কয়েক লাখ বছর আগেও সংখ্যার সাংকেতিক চিহ্নের ব্যবহার ছিল বলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
কিন্তু জীবন বদলে দেয়া এই উদ্ভাবনের উৎস কী, কোথায়, কবে; কিভাবে মানুষ গুণতে শিখেছিল; গণিত মানবজীবনে কখন, কেন আর কিভাবে প্রাত্যাহিক ও অপরিহার্য হয়ে উঠলো- সেসবের বিস্তারিত জানা গবেষকদের পরবর্তী উদ্দেশ্য।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে বর্তমান ফ্রান্সের পশ্চিমাঞ্চলে হায়েনার উরুর শক্ত একটি হাড়ের টুকরো আর একটি পাথরের খণ্ড নিয়ে কাজ শুরু করেছিল এক নিয়ানডারথাল।
যখন তার কাজ শেষ হয়, ওই হাড়ের টুকরোতে পাথর দিয়ে খোদাই করা রেখার আকারে প্রায় সমান্তরাল নয়টি খাঁজ তৈরি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কিছু বোঝাতে চাওয়া হয়েছে সেটির মাধ্যমে।
বিজ্ঞানের পরিভাষায় মানুষ তথা হোমো স্যাপিয়েন্সের আদি রূপ হলো নিয়ানডারথাল। প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে নিয়ানডারথালরা বিলুপ্ত হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।
আর হায়েনার হাড়ের ওই টুকরোটি অঙ্গুলেম অঞ্চলের কাছে লে ফারদেলে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্থলে খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।
সংখ্যা আবিষ্কার ও ব্যবহারের শুরুটা নিয়ে এখন পর্যন্ত গবেষণার সংখ্যা বা পরিসর খুব বেশি নয়।
২০১৮ সালে প্রথম এ বিষয়ে নিজের গবেষণা প্রকাশ করেন ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অফ বোর্দ্যুর প্রত্নতত্ত্বের গবেষক ফনশেস্কো দেরিকো।
তিনি জানান, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বেশিরভাগই শিল্পকর্ম বলে মনে করা হলেও এই হাড়ের টুকরোটি অন্যরকম বলে মনে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। এটি তৈরির কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলে ধারণা তাদের।
দেরিকো বলেন, ‘ধারণা করা হয় যে হাড়ের টুকরোটিতে কোনো সাংখ্যিক তথ্য লিপিবদ্ধ ছিল। যদি এ ধারণা সঠিক হয়, তার মানে হলো শারীরিকভাবে আধুনিক আজকের মানুষই শুধু সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত নয়।
নিয়ানডারথালদের মধ্যেও গণনার এ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল।’
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভল্যুশনারি অ্যান্থ্রপোলজির বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী রাসেল গ্রে জানান, সংখ্যার উৎস নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ প্রায় নেই বললেই চলে।
এমনকি সংখ্যা কী, সে বিষয়েও একমত নন বেশিরভাগ গবেষক।
তবে ২০১৭ সালের এক গবেষণায় সংখ্যার একটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, সংখ্যা হলো মূর্ত বা অস্তিত্বশীল বস্তুর সঠিক মান নিরূপণে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত বর্ণ, শব্দ ও সাংকেতিক চিহ্ন।
এখন বিভিন্ন খাতে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা নিজ নিজ অবস্থান বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভিন্ন সংজ্ঞা দেয়ায় এবং পৃথক গবেষণার ক্ষেত্রে বিষয়টি সমস্যা সৃষ্টি করায় সংখ্যার উৎস নিয়ে অনুসন্ধানের আগ্রহ ও প্রয়োজন বাড়ছে।
পৃথিবীতে সংখ্যার আবির্ভাব নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা দলকে চলতি বছর এক কোটি ইউরোর তহবিল দিয়েছে ইউরোপীয় রিসার্চ কাউন্সিল।
সংখ্যা সহজাত প্রবৃত্তির অংশ
এক সময় গবেষকরা ভাবতেন, পরিমাণ নিয়ে ধারণা প্রাণীজগতে একমাত্র মানুষের মধ্যেই আছে।
কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গবেষণায় বেরিয়ে আসে, অনেক প্রাণীর মধ্যেই এই ক্ষমতা আছে। যেমন মাছ, মৌমাছি, সদ্য জন্ম নেয়া মুরগী মুহূর্তেই চার পর্যন্ত যেকোনো সংখ্যা চিনতে পারে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এ দক্ষতার নাম ‘সাবটিজিং’।
কিছু প্রাণীর মধ্যে এ দক্ষতার পরিসর আরও বড়। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন সংখ্যার দিক থেকে দৃশ্যমান পার্থক্য আছে এমন দুটি বস্তুর সেই পার্থক্যও বুঝতে পারে তারা।
যেমন ১০টি ও ২০টি বস্তুর দুটি ভাগের পার্থক্য করতে পারবে এসব প্রাণী। কিন্তু ২০টি বস্তুর সঙ্গে ২১টির পার্থক্য নিরূপণ করতে পারবে না।
কোনো সংস্কৃতি বা ভাষার সংস্পর্শে না আসা ছয় মাস বয়সী মানবশিশুর মধ্যেও এ দক্ষতা বিদ্যমান।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ তুবিঙ্গেনের স্নায়ুবিজ্ঞানী আন্দ্রিয়াস নিদার বলেন, সহজাতভাবেই সংখ্যা চেনে মানুষ। দিনে দিনে প্রাকৃতিকভাবে এটি দক্ষতায় পরিণত হয়।
আবার অনেক গবেষক মনে করেন, অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে সীমিত পরিসরে এ গুণ থাকলেও মানুষের এ গুণ অনেক বেশি পরিশীলিত। এর পুরোটা প্রাকৃতিক অর্জন নয়।
সাংস্কৃতিক বিবর্তন, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ কিংবা অন্যের কাছ থেকে শেখার মাধ্যমে সাংকেতিক চিহ্ন ও মৌখিক শব্দে সংখ্যা প্রকাশ ও উপস্থাপন করতে শেখে মানুষ।
পরিশিলীত চর্চার মাধ্যমে সংখ্যার উদ্ভব
ফ্রান্সের লে ফারদেলে ৭০’র দশকে যে হাড়ের টুকরোটি পাওয়া গেছে, সেটিই একমাত্র নয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গুহাতেও প্রায় ৪২ হাজার বছর আগের একটি বেবুনের উরুর হাড়ের টুকরো পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেটিতেও খাঁজ কাটা।
গবেষকদের ধারণা, অঞ্চলটিতে আধুনিক মানুষের উত্থান শুরুর পর সংখ্যার হিসাব রাখতে তারাও হাড় ব্যবহার করতেন।
বেবুনের হাড়টির অনুবীক্ষণিক বিশ্লেষণ করে তাতে চারটি ভিন্ন বস্তু দিয়ে তৈরি ২৯টি খাঁজ মিলেছে। এর অর্থ হলো, চারটি ভিন্ন ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে সেটি।
সম্পত্তি গণনা
ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর প্রত্নতাত্ত্বিক ক্যারেনলেগ ওভারম্যান ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৩৩টি সমসাময়িক শিকারী গোষ্ঠীর তথ্য তুলনা করে দেখিয়েছেন।
তিনি আবিষ্কার করেছেন, সরল সংখ্যা পদ্ধতি অর্থাৎ চার ও এর কম সংখ্যা দেখা যেতো হাতে গোণা কয়েকটি বস্তুগত সম্পত্তির ক্ষেত্রে। যেমন অস্ত্র, অলঙ্কার ইত্যাদি। যেসব গোষ্ঠীর মধ্যে এর চেয়ে বড় সংখ্যা দেখা যেতো, তারা তুলনামূলক ধনী ছিল।
ওভারম্যানের মতে, জটিল সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে তখনকার সমাজ বা গোষ্ঠীকে অধিক এবং নানারকম বস্তুগত সম্পত্তির অধিকারী হতে হতো।
ওভারম্যান জানান, বেশিরভাগ গোষ্ঠীই ৫-ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করতো। অর্থাৎ হাতের আঙুল থেকেই গণনা শুরু করত তারা।
এর বেশি গোণার দরকার হলে নতুন নতুন পদ্ধতির প্রচলন ঘটাতো তারা। দিনে দিতে গণনার সুবিধার্থে তাদের মধ্যে কাঠির ব্যবহার শুরু হয়। নীল নদের অববাহিকায় প্রাচীন মেসোপ্টেমিয়া সভ্যতায় এর প্রমাণ মেলে।
বলা হয়, সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে গণনার সুবিধার্থে মেসোপ্টেমিয়ার মানুষ কাদায় তৈরি টোকেন ব্যবহার করত।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে দুই বছরে ৫০ হাজারের বেশি সেনা সদস্য হারিয়েছে রাশিয়া। এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে বার্তা সংস্থা বিবিসি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মৃত সেনাদের তথ্য সংগ্রহ করে আসছেন বিবিসির প্রতিবেদকরা।
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে। এরপর থেকে বিবিসি রাশিয়া, স্বাধীন মিডিয়া গ্রুপ মিডিয়াজোনা ও স্বেচ্ছাসেবীরা মৃতের সংখ্যা গণনা করে আসছে। এই পরিসংখ্যান তৈরিতে কবরস্থানে সেনাদের কবর, বিবিসির অফিসিয়াল রিপোর্ট, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।=
বিবিসি অনুসন্ধান অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে ২৭ হাজার ৩০০ জনের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তবে সেনা নিহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি রাশিয়া।
বিবিসি বলছে, সামগ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রুশ কর্তৃপক্ষের দেয়া সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা আট গুণ বেশি। যদিও বিবিসির বিশ্লেষণে পূর্ব ইউক্রেনে রুশ-অধিকৃত দোনেস্ক ও লুহানস্কে মৃতের সংখ্যা হিসাবে নেয়া হয়নি। সেটি হিসাবে নিলে রাশিয়ার পক্ষে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে।
অন্যদিকে বিবিসি ও মিডিয়াজোনার সঙ্গে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া জুড়ে ৭০টি কবরস্থানে নতুন সামরিক কবর গণনা করছেন। কবরস্থানগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে।
ছবি এবং ভিডিও থেকে বোঝা যায় যে এই নতুন কবরগুলোর বেশিরভাগই ইউক্রেনে নিহত রুশ সেনা ও অফিসারদের।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভান্স বলেন, ‘২০২২ সালে যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া জটিল সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য তার পেশাদার ও অভিজ্ঞ সেনাদের ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
‘যুদ্ধের মধ্যে সেই অভিজ্ঞ সেনাদের অনেকের মৃত বা আহত হওয়ায় তাদের স্থানে অল্প প্রশিক্ষণ বা সামরিক অভিজ্ঞতা আছে এমন স্বেচ্ছাসেবক, বেসামরিক এবং বন্দিদের ব্যবহার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পেশাদার সেনারা যা করতে পারে, বিকল্প সেনারা তা করতে পারে না।’
আরও পড়ুন:মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র বৃষ্টিপাত ও ঝড়। এ ঘটনায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যায় স্থানীয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যার কবলে পড়ে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে রয়টার্স।
দেশটির জাতীয় আহওয়া কেন্দ্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আমিরাতের আবুধাবি প্রদেশের ওমান সীমান্তে অবস্থিত আল আইন শহরে ২৫৪ মিলিমিটার (৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ৭৫ বছরে অর্থাৎ ১৯৪৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত এটিই দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
মঙ্গলবার দিনের শেষভাগে বৃষ্টিপাত কমে এলেও বুধবার সকাল থেকেই জলাবদ্ধতার কারণে দুবাই বিমানবন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বেশ কিছু ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়।
বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরের অন্যতম দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের ফ্লাইট শিডিউল উল্লেখযোগ্য আকারে বিঘ্নিত হয়েছে। অসংখ্য ফ্লাইটকে ভিন্ন দেশে অবতরণ করতে বলা হয়েছে বা আগমন বিলম্বিত করা হয়েছে।
দুবাই ছাড়তে আগ্রহী যাত্রীদের বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে ফ্লাইট শিডিউল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে বলা হয়েছে।
বিমানবন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক এক্স অ্যাকাউন্টে জানানো হয়, ‘অত্যন্ত বৈরি পরিবেশে আমরা বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থিতিশীল করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, আরব আমিরাতের ৭০ বছর বয়সী এক নাগরিক মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন। দেশের উত্তরের রাস আল খায়মাহ প্রদেশে আকস্মিক বন্যায় তার গাড়িটি ডুবে যায়।
আরব আমিরাতের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারী বৃষ্টিপাতে দেশের কিছু অংশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হয়েছে, যার মধ্যে আছে ধসে পড়া সড়ক ও দালান। এগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে ওমানে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।
কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে।
বুধবার এক সূত্র এএফপিকে এ কথা জানিয়েছে।
সামরিক কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র জানান, গরম আহাওয়ার কারণে দেশটির বয়স্ক কারাবন্দিদের ‘প্রয়োজনীয় যত্ন’ নেয়া হচ্ছে।
এক্ষেত্রে ৭৮ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ীর ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ সাময়িক বা সাজা হ্রাসের অংশ কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি অভুত্থানে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। আটক করা হয় সু চি সহ বেশ কিছু নেতাকে।
অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়।
জান্তা সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু মামলায় গোপনে বিচারকাজ শেষ করে কয়েক বছরের কারাদণ্ড হয়েছে অং সান সু চির।
ইসরায়েলে ইরান সরাসরি হামলা চালানোর পর পশ্চিমাসহ অনেক দেশই বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আরোপ করা হয়েছে নানা নিষেধাজ্ঞা। এবার যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর আরও কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে কথা বলেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদন জানিয়েছে।
ইয়েলেন বলছেন, নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে ইরানের ওপর। তাদের তেল বাণিজ্যেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে, আমি পুরোপুরি আশা করি যে, আমরা আগামী দিনে ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দেব।’
ইয়েলেন বলেন, ‘আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞার পূর্বরূপ দেখি না। তবে আমার কাছে ইরানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন ব্যাহত করার সব বিকল্প আছে।’
তিনি বলেন, আগেও ট্রেজারি এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট তেল রপ্তানি করার ক্ষমতা হ্রাস করে ইরানের ‘অস্থিতিশীল’ আচরণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রেজারি সেক্রেটারি বলেন, ‘স্পষ্টতই, ইরান কিছু তেল রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আরও কিছু করার আছে। আমি আমাদের প্রকৃত নিষেধাজ্ঞার কার্যক্রমের পূর্বরূপ দেখাতে চাই না, তবে অবশ্যই আমরা সমাধান করতে পারি।’
গত শনিবার ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রথম বারের মতো সরাসরি হামলা চালানো শুরু করে ইরান। শত শত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করে এই হামলা হয়।
এই হামলায় একটি সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে আহত হয়েছে এবং একটি সামরিক স্থাপনা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই হামলার পর পরই প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে নানা পক্ষ।
আরও পড়ুন:
ইরানের জবাবের পর ইসরায়েল যে পাল্টা হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার প্রতি আরও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি বলেছেন, ইসরায়েল যদি আবার আক্রমণ চালায়, তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার জবাব দেবে ইরান।
মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাঘেরি বলেন, ‘ইসরায়েলের যেকোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তেহরানের পাল্টা আক্রমণ হবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। ইরান এবার জবাব দেয়ার জন্য ১২ দিন অপেক্ষা করবে না; এমনকি, এক ঘণ্টাও দেরি করবে না।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল ফজল শেকারচি। তিনি বলেন, ইরান প্রমাণ করেছে যে তারা যুদ্ধবাজ নয় ও যুদ্ধের বিস্তার চায় না। তবে ইসরায়েল যদি প্রতিশোধ বা উসকানিমূলক কোনো আগ্রাসন চালায়, তবে ইরান আরও শক্তিশালী জবাব দেবে।
গত শনিবার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। সম্প্রতি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানায় তেহরান। দামেস্কে ১ এপ্রিলের ওই হামলার পরপরই কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইরান।
ইরানের হামলার জবাবে ইসরায়েল ঠিক কী পদক্ষেপ নেবে, তা নির্দিষ্ট করেননি জেনারেল হারজি। তাছাড়া কবে, কখন ইসরায়েল এই জবাব দেবে, তার কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি তিনি। ইসরায়েলের মিত্ররা ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তবে তারা এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা ইরানের আছে
ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ইরানকে সরাসরি সমর্থন দেয়নি চীন। তবে এবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যা বললেন, তাতে দেশটি ইরানের পক্ষে আছে বলেই মনে হতে পারে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের। এ অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, তারা সেটি দেখছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ সময় ওয়াং ই বলেন, ইরান নিজেদের প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের চিন্তা করে হামলা করেছে বলে জানিয়েছে। সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
এ নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত চীনের বার্তা সংস্থা শিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোতে হামলা না করার দিকে যেভাবে ইরান জোর দিয়েছে তাতে সমর্থন দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ওয়াং ইকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা নিয়ে ইরানও চিন্তিত। এ নিয়ে তারা পরিকল্পনা করছে। এই উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে সে জন্য তারা সব করতে রাজি।
ইরানের হামলার পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফাহিয়ান আল সৌদের সঙ্গেও কথা বলেন ওয়াং ই। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে রিয়াদের সঙ্গে কাজ করতে বেইজিং প্রস্তুত বলে জানান তিনি। এমনকি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়েও কাজ করবে চীন।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে একজন কমান্ডারসহ ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সাত কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ হামলার জবাবে গত রোববার ভোরে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের হামলায় খুব সামান্যই ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান সহায়তা করেছে।
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েল কী করে, তা দেখতে উদগ্রীব পুরো বিশ্ব। তবে এখনই ইসরায়েলকে কিছু না করার পরামর্শ দিয়েছে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। উত্তেজনা না বাড়ানোর জন্য সোমবার ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রগুলো আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ইসরায়েলকে সংযত থাকতে বলেছেন।
আরও পড়ুন:সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাব হিসেবে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কঠোর জবাব দেয়া হবে বলে ইসরায়েলের যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ১২-এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে টাইমস অফ ইসরায়েল।
সিরিয়ায় গত ১ এপ্রিল ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তেহরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো।
হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। এ হামলায় সাত বছর বয়সী এক ইসরায়েলি শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। এর বাইরে বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
টাইমস অফ ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, (ইরানকে) এমন বার্তা পাঠানোর জন্য প্রতিক্রিয়াটি জানানো হবে যে, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো মাত্রার হামলারই জবাব নিশ্চিত করা হবে’, সেটা যেন তারা বুঝতে পারে। প্রতিক্রিয়ায় এটিও স্পষ্ট করা হবে যে, কয়েকদিন ধরে ইরান যে হামলার পাল্টা জবাব দিয়ে ‘সমীকরণ স্থাপনের’ কথা বলছে, তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। ভবিষ্যতেও ইরানের ভূখণ্ড, তাদের আন্তর্জাতিক কনস্যুলেটগুলোকে হামলার জবাব হিসেবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ট ও আইডিএফের চিফ অফ স্টাফ হারেজি হালেভি মনে করেন, ইসরায়েলের অবশ্যই (ইরানের হামলার) জবাব দেয়া উচিৎ। সেইসঙ্গে তারা এটাও বিবেচনায় রাখছেন যে, এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়।
হামলার জবাব দিয়ে ইসরায়েল কোনোভাবেই আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়াতে চায় না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করেই তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চায়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার আবারও আলোচনায় বসবে মন্ত্রিসভা। তবে তারা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসবে না।
এর ফলে আজ রাতে আর ইরানকে পাল্টা জবাব দেয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলে হামলার জবাবে ইরানের ওপর কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না বলে তেল আবিবকে সতর্ক করে দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
সিরিয়ায় গত ১ এপ্রিল ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তেহরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি আরও জানায়, ইরানের হামলার বিষয়ে ‘সতর্কভাবে’ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে ইসরায়েলকে তাগিদ দিয়েছেন বাইডেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রোববার বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলে প্রথমবারের মতো সরাসরি ও নজিরবিহীন ইরানি হামলার জবাবে ‘খুবই সতর্কভাবে ভেবেচিন্তে এবং কৌশলগতভাবে’ ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতিক্রিয়া ঠিক করতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল ‘সবচেয়ে ভালোটা’ পেয়েছে বলে মনে করে বাইডেন প্রশাসন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য