কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃত্ব পড়েছিল হুমকিতে। ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি নুরুল হক নুরের সঙ্গে পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খানের দ্বন্দ্ব এসেছিল প্রকাশ্যে। এক দিনের মধ্যে সে বিরোধ সমঝোতার দিকে গেলেও রহস্য রয়ে গেছে ঘটনার শুরু নিয়ে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সাংগঠনিক নানা সংকট থাকলেও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয় ‘কমল বড়ুয়া’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ নিয়ে। দুই নেতার মতবিরোধ উসকে দেয় সেখানকার ফাঁস হওয়া চ্যাটের কয়েকটি স্ক্রিনশট। দ্রুতই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে।
সংগঠনের আহবায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহবায়ক সোহরাব হোসেন এবং ফারুক হাসানসহ শীর্ষ নেতারা ‘কমল বড়ুয়া’ নামের মেসেঞ্জার গ্রুপটিতে যুক্ত ছিলেন। সেখানে তারা সংগঠনটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। এখানকার আলাপচারিতা নিয়েই সংগঠনে নেতৃত্বের বিরোধ তুঙ্গে উঠে।
নেতারা জানান, সম্প্রতি ফারুক হাসানের ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়। এরপর গ্রুপটিতে রাশেদ ও সোহরাবের আলোচনার কয়েকটি স্ক্রিনশট আনুমানিক এক সপ্তাহ আগে ছড়িয়ে পড়ে।
দুই নেতার ‘আপত্তিকর কথোপকথন’ দেখে ক্ষুব্ধ হন নুর। তিনি শুক্রবার ছাত্র যুব এবং শ্রমিক অধিকার পরিষদের বৈঠক ডাকেন। সেখানে রাশেদ ও সোহরাবকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠন করা হয়। নুর ডাকসু ভিপি হয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হলে পরিষদের দায়িত্ব পান রাশেদ খান। আর নুর এই সংগঠনে যুক্ত থাকেন যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে।
সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে রোববার রাত তিনটায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাশেদ খান এবং সোহরাব হোসেনকে ছাত্র পরিষদ থেকে সাময়িক অব্যাহতির বিষয়টি প্রকাশ করা হয়।
এতে ক্ষুব্ধ হন আবার রাশেদ খান। তিনি সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। কিন্তু নুর সেখানে যুগ্ম আহ্বায়ক। তবে তিনি পদ ব্যবহার করেছেন সমন্বয়ক হিসেবে। কিন্তু সংগঠনে এই পদ বলতে কিছু নেই। রাশেদ খান চিঠি দিয়ে জানতে চান, কেন এই পদ ব্যবহার করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে নুরকে জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, নইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে বিকেলেই অনলাইন মিটিং করে রাশেদ-সোহরাবকে বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করে নেন নুর।
বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহারের আগে রাশেদ ও সোহরাবের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ জানতে চাইলে নুর স্ক্রিনশটের কথা না বললেও ‘কমল বড়ুয়া’ নামের মেসেঞ্জারের চ্যাট গ্রুপের কথা জানান নিউজবাংলাকে।
নুর বলেন, ‘কমল বড়ুয়া’ নামে মেসেঞ্জারে এটি চ্যাট গ্রুপ খুলে সংগঠন ভাঙার চেষ্টা করছিল রাশেদ খান। এটির মাধ্যমে সে সংগঠনের ত্যাগী নেতাদের নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জন্য একটা সংঘবদ্ধ গ্রুপ তৈরি করছিল। এ অভিযোগে তাকে এবং সোহরাব হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ঘটনার বিষয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দীন সিফাত বলেন, ‘কয়েকটি স্ক্রিনশটকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন জেলার যে কমিটিগুলো আছে সেগুলো নিয়ে সেখানে কিছু আলোচনা ছিল। বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ বা বাদ দেয়া নিয়েই এসব আলোচনা।
‘যেমন, অমুককে সভাপতি করা হোক। অথবা অমুককে বাদ দেওয়া হোক, তার সমস্যা আছে, সে অনুগত থাকবে না। এই ধরনের আলোচনাগুলোকে বিভিন্ন জেলার সমস্যাগুলো উসকে দেয়ার শামিল বলে চিহ্নিত করেন নুর ভাই। এর থেকেই মূলত সমস্যা তৈরি হয়।’
সিফাত আরও বলেন, ‘রাশেদ ভাই অনেক দিন ধরে বলে আসছেন সংগঠনে সমন্বয়কের কোন কথা আগে উল্লেখ ছিল না। এই ধরনের পদ যেন না থাকে। এটি দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। তবে স্ক্রিনশটগুলো অনেক আগের। মাঝখানে ফারুক হাসান ভাইয়ের আইডি হ্যাকড হয়েছিল৷ হ্যাকাররা আগের কনভারসেশনগুলো পাবলিক করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘রাশেদ ভাইয়ের চ্যাটের একটা স্ক্রিনশট সংগঠনের তৃণমূল পর্যন্ত ব্যাপক প্রচার করা হয়। এতেই সমস্যার সৃষ্টি৷ সংগঠনের একজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নুর ভাইকে নিয়ে রাশেদ ভাই কিছু বলেছিলেন। সেখানে নুর ভাইয়ের স্বঘোষিত ছাত্র যুব শ্রমিক পরিষদের সমন্বয়ক বনে যাওয়া নিয়েই সোহরাব ভাই আর রাশেদ ভাইয়ের মধ্যে কথা হচ্ছিল। আর এটা থেকেই সমস্যা বেড়েছে। কথাগুলো ছিল প্রায় দুই মাস আগের। কিন্তু প্রকাশ হয়েছে কিছুদিন আগে।’
সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান খান বলেন, ‘সংগঠনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভিন্ন গ্রুপ থাকে। সে গ্রুপে অনেকে ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এসব গ্রুপে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা হয়৷ স্ক্রিনশটের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া হাস্যকর ব্যাপার। এভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া অন্যায়।’
তিনি বলেন, ‘সংগঠনের অনেকের মধ্যে রাশেদ খানকে নিয়ে ক্ষোভ বা তাকে কীভাবে দমানো যায় সেই চিন্তা থাকতে পারে। জুনিয়র নেতাদের মাধ্যমে স্ক্রিনশট শেয়ার দিয়ে অনেক নোংরামি করা হয়েছে৷ মূলত কোন্দল আর ভুল বোঝাবুঝি নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত।’
মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ‘নুর যখন সমন্বয়কের পদ ব্যবহার করছিলেন তখন আমরা মানা করেছিলাম। যেহেতু সামনে নতুন দল গঠন হচ্ছে। কিন্তু এরপর সে কোনো চাপে হয়তো এই পদ ব্যবহার করে সুপ্রিমেসির (শ্রেষ্ঠত্ব) জায়গা তৈরি করে শাস্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। আমরা অসাংগঠনিক এই পদের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলাম।’
স্ক্রিনশটে কী ছিল জানতে চাইলে মাহফুজ বলেন, ‘স্ক্রিনশটটা আমি শুরুতে দেখিনি। পরে দেখেছি। সেখানে এক জায়গায় দেখলাম পটুয়াখালী বা কোনো এক জায়গায় রাশেদের নাম দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আরেক জায়গায় দেখলাম সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেককে বের করে দিতে হবে লিখা হয়েছে৷ এসব নিয়েই মূলত সমস্যার সৃষ্টি।’
সার্বিক বিষয় নিয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘এসব কিছুই না। সংগঠনে চলতে গিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন মতানৈক্য তৈরি হয়৷ সংগঠনের কেউ হয়তো আমার নামে নুরকে ভুল বুঝিয়েছে, নুরের নামে আমাকে ভুল তথ্য দিয়েছে৷ সে জায়গা থেকে আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে সে লক্ষ্যে আমরা মিটিং করে সব সমাধান করেছি৷’
রাশেদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আগে নুর এই ঘটনায় গোয়েন্দাদের হাত থাকার অভিযোগ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবেই রাজনৈতিক দল ভাঙনে সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী বা সরকারের ইন্ধন থাকে৷ আমরা যেহেতু সরকার বিরোধী জায়গা থেকে রাজনীতি করি আমাদের প্লাটফর্ম ভাঙনের জন্য এখানেও গোয়েন্দা বাহিনী জড়িত থাকতে পারে।’
এ ছাড়া তার অভিযোগ ছিল, রাশেদ খান ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করে পরিষদে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছেন।
তবে ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই রাশেদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নুর বলেন, ‘বহিষ্কারাদেশ এবং কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি উইথড্র করা হয়েছে। রাশেদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আমরা তার অব্যাহতি তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’
আরও পড়ুন:নেত্রকোনা জেলা সদরের মোক্তারপাড়া মাঠে আয়োজিত এক বিশাল গনসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর (শায়েখে চরমোনাই) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম প্রধান অতিথির হিসাবে উপস্থিত ছিলেন । প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশব্যাপী চাাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলবাজি, জুলুম, অত্যাচার-নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এই বাংলাদেশ দেখার জন্য আমরা রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়িনাই। এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নাই, যা দখল করা হয়নি। বিচারালয়গুলোকেও দখল করা হয়েছে। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য মুগ্ধ জীবন দেয় নাই, আবু সাঈদ তার বুক পেতে দেয় নাই। বাংলাদেশে আমরা আর চাাঁদাবাজ, জুলমবাজ ও দখলবাজ দেখতে চাই না। যদি শেখ হাসিনার বুলেটের সামনে, ট্যাঙ্কের সামনে বুক পেতে দিতে পারি, তাহলে আজকেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেনো বুক পেতে দিতে পারবো না? যদি শেখ হাসিনার জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি, তাহলে আজকেও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কেনো কথা বলবো না? তিনি আরও বলেন, মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছেন। তাদের শাসনে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর মূল কারণ খুঁজতে হবে। দেশ, দল ও নেতা পরিবর্তন করে শান্তি আসবে না, শান্তি তখনই আসবে, যখন আমরা নীতি আদর্শের পরিবর্তন আনতে পারবো। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সারা দেশে খুন, লুণ্ঠন ও চাঁদাবাজি বন্ধ এবং পিআর পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জেলা কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে। মুফতি নুরুল ইসলাম হাকিমীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ্ এবং মুফতি ওমর ফারুক ওফার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন: জতীয় শিক্ষক ফোরামের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন পাঠান, ইসলামী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট এনামূল হক মুর্শেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু সায়েম, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা,জামায়েতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাশেমী, মুফতি ওয়ালী উল্লাহ প্রমুখ। সমাবেশে শায়েখে চরমনোই সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম নেত্রকোনার পাঁচটি আসনের জন্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন: নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে হযরত মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে জাকির হোসেন সুলতান, নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে হাফেজ মাওলানা মুখলেছুর রহমান ও নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে মুফতি নূরুল ইসলাম হাকিমী।
বাজিতপুর থেকে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ভৈরবে মেঘনা নদী থেকে রাকিব (২৭) নামের এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ থানা পুলিশ।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভৈরবের লুন্দিয়া এলাকায় নদীতে মরদেহটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভৈরব নৌ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১০ আগস্ট বিকেলে রাকিব বাড়ি থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে একই উপজেলার কুকরাই গ্রামের বন্ধু শাওনের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হন। এরপর থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও না পাওয়ায় নিহতের ভাই রিয়াজ মিয়া বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বাজিতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে ভৈরবের মেঘনায় লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তাকে সনাক্ত করি।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, লুন্দিয়া এলাকা থেকে রাকিবের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা নদীতে ফেলে দিয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়া (৩৭) কে গ্রেপ্তার করেছে সিপিসি-২, র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প।
সে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কালিপুর মধ্যপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে।
শুক্রবার দুপুরের দিকে শহরের কালিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, সিপিসি-২, র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প এর আভিযানিক দল নরসিংদী জেলার বেলাবো থানা এলাকায় সিএনজি ডাকাতির পর সিএনজি ড্রাইভারকে হত্যা করে লাশ গুমের ঘটনায় নরসিংদীর বেলাবো থানার মামলা নং-০১(০১)১৫, ধারা-৩৯৬/২০১ এর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়াকে শুক্রবার শহরের কালিপুর মধ্যপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মুহিত কবির জানান, হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়াকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলেও শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। ফলে কিছুটা স্বস্থিতে রয়েছে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা। শুক্রবার হঠাৎ করে দুধকুমার নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কমতে শুরু করেছে তিস্তা, ব্রহ্মপূত্রনদসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি।
এদিকে পানি কমলেও তিস্তা নদী অববাহিকায় ৪টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পরেছে। জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বজরা ইউনিয়নের কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হওয়ায় লোকজন বাড়ি সড়াতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকেও জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম সর্দার জানান, ভাঙন প্রতিরোধে বজরা ইউনিয়নে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু না করায় চলতি সপ্তাহে ৬টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকীতে রয়েছে ১০টি বাড়িসহ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এরমধ্যে কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামের শাহজাদি, আশরাফুল, হান্নান, মুকুল, মজিদা ও রোসনার বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
ওই এলাকার সাতালষ্কার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ারা জানান, কাল যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে গেছি, আজ সেই জায়গা নদীগর্ভে চলে গেছে। যে কোন সময় দুটি স্কুল নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
সাধুয়াদামারহাট গ্রামের ফুলবাবু জানান, নদী আমার ২ বিঘা জমি খেয়ে গেছে। আমার মতো মোফাজ্জল ও আশরাফুলের বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে। সরকারিভাবে আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ চাই।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা জানান, আমি ভাঙন কবলিত বজরা ও থেতরাই ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ৩২০টি শুকনা খাবার প্যাকেট রয়েছে। এছাড়াও জিআর’র চাহিদা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে দুধকুমার নদীতে পানিবৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করা শুরু করেছে। তবে শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি কমলেও জলাবদ্ধতার কারণে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের কাস ইউনিয়নের ফান্দের চরে ৪ থেকে ৫টি নীচু বাড়িতে পানি উঠেছে বলে স্থানীয়রা জনিয়েছে। একইভাবে ওই উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কুটি বামনডাঙ্গা চরে নীচু এলাকায় অবস্থিত দুটি বাড়িতে পানি উঠছে বলে স্থানীয় যুবক আশরাফুল ও কাদের জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কিছু নিচু বাড়ি জলবন্দী রয়েছে বলে জেনেছি। তিনি আরও জানান, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও নদী ভাঙন বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন সরকার জানান, প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের কাছে ২ হাজার ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৪৪০ মে.টন জিআর চাল মজুদ রয়েছে। নগদ টাকা রয়েছে ১৪লাখ। তালিকা পেলেই আমরা সাথে সাথে উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে দিবো। তারপরও প্রতি উপজেলায় ৩২০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার সরবরাহ করা আছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ সাইকেল পর্যন্ত "সামগ্রিক দক্ষতা" মূল্যায়নে সারা দেশের ৬৪টি টিটিসির মধ্যে ঝালকাঠি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) শতকরা ৮৭ শতাংশ দক্ষতা অর্জন করে সারাদেশে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।
বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক এসেট (ASSET) প্রকল্পের ৫ম সাইকেল সমাপনী ও ৬ষ্ঠ সাইকেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গত ১৪ আগষ্ট অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সচিবসহ বিএমইটি'র (BMET) সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠি টিটিসির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামীম হোসাইন বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনের জন্য এখানে কর্মরত সকল ট্রেড ইনচার্জ, প্রশিক্ষক, অতিথি প্রশিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আগামীতে আরও ভালো ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।'
উল্লেথ্য, 'ঝালকাঠির সরকারী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এই জেলার একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি মূলত দক্ষ জনশক্তি তৈরীর জন্য বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাই প্রশিক্ষণ, ওয়েল্ডিং সহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নারীরাও বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। ঝালকাঠি টিটিসি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছে।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের সিংগোয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, তাড়াইল উপজেলার কাজলা গ্রামটিতে কিছুদিন আগেও মাদক সেবনকারী বা মাদক ব্যবসায়ী ছিল না। কিন্তুু বর্তমানে হাত বাড়ালেই খুব সহজে মিলছে মাদকদ্রব্য। মাদক সরবরাহকারী একটি চক্র এই এলাকায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মাদকে ছেয়ে গেছে এখানকার বিভিন্ন অলিগলি। এসব মাদকদ্রব্যের বেশির ভাগ ক্রেতাই হচ্ছে বেকার যুবক। এতে এলাকায় বাড়ছে চুরি ও ছিনতাই। অনেকে প্রকাশ্যেই মাদক গ্রহণ করছে এবং বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না। মাদকের এত ছড়াছড়ি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
দামিহা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, কিছুদিন আগেও কাজলা গ্রামটিতে মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী কেউ ছিল না। কিন্তুু বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যেমন বেড়েছে মাদকসেবী, তেমনি বেড়েছে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
মানবন্ধনে তাসলিমা-হাসেম ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ও সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক বলেন, শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একক প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল করা যাবে না। পরিবার থেকে সচেতনতা শুরু করতে হবে, সন্তানদের পারিবারিক বন্ধন বাড়াতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে তরুণ সমাজ রক্ষা করতে হবে। অন্ধকার গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাবে আগামীর ভবিষ্যৎ। মাদকসেবী একটি মারাত্মক সমস্যা তবে সম্মিলিত প্রয়াসে সমাধান সম্ভব।
মানববন্ধনে শিক্ষক হাসিবুর রহমান, ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রানা, সাবেক সেনা সদস্য ইসহাক মিয়া, ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ও সাবেক ইউপি সদস্য খোকন মিয়া, ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
মন্তব্য