নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ যেনো কোনোভাবেই কমছে না। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে জিনিসপত্রের দাম। বাজার সিন্ডিকেট গত কয়েক মাস ধরে আবারও সক্রিয় বলে নিত্যপণ্যের এমন দাম বলে জানা যায়। তারমধ্যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজির বাজার আকাশছোঁয়া। হাতে গোনা কয়েকটি বাদে সব সবজির দাম প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকার ওপরে। আবার যেসব সবজির দাম কিছুটা কমে ছিল, তার মধ্যে বেশ কয়েকটির দাম নতুন করে বেড়েছে। তবে হুট করেই বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচের দাম অনেকটাই কমেছে। অপর দিকে বেড়ে গেছে মুরগি ও মাছের দাম।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। আকাশছোঁয়া সবজির দামের কারণে বাজারে স্বস্তি ফিরছে না। স্বল্প আয়ের মানুষেরা হাঁসফাঁস করছেন। প্রতিনিয়তই তাদের মেলাতে হচ্ছে নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব। কথায় কথায় এক ক্রেতা বলেন, ‘কোনও কিছু যদি আগে দুই কেজি কিনতাম সেটা এখন কিনি এক কেজি। কারণ দুই কেজি কেনার পয়সা আমার নাই। এটাই সত্য। উচ্চ বাজারমূল্য প্রতিদিন আমার মতো সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি করছে।’
বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৩০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৮০ টাকা, শিম ২৬০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-১২০ টাকা, পটোল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটোল ১৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ৩০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০-১২০ টাকা, চালকুমড়া ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক হালি কাঁচা কলা ৪০-৫০ টাকা। এছাড়া এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে।
এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেজিতে ভারতীয় টমেটো, চায়না গাজর, সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন, শিম, দেশি শসা, ঢ্যাঁড়স, দেশি পটোল, ধুন্দলের দাম ২০ টাকা করে বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে শসার (হাইব্রিড) দাম। আর কেজিতে ২০ টাকা করে কমেছে মুলা ও কচুরমুখীর দাম। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এছাড়া হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম আজ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সপ্তাহখানেক আগে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। কোথাও ছিল ৪০০ টাকা। গতকাল কাঁচামরিচের নেমে এসেছে ২৪০ টাকায়।
এদিকে সবজির দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টি ও ঋতুর পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, ‘অসময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়া একটা সিজন থেকে আরেকটা সিজন আসছে। এরকম সিজন পরিবর্তন হলে চলে যাওয়া সিজনের সবজির দাম বাড়তি থাকে।’
এদিকে বাজারে বেড়েছে ক্রস পেঁয়াজ, চায়না আদার দাম। এছাড়া কমেছে বগুড়ার আলু, দেশি ও চায়না রসুনের দাম। আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, লাল আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০-৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০-১০০ টাকা, চায়না রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মানভেদে ১৬০-১৮০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে কিছুটা কম থাকলেও গতকালকে আবার বেড়েছে মুরগির মাংসের দাম। এদিন বাজারে বয়লার, কক, লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে। এসব মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। বয়লার মুরগি ১৭৫-১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১৩০ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতি কেজিতে বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫-১২ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এছাড়া বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী রুই মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এখন পর্যন্ত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও দায়ি করেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে গণমিছিলের আগে এক সমাবেশে বক্তব্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গোলাম পরওয়ার। পাঁচ দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বল হয়ে, কারও চাপে মাথা নত করে প্রশাসনে কোনো দলের পছন্দের লোককে বেছে বেছে পদায়ন করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ওসি, ডিসি, ইউএনও, আমলা, এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকের ভূমিকা এখনো জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ।
উপদেষ্টাদের মধ্যে কাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, সে নাম প্রকাশ করেননি মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগে ছোট-বড় সব দল যেন সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এখন জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার আছে। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের ঘোষিত কর্মসূচি সম্পর্কে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার কারও নেই।’
১৫ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আগে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান পরওয়ার।
যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি গণভোটের মধ্যে পিআর প্রস্তাবও যুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণ যদি পিআর পদ্ধতির পক্ষে মতামত দেয়, সব দলকে সেটা মানতে হবে। জনগণ বিপক্ষে মত দিলে জামায়াত পিআরের দাবি থেকে সরে আসবে।
জাতীয় ঐক্য তৈরির স্বার্থে জামায়াত ‘বেশ কিছু’ সংস্কার প্রস্তাবে ছাড় দিয়েছে দাবি করে পরওয়ার বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্বপ্ন পূরণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে যেন ঐক্যের প্রচেষ্টায় বিঘ্ন না ঘটে।’
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘জুলাই সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব) নবগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হতে যাওয়া জুলাই সনদকে বিএনপি ইতিবাচকভাবে দেখছে। রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই এই সনদের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব। আমরা আশাবাদী, জুলাই সনদ নিয়ে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক সমঝোতা হবে।’
এ সময় তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন। তার কথার মধ্যে কোনো দলীয় পক্ষপাত ছিল না। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ধ্বংস চাননি, বরং ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। যেসব ব্যক্তি অপরাধ করেছেন বা নির্যাতন চালিয়েছেন; আইনসঙ্গত উপায়ে তাদের বিচারের কথা বলেছেন তিনি।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সেখানে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানই মুখ্য। দেশের সিভিল সোসাইটি, অভিজাত সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তার এই বক্তব্য ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
কৃষি খাতের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে কৃষি কাজের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের কৃষকরা আজ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এ বিষয়ে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (এ্যাব) কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি জানান, অ্যাব এমন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যাতে কৃষকদের স্বার্থরক্ষা হয় এবং দেশের জনগণ উপকৃত হয়। ‘এই দিকনির্দেশনা ও প্রেরণা আমাদের দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকেই এসেছে’, যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নবগঠিত এ্যাবের আহ্বায়ক কৃষিবিদ কামরুজ্জামান এবং সদস্য সচিব কৃষিবিদ শাহাদাৎ হোসেন বিপ্লব।
পবিত্র কোরআনের অবমাননা এবং আপত্তিকর মন্তব্য করায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার প্রতিবেদক মুহম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শেখ ওমর শরীফ এ নোটিশ দেন। নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে এ ধরনের মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, গত ৬ অক্টোবর ইউটিউবে ‘চরমোনাই দর্পণ’ চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম পবিত্র কোরআন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
সেই বক্তব্যে ফয়জুল করিম বলেছিলেন, ‘শুধু কুরআন কিচ্ছু না’ এবং ‘শুধু কুরআন কোরআন, এর মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি’।
নোটিশে বলা হয়, ফয়জুল করিমের এসব মন্তব্য পবিত্র কোরআনুল কারীমের মর্যাদা ও পবিত্রতার পরিপন্থি এবং মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। কোরআন একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক গ্রন্থ, যার প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করা বাংলাদেশের সংবিধান ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
নোটিশে আরও বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে ফয়জুল করিমকে সুস্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে তার উল্লেখিত মন্তব্যগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে ধর্ম অবমাননামূলক মন্তব্য আর করবেন না- এমন প্রতিশ্রুতি দিতেও আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম। শুক্রবার বিকেলে ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিমানবন্দরে শহিদুল আলমকে স্বাগত জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
শহিদুল আলমের মুক্তি ও প্রত্যাবর্তনে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
শহিদুল আলমের মুক্তি ও ইসরায়েল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।সূত্র : বাসস
বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাদের মর্যাদাপূর্ণ ‘টাইম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ২০২৫’ তালিকায় ‘সামাজিক প্রভাব’ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করেছে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী বিশেষ সম্পূরক খাবার এমডিসিএফ-২। এটি আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির দীর্ঘদিনের যৌথ গবেষণার ফল।
এমডিসিএফ অর্থ হলো মাইক্রোবায়োটা ডিরেক্টেড কমপ্লিমেন্টারি ফুড, যা একটি বিশেষ ধরনের সম্পূরক খাবার, যা অন্ত্রের উপকারী জীবাণুগুলোকে উদ্দীপ্ত করে শিশুদের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে।
বিগত বছরগুলোতে কিছু অগ্রগতি হলেও, বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকের জন্য অপুষ্টি দায়ী। যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, ফলে কোটি কোটি শিশু খর্বতা ও কৃশতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এমডিসিএফ-২ তৈরি হয়েছে ছোলা, সয়াবিন, চিনাবাদাম ও কাঁচা কলার গুঁড়োর বিশেষ মিশ্রণে। উপাদানগুলো এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে অন্ত্রের নির্দিষ্ট উপকারী জীবাণুগুলো পুষ্টি পায় এবং শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়বিক বিকাশ ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।
এই উদ্ভাবনের সূচনা হয় আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অন্ত্র-জীবাণু গবেষক ড. জেফরি গর্ডন-এর মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে। ড. তাহমিদ শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন, আর ড. গর্ডন মূলত স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করলেও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বিষয়ে পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।
ড. গর্ডন বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি নির্ভর করে অন্ত্রের জীবাণুর ওপর। আমরা যে উপকারী জীবাণুগুলো চিহ্নিত করেছি, তারা এমন খাদ্য উপাদান প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, যা শরীর নিজে থেকে করতে পারে না। বাংলাদেশি শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এমডিসিএফ-২ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পুনর্গঠনে সক্ষম এবং এর প্রভাব অন্ত্রের বাইরেও বিস্তৃত।”
ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করে, বিজ্ঞান ও মানবিক সহমর্মিতা একত্রিত হলে বিশ্বের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব। স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী এই সমাধান কোটি কোটি অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুকে শুধু বাঁচিয়ে রাখতেই নয়, বরং পূর্ণ বিকাশের সুযোগ দিতে পারে।”
বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, মালি এবং তানজানিয়া-তে এই খাবার নিয়ে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা চলছে। এমডিসিএফ-২ পুষ্টি কর্মসূচিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে বিশ্বজুড়ে অপুষ্টিরোধ ও চিকিৎসার পদ্ধতিকে আমূল বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ৩০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ১১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৮৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪০ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ২১ জন রয়েছেন।
এদিকে গত একদিনে সারা দেশে ৩১০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫০ হাজার ৫১৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার ১৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মন্তব্য