ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেশের সব মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুরপাড়ে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর এই আইন বাতিলের জোর দাবির প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তথ্যমন্ত্রী।
কারাবন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যু সত্যিই অনভিপ্রেত মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফেলতি ছিল কিনা সেটা খুঁজে দেখা যেতে পারে।
‘তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সেটির জন্য আমরা সচেতন আছি। বিশেষত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাতে এই আইনের অপব্যবহার না হয়, সে জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় সচেতন আছি এবং কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ডিজিটাল বিষয়টা আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে ছিল না। সুতরাং ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে যখন একজন সাংবাদিকের চরিত্র হনন করা হয়, একজন গৃহিণীকে যখন অপবাদ দেয়া হয়, একজন সাধারণ মানুষ যখন ডিজিটাল আক্রমণের শিকার হন, তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন?
‘কোন আইনের বলে তিনি নিরাপত্তা পাবেন? এ জন্য একটা আইনের দরকার। এই জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রণয়ন।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ মনে করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কবর দেয়া উচিত।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহতো নানা কথা বলেন। যেমন করোনার টিকার বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার ছিলেন, আবার নিজে করোনার টিকা নিয়ে বলেছেন, এই টিকা সবার নেয়া উচিত। সুতরাং আজকে জাফরুল্লাহ সাহেব যে কথা বলেছেন, দুদিন পর দেখবেন নিজের কথাই তিনি আবার অন্য সুরে বলবেন। সুতরাং এটার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
শুক্রবার সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না। এই কালো আইনকে কবর দেওয়ার সময় এসেছে। রাজধানীর তোপখানা রোডে শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের জাতীয় কাউন্সিলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান এ সময় বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে বিএনপির সমালোচনারও জবাব দেন।
বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিনে খালেদা জিয়া, যিনি দিনের ১২টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, তিনি কেন ভোরে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে চলে গিয়েছিলেন? তিনি কেন এদিন তারেক রহমানের সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ বার কথা বললেন? এই রহস্যগুলো বের হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তাহলেই মুখোশ উন্মোচিত হবে কারা এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ নানা ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কারা কারা আছে, সেগুলো নিয়ে তারা ক্ষমতায় গেলে তদন্ত করবেন।’
তিনি বলেন, ‘তখন সদ্য সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। আমাদের সরকারের তখনও দুই মাস পূর্তি হয়নি। প্রায় দেড় মাসের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ইতিহাসে নয় শুধু, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নিরিখেও এতবড় একটি হত্যাকাণ্ডের এত আসামির বিচার কম হয়েছে। আমাদের দেশের ইতিহাসে এতজন আসামির বিচার আর হয়নি। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এত আসামির বিচার কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মামলার বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে মামলা যে কেউ করতে পারে, মামলা করার অধিকার সবারই আছে, তবে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে বিএনপিকে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডা. শাহাদাতকে আমি অনুরোধ জানাব, তার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্ন রাখার জন্য। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুস্থ সবল থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ চট্টগ্রামে আসলেন না কেন? এমনকি চট্টগ্রামে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, তারাও কিন্তু নির্বাচনের সময় তার পক্ষে নামেননি।
‘আমির খসরু মাহমুদকে দুয়েকবার দেখা গেলেও তা প্রেস কনফারেন্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তার দলের স্থানীয় নেতারাও প্রথমে কিছুটা সরব থাকলেও পরবর্তীতে তারা ঘরের মধ্যে চলে যান। এ জন্য ডা. শাহাদাতকে বলব, এই প্রশ্নগুলো দলের নেতাদের কাছে করেন এবং তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করেন।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘকে বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করতে এবং নৈতিক মান বজায় রেখে গণমাধ্যমকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (২ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইউনেস্কোর কার্যালয় প্রধান ও ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ এবং ইউনেস্কোর সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ।
ইউএনডিপি এবং ইউনেস্কোর যৌথভাবে প্রস্তুত করা 'বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থার একটি মূল্যায়ন: মুক্ত, স্বাধীন ও বহুমাত্রিক গণমাধ্যমের উপর গুরুত্বারোপ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ইউনেস্কোর কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সত্যিই প্রতিবেদনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা হলো বিভ্রান্তিকর তথ্য, ভুয়া খবর...এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের কিছু অংশ বাইরে বসবাসকারী লোকেরা ছড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে কিছু স্থানীয় মানুষ জড়িত। এটি একটি ক্রমাগত তথ্যবোমা।’
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি নিয়মিত গণমাধ্যমও অনেক বিভ্রান্তির উৎস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা কামনা করেন। বলেন, ‘আপনারা শুধু সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন না, গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেন।’
স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কোনো গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিতে থাকে—তাহলে সেই গণমাধ্যমকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জাতিসংঘ। আপনার কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ...আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে কী কার্যকর হচ্ছে, আর কী হচ্ছে না—তা তুলে ধরা হয়েছে। এটি মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে। এই মানের সঙ্গে অনুশীলনগুলোকে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং বিচার বিভাগের সদস্যদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে।’
ইউনেস্কোর জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ বলেন, প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করা হবে—যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় এবং সংবাদ কক্ষে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, এই বিষয়গুলোতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবেদনটি ইউএনডিপির ‘প্রতিষ্ঠান, নীতি ও সেবার সক্ষমতা উন্নয়ন (এসআইপিএস)’ প্রকল্পের আওতায় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম বিকাশে ইউনেস্কোর দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রার্থী হিসেবে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার রাত ১১টায় কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আখতার হোসেনের নেতৃত্বে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলধারায় প্রবেশ করবে।
এ সময় এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক মো. হাসনাত আবদুল্লাহ, আখতার হোসেনকে কাউনিয়ার সন্তান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা।
তাদের মধ্যে ছিলেন- দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন দলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক সারজিস আলম।
অনুষ্ঠানে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, এনসিপি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবানপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে জুলাই পদযাত্রা শুরু করে।
পদযাত্রা শুরু হয় সেই স্থান থেকে, যেখানে শহীদ আবু সাঈদকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলি করে পুলিশ।
সেখান থেকে রংপুর শহরের ডিসি মোড় পর্যন্ত হেঁটে যান নেতা-কর্মীরা।
পরে, পদযাত্রাটি কাউনিয়া উপজেলা শহরে পৌঁছায় এবং মধ্যরাতে পথসভার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।
২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।
সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গেল দু’দিন ধরে ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে বইছে দমকা বাতাস।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাগর উত্তাল হওয়ায় সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ ভোলার ইলিশা-লক্ষীপুর, আলেকজান্ডার-দৌলতখান, মনপুরা-তজুমুদ্দিন ও মনপুরা-ঢাকাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে।
এদিকে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যাত্রীরা বলছেন, দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। কিন্তু, বৈরী আবহাওয়ায় তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এছাড়াও নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। যাঁর ফলে নদী ও সমুদ্র বেশ উত্তাল রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভোলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আমরা একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
বুধবার (২ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনার শুরুতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘এক বছর আগে, আমরা সবাই মিলে সব ধরনের বাধা-বিঘ্ন মোকাবিলা করে যে অর্জন করতে চেয়েছি, তার একটি পর্যায় অতিক্রম করে আজ এখানে আমরা সমবেত হয়েছি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেন আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি, সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেন নাগরিকের গণতান্ত্রিক ও জীবনের অধিকার সুরক্ষিত হয়, যেন গুম-হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিচারিক হত্যার শিকার হতে না হয় আমাদের।’
‘এটি আপনাদের (রাজনীতিবিদ) অবদান, আপনাদের কর্মীদের অবদান, নাগরিকদের অবদান। এটি সব রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সাফল্য।’
তিনি বলেন, ‘এই সাফল্য শুধু একটি পর্যায়ে এসে থেমে গেলে হবে না। এটিকে সুরক্ষিত করতে হবে এবং সেই সুরক্ষার উপায় খুঁজছি আমরা, যেন সংস্কারের কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে পারি। আপনারা তাতে আন্তরিকভাবে সহায়তা করছেন, যদিও এ দায়িত্ব আমাদের সবার।’
‘কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই, কখনো আবার যতটা অগ্রসর হতে চাই, ততটা না পেরে খানিকটা হতাশ হই। কিন্তু তবুও আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের সবার চেষ্টা ও সহযোগিতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। দলগত, জোটগত ও ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আমি মনে করি, আমরা এই জায়গাটিতে পৌঁছাতে পারব। কারণ, আমাদের সবার সেই আন্তরিক চেষ্টা আছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের স্মরণে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধু, কর্মী ও ভাইবোনদের হারিয়েছি। অনেকে আহত অবস্থায় এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন; লড়াই করছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এখানে আমাদের আসা।’
‘প্রতিদিনই আমরা পরস্পরকে জানছি ও বুঝছি। সে কারণে আমি আশাবাদী। আমরা আশাবাদী যে একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারব। কেননা, যে দায় ও দায়বদ্ধতা—সেটি আপনারা প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করেন। আমরাও প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করি। মানুষেরও প্রত্যাশা আছে, তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই জায়গায়, আমরা সবাই যেন অগ্রসর হতে পারি।’
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদের কথা জানিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য শেষ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত আছেন, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. আইয়ুব মিয়া।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে (ফরমাল চার্জ) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
বুধবার সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রধান প্রসিকিউটরের পক্ষে প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
মামলা দায়েরের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর, তাদের মরদেহ একটি পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, আগুন দেওয়ার সময় অন্তত একজন তরুণ জীবিত ছিলেন এবং তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো হয়।
তিনি আরো বলেন, এটি ছিল একটি ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় বিচারযোগ্য।
মন্তব্য