দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বিএনপিকে তুলাধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে বিএনপির যে পি, সেটি দিয়ে পাকিস্তান বোঝায়।
শনিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যদের সমালোচনা জবাব দিয়ে দলটির শাসনামলের কথা স্মরণ করান সংসদ নেতা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘বি..এন..পি, বাংলাদেশ না, পাকিস্তান হ্যাঁ… এই তো বিএনপি? এই হলো তাদের রাজনীতি, এই হলো তাদের গণতন্ত্র।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে সে সময়ের উপসেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেন।
তার শাসনামলে ১৯৭৭ সালে ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোট, ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন কারফিউ গণতন্ত্র। অনেকগুলো দল করার সুযোগ তিনি দিয়েছিলেন এটা ঠিক। কিন্তু সেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা ছিল না। নির্বাচনের যে রেজাল্ট তা আগেই নির্দিষ্ট।’
জিয়াউর রহমানের পথেই সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ক্ষমতা দখল করেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার আমলে ৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘নির্বাচনে ৪৮ ঘণ্টা ভোট আটকে রেখে আওয়ামী লীগকে হারাল।
‘জিয়া, খালেদা জিয়া, এরশাদ সবই একই বৃন্তের কয়েকটি ফুল। তারাও একই কাজ করেছে’-বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
এই হলো বিএনপি
বঙ্গবন্ধু হত্যা, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসা, জিয়ার শাসনামলের নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় যে পরিকল্পনা করা হয়, তার মূল শক্তি ছিল জিয়াউর রহমান। এটা কর্নেল রশিদ এবং ফারুক তাদের বিবিসি ইন্টারভিউতে স্পষ্ট আছে। তিনি ছিলেন মোশতাকের (খোন্দকার মুশতাক আহমেদ) প্রিয় বান্দা।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট হন মুশতাক। তিনি জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান উপসেনাপ্রধান। তাকে কেন উপসেনাপ্রধান করা হয়েছিল তার ইতিহাস আমি জানি। বিএনপির অনেকেই হয়ত এখন যারা, তারা জানেন না।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশে আসেন, তিনি তো বেগম জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। তার আরেকটা ঘটনা ছিল সেটা আমি জানি।
‘জিয়াউর রহমান ছিল কুমিল্লায়। তাকে উপসেনাপ্রধান করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং তার সংসারটা টিকিয়ে দেয়া হয়। সেটা করেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব।
‘জিয়া ছিলেন মেজর, তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই জিয়াই ষড়যন্ত্র করে মুশতাককে নিয়ে।’
‘খোন্দকার মুশতাক অবৈধভাবে নিজেকে যখন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলো জিয়াউর রহমানকে বানালেন প্রধান সেনাপতি। জিয়া যখন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়, মাঝে অবশ্য আরেকজন কিছু দিনের জন্য ছিলেন, সায়েম সাহেব। তাকে জিয়া সোজা গিয়ে বলেছিল, প্রথমে চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আমাকে ঘোষণা দেন।
‘অস্ত্রের ভয়ে তিনি (বিচারপতি সায়েম) সেটা সই করলেন। এরপর রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিদায় দিয়ে জিয়াউর রহমান হলেন রাষ্ট্রপতি। একদিকে সেনাপ্রধান আরেক দিকে রাষ্ট্রপতি। এই দৃষ্টান্ত কে দেখিয়েছিল জানেন? আইয়ুব খান।’
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনাবাহিনীর ভেতরে হত্যাযজ্ঞের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীদের জেলে পুরে। আজকে গুম-খুনের কথা বলেন, বিমানবাহিনীর ৬৬৫ জন অফিসার-কর্মচারী হত্যা হয়েছে জিয়ার হাতে।
‘সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, একে একে তাদের হত্যা করেছে। পরিবার-পরিজন লাশও পায়নি। রাতের পর রাত এ হত্যাযজ্ঞ চলেছে। একেক দিন ১০টা করে ফাঁসি, জিয়াউর রহমান সই করে যাচ্ছেন।
‘উর্দি পড়ে ক্ষমতায় এসে আবার রাজনীতিতে নামলেন। সেখানে এসে দল গঠন। আর সেই দলই হলো বিএনপি।’
বিএনপি-জাতীয় পার্টির সদস্যদের বক্তব্যের জবাব
বাজেট অধিবেশনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সদস্যরা সরকারের সমালোচনা করে যেসব বক্তব্য রাখেন তারও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বক্তৃতায় আমাদের বিএনপির একজন নেতা অনেক সময় অনেক কথাই বলেন। আমি তার কয়েকটি কথার জবাব না দিয়ে পারছি না। হারুন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ) সাহেব বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
‘আমি আগেই বলেছি, জাল সার্টিফিকেট, ছাত্রদল গায়ে নিয়ে আলোচনা করা, ভোট চুরির পরিকল্পনা, এরপরেও নাকি খুব ভালো অবস্থা ছিল।
‘ভোট চুরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রধান বিচারপতি কে হবেন তার বয়স বাড়িয়ে দিয়ে সে যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে পারে সে ব্যবস্থাও নিয়েও নজির সৃষ্টি হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘তিনি (হারুন) বলেছেন, গণতন্ত্র কী আছে? কার মুখ থেকে শুনব মাননীয় স্পিকার? এমন একটি দল, যে দল সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক জান্তা, যে ছিল সেনাপ্রধান।’
বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের সমালোচনারও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এখানে বেশ কিছু কথা হয়েছে। …বিচারের ব্যাপারে, বিচারপতি নিয়োগের ব্যপারে আমাদের মাননীয় উপনেতা কিছু কথা বলেছেন। এখানে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এই বাংলাদেশে বিচারপতি নিয়োগের যে নমুনা ছিল সেটা যদি আপনারা একটু স্মরণ করেন।’
এরশাদ শাসনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাস্টিস কামাল উদ্দিন হোসেন, তিনি এজলাসে বসে আছেন। চিফ জাস্টিস বসে আছেন। কিন্তু তিনি জানেন না যে তিনি আর নাই। তখন মাননীয় উপনেতা, আপনার বড় ভাই জেনারেল এরশাদ সাহেব ক্ষমতায়। তিনি রাষ্ট্রপতি।
‘রাষ্ট্রপতির এক কলমের খোঁচায় বিচারপতি নাই। প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসে আসেন, তিনি কোর্ট চালাবেন ওনাকে বলা হলো আপনি তো নাই। রাতে বেলা আপনাকে বিদায় দেয়া হয়েছে কলমের খোঁচায়। তারপরে একজনকে দিলেন, জাস্টিস মুহিম সাহেব, তিনি আর বসতেও পারেননি।’
বিএনপি শাসনামলের একটি ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘একজন বিচারপতি একটি মামলার রায় দেবেন, ছাত্রদলের সেক্রেটারি গলায় হাত দিয়ে বসে সে রায় নিয়ে আলোচনা করছেন। কাজেই বিচার ব্যবস্থার যে কী অবস্থা ছিলো!
‘যদি আমি জিয়া ও এরশাদ আমলের কাহিনী বলতে যাই তাহলে অনেক সময় লেগে যাবে। এটুকু বলে রাখলাম নমুনা হিসেবে’- এই বিষয়ে এখানেই কথা শেষ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যেকোনো মূল্যে তাকে প্রতিহত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার নোয়াখালী প্রেসক্লাবে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় দলীয় প্রধানের আদেশ অমান্য করে নিজের ছেলেকে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করায় একরামুল করিম চৌধুরীর সংসদ সদস্যপদ স্থগিতের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়রুল আনাম সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিন, সাধারণ সম্পাদক মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন খেলন ও সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বাড়ি কবিরহাট উপজেলায়। তিনি নিজ ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর করে সুবর্ণচরে নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা খায়রুল আনম সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছেন।
‘প্রতীক পাওয়ার আগে থেকে ভোটের মাঠে নেমে এমপি একরাম আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন, বিষোদ্গার করছেন। ভোট না দিলে উন্নয়ন করবেন না বলে সাধারণ মানুষকে শাসাচ্ছেন।’
‘জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলকে অফিস থেকে বের হতে দেবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। একজন আইনপ্রণেতা হয়ে তিনি আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিম বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একরাম চৌধুরী নোয়াখালী পৌরসভার মেয়রের কক্ষে আমাকে নেতা-কর্মীদের সামনে চরমভাবে অপমান করেন। একপর্যায়ে তেড়ে আসেন এবং আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপি একরাম তার ছেলে সাবাব চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। অঢেল টাকা, পেশিশক্তি, সন্ত্রাসী বাহিনী, অবৈধ অস্ত্র এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।
‘এমপি একরামের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ‘অবিচার ও নৃশংসতা’ ফাঁস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধাসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবেদনে গুম, গুপ্তহত্যা ও নির্যাতনসহ বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
অবিচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্যমান ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আসল রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট মানবাধিকার প্রতিবেদনটি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
‘গিলক্রিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেয়া হয়েছে আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিল মাত্র চারটি মামলা।
‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এবার তা যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টেই উঠে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া। এবার গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে।’
সোমবার ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন (এইচআরআর) প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। একে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি ‘বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ’ রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
১৯৮টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি (এইচআরআর) তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অংশে বলা হয়, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেক খবর পাওয়া গেছে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করতে ও শাস্তি দিতে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিপীড়ন, নৃশংসতা, গুম, খুনসহ নানা অপকর্মের কথা বলে আসছে।
‘এখন আর লুকানোর কিছু নেই। শেখ হাসিনার সরকারের অবিচার, রক্তপাত ও নানা অপকর্মের ঘটনা ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বেরিয়ে আসছে। গোটা বিশ্ব এর নিন্দা করছে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-১ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, এই উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৭ মে। এছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১০ থেকে ১৪ মে ও আপিল নিষ্পত্তি ১৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৭ মে।
এই সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মার্চ মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। এর মধ্যে দুটি উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার নির্বাচনে ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে এবং বাছাই ১২ মে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে ও প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। আর ভোটগ্রহণ হবে ৫ জুন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এসব পদে ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা ওই প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা।
তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ইসির তথ্য অনুযায়ী বালিয়াডাঙ্গি (ঠাকুরগাঁও) উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, হাকিমপুরে (দিনাজপুর) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সাঘাটায় (গাইবান্ধা) চেয়ারম্যান, বেড়ায় (পাবনা) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সিংড়ায় (নাটোর) চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, বাগেরহাট সদরে সব পদ, মুন্সীগঞ্জ সদরে সব পদ, শিবচরে (মাদারীপুর) সব পদ, বড়লেখায় (মৌলভীবাজার) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পরশুরামে (ফেনী) সব পদ, সন্দ্বীপে (চট্টগ্রাম) ভাইস চেয়ারম্যান, কক্সবাজার সদরে ভাইস চেয়ারম্যান, রোয়াংছড়িতে (বান্দরবান) চেয়ারম্যান, কাউখালীতে (রাঙামাটি) ভাইস চেয়ারম্যান এবং চুয়াডাঙ্গার ডামুহুদায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন পড়বে না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এসব পদে একক প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে দেড়শ’ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ না করেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। তিনি সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই আদেশের ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করতে হবে না।
কুষ্টিয়া ও সিলেটের দুটি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রশ্নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আনা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিল উচ্চ আদালত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক থাকার পরও দেশি-বিদেশি চক্র অপপ্রচার মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে তো বটেই বাইরেও নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে দেখছি।
মঙ্গলবার সকালে গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত প্রচারপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি চিহ্নিত অপশক্তি দেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকার নস্যাৎ করতে নির্বাচনবিরোধী অপতৎরতায় লিপ্ত রয়েছে। গণতন্ত্র, শান্তি, উন্নয়ন নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ও প্রগতিশীল শক্তির কাছে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তি আমাদের ভিত্তিমূলে আঘাত করতে যাচ্ছে। তাদের আমাদের প্রতিহত করতে হবে, সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্য জনগণকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট দিয়ে আপনার নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণ সব শক্তির উৎস।
তিনি বলেন, দেশবিরোধী অপশক্তি জাতির পিতার পরিবারকে হত্যা করে জনগণকে সামরিক স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে দীর্ঘকাল পিষ্ট করেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করেছেন।
মন্তব্য