২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর ও সাম্প্রতিক তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের একের পর এক শীর্ষ নেতা যখন গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তখন রিসোর্ট-কাণ্ডে সমালোচিত নেতা মামুনুল হক বন্দিত্বের প্রশংসা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
কারাগারের বাইরের জীবনকে তিনি ‘জুলুমের মুক্ত বাতাস’ হিসেবে দেখছেন।
মামুনুল হক নিজেও সহিংসতার মামলার আসামি এবং তাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর পর হেফাজতের নেতা-কর্মীরা হুমকিধমকির পর ব্যাপক সহিংসতা চালান। এরপর আবার একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে সারা দেশে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দেন মামুনুল হকসহ অন্য নেতারা।
তবে শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর হেফাজতের নেতৃত্ব নমনীয় হয়েছে। আমির জুনায়েদ বাবুনগরী শুক্রবারের খুতবায় নেতা-কর্মীদের দোয়া ও ইসতিগফার পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
পরদিন মামুনুল হক ফেসবুকে এসে এমন প্রতিক্রিয়া দিলেন, যা ২৬ মার্চের আগে-পরে নানা বক্তব্যের ঢংয়ের পুরোপুরি বিপরীত।
তিনি লিখেন, ‘নিজ দেশে যারা পরবাসীর মতো থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাদের কথা ভিন্ন। অন্যথায় আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ইমানদারগণ এটা নীরবে মেনে নিতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে জুলুমের মুক্ত বাতাস থেকে প্রতিবাদের বন্দিত্বই হাজার গুণে শ্রেষ্ঠ!’
৩ এপ্রিল রিসোর্ট-কাণ্ডের পর বিপাকে পড়া মামুনুল অবশ্য ফেসবুক পেজে ৮ এপ্রিলের পর এক সপ্তাহ সক্রিয় ছিলেন না।
৮ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে তিনি রিসোর্ট-কাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রীর কাছে অসত্য দাবি করার ঘটনাটির যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ইসলামে সীমিত পরিসরে সত্য গোপনের সুযোগ আছে।
ওই লাইভে তিনি তার, স্বজন ও সংগঠনের নেতাদের ফাঁস হওয়া ফোনালাপগুলোর সত্যতা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে বলেন, এগুলো ফাঁস করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
পরে এই লাইভ তিনি ফেসবুক পেজ থেকে ডিলিট করে দেন। আর এক সপ্তাহ কার্যত নীরব হয়ে যান। মাঝে আরবিতে দুটি স্ট্যাটাস দেয়া ছাড়া আর কোনো আপডেট হয়নি পেজটির।
শুক্রবার রাতে মামুনুল তাদের সংগঠনের মহাসচিব নুরুল ইসলামের একটি বিবৃতি পোস্ট করেন।
এরপর শনিবার তিনি গ্রেপ্তার অভিযান নিয়ে স্ট্যাটাস দেন।
গত ২৬ মার্চ থেকে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালান হেফাজত কর্মীরা। গুলিতে নিহত হয় চারজন।
দুই দিন পর হরতালের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়। হামলা হয় পুলিশের ওপরও।
৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নারী নিয়ে মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার পর হেফাজত কর্মীরা ওই এলাকা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে তাণ্ডব চালায়।
ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হেফাজতকে সতর্ক করে বক্তব্য রাখতে থাকেন।
এরপর থেকে গ্রেপ্তার হতে থাকেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।
১১ এপ্রিল ধরা পড়েন হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। পরদিন তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
১২ এপ্রিল নাশকতার পরিকল্পনা, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানো, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে মামুনুল হকের তারবিয়াতুল উম্মাহ মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার হন কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ইলিয়াস হামিদী। পরদিন তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহ। তিনি গ্রেপ্তার হন ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে সহিংসতার মামলায়।
একই দিন ধরা পড়েন হেফাজতের সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফউল্লাহ। তাকে ২০১৩ সালের ৫ মের তাণ্ডবের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
১৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন হেফাজতের সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী। হেফাজতের সাম্প্রতিক তাণ্ডবে তার ইন্ধনের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
একই দিন রাতে গ্রেপ্তার করা হয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে। তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডবের মামলায়।
১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের। তিনি ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনাপ্রবাহের পর মতিঝিল থানায় করা নাশকতার মামলার আসামি।
যোবায়ের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত আমির মুফতি ফজলুল হক আমিনীর জামাতা।
২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের মামলায় আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মামুনুল হককেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটিয়া, হাটহাজারীতে শতাধিক হেফাজতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার পর মারা যাওয়া হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগ এনে করা মামলায় গত রোববার যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেখানেও বাবুনগরীকে আসামি করা হয়েছে।
মামুনুলের দাবি, একটি ঢিলও ছোঁড়েননি তারা
সহিংসতার দায় হেফাজতের ওপর চাপানো ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর নামান্তর’ দাবি করে দেয়া স্ট্যাটাসে ২৬ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ঘটনা নিয়ে কথা বললেও ৩ এপ্রিল তার রিসোর্ট-কাণ্ড নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।
মামুনুল লেখেন, ‘২৭ মার্চ থেকে ২রা এপ্রিল বিক্ষোভ, হরতাল, দোয়া ও প্রতিবাদ সমাবেশ হেফাজতে ইসলাম আহূত প্রতিটি কর্মসূচি পালিত হয়েছে প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং শান্তিপূর্ণভাবে।’
২৬ মার্চের গন্ডগোলের দায় কোনোভাবেই হেফাজতের ওপর বর্তায় না দাবি করে মামুনুল লেখেন, ‘এ দায় হেফাজতের ওপর চাপানো সুস্পষ্ট অন্যায়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু, সেটাও মামুনুলের বিবেচনায় ‘প্রশ্নসাপেক্ষ’।
তিনি লেখেন, ‘সেখানে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কোন্দল ও তাদের কর্তৃক হামলার কথা খোদ প্রশাসনও অস্বীকার করে না। সুতরাং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের দায় হেফাজতের ওপর চাপিয়ে দেয়াও উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো বৈ কিছুই নয়।’
মামুনুল লেখেন, ‘হেফাজতের কর্মসূচি চলাকালীন চার দিনে ঢাকায় তো একটা ইটপাটকেলও ছোড়া হয়নি। পুলিশের নিরাপত্তা ও বেষ্টনীর মধ্যেই সবগুলো কর্মসূচি পালিত হয়েছে।’
রোজায় ঢাকায় কেন ধরপাকড় চলছে-এমন প্রশ্ন তুলে মামুনুল লেখেন:
‘আজিজুল হক ইসলামাবাদী কাকে আঘাত করেছে?’
‘মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী কোথায় হামলা করেছে?’
মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী কার মাথায় বাড়ি মেরেছে?’
‘মাওলানা যুবায়ের আহমদ কার বাড়াভাতে ছাই দিয়েছে?’
‘মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি বশিরুল্লাহ, মাওলানা শরিফুল্লাহরা কোথায় কার ওপর হাত তুলেছে?’
হেফাজত নেতা লেখেন, ‘করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতায় লকডাউনের সময় এভাবে আলেম-ওলামাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয়।’
আরও পড়ুন:
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।
আজ দুদক-এর জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আবেদনে বলা হয়েছে, গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও অন্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানটি চলমান রয়েছে।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বাইরে দুর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার স্ত্রী দেশ ছেড়ে বিদেশে পালানোর জন্য তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধানকার্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায়, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রংপুরে দিন দিন ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। সিভিল সার্জনের অভিযানে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকায় ইউনাইটেড নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘটেছে এমনই এক চ্যাঞ্চল্যকর ঘটনা।
সরেজমিনে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারে এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন চলছে। ঠিক সেই সময়ে হাসপাতালে হাজির হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখা মিলল এক যুবকের। রোগীকে সেলাই দিতে ব্যস্ত ওই যুবক প্রথমে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে জানা গেল, তিনি ডাক্তার তো দূরে থাক, অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়েছেন মাত্র।
অভিযানে যাওয়া সিভিল সার্জনের উপস্থিতি টের পেয়ে বোরকা পরে হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা পাননি প্রশান্ত নামের ওই ভুয়া চিকিৎসক।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালটির পাঁচ বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন নেই। পরিবেশ ছাড়পত্রসহ নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র। তবুও ওই হাসপাতালে জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা চলছে সমান তালে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল (বুধবার) রাতে সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানের সময় অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে অষ্টম শ্রেণি পাস প্রশান্তকে হাতেনাতে ধরেন রংপুর সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা। এ সময় নানা অজুহাত দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন ওই যুবক। পরে দুই ঘণ্টা টয়লেটে বোরকা পরে লুকিয়ে থাকার পর পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। তারপরও শেষ রক্ষা পাননি। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে আটক করে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।
এ ঘটনায় হাসপাতালের মালিক সামসুদ তিবরীজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহান মিশু। তাৎক্ষণিক হাসপাতাল মালিক জরিমানার টাকা পরিশোধ করে জেল খাটার হাত থেকে রক্ষা পান।
জানা গেছে, গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলার পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামের ময়না বেগমের (২৬) সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে বুধবার বিকেলে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর রাতে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।
এদিকে, অভিযান প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, ‘অভিযানে ওই বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে এক প্রসূতি নারীকে পাওয়া যায়। তখন সিজার করে তার সন্তান বের করা হয়েছিল; সেলাই দিচ্ছিলেন এক যুবক।’
‘তিনি প্রথমে নিজেকে ডাক্তার দাবি করেন। পরে বলেন, আমি ডাক্তার নই, এইট পাস করেছি মাত্র। এরপর তিনি বোরকা পরে হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটির মালিক দাবি করছিলেন, ওই নারীর সিজার করিয়েছেন রংপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির চিকিৎসক রিফাত আরা। তবে রিফাতকে ওই সময়ে পাওয়া যায়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘ওই বেসরকারি হাসপাতালের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। লাইসেন্সের মেয়াদও পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। নবায়নের জন্য আর আবেদনও করেনি। এ ধরনের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করা হচ্ছে।’
সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুরে প্রায় ৫০টিরও বেশি ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই। থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব ক্লিনিকে চালানো হচ্ছে অপারেশন। আর এজন্যই সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে , যা অব্যাহত থাকবে।
জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় একটি বসতবাড়িতে গ্যাসের বিস্ফোরণে একই পরিবারের শিশুসহ ৫ জন দগ্ধ হয়েছেন।
তারা রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কাঁচপুর বিসিক শিল্পাঞ্চলের একটি তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন, গৃহকর্তা মানব চৌধুরী (৪০), তার স্ত্রী বাচা চৌধুরী (৩৮), তাদের তিন কন্যা তিন্নি (১২), মুন্নি (১৪) ও মৌরি (৬)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সার্জারি চিকিৎসক শাওন বিন রহমান।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কাঁচপুর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে বলেন, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ ছিল এবং রান্নাঘরের সিলিন্ডারের লাইনের লিকেজ থেকে ঘরে গ্যাস জমে চেম্বারের সৃষ্টি হয়। সকালে আগুনের কোনো উৎস পেয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বাগেরহাটে জেলার বিসিক শিল্প এলাকায় ভেজাল প্রসাধনী তৈরির একটি কারখানা সিলগালা ও ব্যবসায়ীকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক শরিফা সুলতানা এই আদেশ দেন।
শরিফা সুলতানা বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর একটি দলকে সাথে নিয়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ভেজাল ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী, অর্গানিক হেয়ার রিমুভাল ক্রিম, ফ্লোরিয়াস লিহান রং ফর্সাকারী ক্রিম, অর্গানিক হারবাল হেয়ার টনিক, গুলাবাড়ি, মিস অ্যান্ড মিসেস বুস্টার, লাভ ইন বিউটি ক্রিম, স্পট আউট স্কিন ক্রিম, হিড কুল অয়েল, হানি অ্যান্ড আমন্ড স্ক্রিন ময়েশ্চারাইজিং, গ্লিসারিন, রোজ ওয়াটার এবং মোড়ক ছাড়া সাবান তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের মোড়ক পাওয়া যায়।
তিনি জানান, মাত্র তিনটি পণ্যের অনুমতি নিয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই ব্যবসায়ী এসব ভেজাল পণ্য তৈরি করছিলেন। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া পণ্য মোড়কজাতকরণ ও ভেজাল পণ্য তৈরির অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। ভেজাল পণ্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত ও ভেজাল রোধে ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, অলিফ কুমার নামের এক ব্যবসায়ী টিনের ফ্যাক্টরি হিসেবে বিসিকের ওই প্লটটি ইজারা নিয়েছিলেন। পরে তিনি প্রসাধনী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে ভাড়া দেন। তবে অভিযানের সময় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে পায়নি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে দুইজন মাত্র কর্মচারী ছিল। অন্য শ্রমিক এবং কর্মচারীরা অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায়।
বিসিকের প্রমোশন কর্মকর্তা মো. শরীফ সরদার বলেন, বিএসটিআই এর অনুমোদিত পণ্য ছাড়াও বেশ কিছু অননুমোদিত পণ্য তৈরি করছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রশাসন ও আমাদের কাছে তথ্য ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায়। আমি আশা করছি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের এমন অভিযান চলমান থাকবে এবং দেশের মানুষকে তারা সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযান থেকে আশেপাশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও শিক্ষা গ্রহণ করবে। ভবিষ্যতে বিসিকে কেউ যাতে ভেজাল ও মানহীন পণ্য উৎপাদন না করতে পারে সেজন্য নজরদারি জোরদার করা করা হবে বলেও জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ৭ জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয় ও বয়স কম থাকায় একজনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে জালসহ ৮ জেলেকে আটক করেন টাঙ্গুয়ার হাওর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কমিটির নেতা ও আনসার সদস্যরা।
আটককৃতরা হলেন, আব্দুল গনির ছেলে খোকন মিয়া (৪৫), মানিক মিয়ার ছেলে মিলন মিয়া (৩৪), সাধির মিয়ার ছেলে পিয়াস (২১), নুরু মিয়ার ছেলে রিফাত(১৮), শুক্কুর আলীর ছেলে তরিক মিয়া (৩৫), জয়নাল উদ্দিনের ছেলে হোসেন খা (৩৪) শাহনুর মিয়ার ছেলে সারোয়ার (১৯) ও টিটন মিয়া (১৪)।
জালসহ আটক ব্যক্তিদের তাহিরপুর থানায় নিয়ে আসলে রাত ১০টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচলনা করে আটকদের জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মানিক। এ সময় জব্দকৃত ৩ হাজার মিটার নিষিদ্ধ জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
ইউএনও মেহেদী হাসান মানিক জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে আটক ৭ জনের প্রত্যেককে ৫ হাজার করে জরিমানা করা হয়। একজনের বয়স কম থাকায় মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। জব্দকৃত জালগুলো জনসম্মুখে পুড়িয়ে ধ্বংসা করা হয়
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মুস্তফা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, কোষাধ্যক্ষ আবুল কালামসহ আনসা সদস্য ।
হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে মালবাহী ট্রাক- সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ২জন নিহত হয়েছে। অপর আরো ২ যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে, বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার পৌর এলাকার সিংগাইর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে প্রশিকা সড়কের মাথায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার নিলুয়া গ্রামের পরশ আলীর ছেলে আব্দুল মান্নান (২৩) ও হরিরামপুর উপজেলার কৌরি ঝিটকা গ্রামের মৃত. শেরজন আলী মোল্লার ছেলে মনির হোসেন(৬০)। এ ঘটনায় সিএনজিতে থাকা আহত অপর যাত্রীরা হলেন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিন সেওতা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মহসিন (৩২) ও পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলার পাটগাড়ি গ্রামের মৃত. আফাজউদ্দিনের ছেলে শাহজাহান (৬০),
স্থানীয়রা জানান, হেমায়েতপুর-সিংগাইর আঞ্চলিক মহাসড়কে মানিকগঞ্জগামী মালবাহী একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো উ-১১-২৩২২) বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা সিএনজি (গাজীপুর থ-১১-২৬৬৬) সিংগাইর বাস স্ট্যান্ড ও গোবিন্ধল বাজারের মাঝামাঝি সড়কে পৌছলে মানিকগঞ্জগামী মালবাহী ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় সিএনজির যাত্রী ২ জন মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। অপর ২ যাত্রী গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা এসে সিএনজিতে থাকা ৪ জনকে উদ্ধার করে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২ জনকে মৃত ঘোষনা করেন। অপর ২ জন গুরুতর আহত অবস্থা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিংগাইর থানার পুলিশ উপপরিদর্শক মো.আমিনুল ইসলাম ২ জন মৃত্যু ও ২ জন আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,এ ঘটনায় ট্রাক ও সিএনজি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
মন্তব্য