রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার পর ঢাকামুখী শ্রমিকদের দুর্ভোগের যাত্রা নিয়ে উদ্বেগ জানালেও তার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কেন বাস চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে, সে বিষয়ে কিছুই বললেন না ওবায়দুল কাদের।
তবে তিনি এ ঘটনায় দায় দিয়েছেন শিল্পমালিকদের। বলেছেন, মালিকরা বলেছিলেন, আশপাশের শ্রমিকদের নিয়ে কারখানা চালু করবেন। কিন্তু পরে শ্রমিকদের আনা হয়েছে সারা দেশ থেকে।
শাটডাউনের মধ্যে গণপরিবহন চালু না করে শ্রমিকদের ঢাকায় আসতে বলায় লাখ লাখ মানুষের তীব্র ভোগান্তির পরদিন রোববার অনলাইনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অনুরোধে আজ থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কারখানার আশপাশের শ্রমিকদের নিয়ে প্রথমে কারখানা চালু করবেন।
‘কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের দ্রুত কাজে যোগ দেয়ার নোটিশ দেয়। এতে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে মানুষের রাজধানীমুখী যে স্রোত, তাতে সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে।’
১ জুলাই থেকে চলমান শাটডাউনের মধ্যে ঈদের ছুটির সময় ৮ দিনের জন্য শিথিল করার সময়ই ঘোষণা আসে, ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে কলকারখানাও।
ঈদের পাশাপাশি শাটডাউনের কারণে দীর্ঘ ছুটি পাওয়া যাবে বলে শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামের পথ ধরেন। ঈদের ছুটি শেষে কারখানা খুলে দিতে মালিকপক্ষের আবেদন নাকচ করে গত মঙ্গলবারও জানানো হয়, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ থাকবে।
শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই আদেশ আসে, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা ১ আগস্ট থেকে চালু থাকবে। আর লাখ লাখ শ্রমিক শনিবার ট্রাকে-ভ্যানে চেপে পণ্য হয়ে ফিরেছেন।
একদল ফিরেছেন স্বল্প গতির যানবাহনে ভেঙে ভেঙে, কেউ কেউ ফিরেছেন হেঁটে।
ফেরি পারাপারে যে চিত্র দেখা গেছে, তা করোনাকালে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক গাদাগাদি করে উঠেছেন ফেরিতে, আর এর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা করছেন বহুজন।
ক্লান্ত-শ্রান্ত শ্রমিকরা ঘর্মাক্ত হয়ে ঘরে ফেরার পর রাতে আদেশ আসে লঞ্চ চলবে রোববার দুপুর পর্যন্ত। এরও ঘণ্টাখানেক পর জানানো হয় চলবে বাসও।
কিন্তু ততক্ষণে আর্থিক ক্ষতি সয়ে, শারীরিক কষ্ট সয়ে শ্রমিকদের সিংহভাগ চলে এসেছেন কর্মস্থলে। যারা শিশুদের নিয়ে ফিরেছেন, তাদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়।
এই আদেশ আসার পর যা ধারণা করা হয়েছিল, রাতে তা দেখা গেছে। বরিশাল থেকে লঞ্চ ছাড়েনি, বাসেও দেখা যায়নি ভিড়।
আবার প্রথমে নির্দেশ আসে যে বাস চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আর লঞ্চ চলবে দুপুর পর্যন্ত। তবে রোববার আবার আদেশ আসে, সারা দিনই আসতে পারবে শ্রমিকবাহী বাস।
‘আগস্ট এলেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি’
আগস্ট মাস এলেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
কাদের বলেন, ‘আগস্ট এলেই বঙ্গবন্ধুকন্যার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসার পর তাকে প্রায় ২০ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। যারা খুনের কুশীলব ছিল, তাদের অপমৃত্যু হয়েছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি, ক্ষমা করেও না।’
আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ধারায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।
‘চলমান করোনা সংকটে অসহায়, দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ালেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি সঠিক সম্মান প্রদর্শন এবং তার আত্মা শান্তি পাবে।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনাক্রম তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল ১৫ আগস্ট। নির্মমতার দিক থেকে এমন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নজির পৃথিবীতে আর নেই।
‘জগতে অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হয়নি, টার্গেট করা হয়নি অবলা নারীকে, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে। সেদিন শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, তার সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম মুজিবসহ নৃশংসভাবে নিহত হন পরিবারের অন্য সদস্যরা। ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে থাকেনি, তারা পরবর্তী সময়ে তিন নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের অভ্যন্তরে কারাকক্ষে হত্যা করে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের কুশীলবরা এখনো সক্রিয়, তারা উন্নয়ন, শান্তি ও স্বস্তির বাংলাদেশ চায় না।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়া তাদের গাত্রদাহ। তারা চায় সংঘাতে জর্জরিত রক্তময় প্রান্তর।’
আরও পড়ুন:আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং কর্মচারী ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে যশোরের শার্শা উপজেলার এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
শার্শা উপজেলার ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩৬টি মাদ্রাসায় ক্লাস বর্জন করে গত সোমবার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘লাগাতার কর্মবিরতি চলছে। তারি ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। বেনাপোলে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ধান্যখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাহেব আলী বলেন, আমাদের দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবহেলিত। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় । আমাদের যা বেতন দেওয়া হয় তা আমরা সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছি না। আমাদের সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং কর্মচারী ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
তবিবর রহমান সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুব হোসেন বলেন, মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
বেনাপোল মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক আমিনূল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের মাদ্রাসায় কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। উপজেলার সকল এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ক্লাস বন্ধ রয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) উপজেলার সব এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শাহাজান কবীর জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শার্শা উপজেলা ও বেনাপোলের সকল এমপিও ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীরা আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের আসন্ন বৈঠক প্রতিহত করতে আগামী ১৯ অক্টোবর রাঙামাটিতে দিনব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাঙামাটি শহরের এক রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনের জেলা সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম তাজ। এ সময় তিনি জানান, ভূমি কমিশনের বিতর্কিত বৈঠক প্রতিহত ও ছাত্র–জনতার পক্ষ থেকে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ, ঘেরাও ও হরতাল কর্মসূচি পালিত হবে।
তাজুল ইসলাম তাজ বলেন, ‘বিতর্কিত ভূমি কমিশনের বৈঠক প্রতিহত করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে কমিশনের কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করা হলে রাঙামাটির শান্তিপ্রিয় জনতা কঠোর আন্দোলনে নামবে। দল-মত নির্বিশেষে সকল নাগরিককে এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পিসিসিপি জানায়, রোববার সকাল থেকে রাঙামাটি শহরের প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছাত্র-জনতা বৈঠক স্থান ঘেরাও করা হবে।
পিসিসিপি ঘোষিত ৮ দফা দাবি: ১. পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল জাতিগোষ্ঠীর সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
২. ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির কার্যক্রম শুরু করার আগে ভূমির বর্তমান অবস্থা নিরূপণে সম্পূর্ণ ভূমি জরিপ সম্পন্ন করতে হবে।
৩. দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৬ বাতিল করতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশের প্রচলিত ভূমি আইন অনুযায়ী ভূমি ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে এবং জেলা প্রশাসককে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির ক্ষমতা দিতে হবে।
৫. কমিশনের সিদ্ধান্তে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি খাসজমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ২০০১ সালের আইন অনুযায়ী বলবৎ রাখতে হবে।
৭. তথাকথিত রীতি, প্রথা ও পদ্ধতির পরিবর্তে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুসারে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৮. জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্তিকৃত বা কবুলিয়তপ্রাপ্ত মালিকানা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—
পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের সভাপতি মো. নূর হোসেন, পিসিএনপির রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা।
নওগাঁর পোরশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতি রাতে ঘটছে একের পর এক ডাকাতি। ঘনঘন এসব ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাকাতি দমনে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ডাকাতরা গাছ ফেলে যানবাহনের পথরোধ করে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করছে। একই সঙ্গে বাজার ও মোড়ের দোকানপাটের তালা ভেঙে মূল্যবান মালামাল লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীরাও তাদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। গত
বুধবার গভীর রাতে উপজেলার সারাইগাছী-আড্ডা আঞ্চলিক মহাসড়কের মোশানতলা মোড় থেকে বন্ধুপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিনটি স্থানে ডাকাতরা গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে। ওই সময় একাধিক যানবাহনের যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল লুট করা হয়। একই রাতে বেজোড়া মোড় এলাকায় তিন নাইট গার্ডকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অন্তত ১৮টি দোকানের মালামাল লুটে নেয় ডাকাত দল। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে সারাইগাছী-আড্ডা সড়কের মোশানতলা মোড়ে একই কায়দায় আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী চলে এই তাণ্ডব। গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে উভয় দিকের যানবাহনের যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মালামাল ছিনিয়ে নেয় তারা। ডাকাতদের হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন। বর্তমানে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মোশানতলা মোড়ে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ঘটনার সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে সারাইগাছী বাজারে অবস্থান করলেও কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। ডাকাতি শেষ হওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বেজোড়া মোড়ের ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির, রাজিবুল হাসান এবং মুদি ব্যবসায়ী জাকারিয়া জানান- আমাদের এলাকায় মাঝেমধ্যেই ডাকাতি হয়। গত বুধবার রাতে অন্তত ১৮টি দোকান লুট হয়েছে। এতে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
ঘাটনগর ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় আমার পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। টাকা দিতে দেরি করায় আমাকে মারধর করে ৪২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার এবং পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মিন্টু রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ওসি মিন্টু রহমান বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, ডাকাতি রোধে বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা তিনটি পৃথক মামলায় তারা এ সাক্ষ্য দেন।
মামলাগুলোতে আরও অভিযুক্ত আছেন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। ঢাকার বিশেষ জজ-৪ এর বিচারক রবিউল আলমের আদালতে পৃথক তিন মামলায় তারা সাক্ষ্য দেন। আবার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আদালত ৩০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
এর মধ্যে শেখ রেহেনা ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন-ডিএসসিসি’র অফিস সহকারী রেসমা, রেভিনিউ সুপারভাইজার দেওয়ান মো. সাঈদ ও উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তৈয়ব রহিম।
আজমিনা সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- ডিএসিসি’র হিসাব সহকারী ফারুক সরদার, উপ-কর কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম চিশতী ও উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আসাদুজ্জামান।
অন্যদিকে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায়ও তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- ডিএসিসি’র হিসাব সহকারী ফারুক সরদার, উপ-কর কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ও উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আসাদুজ্জামান।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
শেখ রেহানার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে গত ১৩ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। মামলায় টিউলিপ, রিজওয়ানা সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়।
মামলাটির তদন্ত শেষে ১০ মার্চ আরও দুই আসামিসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।
এই মামলায় অন্য আসামিরা হলেন-জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, তদন্তে পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া দুই আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
একইভাবে আজমিনা সিদ্দিকও ১০ প্লট বরাদ্দ নেন। তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। মামলায় টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ আরও দুই আসামিসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন আফনান জান্নাত কেয়া।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
একই অভিযোগে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। মামলায় টিউলিপ রিজওয়ানা ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এস এম রাশেদুল হাসান।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, শেখ হাসিনা ও টিউলিপ ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক ফারিয়া সুলতানা, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরিচালক শেখ শহিদুল ইসলাম, তদন্তপ্রাপ্তিতে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) একটি কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। কারখানাটিতে হাসপাতালে ব্যবহার করার বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। বহুতল ভবনটিতে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন বলে জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা যায়। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে বলেন, সাত তলা ভবনের ৫, ৬ ও ৭ তলায় আগুন লেগেছে। এ পর্যন্ত ১৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
আগুনে এখন পর্যন্ত হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুব ও নারী সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ঢাকসু, জাকসু ও চাকসুতে যুব সমাজ ছাত্রশিবিরের ওপর আস্থা রেখেছে। সব জায়গায় একই চিত্র। মেয়েদের ও তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে। এর প্রতিচ্ছবি জাতি আগামীতে দেখবে ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ঢাকা-১৫ নির্বাচনী আসনের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন বক্তব্যজুড়ে।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করছি, দুটো সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে—একটি আমাদের যুবসমাজ, আরেকটি আমাদের মায়েদের সমাজ। আজ পর্যন্ত তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়ে গেছে। সব জায়গায় একই চিত্র—মেয়েদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর; তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। এরই প্রতিচ্ছবি আগামীতে বাংলাদেশ দেখবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে আমাদের মায়েদের সম্মান ঘরে-বাইরে কোথাও নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের জীবনী থেকে সেই শিক্ষা নিয়েছে যে আমাদের মায়ের জাতিকে মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। এই রাষ্ট্রে বাস্তব প্রয়োজনে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখবেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইমান, ধর্মবিশ্বাস—এসবের হিসাব নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা এই রাষ্ট্রের মানুষকে সম্মান করব। তারা এ দেশের নাগরিক। আমরা দেখব না সে কোন ধর্মের, কোন দলের, তার গায়ের রং কী, মুখের ভাষা কী, সে পাহাড়ে থাকে নাকি সমতলে থাকে। সে আমার ভাই, সে আমার বোন, সে এই দেশের নাগরিক—সেই হিসেবে আমরা তাদেরকে পরিচালনা করব।’
শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো প্রাধান্য আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে। এ দেশের অর্থনীতি ভাঙাচোরা, উল্টে পড়া, ধসে যাওয়া। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করে প্রকৃত সেবকদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেই লোকটা আমাদের দলের হতে পারে, না-ও হতে পারে। সেই লোকটা মুসলমান হতে পারে, অন্য ধর্মেরও হতে পারে। যে এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত, তার হাতে এই দায়িত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে। এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাইছি, যেখানে শাসকেরা জনগণের কাছে তাদের ত্রুটি ও ঘাটতির জন্য মাফ চাইবে। তারা কারও কাছ থেকে প্রশংসা চাইবে না, বাহবা চাইবে না, কোনো স্লোগান চাইবে না, যেমন “অমুক ভাই, তমুক ভাই জিন্দাবাদ”—এটা চাইবে না। তাদের অন্তর ভয়ে কাঁপবে, জনগণের এই বোঝা “আমার কাঁধে যেটা দেওয়া হয়েছে, আমি তা বহন করতে পারছি কি না”—এই ভেবে।
তিনি বলেন, যে সমাজে যুব সমাজ সিদ্ধান্ত নেয় এবং নারীরা এগিয়ে আসে, সেই সমাজ ও জাতি কখনো পরিবর্তন না হয়ে পারে না।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীকার তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রথম অঙ্গীকার, একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। শিক্ষা ভালো না হলে জাতি কখনো ভালো হতে পারে না। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।
দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতি বাসা গেঁড়ে বসে আছে। এই দুর্নীতি থাকবে না। এজন্য যত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, করবো ইনশাআল্লাহ। লড়াই করবো, হিমালয়ের মতো পর্বত সমান বাধা আসলেও দুর্নীতির অস্তিত্ব যেন আসমান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পারি।
তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার প্রাপ্ত হক বা ন্যায়বিচার পান, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এজন্য যেন আবাল-বৃদ্ধ, বনিতা, নারী ও শিশু কাউকে চেষ্টা করতে না হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) চেয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ আবেদন জানান তিনি। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয় আদালতের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।
ট্রাইব্যুনালকে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানুষকে হত্যার জন্য যদি একবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে ১৪০০ মানুষকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু আইনে এটা সম্ভব নয়। এজন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমরা তার চরম দণ্ড দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। যদি তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয় তাহলে ন্যায়বিচার পাবে দেশের জনগণ।
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে অপরাধ সংঘটনের পর পালিয়ে গেলেও ভারত থেকে ক্রমাগত আন্দোলনকারীদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যারা বিচার চেয়ে মামলা করেছেন তাদেরও নির্মূলের কথা বলেছেন। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে এত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার পরও তার মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। তিনি একজন হার্ডনট ক্রিমিনালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সুতরাং এই ট্রাইবুনালের মামলায় তিনি যেহেতু সব অপরাধীদের প্রাণভোমরা ছিলেন, তাই তাকে আইনানুযায়ী চরম দণ্ড দেওয়া শ্রেয়। তাকে যদি চরম দণ্ড না দেওয়া হয় এটা অবিচার করা হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্যাং অব ফোরে’র সদস্য ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার বাসায় বসে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ড্রোন ওড়ানোসহ হেলিকপ্টার থেকে মারণাস্ত্র ছোড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি নিজে গ্রাউন্ডে গিয়ে গিয়ে দেখেছেন সঠিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে কি না। তাকে ভিডিও দেখানো হয়েছে। তিনি কমান্ড স্ট্রাকচারে দ্বিতীয় পজিশনে ছিলেন। এ কারণে তার ব্যাপারেও চরম দণ্ড চেয়েছি ট্রাইব্যুনালে।
তবে রাজসাক্ষী হয়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন যেহেতু আইন অনুযায়ী আদালতকে তথ্য দিয়ে বা সত্য উদঘাটনে সাহায্য করেছেন তার ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তারা হয়তো পরিবারের আলোর প্রদীপ ছিলেন। ভবিষ্যতে পরিবারের দায়িত্ব নিতেন তারা। সুতরাং এসব পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য আসামিদের সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে আদালতের কাছে আমরা আদেশ চেয়েছি।
গতকাল বুধবার এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে চতুর্থ দিনের মতো প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক চলে। এদিন নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। এর আগের দিন মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো দিনভর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তিনি। ওই দিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয়। একইসঙ্গে এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষীর বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়।
তার আগের দিন ১৩ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। ওই দিন বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যা এ মামলার বিচারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানায় প্রসিকিউশন। ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছিল। ওই দিন দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলের ইতিহাস তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। একইসঙ্গে গুম-খুনসহ নারকীয় সব ঘটনার বর্ণনা দেন।
গত ৮ অক্টোবর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মোট ২৮ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
মন্তব্য