জাতীয় পার্টিতে এখন প্রার্থী সংকট। দলের দুজন প্রার্থী উপনির্বাচনের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় দলে চলছে তোলপাড়। প্রার্থীরা ‘সমঝোতা’ করেছেন নাকি কোনো চাপের কারণে সরে দাঁড়িয়েছেন – এ নিয়ে দলে চলছে আলোচনা।
দলীয় প্রার্থী ও দল একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ওই দুই প্রার্থী ‘সমঝোতা’ করে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
গত ২৪ জুন ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নেয়া মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক ভোট থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর তাকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। মোস্তাক দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
এর আগে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার পর ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় কুমিল্লা-৫ আসনে দলীয় প্রার্থী জসিম উদ্দিনকেও দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়ে এখন দলকেই এ জন্য দায়ী করছেন এ প্রার্থী।
ওই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আবুল হাশিম খাঁন।
ঢাকা-১৪ আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন চার জন। তারা হলেন: আওয়ামী লীগের আগা খান মিন্টু, জাপার মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, জাসদের আবু হানিফ ও বিএনএফের কেওয়াইএম কামরুল ইসলাম। মোস্তাক, হানিফ ও কামরুল ভোট থেকে সরে যান। ফলে আওয়ামী লীগের আগা খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা-১৪ ও আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে কুমিল্লা-৫ আসন শূন্য ঘোষণা হওয়ার পর সেখানে উপনির্বাচনের তারিখ দেয়া হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি হয় এমন অভিযোগ এনে বিএনপি আগেই জানিয়েছে, তারা ভোটে আসবে না। এ অবস্থায় জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আওয়ামী লীগের।
বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে: মোস্তাক
ঢাকা-১৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হওয়া মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। কারণ পার্টি কোনো সহযোগিতা করে নি, কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। একটি কাগজ দিয়ে মাঠে ছেড়ে দিছে।’
তার বিরুদ্ধে সমঝোতা করার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও সমঝোতা হয় নি। আমার সঙ্গে কারও দেখা হয় নি। সমঝোতার কোনো প্রশ্নই আসে না। আগা খান মিন্টুর সঙ্গে আমার তো দেখাই হয় নি।’
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য কে দায়ী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই দল। কারণ প্রার্থী হওয়ার পর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে আমি দলীয় চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। দল যদি আশ্বাস দিত, বলত নির্বাচন করো, যত ধরনের সমস্যা আছে আমরা ফেস করবো, কেউ যদি নির্বাচন বহির্ভূত কাজ করে প্রয়োজনে আমরা সাংবাদিক সম্মেলন করব - তাহলে আমি নির্বাচন করতাম।’
দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি নিজে কেন সংবাদ সম্মেলন করলেন না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে করা কিংবা দলের চেয়ারম্যান করা এক নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান স্যারকে বললাম, আপনারা যদি কোনোভাবে কোনো ইনিশিয়েটিভ না নিয়ে মাঠে ছেড়ে দেন, তাহলে আমরা কী করে নির্বাচন করব। গত বারের মতো আমার ঝামেলা হবে। সে ক্ষেত্রে আপনারা যদি কোনো পদক্ষেপ না নিতে পারেন, কোনো সংবাদ সম্মেলন না করতে পারেন, তাহলে আমরা কী করে নির্বাচন করব? দলের মহাসচিবের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে।’
মোস্তাক বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনেও আমি প্রার্থী ছিলাম। সেবার আমার ছেলে-পেলেদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছিল। আমি চেয়ারম্যানকে বলার পরও কোনো অ্যাকশন হয় নি।’
তাহলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কেন তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন, জানতে চাইলে মোস্তাক বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান তার ক্ষমতাবলে আমাকে বহিষ্কার করেছেন। দলীয় গঠনতন্ত্রের মধ্যে থেকেই এটা করেছেন। তবে অনেকেই দলের চেয়ারম্যানকে অনেক কিছু ভুল বোঝায়।’
মোস্তাকুর রহমান মোস্তাককে বহিষ্কার করার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খান বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় মোস্তাকুর রহমান মোস্তাককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
কুমিল্লায় জেলা কমিটিই বাতিল
কুমিল্লা-৫ আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন জসিম উদ্দিন। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
তবে এ প্রত্যাহারের কারণে ২১ জুন কুমিল্লা জাতীয় পার্টির কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন দলটির জেলা কমিটির সভাপতি (বর্তমানে সাবেক) ইয়ার আহমেদ সেলিম। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুও।
বাবলু বলেন, ‘কুমিল্লা জেলার কমিটি বাতিল করা হয়েছে। কারণ ওরাই তো সুপারিশ করেছিল প্রার্থীর (কুমিল্লা-৫) ব্যাপারে। সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেবে।’
জাতীয় পার্টির নেতা ইয়ার আহমেদ সেলিম নিউজবাংলাকে বলেন,‘উনি (জসিম উদ্দিন) জুলাই মাসের ১৭ তারিখের পর থেকে আর যোগাযোগ করেন নি। তিনি মোবাইল বন্ধ করে রাখছেন। তিনি আমাকে ১৬ তারিখে বললেন, প্রতিপক্ষ আমাকে হুমকি দেয়। আমি বললাম, এগুলোর জন্য ভয় পেয়ে লাভ নাই। রাজনীতি করলে এগুলো আসবেই। জেলা পর্যায়ে যদি কোনো সাহায্য সহযোগিতা লাগে, আমরা করব। হুকমি দিলে আমরা প্রশাসনকেও বলব। এর পরে তিনি আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন নি।’
তিনি বলেন, ‘উনি (জসিম উদ্দিন) আমাদের না জানিয়েই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এটা নিয়ে দল তদন্ত করছে।’
কোনো চাপে উনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন কি না, জানতে চাইলে ইয়ার আহমেদ সেলিম বলেন, ‘আমরা এটা বুঝতে পারছি না। তবে আমি চাপ দেখি নি। যদিও তিনি বলেছেন, চাপ আসছে।’
তিনি সমঝোতা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো এখন বলতে পারছি না। যেহেতু চার দিন আগেই তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, এটা তিনিই জানেন। এটা আমাদের তিনি বলেন নি। তবে তার আশেপাশের সহকর্মীরা বললেন, ওইখানকার লোকজন ও পারিবারিক চাপেই তিনি এটা প্রত্যাহার করেছেন।’
জাতীয় পার্টির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দল থেকে সহযোগিতা করা হয় না এ বিষয়টি কিছুটা হলেও সত্য। লক্ষ্মীপুরে উপনির্বাচনে এ বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি। এ ছাড়া ঢাকা-৫ আসনেও দল থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয় নি। তবে তারা কী কারণে সরে দাঁড়ালেন, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সমঝোতা কিনা জানারও দরকার নেই
প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর দায় দলের ওপর বর্তায় কিনা জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এর প্রশ্নেই উঠে না। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা যদি নির্বাচন করতে পারেন, তাহলে করেন। মাঝপথে সরে গেলে ব্যবস্থা নেব। এই মুচলেকা দিয়েই তারা প্রার্থী হয়েছিলেন।’
প্রার্থীরা সম্ভাব্য সমঝোতার ব্যাপারে তদন্ত করার দরকার মনে করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন দরকার নাই। তারা সমঝোতা করেছে কি না আমাদের জানারও দরকার নাই। কারণ আমরা তাদের বলেছি, তোমরা নির্বাচন করলে শেষ পর্যন্ত থাকবা। প্রত্যাহার করলে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
বাকি দুই উপনির্বাচন
চারটি আসনে উপনির্বাচনের মধ্যে লক্ষ্মীপুর-২-এ জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ পর্যন্ত থাকলেও সেখানে তিনি সুবিধা করতে পারেননি। সেখানে আওয়ামী লীগের নৌকায় সাড়ে ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। উপনির্বাচনে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের শেখ মোহাম্মদ ফায়িজ উল্যাহ পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৮৬৮ ভোট।
এর বাইরে সিলেট-৩ আসনেও ভোট হচ্ছে। সেখানে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়া আতিউর রহমান আতিক এখন পর্যন্ত ভোট নিয়ে আগ্রহী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া হাবিবুর রহমানের প্রার্থিতা ঠেকাতে তিনি চেষ্টাও করেছেন।
পৌর নির্বাচনেও প্রার্থী সংকট
এর আগে পৌর নির্বাচনেও প্রার্থী সংকটে ছিল জাতীয় পার্টি।
গত ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরের বদরগঞ্জেও প্রার্থী ছিল না জাতীয় পার্টির। জাতীয় পার্টির আরেক দুর্গ কুড়িগ্রামেও প্রার্থী পায়নি দলটি।
পৌরসভা নির্বাচনে প্রথম তিন ধাপে জাতীয় পার্টি ৩২ জন মেয়র প্রার্থী দিয়েছিল। এদের মধ্যে ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল মাত্র চারটিতে। দ্বিতীয় ধাপে ৬১ পৌরসভায় হওয়া ভোটে ১৪টিতে লড়াই করে দল। ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে ৬৪ পৌরসভার মধ্যে দলটি প্রার্থী দিয়েছিল ১২টিতে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২৪টি আসনের মধ্যে নীলফামারী জেলা ছাড়া সব আসন ধরে রাখে জাতীয় পার্টি। তবে ১৯৯৬ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ আসনগুলো দখলে নিতে শুরু করে। মাঝে জামায়াতে ইসলামীও নীলফামারীর একটি আসনে দুবার জিতেছে। তবে গত দুটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে এই জেলার দুটি আসন জিতেছে জাতীয় পার্টি।
আরও পড়ুন:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এমন প্রচারণা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত কোরআন অবমাননা ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, জামায়াত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা কিছু ছেলেপেলেকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার, কটূক্তি ও করুচিপূর্ণ কথা ছড়ানোর বাহিনী গড়ে তুলেছে। এরা মিথ্যাকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রচার করছে প্রতিনিয়ত।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত আওয়ামী লীগের লেজ ধরে চলতে ভালোবাসে, এখনো কেন যেন আওয়ামী লীগের ভোট নেওয়ার জন্য কায়দা কানুন করছে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইসলামের মৌলিক নীতির বাইরে কথা বলছে তারা।’
সাধারণ মানুষ পিআর সম্পর্কে জানে না জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘যারা নভেম্বরে গণভোটের কথা বলছেন তাদের কোনো মাস্টারপ্ল্যান আছে, তারা শর্ত দিয়ে বিভ্রান্ত করে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও উপদেষ্টা পর্যায়ে দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কিছু উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন। কারা কারা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের তালিকা ও রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি আরো দাবি করেন, বর্তমানে ডিসি, এসপি ও ইউএনও নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারের কিছু উপদেষ্টা, যারা নিজেরা নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও, মূলত একটি দলের হয়ে ভূমিকা রাখছেন।
তাহের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই ষড়যন্ত্র থামাতে হবে। প্রশাসনের ভেতর দলীয় প্রভাব ও গোপন মদদ থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যারা নির্বাচনের নামে নাটক করতে চায়, জনগণ তা মেনে নেবে না।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আবারও গণভোটের দাবি তুলে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে জনগণের ইচ্ছা ও বাস্তবতা পরিস্কার হবে। স্বচ্ছতা থাকলে ২১ দিনেই গণভোট সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একটি দল মুখে গণতন্ত্র ও সংস্কারের কথা বললেও ঐক্যমতের ক্ষেত্রে তারা অনুপস্থিত। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাজপথে থাকব। প্রয়োজন হলে আরও বড় কর্মসূচিতে যাব।
জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার জবাবে তাহের বলেন, জামায়াত দখলবাজি করে না, চাঁদাবাজি করে না। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। ক্ষমতায় গেলে কৃষকের ঋণ মামলাগুলো প্রত্যাহার করব। আমরা সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক বিচার চাই, যেন-তেন বিচার নয়।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমানুষের দাবি মেনে নিতে হবে। গণভোট দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি মানতে হবে। আর যারা খুন-গুমে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শেরপুরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রথম গেইটে এ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির মাও: হাফিজুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি নুরুজ্জামান বাদল, সাবেক নায়েবে আমির মাও: আব্দুল বাতেনসহ আরো অনেকে।
এসময় বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তারা জামায়াত ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। তবে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশ ও বিদেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং এ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানি দিতে দেখা গেছে হাসিনাকে।
এদিকে ২০২৪ সালের শেষভাগে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত একটি জুম বৈঠককে কেন্দ্র করে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালে ১৯ ডিসেম্বর ওই ভার্চুয়াল সভায় দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
সিআইডির ফরেনসিক ও গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সভায় অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন বৈধ সরকার উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ উসকে দেয়ার পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার ঘোষণা দেন।
এই তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে, ২০২৫ সালের ৪ মার্চ মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত ও অভিযোগ দায়েরের অনুমতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ রমনা থানায় সিআর মামলা নং-২২২/২০২৫ দাখিল হয়, যার ধারাগুলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১২১, ১২১(ক), ১২৪(ক)।
পাঁচ মাসেই সিআইডির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার শুরু হচ্ছে। আদালত আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিনটি প্রধান এজেন্ডা- সংস্কার, নির্বাচন ও বিচার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত ধারায় (১২১/১২১ক/১২৪ক) অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংস্থাটি। এ মামলার বিচারকার্য শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১৮, ঢাকায় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিদের অধিকাংশ অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন।
ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে দেশে থাকা সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করে বিভিন্ন জেলা কারাগারে থাকা ৯১ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি ১৯৫ জন আসামি এখনো পলাতক বলে জানা গেছে।
গতকালকের শুনানিতে প্রধান আসামিসহ অধিকাংশ অভিযুক্ত আদালতে অনুপস্থিত থাকায়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রকাশ্য সমন ও গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করার আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে আহ্বান জানানোর নির্দেশ দেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা অনুপস্থিত থাকলে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১২ ধারার আওতায় অনুপস্থিতিতেই বিচার পরিচালনা করা হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন—রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিচার ও দায়বদ্ধতা’ এজেন্ডার বাস্তব প্রতিফলন, তেমনি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দৃঢ় সঙ্কেতও।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে মঙ্গলবার দিনব্যাপী দেবিদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ এফ এম তারেক মুন্সী। এ সময় তিনি খলিলপুর বাজার, নূরপুর, ফতেহাবাদ মোকামবাড়ি ও ফতেহাবাদ বাজার এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন। এছাড়া খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, গঙ্গামন্ডল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, নূরপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং ফতেহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গণসংযোগকালে এ এফ এম তারেক মুন্সী বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি হলো জাতির পুনর্জাগরণের নকশা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ধানের শীষ কেবল একটি প্রতীক নয়, এটি পরিবর্তন ও আশার প্রতীক। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন মাহফুজ, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম পাঠান, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পূর্ব বিএনপির সভাপতি শাকিল মুন্সী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, পশ্চিম শাখার সভাপতি এডভোকেট সোহরাব হোসেন, সদস্য সচিব দৌলত খান, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম ইমরান হাসান, উপজেলা যুবদলের সভাপতি নুরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মো. রকিবুল হাসান, জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নেয়ামত উল্লাহ এবং উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কাউছার মোল্লা।
যারা ভারতীয় আধিপত্যের বাইরে থাকবে, তাদের সঙ্গে এনসিপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছে বলে জানিয়েয়েছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
এ সময় তিনি বলেন, এনসিপির শাপলা প্রতীকে আইনি কোনো বাঁধা নেই। তাই আমরা শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করব। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি যেকোনো এলায়েন্সেও যেতে পারে। তবে এনসিপি নিজের প্রতীকে নির্বাচন করবে।
গত সোমবার রাতে শেরপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও উপজেলা নেতা ও কর্মীদের নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করা। আগামীর রাজনীতির লড়াইয়ের জন্য, গণতান্ত্রিক পথ উত্তরণের জন্য, ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখার জন্য কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় সমন্বয় সভা করছে এনসিপি।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে বিএনপি কখনো এককভাবে সরকার গঠন করেনি, আবার জামায়াতও কখনো বড় পরিসরে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনি। সে জায়গা থেকে আগামী নির্বাচনে কারা সরকার গঠন করবে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর ভূমিকায় থাকবে এনসিপি। এজন্য আমরা সাংগঠনিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সারাদেশে সমন্বয় সভা করছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের সব ওয়ার্ডে এনসিপির কমিটি থাকবে।
শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. লিখন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনসিপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলমসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এনসিপি নেতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতারা ও জুলাই যোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যারা ভারতীয় আধিপত্যের বাইরে থাকবে, তাদের সাথে এনসিপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছে। আজ রাতে শেরপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এনসিপি’র শাপলা প্রতীকে আইনগত কোন বাঁধা নেই, তাই শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি যেকোন এলায়েন্সে যেতে পারে, তবে সেটা এনসিপি নিজের প্রতীকে নির্বাচন করবে।
সারজিস আলম বলেন, এনসিপি উচ্চ কক্ষে পিআর চায়, নিম্নকক্ষে পিআর চায় না। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এবং উচ্চকক্ষের পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে দেখতে পারি কতটুকু কাজ হলো। একইসাথে এটা দিয়ে বাংলাদেশ উপকৃত হয় কি না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপি’র ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম, শেরপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার লিখন মিয়াসহ অনেকেই।
মন্তব্য