তিন দশক ধরে লড়াইটা বিএনপির সঙ্গে। তবে আগের পাঁচ দশকে বারবার প্রতিদ্বন্দ্বী পাল্টেছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে বহুবার আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীর পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ভেঙেও কয়েকটি দলের উত্থান হয়েছে। কিন্তু আবার সময়ের সঙ্গে তারা মিলিয়েও গেছে।
তবে সাত বছর ধরেই প্রতাপের সঙ্গে রাজনীতি করে আসছে বর্তমানে ক্ষমতাসীনরাই। এর মধ্যে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতাকে হারানোর পরে বিরুদ্ধ পরিবেশেও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই কীভাবে করতে হয়, সেটিও দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্মের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক নেতারাই। সে সময় পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু পরে দলটিতে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ অঞ্চলের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি দেখা দেয়। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তী সময়ে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হারুন অর রশিদের মতে, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ দলগুলো রাজনীতিতে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়ায় পরে তারা জনসমর্থন হারিয়েছে।
অধ্যাপক হারুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কখনোই বলার মতো কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে জনগণের মন-মানসিকতার চাহিদা বিবেচনায় রেখে যৌক্তিকভাবে কর্মসূচিগুলো যথাসময়ে হাতে নিয়ে ৭২ বছর পথ চলেছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ আজও রাজনৈতিক অগ্রভাবে থেকে, সরকারে থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে।’
নানা সময় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী পাল্টানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাসদ মার্জিনালাইজড হয়েছে তার হঠকারী কর্মকাণ্ডের জন্য, নেতিবাচক রাজনীতির জন্য। ভাসানী ন্যাপ হয়েছে বলা যায় একই ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে।’
মুসলিম লীগও জনগণের মনোভাব ধরতে না পেরে হারিয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি। বিএনপিও নানা ভুল করেছে বলে তার মূল্যায়ন।
রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের প্রায় তিন দশকের প্রতিপক্ষ বিএনপির মূল্যায়ন অবশ্য একটু ভিন্ন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দীন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অপশক্তি বলতে একটা টার্ম আছে। আওয়ামী লীগের সেই অবস্থা চলছে। কালো ছায়ায় অন্ধকার হয়ে আছে গোটা দেশ। গ্রাস করে নিয়েছে জনগণের ক্ষমতা। বলেন তাহলে কীভাবে টিকে আছে?’
অবশ্য এ ক্ষেত্রে দ্বিমত রয়েছে অধ্যাপক হারুন অর রশিদের। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৭২ বছর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় থেকে আসছে। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমাদের এই স্বাধীন ভূখণ্ড, বাংলাদেশে যা কিছু রাজনৈতিক অর্জন, তার সিংহভাগ কৃতিত্বই আওয়ামী লীগের।’
বিএনপির কী ভুল- তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত হলো যুদ্ধাপরাধী দল, স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের রাজনীতিচর্চারই অধিকার থাকার কথা না। সেখানে জিয়াউর রহমান ও বিএনপির কল্যাণে তারা ফিরে এসেছে। স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগকে আত্তীকরণ করে এগিয়েছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াত এবং সম্প্রতি হেফাজত- এগুলোর মধ্যে আমি মৌলিক কোনো পার্থক্য দেখি না। বিএনপি একসময় ফ্রিডম পার্টিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং জঙ্গিবাদের উত্থানে তারা ভূমিকা রেখেছে।
‘এটা তো কোনো রাজনৈতিক দলের আচার হতে পারে না। মূলত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ না করে বরং এর পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের কারণে তারা খাদের গহিনে পৌঁছে গেছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল এই ভূখণ্ড হবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের বাংলাদেশ। সেই নীতি যতদিন ধরে রাখতে পারবে, ততদিন আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের আস্থাশীল দল হিসেবে পরিচিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের এ পথচলায় অনেক দলের জন্ম হয়েছে, অনেকেই এসেছেন। কিন্তু অন্য কোনো রাজনৈতিক দলই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে, তাদের নীতি বা আদর্শিক কোনো জায়গা ছিল না।’
লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি সফল বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দল। যখন তারা সরকারে যায়, তখন দলটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বিরোধী দল ও সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভূমিকা দুই রকমের।
‘বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে জনগণের মধ্যে আমরা বেশি দৃশ্যমান দেখি। আর সরকারি দল হিসেবে আমরা আওয়ামী লীগকে দেখি সরকারি বৈঠকখানায়, প্রেসনোটে, ক্রোড়পত্রে– খুব বেশি পরিমাণে এই হচ্ছে বড় পার্থক্য।’
পাঁচ বছরেই নিশ্চিহ্ন মুসলিম লীগ
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব বেশি দিন টেকেনি। ক্ষমতায় থাকা মুসলিম লীগকে হটাতে ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় নির্বাচনি জোট যুক্তফ্রন্ট।
এই জোটে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল, পাকিস্তান খিলাফত দল, নেজামে ইসলাম পার্টি ও কয়েকটি বামপন্থি দল।
১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট পায় ২২৩টি আসন। সে সময় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি।
সেই আঘাত আর সামলে উঠতে পারেনি মুসলিম লীগ। রাজনীতিতে একেবারে নিশ্চিহ্নই হয়ে যায় তারা। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তারা ফিরে আসার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু পরে বিএনপিতে বিলীন হয়ে যায় আনুষ্ঠানিকভাবে।
’৫৪ সালের সেই নির্বাচনের পর যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা খুব বেশি দিন টেকেনি। ওই বছরের মে মাসে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ মন্ত্রিসভা বাতিল করে দিয়ে প্রদেশে গভর্নরের শাসন জারি করেন।
তবে যুক্তফ্রন্টের শরিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের এখন অস্তিত্ব নেই, বা থাকলেও তা একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে গেছে।
১৯৫৮ সালে পুরো পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের লড়াই শুরু হয় সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে সামরিক শাসকদের রোষে পড়তে হয়েছে।
এর আগেই অবশ্য ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। আওয়ামী লীগে থাকা বামপন্থি রাজনীতিকদের নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টি নামে একটি আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী।
পরে বিভিন্ন আন্দোলনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সামনে আসে এই দলটির নামই।
সে সময় রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় এই এলাকায় সবচেয়ে বড় দল কোনটি, তা নিয়ে বিতর্কের সমাধানের সুযোগ ছিল না। এর মধ্যে ন্যাপ বিভক্ত হয়ে পড়ে চীনপন্থি ও মস্কোপন্থি বিভিন্ন গ্রুপে।
তার পরেও জনপ্রিয়তার একটি লড়াই হতে পারত ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। তবে মওলানা ভাসানী সে পথে আর হাঁটেননি। আর ভূমিধস জয় পেয়ে এই অঞ্চলের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন বঙ্গবন্ধু, দল হিসেবে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে আওয়ামী লীগ।
এই জয়ের পেছনে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রস্তাবের প্রভাব আছে বলে ধারণা করা হয়। ছয় দফার পক্ষে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা, তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনার অভিযোগে মামলা আর গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার মধ্য দিয়েই তিনি বাঙালির প্রধান নেতায় পরিণত হন।
কিন্তু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকসেনার দল। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়।
বড় হতে না হতেই হারিয়ে যায় জাসদ
মুক্তিযুদ্ধের পরে জিয়ার আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত কী হয়েছে।
স্বাধীনতার পর আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে প্রথমে ছাত্রলীগ এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের অন্য সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে নেতারা বেরিয়ে এসে ১৯৭২ সালে গঠন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বেদনাবিধুর ঘটনাপ্রবাহের আগে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে এই জাসদই। তবে জাতির পিতাকে হত্যার বছরে নভেম্বরে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে বিপ্লবের চেষ্টা করে ছিটকে যায় জাসদ। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাতে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর নভেম্বরে যে সেনা অভ্যুত্থান ও প্রতি-অভ্যুত্থান হয়, সেখানেও জাসদ নেতাদের বড় ভূমিকা ছিল। পরে ওই বছরের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান সামরিক সরকার গঠনেও সমর্থন ছিল জাসদের।
কিন্তু সামরিক শাসক জিয়াই জাসদের বিরুদ্ধে একপ্রকার দমন অভিযান শুরু করেন। এরপর জাসদ আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। পরে বিভিন্ন সময়ে নানা মতে ভাগ হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে দলটি। এক অংশ বিলীন হয়ে যায় বিএনপিতে, আর বাকি অংশ নিভু নিভু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদ।
আওয়ামী লীগের প্রতাপের সঙ্গে টিকে থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই রাজনৈতিক দলটি প্রথমত হচ্ছে যে তৃণমুল থেকে গড়ে ওঠা দল। দুই নম্বর হচ্ছে, এটা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা এই দর্শনের ওপর দলটি দাঁড়িয়েছে। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু এ দলকে এই দুই দর্শনের ওপর কেন্দ্র করে স্বশাসন ও স্বাধীনতার সার্বিক যে নেতৃত্ব সেখানে আওয়ামী লীগ সামনের কাতারে ভূমিকা রাখে। সুতরাং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু জড়িয়ে আছেন, এটা একটা বড় অর্জন।
‘১৫ আগস্টের পর সামরিক শাসকরা, সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতা দখল করে নেয়, তখন সামরিক শাসন অবসানের সংগ্রামে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রত্যাবর্তন, সাম্প্রদায়িকতাকে বর্জন, এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। ফলে তারা তাদের একটি দার্শনিক ভিত্তি অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, এই দলকে টিকিয়ে রেখেছে।’
অবশ্য মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পরও পরবর্তী সময়ে কেন সে ধারা জাসদ ধরে রাখতে পারেনি, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
জিয়ার আবির্ভাবে নতুন বাস্তবতা
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আগে বাকশাল প্রবর্তন হওয়ার পর অন্যান্য অনেক দলের সঙ্গে বিলুপ্ত হয় আওয়ামী লীগও। তবে জিয়ার শাসনামলে আওয়ামী লীগ আবার কার্যক্রম শুরু করে।
১৯৭৭-৭৮ সালে আওয়ামীবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একত্রিত করে জিয়াউর রহমান শুরুতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) ও পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে নেতৃত্বের অভাবে আওয়ামী লীগও বিভিন্ন মতে বিভক্ত হয়ে যায়। সেই সময় জিয়ার বিরুদ্ধে তেমন কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে সভাপতি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। সেই বছরই দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। শুরু করেন দল গোছানোর কাজ। তবে সেনাবাহিনীতে একের পর এক অভ্যুত্থানের মধ্যে জিয়াউর রহমান নিহত হলে জিয়াবিরোধী রাজপথের লড়াইটা আর বেশি দূর আগায়নি।
জিয়ার মৃত্যুতে লড়াই এরশাদের সঙ্গে
১৯৮২ সালে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতায় আসেন আরেক সেনা কর্মকর্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনিও জিয়ার পথ ধরেই ক্ষমতায় থেকে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি।
এ সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বও আসে আওয়ামী লীগ থেকে। এরশাদ সরকারের পতন হলে তার দল জাতীয় পার্টিও হারিয়ে ফেলে ছন্দ।
৯০ দশক থেকে লড়াই বিএনপির সঙ্গে
স্বৈরাচার পতনের পর দেশে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়। পরবর্তী তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল হয়ে আছে বিএনপি।
তবে বিএনপি এখন আপাতদৃষ্টিতে খুবই দুর্বল অবস্থানে। যদিও দলটি দাবি করছে, তারা গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না, তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোট দিতে পারছে না। সেটি হলে ক্ষমতায় তারাই থাকতে পারত।
ঘটনা যা-ই হোক, ২০০৯ সালের পর থেকে টানা ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দীর্ঘ সময়ে রাজপথে তেমন কোনো গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। তার ওপর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে দলটি।
আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে চার দলীয় জোট, পরবর্তী সময়ে ২০ দলীয় জোট গঠন করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ভোটে জিতলেও পরের নির্বাচনে ভরাডুবি হয়।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেও সফল হয়নি তারা।
আওয়ামী লীগও এখনও জোটবদ্ধ রাজনীতি করছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই তারা গঠন করে মহাজোট।
আরও পড়ুন:চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আগামী রবিবার (২২ জুন) চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবীর খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই সফরের জন্য বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিসি।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও দলীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ই এই সফরের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। সায়রুল কবীর আরও জানান, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া, চেয়ারপারসনের তিন উপদেষ্টা— জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জাবিউল্লাহ ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া এবং দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
সফর শুরুর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় চীনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে চীনা দূতাবাসে সাক্ষাৎ করে বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচিত চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গভীর করার প্রত্যাশারই প্রতিফলনই এই সফর। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
এদিকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিকে একটি ‘প্রতীক্ষমাণ সরকার’ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক পর্যবেক্ষক, যার অপেক্ষা চলছে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত।
এই সফরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চীনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিএনপি, সদ্য-গঠিত এনসিপি ও কিছু ইসলামপন্থী দল।
এর আগে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি ২১ সদস্যের ‘অনন্য’ প্রতিনিধিদল ১১ দিনের সফরে চীন যায়।
ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, গত আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বহুদলীয় সম্পর্ক জোরদারের কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সফর আয়োজন করা হয়।
১১ দিনের সফরে প্রতিনিধিদলটি বেইজিং, শানশি এবং ইউনান প্রদেশে সিপিসির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের প্রথম দিন কেন অংশ নেয়নি জামায়াতে ইসলামী, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ।’
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়। এর আগে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়াতে ইসলামী।
গতকালের বৈঠকে কেন অংশ নেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়ে ও প্রশ্ন করে আমরা একটি বিবৃতি দিয়েছি। সেটি হচ্ছে তার লন্ডন সফরের বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান। এটা আমাদের সংগঠনের সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন গিয়েছিলেন পুরস্কার আনতে ও পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে। পাশাপাশি, বিএনপির ভারপ্রাপ্তপ্রধানের (তারেক রহমান) সঙ্গে লন্ডনে তার বৈঠক হয়েছে। সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তিনি যে কথা বলেছিলেন, সে বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমরা ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছিলাম।’
জামায়াতের আপত্তির কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির কথা বলা হয়েছে, সেটাও আমাদের প্রস্তাবের মধ্যে আছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো—প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। এখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, সেটা হতে পারে। বিএনপির দাবি ছিল—আলোচনা করে যদি মনে করেন, নির্বাচন তারিখ পরিবর্তন হতে পারে, সেটা নিয়ে আপত্তি নেই। যেহেতু তিনি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে অঙ্গীকার করেছেন, বাংলাদেশে এসে আবার কথাবার্তা বলে পুনর্বিবেচনা করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি।’
‘একটি দলের প্রতিনিধির সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন—যেটা আমাদের অবাক করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটির আর কোনো উদহারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন দেশে প্রধান বিরোধী দল কিংবা পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করা বিভিন্ন দলের সাথে বৈঠক হয়। কারণ, তারা তখন একটা স্ট্যাটাস পায়। বাংলাদেশে শতাধিক রাজনৈতিক দল আছে। এখন প্রধান উপদেষ্টা যার সঙ্গে কথা বলবেন, তার সঙ্গে কী একটি যৌথ বিবৃতি দেবেন? এটা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এটা সঠিক ছিল না। এতে বাকি সব দল যেমন বিব্রত হয়েছে, আমরাও তেমনটি অনুভব করছি।’
যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতিতে আপত্তি জামায়াতের
একটি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলন নিয়েই জামায়াতের আপত্তি ছিলে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘কেবল জামায়াতে ইসলামী না, বাকি সব দলও বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতি ও যৌথ সংবাদ সম্মেলন—এখানেই আমাদের আপত্তি। বিএনপির বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
‘এতে আমাদের মনে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। আর এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে যে সংস্কার কমিশন আছে, তাতে তারা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না। এটা অনেকটা পর্বতের মুষিক প্রসব করার মতো হবে। কার্যকারিতা হারাবে। সেখানে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আমরা গতকাল আসিনি।’
অন্তর্বর্তী সরকার থেকে জামায়াতের সাথে যোগাযোগ
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যে মান-অভিমান করেছে, তা ভাঙাতে দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে তারা আস্বস্ত হয়ে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে এসে অংশ নিয়েছেন।
এমন তথ্য দিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর বলেন, ‘এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গতকাল দুপুরে আমাদের আমীরে জামায়াতের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা আমাদের কথা বলেছি, তিনি কিছুটা বুঝতে পেরেছেন—আশ্বস্ত করেছেন, তার সরকার নিরপেক্ষ থাকবে। কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি তারা অনুরক্ত না। আগামীতে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করবেন ও বিষয়ে আরও যত্নবান হবেন।’
‘সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা অচলাবস্থা চাই না, সবসময় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু কোনো কিছুর ব্যত্যয় হলে আমাদের কথা বলতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
যেসব দল ক্ষমতায় যেতে পারছে না, নির্বাহী ক্ষমতা বিভক্ত করে তারা সরকারের হাত-পা বেঁধে দিতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন দল ক্ষমতায় যেতে পারবে, কোন দল পারবে না; জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে সেসব দেখা উচিত না। দেশের জন্য যেটা ভালো হবে, সেটা হওয়া উচিত।’
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যদি কঠোর না হয়, তাহলে আরেকটি শেখ হাসিনামার্কা নির্বাচন এ দেশকে রক্ষা করতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংযত হতে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়ে গেছে, আমরা প্রস্তুত আছি,’—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন মন্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কী, সেটা তিনি (উপদেষ্টা) বোঝেননি। যিনি একটি ভবনের তালা খোলার ব্যবস্থা করতে পারেননি একমাসেও, ৩০০টি আসনের আইনশৃঙ্খলা তিনি কীভাবে রক্ষা করবেন, সেটা বিস্ময়ের বিষয়।’
‘আমি তাকে সংযতভাবে কথা বলার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও বোঝার চেষ্টা করার অনুরোধ করছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে এই নায়েবে আমীর।
নারীদের জন্য ১০০ আসন নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা সংখ্যানুপাতিক হারে হতে হবে। আগে সেটা সমাধান না করে এ বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই।’
এনসিসি গঠনের বিষয়ে একমত
এদিকে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির এই নেতা বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে বলছি, আমরা এনসিসির পক্ষে। এমন একটি সাংবিধানিক ভারসাম্যপূর্ণ কমিটি বা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত, তারা সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।’
‘সেখানে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা থাকবেন, স্পিকার ও উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের (যদি হয়) ডেপুটি স্পিকার থাকবেন। এমন একটি কাঠামোর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের মূলপ্রস্তাব ছিল, সেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি থাকবেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আপত্তি করেছি এই জন্য যে একজন দেশের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন, আরেকজন বিচারবিভাগীয় প্রধান। কাজেই তাদের এই কমিটিতে নিয়ে এলে এখানে যদি কোনো বিরোধ তৈরি হয়, তাহলে সেটা মীমাংসা করার আর কোনো সংস্থা থাকে না।
‘সেকারণে আমরা বলেছি, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতিকে বাদ রেখে একটিকে গঠন করার কথা। অনেকে এদিক-ওদিক বলেছেন। কিন্তু প্রায় দুয়েকটি দল ছাড়া বাকি সবাই এনসিসি গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। পাশাপাশি, তিন বাহিনীর প্রধানদেরও এটির বাইরে থাকা ভালো বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী,’ বলেন তাহের।
এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়েতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি। বিএনপি ও এনসিপির মাঝে জামায়াতের জন্য সংরক্ষিত আসনটি মধ্যাহ্নভোজের আগ পর্যন্ত ছিল ফাঁকা।
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়ায় নানা রাজনৈতিক দল নানা মত দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, কমিশনের বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াতের বনিবনা না হওয়ায় মঙ্গলবারের আলোচনায় তারা যোগ দেননি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন জামায়াত আলোচনায় যোগ দেয়নি সেই উত্তর কমিশনই ভালো দিতে পারবে।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি জামায়াত আজকের বৈঠক প্রতীকী বয়কট করেছে। ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচ্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াত হয়তো একমত হতে পারেনি। তাই আলোচনায় অংশ নেয়নি।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আজকের আলোচনায় জামায়াতের থাকা উচিত ছিল। তারা এই আলোচনা বয়কট করেছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি। যদি মধ্যাহ্নভোজের পরেও জামায়াত আলোচনায় না আসে তাহলে পুরো ব্যাপারটি বোঝা যাবে।’
ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা বেশিরভাগ বিষয়েই একমত হয়েছি। কিন্তু নারীদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার প্রয়োজন দেখি না। নারীর ক্ষমতায়ন আমরাও চাই, কিন্তু কোনো বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না।’
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মনে করছে, নারী আসনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় আলোচনার প্রথম পর্যায়ে জামায়াত যোগ দেয়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের সভার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের (১৭ জুন) সভায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাবলিক অ্যাকাউন্ট, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই একমত বলে জানিয়েছে তিনি।
বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
‘এছাড়া সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত,’ বলেন তিনি।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না এমন মত দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’
নারীদের ১০০ সংরক্ষিত আসন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে একমত। তবে নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। আশা করছি, আজকের আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সমাধানে আসা যাবে ‘
এছাড়া জুলাই সনদের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা ইশতেহার গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা।
এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
মন্তব্য