যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জো বাইডেনের ভক্ত হয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ২৭০টির বেশি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী নিশ্চিত করেন বাইডেন। জিতেই ট্রাম্পের আমলের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানান সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার এসব বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন অনেক রাষ্ট্র, সরকারপ্রধান ও রাজনীতিকরা।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা বাইডেনের বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করবেন। আমি তো রীতিমতো তার ভক্ত হয়ে গেছি। তার বক্তব্য কোনো দল বা ব্যক্তির জন্য না; এটা গণতন্ত্রের স্পিরিট।
‘তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছেন, নির্বাচনের আগে যেগুলো হয়েছে, তা বাদ দিয়ে আমেরিকার অগ্রযাত্রায় আসুন সকলে একসাথে কাজ করি। এটাই গণতান্ত্রিক নেতার বক্তব্য হওয়ার কথা।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে ‘সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে’ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকাকে দেখেন। তারা সম্পূর্ণ চাপের মধ্যে থেকেও পুরোপুরি অবিচল ছিল। জনগণের যে রায়, সেটাই গণতন্ত্র।
‘আর গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করতে হবে। প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং জনগণের কল্যাণমুখী একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।’
ভারতের বিহার রাজ্যে নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দাঁড়িয়ে যায় এবং সেগুলো শক্তিশালী হয়, তবে কেউ জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। ভারতের বিহারে নির্বাচন হয়েছে। আপনারা লক্ষ করে দেখবেন, এতকিছুর পরও তাদের নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।’
সরকারের উদ্দেশে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘আসুন আমরাও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি না করে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক রাখি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
বর্তমান সরকার কাউকে ভোট দিতে দেয় না, বরং সবকিছু জোর করে কেড়ে নেয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা রাস্তায় নেমেছি, পদযাত্রা করছি, রোডমার্চ করছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছি। কথা পরিষ্কার, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা তো বেশি কিছু চাইনি। শুধু চেয়েছি সরকার পদত্যাগ করে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিক। যেন জনগণ ভোট দিতে পারে।’
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সরকারের পদত্যাগসহ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করে দলটি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনার কানের সমস্যার কারণে আমেরিকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল- আমরা কিন্তু ভুলে যাইনি। আর আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এটা জীবন-মরণ বিষয়। কিন্তু সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।
‘এই মুহূর্তে দেশে যদি কেউ নির্যাতিত, বঞ্চিত থাকেন, তিনি বেগম খালেদা জিয়া। তাকে যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আটকে রেখেছে সরকার, তা কিন্তু আমরা জানি। তিনি (বেগম জিয়া) একজন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। তার ডাকে কোটি কোটি মানুষ বেরিয়ে আসত। অথচ এই ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছ।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশ যখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছে, তখন সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে যাচ্ছে। কীসের সংবিধান, যেটা তোমরা কাটাছেঁড়া করে শেষ করে দিয়েছ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি টিম এসেছিল, দেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা কেমন দেখতে, তারা দেশের রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসেছিল। তারা বলেছিল— দেশে গিয়ে বলব, এ দেশে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক টিম পাঠাব কি না। তারা কী বলেছে? তারা বলেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তাই, তারা পর্যবেক্ষক টিম পাঠাবে না। আর নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ সচিব বলে বাজেট ঘাটতির কারণে নাকি তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে না।’
তিনি বলেন, ‘একথা বিশ্বের সবাই জানে, এমনকি জাতীয় পার্টিও বলেছে- যদি সরকার পদত্যাগ না করে তবে এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। আন্দোলন, আন্দোলন ও আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মা-বোনেরা জেগেছে, তারা এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না। দয়া করে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচন দিন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।’
আরও পড়ুন:মানবিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ জাসদ।
শুক্রবার দলটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার জীবন সংকটাপন্ন। তিনি আদালতের বিচারে কারাদণ্ড প্রাপ্ত হওয়ার পর কারাগারে আড়াই বছর ও পরবর্তীতে সাড়ে তিন বছর শর্ত মেনে বাড়িতে আছেন। আমরা মনে করি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন।’
সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় বিবৃতিতে।
সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ কে এলো আর কে গেলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।
শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মানা-বে ওয়াটার পার্ক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঢাকাকে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে।
এ আলোচনার সূত্র টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ কে এলো আর কে গেলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার চেষ্টা করছি। সে নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে।’
‘যারা মনে করে বিদেশি পর্যবেক্ষক না এলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সেটি তাদের ভুল ধারণা। আমরা আশা করছি, অচিরেই তাদের এই ভুল ধারণা কেটে যাবে।’
সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ব্যাপক রদবদলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নির্বাচন এগিয়ে আসার কারণে বদলি বেশি হচ্ছে, এরকমটা ভাবার সুযোগ নেই।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন, মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুমন দেব প্রমুখ।
আরও পড়ুন:বিদেশি পর্যবেক্ষক আসুক আর না আসুক, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা হচ্ছে আমাদের। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকারসহ যে সমস্ত নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। আমাদের নির্বাচন কেউ পর্যবেক্ষণ করল কি করল না- এতে কিছুই আসে যায় না। এটি নিয়ে বিএনপিকেও আর দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ দেয়া হবে না।’
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুর লেনস্থ ওয়াইএনটি সেন্টারে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল পাঠানো নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন।
ভারতে যখন নির্বাচন হয়, তখন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সেখানে যান কি না— এমন প্রশ্ন রেখে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আর সেখানে (ভারতে) এটি নিয়ে এত কথাবার্তা হয়? কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যখন নির্বাচন হয়, সেখানে কি আমাদের দেশ থেকে কিংবা অন্য কোনো দেশ থেকে পর্যবেক্ষক যায়? যায় না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশেই নির্বাচন আসলে কে পর্যবেক্ষণ করল, কে করল না- এগুলো নিয়ে নানা মাতামাতি হয়। যদি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসেন, তাহলে তাদের স্বাগত জানাই, না আসলেও কোনো অসুবিধা নাই। কেউ পর্যবেক্ষণ করল কি করল না এতে কিছুই আসে যায় না।
‘ইতোমধ্যে আমাদের দেশে স্থানীয় সরকারসহ যে সমস্ত নির্বাচন হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। আগামী নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘ইইউ ছোট আকারের পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে বলেছে। তাদের বাজেট স্বল্পতার কথাও তারা চিঠিতে উল্লেখ করেছে। ইইউর পর্যবেক্ষক যে আকারেই আসুক বা না আসুক আমাদের দেশে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম আছে, সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসবে। সুতরাং আমাদের নির্বাচন আমরাই করব, আমাদের নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।’
আসন্ন নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ দল না পাঠিয়ে একটি ছোট দল পাঠাবে বলে গতকাল জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, ‘ইইউ জানিয়েছে, তারা ইসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। তারা আমাদের দেশে এসে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে। নির্বাচনের সময় তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে তারা একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। কিন্তু দেশে এখন একটি ছোট দল রয়েছে। আমাদের দেশে ইইউর যারা আছে তারা এটি করবে কি না সে সম্পর্কে কিছু বলেনি।’
তিনি বলেন, ইইউ নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। তারা সিইসির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবারও কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয় বলে জানান বিএনপি চেয়াপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত চিকিৎসক বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ অনুযায়ী তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বরও একবার সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে, তবে সেবার ১০ ঘণ্টার মতো সিসিইউতে রেখে আবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া।
এর আগেও বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। এরই মধ্যে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়লে একটিতে রিং পরানো হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তার মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে করে বলেছেন, অতি দ্রুত তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট (প্রতিস্থাপন) করা দরকার, যেটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন করে তার পরিবার। বিএনপির পক্ষ থেকেও তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অনিয়মে বহিষ্কারের আইনটি যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃত হলেও ক্যাম্পাসেই দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় তাদের।
বহিষ্কৃত হয়েও তারা থাকছেন হলে, করছেন নিয়মিত ক্লাস, দিচ্ছেন পরীক্ষা। আবার রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তাদের নিয়মিত অংশ নিতে দেখা যায়।
চবি ক্যাম্পাসে এক সাংবাদিককে মারধর করে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন শাখা ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা। অথচ বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা যায় তাদের।
ওই দুই নেতা হলেন শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ ও উপদপ্তর সম্পাদক আরাফাত হোসেন রায়হান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, বহিষ্কারের মেয়াদের মধ্যে বহিষ্কৃত কেউ ক্যাম্পাসে কিংবা হলে অবস্থান করতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারবেন না।
এ নিয়ে গত ১৪ আগস্ট প্রক্টরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ, তবে চিঠি দিয়েও মেলেনি প্রতিকার।
আক্ষেপ করে ভুক্তভোগী এ সাংবাদিক বলেন, ‘বহিষ্কার হওয়ার পরও দোষীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে অংশগ্রহণ ও হলে অবস্থানসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বহিষ্কারাদেশ শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
‘বহিষ্কৃতরা আমাকে দেখে উপহাসমূলক আচরণ এবং আমার দিকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। তাদের এমন আচরণে আমি খুবই শঙ্কিত। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় আমি অনিরাপদ বোধ করছি।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালেদ মাসুদ ও আরাফাত হোসেনসহ শাখা ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা-কর্মীরা পুরো ক্যাম্পাসে বাইক শোডাউন দিচ্ছেন। ওই সময় খালেদ মাসুদের বাইকের পেছনে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদাফ খানকে দেখা যায়। আলাদা বাইকে আরাফাত রায়হানসহ সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা সাদাফ খান বলেন, ‘সে (খালেদ মাসুদ) ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের বিষয়টা প্রশাসন দেখবে, আমরা তো প্রশাসন নই। সে আমাদের ছোট ভাই, ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে থাকতেই পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. ফরিদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যাদের বহিষ্কার করা হবে, তারা কেউ ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না। এটা নিশ্চিতের দায়িত্ব প্রক্টরিয়াল বডির।’
চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের বহিষ্কার কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুধুই লোক দেখানো। বহিষ্কৃত কিংবা শাস্তিপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে হলে অবস্থান করছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিচ্ছে। প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গেও বৈঠক করছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। প্রশাসনের এরূপ নির্লিপ্ততার নিন্দা জানাই।’
এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তাদের দেখলে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সারদাস্মৃতি ভবনে নাট্যোৎসব শুরুর প্রাক্কালে হামলা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। এতে অন্তত ৬ জন নাট্যকর্মী আহত হন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
নাট্যকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একটি মিছিল থেকে এ হামলা চালানো হয়।
সরকার পতনের দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভৈরব থেকে সিলেট আসে বিএনপির রোডমার্চ। ওই রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে দুপুর থেকেই নগরে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলো। এমন একটি মিছিল থেকে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা নাট্যকর্মী জানান, বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটের সারদা হলে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করে সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদ। এই উৎসবের মাধ্যমেই ১০ বছর বন্ধ থাকার পর সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সারদা হল। বিকেলে সারদা হলে মহড়া দিচ্ছিলেন নাট্যকর্মীরা। এসময় রোডমার্চের সমর্থনে একটি মিছিল সারদা হল চত্বরে প্রবেশ করে স্লোগান দিতে থাকে। নাট্যকর্মীরা মিছিলকারীদের সারদা হল চত্বর ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করলে পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে নাট্যকর্মীদের ওপর হামলা চালায় মিছিলের লোকজন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
হামলায় সিলেটের লিটল থিয়েটার আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, সাংস্কৃতিক সংগঠক বিভাষ শ্যাম যাদন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, নাট্যকর্মী রজতকান্তি গুপ্তসহ অন্তত ৬/৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানান তারা।
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সিলেট সিটি মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা আরিফুল হক চৌধুরী।
এসময় মেয়র বলেন, ‘হামলাকারীরা যদি আমার দলেরও হয়, তবু তারা ছাড় পাবে না। তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে, নাট্যকর্মীদের ওপর হামলার খবর পেয়ে সারদা হল এলাকায় ছুটে যান সিলেটের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা। সন্ধ্যায় তারা সারদা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি কোর্ট পয়েন্ট ঘুরে আবার সারদা হলে গিয়ে শেষ হয়। এসময় হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘বিএনপির রোডমার্চের সমর্থনে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা অভিমুখে একটি মিছিল যাচ্ছিল। সেই মিছিল থেকে সারদা ভবনের হলরুমে ঢুকে পড়ে কয়েকজন। সেখানে তারা অতর্কিতভাবে হামলা চালায় নাট্যকর্মীদের ওপর।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।’
নাট্যকর্মী ও সংগীতশিল্পী অরূপ বাউল বলেন, ‘সংস্কৃতি চর্চার জন্য আজ থেকে উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে সারদা ভবন। এ উপলক্ষে আজ থেকেই সারদা হল মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী নাট্য উৎসবের আয়োজন করে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ। সেই নাট্য উৎসবের মঞ্চ লক্ষ্য করে বিএনপির মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়। পরে হলরুমে ঢুকে চেয়ার ছুঁড়ে মারতে থাকে বিএনপির কর্মীরা। এতে কয়েকজন নাট্যকর্মী আহত হয়েছেন।’
হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে যান সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
মন্তব্য