গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ২২ ফুট প্রস্থের ছোট এক খালে নির্মিত হচ্ছে ৭৪ ফুট গার্ডার ব্রিজ। এদিকে ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দরখাস্ত দিয়েছে এলাকাবাসী।
অভিযোকারীরা জানান, পবনার পাড় গ্রামে গ্রামীণ সড়কে ব্রিজ নির্মাণের জন্য পাইল তৈরিতে রিং কম দেওয়াসহ নানা অনিয়ম হয়েছে ও পাইলের অর্ধেক মাটিতে পুঁতে বাকি অর্ধেকে পাইলের রড কেটে বিক্রি করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প (২য় সংশোধিত) এর আওতায় উপজেলার মান্দ্রা খেয়াঘাট থেকে বাপার্ড জাঠিয়া সড়কের ৬ হাজার ৫০ মিটার চেইনেজে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২২ ফুট প্রস্থের পবনাড় পাড় খালে ৭৪ ফুট (২২ মিটার) আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মেসার্স সৌরভ ট্রেডার্স।
নির্মীয়মাণ ব্রিজের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এলাকাবাসী বারবার উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে অভিযোগ জানানোর পরও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় অভিযোগ দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিজ নির্মাণে কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন নির্মীয়মাণ পাইলিং থেকে রড খুলে বিক্রি করে দিচ্ছে। পাইল তৈরিতে নেওয়া হয়েছে দুর্নীতির আশ্রয়। পাইলে নিম্নমানের পাথর, অর্ধেক পরিমাণ রিং ও পরিমাণের চেয়ে কম সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাইল। যে কারণে মাটির নিচে অর্ধেক পাইল ঢুকতেই পাইলের বাকি অংশ ভেঙে পড়ছে। পরবর্তীতে ঠিকাদারের লোকজন বাকি অর্ধেক পাইলের রড কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে।
দুর্নীতির নির্মাণাধীন ব্রিজসংলগ্ন বাসিন্দা মফিজুল বলেন, মানুষের হাঁটা-চলাচলের জন্য জাঠিয়া থেকে রাধাগঞ্জ গ্রামীণ এলাকায় শৈলদা নদীর পাড়ে মাটির রাস্তা হচ্ছে। সেই রাস্তাটিতে ৬টি সরু খালে ব্রিজ নির্মাণ করছে এলজিইডি। পবনার পাড়ের ২২ ফুট খালটিতে এলজিইডি ২২ মিটার (৭৪ ফুট) ব্রিজ নির্মাণ করছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে। ছোট এই খালে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার এক একটি কালভার্ট দিলেই হতো সেখানে ৩ কোটি টাকার বিশাল গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে কখনও বাস গাড়ি চলাচলের সুযোগ নেই। তাহলে এত বড়ো ব্রিজ কাদের স্বার্থে? অন্যদিকে এই ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এলজিইডি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাজে ব্যাপক অনিয়ম করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ব্রিজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. মুরসালিন সৌরভের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।
এদিকে কাজের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে পবনার গ্রামের মামুন শেখ বলেন, গত বছরের ১৬ অক্টোবর এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে। অথচ নির্মাণ কাজের ১০ ভাগ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
কাজের অনিয়মেয়র বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আজম বলেন, ব্রিজের পাইল থেকে রড কেটে নেওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে। ব্রিজের নির্মাণ মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, ব্রিজের অনিয়মের অভিযোগটি উপজেলা প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
এলজিইডি গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দিয়েছে আদালত। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানা পুলিশকে।
সোমবার ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান জানিয়েছেন।
এদিন চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেয় আদালত।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানা পুলিশকে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা দেশ ও জনগণের শত্রু, কেউ যদি ভেবে থাকেন, এসব করে নির্বাচন বিলম্বিত বা ঠেকানো যাবে বা ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনা যাবে, তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে ওরা খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে।
তিনি সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌর শহরের জয়িতা মহিলা মার্কেট চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ইউনিটের হালুয়াঘাট নিবাসী অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানান। যোগদানকারীরা এমরান সালেহ প্রিন্সকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী, হতেই হবে। অন্যথায় দেশ মহা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। নির্বাচনকে সফল, সার্থক ও অর্থবহ করতে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচনবিরোধী শক্তির মুখোশ উন্মোচন করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা কোনো কিছু ঘটা মাত্রই বলে, ‘নির্বাচনের পরিবেশ নোই’, তাদের ভিন্ন মতলব আছে। আসলেও তারা নির্বাচন চায় না। আওয়ামী লীগের মতো তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পায়। নিজেদের ভরাডুবির আশঙ্কায় এবং বিএনপির অবশ্যম্ভাবী বিজয় ঠেকাতে কিছু দল অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের মালিক মোকতার সেজে রেজিস্ট্রেশন ও মার্কা বিহীন দলের নেতারা যখন জিয়া পরিবারকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয় , তখন পাগলও হাসে। জিয়া পরিবারের সাথে বিএনপি ও জাতির আবেগ জড়িত। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জিয়া পরিবারের কয়েকজন ক্ষমতায় যাবে, একথা বলে বিএনপি ও জাতির আবেগে আঘাত করা হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়া পরিবার এই দেশ ও জাতিকে যা দিয়েছে, ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ক্ষমতার জন্য জিয়া পরিবার লালায়িত নয়। নিজেরা লাভবান নয়, জিয়া পরিবার দেশ ও জনগণ লাভবান, ক্ষমতাবান করার রাজনীতি করে। স্বাধীনতার পর যা কিছু ভালো, কল্যাণকর, তার অধিকাংশই জিয়া পরিবারের হাত ধরে এসেছে। জিয়া পরিবার বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটের অধিকার, জনগণের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান তৈরি করেছে, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি দলে যোগদানকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামি ফ্যাসিবাদের নির্মম ও চরম দমন নিপিড়নের মুখে আন্দোলন যখন স্থবির হয়ে পড়ছিল, তখন তারেক রহমান ও বিএনপি গণঅভ্যুত্থানে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
সকল শ্রেণি পেশার ও রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করা বিএনপির প্রায় সাড়ে চার শতাধিক নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের একক দাবিদার সেজে আওয়ামী লীগ যেমন নিজেদের মতো মুক্তিযুদ্ধের বয়ান তৈরি করত, এখন গণঅভ্যুত্থানের একক দাবিদার সেজে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের একাংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অভ্যুত্থান নিয়ে নিজস্ব বয়ান দেওয়া শুরু করেছে। বিএনপিকে অভ্যুত্থানের বিপক্ষে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এসব কারণে ছাত্র অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে নেতা-কর্মীরা পদত্যাগ করছেন, কিংবা বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন।
উপজেলা ছাত্র দলের আহ্বায়ক ও জেলা ছাত্র দলের সিনিয়র সহসভাপতি নাঈমুর আরেফিন পাপনের সভাপতিত্বে ও পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নূরে আলম জনির সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, সাবেক ছাত্র নেতা আসাদুজ্জামান আসিফ, সদস্য সচিব তাজবীর হোসেন অন্তর, উপজেলা ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম আর আল আমিন, যোগদানকারীদের পক্ষে ময়মনসিংহ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন রতন, সোহাগ মিয়া, রাকিব খান, হালুয়াঘাট উপজেলা এনসিপির সদস্য নাসির উদ্দিন বাপ্পী উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে জনগণ। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এই দেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে একে অপরের সুখ-দুঃখে পাশে থাকে। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ এখন অনেক সচেতন, তারা এসব ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।’
গত রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল মহানগরীর কাউনিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসবে অংশগ্রহণ করে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে হাজারও ভক্তের অংশগ্রহণে দীপাবলি উৎসবটি পরিণত হয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মিলনমেলায়।
এ সময় রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য একটি মহল পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি নেতা-কর্মী ও দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে পাহারার মধ্য দিয়ে উৎসবের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছে। জনগণই অপকৌশলকারীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো একটি কুচক্রী মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে। যারা এসব অপকর্মে জড়িত, তারা শুধু একটি ধর্মের নয়- তারা পুরো জাতির শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু। বিএনপি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।’
রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ব, যেখানে সব ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই হবে আমাদের লক্ষ্য।’
দীপাবলি উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা, ধর্মীয়, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, মহানগর বিএনপির সদস্য জাহিদুর রহমান রিপন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তারিক সুলাইমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন টিটু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন চৌধুরী, নগর স্বাধীনতা ফোরামের সদস্য সচিব নাজমুস সাকিব, নগর ছাত্রদলের সহসভাপতি ওবায়দুল ইসলাম উজ্জ্বলসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উৎসব শেষে আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণে আলো প্রজ্জ্বলন করেন এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের আহ্বান জানান।
বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলেদের অভিযোগ তাদের নাম তালিকায় থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ভুক্তভোগী শতাধিক জেলে সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় ৬ হাজার ৯৬৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। গত ৪ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি করে বিশেষ ভিজিএফ চাল বরাদ্ধ দিয়েছেন সরকার। ওই চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা চাল বিতরণে নিবন্ধিত জেলেদের চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলার ৬ হাজার ৯৬৯ জন জেলেদের মধ্যে চাওড়া ইউনিয়নে ৬৪২ জন তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছেন। গত রোববার ওই জেলের মধ্যে ৩০০ জেলেকে চাল দিয়ে অবশিষ্ট চাল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগ জেলে ফরিদা বেগম. আম্বিয়া বেগম ও মামুন শরীফের। চাল না পেয়ে সোমবার দুপুরে অন্তত শতাধিক জেলে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন উপজেলা কৃষি অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, উপজেলা মেরিন ফিসারিজ কর্মকর্তা অলিউর রহমান ও উপজেলা ফ্যাসিলেটেটর মাইনুল ইসলাম। জেলে মোতালেব, নুর মোহাম্মদ, জুয়েল, আনোয়ার, সুনিল চন্দ্র ও কেরামত আলী আকন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি তালিকাভুক্ত অর্ধেক জেলেদের চাল দিয়েছে। অবশিষ্ট জেলেদের চাল দেয়নি। তারা আরও বলেন, আমরা চাল আনতে গিয়ে ফেরত এসেছি। চেয়ারম্যান আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন আমরা চাল পাব না। তারা আরও বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন ডান হাত-বাম হাত দিয়ে টিপসহি দিয়ে চাল বিতরণের তালিকা প্রস্তুত করেছেন।
চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হারুন বয়াতি বলেন, ‘মাস্টার রোল তৈরি করেই চাল বিতরণ করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যে জেলেরা অভিযোগ করেছেন তারা তালিকাভুক্ত জেলে নয়।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাসেল বলেন, ‘কমিটির গঠনের চিঠি পাইনি। চিঠির মর্মানুসারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার বলেন, ‘জেলেরা চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আমার দপ্তরে এসেছিল। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন উপজেলা কৃষি অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলার নিবন্ধিত ৬ হাজার ৯৬৯ জন জেলের জন্যই চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজবাড়ী কার্যালয়। সেখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুদক অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ী বিআরটিএর কতিপয় অসাধু কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে একই চক্র ফের তাদের কার্যক্রম আগের মতই চালিয়ে যাচ্ছে। চাহিদামতো অর্থ ছাড়া এখানকার কোনো ফাইল নড়ে না। সেবাগ্রহিতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। টাকা নেওয়ার পরও কাজ না হলেও ফেরত দেওয়া হয় না কোনো অর্থ। প্রতিবাদ করলেই দালালদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় । এ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। তবে প্রশাসনের চোখে পড়ে না এসব অনিয়ম-দুর্নীতি।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর মো. আক্রামুজ্জামান কাছে টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকার মো. সুমন শেখ।
মো. সুমন শেখ অভিযোগ করে বলেন, এক বছর আগে কাগজের জন্য সাড়ে আট হাজার টাকা জমা দেই আকরাম হোসেনের নিকট। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার কাগজ নিতে বিআরটিএতে আসলে আক্রামুজ্জামান আমার কাছে ব্যাংক স্লিপ চায়। এ সময় এক বছর আগের স্লিপ, আপনার কাছে জমা দিয়েছি, এখন কোথায় পাব, বললে থাপ্পর মারে। এ সময় প্রতিবাদ করলে আকরাম হোসেনসহ তার সাথে থাকা ৪-৫ জন এলোপাথারীভাবে মারধর শুরু করে। টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে এভাবে মারতে পারে না। আমি এর বিচার চাই।
মো. বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভারী থেকে হালকা করার জন্য আকরাম হোসেন ৮ হাজার টাকা দাবি করে। তাকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করার পরও আজ ২ বছর ধরে আজ-কাল করে ঘোরাচ্ছে।
জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে গত ৭ মে অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অভিযানে দালাল চক্রের মূলহোতা রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার কাজীবাঁধা বেথুলিয়া গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আক্রামুজ্জামান, দালাল চরলক্ষীপুর
গ্রামের আব্বাস আলী খানের ছেলে আশিক খান, গোপিনাথদিয়া গ্রামের রহমত আলীর ছেলে লিয়াকত আলী, কাজীকান্দা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মুনছুর আহমেদকে গ্রেপ্তার করে। এ অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো, মোস্তাফিজ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ বলেন, রাজবাড়ী বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর আকরামুজ্জামানের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৮০ টাকা, দালাল আশিক খানের কাছ থেকে ৩৩ হাজার ১শত টাকা, দালাল লিয়াকত আলীর কাছ থেকে ১৪ হাজার ২শত ৪০ টাকাসহ মোট ৭২ হাজার ৪শত ২০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের কতিপয়
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ড্রাইভিং লাইসেন্সসেবা
নিতে আসা গ্রহিতাদেরকে নানাভাবে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে। টাকা ছাড়া কেউ লাইসেন্স করতে পারে না। আর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের নেতৃত্বে লিয়াকত আলী জেলার প্রতিটি এলাকায় দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এ সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসলেও তাদেরকে ফেল করানো হয়। ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।
একজন লাইসেন্স সেবাগ্রহিতা বলেন, ৩বার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেই। তিনবারই ফেল করানো হয়। পরে একজন দালাল আমার নিকট থেকে ১৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন প্রায় দেড় বছর যাবৎ ঘুরছি। আমার কাজও করে না, আবার টাকাও ফেরত দেয় না। টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়।
এদিকে, সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামান রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা এলাকায় গড়ে তুলেছেন দ্বিতীয় তলা জমিসহ আলিশান বাড়ি। জাপানি টয়োটা প্রাইভেটকার, সজ্জনকান্দায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় কেনা দ্বিতল ভবনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অভিযুক্ত রাজবাড়ী বিআরটিএর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রাজবাড়ী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আক্রামুজ্জামান বিআরটিএর কেউ নয়, তিনি একজন বহিরাগত।
সেবাগ্রহিতাকে মারধরের বিষয়টি এডিএম স্যার আমাকে অবগত করেছেন। আমি বাইরে আছি, পরে কথা বলবো।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবকের হাতে গণধর্ষণের অভিযোগে বিচারের দাবিতে ও স্থানীয় প্রথাগত বিচারের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
সোমবার বিকেলে রাঙামাটি শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, ৩৫ কাঠুরিয়া স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন, পিসিএনপি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের চংড়াছড়ি মুখ এলাকায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবক— অনুচিং মারমা (৫০), কালা মারমা (৫৫) ও মং উ মারমা (৩৫)—মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের ফলে ওই নারী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় প্রথাগত রীতিতে অনুষ্ঠিত সামাজিক বিচারে অভিযুক্তদের ভিকটিমের জন্য ৩ লাখ টাকা ও সমাজের নামে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, একই বিচারে ভিকটিমকেও ‘সমাজের নিয়ম ভঙ্গের’ দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা সম্পূর্ণ অবিচার।
পিসিসিপি সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন,
‘এই বাচ্চার দায় কে নেবে? এই বাচ্চার অভিভাবক কে হবে? প্রভাবশালী একটি আঞ্চলিক দলের নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকা থাকায় ভিকটিম পরিবার ভয় ও আতঙ্কে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন,
‘এটি পাহাড়ে সামাজিক বিচারের নামে নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহ উদাহরণ। অপরাধীদের অর্থদণ্ড দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া কোনো বিচার নয়, এটি অবিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় পাহাড়ের প্রভাবশালী সংগঠনগুলো—জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফ—কেউই কোনো নিন্দা জানায়নি। অথচ, কোনো বাঙালির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এসব সংগঠন সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন ও প্রচারে নামে। এই দ্বিমুখী নীরবতা প্রমাণ করে, পাহাড়ে মানবাধিকারের প্রশ্নটি অনেক সময় রাজনীতির ছায়াতলে চাপা পড়ে যায়।’
বিক্ষোভ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও প্রতিবন্ধী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।
মুমূর্ষু হৃদরোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানে সুযোগ না থাকা কার্ডিওলজি বিভাগের কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণ এখন দৃশ্যমান। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) দুরবস্থার অবসান ঘটিয়ে ওয়ার্ডটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর আধুনিক সিসিইউ বিভাগ উদ্বোধন করেন।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল দোতলা বিশিষ্ট আইসিও নতুন ভবন উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয় করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বিভাগ। ৩৩ বছর আগে শুরু হওয়া ইউনিটটি দীর্ঘ সময় ধরে দুরবস্থা ছিল। সেই সময় থেকে শের-ই বাংলা মেডিকেলের সিসিইউ বিভাগে সরকারি খাতা কলমে মোট ৮টি শয্যা থাকলেও পরে তা ১২টিতে উন্নীত করা হয়। শয্যা সংকটের কারণে রোগীরা মেঝেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন। হাসপাতালের মূল ভবন থেকে আলাদা ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তরের পর ৮টি শীতাতপ মেশিন স্থাপন করা হয়। বছর দুয়েক পর সবগুলো বিকল থাকায় অসহ্য গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে শুরু করে রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্সদের অসহযোগিতা ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্ধতা চরমে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন পর শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে চালু হলো। এটি বরিশালের মানুষের বহুদিনের দাবি পূরণ করেছে। বর্তমান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মশিউল মুনীরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল। সোমবার হাসপাতালের আই ব্লকে আইসিইউ ভবনের ২য় তলার পশ্চিম পাশে আধুনিক সিসিইউ বিভাগ উদ্বোধন শেষে হাসপাতালের ৪র্থ তলার সার্জারি সেমিনার হলে সভা অনুষ্ঠিত হয়। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীরের সভাপতিত্বে সভায় সিসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. অসিম বিশ্বাস জানান, হাসপাতাল পরিচালক স্যারের একান্ত প্রজেক্ট অনুযায়ী আধুনিক মানে নতুন করে হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিট সাজানো হয়েছে। এখানে নতুন করে আধুনিক মানের ২৪টি বেড রাখা হয়েছে। প্রতিটি বেডের সাথে কার্ডিয়াক মনিটর, অক্সিজেন, সেন্ট্রাল এসি, ৪টি নতুন টয়লেট নির্মাণ, দেয়ালের পলেস্তারা ঠিক করাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। সভায় সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. মুনজিবা শিরিন বলেন, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আধুনিকায়ণের রূপকার আমাদের পরিচালক স্যার। রোগীদের প্রযাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে তিনি একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি আধুনিক মানের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও হেমাটোলজি ল্যাবরেটরি বিভাগ এবং অটো মেশিন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আজ উদ্বোধন করা হলো আধুনিক সিসিইউ বিভাগ। আমরা পরিচালক স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সভায় পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, আজ আমাদের একটি আনন্দের দিন। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আধুনিক সিসিইউ বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই বিভাগের রোগীদের আর গরমে কষ্ট করতে হবে না।
সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এখানে সকল সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। সিসিইউ বিভাগটি আধুনিকায়ন করার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান। সিসিইউ বিভাগ আধুনিকায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. একেএম নজমূল আহসান, সিসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. অসিম বিশ্বাস, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মাদ মাহামুদ হাসান, কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. এ বি এম ইমাম হোসেন (জুয়েল), ডা. মো. মাহামুদুল হাসান, ডা. মো. আফজাল হোসেন, বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম খসরু, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, মো. নাসিমুল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, এবং ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
মন্তব্য