১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের স্বীকৃতির দাবি করেছে তার দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।
রোববার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মতিঝিলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল থেকে এমন দাবি জানানো হয়। তবে ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন না।
দলের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম তারেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুর রহমান পারভেজ, আবুল হোসেন, যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিব-উন-নবী সোহেল, ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রিফাতুল ইসলাম দীপ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কাদের সিদ্দিকী প্রতিবাদ করে বাঙালি জাতির মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন। বঙ্গবীরের নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছিলো বলেই সেই দিন বঙ্গবন্ধুর অনুসারী অসংখ্য নেতা-কর্মীর জীবন রক্ষা পেয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও এই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নাম এখনো রাষ্ট্রীয় নথিতে দুষ্কৃতিকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ, যা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তারা।
সভা শেষে ১৫ ই আগস্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
আবদুল কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের একজন। টাঙ্গাইলে তার বিশাল বাহিনী পাকিস্তানিদের নাস্তানাবুদ করেছে।
বঙ্গবন্ধু অন্তপ্রাণ এই রাজনীতিক যুদ্ধ শেষে অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি হচ্ছিলেন না। বলেছিলেন, তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেবেন আর জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ফেরার পর তিনিই নিরস্ত্র করেন কাদেরিয়া বাহিনীকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের পরেও ভারতে গিয়ে তার দলকে সশস্ত্র করে তোলেন তিনি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাধিক যুদ্ধও হয়। ময়মনসিংহে একটি প্রতিরোধ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন শহীদও হন।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হলেও কাদের সিদ্দিকী দলটিরই নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া এই রাজনীতিক প্রায় দেড় দশক দেশ থেকে ছিলেন নির্বাসিত। ৯০ দশকে তিনি দেশে ফেরেন।
১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের শাসনামলেই দল থেকে বের হয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ করেন। শেখ হাসিনার কট্টর সমালোচক হলেও তিনি বঙ্গবন্ধুর ভীষণ ভক্ত।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেন সিদ্দিকী। তবে নির্বাচনের পর তিনি সেই জোট ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে করা সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার রাজধানীর বনানীতে জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনে চক্ষু হারানো, চক্ষু ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের চক্ষু সেবার উদ্দেশ্যে প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিনামূল্যে চক্ষুসেবা ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এখন জনগণের একটাই দাবি, শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত চুক্তি করেছেন সেই চুক্তিগুলো অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ করুক। তিনি দেশের কত বড় ক্ষতি করে গেছেন তার প্রমাণ তো আমরা দেখতে পাই।’
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এই চক্ষুসেবা ক্যাম্প কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপিকে দমন-নিপীড়নই ছিল শেখ হাসিনার নীতি। তার পরিণাম হয়েছে ভয়াবহ। সঙ্গী-সাথী ফেলে স্বার্থপরের মতো পালিয়ে গেছেন তিনি।
‘শেখ হাসিনা শুধু নিজের ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে জিম্মি করে দিয়েছিলেন।’
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ‘চক্ষু সেবা ক্যাম্প’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল, বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সদস্য মাসুদ রানা লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই ‘চক্ষু সেবা ক্যাম্প’-এর কার্যক্রম চলে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ পর্যন্ত। এতে প্রায় ৪০০ জন সেবা গ্রহণ করেন।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং স্বেচ্ছাসেবকসহ ২৫ জনের একটি মেডিক্যাল টিম ‘চক্ষু সেবা ক্যাম্প’ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার আদানি নামে ভারতের একটা কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুতের অত্যন্ত অসম চুক্তি করেছে। আদানির কাছ থেকে কেনা এক ইউনিটের দাম ১২ টাকা, পৃথিবীর কোথাও এত দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কেনা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আদানির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন একটা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে- তাকে যদি কখনও পালাতে হয় তাহলে আদানি তাকে অর্থায়ন করবে। জনগণের কল্যাণের জন্য শেখ হাসিনা আদানির সঙ্গে কোনো চুক্তি করেননি। না হলে আদানি কেন হুমকি দেবে? শেখ হাসিনার কোনো দেশপ্রেম ছিল না। তার ছিল ভারত-প্রেম।’
রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘মার্কেট ও বাজারগুলো এখনও আওয়ামী সিন্ডিকেটের দখলে। দাম কমানোর জন্য সরকার শুল্ক কমিয়েছে। তারপরও কি দাম কমছে? কমছে না। কারণ সিন্ডিকেটবাজদের সরকার গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এই বিষয়গুলো যদি সরকার না দেখে তাহলে পরাজিত ফ্যাসিস্টরা নানাভাবেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে এবং মাঝে মাঝেই ভূত-পেত্নীর মতো আওয়াজ দেবে।’
আরও পড়ুন:উপদেষ্টা হিসেবে বিতর্কিত কাউকে যেন নিয়োগ দেয়া না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধনের পর কালিবাড়ির নিজ বাসভবনে বুধবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ একটা কাজ খুব সফলভাবে করেছে। তা হলো আমাদের জাতিকে বিভক্ত করেছে। এই বিভক্তি দূর করে আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই। রাজনীতিক মতামত ভিন্ন থাকবে, কিন্তু ঐক্য থাকবে মৌলিক কিছু বিষয়ে।
‘যেমন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে, বাংলাদেশর মানুষের অধকারের বিষয়ে। এই বিষয়গুলোতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই ঐক্য রাখার ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করেছি এবং সফলও হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলনকে শেষ পর্যায়ে বেগবান করার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৬৩টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করেছি। বাম, ডান, মধ্যপন্থি সব দল সেদিক থেকে বলব, গণঅভ্যুত্থানে অনেকটা কাজ হয়েছে এবং চূড়ান্ত অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়েছে।
‘এখন যেটা আমি মনে করি এবং এখন যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার, জাতি হিসেবে আমাদের অসহিষ্ণু হলে চলবে না; আমাদের সহনশীল হতে হবে। ১৭ বছরের একটা জঞ্জাল, একটা গার্বেজ তৈরি করা হয়েছে। এটা সত্যি কথা বলতে ১৭ দিনেও সম্ভব না, ১৭ মাসেও সম্ভব না। তাদের সময় দিতে হবে।’
সরকারের করণীয় নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তাদের প্রধান যে দায়িত্ব আমরা বারবার করে বলছি, তাদের সব সংস্কার তাদের হাত দেয়ার আমরা মনে করি খুব বেশি প্রয়োজন নাই। নির্বাচিত যে পার্লামেন্ট আসবে, সে পার্লামেন্ট সে কাজগুলো করবে। এই সরকারের দায়িত্ব হবে নির্বাচনের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। সকলে যেন ভোট দিতে পারে, সকলে যেন অংশগ্রহণ করতে পারে।
‘আর ভোটের যে সিস্টেম আওয়ামী লীগ করে গেছিল, সেগুলো নির্মূল করে। নিরপেক্ষ লোকজনকে নির্বাচন কমিশনে বসানো। বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করা, অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে নিরপেক্ষ করা, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য এগুলোই হচ্ছে প্রধান কাজ।’
নতুন উপদেষ্টা নিয়োগে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ও রাজনীতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হয় কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এত বড় একটি দেশ পরিচালনা করার জন্য কাকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেবে, এটি নির্ভর করে প্রধান উপদেষ্টার ওপর। এখানে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। তারা চাইলে করতেই পারে। আমি বলব তারা যেন সতর্ক থাকেন।
‘যাদের উপদেষ্টা হিসেবে নেবেন, তারা যেন বিতর্কিত না হয়। আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ সরকারকে সফল করার দায়িত্ব আমাদেরও। কারণ আন্দোলন আমরাও করেছি। সুতরাং আমাদের সহনশীল হতে হবে।’
আরও পড়ুন:বঙ্গভবনের দরবার হল ও তিন উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলার ঘটনায় বিভিন্ন সমালোচনার জবাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি দাবি করেন, কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। এ ছবি সরানো নিয়ে যাদের আক্ষেপ, তিনি এই গণ-অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বুধবার দেয়া স্ট্যাটাসে মাহফুজ আলম সমালোচনাকারীদের এসব জবাব দেন।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণেই শেখের ছবি সরানো হয়েছে। বাবার নামে ও তার একাত্তর-পরবর্তী চেতনার কথা বলে মেয়ে যে শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা পুরোপুরি ফ্যাসিবাদ।
‘কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এই গণ-অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন।’
তিনি বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনা) বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন। বাংলাদেশের শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করে। আমাদেরকে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী থেকে উপদেষ্টা হওয়া মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসঙ্গতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের।
‘আবার কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তার বিচার ও সাজা হওয়া উচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাদের এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিব ও তার কন্যা তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন। তাদের একমাত্র পার্থক্য হলো শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, কিন্তু সেই জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না। জনগণ পাকিস্তানি নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার (শেখ মুজিব) নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু একাত্তরের পর তিনি নিজেই একজন নির্যাতনকারী হয়ে ওঠেন।
‘মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় একাত্তরের পর পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। নিজের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫-এ তার মৃত্যুতে মানুষের শোক-অনুতাপ ছিল না।’
আরও পড়ুন:ইসলাম ও দেশের দুশমনদের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বানানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।
তিনি বলেছেন, ‘দেশের মানুষ আন্দোলন করে জীবন দিয়েছে। আর উপদেষ্টা বানানো হচ্ছে বিদেশি চাটুকারদের। দেশের সাধারণ মানুষ এটা মেনে নেবে না।’
মঙ্গলবার বিকেলে নওগাঁ শহরে এটিম মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নওগাঁ জেলা শাখার গণসমাবেশে ফয়জুল করীম এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, ‘ফ্যাস্টিস্টের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ আন্দোলন করেছে। কিন্তু চিহ্নিত একটি রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এদেশের শহিদদের সঙ্গে বেইমানি করছে। তারা দেশের মানুষের আবেগের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্য নেই।’
ফয়জুল করীম বলেন, ‘কেবল দল ও নেতা পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে শান্তি আসতে পারে না। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটতে পারে না। যতদিন পর্যন্ত ন্যায়-নীতির পরিবর্তন না আসবে ততদিন পর্যন্ত দেশের মানুষের শান্তি, শৃঙ্খলা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে না। সেজন্য দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ ও জালেমদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- দলটি নায়েবে আমির আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা আব্দুর রহমান, নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আলম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন সিরাজী, সিনিয়র সদস্য জামাল উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক হোসেন, জেলা সদস্য মাওলানা ওমর আলী প্রমুখ।
আরও পড়ুন:সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি এই সরকারে বিতর্কিত কোনো ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নির্বাচনই একমাত্র পথ। অন্যান্য সরকারের দিকে না তাকিয়ে আপনাদের মতো করে দেশ পরিচালনা করুন।’
মঙ্গলবার লালমনিরহাটের বড়বাড়ী কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী এই সরকার যেন সংস্কারের বিষয়গুলো শেষ করতে পারে সে ব্যাপারে সহনশীলতা দেখাতে হবে। সব সমস্যা রাজনীতিতে না নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর বর্তমান সরকার এক নয়। এই সরকার এসেছে একটি সংকটময় মুহূর্তে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে। ফলে এই সরকারকে নির্বাচনের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। এজন্য সরকারকে সময় দিতে হবে। একইসঙ্গে আমাদেরকে ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এমন কাউকে দায়িত্ব দেয়া যাবে না যার কারণে সরকার বিতর্কিত হয়। কারণ এই সরকারের প্রধানের দায়িত্বে আছেন বিশ্ববরেণ্য একজন মানুষ।
‘আমাদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আজ যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যেন জাতি হাতছাড়া না করে। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। আমি এই বিষয়টির ওপর জোর দিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর নেতিবাচক আলোচনার কারণে ফ্যাসিবাদের দোসররা নতুন করে মাথা উঁচু করছে। জাতির সামনে যে সংকট আছে তা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে ধৈর্য্য। প্রয়োজন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পন্ন করা এবং একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য সব সময় ষড়যন্ত্র করেছে, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। এই আওয়ামী লীগ প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় সাতশ’ মানুষকে গুম করেছে। তারা হাজার হাজার মানুষকে গুম-খুন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘দেশে সব জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। সেদিকে নজর দিতে হবে। বিতর্কিত কেউ যাতে উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হতে না পারেন সেদিকেও নজর দিতে হবে। দীর্ঘ ১৭ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন শেষে দেশের মানুষ এখন মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে পারছে। শহীদ জিয়ার চেতনাকে বুকে লালন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের এগিয়ে যেতে হবে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানো উচিত হয়নি উল্লেখ করে দেয়া বক্তব্যের সংশোধনী দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেনের স্বাক্ষরে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো ‘রিজভীর বিবৃতি বক্তব্যের সংশোধনী’ শীর্ষক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আজ ১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বিএনপি আয়োজিত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানো উচিত হয়নি’ মর্মে একটি সংবাদ অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে।
“গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে’ মর্মে একটি সংবাদের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। আমি মনে করেছিলাম, বঙ্গভবনের দরবার কক্ষে যেখানে সব রাষ্ট্রপতির ছবি থাকে সেখান থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে। মূলত ছবিটি সরানো হয়েছিল বঙ্গভবনের অন্য একটি অফিস কক্ষ থেকে।”
রিজভীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে শেখ মুজিবের ছবি রাখার বাধ্যতামূলক আইন করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আইনের কোনো কার্যকারিতা থাকতে পারে না। অফিস-আদালত কোথাওই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের জন্য আমি দুঃখিত।’
প্রসঙ্গত, আজ সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রিজভী। বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানোর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, তার (শেখ মুজিবুর রহমান) ছবি নামিয়ে ফেলা উচিত হয়নি। খন্দকার মোশতাক ছবি নামিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান তুলেছিলেন।
‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে নিল। জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেন। জিয়াউর রহমান কিন্তু বঙ্গভবনে শেখ মুজিবের ছবি ফিরিয়ে আনেন।’
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সোমবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে জানিয়েছিলেন, বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:জুলাই অভ্যুত্থানে যে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্বের আহ্বান জানানো হয়েছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্তমান কর্মকাণ্ডে তা অনেকাংশেই প্রতিফলিত হচ্ছে না বলে সোমবার মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি করা হয়।
গতকাল রাতে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিককালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কার্যক্রমে জাতীয় নাগরিক কমিটি উদ্বিগ্ন। উপদেষ্টা নিয়োগসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সঠিক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় এবং অভ্যুত্থানের অংশীজনদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে আমরা মনে করি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে রোববার শপথ নেন ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম।
এ তিন উপদেষ্টার মধ্যে সেখ বশির উদ্দিন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নিয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সমালোচনা করেন অনেকে। বিশেষত, ফারুকীর নিয়োগ নিয়ে দুই দিন আলোচনায় মুখর ছিল ফেসবুক।
এমন বাস্তবতায় নাগরিক কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অভ্যুত্থানের অংশীজনদের মতামত এবং পরামর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে যে নো সিদ্ধান্ত গ্রহণ জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
‘সুতরাং, আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটি, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ভবিষ্যতে অভ্যুত্থানের অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য