১৯৪৭ সালে সবে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলো উপমহাদেশ। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া রাষ্ট্র পাকিস্তানের পূর্ব অংশের গোপালগঞ্জে ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নিল এক মেয়ে শিশু। নাম রাখা হলো শেখ হাসিনা।
আনন্দ, সংগ্রাম, বেদনাবিধূর নানা ঘটনাপ্রবাহের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী তিনি; সব মিলিয়ে চারবার। ৭৪ বছর বয়সে এসে বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় শেখ হাসিনা।
নিজের অর্জনেই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে আরও একটি পরিচয় তাকে বড় করে তোলে; জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে তিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্মদিনে তার অনুসারী ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। যদিও বাবার মতোই শেখ হাসিনা কখনো আড়ম্বরের সঙ্গে জন্মদিন পালন করেন না।
শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। শিশু বয়সেই চলে আসেন ঢাকায়। বড় হয়ে উঠা এখানেই।
ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়ান মুজিবকন্যা। পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে রাখেন সক্রিয় ভূমিকা। তবে রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসেন ১৯৮১ সালে, বাংলাদেশের ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ছয় বছর পর।
১৯৭৫ সালে বাবা বঙ্গবন্ধু, মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, চাচা, ফুপুসহ স্বজনদের হত্যাযজ্ঞের রাতে বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ছয় বছর পর দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে।
টানা ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দলের প্রধানের পাশাপাশি পালন করছেন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব। দুটি সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতিতে হয়েছেন পরিপক্ব।
১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। সেনাশাসক এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রে ফেরা দেশেও সংসদে একই ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম কোনো সরকারের পাঁচ বছর টিকে থাকার প্রথম; বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম নজিরও রাখেন শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি।
১৯৯৬ সালের পর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পর সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার শাসনামলেই নিম্ন আয়ের দেশের তকমা থেকে বের হয়ে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি পেয়েছেন একাধিক। প্রশংসিত হয়েছেন নানা উদ্যোগের কারণে; পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার।
সরকার প্রধান
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে জিতে পরের বছর ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তারপর টানা তৃতীয় মেয়াদে এখন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বিএনপির বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জিতে এসে ওই মাসের ১২ জানুয়ারি তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ওই নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে ভোটের ফলে কোনো হেরফের হয়নি। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চতুর্থবারের মতো।
ব্যক্তিগত জীবন
শেখ হাসিনা মাধ্যমিক বা মেট্রিক পাস করেন ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন সে সময়ের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়)। স্নাতক পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
দুই সন্তানের জননী শেখ হাসিনা। ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে বিয়ে করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় ২৭ জুলাই জন্ম হয় প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম নেয় কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
ঘটা করে জন্মদিন কখনো শেখ হাসিনা পালন করে না। এবারও তার অন্যথা হবে না। দলের পক্ষ থেকে ঘটা করে কোনো আয়োজন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
তবে দলের কিছু কর্মসূচি থাকছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোমবার বিকাল বিকাল সাড়ে তিনটায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত সংখ্যক নেতার অংশগ্রহণে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে।
এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর এবং দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। এছাড়া সব গির্জা, বৌদ্ধ বিহার এবং মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকাসহ সারাদেশে সকল সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীও থাকছে। করোনাকালে এসব কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে করতে বলা হয়েছে।
ভারত ও চীনের শুভেচ্ছা
বাসস জানায়, জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা হিসেবে পাঠানো একটি চিঠি ও একটি ফুলের তোড়া হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আপনার (শেখ হাসিনা) দূরদর্শী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে সহায়তা করেছে এবং সমানভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার অবদান অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)। সিপিসির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী সং তাও এক চিঠিতে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআর পদ্ধতি এ দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। চাপিয়ে দেয়া কোনকিছু এদেশের মানুষ গ্রহণ করে না।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে ডিআরইউ মিলনায়তনে এক 'স্মরণসভা'য় তিনি এসব কথা বলেন। ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভা আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
তিনি বলেন, বিএনপি বিরুদ্ধে অপ্রচার চলছে, বিএনপি নাকি সংস্কার চায় না। বিএনপি সংস্কারের পক্ষে। আপনারা অপ্রচারে কান দিবেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতির বিষয়ে জনগণ বোঝে না, সেই পদ্ধতি নিয়ে কয়েকটি দল আন্দোলন করছে। এর কারণ হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা, জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, রাজনীতির নামে বিভাজন সৃষ্টি করে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা আজও চলছে। তিনি আরো বলেন, যারা রাজনীতির নামে বিভাজন তৈরি করতে চায়, তারা দেশ ও জাতির শত্রু, সর্বোপরি তারা ইসলামের শত্রু। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যই ইসলামের শক্তি—এই সত্যকে হৃদয়ে ধারণ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রে কর্ণপাত না করে ইসলামী শক্তিকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শনিবার দুপুরে পুটিবিলা ইউনিয়ন জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন তিনি।
ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মো. নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা আইয়ুব সাবেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেন্টার দায়িত্বশীলদের সুধী সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, লোহাগাড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আসাদুল্লাহ ইসলামাবাদী, বটতলী শহর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক জালাল আহমদ, কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইদ্রিস, লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আফসার, সাবেক ছাত্রনেতা বজলুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল মোজাফফর আহমদ, মাওলানা রফিক আহমদ ও মো. শাহজাহান মুন্সী।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি একটি নিয়মতান্ত্রিক ইসলামী সংগঠন। এ সংগঠনের কর্মীরা শৃঙ্খলা, ত্যাগ ও আদর্শের প্রতীক। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের কর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে ইসলামী শক্তিকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাবে—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্র ফেরানোর একমাত্র পথ সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। গণতন্ত্রের জন্য আর বিকল্প কোনো পথ নেই। কয়েকজন মিলে আইন করলে গণতন্ত্র হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, যতই সংস্কার করি, বুদ্ধিজীবী মিলে কৌশল আবিষ্কার করার চেষ্টা করি কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারবো না।
স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে শহীদ নাজিরউদ্দিন জেহাদের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় ফখরুল আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষই গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতাকামী। তারা বারবার লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। দুর্ভাগ্য হচ্ছে সেই লড়াইয়ে মানুষ বারবার হোঁচট খেয়েছে। যতবার হোঁচট খেয়েছে ততবার উঠে দাঁড়িয়েছে এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিজয় অর্জন করেছে।
হাসিনাকে শুধু ‘হাসিনা’ বললে একটু সম্মান দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মনস্টার হাসিনা দেশের সব কিছুকে তছনছ করে দিয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা, আমাদের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা সব জায়গায় সে তছনছ করে দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, কিছু কিছু মানুষ বা সংগঠন জুলাই আন্দোলনকে নিজেদের আন্দোলন বলে দাবি করেন। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি সমগ্র সময় ধরে লড়াই করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ৯০–এর গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, জিয়া পরিবার তখনও জনগণের পাশে ছিল, এখনো আছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তারেক রহমান সোচ্চার ছিলেন, আছেন। যারা ‘পিআর’ পদ্ধতির কথা বলে, তারা আসলে নির্বাচন চায় না, গণতন্ত্রও চায় না। তিনি বলেন, আমাদের আগে বাংলাদেশ, না দিল্লি, না পিন্ডি; সবার আগে বাংলাদেশ।
সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এখন পর্যন্ত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও দায়ি করেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে গণমিছিলের আগে এক সমাবেশে বক্তব্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গোলাম পরওয়ার। পাঁচ দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বল হয়ে, কারও চাপে মাথা নত করে প্রশাসনে কোনো দলের পছন্দের লোককে বেছে বেছে পদায়ন করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ওসি, ডিসি, ইউএনও, আমলা, এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকের ভূমিকা এখনো জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ।
উপদেষ্টাদের মধ্যে কাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, সে নাম প্রকাশ করেননি মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগে ছোট-বড় সব দল যেন সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এখন জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার আছে। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের ঘোষিত কর্মসূচি সম্পর্কে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার কারও নেই।’
১৫ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আগে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান পরওয়ার।
যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি গণভোটের মধ্যে পিআর প্রস্তাবও যুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণ যদি পিআর পদ্ধতির পক্ষে মতামত দেয়, সব দলকে সেটা মানতে হবে। জনগণ বিপক্ষে মত দিলে জামায়াত পিআরের দাবি থেকে সরে আসবে।
জাতীয় ঐক্য তৈরির স্বার্থে জামায়াত ‘বেশ কিছু’ সংস্কার প্রস্তাবে ছাড় দিয়েছে দাবি করে পরওয়ার বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্বপ্ন পূরণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে যেন ঐক্যের প্রচেষ্টায় বিঘ্ন না ঘটে।’
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘জুলাই সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব) নবগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হতে যাওয়া জুলাই সনদকে বিএনপি ইতিবাচকভাবে দেখছে। রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই এই সনদের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব। আমরা আশাবাদী, জুলাই সনদ নিয়ে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক সমঝোতা হবে।’
এ সময় তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন। তার কথার মধ্যে কোনো দলীয় পক্ষপাত ছিল না। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ধ্বংস চাননি, বরং ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। যেসব ব্যক্তি অপরাধ করেছেন বা নির্যাতন চালিয়েছেন; আইনসঙ্গত উপায়ে তাদের বিচারের কথা বলেছেন তিনি।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সেখানে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানই মুখ্য। দেশের সিভিল সোসাইটি, অভিজাত সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তার এই বক্তব্য ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
কৃষি খাতের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে কৃষি কাজের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের কৃষকরা আজ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এ বিষয়ে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (এ্যাব) কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি জানান, অ্যাব এমন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যাতে কৃষকদের স্বার্থরক্ষা হয় এবং দেশের জনগণ উপকৃত হয়। ‘এই দিকনির্দেশনা ও প্রেরণা আমাদের দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকেই এসেছে’, যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নবগঠিত এ্যাবের আহ্বায়ক কৃষিবিদ কামরুজ্জামান এবং সদস্য সচিব কৃষিবিদ শাহাদাৎ হোসেন বিপ্লব।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মাহমুদুর রহমান মান্না, জোনায়েদ সাকি, হাসনাত কাইয়ূম, সাইফুল হকসহ ১২০ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাম ও প্রগতিশীল ঘরানার ছয়টি রাজনৈতিক দলের মোর্চা ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মঞ্চের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম। পর্যায়ক্রমে ৩০০ আসনের বাকি আসনগুলোতেও প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ আসনে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ফেনী-৩ আসনে এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুকে জামালপুর-৫ আসনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের এ পর্যন্ত চার শতাধিক প্রার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। আরও অনেকে আগ্রহ জানিয়েছেন। প্রার্থিতা বাছাই ও সমন্বয় কমিটি আবেদনগুলো পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের কাজ করছে। একই আসনে একাধিক প্রার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধারাবাহিকভাবে দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বয়কাজ চলমান রয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ এর আগে এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। এর পাশাপাশি মঞ্চ সম্প্রসারণের আলাপ চলমান রয়েছে। এমনকি অন্য কোনো জোটের সঙ্গে ঐক্য বা নির্বাচনী সমঝোতার সম্ভাবনাও রয়েছে। দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করে জনগণের মালিকানা ও জনগণের কাছে জবাবদিহির রাষ্ট্রকাঠামো গড়তে যাঁরা সর্বোচ্চ সচেতন হবেন, তাদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের ঐক্য হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, তানিয়া রব, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৮ আগস্ট জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ মিলে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে জোট গঠন করে। পরে গণঅধিকার পরিষদ এই জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করার ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে মন্তব্য করে দেশের শিক্ষক সমাজকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যোগে শিক্ষকদের এক সমাবেশে তিনি বলেন, আপনাদের আমি বলতে চাই, আসন্ন যে নির্বাচন সেই নির্বাচনে আপনাদের একটা বিরাট ভূমিকা আছে, আপনারা প্রতিটি জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন। আজকে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যে, সেই নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করবার। কেউ যেন সেটাকে (নির্বাচন) ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে না পারে, সে দিকে আপনারা সজাগ সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই, আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের সেই সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা আমাদের নেতার যে স্বপ্ন সেই… আমাদের পথ একটাই সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ আয়োজন করে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা, অবসর বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণ, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ।
শিক্ষকদের দাবি-দওয়ার সবকিছু বিএনপির ৩১ দফার কর্মসূচিতে আছে দাবি করে দলের মহাসচিব ফখরুল বলেন, আমাদের জাতি হিসেবে আপনাদের কাছে একটা দাবি আছে, সে দাবিটা হচ্ছে যে আপনারা আপনাদের ছাত্রদেরকে ছাত্রীদেরকে, আমাদের সন্তানদেরকে এমন করে গড়ে তুলবেন, যেন তারা সত্যিকার অর্থেই আদর্শ নাগরিক হতে পারে, নৈতিকতার মধ্যে থাকতে পারে। আমরা সবাই মিলে যেন একটা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।
সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদেন মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপউপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিজউদ্দিন চৌধুরী।
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আফরোজা বেগম রীতাসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য