ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই তিনি। টানা তিন বারের পৌর চেয়ারম্যান। এলাকায় জনপ্রিয়তাও প্রশ্নাতীত। তবু সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তিনি রাজপথে।
নাম আবদুল কাদের মির্জা। রোববার দিনভর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় তার অনুসারীরা করেছে বিক্ষোভ। সড়কে আগুন ধরিয়ে করা হয়েছে অবরোধ। মির্জা নিজেও অংশ নিয়েছেন সেই কর্মসূচিতে।
সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করে না বলে বিএনপি যে অভিযোগ করে আসছে, তার মধ্যে অভিযোগের মধ্যে এই ঘটনাটি বিরোধী দলটির নেতাদেরকে বক্তব্য দানে সুযোগ করে দিয়েছে।
সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা যে অভিযোগ করে আসছিলেন, তার প্রমাণ করে দিয়েছেন ওবায়দুল কাদেরের ভাই নিজেই।
এই অবস্থায় নোয়াখালী তো বটেই, বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
প্রশ্ন উঠেছে যেখানে নির্বাচন মানেই আওয়ামী লীগের জয়জয়কার, সেখানে এমন কী প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, যাতে খোদ ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের ভাইকে আন্দোলনে নামতে হয়েছে?
বিস্ময়কর হলো, যে এলাকায় ভোট নিয়ে এই হট্টগোল, সেখানে কাদেরের ভাই মির্জার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসাইনের ভোটের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তো নেইই, বরং বাংলাদেশে বিরোধীদের মধ্যে যে ঢালাও অভিযোগের প্রবণতা আছে, তার বিপরীতে গিয়ে তারা বলছেন, এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে।
রোববার দুপুর থেকে বসুরহাট মুজিব চত্বরে কাদের মির্জার অনুসারীরা নির্বাচনি প্রতীক নৌকার শ্লোগান ছেড়ে জেলা প্রশাসকের অপসারণ, সুষ্ঠ নির্বাচন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও অবস্থান ধর্মঘট করে।
কাদের মির্জা এমনও বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দলের চার থেকে পাঁচ জন সংসদ সদস্য ছাড়া বাকিরা ঘর থেকেই বের হতে পারবেন না।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর নোয়াখালীর সবগুলো আসন পেয়েছে ক্ষমতাসীন জোট। তবে ভোট নিয়ে আপত্তি তুলেছে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জোট। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র দখল করে সিল মেরে আওয়ামী লীগ আসনগুলো দখল করেছে।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারা দেশে ভূমিধস জয় পেলেও বৃহত্তর নোয়াখালীতে খুব একটা ভালো করতে পারেনি। ওই বছর নোয়াখালীর ছয়টি আসনের মধ্যে নৌকা মার্কার প্রার্থীরা জিতেন দুটি আসনে। লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে জিতে ধানের শীষের প্রার্থীরা। ফেনীর তিনটি আসনের সবগুলোতেই বড় ব্যবধানে হেরে যায় আওয়ামী লীগ।
আবদুল কাদের মির্জা নির্বাচন ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লালন, ছোট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় অংকের ঘুষ, টেন্ডারবাজির অভিযোগ এনেছেন।
বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন সুষ্ঠু নির্বাচন দাবিতে এভাবে মাঠে নামলেন, সেটা গভীর চিন্তার বিষয়। কারণ, নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক আছে। আমি এখনও গণসংযোগে আছি। ভোটারদের যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। কোনো ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।’
জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইনও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সবই ভালো আছে। তবে বিগত নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে নাই, এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে কি না সেই আশঙ্কায় আছি।’
কেন শঙ্কা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইভিএমের প্রতি জনগণ এখনও সচেতন হতে পারেনি।’
বিরোধীদের যেখানে অভিযোগ নেই, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন আন্দোলনে?- জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম নিউজবাংলাক বলেন, ‘একজন প্রার্থী হিসেবে আবদুল কাদের মির্জার অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন দাবি করাটা স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এ দেশের মানুষ গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে। আমরা চাই জনগণ তাদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।’
আগের দিন আন্দোলন করলেও সোমবার দিনভর প্রচার চালিয়েছেন কাদের মির্জা। দ্বিতীয় দিন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা আগের দিনের আন্দোলনের প্রসঙ্গে কোনো কথাও তোলেননি।
এ বিষয়ে নিউজবাংলা কাদের মির্জার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কাদের মির্জার যত অভিযোগ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুল কাদের মির্জা অভিযোগ তুলে বলেন, পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে অস্ত্র এসেছে এখানে, কাউন্সিলরদের টাকা দেয়া হয়েছে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর জন্য।
এসবের প্রতিবাদে রোববার দুপুর থেকে সড়ক অবরোধ করে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলতে থাকে।
এক পর্যায়ে কাদের মির্জা বিক্ষোভকারীদের নিয়ে সড়কে শুয়ে পড়লে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সেদিন সকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে নির্বাচনী আচরণবিধি সংক্রান্ত সভা চলছিল।
এ সময় কাদের মির্জা নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী ও সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন। দলীয় বিভিন্ন বিষয়েও তিনি বক্তব্য দিতে থাকেন।
তখন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম তাকে নির্বাচন ও আচরণবিধি মেনে কথা বলার জন্যে অনুরোধ জানান।
এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা সভাস্থল ত্যাগ করেন। তার অনুসারীরা জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে বিক্ষোভকারীরা বসুরহাট জিরো পয়েন্টে বঙ্গবন্ধু চত্বরে জড়ো হন। সেখানে কাদের মির্জা অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ আরও জোরাল হয়।
সন্ধ্যার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বিক্ষোভস্থলে যান।
পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, বিষয়টি তাদের জন্য বিব্রতকর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘আবদুল কাদের মির্জা নির্বাচন নিয়ে সভায় দীর্ঘক্ষণ নানা বিষয়ে বক্তব্য দেন। এক পর্যায়ে তাকে নির্বাচন ও আচরণবিধি নিয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর তার উপস্থিতিতে অনুসারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের সামনে এবং পরে প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।’
দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে যে ৬১টি এলাকায় ভোট হচ্ছে, সেখানে আছে বসুরহাটও।
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে করা আটটি মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রুল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছিলেন। রায়ে মামলাগুলো বাতিল করা হয়।
উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার ও রাসেল আহমেদ।
বাস পোড়ানোর অভিযোগে দারুস সালাম থানায় ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০ ফেব্রুয়ারি, ১ মার্চ, ৩ মার্চ এবং যাত্রাবাড়ী থানায় ২৪ জানুয়ারি, ২৩ জানুয়ারি ও ২৪ জানুয়ারি এসব মামলা করা হয়। পরে এসব মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় ২০১৭ সালে পৃথকভাবে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বেগম খালেদা জিয়া। তখন হাইকোর্ট রুল জারি করে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবীরা বলেন, আদালত ওইসব মামলায় রুল অ্যাবসলিউট করেছেন। এর অর্থ হলো মামলাগুলো বাতিল হয়ে গেল। এ মামলাগুলো আর থাকল না।
তারা জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করা এসব বানোয়াট মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবগঠিত কমিটি।
এতে কমিটির কিশোরগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর, তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্টের ১৫ বছরের অন্যতম সহযোগী। হাজার হাজার মানুষকে গুম, খুন, হত্যা করে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া, আয়নাঘরে বন্দি করেছেন, বনবাসে পাঠিয়েছেন, পাচার করেছেন, নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার যতটুকু দায় রয়েছে, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল)-এর সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুরও ততটুকু দায় রয়েছে।
‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী চুন্নুর বিরুদ্ধেও কিশোরগঞ্জের ছাত্রসমাজ অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে। সে যে স্পর্ধা দেখাচ্ছে, সে যে মাঠে আসতে চাচ্ছে, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, তাকে ছাত্রসমাজ রুখে দেবে।’
দুপুরে জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার নবগঠিত কমিটির পরিচিতি ও কর্মপরিকল্পনা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলন হয়।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ৩২১ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন। এতে ইকরাম হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক ও ফয়সাল প্রিন্সকে সদস্য সচিব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উদ্দেশে ইকরাম হোসেন বলেন, ‘দিল্লিতে বসে আপনি যদি কোনো ধরনের চক্রান্ত করেন, ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যে লক্ষ করেছেন, এই তরুণ বিপ্লবীরা ঘুমিয়ে যায় নাই। আপনি যে স্পর্ধা দেখিয়েছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুন্ডা বাহিনী, তারা দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে শহীদ করার পরও ন্যূনতম তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।
‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যাদের হাতে দুই হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত লেগে আছে, যারা ছাত্র-জনতাকে পঙ্গু করেছে, নিঃস্ব করেছে, তাদের আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কিশোরগঞ্জেও আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি চলবে না। যারাই স্পর্ধা দেখাবে, আমরা তাদের প্রতিহত করব।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, মুখ্য সংগঠক শরিফুল হক জয়, মুখপাত্র সাব্বিরুল হক তন্ময়, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান রনি, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসীম, যুগ্ম সদস্য সচিব আদিফুর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক রহমত উল্লাহ চৌধুরী হাসিনসহ অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তাদের একজন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে ফ্যাসিস্টরা। এলজিইডি, রোডস এন্ড হাইওয়ে, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীরা টাকার পাহাড় গড়েছে।
‘আন্দোলনে নিহত ও আহতদের নিয়ে মামলা বাণিজ্য হয়েছে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬ মাস পরে কমিটি হইছে। কমিটি দরকার তাই হইছে। আমাদের দরকার দেশকে সংস্কার করা। ৫ আগস্টের পর কারা বাসস্ট্যান্ড দখল করছে, তা কি আমরা জানি না? যতদিন পর্যন্ত দেশটাকে সুন্দর করতে না পারি, ততদিন পর্যন্ত থাকব।
‘আমরা ক্ষমতার জন্য এখানে আসিনি। চাকরির বাজারও দখল করে রেখেছে। মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হবে, এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তৎকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা করে শহরের এক গডফাদার নারায়ণগঞ্জের সড়কে ৭২ ফুট লম্বা ব্যানার টানিয়েছিলেন।
‘ডিসি, এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রিম মামলা করে রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পতিত আওয়ামী সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব মারা যান।’
তিনি বলেন, ‘গডফাদার আজ কোথায়? নারায়ণগঞ্জে নেই। এত অহংকার, দাম্ভিকতা ভালো না। সন্ত্রাসকে কখনও প্রশ্রয় দিতে হয় না। না হলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে ওই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইনসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।’
বার্তা সংস্থা বাসসকে শুক্রবার দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আসিফ মাহমুদ।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার শিগগিরই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল, যে বা যারাই হই না কেন, আমরা এ দেশের জনগণকে রিপ্রেজেন্ট করি। ফলে ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে জায়গা থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, আমি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাতে চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও চারটি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যেকোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
আরও পড়ুন:অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনকে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার তালেবুর রহমান ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মেহের আফরোজ শাওনকে তার নিজ বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করার কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সম্প্রতি শাওনের রাজনৈতিক অবস্থান ও কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরই মধ্যে আজ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিল ডিবি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির মঙ্গলবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক সংঘটিত সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার ও সন্ত্রাসীদের সাজা নিশ্চিত করার দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।’
এতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেনীর যুবদল নেতা শহিদ মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে একটি নতুন বাড়ি উপহার দিচ্ছেন।
মাসুদ বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।
সোনাগাজী উপজেলার চর-চান্দিয়া গ্রামে মঙ্গলবার নবনির্মিত বাড়ির চাবি মাসুদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর একটি প্রতিনিধি দল এ হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
এ উপলক্ষে চর-চান্দিয়ায় একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও আবদুল আউয়াল মিন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা, সদস্য সচিব ও অন্যান্য সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। এতে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে শহিদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার যুবদল নেতা মাসুদকে ২০১৬ সালে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ধরে নিয়ে যায়। পুলিশের অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
মাসুদের স্ত্রী ও নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে বর্তমানে অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য