‘তরুণ প্রজন্মের প্রথম ভোট ধানের শীষের পক্ষে হোক’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ এবং ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যাগে কালাই সরকারি মহিলা কলেজ থেকে পাঁচশিরা বাজার পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সচিব ও বিএনপি নেতা মো. আব্দুল বারী বলেন, দল থেকে যদি আমাকে নমিনেশন দেওয়া হয় এবং জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে তাহলে আমি এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করবো। আমার নির্বাচনী এলাকায় কোন অফিসে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ চলবেনা। আমি নিজে চাকরি জীবনে শতভাগ সততার সাথে কাজ করেছি এবং আমার অফিস ছিল ঘুষ দূর্নীতি মুক্ত। আমার কাছে কোন অনিয়মের প্রশ্রয় নেই। বিশেষত ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভয়ের সংস্কৃতি এখানে থাকবে না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান সুইট, ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদুল মাসুদ আঞ্জুমান, ক্ষেতলাল পৌর বিএনপির সভাপতি ক্ষেতলাল পৌর বিএনপির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আলীম, আক্কেলপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফ ইফতেখার আহম্মেদ রানা, কালাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মৌদুদ আলম সরকার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুল হাসান এলান, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান, উদয়পুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আলীম, পুনট ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী রিপন, জিন্দারপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফিরোজ কবিরসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পুরো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বিএনপির ৩১ দফা কর্মপরিকল্পনার লিফলেট সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেন এবং আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ককে দশ লেনে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাতিল করে রেল যোগাযোগ উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জমি সংকট এবং টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিন।
বার্তাসংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডকে ৬ বা ১০ লেন করার বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কিছু নয়। সর্বোচ্চ ছয় লেন পর্যন্ত করা যেতে পারে। তবে এর বাইরে রোড সম্প্রসারণের পরিবর্তে ট্রেনে যাতায়াতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘ট্রেন দ্রুতগতির, নিরাপদ ও সময়নিষ্ঠ যোগাযোগ মাধ্যম। ট্রেন ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে অনেকেই গাড়ি চালানো থেকে সরে আসবেন। তাই আমরা রেললাইন আধুনিকীকরণের দিকে জোর দিচ্ছি। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনটি সংস্কার ও উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’
তার ভাষ্যে, রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ করলে ভূমি আরও কমে যাবে। দেশে ইতোমধ্যে ল্যান্ড (ভূমি) সংকট দেখা দিচ্ছে। অথচ ট্রেনে এখন মাত্র ২ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয়, যা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশের সমান।
শেখ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘আমি ফোকাস করছি রেলওয়ে উন্নয়নের ওপর, যাতে সড়কের চাপ কমে আসে। কারণ ট্রেন নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।’
তিনি জানান, বিদেশের অনেক দেশে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় রেলপথে, অথচ বাংলাদেশে তা মাত্র ২ শতাংশ। এই হার অন্তত ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চান তিনি। এতে ট্রেন পরিবহন লাভজনক হবে এবং রাস্তায় চাপও কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ সচল রাখতে বর্তমানে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ঘাটতি একটি বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন শেখ মঈনুদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নতুন লোকোমোটিভ ক্রয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছি। এতে ট্রেনের গতি ও কার্যকারিতা দুটোই বাড়বে, নতুন লাইন করতে হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট ট্রেন শুধু পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করার, যাতে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো যায়। এতে সময় ও খরচ দুটোই কমবে।’
সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সড়কের ওপর চাপ কমে যাবে এবং দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন গতি আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শেখ মঈনুদ্দিন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মাহমুদুর রহমান মান্না, জোনায়েদ সাকি, হাসনাত কাইয়ূম, সাইফুল হকসহ ১২০ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাম ও প্রগতিশীল ঘরানার ছয়টি রাজনৈতিক দলের মোর্চা ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মঞ্চের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম। পর্যায়ক্রমে ৩০০ আসনের বাকি আসনগুলোতেও প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ আসনে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ফেনী-৩ আসনে এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুকে জামালপুর-৫ আসনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের এ পর্যন্ত চার শতাধিক প্রার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। আরও অনেকে আগ্রহ জানিয়েছেন। প্রার্থিতা বাছাই ও সমন্বয় কমিটি আবেদনগুলো পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের কাজ করছে। একই আসনে একাধিক প্রার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধারাবাহিকভাবে দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বয়কাজ চলমান রয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ এর আগে এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। এর পাশাপাশি মঞ্চ সম্প্রসারণের আলাপ চলমান রয়েছে। এমনকি অন্য কোনো জোটের সঙ্গে ঐক্য বা নির্বাচনী সমঝোতার সম্ভাবনাও রয়েছে। দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করে জনগণের মালিকানা ও জনগণের কাছে জবাবদিহির রাষ্ট্রকাঠামো গড়তে যাঁরা সর্বোচ্চ সচেতন হবেন, তাদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের ঐক্য হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, তানিয়া রব, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৮ আগস্ট জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ মিলে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে জোট গঠন করে। পরে গণঅধিকার পরিষদ এই জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আবারও সংশোধন করছে সরকার। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে রহিত হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কয়েকটি ধারায় কারও দণ্ড হয়ে থাকলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। তদন্তাধীন মামলাও বাতিল হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ৫০ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন হওয়া খসড়ায় বলা হয়, রহিত করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২১, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারাগুলোর অপরাধ সংঘটনে সহায়তার অপরাধে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে নিষ্পন্নাধীন কোনো মামলা বা অন্যান্য কার্যধারা অথবা পুলিশ কর্মকর্তা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তাধীন মামলা বা কার্যক্রম বাতিল হবে এবং এ বিষয়ে আর কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। এছাড়া ওই ধারাগুলোর অধীন কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড ও জরিমানা বাতিল বলে গণ্য হবে।
আগামী ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। এদিন বেলা ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে প্রাপ্ত মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, বিশেষজ্ঞরা রাজনৈতিক দলসমূহ থেকে প্রাপ্ত অভিমতসমূহ বিশ্লেষণ করে খুব শিগগিরই বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্ত করা জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেবেন।
বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভায় অংশ নেন।
রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে গঠিত ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দুই ধাপে সংলাপ করে। দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি হয়। তবে, সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি।
এর আগে বুধবার সংলাপের শেষ দিন জানানো হয়, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারকে একটি প্যাকেজ সুপারিশ করবে কমিশন। ওই সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশন সভা হয়। তবে সেখানে প্যাকেজ সুপারিশের চেয়ে জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানের বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আগামী ১৫ অক্টোবর বেলা ৩টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানটি করার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
সনদ সই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটকে দুজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে বলেছে কমিশন। এরই মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নাম পাঠিয়েছে। অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং দলগুলো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে কমিশনের আলোচনার তৃতীয় পর্যায়ের পঞ্চম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দেয়া মতামত সমন্বয় করে কমিশন আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে আলোচনা করে সরকারকে পরামর্শ দেবে।
তিনি জানান, যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কমিশন জুলাই সনদ প্রণয়নের এ পর্যায়ে এসেছে তার একটি বিশেষ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হবে এবং খুব দ্রুতই কমিশন সংশ্লিষ্ট দল ও জোটগুলোকে এ বিষয়ে অবহিত করবে। সেইসঙ্গে আগামী ১৫ অক্টোবর কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘আগামী ১৫ অক্টোবর কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে কমিশনের বেশ কিছু কাজ রয়েছে। ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’-এর ব্যাপারে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। আশা করছি, কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারব।’
তিনি জানান, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রস্তুত। আমরা চাই, ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই এই ঐতিহাসিক দলিলের আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হোক।
আলী রিয়াজ বলেন, শুধু সনদ স্বাক্ষর নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে। আমরা আশা করছি ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারব। এতে জুলাই সনদ প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর জমাকৃত দলিল অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি জানান, ৫ অক্টোবরের বৈঠকে কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়-‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যবস্থা করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচনার মূল বিষয় ছিল-গণভোট কীভাবে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করা। আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি, পরামর্শ ও মতামতের জন্য গতকাল বৈঠকের আগেও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
আলী রিয়াজ আরও জানান, বিশেষজ্ঞরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন-একটি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে দুটি ভাগ থাকবে—একটি অংশে বৃহত্তম ঐকমত্যের বিষয়গুলো এবং অন্য অংশে নোট অব ডিসেন্ট (লিখিত ভিন্নমত) থাকা বিষয়গুলো থাকবে। পরে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠন করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটের অনুমোদন পেলে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংশোধনগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আগামী ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হবে।
ঐতিহাসিক এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।
আজ জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয় বলে কমিশন থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সভায় অংশ নেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, আজকের সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের ৫টি বৈঠকে প্রাপ্ত মতামত বিশ্লেষণ করা হয়।
এসময় বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করে বলেন, বিশেষজ্ঞগণ এবং রাজনৈতিক দলসমূহ থেকে প্রাপ্ত অভিমতসমূহ বিশ্লেষণ করে খুব শিগগিরই বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্তকৃত জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। সূত্র: বাসস
বিএনপির বিরুদ্ধে প্রবাসী সাংবাদিক ইউটিউবার ইলিয়াসের পরিকল্পিত অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম পিটু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজ সাংবাদিক ইলিয়াস হুসাইন পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতা বিরোধী একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে। এর সাথে আমাদের দলেরই একজন নব্য উদিত হওয়া মনোনয়ন প্রতাশ্যী ও তার চাচা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। তারা বিশেষ দল ও গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া-নেয়ার পাঁয়তারা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশজুড়ে যেখানেই বিএনপির মাঠ ভালো, যেখানেই বিএনপির জেতার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানেই একটি দল বিষদাগার করার চেষ্টা করছে। মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছেন। ইলিয়াস বিএনপির সেসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার অপপ্রচারে নেমেছে। শরীফুজ্জামান শরীফ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলের কাউন্সিলরদের ভোটে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনিপর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির এই নেতা ও তার ভাই সাহিদুজ্জামান টরিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফুন নাহার রিনা, জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক মোমিন মালিতাসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর ইলিয়াস হোসাইনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘দুই ভাই মিলে বাংলা সিনেমার স্টাইলে চাঁদাবাজি করছে’ শিরোনামে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও তার অনুসারীদের নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় এখন টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান হোসাইন জিয়াদ ও চিত্র সাংবাদিক পারভেজ রহমান এর ওপর সন্ত্রাসি হামলার প্রতিবাদ ও আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে নওগাঁ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁয় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের আয়োজনে শহরের মুক্তির মোড় শহীদ মিনারের পাশে ঘন্টাব্যাপী এ কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধনে সাপ্তাহিক প্রজন্মের আলোর সম্পাদক আব্দুর রহমান রিজভী’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সভাপতি ও বিজয় টিভির জেলা প্রতিনিধি মোফাজ্জল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও ডিবিসি’ জেলা প্রতিনিধি একে সাজু, ইনডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি সাদেকুল ইসলাম, সকালের সময় এর প্রতিনিধি মাহমুদুন নবী বেলাল, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও বাংলা টিভির জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল নয়ন, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বাংলার জেলা প্রতিনিধি সবুজ হোসেন , দপ্তর সম্পাদক মাহাবুল আলম মারুফ ও
এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্বাস আলী সহ অন্যরা। মানববন্ধনে জেলার বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন- সংবাদ সংগ্রহের সময় স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে ক্যামেরা ভাঙচুর সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলার সংবাদিক সংগঠনগুলো ঘটনার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনগুলো। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের এখনো পুলিশ গ্রেফতার করছে না। পুলিশ প্রশাসনের নীবর ভূমিকা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। অবিলম্বে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানানো হয়।
মন্তব্য