ময়মনসিংহ ছাত্রদলের বিভিন্ন উপকমিটিতে পদবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদল নেতাদের টাকা নেয়ার একটি ভিডিও ফাঁসের পর বিভিন্ন কমিটিতে টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন খোদ ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরাই।
জেলার ভালুকা উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটির পদের জন্য টাকা নেয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাময়িকভাবে অব্যাহতিও দেয়া হয়।
ভিডিওটি শেয়ার করে আশিকুর রহমান আশিক নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘খামের ভেতর বন্দি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখা। টাকার কাছে বিক্রি রাজপথের কঠিন শ্রম।’
মো. জসিম উদ্দিন নামের একজন সেখানে কমেন্ট করেন, টাকার কাছে বিক্রি রাজনীতি। রনি খান নামের আরেকজন লেখেন, বুক পকেট আর ব্যাংক চেকে ময়মনসিংহ দক্ষিণ ছাত্রদল।
টাকা নেয়ার ভিডিও ফাঁসের পর সমালোচনা হলেও এক মাস পরই বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ রায়হানের বিরুদ্ধে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
শুধু তিনটি ইউনিটেই নয় অভিযোগ উঠেছে, দক্ষিণ জেলা শাখার ১৮টি ইউনিট কমিটির বেশির ভাগ পদেই অযোগ্য, বিবাহিত, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি, চাকরিজীবী ও অন্য দলের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে।
এসব ইউনিটের কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তর শাখার স্বাক্ষরেই অনুমোদন দেয়া হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, কমিটি দেয়ার সময় জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোনো মতামত বা স্বাক্ষর নেয়া হয়নি।
শুধু পদবাণিজ্য নয়, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের এক নেতাকে প্রায় তিন বছর পর জানানো হয়েছে, ওই পদ আরেকজনের। এখানেও উঠেছে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ।
২০১৮ সালের ১২ জুলাই তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের রাজীব-আকরাম পরিষদ মাহবুর রহমান রানাকে সভাপতি ও আবু দাউদ রায়হানকে সাধারণ সম্পাদক করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ৮৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটি তাদের মেয়াদ পূর্ণ করে অতিরিক্ত আরও এক বছর পার করেছে।
ওই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়েছিলেন রুকনুজ্জামান রুকন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করার পর চলতি বছরের ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর থেকে নামের বিভ্রান্তি নিরসন শিরোনামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, ‘রুকনুজ্জামান রুকন নাম নির্দেশক ব্যক্তি পরিচয়ে স্থানীয় পর্যায়ে খানিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যিনি এই পদ ব্যবহার করবেন তিনি হলেন মুক্তাগাছা উপজেলার বড়হিংসা বাজার এলাকার ২২২ আজাদ ম্যানসন বাড়ির শফিকুল আজাদের ছেলে রুকনুজ্জামান রুকন।’
অথচ গত ১২ জুলাই রুকনের বাবার মৃত্যুতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহদপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়।
রুকন ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা হিসেবেও পরিচিতি। অথচ হঠাৎ করে তাকে বলা হয়েছে, তিনি ওই পদ পাননি।
এত দিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহারকারী রুকনুজ্জামান রুকন বলেন, ‘এ পদে স্থানীয় বিএনপির সব নেতা-কর্মী আমাকেই চিনে। রাজপথে আন্দোলন করতে যেয়ে জীবনের সোনালি সময় নষ্ট করেছি। বহু হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছি।
‘এক মাস হলো আমার বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা। আর এখন স্থানীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আঁতাত করে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এ জন্য আগে থেকেই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। এখানে নিঃসন্দেহে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে, যা হয়তো কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন না।’
পদ পাওয়া নতুন রুকনুজ্জামান রুকন বলেন, ‘আমি দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সকল প্রোগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছি। এ ছাড়া এই পদটি আগে থেকেই আমার ছিল। এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
‘রুকন সরকার’ নামে অধিক পরিচিত, কিন্তু কমিটিতে রুকনুজ্জামান রুকন লেখার বিষয়টি তিনি বলেন, ‘আমার ডাক নাম রুকন সরকার। ফলে এই নামেই বেশি পরিচিত হব, সেটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ইতোমধ্যে লিখিতভাবে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলও পরিষ্কার করেছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রদলের একজন সাবেক সভাপতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি করার ক্ষেত্রে শতভাগ আর্থিক লেনদেন হয়েছে। রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যারা ছিল না তাদের নেয়া হয়েছে। দুঃসময়ের নেতাকর্মী বঞ্চিত হয়েছে। এতে অনেকের ভেতরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো কমিটিতে স্বার্থত্যাগী নেতা-কর্মীদের পদে আনা হলেই আবারও চাঙ্গা হবে সংগঠন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এসেছে। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, যা রটে তা কিছু হলেও ঘটে। এ ছাড়া ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, পদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়া হচ্ছে।
‘এরপরও কেন্দ্রীয় কমিটি অভিযুক্তের পদ সাময়িক স্থগিত করে ফিরিয়ে দেয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।’
একাধিক ছাত্রদল নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের কাছে কমিটি গঠনের এসব অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। আর্থিক লেনদেন আছে কি না তা গোপনে তদন্ত করছেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নিউজবাংলার পরিচয় দিয়ে এসএমএস করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ রায়হান বলেন, ‘পদ দাবি করা রুকনুজ্জামান রুকন আমাদের দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। নামের ভুলে তার বাবার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল শোক জানিয়েছিল। তিনি এর আগে এই পদ কোথাও ব্যবহার করেননি। এখানে টাকার বিনিময়ে কাউকে পদ দেয়া হয়নি।’
বিভিন্ন কমিটি করার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ছাড়া এটির সুরাহা হয়েছে।
‘তখন কমিটির জন্য টাকা নেইনি। ব্যবসায়িক কাজের টাকা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষরে কমিটিগুলোর অনুমোদন হয়েছে। আমি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।’
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ দিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি আমাদের সকলের নজরে এসেছিল। পরে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাময়িক অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। তদন্ত করে আবারও অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে দুজনের নামের বিভ্রান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি এখনও জানি না। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল আরও তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
আরও পড়ুন:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ জোট গঠন করতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে চায় বিএনপি। আর ঐক্য বজায় রাখতে কেউ যেন বিভেদের পথে না যায় সেই বার্তাও দিতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের বৈঠক হচ্ছে। দল ও নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার বার্তা দিতেই হাইকমান্ডের এই বৈঠক করছে বিএনপি।
এ সময়, আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যনির্ভর মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তরুণ-যুবকদের রাজনৈতিক ভাবনাকে ধারণ করে সামনের দিনে জাতি বিনির্মাণে কর্মসূচি প্রণয়ন করবে বিএনপি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন।
চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আলমগীর আলম (৫৫) নামে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কায়কোবাদ আহম্মদ জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রিয়াজ ও আকিব নামে দুইজন যুবদল নেতাও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
স্থানীয়রা জানান, নিহত আলমগীর আলম বিএনপি নেতা। তিনি রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব রাউজানের সিদ্দিক চৌধুরী বাড়ির আবদুস সত্তারের ছেলে।
আলমগীরের ছেলে আসফায়েত হোসেন বলেন, শনিবার দুপুরে পরিবারের সবাই মিলে পূর্ব রাউজান রশিদ পাড়ায় ফুফুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে কায়কোবাদ আহম্মদ জামে মসজিদের সামনে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করে।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আলমগীর নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মরদেহ সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে কে বা কারা গুলি করে পালিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
এদিকে বিএনপি নেতা আলমগীর হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার। তিনি বলেন, আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছিল। তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে যারা হত্যা করেছে- তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
গত ৭ অক্টোবর উপজেলার বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে (৫২) রাউজানের খামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাটে চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই উপজেলায় আরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটল।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে জানা যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘আদর্শ ও মতের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের স্বার্থে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে এক হতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের সব দরজা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের বিভেদের কারণে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন ঘটলে জাতি ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দেশ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন ঠেকাবো।’
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দুই-চার কলাম লেখার জন্য আমাকে প্রায় সাড়ে নয় বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছে, আয়নাঘরে থাকতে হয়েছে, নির্যাতনে কারাগারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু কখনো সংগ্রামের পথ থেকে পিছিয়ে যাইনি।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘এক সময় আমি ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে ছিলাম। করোনারি কেয়ার ইউনিটের একটি সেলে আমাদের রাখা হয়। তিনি অনশন শুরু করলে তাকে বলেছিলাম, আপনি মারা গেলে শেখ হাসিনা খুশি হবে, দয়া করে অনশন ভঙ্গ করুন। ছয়-সাত দিন পর মুরুব্বিরা দেখা করে তার অনশন ভাঙ্গান।’
ছাত্রদের অভ্যুত্থানের গৌরবময় ইতিহাস বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের রক্তঝরা দিনগুলো স্মৃতিতে ধরে রেখে, তার ভিত্তিতেই আমাদের আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে। সন্তানদের জন্য একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলাই হবে আমাদের দায়িত্ব।’
আমাদের সন্তানদের রক্তের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে বলে সকলের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং মানিকগঞ্জ-১ আসনে এমপি প্রার্থী এস.এ জিন্নাহ কবির বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে ভোট নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। সাধারণ ভোটাদের ইসলাম ধর্ম নিয়ে মিথ্যা অপব্যাখ্যা দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে, নাওজুবিল্লাহ দেখেন কত বড় মিথ্যাবাদী।
তিনি বলেছেন, কোরআন শরীফের নিয়ম মেনে ও আল্লাহর সকল কিছু মেনে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হলে একমাত্র জান্নাত পাওয়া যেতে পারে। ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতের মিথ্যা কথায় আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাধীনতাবিরোধী মিথ্যাবাদী, প্রতারণাকারী জামায়াতকে প্রতিহত করতে হবে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ঘিওর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথ বলেন।
ঘিওর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিকের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানে আলমের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হেসেন দিপু, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপি সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. লোকমান হোসেন, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিস ও জেলা যুবদলের সদস্য মোসলেম উদ্দিন প্রমুখ।
বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফা” বিষয়ে খন্দকার শামসুল আলম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মেধাবৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে। শিক্ষকদের এমন সাপোর্ট দেওয়া হবে যাতে তারা পাঠদানে পুরো মনোযোগ দিতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে নিজের যত্ন নেওয়া এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের শিক্ষা।”
তারেক রহমান জানান, ভবিষ্যতে মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রণোদনা বাড়ানো হবে।
তারেক রহমান বলেন, “বিগত ১৫ বছরে প্রচুর অর্থবিত্ত পাচার হয়ে গেছে। পানির অপর নাম জীবন তাই খালগুলো পুনঃখনন ও পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে যে খাল খনন কর্মসূচি নিয়েছিলেন, তা পুনরায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে পানির সংকট ও আর্সেনিক সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “মেধাবীদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আগামীর নেতৃত্ব। তরুণরা যেন বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারে ভাষা শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে স্কুল থেকেই দক্ষতা গড়ে তোলা হবে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, কোনো মেধাবী যেন আর ঝরে না পড়ে, সে লক্ষ্যে সরকার গঠন করলে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগান্তকারী সংস্কার আনা হবে।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপি'র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ।
প্রধান অতিথি তারেক রহমানের বক্তব্যের আগে অনুষ্ঠানস্থল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা সরাসরি বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তর দেন।
উল্লেখ্য যে, তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার ওপর গত ১৬ আগস্ট ১০ হাজারের ওপর শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়। পুরস্কার দেওয়া হয় ৬০ জনকে। এরমধ্যে প্রথম পুরস্কার ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ১৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ১০ হাজার টাকা এবং চতুর্থ পুরস্কার ৫ হাজার টাকা।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনটি স্কুলকে এক লাখ করে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এনসিপির প্রতিনিধি দলে থাকবেন—দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, আইনি ভিত্তিসহ সনদের নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা কমপক্ষে তিনবার চেয়েছি। অধ্যাপক গোলাম আজম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আমিও চেয়েছি। শুধু এখন নয়, ৪৭ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী দ্বারা কেউ যদি কোনো কষ্ট পেয়ে থাকেন অথবা কারও কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে আমি সব ব্যক্তি এবং সংগঠনের পক্ষে নিঃশর্তে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ক্ষমার বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, এ ক্ষমা গোটা জাতি হইলেও চাই, ব্যক্তি হইলেও চাই, কোনো অসুবিধা নাই। আমরা কেউ কখনো বলিনি—আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের ১০০টার মধ্যে ৯৯টা সিদ্ধান্ত সঠিক, একটা তো বেঠিক হতে পারে। সেই বেঠিক একটা সিদ্ধান্তের জন্য জাতির ক্ষতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমার কোনো সিদ্ধান্তের জন্য যদি জাতির ক্ষতি হয় তাহলে আমার মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়?
ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা নির্বিঘ্নে থাকবে বলে উল্লেখ করেন ডা. শফিকুর রহমান।
মন্তব্য