুমোদিত। সাধারণ ফ্লু প্রতিরোধে মিস্টের মতো নাকে স্প্রে করে দেয়া হয় এই টিকা।
কিন্তু স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করোনা প্রতিরোধে কার্যকারিতার দিক থেকে ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকার বিকল্প এখন পর্যন্ত নেই, যা প্রয়োগ করা হয় মাংসপেশিতে।
মাংসপেশির জোর
ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউটের ইমিউনোলজি গবেষক জোয়ানা গ্রুম জানান, আমাদের ত্বকের নিচে চর্বির স্তর ছাড়াও মাংসপেশিতে চমৎকার রক্তপ্রবাহের ব্যবস্থাও রয়েছে। তাই মাংসপেশিতে টিকা দিলে তা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে দ্রুত দেহের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যেতে সক্ষম।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মাংসপেশিতে রোগ প্রতিরোধী কোষ থাকে, যা ‘ডেনড্রিটিক সেল’ নামে পরিচিত। এসব কোষ দ্রুত নিজ দেহের বহিঃআবরণে অ্যান্টিজেনকে আটকে ফেলে, অনেকটা আঠা দিয়ে পতাকা জড়িয়ে নেয়ার মতো।
এরপর এসব ডেনড্রিটিক সেল সারা দেহে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে আমাদের শ্বেত রক্তকণিকা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলোকে চিনে নিতে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সীমিত
মাংসপেশিতে টিকা প্রয়োগে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেহের ওই নির্দিষ্ট অংশেই সীমাবদ্ধ থাকে। কেবল ইনজেকশন নেয়া স্থানটিতে জ্বলুনি বা ফুলে যাওয়ার মতো সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
ত্বকের নিচে চর্বিতে টিকা প্রয়োগে প্রদাহের মাত্রা বেশি হতে পারে, কারণ চর্বিতে রক্ত চলাচল খুব কম। টিকার উপাদানও ভালোভাবে শুষে নিতে পারে না চর্বি। অপরদিকে রক্তের শিরায় টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রদাহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কেন হাতের মাংসপেশিতেই টিকা দেয়া হয়
এ ছাড়া মাংসপেশির আকৃতি, টিকার সহজলভ্যতা আর রোগীর গ্রহণক্ষমতার ওপরেও কীভাবে টিকা দেয়া হবে, তা নির্ভর করে।
তিন বছরের বেশি বয়সী শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা দেয়া হয় বাহুর ওপরের অংশে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতের আকৃতি ছোট ও সুগঠিত নয় বলে তাদের টিকা দেয়া হয় উরুর পেছনের অংশে।
আবার ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধে বা মহামারির বিস্তার ঠেকাতে অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়ার চাপ থাকে। সময়ের স্বল্পতা ও সামাজিক আচারের কারণে গণটিকা কেন্দ্রে পোশাক খুলে উরুতে টিকা নেয়া প্রায় অসম্ভব।
এদিক থেকে জামার হাতা গুটিয়ে টিকা নেয়া ও দেয়া রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মী- উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক।
সবদিক বিবেচনায় করোনা টিকা নেয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্কের হাতের মাংসপেশির বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য