২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সব কিছুই জানতেন, আর তিনি সমর্থন জানিয়ে গেছেন।
নৃশংস এই হামলার ১৭ বছর পূর্তির দিন শনিবার ক্ষমতাসীন দল নানা আয়োজনে এই হামলায় নিহতদের স্মরণ করছে। একই দিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি সেই হামলার প্রধান লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
সেই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা হামলার বর্ণনার পাশাপাশি এর আগের ও পরের বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরেন। বলেন, তাকে হত্যার জন্য যে দীর্ঘ প্রচেষ্টা ছিল, গ্রেনেড হামলা তারই ধারবাহিকতা।
সেই হামলায় শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও দলের ২২ নেতা-কর্মী সেদিন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৫০০ মানুষ। পেছনে ফিরে তাকালে কী অনুভূতি হয়- এমন প্রশ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ সাল থেকে শুরু করে এসব ঘটনা ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গ্রেনেড ও বোমা হামলার কথা তুলে ধরেন।
সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলায় তিন-চারজন নিহতের পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর আহত হওয়ার কথাও বলেন।
তিনি বলেন, ‘কূটনীতিকের ওপর হামলা করা এবং আহত করা এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিদেশে খুব খারাপভাবে নষ্ট করে। আমরা একটি সন্ত্রাসবিরোধী র্যালি করার সিদ্ধান্ত নিই।’
সমাবেশটি আওয়ামী লীগ মুক্তাঙ্গনে করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছিল না। পরে সিদ্ধান্ত হয়, সেটি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে।
আগের রাতে ১১টার দিকে হঠাৎ অনুমতি দেয়া হলেও সমাবেশটি দলীয় কার্যালয়েই করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মাইক-টাইক লাগানো হয়ে গেছে, পোস্টার ছাপানো, প্রচার সবকিছু হয়ে গেছে। তা আমরা ওখানেই আমাদের সমাবেশটা করি।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখার শেষ পর্যায়ে হয় গ্রেনেড হামলা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মাইকটাও হাত থেকে রাখতে পারিনি। এরই মধ্যে এই বোমার আওয়াজ।’
নেতা-কর্মীরা কীভাবে নিজেরা স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষা করেন, সেটিও উঠে আসে তার বয়ানে।
তিনি বলেন, ‘বোমার আওয়াজটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নেতা-কর্মীরা আমাকে ধরে বসিয়ে দেয়। বিশেষ করে হানিফ (সাবেক মেয়র মো. হানিফ) ভাইয়ের কথা আমি বলব। তা ছাড়া মামুন, আমার সঙ্গে কাজ করত। অজিত, মায়া (মোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী মায়া) ওরা সবাই ওখানে ছিল। ট্রাকের ভেতরেই কিন্তু তখন আমরা। আমাকে একদম ঘিরে রাখে।
‘একটার পর একটা গ্রেনেড কিন্তু… প্রথমে তিনটা তারপর আবার তিনটা এভাবে প্রায় এক ডজনের কাছাকাছি গ্রেনেড তারা ছুড়ে মারে। সত্যি কথা বলতে কি, তখন আসলে নিজের কথা ভাবার চেয়ে আমার চিন্তা ছিল, এতগুলো মানুষ আমার ট্রাকের ওপরে আর আশপাশে আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই। সে সময় কার যে কী অবস্থা কিছুই বুঝতে পারছি না।
‘যা-ই হোক, একটা পর্যায়ে যখন গ্রেনেড হামলা তখন কিছুটা থামল। আমাকে যে গ্রেনেড মেরেছিল, তার স্প্লিন্টারগুলো বিশেষ করে হানিফ ভাই, তিনি তখন ঢাকা সিটি মেয়র, আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল, সমস্ত স্প্লিন্টারগুলো তার মাথায় পড়ে, গায়ে পড়ে। তার সেই রক্ত আমার শরীরে, মানে আমার কাপড়ে চলে আসে। সবাই মনে করে যে আমি মনে হয় আহত। আমি বলি না আমার কিছু হয়নি। এটা আমার কাছে একটা বিস্ময় যে আমার গায়ে একটাও স্প্লিন্টার লাগেনি। কিন্তু আমার চশমাটা হারিয়ে যায়।
‘যে মুহূর্তে গাড়িতে উঠতে যাব, দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ছিল, আমার সঙ্গে একজন সেনা কর্মকর্তা মাহবুব, ও ছিল আমার ড্রাইভার কাম সিকিউরিটি। ও গেটটা খুলে দাঁড়ায়। আর ঠিক সে সময় গুলি একটা চলে আসে। সেখানে মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।’
শেখ হাসিনা জানান, তিনি যখন গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ছেড়ে বাড়ির পথে ছিলেন, সে সময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে এবং কাঁদানে গ্যাস মারে।
যে রকম হামলা হয়েছে, সেখান থেকে প্রাণ রক্ষা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব ছিল না বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ হয়তো আমার জীবনটা বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, আগেও তো আমি বেশ কয়েকবারই এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছি। হয়তো আমার হাত দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কোনো কল্যাণ তিনি করবেন। এ জন্যই বুঝি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এ ছাড়া আর কী?’
এই হামলা পরিকল্পিত ছিল- এমন মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও হত্যার প্রচেষ্টা তো বহুদিন ধরেই ছিল।
আওয়ামী লীগ প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়। কাজেই সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা নিতে চেয়েছে। এ জন্যই…।
সে সময়ের সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নানা উক্তি আর জোট সরকারের আমলে তদন্তের নামে যা যা হয়েছে, তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, এমন প্রশ্নও ছিল শেখ হাসিনার কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার একেকটা বক্তৃতার মধ্য দিয়ে কিন্তু একেকটা ম্যাসেজ যায়।’
বিএনপি নেত্রীর সে সময় একটি বক্তব্য ছিল যে, আওয়ামী লীগ এক শ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আরেকবার তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনো দিন বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না শেখ হাসিনা।
এসব বক্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে তার বক্তব্য, এর থেকেই তো বোঝা যায়, যে তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল।’
জোট সরকারের সরকারের সবাই এই হামলায় জড়িত ছিল- এমন অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা তো খুব স্পষ্ট। তার (খালেদা জিয়া) কেবিনেটের মন্ত্রী সালাম পিন্টু, সে এর সঙ্গে জড়িত। তখন ডিজিএফআই-এনএসআই কর্মকর্তারা, পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের নিয়েই কিন্তু এ চক্রান্তটা করে।’
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানই এই হামলার হোতা বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সে (তারেক রহমান) তো দীর্ঘদিন এই ষড়যন্ত্র তৈরি করা এবং এটাকে কার্যকর করাতে সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা…। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই তার পেছনে ছিল এবং সমর্থন দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা জানান, ঘটনার আগে তারেক রহমান তার শশুরবাড়িতে কয়েক মাস অবস্থান করেন। কিন্তু আগস্টের আগে সে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে সন্দেহ ছিল, এখানে বসে সে কিছু একটা ঘোট পাকাচ্ছে।…হাওয়া ভবন মানে যত দুর্নীতির আখড়া আর যত এ রকম চক্রান্ত সব, সেখানে বসে বসে চক্রান্ত করা, এটাই ছিল তার কাজ।’
হামলার পর যা ঘটেছিল, তাতেও শেখ হাসিনার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে, সেই হামলায় সরকারের সম্পৃক্ততা ছিল।
তিনি বলেন, ‘একটি গ্রেনেড সেটা বিস্ফোরিত হয়নি, একজন সেনা অফিসার সেটা নিয়ে যায়। তার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল যে এটা রেখে দিতে হবে। কারণ, এটা কেসে কাজে লাগবে।
‘কিন্তু আমি শুনেছি যে, এটা শোনার পরই খালেদা জিয়া নিজে ধমক দিয়েছে যে এটা করা যাবে না। এটা যেন ধ্বংস করে দেয়া হয়।
‘সিটি করপোরেশন থেকে গাড়ি নিয়ে এসে ওই জায়গাটা ধুয়েমুছে সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে ফেলা হয়, সব আলামত সরিয়ে ফেলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে সেখানে পুলিশ যায়, সব আলামত সংগ্রহ করে। কিন্তু তাদের সে রকম কোনো প্রচেষ্টা ছিল না বরং সব আলামত ধ্বংস করে ফেলা এবং মুছে ফেলার চেষ্টা…’
তিনি জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সে সময়ের যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আলামতগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। বলেন, ‘যেখানে যেখানে গ্রেনেড পড়ে ছিল, ওরা তখন গিয়ে সেগুলো অন্তত চিহ্নিত করে।’
তদন্ত কমিশনের নামে তখন একটা ‘তামাশা’ করা হয় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বলল, পাশের দেশ থেকে এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দলের এতজন এমপি আহত। আইভি রহমান তিনি নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া আরও অনেক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।
‘আমরা যারা ছিলাম, কথা বলতে চেয়েছি, কথা বলতে দেয়নি পার্লামেন্টে। এটা নিয়ে আলোচনাই করতে দেবে না। খালেদা জিয়া তো বলেই বসল, ওনাকে আবার কে মারতে যাবে।
‘তার ও তার নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, উনি তো নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। আমার হাতে তো ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল না। আমি তো ব্যাগ ছাড়াই মঞ্চে উঠেছি। গ্রেনেডটা আমি নিলাম কীভাবে? আর গ্রেনেড মারতে এত পারদর্শী কীভাবে হলাম? আর এটা হলো আর্জেস গ্রেনেড, যেটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
‘এটা পাকিস্তান থেকেই আসা। এটা তো পরে বের হয়েছে। কাজেই সবকিছুতে তাদের সম্পৃক্ততা, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই।’
যে অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, সেটি সাধারণ মানুষের জন্য, একটা দলের ওপর ব্যবহার করার কথা জানিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
সেদিন যদি আপনাকে হত্যা করা হতো বাংলাদেশের অবস্থা হতো আফগানিস্তানের মতো… আপনার অভিমত কী? এই প্রশ্ন রাখেন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই এটা বিশ্বাস করে। তার কারণ, খালেদা জিয়ার আমলে যেভাবে সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে বাংলা ভাই, তারা মিছিল করছে। আর পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে। আর বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীরা তাদের মদদ দিচ্ছে।
নাটোর রাজশাহীর বহু নেতা প্রকাশ্যে এদের মদদদানকারী। পরবর্তীতে আপনি দেখেন, জঙ্গিবাদ যেভাবে, কিবরিয়া সাহেবকে একটি জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে তাকে হত্যা করা হলো। সুরঞ্জিত সেনের মিটিংয়ে বোমা হামলা, সিলেটে কামরানের মিটিংয়ে আরেকবার বোমা হামলা। এভাবে তো সারা বাংলাদেশে চলছিল।’
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলার কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘বিএনপি আমলে তো একটা সন্ত্রাসী দেশ করেই ফেলেছিল এবং বহু লোক চলে যায় আফগানিস্তানে ট্রেনিং নিয়ে আসে। এই মুফতি হান্নান নিজেই তো ট্রেনিং নিয়ে আসে। তারপর তাজউদ্দিন আরেকজন যে সেও তো ট্রনিং নিয়ে আসে। এরা তো সব বিএনপির লোক, তাজউদ্দিন তো বিএনপির খাস।’
গ্রেনেড হামলার পর ওই রাতেই চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তুলে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বলেন, ‘বিশেষ ব্যবস্থায় তারা চলে যায়। সেখানে কিন্তু ডালিম আর রশিদও ছিল। জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে যে জিয়াউর রহমান জড়িত এবং তার স্ত্রী যে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে, ছেলেকেও একই পথে নামিয়েছে, এটা তো স্পষ্ট।’
শুধু ২১ আগস্ট নয়, আপনাকে হত্যার জন্য ২০ থেকে ২২ বার হামলা করা হয়েছে। এই যে এতবার আপনার ওপর হামলা, এত আক্রোশ কেন আপনার ওপর? এরা কারা?
এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তাকে নানাভাবে বাধা দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
বলেন, ‘আমি যখন খুলনা থেকে রাজশাহী রওনা হলাম, এত মানুষ মানুষের ঢল সব জায়গায়। এর কারণে ১৫ আগস্টের পর মানুষ কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু আমি আসার পর মনে হলো মানুষের একটা যেন জোয়ার চলে আসলো।
‘পথে পথে মিটিং করতে করতে আমাদের এত সময় লাগল যে রাত ১১টার দিকে আমি ঈশ্বরদীতে গিয়ে মিটিং করি। নাটোরে ঢুকব, সেখানে আমার মঞ্চ ভেঙে দিল, আগুন দিয়ে পোড়াল, আমাদের নেতা-কর্মীদের এখানে ওখানে মেরে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে দিল।’
১৫ আগস্টের পর দেশে আসতে না দেয়া, জিয়াউর রহমান রেহানার পাসপোর্টটাও করতে না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘তারপর আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে, আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে আসবই। তারপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, এই শক্তিটাই তো জিয়াউর রহমানের আমলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রাজত্ব হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারাই দেশ চালায়। লাখো শহীদ যে রক্ত দিল, যে আদর্শ নিয়ে সেটা তো সম্পূর্ণ অস্বীকার করল। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ইতিহাসই তো বিকৃত করা হয়েছিল।’
দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ফিরিয়ে দিতে, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করে চেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশ যেন কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। স্বাধীনতাটা যেন অর্থবহ না হয়। এটাই তো আসল উদ্দেশ্য ছিল।’
গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছেন তিনি।
জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকলে আরও ৪০ বছর আগেই সেটা করা যেত বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
বলেন, ‘আমি এসে সে আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা তো সেটা চায়নি।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শরিকদের ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’- এই স্লোগানের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আজকে আফগানিস্তানের অবস্থাটা তারা দেখুক যে সেখানে কী অবস্থা। সেটিই সে বাংলাদেশে করতে চেয়েছিল।’
তরুণসমাজকে ইতিহাস আর শিকড়ের সন্ধানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আদর্শ নিয়েই চলতে হবে যাতে লাখো শহীদের রক্ত বৃথা না যায়।’
মৃত্যু একদিন হবেই- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তিনি যেদিন জীবন তুলে নেবেন, কাজেই আমার এটা নিয়ে চিন্তা নেই। আমি একটাই চিন্তা করি, সকালে উঠে ভাবি একটা দিন পেলাম অন্তত দেশের জন্য একটু কাজ করতে পারলাম।’
আরও পড়ুন:অসম্ভবকে সম্ভব করার এই গল্পটি প্রতিটি ছাত্রের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। স্বপ্ন পূরণের পথে সাহস আর নিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, কেবল বিজয়ের জন্য নয়, বরং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্যই লড়াই করতে হয়। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে মেধা ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, আর সেই পথেই রচিত হয় নতুন ইতিহাস। এই ডাকসু নির্বাচন সেই ইতিহাসেরই একটি অংশ, যেখানে মেধা আর সততা পেয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান।
দুর্ধর্ষ জয়, না অভিস্মরণীয় বিজয়! ডাকসুতে শিবিরের এই জয়কে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ এবং মহিউদ্দিন খান তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছেন, মানে এক কথায় অলআউট উইন। জয়ের ব্যবধানটাই সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছে এখানে। ডাকসুর ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। ভিপি পদে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, ছাত্রদলের আবিদ পেয়েছেন ৫৬৫৮ ভোট, অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। জিএস পদে এস এম ফরহাদ পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট, অন্যদিকে ছাত্রদলের হামিম পেয়েছেন ৫২৮৩ ভোট। এখানেও রয়েছে দ্বিগুণ ব্যবধান। এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান পেয়েছেন ৯৫০১ ভোট, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মায়েদ পেয়েছেন ৪২৫৪ ভোট। অর্থাৎ ৫২৪৭ ভোটের ব্যবধান রয়েছে এখানে। শিবিরের এই তিন নায়ক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া যাক।
শুরুতেই আলোচনা করা যাক মহিউদ্দিন খান মহিকে। চোখে চশমা, পরনে পাঞ্জাবি আর চেহারায় ভদ্রতার ছাপ সুস্পষ্ট। শিক্ষার্থীরা তো বটেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও মহিউদ্দিনের জনপ্রিয়তা আছে। ভদ্রতার পাশাপাশি মেধাতেও যে কারো চেয়ে এগিয়ে তিনি। মহিউদ্দিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি অনার্সে ৩.৯৩ সিজিপিএ অর্জন করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং মাস্টার্সে ৪.০০ সিজিপিএ অর্জন করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি মাস্টার্সের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি বিজয় '৭১ হলের সাবেক শিক্ষার্থী। ছাত্র রাজনীতিতে দাপট বজায় রাখার জন্য হলে বছরের পর বছর সময় কাটানোর নজির আছে, সেখানে মহিউদ্দিন খান বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় তিনি হল ছেড়ে দেন যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় তখন। তাই এজিএস হিসেবে ডাকসু নির্বাচনে মহিউদ্দিন খানের এই জয়টা মোটেও অবাক করার মতো নয়।
এবার আসবে এস এম ফরহাদের নাম। দেখতে সে ছোটখাটো হলেও তার দায়িত্বটা বিশাল। একজন ডিবেটর হিসেবে তার বেশ খ্যাতি আছে। কখনো কখনো তিনি বাম রাজনীতির সমালোচনা করেছেন, আবার কখনো ছাত্রদলের ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আবার প্রতিপক্ষের দিক থেকেও কেউ কেউ ফরহাদকে নিয়ে নানা সময় নানা আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন। তিনি সেসব সমালোচনার সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছেন তার দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে। ছাত্রলীগের সাথে তার অতীত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা আছে, কিন্তু ফরহাদের দাবি সেটা ছিল তার চৌকস কৌশল। তিনি নাকি পরিচয় লুকিয়ে শিবির করতেন। ফরহাদের যে রুমমেট তার সঙ্গে দীর্ঘ চার বছর থেকেছে, সেও ফরহাদের আসল রাজনৈতিক পরিচয় জানতো না। ২০০৪ সালের ৫ই আগস্টের পর ফরহাদের পরিচয় সামনে আসার পর, অন্য অনেকের মতো তার রুমমেটও অবাক হয়েছিল। ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৭-১৮ সেশনের এবং পাশাপাশি কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ডাকসু নির্বাচনের সময় ফরহাদকে তেমন প্রচারণা করতে দেখা যায়নি, অথচ তার জয় আল্লাহ সহজভাবে এনে দিয়েছেন।
সর্বশেষে আসবে এই ডাকসুর ইতিহাসের অন্যতম নাম, যার দ্বারা পুরো ডাকসু আগামী কয়েক বছর পরিচালিত হবে, তার নাম হলো সাদিক কায়েম। তিনি হলেন শিবিরের অন্যতম ফ্রন্টলাইনার। ডাকসুতে তিনি শিবিরের হয়ে প্রচার-প্রচারণা করেছেন সবচেয়ে বেশি। সাদিক কায়েমের প্রচারণা সবসময়ই ছিল একদম সাদামাটা। কিন্তু তার জয় আল্লাহ দিলেন অনেক বড়সড় করে। তিনি বর্তমান ডাকসুর ইতিহাসে শিবিরের প্রথম এবং একমাত্র ভিপি। মাঝরাতে গতকাল সবাই যখন বিজয় উল্লাসের অপেক্ষায়, সাদিক কায়েমকে তখন নামাজরত অবস্থায় একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়। ভিপি হওয়ার আগেই আল্লাহর নাম স্মরণ করে সাদিক কায়েম বলেছিলেন, “ডাকসুর কাজ নেতা তৈরি করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ হাসিল করা। এই স্বার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ: আবাসন সংকট দূর করা, শিক্ষার্থীদের খাবার এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, এবং বিশেষ করে রেজিস্টার ভবনে শিক্ষার্থীদের অনেককালের ভোগান্তি থেকে চির বিদায় দেওয়া।” এবার মূলত সেসব বাস্তবিকতার চিত্র প্রমাণ করার পালা। তিনি শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম চাকরির সুযোগ, আধুনিক লাইব্রেরি ব্যবস্থা, মসজিদের আধুনিকায়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের প্রসারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চান। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাদিক কায়েম অপূর্ব মেধার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। সাদিক কায়েম যে এলাকা থেকে উঠে এসেছেন, সেখান থেকে খুব কম সংখ্যক ছেলে এ যাবৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় খুব ভালোভাবে টিকে যান এবং একাধিক সংগঠনের প্রধান হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বের গুণটা তার ভেতর আগে থেকেই আছে। এবার ভিপি হিসেবে তিনি কতটা সফল হবেন, তা সময় বলে দেবে।
জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে হলে শুধু মেধা থাকলেই চলে না, তার সাথে দরকার দৃঢ় সংকল্প আর সততা। এই নির্বাচন প্রমাণ করলো যে, যখন মেধা আর সততার সমন্বয় ঘটে, তখন যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করে নতুন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করার এই সুযোগ এসেছে, যা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বিজয় শুধু একটি পদের নয়, বরং লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রত্যাশার। এই পথচলা যেন নতুন দিনের সূচনা করে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী :
ডঃ তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপে গ্লোবাল কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।
দাউদ ইব্রাহিম হাসান, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় একজন রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হওয়ার পাশাপাশি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি আইডিএলসি ফাইনান্স পিএলসিতে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের একজন সদস্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসকের শিডিউল আগে থেকেই নেওয়া ছিল। সেই অনুযায়ী আজ তারা সিঙ্গাপুর গেছেন।
তিনি জানান, সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা রওনা হন। তবে, চিকিৎসার জন্য তারা কতদিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন, তা জানাননি শায়রুল।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেনছেন- নির্বাচনটা বানচাল করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করতেছেন। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে, কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে একটি নির্বাচিত সরকার দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। নির্বাচন ছাড়া এ দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা এবং ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করুন না কেন এই বাংলাদেশের মানুষ অন্তত সচেতন। আমরা জনগণকে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে যাতে সঠিক সময়ে নির্বাচন হয় এবং সরকারও নির্বাচনটা সঠিক সময়ে দিতে বদ্ধপরিকর। সে ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকব এবং সক্রিয় থাকব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সাথে জোটের ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ সময় ভূঞাপুর বালিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকে গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তরফদার। এতে অতিথি ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
আগামী রমজানের আগেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এতে ষোলো বছর পর দেশের ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতিহা পাঠ শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের মানুষ এখনো নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের দিক থেকে আমরা এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের মধ্যে বাস করছি। আমাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। তবে আমাদের বিশ্বাস খুবই দ্রুত রমজানের আগেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তাতে এ দেশের ভোটাররা ষোলো বছর ধরে যে ভোট দিতে পারেননি, এবার তারা সেই ভোট দিতে পারবেন।’
‘পাশাপাশি গণতন্ত্রের আরও বিভিন্ন শর্ত, যেমন: এ দেশের মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা— পূরণ করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালত হতে হবে অসহায় মানুষের শেষ ভরসার স্থল। সেই ধরনের একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এই লক্ষ্য পূরণে মানুষের অনুপ্রেরণা হচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মানবতা, প্রেম ও দ্রোহের কবি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, স্বাধীনতার লড়াই, নব্বইয়ের গণআন্দোলন এবং বছরখানেক আগে যে দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, প্রতিটি জাতীয় অর্জন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যার গান ও কবিতা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তার গান গাইতে গাইতে ও তার কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমরা রাজপথে নেমে আসতাম।’
রিজভী বলেন, ‘স্বৈরশাসনের তপ্ত বুলেটের সামনে নিঃশঙ্কচিত্তে দাঁড়াতেও দ্বিধা করিনি, কারণ আমাদের কণ্ঠে ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা। যখনই এ দেশের মানুষ অধিকারহারা হয়, তখনই তাদের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করে অত্যাচারীর শৃঙ্খল ভাঙার প্রত্যয় জেগে ওঠে যার কবিতা ও গানে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তিনি (নজরুল) তার শানিত কলম চালাতে দ্বিধা করেননি। তার লেখা কবিতা, গান ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে চেতনা তিনি গোটা জাতিকে দিয়েছেন, তা ধারণ করেই আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছি, জুলাই আন্দোলনে যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠোমোতে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য চলে আসছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সেখানে রাতারাতি এগুলোর সমাধান সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই রাষ্ট্রকাঠামো বদলাতে হবে।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারর চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা এখনো আসতে পরিনি। এমনকি নির্বাচন নিয়েও একই বিষয় আছে, যদিও জাতি এখন সেই দিকেই মনোনিবেশ করেছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম ও লড়াই করেছি, এটা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে— এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’ শিরোনামের এই সেমিনারের আয়োজন করে অর্পণ আলোক সংঘ নামের একটি সংগঠন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি, একইসঙ্গে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাও বলছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের সব অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার— সবকিছু কাটিয়ে একদিনে সুন্দর করে একটি রাষ্ট্র আমরা তৈরি করব, এটা মনে করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে ৫২ বছরে একটা নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিধান আমরা তৈরি করতে পারিনি, সেখানে আজ হঠাৎ করে মুহূর্তের মধ্যে আমরা সবকিছু ঠিক করতে পারব না। আমরা যারা রাজনীতি করছি, তারা চেষ্টা করছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিংবা জোড়াতালি দিয়ে কোনোকিছু করা যায় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য প্রয়োজন। পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও আন্তরিকতা থাকতে হবে।’
এ সময়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এই কাঠামো বদলাতে হবে। কারণ, বেগুন গাছ লাগিয়ে আমরা কমলালেবু আশা করতে পারি না। কাজেই আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি, বৈষম্যহীন একটা সমাজব্যবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি, তাহলে হয়তো-বা অভ্যুত্থানের কিছুটা মূল্য আমরা পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারা। সেখান থেকে সবকিছু নেমে আসে। একজন স্কুলশিক্ষককেও নিজের সমস্যা সমাধান করতে ঢাকায় আসতে হয়, যেটার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য তো জেলা পরিষদই যথেষ্ট হওয়ার কথা।’
‘কিন্তু ওই যে সিস্টেম। কারণ, তারা যদি ঢাকায় না আসেন, তাহলে ঘুষ আসবে কোথা থেকে? এখন স্কুলশিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক— সব নিয়োগ হয় ঘুষের বিনিময়ে। যেই রাষ্ট্রকাঠামোতে এমন বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মেহনিত মানুষের আন্দোলনের দাবি-দাওয়ার মঞ্চ হিসেবে আমরা নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করি। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি।’
‘রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা; আমাদের লক্ষ্যও তাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে শ্রেণিগত পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য ধনসম্পদে। গত ৫৪ বছরে যে দলগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা যে নীতি তৈরি করেছে, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কিংবা লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষ, তাদের জন্য সাম্য তো দূরের কথা, ন্যূনতম ভারসাম্যও তৈরি করতে পারেনি।’
‘এতে লুটপাট-নির্ভর একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ধরে নেওয়া হয়, ক্ষমতা দিয়ে টাকা-পয়সা বানাবে।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুট হয়ে সাফা হয়ে গেছে। কিন্তু গত পরশুদিন দেখলাম, ৯টি নন-ব্যাংকি ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা বিশাল ব্যাপার। কিন্তু হাসিনা চলে যাওয়ার পরও লুটপাট বন্ধ হয়ে যায়নি। গেল ১২ মাসে প্রায় একইভাবে ব্যাংকিং খাতে লুটপাট হয়েছে। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, যেগুলো হাসিনার আমলে বেশি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এজন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যাংক থেকে একটি টাকা লুট হলেও বাংলাদেশের ব্যাংকের নজরদারি থাকে। লুট হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানবে না— এটা হয় না। হাসিনার আমলে যে লুট হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানত। কিন্তু সেখানে যে কর্মকর্তাদের এই নজরদারি করার কথা ছিল, তাদের নামে কোনো নিউজ হয়নি, মামলা হয়নি। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়নি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সাধারণ মানুষ ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমি নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। যদি জনগণ চায় তবে আমরাই সরকার গঠন করব।
তিনি বলেছেন, ইসলামী সমমনাদের এক মঞ্চে আনার বিষয়ে সবাই একমত। বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় পিআর বুঝেন না, কিন্তু সাধারণ মানুষ বিষয়টি ভালোভাবেই বোঝে। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন ও বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই সুখবর আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী কুমিল্লা ফানটাউনে জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরীর ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রয়োজনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ/না ভোটের মতো পদ্ধতিও গ্রহণ করা হতে পারে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন- কুমিল্লা মহানগরীর আমির ও কুমিল্লা ৬ সংসদীয় আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।
কুমিল্লা মহানগরীর দুরবস্থার প্রসঙ্গ টেনে ড. তাহের বলেন, আমি কান্দিরপাড় থেকে ডুলিপাড়া ফানটাউনে আসতে ৪৫ মিনিট সময় নিয়েছি। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালুর বিষয়ে জামায়াত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। প্রয়োজনে বিকল্প ফরম্যাটেও কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো দল যদি মনে করে আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ী হবে তাহলে বোঝা যায় জেতার জন্য তারা কোনো একটা মেকানিজম করছে। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশকে সংকট থেকে বের করে আনতে পারবে। জনগণ যাকে চাইবে তারাই জয়ী হবে।
মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগরীর নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, যুব বিভাগের সভাপতি কাজী নজির আহমেদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন মোল্লা, মোতাহার আলী দিলাল, ভিপি মুজিবুর রহমান, কুসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক এ জি এস শহিদুল্লাহ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সবুজ প্রমুখ।
মন্তব্য