২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সব কিছুই জানতেন, আর তিনি সমর্থন জানিয়ে গেছেন।
নৃশংস এই হামলার ১৭ বছর পূর্তির দিন শনিবার ক্ষমতাসীন দল নানা আয়োজনে এই হামলায় নিহতদের স্মরণ করছে। একই দিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি সেই হামলার প্রধান লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
সেই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা হামলার বর্ণনার পাশাপাশি এর আগের ও পরের বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরেন। বলেন, তাকে হত্যার জন্য যে দীর্ঘ প্রচেষ্টা ছিল, গ্রেনেড হামলা তারই ধারবাহিকতা।
সেই হামলায় শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও দলের ২২ নেতা-কর্মী সেদিন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৫০০ মানুষ। পেছনে ফিরে তাকালে কী অনুভূতি হয়- এমন প্রশ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ সাল থেকে শুরু করে এসব ঘটনা ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গ্রেনেড ও বোমা হামলার কথা তুলে ধরেন।
সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলায় তিন-চারজন নিহতের পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর আহত হওয়ার কথাও বলেন।
তিনি বলেন, ‘কূটনীতিকের ওপর হামলা করা এবং আহত করা এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিদেশে খুব খারাপভাবে নষ্ট করে। আমরা একটি সন্ত্রাসবিরোধী র্যালি করার সিদ্ধান্ত নিই।’
সমাবেশটি আওয়ামী লীগ মুক্তাঙ্গনে করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছিল না। পরে সিদ্ধান্ত হয়, সেটি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে।
আগের রাতে ১১টার দিকে হঠাৎ অনুমতি দেয়া হলেও সমাবেশটি দলীয় কার্যালয়েই করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মাইক-টাইক লাগানো হয়ে গেছে, পোস্টার ছাপানো, প্রচার সবকিছু হয়ে গেছে। তা আমরা ওখানেই আমাদের সমাবেশটা করি।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখার শেষ পর্যায়ে হয় গ্রেনেড হামলা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মাইকটাও হাত থেকে রাখতে পারিনি। এরই মধ্যে এই বোমার আওয়াজ।’
নেতা-কর্মীরা কীভাবে নিজেরা স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষা করেন, সেটিও উঠে আসে তার বয়ানে।
তিনি বলেন, ‘বোমার আওয়াজটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নেতা-কর্মীরা আমাকে ধরে বসিয়ে দেয়। বিশেষ করে হানিফ (সাবেক মেয়র মো. হানিফ) ভাইয়ের কথা আমি বলব। তা ছাড়া মামুন, আমার সঙ্গে কাজ করত। অজিত, মায়া (মোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী মায়া) ওরা সবাই ওখানে ছিল। ট্রাকের ভেতরেই কিন্তু তখন আমরা। আমাকে একদম ঘিরে রাখে।
‘একটার পর একটা গ্রেনেড কিন্তু… প্রথমে তিনটা তারপর আবার তিনটা এভাবে প্রায় এক ডজনের কাছাকাছি গ্রেনেড তারা ছুড়ে মারে। সত্যি কথা বলতে কি, তখন আসলে নিজের কথা ভাবার চেয়ে আমার চিন্তা ছিল, এতগুলো মানুষ আমার ট্রাকের ওপরে আর আশপাশে আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই। সে সময় কার যে কী অবস্থা কিছুই বুঝতে পারছি না।
‘যা-ই হোক, একটা পর্যায়ে যখন গ্রেনেড হামলা তখন কিছুটা থামল। আমাকে যে গ্রেনেড মেরেছিল, তার স্প্লিন্টারগুলো বিশেষ করে হানিফ ভাই, তিনি তখন ঢাকা সিটি মেয়র, আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল, সমস্ত স্প্লিন্টারগুলো তার মাথায় পড়ে, গায়ে পড়ে। তার সেই রক্ত আমার শরীরে, মানে আমার কাপড়ে চলে আসে। সবাই মনে করে যে আমি মনে হয় আহত। আমি বলি না আমার কিছু হয়নি। এটা আমার কাছে একটা বিস্ময় যে আমার গায়ে একটাও স্প্লিন্টার লাগেনি। কিন্তু আমার চশমাটা হারিয়ে যায়।
‘যে মুহূর্তে গাড়িতে উঠতে যাব, দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ছিল, আমার সঙ্গে একজন সেনা কর্মকর্তা মাহবুব, ও ছিল আমার ড্রাইভার কাম সিকিউরিটি। ও গেটটা খুলে দাঁড়ায়। আর ঠিক সে সময় গুলি একটা চলে আসে। সেখানে মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।’
শেখ হাসিনা জানান, তিনি যখন গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ছেড়ে বাড়ির পথে ছিলেন, সে সময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে এবং কাঁদানে গ্যাস মারে।
যে রকম হামলা হয়েছে, সেখান থেকে প্রাণ রক্ষা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব ছিল না বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ হয়তো আমার জীবনটা বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, আগেও তো আমি বেশ কয়েকবারই এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছি। হয়তো আমার হাত দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কোনো কল্যাণ তিনি করবেন। এ জন্যই বুঝি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এ ছাড়া আর কী?’
এই হামলা পরিকল্পিত ছিল- এমন মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও হত্যার প্রচেষ্টা তো বহুদিন ধরেই ছিল।
আওয়ামী লীগ প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়। কাজেই সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা নিতে চেয়েছে। এ জন্যই…।
সে সময়ের সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নানা উক্তি আর জোট সরকারের আমলে তদন্তের নামে যা যা হয়েছে, তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, এমন প্রশ্নও ছিল শেখ হাসিনার কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার একেকটা বক্তৃতার মধ্য দিয়ে কিন্তু একেকটা ম্যাসেজ যায়।’
বিএনপি নেত্রীর সে সময় একটি বক্তব্য ছিল যে, আওয়ামী লীগ এক শ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আরেকবার তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনো দিন বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না শেখ হাসিনা।
এসব বক্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে তার বক্তব্য, এর থেকেই তো বোঝা যায়, যে তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল।’
জোট সরকারের সরকারের সবাই এই হামলায় জড়িত ছিল- এমন অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা তো খুব স্পষ্ট। তার (খালেদা জিয়া) কেবিনেটের মন্ত্রী সালাম পিন্টু, সে এর সঙ্গে জড়িত। তখন ডিজিএফআই-এনএসআই কর্মকর্তারা, পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের নিয়েই কিন্তু এ চক্রান্তটা করে।’
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানই এই হামলার হোতা বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সে (তারেক রহমান) তো দীর্ঘদিন এই ষড়যন্ত্র তৈরি করা এবং এটাকে কার্যকর করাতে সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা…। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই তার পেছনে ছিল এবং সমর্থন দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা জানান, ঘটনার আগে তারেক রহমান তার শশুরবাড়িতে কয়েক মাস অবস্থান করেন। কিন্তু আগস্টের আগে সে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে সন্দেহ ছিল, এখানে বসে সে কিছু একটা ঘোট পাকাচ্ছে।…হাওয়া ভবন মানে যত দুর্নীতির আখড়া আর যত এ রকম চক্রান্ত সব, সেখানে বসে বসে চক্রান্ত করা, এটাই ছিল তার কাজ।’
হামলার পর যা ঘটেছিল, তাতেও শেখ হাসিনার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে, সেই হামলায় সরকারের সম্পৃক্ততা ছিল।
তিনি বলেন, ‘একটি গ্রেনেড সেটা বিস্ফোরিত হয়নি, একজন সেনা অফিসার সেটা নিয়ে যায়। তার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল যে এটা রেখে দিতে হবে। কারণ, এটা কেসে কাজে লাগবে।
‘কিন্তু আমি শুনেছি যে, এটা শোনার পরই খালেদা জিয়া নিজে ধমক দিয়েছে যে এটা করা যাবে না। এটা যেন ধ্বংস করে দেয়া হয়।
‘সিটি করপোরেশন থেকে গাড়ি নিয়ে এসে ওই জায়গাটা ধুয়েমুছে সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে ফেলা হয়, সব আলামত সরিয়ে ফেলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে সেখানে পুলিশ যায়, সব আলামত সংগ্রহ করে। কিন্তু তাদের সে রকম কোনো প্রচেষ্টা ছিল না বরং সব আলামত ধ্বংস করে ফেলা এবং মুছে ফেলার চেষ্টা…’
তিনি জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সে সময়ের যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আলামতগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। বলেন, ‘যেখানে যেখানে গ্রেনেড পড়ে ছিল, ওরা তখন গিয়ে সেগুলো অন্তত চিহ্নিত করে।’
তদন্ত কমিশনের নামে তখন একটা ‘তামাশা’ করা হয় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বলল, পাশের দেশ থেকে এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দলের এতজন এমপি আহত। আইভি রহমান তিনি নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া আরও অনেক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।
‘আমরা যারা ছিলাম, কথা বলতে চেয়েছি, কথা বলতে দেয়নি পার্লামেন্টে। এটা নিয়ে আলোচনাই করতে দেবে না। খালেদা জিয়া তো বলেই বসল, ওনাকে আবার কে মারতে যাবে।
‘তার ও তার নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, উনি তো নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। আমার হাতে তো ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল না। আমি তো ব্যাগ ছাড়াই মঞ্চে উঠেছি। গ্রেনেডটা আমি নিলাম কীভাবে? আর গ্রেনেড মারতে এত পারদর্শী কীভাবে হলাম? আর এটা হলো আর্জেস গ্রেনেড, যেটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
‘এটা পাকিস্তান থেকেই আসা। এটা তো পরে বের হয়েছে। কাজেই সবকিছুতে তাদের সম্পৃক্ততা, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই।’
যে অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, সেটি সাধারণ মানুষের জন্য, একটা দলের ওপর ব্যবহার করার কথা জানিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
সেদিন যদি আপনাকে হত্যা করা হতো বাংলাদেশের অবস্থা হতো আফগানিস্তানের মতো… আপনার অভিমত কী? এই প্রশ্ন রাখেন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই এটা বিশ্বাস করে। তার কারণ, খালেদা জিয়ার আমলে যেভাবে সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে বাংলা ভাই, তারা মিছিল করছে। আর পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে। আর বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীরা তাদের মদদ দিচ্ছে।
নাটোর রাজশাহীর বহু নেতা প্রকাশ্যে এদের মদদদানকারী। পরবর্তীতে আপনি দেখেন, জঙ্গিবাদ যেভাবে, কিবরিয়া সাহেবকে একটি জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে তাকে হত্যা করা হলো। সুরঞ্জিত সেনের মিটিংয়ে বোমা হামলা, সিলেটে কামরানের মিটিংয়ে আরেকবার বোমা হামলা। এভাবে তো সারা বাংলাদেশে চলছিল।’
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলার কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘বিএনপি আমলে তো একটা সন্ত্রাসী দেশ করেই ফেলেছিল এবং বহু লোক চলে যায় আফগানিস্তানে ট্রেনিং নিয়ে আসে। এই মুফতি হান্নান নিজেই তো ট্রেনিং নিয়ে আসে। তারপর তাজউদ্দিন আরেকজন যে সেও তো ট্রনিং নিয়ে আসে। এরা তো সব বিএনপির লোক, তাজউদ্দিন তো বিএনপির খাস।’
গ্রেনেড হামলার পর ওই রাতেই চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তুলে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বলেন, ‘বিশেষ ব্যবস্থায় তারা চলে যায়। সেখানে কিন্তু ডালিম আর রশিদও ছিল। জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে যে জিয়াউর রহমান জড়িত এবং তার স্ত্রী যে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে, ছেলেকেও একই পথে নামিয়েছে, এটা তো স্পষ্ট।’
শুধু ২১ আগস্ট নয়, আপনাকে হত্যার জন্য ২০ থেকে ২২ বার হামলা করা হয়েছে। এই যে এতবার আপনার ওপর হামলা, এত আক্রোশ কেন আপনার ওপর? এরা কারা?
এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তাকে নানাভাবে বাধা দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
বলেন, ‘আমি যখন খুলনা থেকে রাজশাহী রওনা হলাম, এত মানুষ মানুষের ঢল সব জায়গায়। এর কারণে ১৫ আগস্টের পর মানুষ কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু আমি আসার পর মনে হলো মানুষের একটা যেন জোয়ার চলে আসলো।
‘পথে পথে মিটিং করতে করতে আমাদের এত সময় লাগল যে রাত ১১টার দিকে আমি ঈশ্বরদীতে গিয়ে মিটিং করি। নাটোরে ঢুকব, সেখানে আমার মঞ্চ ভেঙে দিল, আগুন দিয়ে পোড়াল, আমাদের নেতা-কর্মীদের এখানে ওখানে মেরে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে দিল।’
১৫ আগস্টের পর দেশে আসতে না দেয়া, জিয়াউর রহমান রেহানার পাসপোর্টটাও করতে না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘তারপর আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে, আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে আসবই। তারপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, এই শক্তিটাই তো জিয়াউর রহমানের আমলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রাজত্ব হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারাই দেশ চালায়। লাখো শহীদ যে রক্ত দিল, যে আদর্শ নিয়ে সেটা তো সম্পূর্ণ অস্বীকার করল। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ইতিহাসই তো বিকৃত করা হয়েছিল।’
দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ফিরিয়ে দিতে, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করে চেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশ যেন কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। স্বাধীনতাটা যেন অর্থবহ না হয়। এটাই তো আসল উদ্দেশ্য ছিল।’
গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছেন তিনি।
জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকলে আরও ৪০ বছর আগেই সেটা করা যেত বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
বলেন, ‘আমি এসে সে আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা তো সেটা চায়নি।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শরিকদের ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’- এই স্লোগানের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আজকে আফগানিস্তানের অবস্থাটা তারা দেখুক যে সেখানে কী অবস্থা। সেটিই সে বাংলাদেশে করতে চেয়েছিল।’
তরুণসমাজকে ইতিহাস আর শিকড়ের সন্ধানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আদর্শ নিয়েই চলতে হবে যাতে লাখো শহীদের রক্ত বৃথা না যায়।’
মৃত্যু একদিন হবেই- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তিনি যেদিন জীবন তুলে নেবেন, কাজেই আমার এটা নিয়ে চিন্তা নেই। আমি একটাই চিন্তা করি, সকালে উঠে ভাবি একটা দিন পেলাম অন্তত দেশের জন্য একটু কাজ করতে পারলাম।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ‘অবিচার ও নৃশংসতা’ ফাঁস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধাসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবেদনে গুম, গুপ্তহত্যা ও নির্যাতনসহ বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
অবিচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্যমান ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আসল রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট মানবাধিকার প্রতিবেদনটি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
‘গিলক্রিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেয়া হয়েছে আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিল মাত্র চারটি মামলা।
‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এবার তা যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টেই উঠে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া। এবার গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে।’
সোমবার ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন (এইচআরআর) প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। একে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি ‘বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ’ রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
১৯৮টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি (এইচআরআর) তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অংশে বলা হয়, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেক খবর পাওয়া গেছে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করতে ও শাস্তি দিতে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিপীড়ন, নৃশংসতা, গুম, খুনসহ নানা অপকর্মের কথা বলে আসছে।
‘এখন আর লুকানোর কিছু নেই। শেখ হাসিনার সরকারের অবিচার, রক্তপাত ও নানা অপকর্মের ঘটনা ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বেরিয়ে আসছে। গোটা বিশ্ব এর নিন্দা করছে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-১ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, এই উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৭ মে। এছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১০ থেকে ১৪ মে ও আপিল নিষ্পত্তি ১৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৭ মে।
এই সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মার্চ মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। এর মধ্যে দুটি উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার নির্বাচনে ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে এবং বাছাই ১২ মে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে ও প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। আর ভোটগ্রহণ হবে ৫ জুন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এসব পদে ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা ওই প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা।
তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ইসির তথ্য অনুযায়ী বালিয়াডাঙ্গি (ঠাকুরগাঁও) উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, হাকিমপুরে (দিনাজপুর) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সাঘাটায় (গাইবান্ধা) চেয়ারম্যান, বেড়ায় (পাবনা) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সিংড়ায় (নাটোর) চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, বাগেরহাট সদরে সব পদ, মুন্সীগঞ্জ সদরে সব পদ, শিবচরে (মাদারীপুর) সব পদ, বড়লেখায় (মৌলভীবাজার) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পরশুরামে (ফেনী) সব পদ, সন্দ্বীপে (চট্টগ্রাম) ভাইস চেয়ারম্যান, কক্সবাজার সদরে ভাইস চেয়ারম্যান, রোয়াংছড়িতে (বান্দরবান) চেয়ারম্যান, কাউখালীতে (রাঙামাটি) ভাইস চেয়ারম্যান এবং চুয়াডাঙ্গার ডামুহুদায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন পড়বে না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এসব পদে একক প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে দেড়শ’ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ না করেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। তিনি সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই আদেশের ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করতে হবে না।
কুষ্টিয়া ও সিলেটের দুটি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রশ্নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আনা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিল উচ্চ আদালত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক থাকার পরও দেশি-বিদেশি চক্র অপপ্রচার মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে তো বটেই বাইরেও নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে দেখছি।
মঙ্গলবার সকালে গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত প্রচারপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি চিহ্নিত অপশক্তি দেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকার নস্যাৎ করতে নির্বাচনবিরোধী অপতৎরতায় লিপ্ত রয়েছে। গণতন্ত্র, শান্তি, উন্নয়ন নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ও প্রগতিশীল শক্তির কাছে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তি আমাদের ভিত্তিমূলে আঘাত করতে যাচ্ছে। তাদের আমাদের প্রতিহত করতে হবে, সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্য জনগণকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট দিয়ে আপনার নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণ সব শক্তির উৎস।
তিনি বলেন, দেশবিরোধী অপশক্তি জাতির পিতার পরিবারকে হত্যা করে জনগণকে সামরিক স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে দীর্ঘকাল পিষ্ট করেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করেছেন।
নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যেকোনো মূল্যে তাকে প্রতিহত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার নোয়াখালী প্রেসক্লাবে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় দলীয় প্রধানের আদেশ অমান্য করে নিজের ছেলেকে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করায় একরামুল করিম চৌধুরীর সংসদ সদস্যপদ স্থগিতের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়রুল আনাম সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিন, সাধারণ সম্পাদক মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন খেলন ও সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বাড়ি কবিরহাট উপজেলায়। তিনি নিজ ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর করে সুবর্ণচরে নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা খায়রুল আনম সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছেন।
‘প্রতীক পাওয়ার আগে থেকে ভোটের মাঠে নেমে এমপি একরাম আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন, বিষোদ্গার করছেন। ভোট না দিলে উন্নয়ন করবেন না বলে সাধারণ মানুষকে শাসাচ্ছেন।’
‘জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলকে অফিস থেকে বের হতে দেবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। একজন আইনপ্রণেতা হয়ে তিনি আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিম বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একরাম চৌধুরী নোয়াখালী পৌরসভার মেয়রের কক্ষে আমাকে নেতা-কর্মীদের সামনে চরমভাবে অপমান করেন। একপর্যায়ে তেড়ে আসেন এবং আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপি একরাম তার ছেলে সাবাব চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। অঢেল টাকা, পেশিশক্তি, সন্ত্রাসী বাহিনী, অবৈধ অস্ত্র এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।
‘এমপি একরামের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
মন্তব্য