করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যাপক সংক্রমণে পর্যদুস্ত ভারত। দেশটিতে টানা নয়দিন ধরে তিন লাখের বেশি মানুষের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে দৈনিক সংক্রমণ চার লাখ ছাড়িয়ে যায়। শনাক্তের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক দিয়ে গত কয়েকদিনে অন্যান্য দেশকে পেছনে ফেলেছে ভারত।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতজুড়ে করোনা সংক্রমণের এই ঝড়ো গতিতে বিস্মিত দেশটির বিজ্ঞানীরা। হঠাৎ ব্যাপক সংক্রমিতের হার তাদের ধাঁধায় ফেলেছে।
ভারতে করোনা আক্রান্তদের চিহ্নিত করতে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বড় আকারে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির ভিত্তিতে ওই গবেষণায় অনুমান করা হয়েছিল, বড় বড় শহরের কয়েকটি অঞ্চলে জনসংখ্যার ৫০ ভাগই কোনো না কোনো সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজির মহামারি বিশেষজ্ঞ মনোজ মুরেকার। গবেষণায় দাবি করা হয়, প্রথম ঢেউয়ে ভারতে ২৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ।
এই পরিসংখ্যানে নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির মহামারি বিশেষজ্ঞ রামনান লক্ষ্মণারায়ণের মতো অনেক গবেষকই আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ায় ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ততটা মারাত্মক হবে না। তবে বাস্তবে তা একেবারেই ঘটেনি।
রামনান লক্ষ্মণারায়ণ বলছেন, ‘এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, প্রথম ঢেউটি মূলত শহরাঞ্চলের দরিদ্রদের আক্রান্ত করেছিল। ফলে অ্যান্টিবডি গবেষণার ফলটি পুরো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেনি। দরিদ্রদের বাইরের অন্য গ্রুপগুলো হয়ত অরক্ষিতই থেকে গেছে।’
ভারতের ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজিস্ট গগনদীপ কঙ্গও এই ধারণার সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, ‘ভাইরাসটি এবার হয়ত এমন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়েছে, যারা এর আগে (প্রথম ঢেউয়ের সময়) নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে শহুরে উচ্চবিত্তরা, যারা প্রথম ঢেউয়ের সময়ে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখেছিল, তবে দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা আর সম্ভব হয়নি।’
ভারতে গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করে। চলতি বছরের মার্চের দিকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। গত বছরের চেয়ে সংক্রমণ এবার দ্বিগুণেরও বেশি।
ভারতের মুম্বাইয়ে পি ডি হিন্দুজা হসপিটাল অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পালমোনারি মেডিসিনের গবেষক জারির উদওয়াদিয়া বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখে মনে হচ্ছে, প্রথমটি বাথটাবে রাখা পানির ছোট ঢেউ ছিল।’
দেশটির হরিয়ানা রাজ্যের সনিপত শহরের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভায়রোলজিস্ট শহিদ জামিলও করোনার বর্তমান ধাক্কার তীব্রতাকে বিস্ময়কর বলছেন। তিনি বলেন, ‘করোনার নতুন ধাক্কা আসছে, বুঝেছিলাম। কিন্তু তা এতটা শক্তিশালী হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।’
ভারতের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের ভাষ্য, ভাইরাসের সংক্রমণের গতি ও মাত্রা হঠাৎ এত কেন বাড়ল, তা বিশ্লেষণ করতে বসলে করোনার নতুন ধরনের দিকেই চোখ যায়।
গবেষক জারির উদওয়াদিয়ার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, এখন ঘরের কেউ একজন করোনায় আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে পরিবারের বাকি সদস্যরাও সংক্রমিত হচ্ছেন। করোনার প্রথম ধাক্কার চিত্র এমনটা ছিল না। পরিবারে একজনের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এলেও বাকিরা সে সময় এতে বাকি সদস্যরা আক্রান্ত হতেন না।
এর জন্য উদওয়াদিয়া করোনার অতি সংক্রামক নতুন ধরনকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারের কোনো একজনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাকি সদস্যরাও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বা হবেন।’
জিনোমিক সারভিল্যান্সের ডেটায় দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার বি.১.১.৭ ধরন ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ধরন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
গত বছরের শেষের দিকে করোনার নতুন আরেকটি ধরন বি.১.৬১৭ ভারতে শনাক্ত হয়। এটি এখন মহারাষ্ট্রে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। বি.১.৬১৭ ধরনটি বিশ্বজুড়েই এখন উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, এর মধ্যে দুটি মিউটেশন রয়েছে যা আগের ধরনের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। সেই সঙ্গে এটি মানবেদেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে সক্ষম। পৃথিবীর ২০টির মতো দেশে এরই মধ্যে এ ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।
ভাইরাস বিশেষজ্ঞ শহিদ জামিল বলেন, ভারতের ল্যাবরেটরিতে করোনার বি.১.৬১৭ ধরন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ধরনটি কত দ্রুত পুনরুৎপাদিত হয় ও টিকা নেয়া ব্যক্তির রক্ত এর সংক্রমণ ঠেকাতে পারে কি না, তা দেখতে বিজ্ঞানীরা ল্যাবে ধরনটির কালচার করার চেষ্টা করছেন।
তবে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শনাক্তের হার বেড়েছে বলেও মনে করছেন কয়েকজন গবেষক।
দিল্লির পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ‘মানুষজন দেখা করছে, বাধাহীনভাবে চলাচল করছে, ভ্রমণ করছে। এসব কারণে সংক্রমণ ফের প্রকট হয়েছে।’
দিল্লির মহামারিবিদ রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ‘জনমনে এ ধারণা গেঁথে বসেছিল যে, ভারত করোনাকে হারিয়ে দিয়েছে। এ কারণে গত কয়েক মাসে বিপুল জমায়েত নিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে শুরু করে ধর্মীয় উৎসব ও বিয়ে অনুষ্ঠান উদযাপন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ভারতজুড়ে করোনার টিকাদান কার্যক্রম সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। টিকা নেয়ার পর অনেকের মধ্যে এক ধরনের গা ছাড়া ভাব এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তোয়াক্কা করছেন না তারা।’
আরও পড়ুন:এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
মন্তব্য