সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এনে সব দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল গঠনের উদ্দেশ্য কী ছিল, সংসদকে আবার জানালেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকীতে বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে ক্ষমতা জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।’
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধন করে বাকশাল বিল পাসের সময় সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণ বাজানো হয়।
এর আগে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি যখন তিনি সংবিধান সংশোধন করেন, তখন যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন, সেটা আমরা শুনতে চাই। সমস্ত জাতির এটা শোনা দরকার তিনি কেনো এটা করেছিলেন, কিসের জন্য করতে চেয়েছিলেন, তাঁর উদ্দেশ্যটা কী ছিল, তাঁর লক্ষ্যটা কী ছিল, আর তাতে জাতি কীভাবে উপকৃত হতো।’
তবে বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। তাকে হত্যার পর এই বিষয়টি আর এগিয়ে নেয়া হয়নি। উল্টো বঙ্গবন্ধুর বদনাম করেছে তাকে যারা হত্যা করেছে তারা।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন, যেটা পরে আর কেউ জানার সুযোগ পায়নি। তাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।
‘১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করা হলো এবং বলা হলো তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলেন, রাজতন্ত্র চেয়েছিলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মানুষটা তার জীবনের সবটুকু বিসর্জন দিয়েছিলেন একটি জাতির জন্য, কোনো আরাম আয়েশের দিকে তাকাননি, বারবার নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন একটা জনগোষ্ঠীর জন্য, তাদের একটা স্বতন্ত্র পরিচয় দেয়ার জন্য, তিনি কেন ক্ষমতার লোভ করবেন?’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘তার (জাতির জনক) যদি ক্ষমতার লোভ থাকতো তবে তিনি অনেকবার ক্ষমতায় যেতে পারতেন। যখন যে আসছেন তাকে তো মন্ত্রী বানাবেন, ক্ষমতা দেবেন সেটাই চেয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে সংসদ নেতা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষকে নিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের নিয়ে একটা ঐক্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। একটা জাতীয় ঐক্য।
‘সেই জাতীয় ঐক্যের উদ্দেশ্য ছিল উৎপাদন বৃদ্ধি করা, দেশকে সমৃদ্ধশালী করা দ্রুততার সঙ্গে। আর এর জন্য তিনি ক্ষমতা একদম বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার ইতিহাস পর্যন্ত মুছে ফেলা হয়েছিল জানিয়ে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘তার ঐতিহাসিক ভাষণগুলো বাজানো হতো না। তাঁর নামটা পর্যন্ত রাখা হতো না। তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের রটনা করা হয়েছিলো। কিন্তু মানুষ এই ভাষগুলোর মধ্য দিয়ে অনেক সত্য জানতে পেরেছে।’
স্কুল খুলে ঝুঁকি নিতে চাই না
এর আগে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের করোনা মহামারির মধ্যে স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।
এর জবাবে এই বক্তব্য সরাসরি নাকচ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি স্কুল খোলার কথা বলেছেন। আমেরিকায় কিন্তু স্কুল খুলে দিয়েছিল একটা পর্যায়ে। তারপর তারা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ইউরোপেও এমন ঘটনা ঘটে। তার কারণ সেখানে ব্যাপক হারে (করোনা সংক্রমণ) বেড়ে যায়।’
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ আছে। ১৪ নভেম্বরের পর সীমিত পরিসরে স্কুল কলেজ খুলে নেয়ার বিষয়ে আলোচনাও করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, এই যে বাচ্চারা স্কুলে যাবে তাদের অবিভাবকরা যাবে, এটা একটা সংক্রামক ব্যাধি যার ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। সেখানে এই ঝুঁকি আমরা কেন নেব?
স্কুলে না যেতে পেরে বাচ্চাদের মন খারাপ হচ্ছে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সবাই সুখি পরিবার করতে গিয়ে বাচ্চাকে ঘরে নিয়ে একক ভাবে থাকে। আগে একান্নবর্তী পরিবার ছিলো। এখন সেই সুযোগ কম। বাচ্চাদের খুব কষ্ট। তাঁর পরেও তাদের তো মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারি না।’
স্কুলে সবাইকে পাস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এটা ইংল্যান্ড দিয়েছে, অন্য দেশও দিয়েছে। অটো প্রমোশনে যে এমন একটা খুব ক্ষতি হয়ে গেল তা কিন্তু না।’
ইউরোপ আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ নিয়েও উদ্বেগ জানান সরকার প্রধান। বলেন, ‘গতবার হঠাৎ করে আসায় অনেক কিছু ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু আবার আমরা আরও বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি। যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে, যেটা নিয়ে রিসার্চ চলছে তা আমরা আগাম বুকিং দিয়েছি।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে নয়টা বিল হয়েছে বলেও জানান সংসদ নেতা। বলেন, ‘এত অল্প সময়ে এত বিল পাস করাও অনেক টাফ ব্যাপার। আমরা করেছি।
‘এক তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ নিয়ে আলোচলে চলেছে। তার পরে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।’
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেটি গ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির আয়োজনে বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে রবিবার শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা, ছাত্ররা যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিল, সে সুযোগ আমাদের শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, আমাদের জীবন, সামাজিক জীবন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে গ্রহণ করি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা ভয়ংকর সময় আমরা পার করেছি। প্রায় ১৫ বছর একটা পাথর আমাদের বুকের মধ্যে চেপে ছিল। সেই পাথর সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
‘আমাদের তরুণেরা, ছাত্ররা যে একটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত করল, নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের সুযোগ করে দিল, তা যেন আমরা গ্রহণ করি। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।’
গণতন্ত্রে নির্বাচনের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রে পৌঁছাতে পারি। সেটাই আমাদের ক্রীড়াঙ্গনকে বলুন, শিক্ষা ক্ষেত্রে, সাংস্কৃতি ক্ষেত্রে বলুন, সুশাসনের ক্ষেত্রে বলুন, নির্বাচনই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।’
আরও পড়ুন:গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করতে ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করবেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বেলা তিনটার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। আসুন প্রতিজ্ঞা করি, আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই।
‘যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল, সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, তাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করব তাদের সে স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার আমাদের কোনো সুযোগ থাকত না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হালদার, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেম সেলিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেবেন।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যার সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সহসভাপতি হিসেবে আছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
আরও পড়ুন:নির্বাচন কবে হবে, সেটি জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির সামনে শনিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আমাদের নির্বাচনটা কবে হবে। কারণ এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা হয়তো কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারব। আর পরে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে, তারা বাস্তবায়ন করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে, আমাদের আশা থাকবে সব রাজনৈতিক দল এটাতে স্বাক্ষর করবে। সেটা হবে জুলাই চার্টার।’
সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, ‘আর যেসব ক্ষেত্রে প্রধান ঐকমত্য প্রয়োজন, সেটার জন্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে পুনর্গঠন এবং এরপরে আমরা যে রাজনৈতিক সমাধানে যাচ্ছি, কীভাবে আমাদের ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনটা হবে, তার জন্য আজকে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে হেফাজতের নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্টচেকিং মিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো তথ্য-প্রমাণসহ উঠে এসেছে। হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশে তার আজ্ঞাবাহী বাহিনীর সদস্যরা গুম, খুন ও নির্যাতনে নৃশংসতার সকল সীমা ছাড়িয়েছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, ৫ মে শাপলা চত্বর ও চব্বিশের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকার ও জনগণকে এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দেবে নাৎ।
‘তারা একের পর এক স্যাবোট্যাজ ঘটিয়ে ছাত্র নেতৃত্ব ও তৌহিদি জনতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কালচারাল ঘরানার ফ্যাসিবাদপন্থি আওয়ামী লোকজন আবারও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষগুলোর মধ্যে তারা বিভেদ-বিভক্তি ছড়িয়ে দিতে তৎপর।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ভারত এখনও শত্রু রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। হাসিনা পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে এখনও তারা মেনে নিতে পারছে না; বরং তাদের আশ্রয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে একের পর এক ষড়যন্ত্র করার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। তাই গুম-খুন ও গণহত্যার দায়ে হাসিনার বিচার কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে।
‘সেই সাথে বিভিন্ন বাহিনীতে তাদের অনুগত চিহ্নিত দোসরদেরও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবেই গণ-অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব সুরক্ষিত হবে বলে আমরা মনে করি।’
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বক্তব্য দেবেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে হতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার আগে হতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। আমরা সেটাকে সমর্থন করি।’
নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে জামায়াত একটি লিখিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে বলেও জানান জামায়াতের সেক্রেটারি।
তিনি জানান, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আনুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে নিবন্ধনের শর্তগুলো শিথিল।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি যে আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল করতে, যাতে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বাতিল করার ক্ষমতা পায়।'
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ৩০০ আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এটি জামায়াতের প্রথম কোনো বৈঠক।
এর আগে দলটির নিবন্ধন থাকা অবস্থায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দিতে ইসি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াত প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে এসেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের সাথে কথা বলব।
আমাদের বক্তব্য তাদের জানাব। পরে গণমাধ্যমের সাথেও আমরা কথা বলব।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।
আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা হবে বলে মন্তব্য করেছন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রাজধানীর মতিঝিল থানার আয়োজনে সোমবার বিকেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমরা একসাথে মিলেমিশে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যাকে চায় সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। যারা নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছেন, তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গণহত্যার বিচার হতেই হবে। যারা গণহত্যা করেছে, তারাই এ দেশে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে।
‘তারা জুলাইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশের শিশু বাচ্চাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে, গুলির নির্দেশ দিয়েছে। তারা কেউ যেন বিচারের হাত থেকে রেহাই না পায়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিচারের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া একসাথে চলবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, ‘সংস্কার ঘোষণা দিয়ে হয় না। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে যারা দেশকে বিভাজনের মাধ্যমে সংস্কার করতে চান, তাদেরকে বলতে চাই, আমাদের ছোট্ট একটা দেশকে ভাগ করে সংস্কার এ দেশের মানুষ কাম্য নয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য