ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে উস্কে দেয়া হচ্ছে দাবি করে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বলেছেন, তিনি কোনোভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হলে আরেকটি শাপলা চত্বর তৈরির হুমকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরোধের মুখে পড়া হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
মামুনুল কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল খেলাফতে মজলিসেরও নেতা। আর দলীয় কার্যালয়ে হয় এই সংবাদ সম্মেলন।
লিখিত বক্তব্যে মামুনুল বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে কিছু ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমার বিভিন্ন প্রোগ্রামে বাধা দেয়া হচ্ছে। সরকারদলীয় কিছু সংগঠন আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ ও যোগাযোগ মাধ্যমে আমার নামে বিভ্রান্তিকর কিছু তথ্য প্রচার করছে। এহেন পরিস্থিতিতে জাতির সামনে আমার রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানসহ নিজের বক্তব্য তুলে ধরা জরুরি মনে করছি।’
তিনি বলেন, ‘ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসনকে আমার বিরুদ্ধে উস্কে দেয়া হচ্ছে। আমি আশা করি এই অনভিপ্রেত অপতৎপরতা বন্ধ হবে।’
কোনটা ভুল তথ্য-জানতে চাইলে হেফাজত নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া বা এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিইনি। আমি বলেছি, আদর্শিক জায়গা থেকে কোনো ভাস্কর্য রাখা হবে না।’
তবে আবার তিনি বলেন, ভাস্কর্য স্থাপনের চেষ্টা করা হলে সামর্থ্যের মধ্যে এর বিরুদ্ধে তিনি বলেই যাবেন। তবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে জড়াবেন না। এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না যেটা হঠকারী হয় বা জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে।
মামুনুল তার পারিবারিক পরিচয় তুলে ধরে বলেন, তার বাবা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক বিএনপি-জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ইসলামের সঙ্গে চারদলীয় জোটে গেলেও পরে সে জোট ত্যাগ করেন। আর ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছয় দফা সমঝোতা চুক্তি করেন।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জোটবদ্ধভাবে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে তাদের সংগঠন খেলাফত মজলিস ও ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক জোটে যুক্ত না থাকার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র অথবা গোপন আঁতাতের মাধ্যমে দেশ রাষ্ট্র কিংবা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই।’
হেফাজত নেতা বলেন, ‘আসলে একটি মহল ভাস্কর্য নির্মাণের এই বিরোধিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধিতা হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
‘কখনও কোনোভাবে এমন একজন প্রয়াত মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধচারণ করি না এবং করাকে সমীচিনও মনে করি না।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বাক্য দুইবার উচ্চারণ করেন মামুনুল হক। বলেন, ‘আবারও স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্য করছি একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমি ব্যক্তি মামুনুল হককে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এ জন্য জামায়াত শিবিরের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে অমূলক ও অযৌক্তিক অভিযোগ আমার ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আমি এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে হেফাজত নেতা বলেন, ‘ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ইস্যু নিয়ে কিছুদিন ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শান্তিপ্রিয় ইসলামপ্রেমী তৌহিদী জনতা। স্বাভাবিকভাবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কিংবা প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ অনৈসলামিক সংস্কৃতি হওয়ায় আলেম সমাজ এর প্রতিবাদ করেছে। সেই সূত্রে আমিও ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি।’
ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে এই অবস্থান এখনও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন থেকে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছি, তখন থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, ভাস্কর্য যারই হোক, জিয়াউর রহমানের হোক অথবা অন্য যারই হোক, আমি ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে। সব ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছি।
‘আমাদের আইনগতভাবে, নৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সামর্থ্য থাকলে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যসহ সব ভাস্কর্যই আমরা মুসলমানদের জনপদ থেকে অপসারণ করার উদ্যোগ নেব।’
আরও পড়ুন:জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দফায় ১২ দিনের যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নতুন কর্মসূচি হিসেবে ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে গণসংযোগ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হবে। ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং ১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে।
জামায়াতের ৫ দফা দাবি হলো:
১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
২. নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।
৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোমাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মূসা প্রমুখ।
হেফাজতে ইসলামের অসুস্থ এক নেতার খোঁজখবর নিয়েছে বিএনপির নেতারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এবং জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলুম ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল খতিবে বাংলার আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীবের শারীরিক খোঁজখবর নিতে রোববার হাসপাতালে যান বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেইজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম ও জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ইকবালের নির্দেশক্রমে ফরিদপুর মহানগর জিয়া মঞ্চের নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরের জিয়ার সৈনিক, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার মোহাম্মদ কাইয়ুম মিয়াকে আহ্বায়ক ও এনামুল করিমকে সদস্য সচিব করে ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রোববার জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দপ্তর সম্পাদকের চলতি দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মো. জামাল হোসেনের স্বাক্ষরীত এক পত্রে ফরিদপুর মহানগর জিয়া মঞ্চের ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তারা হলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবর রহমান দিলীপ, যুগ্ম আহ্বায়ক নাইম আক্তার মুকুল, মাহবুবুর রহমান আজাদ, মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, ফরিদ হোসেন, কিবরিয়া জামান, সম্রাট আলম, আসাদুজ্জামান, ডা. মোফাজ্জুল হোসেন চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ নাসির মিয়া, উজ্জল মিয়া, শেখ আব্দুল আলীম মুক্তি, মাসুদ খান, নয়ন শেখ, তুষার আহমেদ, আব্দুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান আরিফ, ইউসুফ শেখ ও শহীদ আলম চৌধুরী ফরহাদ।
এদিকে জিয়া মঞ্চ ফরিদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন মহানগর জিয়া মঞ্চের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তারুণ্যদীপ্ত নতুন এই কমিটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আর্দশকে বুকে ধারণ করে আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করে তোলবে। এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অবৈধ ও অসাংবিধানিক আবদার মেনে জাতিকে সংকটে ফেলা যাবে না। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মেনে নিলে তা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ব্রিটিশ ল স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্সের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
পিআর পদ্ধতি কার্যকর হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হবে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, পিআর মানে হচ্ছে, ‘পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস’ (স্থায়ী অস্থিরতা)।
উদাহরণ টেনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিআর চালুর পর দেখা গেছে, সরকার গঠন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। কোথাও এক বছর বা দেড় বছর পর সরকার গঠিত হয়েছে। আবার সরকার গঠনের পর তা টেকসই হয়নি। কয়েক মাস বা এক বছরের মধ্যেই সরকার ভেঙে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতি চালুর মূল উদ্দেশ্য স্রেফ সংসদীয় আসনের সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং ঘন ঘন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা। এতে লাভবান হবে সেই শক্তি, যারা চায়, দেশ সব সময় অনিশ্চয়তায় থাকুক।
পিআর নিয়ে যেসব জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ মানুষ পিআর বোঝে না। আবার অন্য জরিপে দাবি করা হয়েছে, ৭০ শতাংশ মানুষ পিআর চায়। এটা জাতিকে বিভ্রান্ত করার শামিল।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জনগণ যদি আগে থেকে জানতে না পারে, তাদের ভোটে কোন প্রার্থী নির্বাচিত হবেন, তাহলে জনগণের সরাসরি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ কোথায় রইল? এতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহি দুর্বল হয়ে পড়বে।
সংবিধান ও আইনের শাসনের বাইরে গিয়ে কোনো সংস্কার দেশের জন্য শুভ হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় থাকতে চাই। কোনো রাজনৈতিক দলের অবৈধ, অসাংবিধানিক আবদার মেনে জাতিকে সংকটে ফেলা যাবে না।’
ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংস্কার প্রসঙ্গে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও রাগিব রউফ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ওয়াসি পারভেজ তাহসিন।
নিউইয়র্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কেউ লাঞ্ছিত করেননি বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, নিউইয়র্কে মির্জা ফখরুলকে কেউ লাঞ্ছিত করেননি। তাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার শুরু হয়েছে। সবকিছু মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নবনির্বাচিত পিরোজপুর জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নিউইয়র্কে অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষতা দেখাতে পারলে ফ্যাসিবাদের দোসররা এমন কর্মকাণ্ড ঘটানোর সাহস পেত না। সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় দোসরদের প্রেতাত্মারা দেশে নামতে পারছে, বিদেশের মাটিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের সঙ্গে বিএনপির কোনো আতাঁত নেই।
ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের প্রতীক শেখ হাসিনা। বহু ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাস্টারপ্ল্যান চলছে। জুলাই শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখনো অর্থ লুটপাটকারীদের টাকা দেশে ফেরত আনতে পারেনি, বিচারও করতে পারেনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য কোনো আসনে বা কোনো প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
সম্প্রতি ‘প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিচ্ছে বিএনপি’ সংবাদ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। রিজভী জানিয়েছেন, সবুজ সংকেত সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোকে মনগড়া।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান রুহুল কবির রিজভী।
নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মনোনয়নের নামে নাম প্রকাশ করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত তৈরির চেষ্টা করছে একটি মহল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। উপযুক্ত সময়েই দলের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বেছে নিয়ে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।’
প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে রিজভী বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করে এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।
তাই তফসিল ঘোষণার পরেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা বিএনপির কেন্দ্র থেকে ঘোষণা ব্যতিত পত্রিকায় প্রকাশিত কোন মনগড়া সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সারা দেশের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, দেশ ও জনগণ আমাদের কাছে বড়। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে জনগণের পাশে থাকতে হবে এবং জনগণকে পাশে রাখতে হবে।
শনিবার বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে স্বৈরাচারকে সরিয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনা। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের রায়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। স্বৈরাচার পতনের পর আমরা যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি, তাতে দেশের শিশু, যুবক, নারীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের অধিকারের কথা রয়েছে। এই ৩১ দফা দিয়ে নেতাকর্মীদেরকে মানুষের কাছে যেতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, কেউ যেন বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল এবং জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা কোনো ব্যক্তির কর্মী নই, আমরা ধানের শীষের কর্মী, জাতীয়তাবাদী শক্তির কর্মী।
দলের নীতিনির্ধারণী মহল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তা মেনে চলা এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অপপ্রচার করা হচ্ছে একটি বিশেষ মহল থেকে। বলা হচ্ছে, বিএনপি ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করেনা। অথচ বিএনপি সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করেছে। যারা এই অপপ্রচার করছে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে এদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। তারাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছিল। সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফার মধ্যেই সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। ৩১ দফা বাস্তবায়ন হলে দেশ উন্নত, আদর্শ, সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে।
সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, দেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত। একটি ভারতের আধিপত্যবাদের পক্ষে, অন্যটি আধিপত্যবাদের বিপক্ষে। বিএনপির জন্মই হয়েছে সকল আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, বিএনপি ডানপন্থী নয়, বামপন্থীও নয়, বিএনপি মধ্যপন্থী। বিএনপি সকল মানুষের অধিকারের পক্ষে।
প্রধান বক্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, জামায়াতে ইসলামী বেহেশতের টিকিট বিক্রি শুরু করছে। এরা ধর্মের নামে ব্যবসা করছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এরা একাত্তরে পাকবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধদের হত্যা করেছে। তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
দুপুরে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি লায়লা বেগম, রেজাউল করিম খান চুন্নু, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, রুহুল হোসাইন, এডভোকেট জালাল মো. গাউস, এডভোকেট শরীফুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন মধু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, আমিনুল ইসলাম আশফাক প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।
সম্মেলনে ২১ টি ইউনিটের কাউন্সিলর ছাড়াও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মন্তব্য