পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের ভাবনা ও কল্পনা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ছিল। ধর্ম ও পুরানে এর সমর্থনে নানা কাহিনি প্রচারিত থাকলেও ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী বা কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব মানুষ এখনো নিজের চোখে দেখেনি। তবে যুগে যুগে মহাবিশ্বে প্রাণের খোঁজে বিজ্ঞানীদের চলছে নিরলস গবেষণা। বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিন দিন উন্নতি এবং মহাকাশ ও গ্রহ-নক্ষত্র ঘিরে এ গবেষণা আরও জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণা এ বিষয়ে জুগিয়েছে আশার আলো। পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রহের নাম ‘কে২-১৮বি’। পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৮.৬ গুণ ভারী ও আকারে ২.৬ গুণ বড় এই গ্রহটি নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জানিয়েছেন, গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে তারা শক্তিশালী প্রমাণ পেয়েছেন। তবে বিষয়টি কেবলই প্রাথমিক ধারণার পর্যায়ে আছে জানিয়ে তারা এ বিষয়ে আরও গভীর বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবিসি বাংলা জানায়, কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল। তারা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে এমন কিছু অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন যা পৃথিবীতে কেবল সরল বা এক কোষী (উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ব্যাকটেরিয়া) জীবের মাধ্যমেই তৈরি হয়।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো, একইসঙ্গে আগের চেয়েও বেশি আশাব্যঞ্জকভাবে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেছে।
তবে এই ফলাফল নিশ্চিত করতে আরও তথ্য প্রয়োজন বলে জানিয়েছে গবেষণা দলটি, স্বাধীনভাবে কাজ করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও একই মত দিয়েছেন।
শিগগিরই নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিজের ল্যাবরেটরিতে তিনি জানান, ‘এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাণের অস্তিত্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। বাস্তবে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা এই সংকেত নিশ্চিত করতে পারব।’
আকারের দিক থেকে কে২-১৮বি পৃথিবীর তুলনায় আড়াই গুণ বড়। এটি আমাদের থেকে ৭০০ ট্রিলিয়ন মাইল, অর্থাৎ ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এর মানে দাঁড়ায়- কোনো মানুষের পক্ষে সেখানে এক জীবনে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
কিন্তু জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এতটাই শক্তিশালী যে একটি ছোট লাল সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান ওই গ্রহ অতিক্রম করে আসা আলো বিশ্লেষণ করে ওই গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করতে পারে।
কেমব্রিজের গবেষক দলটি দেখেছে যে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের দুটি অণুর মধ্যে অন্তত একটির মধ্যে এমন রাসায়নিক চিহ্ন রয়েছে যেগুলো সাধারণত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত; এই রাসায়নিকগুলো হলো- ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (ডিএমডিএস)।
পৃথিবীতে এই গ্যাসগুলো সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।
একটি পর্যবেক্ষণেই এই গ্যাসের এতটা উপস্থিতি দেখে নিজের বিস্ময়ের কথা জানান অধ্যাপক মধুসূদন। তিনি বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলটিতে যে পরিমাণ গ্যাস আছে বলে আমরা ধারণা করছি, তা পৃথিবীর চেয়ে হাজার গুণ বেশি। ফলে এই গ্যাস যদি আসলেই জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে গ্রহটিতে জীবনের প্রাচুর্য থাকবে।’
আরও এক ধাপ এগিয়ে অধ্যাপক মধুসূদন বলেন, ‘আমরা যদি কে২-১৮বি গ্রহে জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি তার মানে এটাই দাঁড়াবে যে ছায়াপথে জীবন থাকাটাই স্বাভাবিক।’
গত বৃহস্পতিবার বিবিসি রেডিও ফাইভের লাইভে তিনি বলেন, ‘এটা বিজ্ঞানের জন্য এবং একাধারে প্রাণী হিসেবে আমাদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত। এমন যদি একটা উদাহরণ মেলে, তাহলে বুঝতে হবে- এই অসীম মহাবিশ্বে আরও অনেক গ্রহেই জীবনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজস্ব খাতে বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার ঘোষণা করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে এর পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র সংস্থা গঠন করা হচ্ছে—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো রাজস্ব নীতি নির্ধারণ এবং প্রশাসনের কাজ পৃথক করা, যাতে দক্ষতা বাড়ানো যায়, স্বার্থের সংঘাত কমানো যায় এবং দেশের করভিত্তি সম্প্রসারিত করা যায়।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। তুলনামূলকভাবে, বৈশ্বিক গড় ১৬.৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬ শতাংশ। জনগণের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হলে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে।
এই লক্ষ্য অর্জনে এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমবর্ধমানভাবে এ বিষয়ে ঐক্যমত গড়ে উঠেছে যে একটি প্রতিষ্ঠানকে কর নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উভয় দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়—এ ধরনের ব্যবস্থা স্বার্থের সংঘাত তৈরি করে এবং অদক্ষতা বাড়ায়। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন যে, রাজস্ব আদায়কে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা উপেক্ষিত হয়েছে।
এনবিআরের দীর্ঘদিনের কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে:
স্বার্থের সংঘাত:
একই প্রতিষ্ঠান নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ফলে কর নীতিতে দুর্বলতা ও ব্যাপক অনিয়ম দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহির কোনো কাঠামো নেই এবং তারা প্রায়ই কর ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে জনস্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে কর আদায়কারীরা ফাঁকিবাজদের সহায়তা করেন ব্যক্তিগত স্বার্থে।
কর আহরণকারীর কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য কোনো নিরপেক্ষ পদ্ধতি নেই এবং তাদের পদোন্নতি নির্ভর করে না নির্দিষ্ট কর্মক্ষমতা নির্দেশকের ওপর।
অদক্ষ রাজস্ব সংগ্রহ:
দ্বৈত দায়িত্ব পালনের কারণে নীতিনির্ধারণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গঠনে মনোযোগ বিভক্ত হয়েছে। এর ফলে করের আওতা সংকুচিত থেকেছে এবং রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভাবনার তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
দুর্বল শাসনব্যবস্থা:
এনবিআরে আইন প্রয়োগে অসঙ্গতি, বিনিয়োগ সহায়তায় দুর্বলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বল শাসনের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়েছে।
প্রশাসনে দ্বৈততা:
বর্তমান কাঠামোতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব একইসঙ্গে এনবিআরেরও প্রধান হওয়ায় বিভ্রান্তি ও অদক্ষতা দেখা দিয়েছে, যা কার্যকর কর নীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করেছে।
কর্মীদের হতাশা ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা:
এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ কর ও শুল্ক কর্মকর্তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়েছে, কারণ অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে তারা উপেক্ষিত হতে পারেন।
সংস্কার কীভাবে সহায়ক হবে:
নতুন কাঠামো এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে আরও স্পষ্ট ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো গড়ে তুলবে।
দায়িত্বের স্পষ্ট বিভাজন:
রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, করহার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ বাস্তবায়ন, অডিট ও পরিচালন তদারকি করবে। এই বিভাজন নিশ্চিত করবে যে, কর নির্ধারণকারী কর্মকর্তারা আর কর সংগ্রহের দায়িত্বে নেই, ফলে অপব্যবহারের সুযোগ কমবে।
দক্ষতা ও শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন:
প্রতিটি বিভাগ তার নিজস্ব কার্যক্রমে মনোযোগ দিতে পারবে, বিশেষায়িত জ্ঞান বাড়বে, স্বার্থের সংঘাত কমবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সততা উন্নত হবে।
করভিত্তি সম্প্রসারণ ও প্রত্যক্ষ কর জোরদার:
এই সংস্কার করের আওতা বাড়াবে, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমাবে এবং উপযুক্ত পদে দক্ষ পেশাজীবীদের নিয়োগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহকে আরও শক্তিশালী করবে।
উন্নয়নমুখী নীতিমালা:
একটি স্বতন্ত্র নীতিনির্ধারণ ইউনিট তথ্য-নির্ভর, ভবিষ্যতমুখী কৌশল প্রণয়ন করতে পারবে, যা শুধু স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে নয়।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি:
স্বচ্ছ, পূর্বানুমেয় নীতি এবং পেশাদার কর প্রশাসন বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে এবং বেসরকারি খাতের অভিযোগ হ্রাস পাবে।
এই কাঠামোগত সংস্কার কেবল একটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নয়—এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা একটি ন্যায্য, দক্ষ ও সক্ষম কর ব্যবস্থা গঠনের দিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যা শক্তিশালী নীতিনির্ধারণ ও দুর্নীতিমুক্ত কর প্রশাসন বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পূরণ এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে অপরিহার্য।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক ফাঁড়ির ইনচার্জ জানান, নিহতের ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
শাহরিয়ারের বন্ধুরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহরিয়ার ও তার দুই বন্ধু উদ্যানে বাইক চালানোর সময় আরেকটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে অপরপক্ষের কয়েকজন যুবক শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তারা জানান, হামলাকারীরা ঢাবির শিক্ষার্থী নন।
ঘটনার পর প্রক্টরিয়াল টিমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হাসপাতালে ছুটে যান। এদিকে শাহরিয়ারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে পদত্যাগের দাবি জানান। এ সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি মিছিল রাজু ভাস্কর্য পৌঁছলে শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে যায় আর উপাচার্য চলে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। উদ্যানে ঢুকে আন্দোলনকারীরা কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করেন এবং ভবঘুরে ও মাদকাসক্তদের সেখান থেকে বের করে দেন।
উপাচার্য হাসপাতালে গেলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে শাহরিয়ারের মুখ দেখতে বাধা দেন এবং তার পদত্যাগের স্লোগান দিতে থাকেন। পরে উপাচার্য বাসায় ফিরে যান। রাত তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও অন্যান্য শিক্ষকরাও হাসপাতালে উপস্থিত হন। এসময় আবার হাসপাতালে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
এদিকে উপাচার্যের বাসার সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন বলেন, গত ৯ মাসে ক্যাম্পাসে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অথচ প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এজন্য উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। বেলা ১১টায় তারা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে এবং বাকি অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর-কাঠালিয়া সড়কের বাজে সিন্ধুক খালের নড়বড়ে আয়রণ সেতুটি কোনো কারন ছাড়াই ভেঙ্গে পড়েছে। গতকাল ১০ মে শনিবার সন্ধ্যায় সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে যায়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়রা এর আগেই সেতুর নড়বড়ে অবস্থা দেখে গত ২৫ এপ্রিল স্বেচ্ছাশ্রমে সেতুর পাশে বাঁধ নির্মাণ শুরু করছেন। বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ না হতেই শনিবার সন্ধ্যায় সেতু ভেঙ্গে পরেছে। এতে ছয়টি ইউনিয়নসহ আমতলী, কলাপাড়া ও গলাচিপা উপজেলার অন্তত এক লাখ মানুষের চলাচলে কষ্ট হবে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর- কাঠালিয়া সড়কের বাজে সিন্ধুক খালে ২০১০ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ কোটি টাকা ব্যয়ে আয়রণ সেতু নির্মাণ করে। তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম মৃধা ওই সেতু নির্মাণ করেন। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদার সেতু নির্মাণ করায় পাঁচ বছরের মাথায় বীম ভেঙ্গে সেতু নডবড়ে হয়ে যায়। গত ১০ বছর ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে আমতলী, কলাপাড়া ও গলাচিপা উপজেলাসহ ছয় ইউনিয়নের অন্তত এক লাখ মানুষ ও যানবাহন চলাচল করেছে। বর্তমানে ওই সেতুটি চলাচলের সম্পুর্ন অনুপোযোগী হয়ে পরেছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সেতু নির্মাণে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে মানুষ ও যানবাহনের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে স্থানীয়রা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে গত ২৫ এপ্রিল স্বেচ্ছাশ্রমে সেতুর পাশের খালে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। গত ১৫ দিন ধরে ওই সেতুর পাশে বাঁধ নির্মাণ কাজ করে স্থানীয়রা। কাজ শেষ না হতেই শনিবার সন্ধ্যায় সেতু ভেঙ্গে পরেছে।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু সালেহ বলেন, স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে বাজে সিন্ধুক খালে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। গত ১৫ দিন ধরে কাজ চলছে। কাজ শেষ হতে না হতেই সেতু ভেঙ্গে পরেছে। এতে লাখো মানুষ ও যানবহানের চলাচলে কষ্ট হবে।
আমতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুল আলম মৃধা বলেন, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা ২০১০ সালে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বাজে সিন্ধুক খালে আয়রণ সেতু নির্মাণ করেছেন। গত পাঁচ বছর আগে ওই সেতু অত্যন্ত ঝুকিপুর্ণ হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ চিহিৃত করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সেতু দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতো। ওই সেতু চলাচলের একেবারেই অনুপোযোগী হয়ে যায় , যার ফলে গত ১৫ দিন ধরে এলাকাবাসী সেতুর পাশে বাঁধ নির্মাণ করছিল। কাজ শেষ না হতেই সেতু ভেঙ্গে পরেছে। ওই খালে সরকারীভাবে গার্ডার সেতু নির্মাণের দাবী জানান তিনি।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, সেতু ভেঙ্গে পরার খবর পেয়েছি। আগেই ওই সেতু ঝুকিপুর্ণ ছিল। ওই খালে গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে ।
মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিশ্বের সকল মা’কে শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ মা দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক বাণীতে বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মা’কে। আমি কামনা করি তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং অগ্রসর সমাজ বিনির্মাণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন কেটেছে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, ত্যাগ, নিরলস পরিশ্রম, জনগণের প্রতি মমতা ও অকৃত্রিম ভালবাসায়। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। বিএনপি’র শাসনামলে স্কুল থেকে ছাত্রীরা যাতে ঝরে না পড়ে তার জন্য দেশনেত্রী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আজকের এই দিনে নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা ‘গণন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’
মা দিবস একটি সম্মান প্রদর্শনজনক আন্তর্জাতিক দিবস উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই দিবস সমাজ ও পরিবারে মায়ের গুরুত্ব ও অবদানের জন্য উদযাপন করা হয়। এই দিবসে বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। মায়ের জন্য প্রতিদিনই সন্তানের ভালবাসা থাকে, তবু স্বতন্ত্রভাবে ভালবাসা জানাতেই আজকের এই দিন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘পরিবারে মা হচ্ছেন এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান। মহিয়সী মায়ের শিক্ষাতেই শিশুর ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। মা দিনের সব অবসাদ, ক্লান্তি ঘুচিয়ে সব সংগ্রামের মাঝেও সন্তানকে আগলে রাখেন। সুমাতার সাহচার্যে সন্তানের উৎকর্ষ ও প্রকৃত মানব-সত্ত্বার জাগরণ ঘটে, সন্তানের আত্মাকে করে নির্মল, স্বচ্ছ ও পবিত্র। বহু দেশ ও সংস্কৃতি মা দিবসের কর্মসূচি গ্রহণ করে এক অসাধারণ মাত্রা দিয়েছে। মাতৃত্বের প্রতি উৎসর্গিত এক অনন্য দিবস-মা দিবস। পৃথিবীর মধুরতম ডাক ‘মা’। ছোট এই শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা, আর পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃত্রিম ভালবাসা।’
তারেক রহমান বলেন, ‘শৈশব থেকে আনন্দ-বেদনা-ভয় কিংবা উদ্দীপনার প্রতিটি মানবিক অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। আজকের দিনে আমার প্রত্যাশা-সকল মা যেন তার সন্তানদের যোগ্য ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন। সন্তানকে নির্ভুল ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন কেবলমাত্র সুমাতা, যাতে জাতির আগামী ভবিষ্যত উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়।’
উল্লেখ্য পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সারা বিশ্বে দিনটি ‘বিশ্ব মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সেই হিসাবে আজ ‘বিশ্ব মা দিবস’। দিবসটি এমন একটি বিশেষ দিন, যে দিন সব মায়েদের এবং যারা মায়েদের মতো, তাদেরকে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সকল স্তরে সম্মান জানানো হয়।
দিবসটি উপলক্ষে আমাদের দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
‘বিশ্ব মা দিবসের’ ইতিহাস অনেক বছরের পুরনো। মধ্যযুগে এক চর্চা চালু হয়েছিল যে, যারা কাজের জন্য যেখানে বড় হয়েছেন, সেখান থেকে চলে গিয়েছেন, তারা আবার তাদের বাড়িতে বা মায়ের কাছে ও ছোটবেলার চার্চে ফেরত আসবেন। সেটা হবে খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব লেন্টের চতুর্থ রোববারে।
আধুনিক যুগে, মা দিবসের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে প্রতি বছরের মে মাসের ২য় রোববার পালিত হয় এ দিবসটি। যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামের এক নারী মায়েদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে, তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছরই তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করেন।
১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।
এই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এরপর নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন। সরকারকেও সাধুবাদ। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চাই। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র ও বিচার প্রশ্নে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখতে হবে। সারাদেশের ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে।’
গতকাল রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় রাত আটটার দিকে এ সভা শুরু হয়। সভা শেষে যমুনার সামনে রাত ১১টার দিকে ব্রিফিং করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদের লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান।
উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।’
‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।’
এর পাশাপাশি, ‘আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।’
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
রবিবার (১১ মে) সারা দেশের সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ চমকানোরও সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া, রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী এলাকার সকাল ৭টা থেকে পরের ৬ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ (রবিবার) দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। ঢাকার আকাশ এ সময় পরিষ্কার থাকবে। পাশাপাশি পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। তবে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
এদিকে গতকাল (শনিবার) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন চাঁদপুরে ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
তবে রবিবার (১১ মে) ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর ও জম্মুতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির দাবি, ‘পাকিস্তান বারবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তারা হামলা চালিয়েছে, পরে ভারতীয় সেনারা তার জবাব দিয়েছে।’
নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘চুক্তি লঙ্ঘনের এই কার্যকলাপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও পরিস্থিতির মোকাবেলায় যথাযথ গুরুত্ব ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করার জন্য আমরা পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাই।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে তারা ‘পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় চিরবৈরি এই দুই প্রতিবেশি দেশ।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পরবর্তীতে দুপক্ষই একে অপরের কূটনীতিক ও নাগরিকদের নিজেদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এরপরই গত ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে পাকিস্তানে অন্তত ৩৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানায় দেশটির সরকার। আবার পাকিস্তানও পাল্টা অভিযান ঘোষণা করে। পাকিস্তানের হামলায় ২১ ভারতীয় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।
এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।
শনিবার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতে দীর্ঘ আলোচনার পর তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান।’
পরে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। প্রায় তিন ডজন দেশের কূটনৈতিক সহায়তায় এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষই শত্রুতা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও একে বৃহত্তর স্থিতিশীলতার পথে একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, নিরপেক্ষ জায়গা থেকে এক গুচ্ছ বিস্তৃত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছে দুই দেশ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের শাহবাজ শরিফসহ দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গেল ৪৮ ঘণ্টা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও মার্কো রুবিও।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, এটি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকবে।
মন্তব্য