অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শনিবার সকালে বাজেট অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যুক্তি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বৈশ্বিক সংকট করোনার মধ্যে চলতে পারা যায় না। শতকরা ৫ শতাংশের নিচে সংক্রমণ নেমে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাস্থ্যসম্মত বা বিজ্ঞানসম্মত না। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের দেশ একটি মূর্খ প্রজন্মের দেশে পরিণত হবে।
‘এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কোভিড শেষ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। নাকি অন্য সব খাতেও এ যুক্তি খাটে। আমাদের দেশে সবকিছু চালু আছে এবং এই বাচ্চারাই বাবা-মায়ের হাত ধরে শপিংমলে যাচ্ছে, বাসে চড়ছে, বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করছে এবং তারা সংক্রমিত হওয়ার জন্য শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই কি করোনার আখড়া?’
তিনি বলেন, ‘অন্য জায়গা থেকে কি করোনা ছড়ায় না? শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে কতদিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, তা নির্দিষ্ট করতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে মানসিকসহ বিভিন্ন সমস্যা আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে দেশে। আত্মহত্যার প্রবণতাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে।
‘স্কুলে না আসলেও তাদের যেন শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয়, এ ধরনের বিকল্প চিন্তা করা যায় কি না। তারপরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত। অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি দেশের মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবে, এটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। যারা স্কুলে যেতে চায়, তাদের সুযোগ দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা হলো এ খাতে সার্বিকভাবে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা বাড়ানো। উপজেলা ইউনিয়ন পর্যন্ত যেখানে মঞ্জুরিকৃত পদ খালি আছে, সেখানে ডাক্তার-নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারী যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ দিতে হবে। যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
‘প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কোভিডের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইউনিয়ন পর্যন্ত অক্সিজেন ও ভ্যান্টিলেশনসহ আইসিইউ সেবা চালু করতে হবে। কমপক্ষে জেলা পর্যায় পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার ব্যবস্থার আওতা বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষ যে শহরমুখী হয়, তার একটি বড় কারণ চিকিৎসা সুবিধা শুধু শহরেই পাওয়া যায়। গ্রামে চিকিৎসা সুবিধা বাড়লে সেখানকার মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় আমি এ কথাগুলো বলেছিলাম।
‘আজ এক বছর পরেও এ কথাগুলো আমাকে বলতে হচ্ছে। এক বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে হাল ছিল, এখনও সেই হালই রয়েছে। কোনো উন্নতি হয়নি। যদি উন্নতি হতো, তাহলে এত মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ত না।’
জি এম কাদের বলেন, ‘মৃত্যুর হার বেড়ে কোন অবস্থায় পৌঁছাবে, সেটা এখনও আমরা নিশ্চিত নই। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়ালে এবং এই হারে যদি মৃত্যু হতে থাকে, তাহলে মহামারিতে দেশ ছারখার হয়ে যাবে। ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা আমাদের চেয়ে উন্নত। সেখানে যে বিভীষিকা কোভিড তৈরি করেছে, সেখানে আমাদের নাজুক চিকিৎসাব্যবস্থায় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি এক বছর আগে থেকে কাজ শুরু করত, তাহলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত। উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অক্সিজেন-ভ্যান্টিলেশন সুবিধা পৌঁছায়নি। নেয়া হয়নি ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য জনবল। ফলে অন্য রোগীর সঙ্গে কোভিড চিকিৎসা করতে গিয়ে করোনা রোগীরা ঠিকভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বেসরকারি খাতে কিছু সুবিধা তৈরি হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয় এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রামের মধ্যবিত্তরা এই সুবিধা নিতে পারছেন না।’
নিজের বক্তৃতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কাদের বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট নিয়ে একজন সংসদ সদস্য কিছু আপত্তি উপস্থাপন করেছিলেন। সে সম্পর্কে আইনমন্ত্রী মোবাইল কোর্ট গঠন সঠিক বলে যুক্তি দিয়েছিলেন। বলতে চাই, এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গগুলোর সঙ্গে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
‘মাসদার হোসেন মামলার রায় হয়েছে এবং ১২ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা এখনও সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। এর অন্যতম উদাহরণ মোবাইল কোর্টের নামে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এখনও বিচারিক ক্ষমতা রয়ে গেছে। এই ক্ষমতা আইন ও সংবিধানবহির্ভূতভাবে তাদের হাতে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য