নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের শিশুদের টাইফয়েড থেকে সুরক্ষা দিতে আজ রোববার শুরু হচ্ছে দেশের প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন। এক মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোববার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা, আজিমপুর কেন্দ্রে উদ্বোধন হবে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জন্মসনদবিহীন শিশুরাও এই টিকার আওতায় থাকবে যাতে কেউ বাদ না পড়ে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে এই টিকা, যা সরকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভির সহযোগিতায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত এই টিকাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইতোমধ্যে নেপাল, পাকিস্তানসহ আটটি দেশে সফলভাবে ব্যবহার হয়েছে। কোনো দেশেই বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় এই টিকা পাবে। এরপর ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি অন্যান্য শিশুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা পাবে। শহরের পথশিশুদের টিকাদানের দায়িত্বে থাকবে বিভিন্ন এনজিও।
সরকারের লক্ষ্য- এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া। ইতিমধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু নিবন্ধন করেছে, এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো চালু রয়েছে। জন্মসনদ না থাকলেও নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করা যাবে।
অভিভাবকেরা সন্তানদের নিবন্ধনের জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। নিবন্ধনের পর সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে।
ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে টিকা দেওয়া হবে এবং পরবর্তী ৮ দিন ইপিআই সেন্টারে টিকাদান কার্যক্রম চলবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই ক্যাম্পেইন সফল হলে টাইফয়েড প্রতিরোধে বাংলাদেশ একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করবে। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এ ব্যাধি থেকে শিশুদের সুরক্ষায় এটি হবে সরকারের একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট।
রোববার সকাল ১০ টার পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এই অবস্থান শুরু করেন শিক্ষকরা। সারা দেশ থেকে আসা ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষকের অবস্থানের কারণে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, সচিবালয় ও মেট্রোরেলের প্রবেশ পথে সাধারণ মানুষের চলাচলও চরমভাবে বিঘ্ন হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জোটের মহাসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানিয়েছেন। দাবি আদায়ে অবস্থান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা আসতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের শিক্ষক সমাবেশে লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিল। ওইদিন শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেসিকের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ।
সূত্রমতে, শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে নতুন করে বাড়িভাড়া ভাতা ও মেডিকেল ভাতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাবনা গত ৫ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ নির্ধারণে নতুন প্রস্তাব করা হয়। একইসঙ্গে কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ এবং চিকিৎসা ভাতা এক হাজার টাকার প্রস্তাব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রোববার (১২ অক্টোবর) আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি৷
উপদেষ্টা বলেন, আজকের সভায় মূলত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের শান্তি ও সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য যে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্নকরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করার বিষয় আলোচনা হয়েছে৷
উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাতে কোনো আইন বহির্ভূত কাজ না করে সে বিষয়েও নির্দেশনা প্রদান করার আলোচনা হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থা করা।
তিনি বালেন, গত ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের আসন্ন নির্বাচনে যথাসম্ভব দায়িত্ব প্রদান করা থেকে বিরত থাকা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা।
আপনারা জানেন, এ প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২৮টি ব্যাচে তিনদিন মেয়াদি প্রশিক্ষণ সারা দেশে (জেলা, মহানগর ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান) ১৩০টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে একটি ব্যাচের (৬,৫০০ জন) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরেকটি (২য়) ব্যাচের (৬,৫০০ জন) প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। নির্বাচনের জন্য পুলিশের চূড়ান্ত
(৪র্থ পর্যায়ের) প্রশিক্ষণ গত ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে শুরু হয়েছে এবং আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে সব ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আনসার ভিডিপি সদস্যদের জন্য ‘প্রাক নির্বাচনী প্রশিক্ষণ’ শিরোনামে প্রতি কেন্দ্রে ১৩ জন হারে আনুমানিক ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য মোট ৫ লাখ ৮৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তন্মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার জনকে অস্ত্রসহ ও ৪ লাখ ৫০ হাজার জনকে নিরস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের প্রশিক্ষণ শেষ হবে। তাছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। এর জন্য ৩১৫৭ জন রিক্রুট সিপাহিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচনে বিজিবির ১১০০ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ইতোমধ্যে ৬০% নির্বাচনি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তাছাড়া এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল যেটা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি এখন শান্ত ও ভালো রয়েছে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফ্যাসিস্টের লোকজন শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল। কিছু ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবীও এতে ইন্ধন জুগিয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় তৎপরতার কারণে তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে। সবার সহযোগিতায় শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু বাহকদের নয়, মাদকের গডফাদারদের আটক করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, প্রথমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে প্রসিকিউশন। এরপর নিজেদের যুক্তি তুলে ধরবেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। শেষ পর্যায়ে যুক্তি খণ্ডন করবে প্রসিকিউশন বা রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধাপ শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হবে।
এর আগে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন। জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছরে গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন এবং বিরোধী পক্ষকে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকালে ইতালির রাজধানী রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক ইউনূস ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। পাশাপাশি, তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নসহ বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উদ্যোক্তারা খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে মতবিনিময় করেন।
এবারের ইভেন্টটি ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রোমে এফএওর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আগামী ১৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
রাজবাড়ীর পাংশায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. এবাদত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. আবু দারদা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন,
“টাইফয়েড জ্বর হলে জীবনের ঝুঁকি থাকে এবং মৃত্যু হারও অনেক বেশি। সেই ঝুঁকি থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতেই এই টিকাদান কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। অনেকের মনে টিকা নিয়ে ভয়ভীতি থাকে— এটি নিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কি না। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করছি, এই টিকা আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষিত এবং এতে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ, বালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাঈদা খাতুনসহ অন্যান্য শিক্ষক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. তৈয়বুর রহমান।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষকদের কাছে করলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ধান আর আলু প্রধান উপজেলার প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে নিজস্ব মেধা আর প্রযুক্তিতে করলা চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এলাকার কয়েকশ কৃষক। ফলে ধান ও আলুর স্থান দখল করে নিয়েছে করলা চাষ। বিঘার পর বিঘা মাঠের জমিতে মাচায় ঝুলছে সবুজ করলা।
এ দৃশ্য ক্ষেতলাল উপজেলার হাটশহর, বাখরা, মুনঝাড়সহ কয়েকটি (কলিঙ্গা, ঘুগোইল, কুসুমশহর, আঁটিদাশড়া, কোনিয়াপাড়া) গ্রামের মাঠগুলোতে। এক সময় এখানকার দুই-এক জন কৃষক করলা চাষ করলেও এখন শতভাগ পরিবার কোনো না কোনোভাবে যুক্ত করলা চাষের সঙ্গে। বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে মাটি, মানুষ আর প্রকৃতি কথা বলে করলা নিয়ে। মানুষ এই গ্রামগুলোকে চেনে এখন করলা গ্রাম নামে।
কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশী, এছাড়া স্বল্প সময়ে এ ফসল উঠানো যায় বলে করলা চাষে দিন দিন ঝুঁকে পরছেন তারা। তাছাড়া কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগীতায় কৃষকদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে বেশি উৎপাদনের পাশাপাশি এলাকায় করলা চাষে আরো সফলতা মিলবে।
সরেজমিনে জানা যায়, অধিকাংশ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করে বদলে গেছে তাদের ভাগ্য। এখানকার উৎপাদিত করলা যাচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন এই গ্রামগুলোতে। একদিকে যেমন ফুটেছে কৃষকের মুখে হাসি। অন্যদিকে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার কৃষকদের।
শুধু তাই নয়, জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানকার করলা গুনগত মানে বেশ ভাল হওয়ায় অন্য জেলায় এর চাহিদা অনেকটায় বেশী। আর এ কারনে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। এসব করলা বাজারজাত করতে স্থানীয় ভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকটি স্থানে করলার হাট।
উপজেলার হাটশহর গ্রামের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তুলনামুলকভাবে অন্য ফসলের চেয়ে করলার ফলন বেশি হয়ে থাকে। এতে সেচ খরচ যেমন কম তেমনি রোগবালাই আর পোকা মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে।
উপজেলার মুনঝাড় গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, এক সময় অভাবের কারণে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটলেও করলা চাষে সফলতা আসায় এখন তারা অনেকটায় স্বাবলম্বী। বীজ, জৈবসার,বালাইনাশক,করলার মাঁচাসহ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে করলা চাষ করতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত করলা বিক্রি করা যায়।
উপজেলার কলিঙ্গা গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, করলা রোপণের ২ মাসের মধ্যে করলা তোলা শুরু হয়। এক টানা ৫ মাস করলা তোলা যায়। আর করলার চাহিদা সারা বছরই থাকে। অন্য ফসলের চেয়ে করলা চাষে লাভ বেশি। আর সে কারণেই করলা চাষে ঝুঁকছি কৃষকরা। বর্তমানে প্রতি কেজি করলা প্রকারভেদে ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, উপজেলায় এবার করলার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় করলা চাষ দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে।
সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে নারী শিশুসহ ১৬ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে ফেরত পাঠিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। শনিবার রাত ১০টার দিকে ওই ১৬ জনকে সাতক্ষীরা থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।
এসব বাংলাদেশী নাগরিকরা সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বাসিন্দা। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করছিলেন। ফেরত আসা বাংলাদেশীরা ৬ টি পরিবাবের সদস্য। এদের মধ্যে ৪জন শিশু ৫ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ রয়েছে।
ভারত থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিরা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের মৃত কলিমদ্দীন ঢালীর ছেলে মোশারাফ ঢালী (৫৭), নুর মোহাস্মদ গাজীর ছেলে ইউনুস আলী (৪২), তার ইউনুস আলী স্ত্রী মুসলিমা খাতুন (২৯), মেয়ে সিনহা খাতুন (১১), ইউনুস আলী ছেলে মোরসালিম গাজী (৭), পার্শ্বেমারী গ্রামের আবুল হোসেন মোড়লের স্ত্রী মোছা. ঝরনা পারভিন (৩৭), ছেলে মো. আশিকুজ্জামান (১৮), কাশিমাড়ী গ্রামের জিয়াদ আলী গাইনের ছেলে রিফাত হোসেন (২৬), খুটিকাটা গ্রামের ইউনুস আলী মোড়লের ছেলে মো. শাহিনুজ্জামান (২৮), চন্ডিপুর গ্রামের হানজালার স্ত্রী শারমিন সুলতানা (১৮), মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৩), নুর আলম হোসেনের স্ত্রী ফাতিমা খাতুন (২২), ছেলে মো. ফারজান নাবিল (৩), আল মামুনের স্ত্রী রুবিনা খাতুন (২৯), আব্দুর রহিমের ছেলে আল আমিন (২৬), ও খুলনা জেলা কয়রা উপজেলার বেদকাশী গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমান (২৩)।
সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, ভারতের হাকিমপুর চেকপোষ্টে বাংলাদশি নাগরিকদের আটক করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বিএসএফের আমুদিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর বিকাশ কুমার ও সাতক্ষীরার তলুইগাছা বিওপি কমান্ডার আবুল কাশেমের মধ্যস্থতায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশিদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে বিজিবি তাদের থানায় হস্তান্তর করে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ফেরত আসা বাংলাদেশিদের পরিচয় যাচাই বাছাই করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মন্তব্য