প্রায়শ সভা সমাবেশ বা ধর্মীয় আলোচনায় ৯০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বের কথা বলে উত্তেজক বক্তব্য রাখা ধর্মীয় দলগুলো ভোটের মাঠে একেবারেই দুর্বল।
জাতীয় নির্বাচনগুলোতে জোটের প্রার্থী হিসেবে বড় দলের সমর্থনে কখনও কখনও জিতে আসলেও একক শক্তিতে জয়ের উদাহরণ নেই বললেই চলে। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও যে তারা ভালো করে এমন নয়।
গত ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভা নির্বাচনে নয়টিতে প্রার্থী ছিল ইসলামী আন্দোলনের। এর মধ্যে বরিশালের একটি পৌরসভায় বহু ব্যবধানে দ্বিতীয় হলেও বাকি কোনোটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসতে পারেননি কেউ।
আর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর প্রার্থী পাওয়া গেছে একটিতে। জামানত হারিয়েছেন তিনিও। বাকি দলগুলোর প্রার্থীই ছিল না।
আগামী ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে যে ৬১ পৌরসভায় ভোট হচ্ছে, সেখানেও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে কেবল ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে। তাও অর্ধেকের কম, ২৯টি পৌরসভায় আছে হাতপাখার প্রার্থী।
ভোটের মাঠে দুর্বল হলেও ইদানীং প্রায়ই ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র চরিত্র পাল্টে দেয়ার কথা বলছেন নেতারা। হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফতে মজলিসের নেতা মামুনুল হক সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে এমনও বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে তারা সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলবেন। কিন্তু তারা ভোটে ক্ষমতায় আসার মতো শক্তি অর্জন করতে পারবেন, এমন বিশ্বাস নেই খোদ দলটির নেতাদের মধ্যেই।
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটি এখন দলীয় প্রতীকে ভোটের অধিকার হারিয়েছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায়।
নিবন্ধিত ১২টি দলের মধ্যে এই মুহূর্তে ভোটে ভালো করছে ইসলামী আন্দোলন, যদিও তারা মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসার ক্ষেত্রে অনেক দূরে।
বাকি ১১টি দলের মধ্যে চারটি আছে আওয়ামী লীগের জোটে। পাঁচটি দল আছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে, যদিও এক সময় তারা নারী নেতৃত্বকে হারাম বলত।
দুটি দল ২০ দল থেকে বেরিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে চারটি কোনো জোটে নেই।
ধর্মভিত্তিক সবচেয়ে প্রাচীন দুই দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাকিদের অবস্থাও একই রকম।
পৌর নির্বাচনে কেমন ভোট পড়ল?
গত ২৮ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনে দলের নয় জন প্রার্থীর মধ্যে একজন সাড়ে চার হাজারের মতো ভোট পেয়েছেন। বাকিদের বাক্সে পড়েছে নগণ্য সংখ্যক ভোট।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রার্থী হাফিজুর রহমান পেয়েছেন ১৪৩ ভোট। রংপুরের বদরগঞ্জ সাদ্দাম হোসেন পেয়েছেন ৩২৭ ভোট, কুড়িগ্রামে আব্দুল মজিদ পেয়েছেন চার হাজার ৮৫, সিরাজগঞ্জের জেলার শাহজাদপুরে খন্দকার ইমরান হোসেন পান এক হাজার ৮৭ ভোট পান।
দলটির ঘাঁটি বরিশালের উজিরপুরে কাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ভোট পান ৬১০ ও বাকেরগঞ্জে মাওলানা খলিলুর রহমান পান দুই হাজার ৪১১ ভোট। তিনি এই পৌরসভায় দ্বিতীয় হয়েছেন।
ঢাকার ধামরাইয়ে শওকত আলী পান ২৭২ ভোট, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নূরুল ইসলাম পান ৫৭০ ভোট।
সবচেয়ে বেশি ভোট পান চুয়াডাঙ্গার তুষার ইমরান সরকার। তার বাক্সে পড়ে চার হাজার ৫৯৭ ভোট।
ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম নিউজবাংলাকে জানান, তারা ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ৬১ পৌরসভার মধ্যে ২৯ জন ও তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ৬৪ পৌরসভায় ৩৩ জন প্রার্থী দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আশাবাদী বলেই তো আমরা প্রার্থী দিয়েছি। এখন মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরিবর্তন চায়। আমরা মনে করছি মানুষ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে আমাদের প্রার্থীরা জয়লাভ করবে।
‘আমরা তো মনে করি আমরা যেহেতু ইসলামী দলের মধ্যে একমাত্র প্রার্থী দিয়েছি। শুধুমাত্র আমাদের শক্তি দিয়ে নয়, মুসলমানদের ভোট আমরা পাব।’
কিন্তু আপনারা যেভাবে বলেন, সেভাবে ভোট তো পান না- এমন প্রশ্নে এই নেতা বলেন, ‘এবারের নির্বাচনেও কিন্তু আমাদের প্রার্থীদের বল প্রয়োগ করে হুমকি দেয়া হয়েছে।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভায় প্রার্থী দিয়ে আলোচনাতে আসতে পারেনি। দলের প্রার্থী লোকমান আহমদ ৪৩৩ ভোট পেয়েছেন। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত আছে। তবে কয়টিতে প্রার্থী দেয়া হয়েছে আমি বলতে পারছি না।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর একাংশের নেতা মুফতি ওয়াক্কাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেইনি।’
কী কারণে দেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব দল তো পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। আমরাও তাই দেইনি।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে আলোচনায় আসা হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস কোনো পৌরসভায় প্রার্থী দেয়নি।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত যে, আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন করব না।’
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ নেই। এ কারণে আমরা প্রার্থী দেইনি।
২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে খেলাফত মজলিস। দলটির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক আব্দুল জলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পৌরসভা নির্বাচন বয়কট করছি এমন ঘোষণা দেইনি। তবে মেয়র পদে প্রার্থী দেইনি। কিন্তু অন্য পদে আমাদের প্রার্থী রয়েছে।‘
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়র প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এমন লোক রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা এমন আশঙ্কা রয়েছে।’
তাহলে মেয়র বাদে অন্য পদে কেন নির্বাচন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রার্থী নাই বিষয়টি এমন নয়।’
আওয়ামী লীগের সমর্থনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের এক জন সংসদ সদস্য রয়েছে। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি তারাও।
চলমান পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে দলটির সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নিউজবাংলাকে জানান, ‘পৌরসভা নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছি। মেয়র হিসেবে আমরা কোন প্রার্থী দেইনি।’
তিনি বলেন, ‘এই মূহুর্তে তরিকত ফেডারেশ মনে করে ১৪ দলকে শক্তিশালী করা দরকার।’
গোলাপফুল প্রতীক নিয়ে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নেয় জাকের পার্টি। দলটির একটি সমর্থক গোষ্ঠী থাকলেও ভোটের মাঠে তেমন সুবিধা করতে পারে নি দলটি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৯০টি আসনে প্রার্থী দেয় জাকের পার্টি। কিন্তু কেউ বলার মতো ভোট পায়নি।
গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে কতটুকু সন্তুষ্ট- জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব এজাজুর রসুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আসন পাইতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। আমাদের কেউ যদি আসন না পায় আমাদের তাতে দুঃখ নেই।’
দলের জনপ্রিয়তা বহুগুণ বেড়েছে, এমন দাবিও করেন এই নেতা।
তাহলে ভোটে প্রতিফলন নেই কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কেউ ভোট পাইল কি না, সেটা আমাদের হিসাব না। আমাদের উদ্দেশ্য হইলো নির্বাচনী প্রসেসকে সংহত করা।’
জাতীয় নির্বাচনে বড় দলের সমর্থন পেতে তোড়জোর
২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট করে ইসলামী ঐক্যজোট চারটি আসনে জয়ের পর থেকে জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো বড় দুই দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নানা চেষ্টা করে আসছে।
দলগুলো এমন সব সংখ্যায় আসন দাবি করে, তা নিয়ে তাদের শরিকরা নানা সময় বিরক্তিও প্রকাশ করেছে।
২০০৭ সালের বাতিল হওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জোটে যোগ দিয়ে খেলাফত মজলিস ছয়টি আসন চেয়েছিল।
গত নির্বাচনে বিএনপির কাছে ২০টির বেশি আসন দাবি করে জামায়াত ছাড়া ধর্মভিত্তিক বাকি দলগুলো।
আওয়ামী লীগের কাছেও ২০টির বেশি আসন দাবি করে তার ধর্মভিত্তিক দলের শরিকরা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক, ‘মব জাস্টিস’ বা জনতার উচ্ছৃঙ্খল বিচার সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি বলেছেন, ‘গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নাটকীয় নির্বাচন। এসব নির্বাচনের সময়কার সকল নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধীই হোক, বিচার হতে হবে আইনের মাধ্যমেই, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়। মব জাস্টিস সমর্থনযোগ্য নয়।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা এবং মব জাস্টিসের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।
মব জাস্টিসের সাথে দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে আসামিরা হেনস্তা হন?
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য সাবেক তিন সিইসি দায়ী থাকলেও আইনসম্মতভাবেই তাদের অপরাধের বিচার চায় বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অভিযোগ করেন, দেশে আবারও করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে, কিন্তু সরকার কোনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া,নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ মাহমুদ হোসেন শ্যামল,সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ,সহ-সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, যুগ্ম-সাধারণ বেলাল উদ্দীন সরকার তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)।
সোমবার (২৩ জুন) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো সদস্য ও জাতীয় গণকংগ্রেস স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝং।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লি হংঝং ও অন্যান্য সিনিয়র সিপিসি নেতাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের শুরুতে সিপিসি নেতারা বিএনপি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান।
শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বৈঠককালে লি হংঝং আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভবিষ্যতে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, সিপিসি নেতারা আশা করেন যে, এই বৈঠক চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
তারা সিপিসি ও বিএনপির মধ্যে নিয়মিত আলোচনা এবং অব্যাহত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন বলে জানান শায়রুল কবির।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের নেতৃত্বের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। চীন বৃহত্তর বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে তার ইতিবাচক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে, দিনের শুরুতে বিএনপির প্রতিনিধিদল চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন এবং তারা অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই সফরকে বিএনপি ও সিপিসির মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্কের লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, উভয় দল ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার আশা করছে।
এর আগে রবিবার রাতে সিপিসির আমন্ত্রণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে।
তারা বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (বেইজিং সময়) ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে পৌঁছান।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্য আট সদস্য হলেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরউদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের দল গণপিটুনির সংস্কৃতিকে সমর্থন করে না। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার গণপিটুটির ঘটনায় তাদের কোনো কর্মী জড়িত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (২৩ জুন) তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা গণপিটুনির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করে আসছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় স্বচ্ছতার সঙ্গে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হোক। নূরুল হুদার গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া আশাও করে তার দল।
তিনি বলে, ‘কিন্তু আমরা তার উপর যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে—তা সমর্থন করি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যদি বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী এতে জড়িত থাকে—তাহলে আমরা তদন্তের পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব...এটি আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় প্রতিটি ব্যক্তি, সে যত গুরুতর অপরাধীই হোক না কেন, তিনি তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করুক। ‘সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা উচিত নয়।’
রবিবার(২৩ জুন) রাতে সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে রাজধানীর উত্তরার বাসভবনে একদল জনতা তাকে আক্রমণ করার পর গ্রেপ্তার করা হয়। নুরুল হুদার কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হুদা সাদা টি-শার্ট এবং লুঙ্গি পরে ছিলেন এবং তার গলায় জুতার মালা ছিল। এক পর্যায়ে একজন ব্যক্তি জুতা দিয়ে হুদার মুখে আঘাত করেন। ভিডিওটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার জন্য হুদার ভূমিকার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নুরুল হুদা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য দায়ী কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন।’
সালাহউদ্দীন বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ধ্বংসের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মতো আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ভেঙে ফেলার জন্যও দায়ী। ‘কিন্তু আমরা এই ধরনের বিষাক্ত সংস্কৃতি বা জনতার বিচারে বিশ্বাস করি না,’ বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী টুকু।
গণতন্ত্র মঞ্চ লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
কোনো এক ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা উচিত না বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার (২২জুন) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমন কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে প্রস্তাব করেছিলাম—একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়্ত্বি পালন করতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদের ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার নেই। তিনটি দল ছাড়া সবাই এই প্রশ্নে এক জায়গায় এসেছি।’
‘অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সেটা যত বারই হোক। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা, আমি মনে করি। এটিই আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে, বলেন জামায়াতের এই নায়েবে আমির।
তিনি বলেন, ‘এমন নজির বহুদেশে আছে। এটা বাংলাদেশেও জরুরি বলে আমরা মনে করি। এ নিয়ে আমরা প্রায় ঐকমত্যে এসেছি। বিকালে আরও দুটো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হবে।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এরআগে গেল ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর পরেরদিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল তারা।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
রবিবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও উপস্থিত ছিলেন।
এমন এক সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন ফখরুলসহ বিএনপির আরও আট নেতার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আজই বেইজিং সফরে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আগামী রবিবার (২২ জুন) চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবীর খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই সফরের জন্য বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিসি।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও দলীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ই এই সফরের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। সায়রুল কবীর আরও জানান, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া, চেয়ারপারসনের তিন উপদেষ্টা— জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জাবিউল্লাহ ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া এবং দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
সফর শুরুর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় চীনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে চীনা দূতাবাসে সাক্ষাৎ করে বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচিত চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গভীর করার প্রত্যাশারই প্রতিফলনই এই সফর। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
এদিকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিকে একটি ‘প্রতীক্ষমাণ সরকার’ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক পর্যবেক্ষক, যার অপেক্ষা চলছে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত।
এই সফরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চীনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিএনপি, সদ্য-গঠিত এনসিপি ও কিছু ইসলামপন্থী দল।
এর আগে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি ২১ সদস্যের ‘অনন্য’ প্রতিনিধিদল ১১ দিনের সফরে চীন যায়।
ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, গত আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বহুদলীয় সম্পর্ক জোরদারের কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সফর আয়োজন করা হয়।
১১ দিনের সফরে প্রতিনিধিদলটি বেইজিং, শানশি এবং ইউনান প্রদেশে সিপিসির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
মন্তব্য