আমাগো কষ্ট দেহনের কেউ নাই। জীবনডা কষ্ট করেই পার করলাম। বেশ আক্ষেপ ও চাপা কষ্ট নিয়ে প্রায় বছর দুয়েক আগে কথাগুলো বলেছিলেন মাঝি সুজন শেখসহ মজলিশপুর চরাঞ্চলের মানুষ।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের শেষ সীমনা ৯ নং ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত দূর্গম চরাঞ্চল মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর যাত্রী পারাপারে পদ্মার মাঝি সুজন শেখ, স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান শেখ, জহিরুল শেখসহ অনেকেই খুব কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন।
তারা বলেন, বছরের প্রায় ছয়মাস পানিতে ভরে থাকে মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামটি। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তবে অনেকেই আবার নানান পেশার সাথে জড়িত। কেউ পদ্মার বুকে মাছ ধরে সংসার চালান। শহরের সাথে তেমন ভালো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই গ্রামটির। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য আনা-নেয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার চিপা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয় এলাকার প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষের। শুকনা মৌসুমে ওই রাস্তায় কম-বেশি ভ্যান-রিক্সা চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচল তো দূরের কথা ঘোড়ার গাড়ী চলাচলেও বড় মুশকিল হয়ে পরতো। সবচেয়ে বড় অসুবিধায় পরতে হয় বর্ষা মৌসুমে। তখন ওই চিপা রাস্তা দিয়ে খালি পায়ে হাঁটায় মুশকিল। শহরের সাথে একমাত্র যোগাযোগের জন্য যে রাস্তাটা রয়েছে সেখানে একটা জায়গায় প্রায় হাফ কিলোমিটার রাস্তা নিচু থাকায় বর্ষা মৌসুমে ওই রাস্তা দিয়ে পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। তবে এবার ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় কষ্ট লাঘব হয়েছে চরবাসীর।
এলাকার বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা হলে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন, বছর দুয়েক আগেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের অনেক কষ্ট করে নদী পার হওয়া লাগতো। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা বছরের প্রায় অর্ধেক মাস পানিতে ভরে থাকে। ফসল আনা-নেওয়া করতে নৌকা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। এই হাফ কিলোমিটার জায়গায় চলাচলের জন্য সুন্দর একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে সরকার। আমরা এখন খুব খুশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামে প্রবেশ করতে হাফ কিলোমিটার রাস্তায় চওড়া একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজ হওয়ায় এখন আর আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
স্থানীয় চর দৌলতদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনাময় চর এটি। এ চরে মৌসুমীভিত্তিক সব ধরনের ফসল খুব ভালোই উৎপাদন হয় কিন্তু যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পেত না। এর আগে ব্রিজের জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে ব্রিজটি নির্মাণ করেন সরকার। এখন কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই খুব সহজে এলাকার মানুষ চলাচল করতে পারছে।
উজানচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য শেখ রাসেল আহম্মেদ জানান, এ অঞ্চলের মানুষের নদীর সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয়। এখন চরাঞ্চলের মানুষ রিকশা, ভ্যান, অটো এমনকি বড় বড় যানবাহনে তাদের কৃষি পন্য খুব সহজেই আনা নেয়া করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ হওয়াতে স্বস্তির নিঃশ্বাস পেয়েছে চরবাসী।
বাড়িভাড়ার ৫ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পরপরই এ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতার প্রজ্ঞাপন আমাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়। কিন্তু ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে রোববার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় শহিদ মিনারে ৮ম দিনের মতো অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে দুপুর ১২টায় শিক্ষাভবন অভিমুখে ভুখা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাড়ি ভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ, মেডিকেল ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
এর আগে এদিন সকালে বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এবং সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা বৃদ্ধিতে সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ।
উপসচিব মিতু মরিয়মের স্বাক্ষর করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, ৬ শর্ত পালন সাপেক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) দেওয়া হবে। আদেশ আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নং গেটের কার্গো ভিলেজ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ২১ ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ধ্বংসস্তূপ ভবনে এখনও পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টার পরও এমন চিত্র দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, আগুন এখনও পুরোপুরি নির্বাপণে আসেনি। এজন্য ধোঁয়া উড়ছে। তবে আমাদের ২২ ইউনিট আগুন নির্বাপণের কাজ করছে। আগুন যেন বাড়তে না পারে সেজন্য অনবরত পানি ছিটানো হচ্ছে।
এদিকে, সকাল থেকেই বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসছেন ভুক্তভোগীরা। উৎসুক জনতার ভিড়ও দেখা গেছে। তবে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টে কর্মরত রেজাউল করিম রনি বলেন, শুক্র-শনিবার আমদানি বন্ধ থাকে। কিন্তু রপ্তানি সবসময় খোলা থাকে। সেই সুবাদে শনিবার দিন সকালে আমি এক্সপোর্ট করতে আসি। বৃহস্পতিবার আমরা টাকাও জমা দিয়েছি। কিন্তু মালামাল নিতে পারিনি। রোববার নেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আগুনের প্রভাব পড়বে দেশের তৈরি পোশাক কারখানায়। কারণ এখানে এমন পণ্য সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে শনিবার বা ছুটির দিন এমন ঘটনা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এছাড়া আগুনে হাজারও কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। একইসঙ্গে কাজ করেন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন, দুই প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ-আনসার সদস্যরা।
সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজটি মূলত পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি জায়গায় বা আট নম্বর গেটের পাশে। আর আগুন লেগেছে আমদানির কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে। এখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হয়। আগুনে এখানকার প্রায় সব মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ভয়াবহ আগুনের কারণে বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ঢাকার বদলে সব বিমান চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে, তিনটি ফ্লাইট সিলেটে, চেন্নাই ও দিল্লি থেকে দুটি ফ্লাইট কলকাতায় অবতরণ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রাত ৯টার পর উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হয়। তবে ছয় ঘণ্টায় ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী।
তথ্য মতে, আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার ফাইটার, সিভিল অ্যাভিয়েশন, আনসারসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আনসার সদস্যই রয়েছেন ২৫ জন। তাদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিমানবন্দরের সূত্রমতে, তৈরি পোশাক কারখানার জন্য আমদানি করা বিপুল পরিমাণ কাপড় ও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল আগুন লাগা ভবনে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লেগেছে। কবে নাগাদ ফের কার্গো ভিলেজ চালু করা যাবে তা পরে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারে মিষ্টির বক্সের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিরোধের জেরে টর্চলাইট জ্বালিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের ইমামবাড়ি বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ১০ অক্টোবর বানিয়াচং উপজেলার সন্দলপুর গ্রামের আমির উদ্দিনের মালিকানাধীন নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারের ‘ভাই ভাই হোটেল’ থেকে কালিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সাদমান আহমেদ ইমন মিষ্টি ক্রয় করেন। মিষ্টির বক্সে অতিরিক্ত ওজন ধরা পড়লে ইমন বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। এতে হোটেল মালিকপক্ষ ও ইমন মিয়ার পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত শনিবার সন্ধ্যার পর উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় টর্চলাইট জ্বালিয়ে চলে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারজুড়ে টর্চের আলো আর চিৎকারে আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী।
চট্টগ্রামে ডাকাতি মামলার আসামি ও ডাকাত সর্দার শ্রী নিরঞ্জন দাসকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সীতাকুণ্ড থানার দক্ষিণ ঈদিলপুর এলাকায় র্যাবের অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার নিরঞ্জন দাস, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থানার সারিকাইভ এলাকার প্রফুল্ল কুমার দাসের ছেলে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে– চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া একটি ডাকাতি মামলার প্রধান আসামি শ্রী নিরঞ্জন দাস সীতাকুণ্ড এলাকায় অবস্থান করছেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
চট্টগ্রাম র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ আর এম মোজাফফর হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সদরঘাট নৌ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রং, সংগীত আর তরুণদের উদ্দীপনায় তিন দিন ধরে মুখর ছিল গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম জনপ্রিয় এই আয়োজন ‘গ্রিন ফেস্ট ২.০’ অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক বন্ধন আর পরিবেশ সচেতনতাকে একসূত্রে গেঁথে তৈরি এই উৎসব ছিল আনন্দ আর শিক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয়।
১৫ অক্টোবর এক বর্ণাঢ্য ফ্ল্যাশ মবের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব, যা মুহূর্তেই গোটা ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়। ১৬ অক্টোবরের আয়োজন ছিল আরও বৈচিত্র্যময়। ‘আমার ক্লাস, আমার থিম’ শিরোনামে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শ্রেণিকক্ষ ও বিভাগ সাজিয়েছিলেন নানা সৃজনশীল উপায়ে। দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিক্ষার্থী ও এলামনাইদের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ, যা নতুন-পুরাতনের এক উৎসাহ ও বন্ধুত্বের মেলবন্ধন। সন্ধ্যায় ‘ওপেন মাইক’ সেশনে শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা আর কৌতুক দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন সবাইকে। দিনের শেষে অনুষ্ঠিত হয় এক ভিন্নধর্মী ‘খাদ্য প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা’।
উৎসবের শেষ দিন, ১৭ অক্টোবর, শুরু হয় ‘কালচারাল ফিউশন’ ও ক্লাসরুম প্রদর্শনী দিয়ে। শিক্ষার্থীরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন ‘এসডিজি ক্যানভাস’-এ। পরিবেশ ও স্থায়িত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আয়োজন করা হয় বিশেষ সেমিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইদের আকর্ষণীয় পরিবেশনাও পায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের অকুণ্ঠ প্রশংসা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি বিভাগের মধ্যে ইইই বিভাগ ‘আমার ক্লাস, আমার থিম’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং সিএসই বিভাগ রানার-আপ হবার গৌরব অর্জন করে। ক্রিকেট খেলায়, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দল চ্যাম্পিয়ন এবং এলামনাইদের দল রানার-আপ হয়।
সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত শিল্পীদের অনুষ্ঠান। প্রথমে মঞ্চে আসেন খ্যাতনামা লোকসংগীত শিল্পী শাহ মুহাম্মদ শিপন ও তার দল। তাদের বাউল ও লোকসংগীতের সুরে মুগ্ধ হন দর্শকরা। উৎসবের সমাপ্তি ঘটে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘লেভেল ফাইভ’-এর প্রাণচঞ্চল ও উদ্দীপনাময় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
গ্রিন ফেস্ট ২.০-এর এই সফল আয়োজনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: শরীফ উদ্দিন বলেন, "এই উৎসব আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও পরিবেশ সচেতনতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা শুধুমাত্র ক্লাসরুমভিত্তিক একাডেমিক কার্যক্রমই নয়, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, উদ্যম ও মেধার বিকাশেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
‘গ্রিন ফেস্ট ২.০’ কেবল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই ছিল না, বরং এটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সবুজ ক্যাম্পাস’ চেতনারই প্রতীক। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত কাজ, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, যা গ্রিন ইউনিভার্সিটির মূল আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই উৎসব নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত ও সৃজনশীল মনেরই স্বাক্ষর বহন করে।
কিশোরগঞ্জের ইটনায় ধনু নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পর এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার শিমুলবাঁক গ্রামের পাশে ধনু নদী থেকে শ্রীকৃষ্ণ দাস (৫০) নামের ওই জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি ইটনা উপজেলার এলংজুরী ইউনিয়ন সদরের বড়হাটি গ্রামের মৃত রসিক দাসের ছেলে।
ইটনা ধনপুর নৌপুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, “রবিবার সকালে স্থানীয়রা নদীতে মরদেহটি ভাসতে দেখে আমাদের খবর দেয়। পরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি।”
এর আগে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে শ্রীকৃষ্ণ দাস নিজের বাড়ির পাশের ধনু নদীতে একটি ডিঙি নৌকায় করে মাছ ধরতে যান। সকাল ৮টার দিকে অন্যান্য জেলেরা দেখতে পান, তার নৌকায় জাল ও মোবাইল ফোন পড়ে আছে, কিন্তু তিনি নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিক দাস জানান, “দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ দাসের স্ত্রী মারা যান। তিনি একটি মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে জীবনযাপন করছিলেন।”
স্বজনদের বরাতে এসআই নিখিল চন্দ্র দাস আরও জানান, শ্রীকৃষ্ণ দাস কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে বের হন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাছ ধরার সময় দুর্বল শরীরের কারণে তিনি নদীতে পড়ে যান এবং ডুবে মারা যান।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী সাবানার কোলে জন্ম নিয়েছে এক নবজাতক কন্যা শিশু। পরে অসুস্থ ওই নারীকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। এ শিশুটিকে দত্তক নিতে আসছে অনেকেই। নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনের।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী সাবানা দীর্ঘদিন ধরে শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। তাকে বিভিন্ন সময় রাতে লংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে ঘুমাতে দেখা যায়। ১৮ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ স্কুলের পরিত্যক্ত ভবন থেকে নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনে এলাকাবাসী ছুটে যান সেখানে। পরে তারা দেখতে পান, ওই নারীর কোলে জন্ম নিয়েছে একটি কন্যা শিশু। পরে স্থানীয়রা দ্রুত মা ও নবজাতককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান এবং তাদের খাবার ও প্রাথমিক সেবা দেন। শিশুটি সুস্থ থাকলেও মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
এদিকে অসহায় নবজাতককে দত্তক নিতে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। বলতে গেলে প্রতিযোগিতাই শুরু হয়েছে।
এঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কেউ ওই নারীর পরিচয় জানেনা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শ্রীবরদী সমাজসেবা অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। হাসপাতালে সমাজসেবা শাখা রয়েছে। তারাই চিকিৎসা সহায়তা দেবে। এরপর নবজাতক ও ওই নারীর পূনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীবরদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাসিব-উল-আহসান বলেন, মা ও নবজাতকের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তাদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হবে। এছাড়াও ওই নারীর ঠিকানা সম্পর্কে খোঁজ নিতে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
শেরপুর জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা: তানবির আহমেদ জানান, নবজাতক ভাল আছে। তবে মানষিক ভারসাম্যহীন মহিলার অবস্থা খারাপ থাকায় তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তার চিকিৎসা চলছে।
মন্তব্য