সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের আগামী ২৩ মের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে হবে।
শনিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) মনিষ চাকমার সই করা বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থীকে আসল সনদসহ অনলাইনে আবেদনের আপলোড করা ছবি, আবেদনের কপি, লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র, নাগরিকত্ব সনদ, স্থায়ী ঠিকানার স্বপক্ষে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ পোষ্য সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কমপক্ষে নবম গ্রেডের গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত করে ২৩ মের মধ্যে অফিস সময়ে স্ব স্ব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অবশ্যই জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র নিতে হবে।
আরও বলা হয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সব সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি জমা দেয়ার সময় সেসব কাগজপত্রের মূলকপি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে দেখাতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের ২৩ মের মধ্যে এসব কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের মৌখিক পরীক্ষার কার্ড ইস্যু করা হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবেও বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া বলা হয়, সব সনদপত্র, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ও অন্য কাগজপত্রের মূল কপি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার সময় সঙ্গে আনতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার তারিখ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dpe.gov.bd) প্রকাশ করা হবে।
গত ১২ মে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২০-এর প্রথম পর্বে ২২ জেলার লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৪০ হাজার ৮৬২ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়।
সাবেক শিক্ষা সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সোলেমান খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে শিক্ষা সচিব ছিলেন সোলেমান খান। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়। পরিকল্পনা কমিশন সদস্যের পদটি সচিব পদমর্যাদার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোলেমান খানের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং সরকার জনস্বার্থে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেয়া প্রয়োজন বলে বিবেচনা করে। তাই সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় দেয়া ক্ষমতাবলে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেয়া হল। তিনি বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধা পাবেন।
সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী সরকার যে কাউকে কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরি থেকে অবসরে পাঠাতে পারে। তবে তার আগে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে আরও কয়েকজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে গত ১৫ বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চাকরি প্রার্থীর চৌদ্দ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে দেখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের আগে নানাভাবে তাদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। নিয়োগ প্রার্থী কোন দলের, তার বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের তা খবর নেয়া হয়েছে। দুই লাখ পুলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্য এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে তো বলতে পারি না গো হোম (বাসায় ফিরে যাও)। তবে যারা দুষ্টু, যারা পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে, তখন ঢাকা শহরে ডাকাতি, লুটপাট শুরু হয়। তখন ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি নিয়ে পাহারা দিয়েছেন। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর সদ্যবিদায়ী ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যরা পুলিশকে সক্রিয় করতে কাজ শুরু করেন।’
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। এই শহরে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অটোরিকশা যদি বন্ধ না হয় তাহলে ঢাকা শহরের ঘর থেকে বের হলে আর হাঁটার জায়গা থাকবে না। মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তবে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বিগত সরকার অটোরিকশার অনুমতি দেয়ার কারণেই বাড়ছে অটোর সংখ্যা। অচিরেই এটি কমানো না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে নগরবাসীকে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।’
রাজধানীতে ইদানীং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নগরবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ আসছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে যাতে রোধ করা সম্ভব হয়।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি ঢাকাসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ওই সময়ের অপেশাদার আচরণের কারণে বদলি ও দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:পদোন্নতি পাওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা তার ছিল না। অবৈধ উপায়ে পদ বাগিয়ে দফায় দফায় শুরু করেন নানামুখী দুর্নীতি। বিগত কয়েক বছর ধরেই খেয়াল-খুশিমতো বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। পদে পদে তার স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা।
আলোচ্য ব্যক্তিটি হলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিজ জেলাতেই ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করা খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম।
১৯৯৭ সালের ২৮ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন শেখ অহিদুল আলম। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পান তিনি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদ থেকে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য ১৯৮৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক গেজেটে কিছু যোগ্যতার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ওই গেজেটের ৩২ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ দ্বিতীয় শ্রেণীর বিএড ডইগ্র অথবা ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন ডিগ্রি থাকতে হবে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে চলতি বছরের আগস্ট মাসে শেখ অহিদুল আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন।
তদন্তকালে শেখ অহিদুল আলম চাহিদা অনুযায়ী বিএড সার্টিফিকেট দিতে পারেননি। তার বদলে ২০০২ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে পাস করা এমএড সার্টিফিকেট দাখিল করেন।
তবে বিএড ও এমএড ডিগ্রি সমমান নয় বলে জানিয়েছেন বাউবির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. মোহসীন উদ্দিন। গত ২৮ আগস্ট তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বিএড ডিগ্রির বিকল্প হিসেবে এমএড ডিগ্রিকে বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে গত ২০ অক্টোবর বাউবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. হাবিবুল্যাহ মাহমুদ তদন্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বিএড ডিগ্রি অর্জনের জন্য শ্রেণীকক্ষে ৯০টি অনুশীলনী পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের দক্ষতা, শিক্ষার্থী মূল্যয়নের দক্ষতা, শ্রেণী ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের ধারণা অর্জনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
একইসঙ্গে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের প্রাক-যোগ্যতা অর্জনের জন্য পরিসংখ্যানগত ধারণা, শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা দর্শনের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের কিছু বিষয় যুক্ত থাকে। কিন্তু এমএড ডিগ্রি প্রোগ্রামে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জনের কোনো সুযোগ নেই।
তবে বিএড ডিগ্রি নেই এরূপ শিক্ষার্থীদের এক সেমিস্টার পূর্ব-প্রস্তুতিমূলক চারটি কোর্স সম্পন্ন করে এমএড ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ ২০০০ সালে এমএড শিক্ষাক্রমে ছিল। এজন্য এমএড প্রোগ্রামকে বিএড-এর বিকল্প বিবেচনার সুযোগ নেই।
এছাড়া ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৫৮ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিএড বা ডিপ্লোপা ইন এডুকেশন ডিগ্রি না থাকায় তাদের পদোন্নতি দেয়নি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তদন্তের সত্যতা জানিয়ে মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমি গত ২৪ অক্টোবর অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) চলে এসেছি। তাই তদন্তের সব কাজ শেষ করে আসতে পারিনি। বাকি কাজটুকু বর্তমান উপ-পরিচালক সম্পন্ন করবেন।’
তবে খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো মানতে নারাজ। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এমএড ডিগ্রি থাকলে বিএড আছে কিনা এটা কোনো বিষয় না। আমাদের ব্যাচে ১৩৭ জনের একযোগে পদোন্নতি হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে দেখেন সেখানে কতজনের বিএড ছিল না। আমার বিএড-এর থেকেও উচ্চতর এমএড ডিগ্রি তো আছেই। তাই আমার পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।’
শিক্ষক বদলিতে স্বেচ্ছাচারিতা
শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল একযোগে ১৭ জন শিক্ষকে বদলি করেন। তবে পরবর্তীতে অনলাইনে শিক্ষকরা দেখতে পান যে তাদের বদলি আদেশে আন্তঃজেলা বদলির নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেন। একইসঙ্গে খোদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা ওই শিক্ষকদের বদলির আদেশ বাতিলের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে তিনি নামমাত্র একটি সুপারিশ কমিটি করে তাদের বদলি বহাল রাখেন।
৩ জুন অধিদপ্তর বরাবর পাঠানো চিঠিতে অহিদুল আলম উল্লেখ করেন, যেহেতু অনলাইনে তাদের বদলির আদেশ অনুমোদন হয়ে গেছে, তাই এই আদেশ বহাল রাখা যায়।
ওইসব শিক্ষক জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ জারিকৃত পত্রে চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকদের বদলিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ১৭ জনের মধ্যে চারজন প্রধান শিক্ষককেও বদলি করা হয়েছিল। এটা তিনি করেছিলেন পছন্দের ব্যক্তিদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বানানোর জন্য।
প্রতিবাদ করলেই শাস্তি
এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যারা শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের একজন বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়।
তিনি জানান, ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পিআরএল-এ যাওয়ার দিন তাকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে লঘুদণ্ড দিয়ে বেতনের এক ধাপ অবনমিত করা হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল আলমের সঙ্গে মতের মিল না হলেই বিপদে পড়তে হয়। তিনি ২০১২ সালে এক মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়ে ২৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন।
একই জেলায় ১৪ বছর
শেখ অহিদুল আলম ইতোপূর্বে খুলনা সদর থানার শিক্ষা অফিসার পদে তিন বছর, খুলনা বিভাগীয় অফিসে ছয় বছর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে তিন বছর কর্মরত ছিলনে।
২০২৩ সালের ২০ জুন আবারও খুলনাতে তার বদলি হয়। সে সুবাদে তিনি খুলনাতেই প্রায় ১৪ বছর কর্মরত রয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনাতেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডাটাবেইজের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, শেখ অহিদুল আলমের স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের উল্লেখ রয়েছে। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া গেছে খুলনা সিটি করপোরেশনের দৌলতপুরের কালিবাড়িতে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ অহিদুল আলম খুলনার বিএল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তার শ্বশুরবাড়ি দৌলতপুরের কালিবাড়িতে। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। স্থানীয় সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে আঁতাত করেই তিনি দীর্ঘদিন খুলনায় থাকার সুযোগ পেয়েছেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শেখ অহিদুল আলম বলেন, ‘একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা নানারকম ষড়যন্ত্র করছে।’
আরও পড়ুন:বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইনডেক্সধারী সব শিক্ষকই বদলির সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা খুব শিগগির এমন সুখবর পাবেন।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের শূন্যপদের বিপরীতে সর্বজনীন বদলি নিয়ে কাজ করছি। আজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব শিক্ষককেই বদলি করা সম্ভব।’
শূন্যপদে বদলির প্রজ্ঞাপন জারিতে দেরির কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে বেসরকারি শিক্ষকদের সর্বজনীন বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি। প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে বদলির আওতায় আনা খুব সহজ ব্যাপার নয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত পাওয়া গেছে।’
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার আবেদন ফিসহ সব ধরনের চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব কমিটির সভা শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
সিনিয়র সচিব জানান, বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। আর বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির আবেদন ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া সরকারি, আধাসরকারি, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠান চাকরির আবেদনে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারবে।
এদিকে, গত ২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে আবেদন ফি আগের মতো ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত প্রার্থী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য আবেদন ফি ধরা হয় ১০০ টাকা। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পর আবেদন ফি কমানোর ঘোষণা দেয় পিএসসি।
৪৭তম বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের ২০১টি পদে নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় শুরু হবে আবেদন। তা চলবে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এবার সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩২ বছর বয়সিরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:সরকারি চাকরিতে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ পদ খালি রয়েছে।
এসব পদ পূরণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনার চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান ২০২৩ অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের অনুমোদিত শূন্য পদের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) ৪৭তম বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে ৩ হাজার ৬৮৮টি শূন্য পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
বিপিএসসি শুধু প্রথম শ্রেণি নন-ক্যাডার এবং সীমিত পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ করে থাকে। সরকার থেকে অনুমোদিত অন্যান্য পদগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধীনস্ত দপ্তর/সংস্থা/করপোরেশন/কোম্পানি থেকে পূরণ করা হয়ে থাকে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্ব লাঘবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে বিপুলসংখ্যক শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও তা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধীন দপ্তর/সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতে অনুমোদিত শূন্য পদগুলো বিধি মোতাবেক পূরণের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় চিঠিতে।
শূন্য পদ পূরণে এরই মধ্যে কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব তথ্য ওয়ার্ড ফাইলসহ চিঠি পাওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
আরও পড়ুন:৪৭তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এতে তিন হাজার ৪৮৭ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হবে। তাছাড়া নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হবে ২০১ জনকে। সর্বমোট শূন্যপদের সংখ্যা তিন হাজার ৬৮৮।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় আবেদন শুরু হবে। আর আবেদনের সময়সীমা শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টায়।
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাসের সই করা বিজ্ঞপ্তি বৃহস্পতিবার বিকেলে সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমানও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এ ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে এক হাজার ৩৩১ এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৩০টি শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য ক্যাডারের পর সবচেয়ে বেশি ৯২৯টি পদে নিয়োগ দেয়া হবে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে। তাছাড়া প্রশাসন ক্যাডারে ২০০টি, পররাষ্ট্রে ১৫, পুলিশে ১০০, তথ্যে ৪৩, কৃষিতে ১৬৮ ও কর ক্যাডারে ১০৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
আবেদনের সময়সীমা ও প্রার্থীর বয়স
৪৭তম বিসিএসে আবেদনপত্র পূরণ ও ফি জমাদান শুরু হবে ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায়। আবেদনপত্র জমাদানের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট। আবেদনপত্র জমা দেয়া প্রার্থীরা ৩ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ফি পরিশোধের সুযোগ পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর বয়সের বিষয়ে বলা হয়েছে, ১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সব প্রার্থীর বয়স ২১ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে। তাছাড়া প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করলে বা বিয়ে করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকলে তিনি আবেদনের অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
মন্তব্য