নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
সংগঠনবিরোধী ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শনিবার নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কাদের মির্জাকে বহিষ্কারের এই সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আলোচনায় আসেন ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফার পৌর নির্বাচনের আগে আগে। সে সময় কাদের মির্জা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তোলেন।
তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী হয়েও বসুরহাটে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না সে আশঙ্কা তোলার পর। নিজ দল তো বটেই, বিরোধী দলগুলোও তখন আওয়ামী লীগ ও সরকারকে কটাক্ষ করতে শুরু করে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে অশালীন বক্তব্য, সভা-সমাবেশে আপত্তিকর উক্তি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে সংগঠনবিরোধী অশোভন মন্তব্য করার অভিযোগ এনে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় কাদের মির্জাকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচ এম খায়রুল আলম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী স্বাক্ষরিত জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে কাদের মির্জাকে বহিষ্কারের সুপারিশের চিঠি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী কাদের মির্জাকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশের চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বিষয়টিকে ‘সেনসিটিভ’ হিসেবে অবহিত করে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বহিষ্কারের সুপারিশের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক সপ্তাহ থেকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দলীয় নেতা ও কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আহত করেছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময় নেতাদের নিয়ে অশালীন ও অশোভন মন্তব্য করেছেন।
এমন কয়েকটি কারণ তুলে ধরে কাদের মির্জাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে সুপারিশ পাঠায়।
এ বিষয়ে কাদের মির্জার বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যে দুই ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যদি রাজনীতি ও নির্বাচন করতে চান তাহলে সরকার থেকে বের হয়ে তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেবেন। একই সঙ্গে জনগণের ভোগান্তি কমাতে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে হত্যাকারীদের বিচার, সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ এক সঙ্গে ঘোষণার দাবি তোলেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা (উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ) গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সেই সময়ের সরকারে গিয়েছিলেন। আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম। এখন দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক না থাকার পরও তাদেরকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত করে এক ধরনের অপপ্রচার চলছে এবং তাদের হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলব এটি খুবই উদ্দেশ্যমূলক। গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে যারা গিয়েছেন সরকার থেকে তারা বের হবেন কি না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের প্রত্যাশা, গণঅভ্যুত্থানের বৈধতাসহ আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নে ছাত্র উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টা একত্রে কাজ করবেন। ছাত্র উপদেষ্টাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত করে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা তার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সরকারের মধ্যে নতুন দলের কয়েকজন রয়ে গেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই দলের প্রতি আমাদের অনেক আশাবাদ ছিল। তাদের দুজন উপদেষ্টা এই সরকারে থেকে অনেক কিছুতে হস্তক্ষেপ করছে।
অপরদিকে ওই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে গণঅধিকার পরিষদও। দলটির নেতাদের ভাষ্য, এই দুই উপদেষ্টা এনসিপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজের বিষয়ে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ।
এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কী শুধু নির্বাচনকালীন সরকার, নাকি গণঅভ্যুত্থানের সরকার। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং বিচারের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন এই তিনটিরই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা উচিত। তবে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। তাহলে মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।
গত ২০ মে বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। তাদের কাজে ভরসা নাই। তাই দ্রুত ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। গতকালের সংবাদ সম্মেলেনও ইসি নিয়ে আগের মন্তব্যই করেন তিনি। বলেন, ইসি আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। হয় তারা আস্থা ফিরিয়ে আনবেন, না হয় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম। এটা তো আগস্ট মাসের ঘটনা। এটা যদি আগেই প্রকাশ করা হতো তাহলে জনগণের মনে কোনো সন্দেহ তৈরি হতো না। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগও পেত না। সেনাবাহিনী আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। গণঅভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা পালন করেছে, সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
‘আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখেছি, সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনো কখনো তৈরি হয়। আমরা ১/১১’র ঘটনা জানি। এসব ঘটনা কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য এবং আমাদের সেনাবাহিনী, প্রতিষ্ঠান হিসেবে, কারো জন্য কোনো ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সে বিষয়টা যেন আমরা সবাই বিবেচনা করি। যার যেটা কাজ, যার যেটা দায়িত্ব, সেটা যাতে সবাই পালন করে,’বলেন নাহিদ।
বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে জানিয়ে এনসিপি নেতা বলেন, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং তাদের দিয়ে মানবতাবিরোধী কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান এই সময়ে এসে একটা বিচারের মধ্য দিয়ে যাবে এবং যারা অভিযুক্ত তাদেরকে শাস্তি দেবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, গুমের অভিযোগ যেসব সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হননি। তাদের অবস্থা কী সেটা কিন্তু আমরা জানি না। এই বিষয়গুলা সুস্পষ্ট করলে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও বেশি জনগণের কাছে আস্থার জায়গা পাবে। আমরা সেই আস্থার জায়গায় সেনাবাহিনীকে দেখতে চাই।
এসময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি।
শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আলোচনায় তিনটি বিষয়—সংস্কার প্রক্রিয়া, বিচারিক কার্যক্রম ও নির্বাচন—বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আর কোনো পথ নেই। ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ চাই।’
বিএনপি প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে আমীর খসরু বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—কীভাবে ও কত দ্রুত আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারি। সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।’
তিনি জানান, দেশের মানুষ গত ১৬ বছর ধরে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারা এখন ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচনের সুযোগ চায়।
অন্যদিকে, ড. মঈন খান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তরই এখন একমাত্র সমাধান। ১৫ বছরের স্বৈরতন্ত্র থেকে ৫ আগস্ট মুক্তির পর জনগণ নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই রূপান্তর থেমে গেলে গণতন্ত্রও থেমে যাবে।’
সামরিক বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের বক্তব্য এবং রাজনৈতিক দলগুলোর লাগাতার কর্মসূচি ও চাপের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন উঠেছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় দেশে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যদি অপমানজনকভাবে পদত্যাগ করেন—তাহলে তার দল ব্যথিত হবে।
শুক্রবার (২৩ মে) একটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক বলেন, ‘দেশে অস্থিরতার ঢেউ বইছে বলে মনে হচ্ছে। এই অস্থিরতার পিছনে মূলত দায়ী কারা? নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা কারা করছেন? আপনার (ড. ইউনূসের) মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা এই বিষয়গুলো জানতে চাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফারুক বলেন, সরকার যদি একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ দিত—তাহলে শেখ হাসিনার আমলে যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন এবং অসংখ্য মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—তারা গঠনমূলকভাবে জড়িত হয়ে নির্বাচনমুখী হতেন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনি (ড. ইউনূস) এখনও কোনো রোডম্যাপ দেননি। যদি এই অস্থিরতা আপনার তৈরি হয়—তাহলে জেনে রাখুন, বিএনপি কখনই এর দায় নেবে না।’
সরকারকে অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুক।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করুন—দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়ান’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য পদত্যাগ সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে ফারুক বলেন, ‘যদি আপনার মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে অপমানজনকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়—তাহলে তা আমাদের ক্ষতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে যেভাবে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে, ঠিক সেভাবে আপনার নামও লেখা থাকুক। দিনের আলোতে ভোটদানের সুযোগ দিয়ে আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করলে... এমন উত্তরাধিকার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিএনপি নেতা প্রধান উপদেষ্টাকে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করে একটি উদাহরণ সৃষ্টির আহ্বান জানান, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতির একজন গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, মাহফুজ আলম এবং খলিলুর রহমান—এই তিন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেন। অন্যথায়, তাদের অপসারণের দায় আপনার উপর বর্তাবে।’
ফারুক বলেন, সংস্কার অবশ্যই করা উচিত, কিন্তু এমনভাবে নয়—যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি করিডোর তৈরি হয় বা চট্টগ্রাম বন্দর অন্যদের হাতে চলে যায়।
ষড়যন্ত্রকারীদের নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে—এমন যেকোনা সংস্কারের বিষয়ে সতর্কও করেন তিনি।
এই অস্থিতিশীলতা দূর করতে অধ্যাপক ইউনূসকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানান ফারুক।
দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় মগবাজারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক জামায়াত আমীর এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের হাইকোর্টে করা আপিলের পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার।
বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আপিলের প্রথম দিনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির এই দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।
আদালতে জুবাইদা রহমানের আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূইয়া। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আসিফ হাসান।
এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত ১৪ মে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডা. জুবাইদা রহমানকে জামিন দেন। সেই সঙ্গে নিম্ন আদালতে থাকা এই মামলার নথি তলবের পাশাপাশি জুবাইদা রহমানের অর্থদণ্ড স্থগিত করেন।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এই মামলায় রায় দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর কারাদণ্ড এবং তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এই মামলায় জুবাইদা রহমানের কারাদণ্ড ১ বছরের জন্য স্থগিত করে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
আদালতের রায়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার বাধা দূর হলেও বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর মৎস্যভবন মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছেন তার সমর্থকরা। এদিকে আরও জোরালো আন্দোলন করতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) হাইকোর্টের রায়ের পর সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইশরাক বলেন, ‘আন্দোলনকারী ভাইদের বলবো— এইসব মূলা দিয়ে গাধা বস করা যায়; আমাদের না। দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টার পদত্যাগের খবর না আসা পর্যন্ত চলেছে, লড়াই চলবে। রাস্তা তো ছাড়বেন না—আরও বিস্তৃত করতে হবে।’
ইশরাকের পক্ষে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরও কাকরাইল মসজিদ এলাকায় অবস্থান করে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন বিক্ষোভকারীরা। রায়ের খবর পেয়ে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
এ সময় স্লোগান দিয়ে নেতাকর্মীরা বলতে থাকেন, ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ইশরাক মেয়র হলো’, ‘এই মাত্র খবর এলো, জনগণের বিজয় হলো’।
তারা বলছেন, হাইকোর্টের রায় তাদের প্রাথমিক বিজয়। কিন্তু, তাদের নতুন আরেকটি দাবি আছে। সেটি হলো—সরকারের দুজন উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজকে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তারা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ইশরাককে শপথ পড়ানোর পাশাপাশি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সড়কে অবস্থান করছেন তারা। যতক্ষণ না ওই দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এর আগে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাকরাইল মোড়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অবস্থান কর্মসূচিতে এসে ঘোষণা দেন, মেয়র পদে তাকে দায়িত্ব বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
পাশাপাশি তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনস্থলে অবস্থান নেন তিনি।
এদিকে ইশরাকের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার বাধা কাটায় ‘জনগণের বিজয়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বিচার বিভাগের উচ্চ আদালত তারা আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যেটা হওয়া উচিত, সেই ধরনের রায় তারা দিয়েছেন। এই রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে।’
‘এটাতে নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের আরেকটা বিজয় হয়েছে। আমরা জানি যে যখন মেয়র নির্বাচন হয়, তখন সেটা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জবরদস্তি জোর করে এই ফলাফল কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল। জনতার মেয়র হিসেবে ঢাকাবাসীসহ দেশের জনগণ ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেছিল,’ বলেন ফখরুল।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে নগর ভবন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের আদেশ দেওয়া হবে আজ।
গতকাল বিষয়টি নিয়ে রিটের শুনানি শেষ হয়। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে আজ আদেশের দিন ধার্য রয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন শুনানি করেন। ইশরাকের পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল শুনানি করেন।
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদনটি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পরাজিত দেখিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের রায়ের অনুলিপি পেয়ে গত ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মন্তব্য