করোনাভাইরাস প্রতিরোধী গণটিকা কার্যক্রম ব্যর্থ করতে বিএনপি অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। টিকার কোনো সংকট হবে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, কোটি কোটি টিকা আসবে ছয় মাসের মধ্য।
রোববার সকালে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের শোক দিবসের আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘মানুষের আগ্রহে ভাটা সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি অপচেষ্টা করছে। একদিকে বিএনপি অপপ্রচার চালায়, আবার সবার আগে গিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করে।
‘ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো সংকট হবে না, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কোটি কোটি ভ্যাকসিন আসবে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে যখন করোনার গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তখন বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী টিকা না নিতে মানুষকে উৎসাহী করে আসছিলেন। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা টিকায় মানুষ বাঁচবে কি না, এমন সংশয়ের কথা বারবার বলতে থাকেন তিনি। এমনও বলেন, সরকার টিকা দিয়ে বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়।
তবে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা সে সময় সিরামের টিকা নেন। আর রিজভী নিজেও টিকা নিয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের টিপ্পনীর জবাবে তিনি বলেছেন, তিনি ভারত থেকে আসা টিকা নেননি, নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টিকা।
মুজিববিরোধীরা ইতিহাস থেকে মুছে যাচ্ছে
অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যা ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবরা এখনো সক্রিয়, তারা চায় না দেশের উন্নয়ন হোক, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল হোক।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন হয়নি। তারা পাহাড়িদের সংঘর্ষে উসকে দিয়েছিল। ১২ বছর আগের পার্বত্য চট্টগ্রাম আর আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম এক নয়, আজকে পাহাড়ি এলাকায় উন্নয়ন-অর্জনে সমৃদ্ধ।’
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘৩২ নম্বরের সিঁড়িতে নিথর পড়ে থাকা শরীর শুধু একজন জাতির পিতার নয়, একজন স্বাধীনতার স্থপতির।
‘সে রক্তাক্ত নিথর শরীর ছিল সবুজ-শ্যামল বাংলার প্রতীক। মাটি ও মানুষের আজন্ম ধারকের বুক বিদীর্ণ করেনি বুলেট, করেছিল তাঁরই অর্জিত বাংলাদেশের পতাকার মতো উদার লাল-সবুজের হৃদয়।’
আরও পড়ুন:বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের দল গণপিটুনির সংস্কৃতিকে সমর্থন করে না। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার গণপিটুটির ঘটনায় তাদের কোনো কর্মী জড়িত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (২৩ জুন) তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা গণপিটুনির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করে আসছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় স্বচ্ছতার সঙ্গে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হোক। নূরুল হুদার গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া আশাও করে তার দল।
তিনি বলে, ‘কিন্তু আমরা তার উপর যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে—তা সমর্থন করি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যদি বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী এতে জড়িত থাকে—তাহলে আমরা তদন্তের পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব...এটি আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় প্রতিটি ব্যক্তি, সে যত গুরুতর অপরাধীই হোক না কেন, তিনি তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করুক। ‘সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা উচিত নয়।’
রবিবার(২৩ জুন) রাতে সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে রাজধানীর উত্তরার বাসভবনে একদল জনতা তাকে আক্রমণ করার পর গ্রেপ্তার করা হয়। নুরুল হুদার কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হুদা সাদা টি-শার্ট এবং লুঙ্গি পরে ছিলেন এবং তার গলায় জুতার মালা ছিল। এক পর্যায়ে একজন ব্যক্তি জুতা দিয়ে হুদার মুখে আঘাত করেন। ভিডিওটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার জন্য হুদার ভূমিকার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নুরুল হুদা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য দায়ী কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন।’
সালাহউদ্দীন বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ধ্বংসের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মতো আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ভেঙে ফেলার জন্যও দায়ী। ‘কিন্তু আমরা এই ধরনের বিষাক্ত সংস্কৃতি বা জনতার বিচারে বিশ্বাস করি না,’ বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী টুকু।
গণতন্ত্র মঞ্চ লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
কোনো এক ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা উচিত না বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার (২২জুন) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমন কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে প্রস্তাব করেছিলাম—একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়্ত্বি পালন করতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদের ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার নেই। তিনটি দল ছাড়া সবাই এই প্রশ্নে এক জায়গায় এসেছি।’
‘অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সেটা যত বারই হোক। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা, আমি মনে করি। এটিই আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে, বলেন জামায়াতের এই নায়েবে আমির।
তিনি বলেন, ‘এমন নজির বহুদেশে আছে। এটা বাংলাদেশেও জরুরি বলে আমরা মনে করি। এ নিয়ে আমরা প্রায় ঐকমত্যে এসেছি। বিকালে আরও দুটো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হবে।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এরআগে গেল ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর পরেরদিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল তারা।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
রবিবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও উপস্থিত ছিলেন।
এমন এক সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন ফখরুলসহ বিএনপির আরও আট নেতার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আজই বেইজিং সফরে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আগামী রবিবার (২২ জুন) চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবীর খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই সফরের জন্য বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিসি।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও দলীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ই এই সফরের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। সায়রুল কবীর আরও জানান, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া, চেয়ারপারসনের তিন উপদেষ্টা— জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জাবিউল্লাহ ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া এবং দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
সফর শুরুর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় চীনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে চীনা দূতাবাসে সাক্ষাৎ করে বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচিত চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গভীর করার প্রত্যাশারই প্রতিফলনই এই সফর। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
এদিকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিকে একটি ‘প্রতীক্ষমাণ সরকার’ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক পর্যবেক্ষক, যার অপেক্ষা চলছে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত।
এই সফরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চীনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিএনপি, সদ্য-গঠিত এনসিপি ও কিছু ইসলামপন্থী দল।
এর আগে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি ২১ সদস্যের ‘অনন্য’ প্রতিনিধিদল ১১ দিনের সফরে চীন যায়।
ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, গত আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বহুদলীয় সম্পর্ক জোরদারের কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সফর আয়োজন করা হয়।
১১ দিনের সফরে প্রতিনিধিদলটি বেইজিং, শানশি এবং ইউনান প্রদেশে সিপিসির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের প্রথম দিন কেন অংশ নেয়নি জামায়াতে ইসলামী, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ।’
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়। এর আগে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়াতে ইসলামী।
গতকালের বৈঠকে কেন অংশ নেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়ে ও প্রশ্ন করে আমরা একটি বিবৃতি দিয়েছি। সেটি হচ্ছে তার লন্ডন সফরের বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান। এটা আমাদের সংগঠনের সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন গিয়েছিলেন পুরস্কার আনতে ও পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে। পাশাপাশি, বিএনপির ভারপ্রাপ্তপ্রধানের (তারেক রহমান) সঙ্গে লন্ডনে তার বৈঠক হয়েছে। সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তিনি যে কথা বলেছিলেন, সে বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমরা ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছিলাম।’
জামায়াতের আপত্তির কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির কথা বলা হয়েছে, সেটাও আমাদের প্রস্তাবের মধ্যে আছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো—প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। এখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, সেটা হতে পারে। বিএনপির দাবি ছিল—আলোচনা করে যদি মনে করেন, নির্বাচন তারিখ পরিবর্তন হতে পারে, সেটা নিয়ে আপত্তি নেই। যেহেতু তিনি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে অঙ্গীকার করেছেন, বাংলাদেশে এসে আবার কথাবার্তা বলে পুনর্বিবেচনা করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি।’
‘একটি দলের প্রতিনিধির সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন—যেটা আমাদের অবাক করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটির আর কোনো উদহারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন দেশে প্রধান বিরোধী দল কিংবা পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করা বিভিন্ন দলের সাথে বৈঠক হয়। কারণ, তারা তখন একটা স্ট্যাটাস পায়। বাংলাদেশে শতাধিক রাজনৈতিক দল আছে। এখন প্রধান উপদেষ্টা যার সঙ্গে কথা বলবেন, তার সঙ্গে কী একটি যৌথ বিবৃতি দেবেন? এটা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এটা সঠিক ছিল না। এতে বাকি সব দল যেমন বিব্রত হয়েছে, আমরাও তেমনটি অনুভব করছি।’
যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতিতে আপত্তি জামায়াতের
একটি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলন নিয়েই জামায়াতের আপত্তি ছিলে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘কেবল জামায়াতে ইসলামী না, বাকি সব দলও বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতি ও যৌথ সংবাদ সম্মেলন—এখানেই আমাদের আপত্তি। বিএনপির বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
‘এতে আমাদের মনে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। আর এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে যে সংস্কার কমিশন আছে, তাতে তারা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না। এটা অনেকটা পর্বতের মুষিক প্রসব করার মতো হবে। কার্যকারিতা হারাবে। সেখানে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আমরা গতকাল আসিনি।’
অন্তর্বর্তী সরকার থেকে জামায়াতের সাথে যোগাযোগ
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যে মান-অভিমান করেছে, তা ভাঙাতে দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে তারা আস্বস্ত হয়ে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে এসে অংশ নিয়েছেন।
এমন তথ্য দিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর বলেন, ‘এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গতকাল দুপুরে আমাদের আমীরে জামায়াতের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা আমাদের কথা বলেছি, তিনি কিছুটা বুঝতে পেরেছেন—আশ্বস্ত করেছেন, তার সরকার নিরপেক্ষ থাকবে। কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি তারা অনুরক্ত না। আগামীতে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করবেন ও বিষয়ে আরও যত্নবান হবেন।’
‘সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা অচলাবস্থা চাই না, সবসময় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু কোনো কিছুর ব্যত্যয় হলে আমাদের কথা বলতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
যেসব দল ক্ষমতায় যেতে পারছে না, নির্বাহী ক্ষমতা বিভক্ত করে তারা সরকারের হাত-পা বেঁধে দিতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন দল ক্ষমতায় যেতে পারবে, কোন দল পারবে না; জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে সেসব দেখা উচিত না। দেশের জন্য যেটা ভালো হবে, সেটা হওয়া উচিত।’
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যদি কঠোর না হয়, তাহলে আরেকটি শেখ হাসিনামার্কা নির্বাচন এ দেশকে রক্ষা করতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংযত হতে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়ে গেছে, আমরা প্রস্তুত আছি,’—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন মন্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কী, সেটা তিনি (উপদেষ্টা) বোঝেননি। যিনি একটি ভবনের তালা খোলার ব্যবস্থা করতে পারেননি একমাসেও, ৩০০টি আসনের আইনশৃঙ্খলা তিনি কীভাবে রক্ষা করবেন, সেটা বিস্ময়ের বিষয়।’
‘আমি তাকে সংযতভাবে কথা বলার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও বোঝার চেষ্টা করার অনুরোধ করছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে এই নায়েবে আমীর।
নারীদের জন্য ১০০ আসন নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা সংখ্যানুপাতিক হারে হতে হবে। আগে সেটা সমাধান না করে এ বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই।’
এনসিসি গঠনের বিষয়ে একমত
এদিকে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির এই নেতা বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে বলছি, আমরা এনসিসির পক্ষে। এমন একটি সাংবিধানিক ভারসাম্যপূর্ণ কমিটি বা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত, তারা সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।’
‘সেখানে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা থাকবেন, স্পিকার ও উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের (যদি হয়) ডেপুটি স্পিকার থাকবেন। এমন একটি কাঠামোর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের মূলপ্রস্তাব ছিল, সেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি থাকবেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আপত্তি করেছি এই জন্য যে একজন দেশের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন, আরেকজন বিচারবিভাগীয় প্রধান। কাজেই তাদের এই কমিটিতে নিয়ে এলে এখানে যদি কোনো বিরোধ তৈরি হয়, তাহলে সেটা মীমাংসা করার আর কোনো সংস্থা থাকে না।
‘সেকারণে আমরা বলেছি, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতিকে বাদ রেখে একটিকে গঠন করার কথা। অনেকে এদিক-ওদিক বলেছেন। কিন্তু প্রায় দুয়েকটি দল ছাড়া বাকি সবাই এনসিসি গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। পাশাপাশি, তিন বাহিনীর প্রধানদেরও এটির বাইরে থাকা ভালো বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী,’ বলেন তাহের।
এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়েতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি। বিএনপি ও এনসিপির মাঝে জামায়াতের জন্য সংরক্ষিত আসনটি মধ্যাহ্নভোজের আগ পর্যন্ত ছিল ফাঁকা।
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়ায় নানা রাজনৈতিক দল নানা মত দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, কমিশনের বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াতের বনিবনা না হওয়ায় মঙ্গলবারের আলোচনায় তারা যোগ দেননি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন জামায়াত আলোচনায় যোগ দেয়নি সেই উত্তর কমিশনই ভালো দিতে পারবে।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি জামায়াত আজকের বৈঠক প্রতীকী বয়কট করেছে। ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচ্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াত হয়তো একমত হতে পারেনি। তাই আলোচনায় অংশ নেয়নি।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আজকের আলোচনায় জামায়াতের থাকা উচিত ছিল। তারা এই আলোচনা বয়কট করেছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি। যদি মধ্যাহ্নভোজের পরেও জামায়াত আলোচনায় না আসে তাহলে পুরো ব্যাপারটি বোঝা যাবে।’
ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা বেশিরভাগ বিষয়েই একমত হয়েছি। কিন্তু নারীদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার প্রয়োজন দেখি না। নারীর ক্ষমতায়ন আমরাও চাই, কিন্তু কোনো বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না।’
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মনে করছে, নারী আসনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় আলোচনার প্রথম পর্যায়ে জামায়াত যোগ দেয়নি।
মন্তব্য